Skip to content

 

বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।

বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।

বিষয়ঃ খামারিয়ান এর আজকের এই পোষ্টটিতে তুলে ধরা হবে, বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)। আশা করি শেষ অবধি সাথেই থাকবেন, চলুন শুরু করা যাক।

আজকে আমরা আলোচনা করবঃ

◼ নিউ-ইয়র্ক সিটির একশো পঁচিশ নম্বর রাস্তার দুধ-সাদা রংয়ের সেই বিলাসবহুল বাড়িটার সামনে দাঁড়ালেই, আমার হৃদয়ে সমস্ত অনুভূতিতে ভূ-কম্পন টের পাই। এক করুণ বিষাদময় রেশ আমার চোখ-কান আর জিহ্বাকে আড়ষ্ট ও আচ্ছন্ন করে ফেলে। নিউয়র্কের আকাশে তখন সোনা গলানো রোদ্দুর। রাস্তায় চলমান মানুষের স্রোত। অথচ ডেল কার্নেগী আর আমাদের মধ্যে নেই। ইনস্টিটিউটে ক্লাস নিতে আসবেন না আর কখনও। কিন্তু ডেল কার্নেগী অমর হয়ে রইলেন তাঁর সৃষ্টি কর্মে রচিত গ্রন্থাদিতে। সারা পৃথিবীতে স্থাপতি ডেল কার্নেগী শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে।

◼ আপনার-যাঁরা জীবনে বড় হতে চান, উন্নতি করতে চান, নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান, তাঁদের অবশ্যই জানতে হবে, কেমন করে সহজেই লোকের মন জয় করা যায়। ব্যবসা-বাণিজ্য আর বেচাকেনা বাড়িয়ে, আয়-উন্নতির নতুন নতুন পথ খুঁজে পেতে হলেও এই বইটি আপনার অবশ্যই পড়া উচিত। ডেল কার্নেগীর সারা জীবনের কঠোর পরিশ্রম-লব্ধ অভিজ্ঞতা আর অনুশীলনের ফসল এটি। মানুষের জীবনের উন্নতির নব নব সোপান তৈরী করার ব্রত নিয়েই ডেল কার্নেগীর এই লিখনী।

  • (ক) অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন
  • (খ) প্রথমে লক্ষ্য স্থির করুন
  • (গ) মনে দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন
  • (ঘ) বারবার অনুশীলন করুন

◼ জনসাধারণের সামনে কিভাবে বক্তৃতা দিতে হয় এই সম্পর্কে আমি প্রথম একটি শিক্ষাক্রম চালু করেছিলাম ১৯৬২ সালে। এ পর্যন্ত সাতশো পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে আমি শিক্ষা দিয়েছি ঐ শিক্ষাক্রমে।

◼ প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আমি বলার সমান দিতাম কেন বা কি উদ্দেশ্যে তারা এখানে পড়তে এলো। এ বিষয়ে তাদের অধীকাংশের বক্তব্যই ছিলো সহজ সরল এবং মূলত একই পর্যায়ের। এত অবাক হবার কিছুই নেই। যে সত্যিকারের চাহিদা ছিলো তাদের কি করে রুজিরোজগার বাড়ানো যায় বা কর্মক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। কিভাবে সুনিয়ন্ত্রিত করা যেতে পারে মানবিক সম্পর্ক। কি করে ধ্যান-ধারণাকে ঠিকমতো ব্যক্ত করতে পারে, নেতৃত্ব গ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করবেন এবং সহজেই অপরকে অনুপ্রাণিত করে অন্য সবার চাইতে অনেক বেশি সংগ্রহ করতে পারবেন। এবার আসা যাক শিক্ষার্থীদের নিজেদের কথায়। যেমন ধরুন, একজন ব্যবসায়ী আমাকে বললেন, সভা-সমিতি লোকজনের সামনে কিছু বলতে গেলেই আমি বড় বেশি আত্মসচেতন হয়ে পড়তাম, ভয়ে সবকিছু গুলিয়ে যেতো, কোন কথায় গুছিয়ে বলতে পারতাম না। ভাব-ভাবনা এবং বক্তব্যকে স্পষ্ট করে কার্যকারভাবে প্রকাশ করতে চাই। এক কথায় আমি চাই কথা বলার দক্ষতা অর্জন করতে।

