Skip to content

 

Wait...❤😘 Show love? ⬇⬇⬇

পশুর পরিপাক যন্ত্র ও খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ- রুমেন (Rumen), রেটিকিউলাম (Reticulam), ওমেসাম (Omasum), এবোমেসাম (Abomasum)। গরু, মহিষ ও ছাগলের খাদ্য বিশ্লেষণঃ আমিষ খাদ্য, শর্করা খাদ্য, খনিজ পদার্থ, স্নেহ পদার্থ, ভিটামিন, লবণ। জলের প্রয়োজনীয়তা। সাহায্যকারী খাদ্যঃ হর্মোন, আর্সেনিক, এন্টিবাইওটিক, সোডা জাতীয় পদার্থ, ইউরিয়া।[গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া]

গরু মহিষের খাদ্যঃ গরু মহিষের দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ ইউ এম এস ইউ এম এস তৈরির পদ্ধতি। 1 পশুর পরিপাক যন্ত্র ও খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ- রুমেন (Rumen), রেটিকিউলাম (Reticulam), ওমেসাম (Omasum), এবোমেসাম (Abomasum)। গরু, মহিষ ও ছাগলের খাদ্য বিশ্লেষণঃ আমিষ খাদ্য, শর্করা খাদ্য, খনিজ পদার্থ, স্নেহ পদার্থ, ভিটামিন, লবণ। জলের প্রয়োজনীয়তা। সাহায্যকারী খাদ্যঃ হর্মোন, আর্সেনিক, এন্টিবাইওটিক, সোডা জাতীয় পদার্থ, ইউরিয়া।[গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া] কৃষি গরু পালন, মহিষ পালন গরু পালন | মহিষ পালন

ভূমিকাঃ

▪ গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি রোমন্থনকারী পশুর পরিপাক যন্ত্র যেমন পৃথক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তেমনি এদের খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়াও স্বকীয়। আর এসবের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে নির্বাচন করা হয় দৈনিক খাদ্য।

▪ খাদের পরিবেশ ও গুণগত মানের বিষয়টিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

▪ গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি পশু ঘাস, লতাপাতার খড় ইত্যাদি সবই খায়। খাবার সময় খুব একটা বাছ-বিচার করে না। তাই পালনকারীকে মনে রাখতে হয় পশুকে কেমন খাদ্য দেয়া হচ্ছে। এমন খাদ্য দিতে হবে যাতে ষাড় বা বলদের দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি পায় আর গাভীর বাড়ে দুধের পরিমান।

গরু, মহিষ ও ছাগলের পরিপাক যন্ত্রঃ

▪ রোমন্থকারী এসব পশুর পাকস্থলী (Stomach) চারভাগে বিভক্ত, যার মধ্যে রুমেন (Rumen) এর ভূমিকা সর্বাগ্রে। যাদের আছে তারা খাদ্য বস্তু একবার খেয়ে পরে অবসর সময়ে আবার চিবাতে পারে। আর একারনেই তাদের রোমন্থনকারী জীব বলে।

▪ চারভাগে বিভক্ত পাকস্থলীর জন্যে এসব প্রাণী একবারে খাবার যা পায় মুখে পুরে নেয়। বিশ্রামের সময় পাকস্থলীর রুমেন বিভাগ থেকে কিছুটা চিবানো ও ভেজানো খাদ্য ভালো করে চিবাতে থাকে। এসব প্রাণীর বৈশিষ্ট্য এরা আমিষ খাদ্যের প্রধান অংশ অ্যামাইনো এসিড এবং অনেক ভিটামিন নিজেরাই তৈরি করতে পারে।

রোমন্থকারী (Ruminant) প্রাণীর পাকস্থলীর চারটি ভাগ যথাক্রমে-

(১) রুমেন (Rumen),

(২) রেটিকিউলাম (Reticulam),

(৩) ওমেসাম (Omasum) এবং

(৪) এবোমেসাম (Abomasum)।

পাকস্থলীর চারটি অংশের কার্যাবলী নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

