বিষয়: পুকুরে মাছ চাষের নিয়ম, মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি, পুকুরে মাছ চাষের পদ্ধতি, পুকুরে মাছ চাষ করার উপায়, পুকুরে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
হ্যাশট্যাগ:#পুকুরে মাছ চাষের নিয়ম#মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি#পুকুরে মাছ চাষের পদ্ধতি#পুকুরে মাছ চাষ করার উপায়#পুকুরে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
কোনো জলাশয়ের তলদেশের মাটির গঠন, রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং মাটিতে বিদ্যমান বিভিন্ন খনিজ উপাদান পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ কোনো জলাশয়ের উৎপাদন ক্ষমতা পানির তলদেশের মাটির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। পানির গুণাগুণ তাই মাছের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।
(01) মাচ চাষে পানির গুণাগুণ
পানির গুণাগুণকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ক. ভৌত গুণাগুণ, খ. রাসায়নিক গুণাগুণ, গ. জৈবিক গুণাগুণ।
পানির ভৌত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
ক. ভৌত গুণাগুণগুলো নিম্নরূপ:
পানির গভীরতা:
পানির গভীরতা খুব কম বা বেশি হলে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়। পুকুরে পানির গভীরতা ১.৫ মিটার থেকে ৩ মিটার হরে মাছ চাষের জন্য সুবিধেজনক।
পানির স্বচ্ছতা:
পুকুরের পানি ঘোলা হলে পানিতে সূর্যালোক প্রবেশে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে মাছের খাদ্য উৎপাদন কমে যায়। এতে মাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পানির স্বচ্ছতা ২৫ সেন্টিমিটার হলে পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হয়।
তাপমাত্রা:
পানির তাপমাত্রার উপরও মাছের বৃদ্ধি নির্ভর করে। শীতকালে মাছের বৃদ্ধি কম হয় এবং গ্রীষ্মকালে বৃদ্ধি দ্রুত হয়। রুই জাতীয় মাছ চাষের জন্য ২৫°- ৩৫° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা উত্তম।
সূর্যালোক:
সূর্যের আলো পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। পুকুর পাড়ে বড় গাছ থাকলে ডাল-পালা কেটে দিয়ে পানিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরে ভাসমান কচুরিপানা, হেলেঞ্চা ইত্যাদিও পানিতে সুর্যালোক প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে। এগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে।
খ. পানির রাসায়নিক গুণাগুণগুলো নিম্নরূপ:
দ্রবীভূত অক্সিজেন:
অক্সিজেন জীবনের জন্য অপরিহার্য। ফাইটোপ্ল্যাংকটন্ ও জলজ উদ্ভিদ সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার যে অক্সিজেন প্রস্তুত করে তা পানিতে দ্রবীভূত হয়। বাতাস থেকে কিছু অক্সিজেন সরাসরি পানিতে মিশে। পুকুরে অবস্থিত মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী এ অক্সিজেন দ্বারা শ্বাসকার্য চালায়। পুকুরের তলার জৈব পদার্থ পচনেও অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। পুকুরের উৎপাদন বজায় রাখার জন্য পরিমিত অক্সিজেন অত্যাবশ্যক। প্রতি লিটার পানিতে ৫-৮ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন মাছ চাষের জন্য উত্তম।
দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড:
বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন যেমন অপরিহার্য, মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য প্রস্তুতের জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইডও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোনো কারণে পানিতে এর পরিমাণ বেড়ে গেলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। পুকুরের তলায় অত্যধিক জৈব পদার্থ ও কাদা থাকলে অধিক তাপমাত্রায় পানিতে কার্বন ডাই- অক্সাইডের আধিক্য ঘটে। প্রতি লিটার পানিতে ১-২ মিলিগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড থাকলে মাছের উৎপাদন ভালো হয়।
