বিষয়: পান করার আদব ও সুন্নত + খাওয়ার আদব ও সুন্নত।
হ্যাশট্যাগ: #পান করার আদব ও সুন্নত #খাওয়ার আদব ও সুন্নত #পান করা ও খাবার পাত্র সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান #সভা/মজলিসে খানার সুন্নাত ও আদব সমূহ #অমুসলিমদের সাথে একত্রে পানাহার এবং তাদের হাতের তৈরী ও তাদের রান্না করা খাদ্য-খাবারের মাসায়েল #মেহমানের করণীয় বিশেষ আমল সমূহ #মেজবানের করণীয় বিশেষ আমল সমূহ।
পান করার সুন্নাত ও আদব সমূহ
১. বসে পান করা সুন্নাত।
২. ডান হাতে পান করা সুন্নাত।
৩. পাত্রের ভাঙ্গা স্থানে মুখ লাগিয়ে পান না করা আদব।
৪. তিন শ্বাসে পান করা সুন্নাত।
৫. পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস না ছাড়া এবং ফুঁক না দেয়া। (তিরমিযী)
৬. শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আলহামদু লিল্লাহ বলা সুন্নাত।
৭. অন্য মুসলমান ভাইয়ের বিশেষভাবে পরহেযগার ও বুযুর্গদের পান করার পর থেকে যাওয়া অবশিষ্ট পানি বরকত মনে করে পান করা।
৮. পানি পান শেষে এই দোয়া পড়বে-
الحمد لله الذي جعله عذبا فرانا ولم يجعله ملحا أجاجا ۔ (شرعة الاسلام)
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি এটাকে বানিয়েছেন সুমিষ্ট ও সুপেয় এবং এটাকে বানাননি লবণাক্ত ও বিস্বাদ।
৯. দুধ, চা, কফি, মাঠা পান করার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে।
اللهم بارك لنا فيه وزدنا منه – (رواه الترمذي وقال حديث حسن)
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাদের জন্য এতে বরকত দাও এবং আমাদেরকে এটা আরও বেশী করে দাও।
১০. যমযমের পানি কেবলামুখী হয়ে পান করা মোস্তাহাব। এ পানি দাঁড়িয়ে বসে উভয় ভাবে পান করা যায়।
১১. যমযমের পানি পান করার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে।
اللهم إني أسألك علما نافعا ورزقا واسعا وشفاء من كل داء –
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট চাই উপকারী ইলম প্রচুর রিযিক এবং সব রোগ-ব্যাধি থেকে শেফা। (মুস্তাদরকে হাকিম)
১২. পান করার পর অন্যকে দিতে হলে আদব হল ডান পাশের জনকে অগ্রাধিকার দেয়া। তার অনুমতি সাপেক্ষে বাম পাশের জনকেও দেয়া যায়।
১৩. যে পাত্রের ভিতর দেখা যায় না বা যে পাত্র থেকে এক সঙ্গে অনেক পানি পড়ার সম্ভাবনা- এরূপ পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান না করা আদব।
১৪. যিনি পান করাবেন তিনি সর্বশেষে পান করবেন।
খাওয়ার সুন্নাত ও আদব সমূহ
১. খাওয়ার পূর্বে জুতা খুলে নেয়া আদব।
২. উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধৌত করা সুন্নাত।
৩. কুলি করা সুন্নাত, যদি প্রয়োজন হয়। (ইউন)
৪. খানা সামনে আসলে এই দোয়া পড়বে।
اللهم بارك لنا فيما رزقتنا وقنا عذاب النار – (كتاب الاذكار)
অর্থঃ হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে যে রিযিক দান করেছ তাতে আমাদেরকে বরকত দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর।
৫. বিনয়ের সাথে, বিনয়ের ভঙ্গিতে বসা আদব।
এক হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান পায়ের হাটু গেড়ে অন্য পায়ের পেট মাটিতে রেখে (খাড়া করে) বসতেন। অন্য এক হাদীসে উভয় হাঁটু খাড়া রেখে নিতম্ব মাটিতে লাগিয়ে বসার কথা বর্ণিত হয়েছে।
উপরোল্লেখিত দু’টি পদ্ধতি ছাড়াও উলামায়ে কেরাম খাওয়ার সময় বসার আদবের মধ্যে আরও দুই প্রকার বসার কথা উল্লেখ করেছেন।
ক. উভয় হাঁটু গেড়ে এবং উভয় কদমের পিঠ মাটিতে রেখে বসা।
খ. ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসা। এই সবগুলো বর্ণনার সার কথা হল বিনয়ের ভঙ্গিতে বসা। আসন গেড়ে বসা বেশী খাওয়ার নিয়তে বা তাকাব্বুরের জন্যে হলে মাকরূহ, অন্যথায় জায়েয।
৬. সামনের দিকে ঝুঁকে নত হয়ে বসা।
৭. দস্তর খানা বিছানো সুন্নাত।
৮. জমীনের উপর বসা এবং বসার বরাবর খাদ্যের বরতন রাখা।
৯. হেলান দিয়ে না খাওয়া (এমনকি হাতে ভর করেও না)।
১০. খাওয়ার শুরুতে (বিসমিল্লাহি ওয়ালা বারাকাতিল্লাহ) অর্থাৎ, আল্লাহর নামে আল্লাহর বরকতের উপর খাওয়া শুরু করছি। পড়া সুন্নাত এবং এটি জোরে পড়া মোস্তাহাব, যাতে অন্যরাও শুনতে পারে। শুরুতে পড়তে ভুলে গেলে এবং খাওয়ার মাঝে স্মরণ হলে পড়বে (বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু) অর্থাৎ, আমি এর প্রথমে ও শেষে আল্লার নাম নিলাম।
১১. ডান হাতে খাওয়া সুন্নাত।প্রয়োজনে বাম হাতের সহযোগিতা নেয়া যায়।
১২. নিজের শরীরের ইছলাহ এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনের নিয়তে খেতে হবে।
১৩. তিন আঙ্গুলের (বৃদ্ধ, তর্জনী ও মধ্যমা) দ্বারা খাওয়া সুন্নাত। প্রয়োজনে তিনের অধিকও ব্যবহার করা যেতে পারে।
১৪. এক পদের খানা হলে নিজের সম্মুখ থেকে খাওয়া- অন্যের সম্মুখ থেকে না নেয়া।
১৫. প্রথমেই খানা দিয়েই আরম্ভ করবে। কেউ কেউ নেমক (লবণ) দ্বারা খানা শুরু এবং শেষ করাকে সুন্নাত বলেছেন, কিন্তু যে হাদীসের ভিত্তিতে তা বলা হয়েছে সে হাদীসটি মাওযূ’ বা ভিত্তিহীন।
১৬. প্রথমে পাত্রের মাঝখান থেকে খানা নিবে না বরং পাশ থেকে নিতে থাকবে, কেননা মাঝখানে বরকত নাযিল হয়।
১৭. খেজুর বা এ জাতীয় খাদ্য যেমন বিস্কুট মিষ্টান্ন একটা একটা করে খাওয়া, এক সঙ্গে একাধিক সংখ্যক করে না খাওয়া।
১৮. এক লোকমা গলাধকরণ করার পূর্বে আরেক লোকমা না উঠানো I এতে লোভ প্রকাশ পায়।
১৯. বর্তমান যুগে চেয়ার টেবিলে খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন ঘটায়, এতে বিধর্মীদের বৈশিষ্ট্যের অনুকরণের বিষয়টি আর অবশিষ্ট থাকেনি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে চেয়ার-টেবিলে খাওয়া নিষিদ্ধ না হলেও যেহেতু চেয়ার টেবিলে খাওয়াতে অনেকগুলো সুন্নাত ও আদব বর্জিত হয়, অতএব তা পরিত্যাজ্য।
২০.. খুব গরম খাবার না খাওয়া। গরম খাদ্য/পানীয় ফুঁক দিয়ে ঠান্ডা না করা। (مفاتيح الجنان نقلا عن العوارف)
২১. খাদ্য দ্রব্য পড়ে গেলে তা উঠিয়ে (প্রয়োজনে পরিষ্কার করে) খাওয়া সুন্নাত।
২২. খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে কোন দোষত্রুটি না লাগানো উচিত। উল্লেখ্য যে, রান্নার দোষ বলা খাদ্য দ্রব্যের দোষ বলার অন্তর্ভুক্ত নয়।
২৩. খাওয়ার সময় এমন সব কথা বা আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিৎ, যাতে অন্যের মনে ভয় বা ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে।
২৪. খাওয়ার মাঝে অন্য কোন কাজ না করাই খাওয়ার আদব।
২৫. পেটে কিছু ক্ষুধা থাকা অবস্থায়ই খানা শেষ করা উত্তম।
২৬. খাবারের বর্তন, পেয়ালা ইত্যাদি ছাফ করে খাওয়া এবং আঙ্গুল সমূহ ভাল করে চেটে খাওয়া সুন্নাত। আঙ্গুল চাটার সুন্নাত তারতীব হল- প্রথমে মধ্যমা, তারপর তর্জনী, তারপর বৃদ্ধা। আর খাওয়ার মধ্যে পাঁচ আঙ্গুল ব্যবহৃত হলে তারপর অনামিকা, তারপর কনিষ্ঠা।
২৭. খানা শেষ হলে এই দোয়া পড়বে-
الحمد لله الذي أطعمنا وسقانا وجعلنا مسلمين ۔ (سنن اربعة)
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে খাওয়ালেন, পান করালেন এবং মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন!
২৮. দস্তরখানা উঠানোর পূর্বে সকলে উঠে যাবে না। এটাই আদব।
২৯. দস্তরখানা উঠানোর দোয়া-
الحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه غير مكفي ولا مودع ولا مستغنى عنه ربنا ۔ (رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح)
অর্থঃ আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা; এমন প্রশংসা যা অশেষ, পবিত্র ও বরকতময়। হে আমার প্রভু! এই খাবারকে অপ্রচুর মনে করে বা চিরদিনের জন্য বিদায় দিয়ে বা এর প্রতি বিমুখ হয়ে উঠলাম না।
৩০. খাওয়ার শেষে উভয় হাত কব্জিসহ ধৌত করা সুন্নাত। সাবান, বেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার করাতেও ক্ষতি নেই।
৩১. খাওয়ার শেষে কুলি করা সুন্নাত।
৩২. দাঁতে খেলাল করা সুন্নাত।
৩৩. নবী (সাঃ) খাওয়ার শেষে হাত এবং মাথায় ভিজা হাত বুলিয়ে নিতেন। রূমাল ইত্যাদি দ্বারা হাত মুছে নেয়াতেও দোষ নেই।
৩৪. খাওয়া শেষে সামান্য কিছু তিলাওয়াত ও যিকির করবে।
৩৫. খাওয়ার শেষে সাথে সাথে ঘুমাবে না, তাহলে অন্তর শক্ত হয়ে যাবে
পান করা ও খাবার পাত্র সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান
* সোনা ও রূপার পাত্র/বরতন ব্যবহার করা হারাম।
* তামা ও পিতলের পাত্র/বরতন ব্যবহার করা মাকরূহ। তবে নিকেল করা থাকলে মাকরূহ নয়।
* সোনা, রূপা, তামা ও পিতল ব্যতীত অন্যান্য ধাতুর পাত্র/বরতন ব্যবহার করা জায়েয।
* সোনা রুপার পানি লাগানো পাত্র/বরতন ব্যবহার করা বৈধ।
* রুপা দ্বারা জড়োয়া করা বা সোনা রূপা দ্বারা জোড়ানো ও বাঁধানো পাত্র/বরতন ইত্যাদি ব্যবহার করা ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ)-এর মতে বৈধ, যদি ব্যবহারের সময় সোনা রূপায় স্পর্শ না লাগে।
* পাত্রের ভাঙ্গা স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করবে না।
* পাত্র/বরতন ঢেকে রাখা সুন্নাত, বিশেষ ভাবে ঘুমানোর পূর্বে।
* বড় পাত্র- যা থেকে এক সাথে অনেক পানি পড়ার সম্ভাবনা বা যার ভেতর দেখা যায় না-এমন পাত্র হলে তাতে মুখ লাগিয়ে পান করবে না বরং তার থেকে অন্য পাত্রে ঢেলে পান করবে।
অমুসলিমদের সাথে একত্রে পানাহার এবং তাদের হাতের তৈরী ও তাদের রান্না করা খাদ্য-খাবারের মাসায়েল
* অমুসলিমদের জবেহ করা প্রাণীর গোশত খাওয়া জায়েয নয়। অমুসলিমদের তৈরী ও রান্না করা খাদ্য খাবার, মিষ্টি ইত্যাদি ক্রয় করা এবং খাওয়া জায়েয, যদি বাহ্যিকভাবে তাতে কোন নাপাক বস্তুর মিশ্রণ বোঝা না যায়। তবে মুসলমান ভাইয়ের উপকারের উদ্দেশ্যে মুসলমানের দোকান থেকে ক্রয় করলে উত্তম হবে।
* অমুসলিমদের সাথে একত্রে বসে বা তাদের বরতনে খাওয়া মাকরূহ, তবে ঠেকা বশতঃ হলে জায়েয। আর যদি জানা থাকে যে, তাদের পাত্র নাপাক তাহলে জায়েয নয়।
সভা/মজলিসে খানার সুন্নাত ও আদব সমূহ
* পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে বর্ণিত খানার আমল সমূহ ছাড়াও মজলিসে খাওয়া হলে অতিরিক্ত আরও কয়েকটি আমল রয়েছে, যথা :
* প্রথমে ছোটদেরকে হাত ধোয়ানো তারপর গুরুজনদেরকে হাত ধোয়ানো আদব, যাতে গুরুজনদেরকে ছোটদের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়।
* খানা পরিবেশনকারী তার ডান দিক থেকে বাম দিকে পর্যায়ক্রমে খানা পরিবেশন করবে।
* ইলম, আমল, পরহেযগারী ও বয়সে যারা বড়, তাদের দ্বারা প্রথমে খাওয়া আরম্ভ হওয়া আদব।
* কারও লোকমার দিকে নজর না করা আদব।
* যেখান থেকে খানা বন্টন করা হয় সেখানে নজর না করা আদব। এতে লোভ প্রকাশ পায়।
* নিজের খাওয়া শেষ হলেও উঠে না যাওয়া বরং হাত নাড়া-চাড়া করতে থাকা, যেন অন্য সাথীরা লজ্জায় তৃপ্ত হওয়ার পূর্বেই খানা শেষ করে না বসে।
অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে এক সাথে খেলে এই দোয়া পড়া সুন্নাত-
بسم الله ثقة بالله وتوكلا عليه
অর্থঃ আল্লাহর নামে, আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে এবং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে আরম্ভ করলাম।
মেহমানের করণীয় বিশেষ আমল সমূহ
* কেউ নিঃস্বার্থভাবে দাওয়াত দিলে তা কবূল করবে। এটা সুন্নাত। তবে দাওয়াত দাতার সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ সম্পদ হারাম উপায়ে অর্জিত হলে তার দাওয়াত কবূল করা উচিত নয়। সুন্নাতের অনুসরণ ও মুসলমানদের মন খুশি করার নিয়তে দাওয়াত কবূল করতে হবে।
* একই সময়ে একাধিক ব্যক্তি দাওয়াত দিলে যার ঘর অধিক নিকটে তার দাওয়াত কবূল করা সুন্নাত।
* দাওয়াত বা পূর্ব এত্তেলা (Infotmation) ছাড়াই খাওয়ার সময় কারও নিকট মেহমান হিসেবে উপস্থিত হওয়া উচিত নয়। একান্তই এরূপ সময় যেতে হলে বাইরে থেকে খেয়ে যাবে, যাতে অসময়ে মেজবানকে খানা পাকানোর/খানার ব্যবস্থা করার বিড়াম্বনা পোহাতে না হয়। কিংবা তাদের খাবার মেহমানকে দিয়ে তাদেরকে অভুক্ত থাকতে না হয়। আর বাইরে থেকে খেয়ে গেলে যেয়েই মেজবানকে তা অবহিত করা আদব। অন্যথায় মেহমানের খানার প্রয়োজন ভেবে মেজবান খাবারের ব্যবস্থা করবে তারপরে দেখা যাবে মেহমানের প্রয়োজন নেই। এতে করে খাবার নষ্ট হবে কিংবা অন্ততঃ মেজবান বিব্রতবোধ করবেই। তবে বিশেষ কারও ব্যাপারে যদি জানা থাকে যে, পূর্ব এত্তে‘লা ছাড়া মেহমান হলেও তিনি কোনরূপ বিব্রতবোধ করবেন না, তাহলে তার ব্যাপারটা ভিন্ন।
* দাওয়াত দেয়া হয়নি- এমন কাউকে মেহমান সাথে আনবে না। আনলে মেজবানের অনুমতি গ্রহণ করবে। তবে মেজবানের কোনই আপত্তি থাকবে না- এমন বুঝতে পারলে অনুমতির প্রয়োজন নেই।
* মেহমান মেজবান কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে বসবে এবং থাকবে ৷
* মেহমান মেজবানের অনুমতি বা সম্মতি ব্যতীত কাউকে ডেকে খানায় শরীক করবে না বা কাউকে খানা থেকে কিছু প্রদান করবে না।
* মেহমান খাওয়ার মজলিসে এমন কিছু আবদার করবে না, যা যোগাড় করা মেজবানের জন্য মুশকিল হতে পারে।
* খাওয়ার ব্যাপারে মেহমানের কোন বাছ-বিচার থাকলে কিংবা বিশেষ কোন অভ্যাস বা রুটিন থাকলে পূর্বেই তা মেজবানকে অবহিত করা উচিত। দস্তরখানে এসে এরূপ কিছু উত্থাপন করে মেজবানকে বিব্রত করা উচিৎ নয়।
* কোন বিশেষ অসুবিধা না থাকলে মেজবান কর্তৃক উপস্থিত সব রকম খাবার থেকে কিছু কিছু গ্রহণ করে তাকে খুশি করা উচিত।
* মেহমান মেজবানের নিকট এত বেশী সময় বা এত বেশী দিন অবস্থান করবে না, যাতে মেজবানের কষ্ট, ক্ষতি বা বিরক্তি হতে পারে। এরূপ করা নিষিদ্ধ।
* কারও নিকট দাওয়াত খেলে খানা শেষে (খানা শেষের পঠিতব্য সাধারণ দোয়া পড়ার পর) এই দোয়া পড়বে-
اللهم اطعم من أطعمني واسق من سقانی – (رواه مسلم في كتاب الاشربة )
অর্থঃ হে আল্লাহ, যে আমাকে আহার করাল তুমি তাকে আহার করাও এবং যে আমাকে পান করাল তুমি তাকে পান করাও।
* বিদায় গ্রহণের সময় মেজবান থেকে অনুমতি নিয়ে বিদায় নেয়া আদব।
* মেজবানের ঘর থেকে বিদায় নেয়ার সময় মেহমান পড়বে-
اللهم بارك لهم فيما رزقتهم واغفر لهم وارحمهم ۔ (رواه مسلم في كتاب الاشربة)
অর্থঃ হে আল্লাহ, তুমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছ তাতে বরকত দাও, তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের উপর রহম কর।
মেজবানের করণীয় বিশেষ আমল সমূহ
* মেহমানকে সাদর অভ্যর্থনার সাথে, সম্মানের সাথে ও সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করবে।
* প্রত্যেক মেহমানকে তার মর্যাদা অনুসারে গ্রহণ করবে এবং সে হিসেবে তার খাতের যত্ন করবে। সকলকে এক পাল্লায় মাপা ঠিক নয়।
* খাওয়ার সময় হয়ে গেলে যথাশীঘ্র মেহমানের সামনে খাবার উপস্থিত করা আদব।
* মেজবান মেহমানের সাথে এমন কাউকে খানায় একত্রে বসাবে না, যার মন মানসিকতা, রুচি ও মেজায ভিন্ন হওয়ার কারণে মেহমানের খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
* মেজবান অতিরিক্ত খাওয়ানোর জন্য মেহমানকে পীড়াপীড়ি করবে না। সম্ভব হলে মেহমানের রুচির প্রতি লক্ষ্য রেখে সে অনুযায়ী খাদ্য প্রস্তুত করবে।
* সাধ্য এবং প্রচলন অনুযায়ী মেহমানের জন্য অস্ততঃ একদিন আড়ম্বরের সাথে খাবারের আয়োজন করা সুন্নাত।
* বিদায়ের সময় মেহমানকে ঘর থেকে দরজা পর্যন্ত পৌঁছানো সুন্নাত।
সমাপ্ত: পান করার আদব ও সুন্নত + খাওয়ার আদব ও সুন্নত।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।