১. রুমেন (Rumen)

▪ পাকস্থলীর প্রথম ও সবচেয়ে বড় অংশ যাতে প্রায় ১৫০ থেকে ২৫০ লিটার খাদ্য বস্তু রাখতে পারে। প্রথমে খাবার কিছুটা ভেজা ও চিবানো অবস্থায় রুমেনে আসে।

▪ পশুর উপরের সারির গদির মতো। ডেন্টাল প্যাড (Dental pad) ও নিচের সারির ধরার দাঁত (Incisors) গুলির সাহায্যে সকল খাবার প্রথমে রুমেনে যায়। সেখানে অবস্থারত ব্যাকটেরিয়া ও মাইক্রো অর্গানিজ খাবারের নিম্নমানের আমিষ ও নাইট্রোজেন পদার্থকে প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিডে পরিনত করে। সাথে সাথে সৃষ্টি হয় কিছু ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।

▪ জীবানু গুলো প্রথমে এমাইনো এসিড ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করে। পরে জীবানুগুলো মারা গেলে পশু ওগুলোকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। পশু রুমেনে রাখা খাবার পুনরায় চিবিয়ে রুমেনে পাঠায়। আবার কিছু জীবাণু খাবারে কার্যক্রম চালু করে। এ সময় পশুটি কিছু এমাইনো এসিড ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স হজম করে নেয়। বাকী খাবার চলে যায় দ্বিতীয় অংশ তথা রেটিকিউলামে ৷ যত পদার্থ থাকবে তার সবই রেটিকিউলামে চলে যায়।

২. রেটিকিউলাম (Reticulam)

▪ রুমেনে খাদ্য বস্তু কিছুটা হজম হবার পর চেক পোস্ট রেটিকিউলামে আসে। সাথে বোতাম, পেরেক যত অগ্রহণযোগ্য বস্তু সব আসে যা এখানেই থেকে যাবে। ধারালো বস্তু হলে অন্তঃপর্দা ফুটো হয়ে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এই সময় রেটিকিউলামের ভেতরের এসব ক্ষতের ফলে ট্রমাটিক রেটিকিউলাম নামক রোগ দেখা দিতে পারে। রেটিকিউলামের ভিতরের মাংসল দেয়ালে চৌকো চৌকো ঘর আছে।

৩. ওমেসাম (Omasum)

▪ ওমেসাম কাটলে দেখা যাবে ভিতরে অনেকগুলো বই এর পাতার মতো একটার ভিতরে আরেকটা ঢুকানো আছে। এই মাংসল পাতার মতো অংশগুলো পরস্পর পরস্পরের সাথে ঘসে খাবারের জলীয় অংশ বের করে দেয়।

৪. এবোমেসাম (Abomasum)

▪ এবোমেসাম পাকস্থলীর সর্বশেষ অংশ। পাকস্থলীর জারক রস (Gastric juice) এখানেই কাজ করে। পরিষ্কার তরল খাদ্য এখানে এসে জারক রসের (Gastric juice) সাথে মিশে ক্ষুদ্র অন্ত্রে (Small Intestine) রক্তপ্রবাহে মিশে। সাথে সাথে বৃহৎ অন্ত্রেও (Large Intestine) চলে যায় হজম হওয়া না হওয়া খাদ্য ও জল।

▪ জলীয় অংশ বৃহৎ অস্ত্রে রক্তপ্রবাহে মিশে যায়। বাকী সব মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং গোবর হিসেবে পাওয়া যায়। গরু, মহিষ যেটুকু জল খায় তার শতভাগ ৭০ ভাগ থাকে দেহের কোষের মধ্যস্থিত তরল পদার্থের সাথে, ২০ ভাগ থাকে দুটো অণ্ডকোষের মধ্যবর্তী জায়গায় এবং বাকী ১০ ভাগ থাকে রক্তের সাথে।