পি.এইচ:
পানি অম্লধর্মী না ক্ষারধর্মী পি.এইচ দ্বারা তা পরিমাপ করা যায়। অপেক্ষাকৃত ক্ষারধর্মী পানি মাছ চাষের জন্য ভালো। পানির পি.এইচ ৬.৫ থেকে ৮.৫ হলে পানি প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক হয়।
ফসফরাস:
ফসফরাসের উপর পুকুরের উর্বরতা নির্ভর করে। প্রাকৃতিক পানিতে অতি অল্প পরিমাণ ফসফরাস থাকে। এ ফসফরাস্ ফসফেটে রূপান্তরিত হয়। পরিমিত ফসফেটের উপস্থিতিতে পানিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইটোপ্ল্যাংকটন্ উৎপাদিত হয়।
(02) পুকুরের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী
পুকুরে সাধারণত জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। কিছু জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী অতি ক্ষুদ্র। এগুলো দেখতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দরকার হয়। এসব ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য। আবার কিছু কিছু জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী মাছ চাষে বিঘ্ন ঘটায়। নিম্নরূপ জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী পুকুরে জন্মে থাকে:
ক. ভাসমান উদ্ভিদ:
এ ধরনের জলজ উদ্ভিদের পাতা ও কাণ্ড পানির উপর ভাসতে থাকে, কিন্তু মূল পানির মধ্যে ঝুলে থাকে। যেমন কচুরিপানা, টোপা পানা, ক্ষুদি পানা ইত্যাদি। এগুলো পুকুরের সূর্যালোক প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে ও পুকুরে ব্যবহৃত সার হতে পুষ্টি গ্রহণ করে। ফলে মাছের উৎপাদন কমে যায়।
খ. ডুবন্ত উদ্ভিদ:
এ ধরনের জলজ উদ্ভিদ পানির তলদেশে থাকে। এরা পুকুরের গভীরে সূর্যের আলো প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং মাছের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। যেমন— পাতা ঝাঁঝি, কাঁটা ঝাঁঝি, নাজাস ইত্যাদি।
গ. নির্গমনশীল উদ্ভিদ:
কিছু জলজ উদ্ভিদের মূল পুকুরের কিনারায় থাকে এবং কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা পানির উপরে বাড়তে থাকে। এগুলো নির্গমনশীল উদ্ভিদ। যেমন— আড়াইল, কলমিলতা ইত্যাদি। আড়াইল অনেকটা বোনা আমন ধানের মতো। কলমিলতা পানির উপরে লতানো জলজ উদ্ভিদ এগুলো বাংলাদেশে এলাকাভেদে বিভিন্ন স্থানীয় নামে পরিচিত।
ঘ. প্ল্যাংকটন:
পানিতে যে বীজকণা অর্থা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকে তাকেই ‘প্ল্যাংকটন্’ বলা হয়। প্ল্যাংকটন মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য। প্ল্যাংকটন বেশি থাকা পুকুরের অধিক উৎপাদনশীলতা নির্দেশ করে। প্ল্যাংকটন্ দুই প্রকার। যথা: ১.ফাইটোপ্ল্যাংকটন্ বা উদ্ভিদকণা এবং ২. জুপ্ল্যাংকটন্ বা প্রাণিকণা।
ঙ. ফাইটোপ্ল্যাংকটন:
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদই ফাইটোপ্ল্যাংকটন্। এগুলোর রং সবুজ। ফাইটোপ্ল্যাংকটন্ মাছের প্রাকৃতিক খাবার। যেমন- ডায়াটম, ভালোভক্স, স্পাইরোগাইরা ইত্যাদি। পুকুরে ফাইটোপ্ল্যাংটন্ অত্যাধিক জন্মালে সূর্যের আলো পুকুরের পানিতে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি হয়।
চ. জুপ্ল্যাংকটন:
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীকে জুপ্ল্যাংকটন্ বলা হয়। যেমন: ড্যাফনিয়া, রটিফেরা ইত্যাদি। জুপ্ল্যাংকটন্ মাছের প্রাকৃতিক খাবার।
ছ. কীটপতঙ্গ:
পুকুরের পানিতে এবং তলদেশে কাদার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ বাস করে। এগুলো মাছের খাদ্য এবং খাদ্যচক্রে অন্তর্ভুক্ত। যেমন: কাইরোনমিতলার্ভা, জল ফড়িং-এর বাচ্চা।
(03) মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি
মাছ চাষ ফসল উৎপাদনের মতোই একটি চাষাবাদ প্রক্রিয়া। ফসল ফলানোর লক্ষ্যে জমিতে চারা রোপণের পূর্বে জমি চাষ, সেচ দেওয়া, সার প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে কৃষি জমি তৈরি করা হয়। পুকুরে পোনা ছাড়ার আগে অনুরূপভাবে পুকুরে প্রস্তুত করতে হয়।
