আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
পোল্ট্রি পালনের গুরুত্বঃ
- বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পোল্ট্রি পালনের মাধ্যমে শহর ও গ্রামের সাধারণ জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। স্বল্পতম সময়ে অর্থ বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। কারণ এরা ৫-৬ মাস বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে এবং ব্রয়লার মুরগি ৫-৭ সপ্তাহ বয়সে মাংসের জন্য বিক্রয় উপযোগী হয়।
- এদের পালক হতে নানা রকম প্রসাধনী দ্রব্য যেমন-শ্যাম্পু, সুগন্ধি তৈল এবং ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরি করা যায়।
- পোল্ট্রির বিষ্ঠা একটি উৎকৃষ্টমানের জৈব সার। গরু-মহিষের মল-মূত্র থেকে পোল্ট্রির বিষ্ঠায় বেশি পরিমাণে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়াম থাকে যা জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিসহ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
- পোল্ট্রি খামারের বিষ্ঠা দ্বারা বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরির মাধ্যমে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো যায় ।
- আমাদের দেশে আগে হাঁস-মুরগি সাধারণত গৃহস্থের বাড়ীতে পালন করতে দেখা যেত। গৃহস্থ বাড়ীর উঠানে আর আনাচে কানাচে পরিত্যক্ত শস্য কতা, উচ্ছিষ্ট খাবার, পোকা মাকড়, কচি ঘাস ইত্যাদি খেয়ে হাঁস-মুরগি বছরে যে ডিম দিতো গৃহস্থের তাই ছিল বেশ লাভজনক।
- ক্রমশ মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে পুষ্টির প্রয়োজন মেটাতে মুরগি গৃহস্থের উঠানেই শুধু সীমাবদ্ধ রইলোনা- তা জায়গা করে নিলো সুপরিকল্পিত খামারে, শহরের পাকা বাড়ীর বারান্দায় বা এক চিলতে উঠানের কোণে কিংবা ছাদে। এখন হাঁস-মুরগি পালন একটা লাভজনক আয়ের উৎস হিসেবে স্বীকৃত। হাঁস-মুরগির গুরুত্ব নিম্নে দেয়া হল ।
১. মাংস ও ডিমঃ
- আদর্শ খাদ্য হিসেবে দুধের পরই ডিমের নাম উল্লেখযোগ্য ।
- এছাড়া ডিম থেকে বিভিন্ন লোভনীয় খাবার (কেক, পুডিং ইত্যাদি) তৈরি হয়।
- হাঁস-মুরগির মাংস ও ডিম অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। সুস্বাস্থ্যের জন্য যে সমস্ত খাদ্য মানুষের প্রয়োজন যেমন- আমিষ, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন ইত্যাদি তা সবই পাওয়া যায় এই মাংস ও ডিম থেকে ।
- বিভিন্ন প্রসাধনী দ্রব্য যেমন স্যাম্পু তৈরিতে অন্যতম উপকরণ হিসেবে ডিম ব্যবহার হয়।
২. পালকঃ
- হাঁস-মুরগি পালকের ব্যবহার আমাদের দেশে খুব একটা প্রচলিত না থাকলেও শীত প্রধান দেশে পালকের তৈরি গদি, লেপ, বালিশ ও পোশাক বেশ জনপ্রিয়।
৩. বিষ্ঠাঃ
- পাখির বিষ্ঠা জমির উৎকৃষ্ট সার হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়।
- কর্ম সংস্থান ও আয় (Employement and income)
- হাঁস-মুরগি পালন হতে পারে কর্মসংস্থান, আয় ও পুষ্টির উৎস।
- হাঁস-মুরগি পালনের সম্যক জ্ঞান নিয়ে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে হাঁস-মুরগি খামার গড়লেতো কথাই নেই। বাড়ীতে সামান্য সংখ্যায় হাঁস-মুরগি পালনের মাধ্যমেও নিজ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অর্থ উপার্জনের সহজ পথ করে নেয়া যায়।
বাংলাদেশে ডিমের অবস্থাঃ
- বাংলাদেশে বছরে (২০০০) প্রায় ৩৫০০ মিলিয়ন ডিম উৎপাদন হয় (উৎস : জাতীয় পশু সম্পদ প্রদর্শনী ২০০২, পশু সম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ)।
- বাংলাদেশে প্রায় ১২০ মিলিয়ন মানুষের প্রত্যেকের সপ্তাহে অন্তত দু’টি করে ডিম খাওয়ার কথা (অর্থাৎ প্রয়োজন ১১৫২০ মিলিয়ন ডিম) কিন্তু আমাদের দেশে যে ডিম উৎপাদিত হয় (প্রায় ৩৫০০ মিলিয়ন) তা দিয়ে প্রতিটি মানুষের ভাগ্য পড়ে বছরে মাত্র ২৯টি তথা সপ্তাহে পড়ে ০.৬টি।
- সে অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রয়োজনের ৩০% (৩৫০০ মিলিয়ন) ডিম উৎপাদিত হয় এবং ৭০% (৮০২০ মিলিয়ন) ডিমের অভাব রয়েছে। ডিমের এই অবস্থায় আমাদের দেশে হাঁস-মুরগির খামারের গুরুত্ব অনুমেয়।