◼ এ কথাগুলো আপনার কি খুব চেনা মনে হচ্ছে না? আপনি নিজেও কি ভূক্তভোগী নন, আপনার কি ইচ্ছে হয় না সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে চমৎকার বক্তৃতা দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখতে? আমি খুব ভাল করেই জানি আপনার গোপন বাসনা। আমি বলছি আপনি পারবেন তা করতে। যে মুহুর্ত থেকে আপনি এই বই পড়তে শুরু করেছেন তখন থেকেই আপনি ভাবছেন কিভাবে কথা বলার ক্ষমতা লাভ করবেন। আমি জানি আপনি কি করবেন। এখন আমি যদি আপনার সামনে থাকতাম, আপনি হয়তো বলতেন, মিঃ কার্ণেগী, আমি কি পারবো আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে সাবলীলভাবে অনর্গল বলে যেতে?

◼ আমি আমার জীবনে বেশির ভাগটাই ব্যয় করেছি জনসাধারণের সাহায্য কল্পে। তারা যাতে ভয় কাটিয়ে সাহস আর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে পারে এই ভেবে। আমি আমার প্রতিটি বইতে জীবিকা অন্বেষণকারীর প্রয়োজনীয় শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমার লিখিত দুশ্চিন্তাহীন নুতন জীবন, প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ ইত্যাদি বইগুলো পড়ে দুনিয়ার কোটি কোটি লোক উপকৃত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন নিজেদের জীবনে। এ বইতেও যা বলেছি, এ শুধু আমার ব্যক্তিগত চিন্তা নয়। আমি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা থেকেই বলছি-আপনি পারবেন প্রকৃত স্বাবলম্বী হতে, যদি আপনি সব যথাযথভাবে অনুশীলন করেন, প্রতিটি মতামত মেনে চলেন নিষ্ঠার সঙ্গে।

◼ এ লিখনী আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। এ লিখনীকে পাঠ্যপুস্তক ভাববেন না। সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন। বারবার পড়ুন। সর্বদা হাতের কাছে রাখুন। এ বইয়ের নির্দেশ মেনে চললে ম্যাজিকের মতো ফললাভ হবে আপনার। অবিশ্বাস্য বা অলৌকিক মনে হতে পারে, কিন্তু এটা সত্যি, ঠিকমতো নির্দেশ ও শিক্ষণীয় কর্তব্য মেনে চললে মানুষের মন জয় করতে পারবেন। মানুষের মন জয় করতে পারলে আপনার জীবনে আমূল পরিবর্তন আসবেই আসবে।

(ক) অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন

◼ একবার ফিলাডেলফিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী মিঃ জনসন-এর সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজের আমন্ত্রণ এলো আমার। খাবার টেবিলে আমার দিকে ঝুঁকে লাজুক গলায় তিনি জানালেন-নানারকম সভা-সমিতিতে যেতে হয় আমাকে, বক্তব্য রাখার অনুরোধে আমি খুব বিব্রত বোধ করি। নানারকম অজুহাত দেখিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করতে হয়। কিন্তু এবারে ভীষণ মুশকিলে পড়েছি। কলেজ ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে আমাকে। আমাকে এখন থেকে ওদের প্রতিটি সভায় সভাপতিত্ব করতে হবে। আপনি কি মনে করেন এ বুড়ো বয়সে নতুন করে বক্তৃতা করা শেখা সম্ভব হয়ে উঠবে আমার পক্ষে? আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আমি তাঁকে জানালাম- হ্যাঁ সম্ভব হবে, যদি আপনি আমার কথামত প্রশিক্ষণ নেন, নিয়মিত অনুশীলন করে যান প্রতিটি পাঠ।

