Skip to content

 

Wait...❤😘 Show love? ⬇⬇⬇

পাংগাস মাছের চাষ ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা

মাছের চাষ ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা
Table of contents

পাংগাস এদেশের মানুষের অতি প্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। কিছুদিন আগেও সবার ধারণা ছিল পাংগাস শুধুই নদীর মাছ। এককালে এদেশের নদী-নালায় প্রচুর পাংগাস পাওয়া গেলেও বর্তমানে বিভিন্ন কারণে এর প্রাপ্যতা অনেক কমে গেছে।

আমাদের দেশে নদীতে যে প্রজাতির পাংগাস পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম ‘পাংগাসিয়াস পাংগাসিয়াস্’। যতদূর জানা যায়, ১৯৪৫ সালে খুলনা অঞ্চলে সর্বপ্রথম নদী থেকে পোনা সংগ্রহ করে দেশিয় পাংগাস চাষ শুরু হয়। কিন্তু সঠিক চাষাবাদ পদ্ধতি না জানার কারণে তা জনপ্রিয়তা পায় নি। সে সময় পাংগাস মাছের চাষ নদী থেকে সংগৃহীত পোনার উপরই নির্ভরশীল ছিল।

বর্তমানে দেশি পাংগাসের প্রাপ্যতা নানা কারণে অনেক কমে গেছে। বদ্ধ জলাশয়ে দেশি পাংগাস চাষ করে সুফল পাওয়া যায় নি। তার অন্যতম কারণ হলো পোনার দুষ্প্রাপ্যতা ও চাষ প্রযুক্তির অভাব।

দেশি পাংগাস (Pangasius pangasius) ও থাই পাংগাস (Pangasius sutchi) পরিচিত

  • বর্তমানে আমাদের দেশে মৎস্য চাষীরা যে প্রজাতির পাংগাস চাষে আগ্রহী তাকে পাংগাসিয়াস সূচি বা ‘থাই পাংগাস’ বলা হয়। দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক উৎপাদনক্ষম মাছ হিসেবে থাই পাংগাস তুলনাহীন। বাংলাদেশের আবহাওয়া, মাটি ও পানি থাই পাংগাস চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী।
  • দেশি পাংগাস চাষের অসুবিধা বিবেচনা করে ১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম থাই পাংগাসের ৫.১৮ গ্রাম ওজনের ১,০০০টি পোনা থাইল্যান্ড থেকে এনে মৎস্য অধিদফতর ও মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করে। ১৯৯৩ সালে মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট, চাঁদপুর ইউনিট এবং মৎস্য অধিদফতরাধীন ফরিদপুর মৎস্য প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রে পাংগাসিয়াস সূচি বা থাই পাংগাসের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা লাভ করে।
  • ১৯৯৪ সনে সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার নরসিংদী ও টংগীতে থাই পাংগাসের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কাজ সফলভাবে শুরু হয় এবং থাই পাংগাস চাষে ব্যাপক প্রসার পায়। বর্তমানে সরকারি খামারের পাশাপাশি বেসরকারি হ্যাচারি মালিকরা থাই পাংগাসের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তাই পাংগাসের পোনা পাওয়াটা বর্তমানে অনেকটা সহজতর হয়ে উঠেছে এবং মৎস্য চাষীরাও পাংগাস চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসছে।
  • এ মাছের আদি বাস বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড ও কম্পুচিয়া। এ মাছ বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে যেমন: পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় পাওয়া যায়। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত বিভিন্ন নদীতে এদের পোনা পাওয়া যায়। দেশি পাংগাস দেখতে রূপালি রঙের, তবে পিঠের দিক। কালচে এবং পার্শ্ব রেখার উপরের দিক ঈষৎ ধূসর। গায়ে কোনো আঁশ নেই। ওজনে ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাংগাস সর্বভূক প্রকৃতির মাছ। এ মাছ সুস্বাদু ও দামী হিসেবে
  • এ মাছের আদিবাস থাইল্যান্ড, কম্পুচিয়া ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ড থেকে সর্বপ্রথম থাই পাংগাসের পোনা বাংলাদেশে আসে। মাছটির উপরের অংশে নীলাভ লম্বালম্বি দাগ এবং তলদেশ উজ্জল সাদা। আকারে ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হয়। দেশি পাংগ্রাসের তুলনায় থাই পাংগাসের চাষ অধিক লাভজনক ও সহজ। বছরে ১-১.৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