See also  লাভজনক খামার করতে ও গরুর খামার করে লস করতে না চাইলে

গরু, মহিষ ও ছাগলের খাদ্য বিশ্লেষণঃ

▪ গরু, মহিষ ও ছাগলের খাদ্য হিসেবে যেসব পদার্থ ব্যবহৃত হয়, ওগুলো থেকে কি কি সার জিনিস পাওয়া যায়, ওগুলোর নাম কি, কিভাবে ওগুলো কাজে লাগে ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় জানা দরকার। আর তা জানার সাথে ওগুলোর বিশ্লেষণের বিষয়টির গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি পশুর খাদ্যের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ উল্লেখ করা হলো।

১. আমিষ খাদ্য

▪ এমাইনো এসিড গরু-মহিষের শরীরের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন। এই এসিড তাদের মাংসপেশী, দেহের অভ্যন্তর অংশের যন্ত্রাদি, চামড়া, চুল প্রভৃতি গঠনে বিশেষ সহায়ক। গরু-মহিষ যে সব আমিষ জাতীয় খাদ্য খায় তা থেকেই এসিড তৈরি হয়ে যায়।

▪ কচি ঘাসে আমিষ অংশ থাকে শতকরা ১২ ভাগ। সে তুলনায় শুকনো ঘাস বা খড়ে অনেক কম—মাত্র ৩-৪ ভাগ। খাদ্যের সাথে ইউরিয়া (Urea) সামান্য পরিমাণ খেতে দিলে তা থেকেও এই এমাইনো এসিড তৈরি হয়ে থাকে।

▪ সরিষার খইল, বাদামের খইল বা তিসির খইলে আমিষ অংশ থাকে প্রচুর পরিমাণে। তাছাড়া শুঁটি জাতীয় খাদ্য, যেমন—মটরছোলা, গমভাঙা প্রভৃতিতেও আমিষ খাদ্যাংশ থাকে।

▪ এমাইনো এসিড গরু-মহিষের খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণ থাকলে এই এসিড দুধ বাড়াতে খুব সাহায্য করে।

২. শর্করা খাদ্য

▪ শর্করা জাতীয় খাদ্যকে দু ভাগে ভাগ করা চলে-(১) নাইট্রোজেনযুক্ত খাবার এবং (২) আঁশযুক্ত খাবার। সব পশুর ক্ষেত্রেই এটি অত্যাবশ্যক। দেহের উত্তাপ বজায় রাখা, মাংসপেশী সচল রাখতে শক্তি যুগিয়ে সহায়তা করা প্রভৃতি কাজের জন্য নাইট্রোজেন ও আঁশ দুটোরই প্রয়োজন।

▪ মূত্রাশয়, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড প্রভৃতি অংশের সুষ্ঠু কাজের জন্য শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রয়োজন। বাড়তি শর্করা অর্থাৎ দেহের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন মিটিয়ে যেটুকু বাঁচে তা দেহের চর্বি হয়ে জমে থাকে। প্রয়োজনে এই চর্বিও দেহের কাজে লেগে যায়।

▪ শুঁটি ও অশুঁটি—দু রকম খাদ্যেই শর্করা থাকে। শুঁটি বলতে কলাই মটর, লুমার্ন প্রভৃতি এবং অশুঁটি বলতে জোয়ার, ভুট্টা বাজরা, ওট, ঘাস প্রভৃতি। শুঁটি জাতীয় খাদ্য অপেক্ষা অশুঁটি জাতীয় খাদ্যে শর্করার ভাগ কম থাকে। নাইট্রোজেনযুক্ত ও আঁশযুক্ত—উভয় খাদ্যেই রয়েছে কার্বন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। তবে দুটোর মধ্যে পরিমাণ থাকে কিছু কম-বেশি।

৩. খনিজ পদার্থ

▪ সব পশুখাদ্যেই কিছু পরিমাণ খনিজ পদার্থ থাকা চাই। এটি না থাকলে শরীর গঠনে ব্যাঘাত ঘটবে। যদিও খনিজ পদার্থ খাদ্যে কম পরিমাণে থাকে, তবু বলা যায় এর কার্যকারিতা অসীম। ঐ সামান্য পরিমাণ খনিজ পদার্থই অসামান্য কাজ করে থাকে।

▪ দেহের হাড় গঠনে, মাংসপেশী ও টিসু গঠনে, রক্তের নিজস্ব ধর্ম বজায় রাখতে, রক্ত ও অন্যান্য রসের রাসায়নিক চাপ, বজায় রাখতে এবং আরও অনেক কাজে খনিজ পদার্থ দরকার।

▪ তরল পদার্থের মধ্যে কিছু ঘন ও কিছু জলীয় বা পাতলা জিনিস। দুটি তরল পদার্থের মাঝে একটা সূক্ষ্ম পর্দা আছে, এই পর্দা ভেদ করে জলীয় তরল পদার্থ প্রবেশ করতে পারে। সময়কালে একই ঘনত্বে এসে যায় তরল পদার্থ দুটো। একে বলে ‘ওসমটিক’ চাপ। এই চাপের জন্যেই কোষে কোষে খাবার ও আবর্জনা বেরিয়ে আসে।

▪ পশুদের খাদ্যে খনিজ পদার্থ দরকার, একথা বললেই যথেষ্ট হ’লো না। কি কি খনিজ পদার্থ দরকার তাও জানা থাকা প্রয়োজন। সোডিয়াম, সালফার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, পটাসিয়াম, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাগানিজ, কোবন্ট, আয়োডিন, তামা, সেলেনিয়াম, দস্তা—এইসব খনিজ পদার্থ পশুখাদ্যে থাকা প্রয়োজন। পশুর উৎপাদন ও স্বাস্থ্যে এদের বিরাট অবদান।

▪ ঘাস ও লতাপাতা থেকে এইসব খনিজ দ্রব্য পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘাস বা লতাপাতা যদি না পাওয়া যায় তাহলে? তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা হ’লো ওষুধ বিশেষ ৷ ভিটোমিক্স (Vitomix) ও নিওবিমিন ফোর্ট (Nuvumine forte) -এই ধরনের ঔষুধ। তাছাড়া অন্য ঔষুধও আছে, যেমন—মিনারাল মিকশ্চার (Munieral Mixture) রোবিমিক্স (Robimix) প্রভৃতি।

৪. স্নেহ পদার্থ

▪ অস্থিসন্ধি তৈলাক্ত রাখতে এই স্নেহ পদার্থের বিশেষ প্রয়োজন। এটি না থাকলে একটা অস্থির সাথে অন্য অস্থির ঘর্ষণের সময় খট্ খট্ শব্দ হবে।

▪ তাছাড়া আরও একটি কাজ করে স্নেহ পদার্থ। স্নেহ পদার্থ খাদ্যে না থাকলে খাদ্য আত্মসাৎ ও শক্তি যোগানে টান পড়বে এবং তাতে দেহ গঠনে ব্যাঘাত ঘটবে।

See also  গর্ভবতী গাভীর যত্ন

▪ স্নেহ জাতীয় পদার্থ থেকে পাওয়া যায় তেল ও চর্বি। দুটোই তৈলাক্ত পদার্থ হলেও চর্বি কঠিন ও তেল তরল। শক্তি যোগানোর কাজে চর্বি ও তেল-দুয়েরই অবদান আছে।

▪ তাছাড়া ভিটামিন আত্মসাতের জন্য তো প্রয়োজন আছেই। সরিষা, বাদাম, তিসি প্রভৃতি খইলে স্নেহ পদার্থ থাকে যথেষ্ট পরিমাণ। বাদাম, সোয়াবিন প্রভৃতি দানা জাতীয় খাদ্যেও স্নেহ পদার্থ থাকে। কচি ঘাসেও সামান্য পরিমাণ পাওয়া যায় স্নেহ পদার্থ।

▪ পশুদের হজমের সময় স্নেহ পদার্থগুলো ভেঙ্গে গ্লিসারিণ ও উচ্চ মানের ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়। যে-সব ফ্যাটি এসিডে ভাঙ্গে সেগুলো হ’লো পাল্মিটিক এসিড (Palmitic Acid), ওলিক (Ollic), স্টিয়ারিক (Stearic) প্রভৃতি। পাল্মিটিক ও স্টিয়ারিক এসিড বেশি থাকলে তৈল জাতীয় কঠিন পদার্থ অর্থাৎ চর্বি উৎপন্ন হয় এবং ওলিক (Olic) এসিড বেশি থাকলে তৈল জাতীয় তরল পদার্থ বা তেল উৎপন্ন হয়। এই সব ফ্যাটি এসিড ক্ষুদ্র অন্ত্রে (Small Intestine) ভেঙ্গে যায় এবং ঐ কোষের শুঁড়ের (Villi) সাহায্যে দেহে আত্মসাৎ হয়ে যায়।

▪ মনে রাখতে হবে যে স্নেহ পদার্থ বেশি পরিমাণে খাওয়ানো মোটেই উচিত নয়। তাহলে পশু আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাদ্য বেশি খেতে চাইবে না। ফলে, শারীরিক গঠন ও স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর হবে। এই স্নেহ পদার্থ শরীরে বেশি প্রবেশ করলে বমি-ভাব দেখা দেবে, খাদ্যে অরুচি আসবে।

▪ পশু সাধারণভাবে যে-সব খাদ্য খায় তা থেকেই তাদের দেহের প্রয়োজনমত স্নেহ পদার্থ মিলে যায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, পশুকে যে খাদ্য খেতে দেওয়া হচ্ছে তাতে স্নেহ পদার্থ অর্থাৎ তৈলাক্ত বস্তু আছে কি না।

৫. ভিটামিন

ভিটামিনকে বলা হয় ‘খাদ্যপ্ৰাণ’। একথা বলার একটা বিশেষ অর্থ আছে। গরু-মহিষকে যে খাদ্যই খাওয়ানো যাক, তাতে ভিটামিন অবশ্যই থাকা চাই। এটা খাদ্যে না থাকলে নানা রকম অসুবিধা দেখা দেয়। যেমন-

১. শরীর দুর্বল ও ক্ষীণকায় হয়ে পড়ে;

২. হাড় জিরজিরে হাড্ডিসার, হয়ে পড়ে;

৩. দৃষ্টিশক্তি কমে যায়;

৪. খাওয়ায় স্ফূর্তি থাকে না, অরুচি দেখা দেয়;

৫. বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়;

৬. কোনো রোগ হলে তা শত চিকিৎসাতেও সারতে চায় না;

৭. বাছুরগুলোরও ঐসব অসুবিধা দেখা দেয়;

৮. শুয়ে থাকতে ভালোবাসে, দাঁড়াতে বা হাঁটাতে চায় না;

৯. সব সময় তিরিক্ষে মেজাজ হয়ে থাকে;

১০. দুধেল গাই দুধ দিতে চায় না বা খুব কম দেয়।

সাধারণভাবে গরু বা মহিষকে আলাদা করে ভিটামিন দেবার দরকার হয় না। যা তাদের খেতে দেওয়া হয় তার মধ্যেই তারা দেহের প্রয়োজনমত ভিটামিন পেয়ে যায়।