◼ তিন বছর পরের কথা। সেই একই হোটেলে খাবার টেবিলে মুখোমুখি বসে কতা বলছিলাম আমি ও মিঃ জনসন। তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন— জানেন তো মিঃ কার্ণেগী, ফিলাডেলফিয়ার গির্জা সমিতির আমন্ত্রণে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আসছেন এখানে। সভায় তিনিই সভাপতিত্ব করবেন। ফিলাডেলফিয়ার অভিজাত সমাজ থেকে আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অভ্যর্থনা সভায় ভাষণ দেবার জন্য।

◼ ভাবতে অবাক লাগে, এই সেই লোক, যিনি পূর্বে বক্তৃতা দেবার নাম শুনলেই ভয়ে মূর্ছা যেতেন। শুনতে অবাক লাগলেও এ ঘটনা পুরোপুরি সত্য। বিংশ শতাব্দীর অত্যাশ্চর্য ঘটনা হল ভয়কে জয় করতে পারা?

আপনিও আজ থেকে মনের সব ভয়কে দূরে সরিয়ে রেখে কাজে নেম পড়ুন। আন্তরিকভাবে এটা করুন। দেখবেন, এতে যাদুর মত কাজ হবে। মনে রাখবেন আপনিও মানুষ, যাদের সামনে বক্তব্য রাখবেন তারাও আপনার মতই মানুষ।

(খ) প্রথমে লক্ষ্য স্থির করুন

◼ লোকের মন জয় করার প্রথম সোপান হল, সুন্দর কথা বলতে পারা ক্ষমতা অর্জন করা। জনসমাবেশে কিছু বলার পূর্বে প্রথমেই ঠিক করুন আপনি কি বলতে চান। সেটা জানা থাকলেই আপনার চিন্তাকে যুক্তি-তর্কের জাল বুনে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শ্রোতাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারবেন।

◼ আপনি সমস্ত মনপ্রাণ ঢেলে অনুশীলন শুরু করুন। প্রথমে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে কথা বলার অভ্যাস করুন। তাড়াহুড়ো না করে গুছিয়ে বলার দিকে লক্ষ্য রাখুন। আগামী দিনে হাজার লোকের সামনে আপনি বক্তৃতা দিচ্ছেন, মনঃশ্চক্ষে এ ছবিটা দেখার চেষ্টা করুন। তাহলেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। সাহসী হবেন নিরলস অনুশীলনে। আপনার স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়িত হতেই হবে। একমাত্র কিছুর বলার মাধ্যমেই সত্যিকারের জনসংযোগ ঘটে এবং কার্যকর হয় সর্বত্রভাবে। এ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ রাতারাতি তাঁর ভাগ্যকে ফিরিয়ে ফেলেন। কি, বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে একটা দৃষ্টান্ত দিই-আমেরিকার একটি বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘ন্যাশনাল ক্যাশ রেজিস্টার কোম্পানী’ এবং ইউনেসকোর চেয়ারম্যান মিঃ ক্লেয়ার ডোলান ‘স্পিচ এন্ড লিডারশিপ ইন দি বিজনেস’ নামে এক আলোড়ন তোলা নিবন্ধ লিখেছিলেন। তাতে একজায়গায় বলেছেন- আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ইতিহাসে অনেকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো বক্তৃতা মঞ্চে ভালো বক্তৃতা পেশ করার জন্যই। অনেককাল আগে কানসাসের ছোট্ট অফিসে বিক্রির দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল একটি ছেলের হাতে। একবার সে ছেলে মঞ্চে কিছু বলার সুযোগ পেলো। ছেলেটি সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের সম্মোহনকারক বক্তব্য রেখে বিস্মিত করে তুলেছিল উপস্থিত হোমরাচোমরাদের। উন্নতির সোপান খুলে গেলো ছেলেটির সামনে। আজ সেই ছেলেটিই হল ‘ন্যাশানাল ক্যাশ রেজিস্টার কোম্পানির’ ভাইস চেয়ারম্যান। পরে তার খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, পরবর্তীকালে ভাইস চেয়ারম্যান থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল সেই ছেলেটি।

◼ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক হেনরী জেমসের কথা দিয়েই বলা যাক- যে কোন বিষয়ে আপনার নিষ্ঠাই আপনাকে বাঁচাবে। যদি আপনি ভালো ফল পেতে আগ্রহী হন, তবে একাগ্রতার সঙ্গে করণীয় কাজ করুন। যদি আপনি ধনী হবার জন্য একাগ্রচিত্তে কামনা করেন, তবে আপনি ধনী হবেনই। যদি আপনি মন দিয়ে পন্ডিত হতে চান, তবেই পন্ডিত হতে পারবেন। সমস্ত মনপ্রাণ ঢেলে চাইতে পারলেই একমাত্র তা কাজে রূপায়িত হবে, অন্যথায় নয়। যিনি একশো ভাগ ইচ্ছের মধ্যে একশো ভাগই নিষ্ঠা আর অনুশীলনে ব্যয় করেন। তিনি সফল হন অতি সহজেই। আরো সহজ করে বলা যায়- আমাদের প্রত্যেকের ভেতর যে শক্তি, ক্ষমতা এবং নানারকম যোগ্যতা রয়েছে, সে সম্পর্কে আমাদের কোন রকম পুরোপুরি ধারণা নেই। একটু একটু বা বড়জোর অর্ধেকটা আমরা ভাসাভাসা জানি- স্বচ্ছ নয়। তাই আমরা যা হতে পারি তা হই না। আমাদের যে পরিমাণ শারীরিক এবং মানসিক শক্তি আছে, আমরা তার মাত্র কিছুটাই কাজে লাগাই। কোন মানুষই ব্যক্তিত্ব নিয়ে জন্মায় না, সে অলসত্ববশত নিজেই নিজেকে খুব রুগ্ন করে রাখে। বৈচিত্র্যময় এবং বহুমুখী কর্মশক্তির মালিক হয়েও ব্যক্তিমানুষ খুব কমই সারা জীবনে তা ব্যবহার করতে পারে। অব্যবহৃত মরচে পড়া অবস্থায় শক্তি ও ক্ষমতা আপনার মস্তিষ্কেই রয়েছে।

◼ আমেরিকা মেডিকেল এ্যাসোসিয়েসনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং অধুনা আটলান্টিক সিটি সার্জন ডাঃ ডেভিস নিকসন একবার আমাকে বলেছিলেন এমনভাবে হৃদয় আর মস্তিষ্কের ব্যবহার করুন যাতে করে লোকেরা আপনার দিকে মনোযোগী হয়। আপনার চিন্তা-ভাবনাকে সহজ করে অন্যকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। একজন লোক, অধিক লোক বা হাজার লোকের মাঝখানেও এমন সুচিন্তিত মতামত রাখুন যা তাদের প্রভাবিত করবে, ভাবতে থাকবে, এমন তো আগে শুনেনি।

প্রথমে আপনার লক্ষ্য স্থির করুন। তারপর সমস্ত মনপ্রাণ ঢেলে বিশ্বাস করতে শিখুন— আপ্রাণ সফল হতে চলেছেন।

(গ) মনে দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন আপনি সফল হবেনই

একবার রেডিওর এক অনুষ্ঠানে আমাকে বলতে বলা হয়েছিল, আমি যেন সারাজীবনে যা শিখেছি তা তিন লাইনে বলে দিই। আমি বলেছিলাম এ পর্যন্ত আমি যা শিখেছি তার সার কথা হল, আমাদের সবার উচিত যা আমরা ভাবি তার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা। যদি আমি বুঝতে পারি আপনি কি চিন্তা করেন, তা হলে আমি সহজেই চিনে নেবো আপনি কে। একমাত্র আপনার চিন্তাই আপনাকে পরিচিতি দেবে। তাই চিন্তা-ভাবনার গতিপথ পাল্টে আমরা আমাদের পুরো জীবনকেই পাল্টে ফেলতে পারবো অতি সহজে।