পাংগাস চাষের সম্ভাবনা

  • থাই পাংগাস চাষ বদ্ধ জলাশয়ে বিশেষ করে পুকুরে খুবই উপযোগী। তাই এর চাষের এলাকা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু পুকুরই নয়, থাই পাংগাস খাঁচায় চাষের জন্যও খুবই উপযোগী। আমাদের দেশের অত্যন্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয় রুই জাতীয় মাছের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি উৎপাদন ক্ষমতার কারণে একমাত্র থাই পাংগাসই পারে দেশের প্রাণিজ আমিষের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে। আর এজন্য প্রয়োজন অনতিবিলম্বে উন্নত পদ্ধতিতে থাই পাংগাস চাষ সম্প্রসারণের জন্য ব্যাপক সরকারি ও বেসরকারি কার্যক্রম গ্রহণ করা।
  • মৎস্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৮-৮৯ সালে মাছ আহরণে কার্প ফিশের অবদান ছিল ২.৮৩%। বাংলাদেশে বিপুল পানি সম্পদে পাংগাস চাষ করে এ অবদান আরো অনেকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
  • মৎস্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত যে, চিংড়ির রোগ প্রতিরোধের জন্য চিংড়ির খামারগুলোতে ২-৩ বছর চিংড়ি চাষের পর ১-২ বছর অন্য মাছের চাষ করা উচিত। সে ক্ষেত্রে যেহেতু পাংগাস মৃদু লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। তাই চিংড়ি খামারগুলোতে চিংড়ির পর পাংগাস চাষ অধিক লাভজনক হবে বলে ধারণা করা যায়।
  • যে সব জলাশয়ে বা নিম্নাঞ্চলে ৪-৫ মাস পানি থাকে, সেখানেও পাংগাস চাষ করা সম্ভব। ৪-৫ ইঞ্চি আকারের পোনা মজুদ করে ৪-৫ মাসের মধ্যেই সুষম খাবার প্রয়োগ করলে পাংগাস ৫০০-৬০০ গ্রামের উপরে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে পারে ও বাজারজাতের উপযোগী হয়। বাংলাদেশে সুষম দানাদার খাবার প্রয়োগ করে ১ বছরে পাংগাস ও কাতলা বা সিলভার কার্প এর মিশ্রচাষ করে একর প্রতি ৬-৭ টন মাছ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

পাংগাস চাষের সুবিধাসমূহ

১. জনগণের কাছে সুপরিচিত ও পছন্দনীয়।

২. মাছটি রাক্ষুসে স্বভাবের নয় বলে রুই জাতীয় মাছের সাথে মিশ্রচাষ করা যায়।

৩. ছোট বড় সব ধরনের জলাশয়ে চাষ করা যায়।

৪. দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক ঘনত্বে চাষযোগ্য এবং বেঁচে থাকার হারও অধিক।

৫. সর্বভূক বলে যে কোনো সম্পূরক খাদ্য দিয়ে চাষ করা যায়।

See also  আধুনিক পদ্ধতিতে মাছের পোনা উৎপাদন ও পরিচর্যা, মাছের পোনা উৎপাদন, রেনু পোনা উৎপাদন

৬. প্রতিকূল অবস্থায় (অর্থাৎ অল্প অক্সিজেন, পি.এইচ. এবং ঘোলাত্বের তারতম্য ইত্যাদি) এ মাছ বাঁচতে পারে ও বড় হয়।

৭. সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।

৮. বাজারে চাহিদা প্রচুর এবং বাজার দর বেশি।

৯. এ মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।

১০. মিঠা পানি ও মৃদু লোনা পানিতে চাষ করা যায়।

১১. মৌসুমী অথবা বাৎসরিক যে কোনো ধরনের ছোট বড় পুকুর, দীঘি ও পরিত্যক্ত জলাশয়ে চাষ করা যায়।