পুকুর প্রস্তুতির জন্য এ পদক্ষেপগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করতে হবে:
- পুকুর সংস্কার,
- আগাছা পরিষ্কার,
- রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ অপসারণ,
- চুন প্রয়োগ, ৫. সার প্রয়োগ,
- পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা।
ক. পুকুর সংস্কার
পুকুর সংস্কার পুকুর প্রস্তুতির প্রথম ধাপ। পুকুরের সংস্কার কাজ নিম্নরূপ:
কাদা সরানো:
পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে তাতে বিষাক্ত গ্যাস, ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ও পোকা-মাকড় থাকতে পারে। পুকুরের পরিবেশ উন্নত করার জন্য তলায় ২০-২৫ সেন্টিমিটার কাদা রেখে অতিরিক্ত কাদা উঠিয়ে ফেলতে হবে। পুকুর শুকিয়ে সহজেই কাদা সরানো যায়।
পাড় মেরামত:
পাড় ভাঙা, থাকলে বর্ষার পুকুরের মাছ বাইরে চলে যেতে পারে এবং রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ পুকুরে ঢুকে মাছ চাষ ব্যাহত করতে পারে। এ জন্য শুকনো মৌসুমে ভাঙা পাড় মেরামত করে তাতে ঘাস লাগিয়ে দিতে হবে। এতে পাড় শক্ত হবে। পাড় এমন উঁচু করতে হবে যাতে বন্যায় প্লাবিত না হয়।
খ. আগাছা পরিষ্কার
আগাছা পুকুরে ব্যবহৃত সার হতে পুষ্টি শোষণ করে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন হরাস করে এবং মাছের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিঘ্ন ঘটায়। নিম্নরূপ পদ্ধতিতে পুকুরের আগাছা পরিষ্কার করা যায়:
কায়িক শ্রম দ্বারা:
পুকুরের ভাসমান ও নির্গমনশীল আগাছা যেমন- কচুরিপানা, হেলেঞ্চা, কলমিলতা, দল ইত্যাদি কায়িক শ্রম দিয়ে সহজেই অপসারণ করা যায়।
জৈবিক পদ্ধতিতে:
পুকুরে পোনা মজুদের পর ডুবন্ত আগাছা জন্মালে তা দমন করে পুকুরের পরিবেশ যথাযথ রাখার জন্য জৈবিক পদ্ধতি খুবই উপযোগী। গ্রাস্ কার্প ও রাজপুটি উদ্ভিদভোজী মাছ। এসব মাছ পুকুরে মজুদ করলে ডুবন্ত আগাছা খেয়ে পুকুর পরিচ্ছন্ন রাখে।
রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগের মাধ্যমে:
পুকুর অতিরিক্ত সবুজ শেওলা হলে মাছের জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটে। অত্যধিক শেওলার কারণে অক্সিজেনের অভাবে মাছ মারা যেতে পারে। প্রতি শতকে ১ মিটার গভীরতার জন্য ৩৫ গ্রাম কপার্ সালফেট (তুঁতে) প্রয়োগ করে অতিরিক্ত সবুজ শেওলা দূর করা যায়।
গ. রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূরীকরণ
রাক্ষুসে মাছ পুকুরে চাষ করলে মাছের পোনা ও খাদ্য খেয়ে ফেলে মাছের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। শোল, টাকি, গজার, চিতল ইত্যাদি রাক্ষুসে মাছ। নিচের ৩টি পদ্ধতির মধ্যমে পুকুর হতে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা যায়। যেমন:
পুকুর শুকিয়ে:
পুকুরের পানি শুকিয়ে সব মাছ ধরে ফেলে সহজেই রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূর করা যায়। কাদার মধ্যে রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণী লুকিয়ে থাকতে পারে। পুকুরের তলা ভালো করে রোদে শুকালে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় ও জীবাণু ধ্বংস হয় এবং পুকুরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
জাল টেনে:
পুকুরে পানি কম থাকলে বার বার জাল টেনে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা যায়। জালের নিচের অংশ ইট বা ভারী কিছু বেঁধে দিয়ে আস্তে আস্তে জাল টানতে হয়।
রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে:
অনেক সময় পুকুর শুকানো সম্ভব হয় না। আবার জাল টেনেও রাক্ষুসে মাছ সম্পূর্ণরূপে দূর করা যায় না। এক্ষেত্রে রোটেনন ও ফস্টক্সিন দিয়ে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ এবং ক্ষতিকর প্রাণী দূর করা হয়ে থাকে। রোটেনন্পা নিতে মিশিয়ে নিয়ে এবং ফস্টক্সিন্ ট্যাব্লেট পুকুরের ছিটিয়ে দিয়ে দুই বা তিন বার জাল টেনে দিয়ে ১ ঘণ্টা পর মাছ ভাসতে শুরু করলে জাল টেনে তুলে ফেলতে হয়।
