বিষয়: ভালো মানুষ হবার উপায়ঃ কয়েকটি পাপ থেকে দূরে থাকা ও পাপ থেকে বেচে থাকার উপায়/মুক্তির উপায়।
হ্যাশট্যগ: #ভালো মানুষ হবার উপায় #কয়েকটি পাপ থেকে দূরে থাকা #পাপ থেকে বেচে থাকার উপায় #পাপ থেকে মুক্তির উপায়।
কয়েকটি পাপ থেকে দূরে থাকা ও পাপ থেকে বেচে থাকার উপায়/মুক্তির উপায়ঃ
গান-বাদ্য শ্রবণ :
আবূ দাঊদ, ইবনে মাজা, ইব্নে হিব্বান, মুসনাদে আহমদ প্রভৃতি হাদীছের কিতাবে বর্ণিত নির্ভরযোগ্য হাদীছে গান-বাদ্য হারাম হওয়া সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ এসেছে। কুরআন শরীফেও এরূপ বর্ণনা এসেছে। কেবল সুললিত কণ্ঠে যদি কোন কবিতা পাঠ করা হয় এবং পাঠক কোন নারী বা কিশোর না হয়, সাথে সাথে কবিতার বিষয়বস্তু অশ্লীল বা অন্য কোন পাপ পঙ্কিলযুক্ত না হয় তাহলে তা জায়েয। (গান-বাদ্য হারাম হওয়া সম্বন্ধে বিস্তারিত দলীল-প্রমাণ জানার জন্য দেখুন আমার রচিত “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” গ্রন্থ।
যদি কেউ গান-বাদ্য শ্রবণের বদ অভ্যাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে তাহলে তার থেকে পরিত্রাণের উপায় হল-
১. গান-বাদ্যের প্রতি স্বভাবগত আকর্ষণ থেকে থাকে, এ আকর্ষণ সম্পূর্ণ বিলীন করে দেয়া স্বাভাবিকভাবে অসম্ভব। তবে মনে চাইলেই ইচ্ছাকৃত ভাবে মনের চাহিদার বিরুদ্ধে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে কষ্ট হলেও কারও তাড়াতাড়ি বা কারও ধীরে ধীরে সেই চাহিদা দুর্বল হয়ে যাবে।
২. গান-বাদ্যের উপকরণ ও পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে।
অশ্লীল উপন্যাস, কবিতা ও নভেল নাটক পাঠ :
অনেক যুবক-যবতী অশ্লীল উপন্যাস, নভেল, নাটক, পেশাদার অপরাধীদের কাহিনী অথবা অশ্লীল কবিতা পাঠের বদ অভ্যাসে অভ্যস্ত। এসব বিষয়ও নিষিদ্ধ। এ সবের বদ অভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পুর্ববর্তী পরিচ্ছেদে বর্ণিত পন্থাসমূহ গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে মনের চাওয়ার বিরুদ্ধে তা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এসবের উপকরণ থেকে দূরে থাকতে হবে। কিছু দিন এরূপ করলেই মনের এসব চাহিদা দুর্বল হয়ে যাবে।
সিনেমা, বাইস্কোপ ও অশ্লীল ছায়াছবি দর্শন :
এগুলোর মধ্যে পাঁচ রকমের পাপ রয়েছে। (১) সময় নষ্ট (২) সম্পদ নষ্ট (৩) স্বভাব-চরিত্র নষ্ট (৪) স্বাস্থ্য নষ্ট (৫) ঈমান ও আমল নষ্ট। যদি নারী চরিত্র ও অশ্লীলতাকে বাদ দিয়ে শিক্ষামূলক ফিল্ম তৈরী করা হয়, তাহলে তার মধ্যে এতগুলো পাপ থাকবে না শুধু জীবের ছবি তোলার পাপ থাকবে। আর জীবের ছবিও বাদ দিয়ে শুধু সু-শিক্ষামূলক ফিল্ম তৈরি করা হলে তাতে কোন পাপ থাকবে না। সিনেমার পার্ট ও প্লে করা, এর ব্যবসা করা এবং এডভারটাইজ করা সবই কবীরা গুনাহ। সিনেমা বাইস্কোপ দেখার বদ অভ্যাস থেকে পরিত্রাণের জন্য পরবর্তী পরিচ্ছেদে বর্ণিত পন্থাসমূহ গ্রহণ করতে হবে।
মদ, গাজা, ভাং, আফিম, হেরোইন প্রভৃতির নেশা :
শরী’আতে এসব নেশাকর দ্রব্য সম্পূর্ণ হারাম, অল্প হোক চাই বেশী হোক। এ সবের শারীরিক, আৱিক, নৈতিক, আর্থিক ও জাগতিক বিভিন্ন প্রকারের ক্ষতির কারণেই শরী‘আত এগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে। এ সবের বদ-অভ্যাসে কেউ জড়িত হয়ে পড়লে তা ছাড়ানো কঠিন ও কষ্টকর। তবে নিম্নোক্ত পদ্ধতি সমূহ গ্রহণ করলে ফল পাওয়া যাবে।
১. প্রথমতঃ এসব নেশার মন্দ ও ক্ষতিকর দিকগুলো নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মনে বদ্ধমূল করাতে হবে এবং তার মনে এর প্রতি ভয়, আতংক ও ঘৃণা জাগিয়ে তুলতে হবে।
২. যে কোন নেশাজনিত অভ্যাস হঠাৎ ত্যাগ করা মানুষের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর, তাই ধীরে মন্থর গতিতে অল্প অল্প করে তাকে তা থেকে বেরিয়ে আনতে হবে।
৩. তার কাছ থেকে নেশার উপকরণ এবং পাত্র, তৈজস পত্র ইত্যাদি দূরে সরিয়ে দিতে হবে বা তাকে নেশাটির উপকরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে, যতদিন পর্যন্ত তার মন থেকে নেশার ঘোর সম্পূর্ণ কেটে না যায়।
৪. সবচেয়ে বড় কথা মানুষ ইচ্ছা ও সাহস করলে অনেক কঠিন কিছুও করে ফেলতে পারে- নেশাখোর ব্যক্তির মনে এরূপ ইচ্ছা ও সাহস জাগিয়ে তুলতে হবে।
বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা ও তামাক সেবন :
বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা ইত্যাদি ধুমপান ও তামাক সেবন মাকরূহ তানযীহী। আর এগুলোর দুর্গন্ধ মুখে থাকা অবস্থায় মসজিদে গমন করা হারাম। ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ৫ম খণ্ডে বলা হয়েছেঃ তামাক যদি নেশা যুক্ত হয় তাহলে নিষিদ্ধ, দুর্গন্ধযুক্ত হলে মাকরূহ, অন্যথায় জায়েয। বিড়ি সিগারেট প্রভৃতির বদ অভ্যাস পরিত্যাগ করার জন্য পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে বর্ণিত নিয়মাবলী প্রযোজ্য। যথাঃ
১. প্রথমতঃ এ সব নেশার মন্দ ও ক্ষতিকর দিকগুলো নেশাখোর ব্যক্তির মনে বদ্ধমূল করাতে হবে এবং তার মনে এর প্রতি ভয়, আতংক ও ঘৃণা জাগিয়ে তুলতে হবে।
২. যে কোন নেশাজনিত অভ্যাস হঠাৎ ত্যাগ করা মানুষের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর, তাই ধীরে মন্থর গতিতে অল্প অল্প করে তাকে তা থেকে মুক্ত করতে হবে।
৩. তার কাছ থেকে নেশার উপকরণ এবং পাত্র, তৈজসপত্র ইত্যাদি দূর করে দিতে হবে বা তাকে নেশার উপকরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে, দিন তার মন থেকে নেশার ঘোর সম্পূর্ণ কেটে না যায়।
৪. সবচেয়ে বড় কথা মানুষ ইচ্ছা ও সাহস করলে অনেক কঠিন কিছুও করে ফেলতে পারে- নেশাখোর ব্যক্তির মনে এরূপ ইচ্ছা ও সাহস জাগিয়ে তুলতে হবে!
অপব্যয় :
শরী’আতের আলোকে যে ক্ষেত্রে ব্যয় করা নিষেধ সে ক্ষেত্রে ব্যয় করাকে বলা হয় তাবযীর বা অপব্যয়। কুরআন অপব্যয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ বলে আখ্যায়িত করেছে। অপব্যয় করা গোনাহে কবীরা।
অমিতব্যয় :
যেসব ক্ষেত্রে ব্যয় করা জায়েয সে সব ক্ষেত্রেও প্রকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাকে বলা হয় এছরাফ বা অমিতব্যয়। এটা শরী’আতে নিষিদ্ধ। এটাকে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সীমালংঘন বা অতিরিক্ত ব্যয় বলেও আখ্যায়িত করা যায়। ‘প্রয়োজন’ বলতে বুঝায় এতটুকু পরিমাণ, যা না হলে কোন দ্বীনের কাজ বা দুনিয়ার কাজ করা সম্ভব হয় না বা অত্যন্ত কষ্ট ও পেরেশানীর সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় কল্পিত প্রয়োজনকে আমরা জরূরত বা প্রয়োজন মনে করে বসি; অথচ সেটা জরূরত বা প্রয়োজন নয় বরং তা হল খাহেশাত বা লোভ। প্রয়োজন ও খাহেশাতের মধ্যে পার্থক্য বোধ রাখতে হবে। দুনিয়ার মহব্বত এবং লোভ প্রতিকারের জন্য যে ব্যবস্থা, অমিতব্যয়ের বদ অভ্যাস প্রতিকারের জন্যও তাই গ্রহণ করতে হবে।
যেনা (ব্যভিচার) :
যেনা অর্থাৎ, নারীর সতীত্ব নষ্ট করা এবং পুরুষের চরিত্র নষ্ট করা। এটা অতি জঘন্য কবীরা গোনাহ। বিবাহিত অবস্থায় যেনা করলে এবং তা স্বীকার করলে অথবা চারজন সত্যবাদী চাক্ষুস সাক্ষীর দ্বারা প্রমাণিত হলে তার শাস্তি পাথর মেরে প্রাণ বধ করে ফেলানো। আর অবিবাহিত অবস্থায় অনুরূপ ভাবে যেনা প্রমাণ হলে তার শাস্তি একশত বেত্রাঘাত। তবে উল্লেখ্য যে, একমাত্র শর্ঈ কাজীই এ শাস্তি প্রয়োগ করতে পারে, অন্য কেউ নয়।
যেনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য যা যা করতে হবে–
১. যেনার উপসর্গ যেমন প্রেমালাপ, গোপন যোগাযোগ, গায়র মাহরামের সাথে নির্জন বাস, পর্দা লংঘন ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা।
২. যেনার কারণে জাহান্নামের যে কঠিন শাস্তি হবে তা স্মরণ করা।
৩. একথা স্মরণ করা যে, আল্লাহ সব কিছুই দেখেন, আমার এ অবস্থাও তিনি দেখবেন এবং কোন মানুষ এখন না দেখলেও কিয়ামতের ময়দানে সকলের সামনে এটা প্রকাশ করে দেয়া হবে। তখন শরমের অন্ত থাকবে না।
৪. বিবাহ না করে থাকলে বিবাহ করা, না পারলে রোযা রাখা। আর স্ত্রী থাকার পরও কোন নারীর প্রতি খাহেশ হলে এই চিন্তা করা যে, তার যা আছে আমার স্ত্রীরওতো তা আছে, তাহলে অহেতুক কেন তার প্রতি ঝুঁকতে হবে?
৫. যেনার খাহেশ প্রবল হলে নিম্নোক্ত আয়াত তিনবার পড়ে শরীরে ফুঁক দিবে-
يثبت الله الذين أمنوا بالقول الثابت في الحيوة الدنيا وفي الآخرة، ويضل الله الظلمين ويفعل الله ما يشاء ۔
৬. যে নারীর সাথে যেনার কামনা জাগে বা যে পরিবেশে যেনার সুযোগ সৃষ্টি হয় সেখান থেকে দূরে সরে যাওয়া।
৭. যে বুযুর্গের প্রতি ভক্তি আছে তার সম্পর্কে নির্জনে কিছুক্ষণ বসে এই কল্পনা করবে যে, তিনি আমার অন্তরের মধ্যে বসে আমার অন্তর থেকে সব জঞ্জাল ধরে ধরে বাইরে নিক্ষেপ করছেন।
৮. যে সব কথা শুনলে, যেখানে গেলে বা যা দেখলে কিংবা যা পড়লে অথবা যা চিন্তা করলে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় বা যেনার মনোভাব জাগ্রত হয় তা থেকে বিরত থাকা।
হস্তমৈথুন :
হস্তমৈথুন করা মহাপাপ। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য পূর্বের পরিচ্ছেদে বর্ণিত ২, ৩, ৭, ও ৮ নং পন্থা গ্রহণ করতে হবে।
বালক মৈথুন :
বালকের সাথে কুকর্ম করা যেনার চেয়েও বড় পাপ। এ জন্যেই বালকের সাথে কুকর্মকারীর শাস্তি বলা হয়েছে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া। যেনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য যে সব পন্থা গ্রহণীয়, বালক মৈথুন থেকে পরিত্রাণের জন্যেও সে সব পন্থা গ্রহণীয়।
বদ নজর :
গায়র মাহরাম মহিলার দিকে নজর করা বা শ্মশ্রুবিহীন বালকের দিকে খাহেশাতের দৃষ্টিতে তাকানো হল বদ নজর। বদ নজর দ্বারা কলব অন্ধকার হয়ে যায়, ইবাদতের নূর নষ্ট হয়ে যায়। এতে নজরের যেনা হয়। আবার তাকে নিয়ে কোন পাপের চিন্তা করলে মনের যেনা হয়। অনিচ্ছাকৃত হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে যায় তাতে কোন পাপ নেই, কিন্তু তারপর ইচছাকৃত ভাবে দৃষ্টিকে দীর্ঘায়িত করলে বা বারবার দেখলে পাপ হবে। এই বারবার কিংবা দীর্ঘক্ষণ দেখতে চাওয়া আসলে মনের একটা রোগ বিশেষ।
বদ নজর রোগ থেকে পরিত্রাণের উপায় হল-
১. এ চিন্তা করা যে, আল্লাহ আমার মনের অবস্থা দেখছেন এবং কিয়ামতের দিন এ নিয়ে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, তখন সবার সামনে লজ্জিত হতে হবে এবং এই পাপের দরুণ জাহান্নামের আযাব হবে।
২. এই চিন্তা করবে যে, আমার আপনজনকে কেউ এভাবে দেখলেতো আমার অপছন্দ লাগে, তাহলে আমার দেখাটা কি তাদের অপছন্দনীয় নয়?
৩. এরপরও তাকে সুন্দর মনে হলে এবং নজর দিতে মনে চাইলে তাকে কুৎসিত কল্পনা করবে।
৪. হিম্মত এবং এরাদা করা যে, এ থেকে বিরত থাকব। আর হঠাৎ নজর পড়ে গেলে তার থেকে নজর ফিরিয়ে নিলে কলবে নূর পয়দা হয়- এই ফিকির রাখা।
গীবত (অপরের দোষ চর্চা) :
হেয় করে তোলার উদ্দেশ্যে পশ্চাতে কারও প্রকৃত দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করাকে গীবত বলে। আর প্রকৃতপক্ষে সে দোষ তার মধ্যে না থাকলে সেটাকে বলে বুহতান, যা গীবতের চেয়েও বড় অপরাধ। জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, পোশাক- পরিচ্ছদ, শারীরিক গঠন, বংশ ইত্যাদি যে কোন বিষয়ের দোষ বর্ণনাই গীবতের অন্তর্ভুক্ত। মুখে বলা দ্বারা যেরূপ গীবত হয়, তদ্রূপ অঙ্গভঙ্গী এবং ইশারা ইঙ্গিতেও গীবত হয়। গীবত যেমন জীবিত মানুষের হয় তেমনি মৃত মানুষেরও হয়। ছোট-বড় মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের দোষ চর্চাই গীবত।
গীবত করা হারাম, যেনার চেয়েও গুরুতর কবীরা গোনাহ। অবশ্য ন্যায্য বিচার প্রার্থনা করতে গিয়ে বিচারকের নিকট প্রতিপক্ষের যে দোষ বর্ণনা করতে হয়, কিংবা কাউকে অপরের দ্বীনী বা দুনিয়াবী ক্ষতি থেকে সাবধান করার উদ্দেশ্যে বা গুরুজনের নিকট অধীনস্তদেরকে শাসন করানোর জন্য যে
দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করা হয় তা গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়। স্বেচ্ছায় এবং মনোযোগ সহকারে গীবত শ্রবণ করাতেও গীবতের গোনাহ হয়। কারও গীবত করে ফেললে নিজে এস্তেগফার করা, যার গীবত করা হয়েছে তার জন্য এস্তেগফার করা এবং সম্ভব হলে ও সংগত মনে করলে তার নিকট ওজরখাহী করা উচিত। এভাবেই গীবতের পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। কাউকে গীবত করতে শুনলে তাকে বাধা দাও, না পারলে সে মজলিস ত্যাগ কর, না পারলে সে কথা থেকে মনোযোগ হটিয়ে মনে মনে অন্য কিছু ভাবতে বা পড়তে থাক।
গীবত শোনার পর কয়েকটা কাজ করা উচিত-
১. এ শোনা কথা অন্যের কাছে বর্ণনা না করা।
২. যার দোষ শোনা হল তার দোষ খুঁজতে শুরু না করা।
৩. তার উপর বদগোমানী না করা।
৪. গীবতকারীকে পারলে এই গীবতের অভ্যাস পরিত্যাগ করার পরামর্শ দেয়া।
৫. প্রয়োজন মনে করলে আসল ব্যক্তির থেকে জেনে নেয়া যে, ব্যাপারটা কতদূর সত্য। অবশ্য এ ক্ষেত্রে গীতকারীর নাম উল্লেখ করা উচিত নয়।
গীবতের বদ অভ্যাস পরিত্যাগের জন্য করণীয় হল-
১. কারও গীবত করে ফেললে তার প্রশংসা করা।
২. তার জন্য দু’আ ও এস্তেগফার করা।
৩. তাকে এ বিষয়টা জানিয়ে দিয়ে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকা থাকলে তাকে জানাবে না।
৪. কারও সম্পর্কে কিছু বলতে মনে চাইলেও চিন্তা করে নেয়া যে, এটা গীবত হয়ে যাচ্ছে না তো? যদি গীবতের পর্যায়ভুক্ত হয় তাহলে তা না বলা।
৫. গীবত হয়ে গেলে নিজে তওবা এস্তেগফার করা এবং ভবিষ্যতে আর গীবত না করার প্রতিজ্ঞা করা।
৬. গীবত কখনো ক্রোধ থেকে করা হয়, কখনও অহংকারের কারণে হয়, কখনও সম্মানের মোহ থেকে হয়, আবার কখনও হিংসা-বিদ্বেষ চরিতার্থ করার জন্যে হয়ে থাকে। যে কারণে গীবত হয় সে কারণের চিকিৎসা করা দরকার।
চোগলখোরী (কোটনাগিরি) :
চোগলখোরী অর্থ কারও এমন কথা বা কাজ সম্পর্কে অন্যকে অবহিত করে দেয়া, যা সে তার কাছে গোপন করতে ও গোপন রাখতে চায় এবং তার শ্রুতিগোচর হওয়াকে অপছন্দ করে। এটা কোন দোষের কথা বা দোষের কাজ হলে চোগলখোরীর সাথে সাথে গীবতও হয়ে যাবে, তাহলে তা একই সাথে দুটো পাপের হবে। আর প্রকৃত পক্ষে সে দোষ তার মধ্যে না থাকলে বুহতান বা মিথ্যা অপবাদের গোনাহও হবে। চোগলখোরী করা কবীরা গোনাহ, যা মানুষের পারস্পরিক বন্ধুত্বের সম্পর্ককে ধ্বংস করে দেয় এবং সামাজিক ফ্যাসাদ ঘটায়।
তোষামোদ বা চাটুকারিতা :
তোষামোদ বা চাটুকারিতা হল নিজের স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে অন্যকে খুশী করার জন্য নিজের ধারণা ও বিশ্বাসের বিপরীতে তার প্রশংসা করা। এটা এক ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা। পক্ষান্তরে পক্ষ-বিপক্ষ নির্বিশেষে সকলের সাথে স্বচ্ছ ও খোলা মন নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে মনের কথা যথাযথ ভাবে প্রকাশ করাকে বলা হয় বাস্তববাদিতা বা স্বচ্ছতা। তবে স্বচ্ছতা বা বাস্তববাদিতার অর্থ আদৌ এই নয় যে, সব সত্য কথা সব স্থানে প্রকাশ করে দিতে হবে। বরং অনেক স্থানে বলার চেয়ে চুপ থাকাটাই শ্রেয় হতে পারে। বিনা প্রয়োজনে অন্যের অনুভূতিতে আঘাত হানবে বা অন্যকে বিব্রত করবে- এরূপ কথা বলাকে বাস্তববাদিতা আখ্যা দেয়া যাবে না। কিংবা বাস্তববাদিতার দোহাই দিয়ে নিজের কৃতিত্বের কথা গেয়ে বেড়ানো বা আপনজন ও বন্ধু-বান্ধবের গোপন রহস্য প্রকাশ করে দেয়াও সমীচীন নয়। বাস্তববাদিতার অর্থ হল- যতটুকু বলতে হবে তা যেন অবশ্যই বাস্তবানুগ হয় এবং তাতে কোনরূপ কপটতা না থাকে। তোষামোদ বা চাটুকারিতা যে প্রতারণা, কপটতা ও পাপ-এই চেতনা মনে বদ্ধমূল রাখলে তোষামোদের মনোবৃত্তি অবদমিত হবে।
গালি-গালাজ ও অশ্লীল কথা বলা :
যেটা প্রকাশ করতে মানুষ শরম বোধ করে, এটাকেই পরিষ্কার ভাষায় ব্যক্ত করাকে বলা হয় গালি বা অশ্লীল কথা। আর যদি সেটা অবাস্তব হয় তাহলে মিথ্যা অপবাদের গোনাহও হবে। কাউকে গালি দেয়া হারাম, এমনকি কাফের বা জীবজন্তুকেও।
মিথ্যা ও বেশী কথা বলার বদ অভ্যাস পরিত্যাগের জন্য যে চিকিৎসা এর চিকিৎসাও অনুরূপ।
রসিকতা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা :
কারও চলা-ফেরা, উঠা-বসা, বলা, গঠন-আকৃতি ইত্যাদি যে কোন বিষয়ের দোষ এমন ভাবে প্রকাশ করা যে মানুষের হাসির উদ্রেক করে, কিংবা কাউকে লোক সমক্ষে হেয় করাকে বলা হয় বাঙ্গ বিদ্রুপ করা। শরী আতে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা নিষিদ্ধ। তদ্রূপ এমন রসিকতাও শরী’আতে নিষিদ্ধ যাতে কেউ মনে কষ্ট পায় ৷ রসিকতা শরী’আত জায়েয, যদি রসিকতার মধ্যে অবাস্তব কিছু বলা না হয় এবং শ্রোতার মনে আঘাত না লাগে। যে রসিকতা দ্বারা শ্রোতার অন্তরে আঘাত লাগে নিশ্চিত, সেরূপ রসিকতা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।
রসিকতাকে অভ্যাস বানানো ঠিক নয়, মাঝে মধ্যে উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে করা যেতে পারে। এ রোগের চিকিৎসাও পূর্বে উল্লেখিত রোগের চিকিৎসার ন্যায়।
রুক্ষ কথা বলা :
কথা নরমে এবং মিষ্টভাবে বলা শরী’আতের কাম্য। এমনকি হক কথাও এমন রুক্ষভাবে বলা ঠিক নয় যাতে শ্রোতার মনে আঘাত লাগে। কারণ তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেক সময় রুক্ষ কথা স্বভাবগত কারণে হয়ে থাকে, আবার বদ-অভ্যাসের কারণেও হয়। স্বভাবেরতো পরিবর্তন হয় না, তবে নিম্নোক্ত পদ্ধতিসমূহ গ্রহণ করলে অভ্যাসগত কারণে হয়ে থাকলে তার পরিবর্তন হবে এবং স্বভাবগত কারণে হয়ে থাকলেও কিছুটা মার্জিত হবে।
রুক্ষ কথা বলা পরিত্যাগের জন্য করণীয় হল-
১. কথা বলার সময় এই অভ্যাসটা ক্ষতিকর- এই ভেবে লৌকিকতা করে হলেও নরমে এবং মিষ্টভাবে বলার চেষ্টা করা।
২. হক কথা কারও কাছে তিক্তবোধ হলেও বলব- এই মনোভাব যখন আসবে, তখন সে হক কথা তখনই বলার একান্ত প্রয়োজন হলে নিজে না বলে অন্যের দ্বারা বলাবে, আর তখনই বলার আবশ্যকতা না থাকলে কিছুদিন সে নছীহত করা ও এরূপ কথা বলা বন্ধ রাখবে। এভাবে কিছু দিনের মধ্যে তবীয়তে ভারসাম্য পয়দা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
মিথ্যা বলা :
যেটা বাস্তব নয় এরূপ কথা হল মিথ্যা। মিথ্যা বলা গোনাহে কবীরা। তাহকীক তদন্ত ও যাচাই না করেই কোন কথা বর্ণনা করা বা তাহকীক ছাড়াই যে কোন কথা শুনে তা বলে দেয়াও মিথ্যা বলার মত গোনাহ। তবে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি বা নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে কোন কথা জানলে তা তাহকীক ছাড়াই
বলা ও বর্ণনা করা যায়। চারটি ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য সব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা হারাম ও গোনাহে কবীরা এবং হাদীছে মিথ্যাকে গোনাহের মাতা অর্থাৎ, বহু গোনাহের জন্মদাত্রী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
যে চারটি ক্ষেত্রে মিথ্যা বা অবাস্তব বলার অনুমতি রয়েছে, তা হল-
১. বিবদমান দুইজন বা দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ নিরসন ও মিল মহব্বত সৃষ্টি করে দেয়ার উদ্দেশ্যে।
২. স্ত্রীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে।
৩. যুদ্ধের সময় যুদ্ধের কৌশল হিসেবে। তবে কেউ কেউ এ ক্ষেত্রেও সরাসরি মিথ্যা না বলে প্রকৃত সত্য উহ্য থাকে এমনভাবে কিছু ইংগিত করে দেয়ার কথা বলেছেন।
৪. নিজের হক উদ্ধার বা বড় ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য।
মিথ্যা বলার বদ অভ্যাস পরিত্যাগের জন্য একটা জিনিসেরই প্রয়োজন, আর তা হল “ইচ্ছা”। প্রত্যেকটা কথা বলার পূর্বে চিন্তা করা যে, এটা মিথ্যা নয়তো? হলে তা বর্জন করা। এভাবেই মিথ্যা বর্জনের অভ্যাস গড়ে উঠবে।
বেশী কথা বলা :
দ্বীনী ও প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বেশী কথা বলাও একটি বদ অভ্যাস। প্রয়োজনীয় কথা হলঃ (এক) যা নেকী অর্জনের উদ্দেশ্যে বলা হয়। (দুই) যা গোনাহ থেকে বাঁচার জন্য বলা হয়। (তিন) যা না বললে পার্থিব ক্ষতি হয়। বেশী কথা বলা দ্বারাও মানুষ শত শত গোনাহে লিপ্ত হয়- যেমন মিথ্যা বলা, গীবত করা, নিজের বড়ায়ী বয়ান করা, কাউকে অভিশাপ দেয়া, কারও সাথে অহেতুক তর্ক জুড়ে দেয়া, অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা করতে গিয়ে কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেলা ইত্যাদি। এর বিপরীত কম কথা বলার অভ্যাস থাকলে বহু পাপ থেকে নিরাপদ থাকা যায়। তাই কম কথা বলা ভাল।
বেশী বলার রোগের চিকিৎসা হল–
১. কথা বলার পূর্বে চিন্তা করে নেয়া যে, ছওয়াবের বা দরকারী হলে বলা আর অনুরূপ না হলে বর্জন করা।
২. ভিতর থেকে নস বলার জন্য খুব বেশী তাগাদা করলে তাকে এই বলে বোঝানো যে, এখন চুপ থাকতে যে কষ্ট, তার চেয়ে বেশী কষ্ট হবে দোযখের আযাবে। একান্ত না বলে থাকতে না পারলে অল্প বলে চুপ হয়ে যাবে। এভাবে কথা কম বলার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
৩. একান্ত জরূরত না হলে কারও সাথে দেখা সাক্ষাৎ করবে না।
খেলাধূলা করা ও দেখা :
যে খেলা শারীরিক ব্যায়াম তথা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে অথবা কোন ধর্মীয় বা পার্থিব উপকারিতা লাভের উদ্দেশ্যে অথবা কমপক্ষে মানসিক অবসাদ দূর করার লক্ষ্যে হয়, সে খেলা শরী’আত অনুমোদন করে, যদি তাতে বাড়াবাড়ি করা না হয়, শরী’আতের কোন হুকুম লংঘন করা না হয় এবং তাতে ব্যস্ত থাকার কারণে প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম বিঘ্নিত না হয়। পক্ষান্তরে যে খেলায় কোন ধর্মীয় বা পার্থিব উপকারিতা নেই, কিংবা যে খেলায় শরী আতের বিধান লংঘন হয় যেমন সতর খোলা হয়, বা যাতে মত্ত হয়ে নামায রোযা ইত্যাদি ফরয কর্ম বিঘ্নিত হয় অথবা জুয়ার ভিত্তিতে হার জিতে যে সকল প্রকার খেলা হয়ে থাকে সেগুলো শরী’আতে নিষিদ্ধ- কতক পরিষ্কার হারাম আর কতক নিষিদ্ধ।
খেলাধূলা করার ও দেখার বদ অভ্যাসে যারা অভ্যস্ত তাদের এই বদ অভ্যাস পরিত্যাগের জন্য নিম্নোক্ত পন্থাসমূহ গ্রহণ করতে হবে-
১. মনে চাইলেও ইচ্ছাকৃত তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. খেলাধূলার আলোচনা করা ও আলোচনা শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. খেলাধূলার উপকরণ ও পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে। কিছুদিন
এরূপ করলে মন থেকে খেলাধূলার আকর্ষণ হ্রাস পেতে থাকবে।
কয়েকটি খেলা সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা-
১. দাবা ও ছক্কা পাঞ্জাঃ
এ জাতীয় খেলা হারাম। কেননা এসবে অনেক ক্ষেত্রেই টাকা পয়সার বাজি ধরা হয়ে থাকে, ফলে তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। আর বাজি ধরা না হলেও অনর্থক বিধায় তা নিষিদ্ধ।
২. তাশ, পাশা, চৌদ্দগুটি ইত্যাদিঃ
যদি টাকা পয়সার হার জিত শর্ত থাকে তাহলে হারাম। এরূপ শর্ত না থাকলেও তাতে কোন ধর্মগত বা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা না থাকায় তা মাকরূহ।
৩. ফুটবল ও ক্রিকেটঃ
এ খেলা শরীরের ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে খেললে জায়েয, যদি সতর খোলা না হয়, অতিরিক্ত সময় বা পয়সা নষ্ট না হয়, যদি নামায ইত্যাদি জরুরী কাজকর্ম ও ইবাদত নষ্ট না হয়। এ খেলাতেও টাকা-পয়সার হার জিত শর্ত থাকলে তা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। তবে উল্লেখ্য যে, যদি শুধু একদিক থেকে পুরস্কার নির্ধারণ করা হয়, যেমন যে ব্যক্তি অমুক কাজ করবে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে আর এতে যদি চাঁদা নেয়া না হয় তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। ক্রিকেট খেলা জায়েয নয় কারণ, এতে শারীরিক ক্ষতি বা অঙ্গহানির
আশংকা বিদ্যমান।
৪. কেরাম বোর্ড, ফ্লাস ও ঘোড় দৌড়ঃ
এ সবের মধ্যে বাজি রাখা হলে হারাম, আর তা না হলে মাকরূহ তাহরীমী (না করা উত্তম, করলে কোন পাপ বা গুনাহ নাই)।
বিঃ দ্রঃ বর্তমান যুগে খেলাধূলার জন্য যেরূপ অতিরিক্ত আড়ম্বর করা হচ্ছে, সময় ও সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী।
৫. জুয়াঃ
জুয়া বলা হয় এমন লেন-দেনকে, যেখানে কোন মালের মালিকানা এমন সব শর্ত নির্ভর হয় যাতে মালিক হওয়া না হওয়ার উভয় সম্ভাবনাই সমান থাকে; যার ফলে পূর্ণলাভ বা পূর্ণ লোকসান উভয় দিকই থাকে- কেউ কেউ প্রচুর সম্পদ পেয়ে যায় এবং অনেকে কিছুই পায় না।
শরী’আতে সব ধরনের জুয়াই হারাম। আজকাল প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের লটারী জুয়ার অন্তর্ভুক্ত এবং তা হারাম। কেননা এ সবেও অনেক ক্ষেত্রেই টাকা পয়সার বাজি ধরা হয়ে থাকে, ফলে তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। তাশ খেলাতে যদি টাকা পয়সার হার-জিত শর্ত থাকে, অর্থাৎ, বাজি ধরা হয়, তবে তাও হারাম ও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। খেলাধূলা করা ও দেখার বদ অভ্যাস থেকে পরিত্রাণের যে পন্থা, জুয়ার বদ অভ্যাস থেকে পরিত্যাণের জন্যও সেসব পন্থা গ্রন্থণীয়।
সমাপ্ত: ভালো মানুষ হবার উপায়ঃ কয়েকটি পাপ থেকে দূরে থাকা ও পাপ থেকে বেচে থাকার উপায়/মুক্তির উপায়।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।