১২. চিংড়ির তুলনায় চাষে ঝুঁকি কম।

১৩. সহজে জলাশয়ের সব মাছ ধরা যায়।

১৪. জীবিত মাছ পরিবহন করা সহজ এবং জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা সম্ভব।

১৫. অল্প সময়ে লাভজনকভাবে চাষ করা যায়।

১৬. বিদেশে রফতানিযোগ্য।

পাংগাস চাষে সমস্যাবলি

পাংগাস চাষে কিছু সমস্যাও আছে। তবে সমস্যাগুলো স্থায়ী নয়। একটু আন্তরিক হলে সমস্যাসমূহ সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। পাংগাস চাষে সমস্যাগুলো নিম্নরূপ:

১. সময়মতো পোনা নাও পাওয়া যেতে পারে। শুধু বর্ষাকালে পোনা পাওয়া যায়।

২. চাষাবাদ সঠিকভাবে না হলে আশানুরূপ ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে।

৩. নিয়মিত আমিষ সমৃদ্ধ সম্পূরক দানাদার খাদ্য প্রয়োগে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আমিষ সমৃদ্ধ দানাদার খাবার ব্যয় বহুল। ফলে গরীব চাষীদের জন্য সফলতা নাও আসতে পারে।

৪. পুকুরে নিবিড়ভাবে চাষ করা হলে জীব বৈচিত্রের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

৫. বড়শি ও জাল দিয়ে সহজে ধরা যায় বিধায় চুরির সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৬. অতি গভীর ও অগভীর পানিতে উৎপাদন খুব বেশি সুবিধাজনক হয় না।

জৈবিক বৈশিষ্ট্যসমূহ

১. স্ত্রী এবং পুরুক মাছ আলাদা এবং তাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যও আলাদা।

২. পুকুরে সাধারণত ডিম ছাড়ে না। প্রাকৃতিক পরিবেশে (সাধারণত গভীর নদীতে) স্ত্রী ও পুরুষের বাহ্যিকভাবে মিলন ঘটে ডিম নিষিক্ত হয়। পুকুরে এরা যৌবনপ্রাপ্ত হতে পারে এবং প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমে হ্যাচারিতে প্রজনন করা যায়।

৩. এরা সর্বভোজী। পানির তলদেশে প্রধানত এদের বিচরণ ক্ষেত্র। তবে চাষাবাদ অবস্থায় পুকুরের সব অংশেই চলাচল করে।

৪. পাংগাস মাছ প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ভাসমান উদ্ভিদ এবং প্রাণীকণা, পানির তলদেশের বিভিন্ন জলজকীট, কেঁচো, ছোট শামুক ইত্যাদি গ্রহণ করে। তবে চাষাবাদ অবস্থায় খইল, কুড়া, ভুষি, হাঁস- মুরগির নাড়ি-ভুঁড়ি, গবাদিপশুর রক্তসহ খাদ্য উপযোগী অনেক কিছুই খেয়ে থাকে।

৫. এরা খাদ্য প্রধানত দিনের বেলায় খেয়ে থাকে। তবে প্রয়োজনে রাতেও খাদ্য গ্রহণ করে

৬. এদের বেঁচে থাকার মতো অক্সিজেন চাহিদা কার্প এবং চিংড়ির চেয়ে কম। সাধারণতভাবে প্রতিকূল পরিবেশেও এরা সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

পুকুর নির্বাচন

ছোট-বড় যে কোনো আয়তনের পুকুরেই পাংগাস চাষ করা যায়। তবে পুকুর নির্বাচনের বেলায় নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করলে ভালো হয়:

১. চাষের জন্য আয়তকার পুকুর সুবিধেজনক। আয়তকার পুকুরে খাদ্য, সার, ও ওষুধ প্রয়োগ করা ও মাছ ধরা সহজ।