ঘ. চুন প্রয়োগ
চুন পানি শোধন করে। মাছ চাষের পুকুরে চুন প্রয়োগ অপরিহার্য। চুন মাছের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাল্সিয়াম সরবরাহ করে। মাটি ও পানির অম্লত্ব কমায় এবং ক্ষারত্ব বাড়ায়। ফলে মাটি ও পানির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। চুন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ এবং রোগ-জীবাণু ধ্বংস করে।
চুন প্রয়োগের মাত্রা:
মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থের উপর চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ভর করে। যেমন— লাল বা বাদামি রঙের মাটি অম্লীয়। এ ধরনের মাটিতে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে চুন প্রয়োগ করতে হয়। চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ভর করে মাটির পি.এইচ.-এর উপর।
চুন প্রয়োগ পদ্ধতি:
পুকুরে সরাসরি চুন ছিটিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কলিচুন বালতি বা ড্রামে নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রেখে ঠাণ্ডা হলে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। কলিচুন গুঁড়া চুনের চেয়ে অধিক কর্যকর।
(04) সার প্রয়োগ
পুকুরের পানিতে সবুজ উদ্ভিদকণা, অর্থাৎ ফাইটোপ্ল্যাংকটনের উৎপাদনের আধিক্যের উপর মাছের উৎপাদন নির্ভর করে। ফাইটোপ্ল্যাক্টনের আধিক্যের জন্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম প্রভৃতি প্রয়োজন। পানিতে এ সব উপাদান অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না। তদুপরি মাছ আহরণ, পানি পরিবর্তন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে পুকুরে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কমে যায়। তাই পানিতে সার ব্যবহার করে এগুলোর প্রয়োজনীয় যোগান দেওয়া হয়।
সার দুই প্রকার। যথা: ক. জৈব সার এবং খ. অজৈব বা রাসায়নিক সার।
ক. জৈব সার:
প্রাণী ও উদ্ভিদ উৎস থেকে যে সব সার পাওয়া যায় তাকে ‘জৈব সার’ বলে। যেমন: গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, কমপাস্ট, সবুজ সার ইত্যাদি।
খ. অজৈব সার:
কলে কারখানায় রাসায়নিক উপায়ে যে সার তৈরি হয় তাকে ‘অজৈব বা রাসায়নিক সার’ বলে। যেমন: ইউরিয়া, টি.এস.পি, (ট্রিপল্ সুপার ফসফেট) এম.পি (মিউরেট অভ্ পটাশ) ইত্যাদি।
গ. পুকুরে সার প্রয়োগ মাত্রা:
মাটির গুণাগুণ ও পুকুরের প্রকৃতিক উপর সারের মাত্রা নির্ভর করে। যেমন: বেলে ও এঁটেল মাটির পুকুরে দো-আঁশ মাটি অপেক্ষা বেশি সার দিতে হয়। আবার পুরোনো পুকুরের তলায় সাধারণত বেশি জৈব পদার্থ থাকে বলে সার কম লাগে ৷ কিন্তু নতুন কাটানো বা সংস্কার করা পুকুরে জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতে হয়। পুকুরে দুই পর্যায়ে সার প্রয়োগ করতে হয়। তাহলো:
- পোনা মজুদের পূর্বে পুকুর প্রস্তুতির সময়ে একবার প্রয়োগ করতে হয়।
- পোনা মজুদের পরবর্তী নিয়মিত প্রয়োগ করতে হয়।
ঘ. সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
ইউরিয়া বাদে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অন্যান্য অজৈব সার একটি পাত্রে নিয়ে তিনগুণ পানি দিয়ে আগের দিন সন্ধ্যায় ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে সার মেশানো পানি পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
(05) পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা
পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য সমৃদ্ধ পানির রং হালকা সবুজ বা বাদামি হয়। সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে পুকুরের পানি নিয়ে সূর্যের আলোয় ধরলে পানি পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকার মতো সবুজ বা বাদামি কণা দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মেছে। এ অবস্থায় পুকর পোনা ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে।