আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
পুকুরের বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem of a pond)
জলভাগের বাস্তুতন্ত্র কাছে থেকে ভালো করে দেখার জন্য সবচেয়ে উপযোগী হচ্ছে পুকুর। পুকুরে বসবাসরত জীব ও জড় পদার্থের নিবিড় সম্পর্ক ভালোভাবে বোঝা যায়। জড় উপাদানগুলো হলো বিভিন্ন প্রকার জৈব এবং অজৈব পদার্থ, পানি, সূর্যালোক, কার্বন ডাই-অক্সাইড, অক্সিজেন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি। সঞ্জীব উপাদানগুলোর মধ্যে আছে উৎপাদক, প্রথম স্তরের খাদক, দ্বিতীয় স্তরের খাদক তৃতীয় স্তরের খাদক এবং বিভিন্ন রকম বিয়োজক।
চিত্রঃ একটি পুকরের বাস্তুতন্ত্র
(a) উৎপাদক:
উৎপাদক হচ্ছে সালোকসংশ্লেষণকারী বিভিন্ন প্রকার শৈবাল ও অগভীর পানির উদ্ভিদ। পানিতে ভাসমান ক্ষুদ্র জীবদের প্ল্যাংকটন বলে। ফাইটোপ্লাংকটন বা উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন সবুজ অলঞ্জ শৈবাল ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। তাই এদের উৎপাদক বলে।
(b) প্রথম স্তরের খাদক:
নানা ধরনের ভাসমান ক্ষুদে পোকা, মশার শূককীট, অতিক্ষুদ্র প্রাণী, জুপ্ল্যাংকটন ছাড়াও রুই, কাতলা মাছও প্রথম স্তরের খাদক। ভাসমান ক্ষুদ্র প্রাণীদের জুপ্ল্যাংকটন বলে। এ খাদকগুলো নিজেরা খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না, তাই সরাসরি উৎপাদককে ভক্ষণ করে বেঁচে থাকে।
(c) দ্বিতীয় স্তরের খাদক:
ছোট মাছ, কিছু জলজ পতঙ্গ, ব্যাঙ প্রভৃতি দ্বিতীয় স্তরের খাদক। এরা নিজে খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না এবং উৎপাদককেও খাদ্য হিসেবে সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। এরা প্রথম স্তরের খাদকদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
(d) তৃতীয় স্তরের খাদক:
যেসব খাদক ছোট মাছ, চিংড়ি ইত্যাদি দ্বিতীয় স্তরের খাদককে ভক্ষণ করে তাদের তৃতীয় স্তরের খাদক বলে। শোল, বোয়াল, ভেটকি প্রভৃতি বড় মাছ, বক ইত্যাদি হচ্ছে তৃতীয় স্তর বা সর্বোচ্চ খাদক।
(e) বিয়োজক:
পুকুরের পানিতে বহু ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া মৃতজীবী হিসেবে বাস করে। এদের বিয়োজক বলে। এরা পানিতে ভাসমান বা পানির তলায় কাদার মধ্যে বাস করে। এরা জীবিত বা মৃত প্রাণীদের আক্রমণ করে এবং পচনে সাহায্য করে। ফলে উৎপাদকের ব্যবহার উপযোগী জৈব ও অজৈব রাসায়নিক পদার্থ পুনরায় সৃষ্টি হয়। এসব বিয়োজিত উপাদানগুলো আবার পুকুরের উৎপাদক শ্রেণির জীব ব্যবহার করে।