২. পানির গভীরতা ৬-৭ ফুট হলে ভালো হয়।

৩. পুকুরের পাড় বন্যামুক্ত উঁচু ও মজবুত হতে হবে।

৪. পুকুরের তলা সমান ও পাড় ঢালু হতে হবে, যাতে জাল টেনে সহজে মাছ ধরা যায়।

৫. যে গাছের পাতা পড়ড়ে ও পঁচে পানি নষ্ট হয় এমন গাছ পাড়ে না থাকাই ভালো।

৬. পুকুরের পানিতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ার ও বাতাস লাগার সুবিধে থাকতে হবে।

৭. পুকুরের কাছাকাছি অগভীর নলকূপ থাকলে ভালো, যাতে প্রয়োজনে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়।

৮. যে পুকুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো, সেসব পুকুরেই পাংগাস চাষ করা উচিত।

৯. অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের সুবিধে থাকা প্রয়োজন।

পুকুর প্রস্তুতি

পুকুর প্রস্তুতির অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলো কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা যায়। যথা:

ক. মজুদ পূর্ব ব্যবস্থাপনা, খ. মজুদকালীন ব্যবস্থাপনা, গ. মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা। এ ধাপ ৩টিকে পর্যায় ক্রমিকভাবে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভাগ করা হয়েছে। ধাপসমূহ নিম্নে দেখানো হলো:

ক. মজুদ পূর্ব ব্যবস্থাপনা: ১. আগাছা দমন। ২. রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকারক প্রাণী অপসারণ। ৩. পাড় ও তলা মেরামত। ৪. চুন প্রয়োগ। ৫. পুকুর প্রস্তুতকালীন সার প্রয়োগ। ৬. প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণ। ৭. পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা।

খ. মজুদকালীন ব্যবস্থাপনা: ১. পোনার জাত ও ঘনত্ব নির্ধারণ। ২. পোনা পরিবহন। ৩. পোনা মজুদকরণ।

গ. মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা: ১. পোনার বাঁচার হার পর্যবেক্ষণ। ২. সার প্রয়োগ। ৩. সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ। ৪. নমুনায়ন। ৫. আহরণ ও বাজারজাতকরণ। ৬. পুনঃ মজুদ।

ক. মজুদ পূর্ব ব্যবস্থাপনা

১. আগাছা দমন:

পুকুরে ভাসমান, লতানো, নিমজ্জিত ও নির্গমনশীল ইত্যাদি জলজ আগাছা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে পরিষ্কার করা যায়। আবার কিছু কার্যকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করেও এ কাজটি করা যায়। তবে কায়িক শ্রমের মাধ্যমে আগাছা পরিষ্কার করাই উত্তম।

২. রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকারক প্রাণী অপসারণ:

পুকুরে রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকারক প্রাণী

থাকলেও পাংগাস মাছ চাষে সফলতা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই পুকুর সেচে এসব রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকারক প্রাণী অপসারণ করতে হবে। পুকুর সেচা সম্ভব না হলে ঘন ফাঁসের জাল টেনেও তা করা যেতে পারে। আবার কিছু কার্যকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেও কাজটি করা যেতে পারে।

৩. পাড় ও তলা মেরামত

পুকুরের তলায় অধিক কাদা জমলে বা তলা ভরাট হয়ে থাকলে তলার অতিরিক্ত কাদা তুলে ফেলতে হবে। পুকুর শুকানোর ভাঙা পাড় ও অসমতল তলা মেরামত করতে হবে। পাড়ের জঙ্গল ও গাছের অ-প্রয়োজনীয় ডাল-পালা কেটে ফেলতে হবে।

৪. চুন প্রয়োগ

মাটি ও পানির অবস্থা ভেদে চুন প্রয়োগের মাত্রার তারতম্য ঘটতে পারে। উর্বর দো-আঁশ বাদামি মাটিতে চুন কম লাগে এবং অনুর্বর লাল মাটিতে চুনের মাত্রা বেশি লাগে। স্বাভাবিক মাত্রা হিসেবে প্রতি শতাংশে ১ কেজি পাথুরে চুন সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে ব্যবহার করা যায়।

৫. চুন প্রয়োগের উপকারিতা:

ক. মাটি ও পানির অম্লত্ব নিরপেক্ষ থাকে।

See also  আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ এর জন্য মাটিতে যেসব পরিপুষ্টি পদার্থ বিদ্যমান থাকতে হয় + পুকুরের মাটির প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য, মাছ চাষে নাইট্রেজেন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, জৈব পদার্থ, দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, পানির তাপ, জলজ গাছ-গাছড়া, পটাশ এর ব্যবহার#মাছ চাষে উন্নত ব্যবস্থাপনা#মাছ চাষের উপায়#মাছ চাষ কিভাবে করা যায়

খ. পুকুরের পানির ক্ষারত্বের মাত্রা বেশি রাখে, ফলে পি. এইচ. এর মান ওঠা-নামার হার প্রশমিত হয়।

গ. বাজে গ্যাস ও রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ হয় ৷

ঘ. পানিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির পর্যাপ্ততা সৃষ্টি হয়।

ঙ. পানির ঘোলাত্ব দূর হয়।

৬. পুকুর প্রস্তুতকালীন সার প্রয়োগ

  • পুকুরে সার প্রয়োগের উদ্দেশ্য হলো মজুদকৃত পোনার প্রাথমিক খাদ্য প্লাংক্‌টন্‌ উৎপাদন বৃদ্ধি করা। প্লাংকটন উৎপাদনের জন্য পুকুরে জৈব ও অজৈব সার ব্যবহার করা হয়।
  • চুন প্রয়োগের ৬-৭ দিন পর সার ব্যবহার করতে হবে। নতুন ও বেলে মাটির পুকুরে জৈব সারের প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
  • আবার পুরাতন কাদাযুক্ত পুকুরে অজৈব বা রাসায়নিক সারের প্রাধান্য দিতে হবে।
  • জৈব সার হিসাবে গোবর, মুরগির বিষ্ঠা এবং অজৈব সার হিসেবে ইউরিয়া, টি.এস. পি ব্যবহার করা যেতে পারে। পুকুর প্রস্তুতকালীন সময়ে প্রতি শতাংশে ৫-৭ কেজি গোবর অথবা ৩-৫ কেজি মুরগির বিষ্ঠার সাথে ১০০ গ্রাম টি.এস.পি একত্রে মিশিয়ে নিতে হবে।
  • উপরোক্ত সারের মিশ্রণটি ৭-৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। ৪-৫ দিন পর পানির রং সবুজ বা বাদামি হলেই বুঝতে হবে পুকুরটি পোনা মজুদের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।

৭. প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণ

সার প্রয়োগের ফলে পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের স্বাস্থ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপুর্ণ। প্রাকৃতিক খাদ্য বা প্লাংক্‌টন্‌ সঠিকভাবে তৈরি হয়েছে কিনা তা বুঝার জন্য সেকিডিস্ক, হাতের তালু ও স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস ব্যবহার করতে হয়।

৮. পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা

পানির বিষাক্ততা পরীক্ষার জন্য পুকুরে একটি হাপা টাঙ্গিয়ে তার মধ্যে ১৫-২০টি পোনা ছেড়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। যদি এ সময়ের মধ্যে পোনা সুস্থ থাকে ও মারা না যায়, তা হলে বুঝতে হবে পানিতে বিষাক্ততা নেই। এ অবস্থায় পোনা মজুদ করা যাবে। যদি পোনা মারা যায় বা দুর্বল হয়, তাহলে আরো ৮-১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

খ. মজুদকালীন ব্যবস্থাপনা

১. পোনার জাত ও ঘনত্ব নির্ধারণ:

পাংগাস মাছের চাষ ব্যবস্থাপনায় পোনা মজুদের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটির সাথে জড়িত রয়েছে পোনা মজুদ সংখ্যা, পোনা পরিবহন ও মজুদকরণ ইত্যাদি বিষয়, যা সতর্কতার সাথে করা উচিত।

পাংগাস মাছের চাষ সাধারণভাবে ৪ পদ্ধতিতে করা যায়-

২. একক চাষ পদ্ধতি:

পুকুরে যদি শুধু পাংগাস মাছ এককভাবে চাষ করা হয় তবে তাকে ‘একক চাষাবাদ’ বলে। সাধারণত নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে এটি করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রতি নির্ভরশীলতা থাকে না। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য দিতে হয়। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে একর প্রতি ৫-৭ টন পাংগাস উৎপাদন সম্ভব।

৩. মিশ্রচাষ পদ্ধতি:

পুকুরে পাংগাসের সাথে অন্যান্য প্রজাতির মাছ একসাথে চাষাবাদ করা হলে তাকে ‘মিশ্রচাষ পদ্ধতি’ বলে। এ ব্যবস্থায় পাংগাসের সাথে অন্যসব প্রজাতির মাছ এমনভাবে নির্বাচন করা হয়, যাতে খাদ্য ও বাবস্থানের ব্যাপারে কারো মাঝে কোনো প্রতিযোগিতা না হয়। এর ফলে পুকুরের প্রতিটি স্তরের খাদ্যের ব্যবহার যথার্থ হয়। এ ব্যবস্থায় পুকুরে সুষম খাদ্যের পাশাপাশি সার ব্যবহার করা হয়। পাংগাসের সাথে কাতলা, সিল্ভার কার্প মিশ্রচাষ করে একর প্রতি ৭-৮ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।

৪. সমন্বিত চাষ পদ্ধতি:

পুকুরে পাংগাসের মিশ্রচাষ এবং পানির উপর বা পাড়ে হাঁস মুরগির চাষ করা হলে তাকে ‘সমন্বিত চাষ’ বলে।

৫. খাঁচায় চাষ পদ্ধতি:

বড় দীঘি, নদী, বিল অথবা বর্ষাকালে প্লাবন ভূমিতে খাঁচায় যদি পাংগাসের চাষ করা হয় তাকে ‘খাঁচায় চাষ পদ্ধতি’ বলে। এ ব্যবস্থায় সম্পূরক খাদ্য অথবা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য পিলেট আকারে দিতে হয়। পাংগাস সাধারণত এককভাবে অথবা মিশ্রভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। এককভাবে চাষ করতে হলে প্রতি শতাংশে ৩- ৪ ইঞ্চি আকারের ১০০-১২০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে যদি পুকুরে পানির গভীরতা ৫-৬ ফুট হয়। মিশ্র চাষের বেলায় প্রতি শতাংশে ৯০-১০০টি পাংগাসের পোনার সাথে ৪-৫টি সিল্ভার কার্প বা কাতলার পোনা ছাড়া যেতে পারে।

৬. পোনা পরিবহন

পোনা পরিবহনের সফলতার সাথে জড়িত পোনা ধরা ও খাপ খাওয়ানো। ঘন ফাঁসের নরম জাল দিয়ে খুব ভোরে পাংগাসের পোনা ধরতে হবে। কোনো অবস্থায়ই একই পুকুর থেকে প্রতিদিন পোনা ধরা যাবে না। চাহিদা অনুযায়ী পোনা ধরে একটি চৌবাচ্চায় ৪-৫ ঘণ্টা উপোস রেখে পেট খালি করে টেকসই করে নিতে হবে। এ সময় চৌবাচ্চায় পানির ঝরনার ব্যবস্থা করতে হবে। পেট খালি অবস্থায় পোনা পরিবহন করলে পরিবহন কালে এদের পায়খানায় পানি দূষিত হবে না। পোনার পরিমাণ কম হলে সনাতন পদ্ধতিতে পাতিলে করে পরিবহন করলে অসুবিধা হবে না। ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছা যায় এমন স্থানে অক্সিজেন ব্যাগে করে পোনা পরিবহন করা ভালো। পি.ভি.সি পাত্র বা ড্রামে ২০ থেকে ২০০ লিটারের পানি ধরে এমন পাত্রের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার পথও পরিবহন করা যায়। পোনা যাতে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে পারে, সেজন্য পাত্রের উপরের দিক খোলা রাখতে হবে।