৬. লবণ

লবণ খাদ্যের স্বাদ বাড়ায়। তাছাড়া কিছুটা জলের কাজও করে থাকে। কিন্তু লবণের ভাগ বেশি থাকলে মূত্রগ্রন্থির মাধ্যমে তা ছেঁকে বের হবে। ফলে প্রস্রাব কম হবে। প্রস্রাব বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এরকম হলে রক্তে জল জমে যাবে, টিসুতেও জল জমতে পারে। এরকম হলে গোদ জাতীয় রোগ হতে পারে। যদি এ রকম রোগ দেখা দেয় তাহলে তৎক্ষণাৎ লবণ খাওয়ানো বন্ধ করে দিতে হবে। লবণ আছে এমন খাদ্য খাওয়ানোও কমিয়ে ফেলতে হবে বা বন্ধ করে দিতে হবে।

জলের প্রয়োজনীয়তাঃ

▪ পশুর অন্যান্য খাদ্যের মতো জল দেহের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন। যত জলই তারা খাক, তার বেশির ভাগই বেরিয়ে যায় মল, মূত্র বা ঘামের আকারে। শরীরের প্রয়োজনে যেটুকু দরকার কেবল সেটুকুই থেকে যায়।

▪ পাকস্থলিতে জল ও খাবার থেকে পাচক রসের সাহায্যে তৈরি হয় তৈলাক্ত পদার্থ। তৈলাক্ত পদার্থ না থাকলে দেহগঠনে অসুবিধা দেখা দেয় সেই তৈলাক্ত পদার্থটিকে যথাস্থানে পৌঁছে দেয়। আবার এই জলই দেহের দূষিত পদার্থসমূহকে যেমন-মল, মূত্র, ঘাম বাইরে বের করে দেয়। কোনো রকম শারীরিক অসামঞ্জস্যের জন্য যদি মল বা মূত্র আটকে যায় তাহলে পশুটি মারা যেতে পারে। জল ভেতরে নেওয়া ও বাইরে বের করে দেওয়া—দুয়ের মধ্যে একটা ভারসাম্য (balance) থাকে। একে বলা হয় লের ভারসাম্য (Water balance)।

▪ পশুর দেহে থাকে অসংখ্য কোষ (Cell)। অনেক কোষ নিয়ে গঠিত হয় টিসু (Tissue)। পশু যতটুকু জল পান করে তার প্রায় ৬০ শতাংশ থাকে এই সব টিসুতে। জল ব্যতীত সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়াম দেহে কোনো কাজ করতে পারে না। জল রেচনে যাবতীয় পদার্থকে গলিয়ে নেয় এবং গলানো তরল পদার্থ বের করে দেয় বাইরে।

See also  দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন, পরিচর্যা ও সুষম খাদ্য তালিকা

▪ পশুদেহে জল বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। কোষমধ্যস্থিত তরল পদার্থে জল থাকে শতকরা ৭০ ভাগ, দুটো কোষের মাঝখানে থাকে শতকরা ২০ ভাগ এবং বাকী শতকরা ১০ ভাগ থাকে রক্তে।

সাহায্যকারী খাদ্যঃ

=এমন কতকগুলো জিনিস আছে যা খাদ্য নয়-খাদ্যকে নানাভাবে সাহায্য করে মাত্র। তাই এগুলোকে সাহায্যকারী খাদ্য বলা যেতে পারে। এগুলো আসলে রাসায়নিক পদার্থ। খাদ্যকে সাহায্য করার ফলে পশুর শরীরে নানারকম উপকার হয়। এতে পশুর উৎপাদন-ক্ষমতা বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ-ক্ষমতা জন্মে। এইসব সাহায্যকারী খাদ্য হলো—১. হর্মোন, ২. আর্সেনিক, ৩. এন্টিবাইওটিক, ৪. সোডা জাতীয় পদার্থ এবং ৫. ইউরিয়া।