৭. পোনা মজুদকরণ

পোনা মাছ কোমল শিশুর মতো। সামান্য প্রতিকূল অবস্থাতেই এদের মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই সতর্কতার সাথে পোনা মজুদকরণের কাজটি করতে হবে। যে পাত্রে পোনা পরিবহন করা হয়, তার পানি ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা, অক্সিজেন ও পি.এইচ ও অন্যান্য গুণাবলির তারতম্য থাকতে পারে। তারতম্যের সমতা আনার জন্যে পরিবহনের পর পলিথিন ব্যাগুলো ১০-১৫ মিনিট পুকুরের পানিতে ফেলে রাখতে হবে। তারপর ব্যাগের মুখ কেটে কিছু পানি পুকুরে ফেলে ও কিছু পানি ব্যাগে ঢুকিয়ে তাপমাত্রা মোটামুটি সমান করে ব্যাগটি কাত করে ধরলে পোনা নিজ থেকেই বের হয়ে যাবে।

গ. মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা

পুকুরে পোনা ছাড়ার পর বেশ কিছু কাজ আছে। মজুদকৃত পোনা বেঁচে থাকা, বড় হওয়া এবং কাঙ্খিত লাভ নিশ্চিত করার জন্য নিম্নের কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ:

See also  (19 টি ধাপে) মাছ চাষের পদ্ধতি? মাছ চাষ করার উপায়? মাছ চাষ কিভাবে করা যায়? মাছ চাষ করার সহজ উপায়? আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ

১. পোনার বাঁচার হার পর্যবেক্ষণ

পরিবহনকালীন চাপ, দুর্বলতা এবং অন্যান্য কারণে পুকুরে ছাড়ার পর কিছু পোনা মারা যেতে পারে। যতগুলো পোনা মারা গেল, ঠিক তত সংখ্যক (প্রজাতি অনুযায়ী) আবার পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. সার প্রয়োগ

পোনা ছাড়ার পর পুকুরে পরিমিত প্রাকৃতিক খাদ্য না থাকলে পোনার ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। ভালো ফলন পেতে পুকুরের অবস্থা বুঝে নিয়মিত পরিমাণমতো জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

৩. সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ

  • পাংগাস মাছ চাষের মাধ্যমে মাছের আশানুরূপ ফলন পেতে হলে কেবল প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভর করা চলবে না। পরিকল্পিতভাবে পাংগাস চাষ করতে হলে মাছকে অবশ্যই চাহিদামতো সুষম খাদ্য দিতে হবে। খাদ্য প্রদানের উপরই পাংগাস মাছের বৃদ্ধির হার প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল।
  • দেখা গেছে, চাহিদামতো সুষম খাদ্য প্রদান না করার ফলে পাংগাস মাছের ওজন না বেড়ে বরং কমে গেছে। তাই পাংগাস চাষের বেলায় খাদ্য প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। পাংগাস মাছের খাদ্যে কমপক্ষে ৩০% প্রাণিজ আমিষ থাকতে হবে। মাছের প্রায় সব ধরনের খাদ্য উপাদানের মধ্যেই কম-বেশি আমিষ আছে। তবে শুটকী মাছের গুড়া গবাদি পশুর রক্ত হাস-মুরগির নাড়ি-ভুঁড়ি ইত্যাদির মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ আছে।
  • পাংগাস মাছকে দানাদার বা পিলেট খাবার পরিবেশন করা অধিক সুবিধেজনক ও ফলপ্রসূ। বর্তমানে বাজারে আকারের দানাদার খাদ্য পাওয়া যায়। ৩০% আমিষ সমৃদ্ধ পাংগাসের সুষম দানাদার খাদ্য নিজেরা তৈরি করলে প্রতি কেজির মূল্য ১২ টাকার মধ্যে থাকে এবং উৎপাদন খরচও কম হয়। একটি খাবার তৈরির পিলেট মেশিন ২০-২৫ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।
  • দানাদার খাদ্য প্রয়োগের সুবিধা ও সুফল হলো: ১. খাদ্যের পুষ্টিমান সঠিক মাত্রায় থাকে। ২. খাদ্য প্রয়োগ সহজ। ৩. ওজন নির্ধারণ করা সহজ। ৪. তাড়াতাড়ি গলে না বিধায় খাদ্য অপচয় কম হয়। ৫. পানি ও পুকুরের তলদেশে দূষণমুক্ত থাকে। ৬. অনেক দিন পর্যন্ত গুদামজাত করে রাখা যায়।
  • কোনো কারণে দানাদার খাদ্য দেওয়া সম্ভব না হলে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য উপাদান মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করে তা মাছকে সরবরাহ করা যেতে পারে।

৪. নমুনায়ন

পুকুরে মাছের বৃদ্ধি বা ওজন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা জানা প্রয়োজন। বাড়ার হার দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কতটুকু সঠিক। প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে এ কাজ করা যায়।

পাংগাস চাষে আবশ্যকীয় কাজসমূহ

১. পুকুর সেচে শুকিয়ে ফেলতে হবে এবং সম্ভব হলে রোদে তলা ফাটাতে হবে।

২. পোনা ছাড়ার পূর্বে পুকুর প্রস্তুতের নিয়মানুযায়ী পুকুরটি ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে।

৩. সঠিক ঘনত্বে ভালো আকারের পোনা ছাড়তে হবে।=

৪. খাদ্যের মান ও খাদ্য প্রয়োগের নিয়মানুযায়ী প্রতিদিন মাছকে দিতে হবে।

৫. সকাল বিকাল মাছের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

৬. মাঝে মাঝে হররা টানতে হবে।

৭. নিয়মিত চুন প্রয়োগ করতে হবে।

৮. পানি দেওয়ার সুযোগ থাকলে মাঝে মধ্যে পানি দিয়ে পুকুরের গভীরতা ৫-৬ ফুট রাখতে হবে।

৯. বর্ষায় অতিরিক্ত পানি নির্গমনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. সম্ভব হলে ২-৩ মাস পরপর পুকুরের ৫০ ভাগ পানি ফেলে দিয়ে নতুন পানি দিয়ে পুকুর ভরাট করতে হবে।

১১. এরেশনের ব্যবস্থা যদিও ব্যয়বহুল, তথাপি সম্ভব হলে এরেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১২. মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির হার পরীক্ষা করতে হবে।

১৩. রোগ বালাই দেখা দিলে সাথে সাথে নিকটস্থ মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।

মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ

পাংগাস মাছের চাষ করে আশানুরূপ ফলন ও মুনাফা লাভের ক্ষেত্রে যথাসময়ে মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। যেহেতু পাংগাস অধিক ঘনত্বে চাষ করা হয়, তাই ৫-৬ মাস পর যখন পাংগাসের গড় ওজন ৫০০-৬০০ গ্রাম হয়, তখনই ৫০% মজুদকৃত মাছ বাজারে বিক্রি করে দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন পুকুরের অবশিষ্ট মাছ তাড়াতাড়ি বাড়ার সুযোগ পাবে তেমনি খরচের জন্য বেশ কিছু টাকাও হাতে আসবে। বছর শেষে যখন বাজারে মাছের দাম বেশি থাকে, তখন অবশিষ্ট সব মাছ বিক্রি করে দিতে হবে। পুকুরটি পুনরায় প্রস্তুত করে মাছ চাষের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাংগাসের সাথে কাতলা-সিল্ভার কার্প-এর মিশ্রচাষ একর প্রতি বছরে ৫-৭ টন মাছের ফলন পাওয়া যেতে পারে।

পাংগাস দ্রুত বর্ধনশীল মাছ এবং অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়। রুই জাতীয় মাছের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়। যদি পাংগাস চাষের প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটানো যায়, তাহলে দেশে পাংগাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাণিজ আমিষের সম্পূর্ণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব। পাংগাস চাষে যে উজ্জ্বল সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে, তা যদি বিপ্লবে রূপান্তরিত করা যায়, তাহলে পাংগাস চাষকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশের প্রায় সকল জেলাতেই পাংগাস মাছের চাষ বাড়ছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় মৎস্য উৎপাদনে পাংগাস গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!