১. হর্মোন

দেহের ভেতরে কয়েকটি নালীহীন গ্রন্থি রয়েছে। এদের কাজ রক্তের সাথে তাদের রস সরাসরি মিশিয়ে দেওয়া। এই রসটার নাম হর্মোন (Hormone) হর্মোনের কাজ দুধ, মাংস প্রভৃতির উৎপাদন বাড়ানো। এই হর্মোনের ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে, যেমন-স্টিলবেস্টারেল (Stilbestarel), আইয়োডিনেটেড্ কেসিন (Iodinated casein) প্রভৃতি। দেহে এইসব হর্মোনের অভাব হলে বাইরে থেকে সংগ্রহ করে দেহে ইনজেকশানের মাধ্যমে প্রবেশ করানো চলে, তাতেও কাজ হবে।

২. আর্সেনিক

আসলে এটা বিষ হলেও একে সাহায্যকারী খাদ্যের আওতায় ফেলা যায়। অনেক পশুদের আর্সেনিক প্রয়োজন হয়। এতে কোনো ক্ষতি না হয়ে উপকারই হয়। শরীরের গঠন মজবুত করতে আর্সেনিকের অবদান আছে। নাইট্রো আর্সেনিক এসিড অন্যতম সাহায্যকারী খাদ্য।

৩. এন্টিবাইওটিক

▪ অনেক সময় দেখা যায়, গরু বা মহিষের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে, উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। দুধ আর আগের মতো হয় না। মাংসও আশানুরূপ আশা করা যায় না। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে এন্টিবাইওটিক কম হয়েছে। দেহে এন্টিবাইওটিক কম হলে পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে যে কোনো মুহূর্তে কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে।

▪ এন্টিবাইওটিক পশুদেহে প্রবেশ করালে আবার গরু বা মহিষ আগের মতো স্বাস্থ্যবান হবে-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তার দেহে জন্মাবে। পেনিসিলিন, টেরামাইসিন, স্টেপটোমাইসিন, ওরিওমাইসিন, হাইগ্রমাইসিন প্রভৃতি দ্বারা অ্যান্টিবাইওটিকের অভাব পূরণ হতে পারে। এইসব ওষুধের কাজ হচ্ছে রোগ- জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করা।

৪. সোডা জাতীয় পদার্থ

স্নেহ জাতীয় খাদ্যকে খুব সহজে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকণায় ভেঙে দেবার জন্য সোডা জাতীয় পদার্থ দরকার। এতে পরিপাক-ক্রিয়া সহজতর হয়। স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এটির যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। সোডা জাতীয় পদার্থ বলতে ভিম, সার্ফ বা ঐ জাতীয় কোনো জিনিস। আসলে এটা হ’লো ক্ষার জাতীয় পদার্থ। পরিপাক- ক্রিয়ায় ক্ষার জাতীয় পদার্থের যথেষ্ট অবদান থাকে।

৫. ইউরিয়া

▪ ইউরিয়া এই নামটার সাথে অল্প-বিস্তর সবাই আমরা পরিচিত। জমির ফসল বাড়াতে এই বস্তুটির খুব প্রয়োজন। ইউরিয়া গরু-মহিষকে খাওয়ানো চলে। এতে কোনো অপকার হবে না, বরং উপকার হবে খুবই। তবে পরিমাণটা থাকবে কম।

▪ গরু বা মহিষের দেহের ওজন বুঝে এটি খেতে দিতে হবে। যদি ওজন ৩০০ কেজি বা তার কাছাকাছি হয় তাহলে দিনে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া খাওয়ানো চলে। অন্য খাদ্যের সাথে এটি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ইউরিয়ায় শতকরা ৪০ ভাগ নাইট্রোজেন থাকে।

▪ পশুদেহের মধ্যস্থিত হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও কার্বনের সাথে ইউরিয়া হতে প্রাপ্ত নাইট্রোজেন মিশে তৈরি হয় এমাইনো এসিড। আমিষ খাদ্যের সাথে ইউরিয়া মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। মনে রাখতে হবে এমাইনো এসিড হ’লো আমিষের শেষাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!