আপনি আশাবাদী হোন। কোন অবস্থাতেই বিশ্বাস হারাবেন না। মনে দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন যে আপনি সফল হবেনই।

(ঘ) বারবার অনুশীলন করুন

◼ জর্জ বার্নাড’শ যৌবনে ছিলেন খুবই লাজুক আর ভীতু। একজনের বাড়ির সামনে কুড়ি মিনিট পায়চারি করার পর সাহস করে দরজার কড়া নাড়তে পেরেছিলেন। তাঁর দুর্বলতম দিকটা সবল করে তুলতে তিনি একা ঘরে আয়নার সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বক্তৃতার অনুশীলন করতেন।

◼ যে রকম বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সুযোগ নিন। নিজেকে নিজে যাচাই করুন। তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে, সুচিন্তিত মতামত তৈরী করতে সাহসী হোন। তবেই না আপনি জনপ্রিয় হবেন, চিত্ত জয় করতে পারবেন অন্য সবার।

এ বই পড়ার সাথে এর প্রতিটি নির্দেশ বাস্তাবে পালন করুন। বারংবার অনুশীলন করুন। দেখবেন আপনার ভিতর ও বাইরে পরিবর্তন আসবে। চিন্তার স্বাধীনতা আর স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমেই আপনার নতুন ব্যক্তিত্ব তৈরী হবে।

  • (ক) ভয় পাবার কারণ খুঁজে বের করুন
  • (খ) সঠিক ভাবনায় নিজেকে তৈরী করুন
  • (গ) স্মৃতি হাতড়ে শব্দ খুঁজবেন না
  • (ঘ) চিন্তার সূত্রগুলোকে একত্রিত করুন
  • (ঙ) বন্ধুদের মাঝে বক্তৃতা দেওয়ার অভ্যাস করুন

পড়তে ক্লিক করে এখানে যান

  • (ক) এমন বিষয়ে কথা বলুন যে বিষয়টিতে আপনার অভিজ্ঞতা আছে
  • (খ) আসন্ন জয়লাভের জন্য প্রস্তুত হন
  • (গ) পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করুন
  • (ঘ) আমাদের বলুন জীবন থেকে কি শিখলেন
  • (ঙ) বিষয়বস্তুর জন্য অতীতের দিকে ফিরে তাকান
  • (চ) সিদ্ধান্তে আসুন পছন্দমত বক্তব্য খুঁজে
  • (ছ) পেয়ে কত উত্তেজিত হবেন
  • (জ) আপনার চিন্তা শ্রোতাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার কৌশল বের করুণ
  • (ঝ) বক্তব্য, বক্তা এবং শ্রোতা

পড়তে ক্লিক করে এখানে যান

  • (ক) বিষয়বস্তুকে অযথা না বাড়িয়ে সংক্ষিপ্ত করুন
  • (খ) সংরক্ষিত ক্ষমতা বাড়ান
  • (গ) আপনার বক্তব্যকে বর্ণনাবহুল চিত্রধর্মী করে তুলুন
  • (ঘ) আপনার বক্তৃতাকে মানবতার সাথে পরিচালিত করুন
  • (ঙ) ব্যক্তিগত ভাবনাকে বিশ্বাসযোগ্য করার পরিচয় দিন
  • (চ) ঘটনাকে বিশ্বাসগ্রাহ্য করুন
  • (ছ) সংলাপ যুক্ত করে আপনার কথা বলাকে নাট্যরসে সমৃদ্ধ করে তুলুন
  • (জ) দর্শকের কাছে শ্রোতার চোখে, শব্দ দিয়ে ছবি আঁকার জন্য সহজ পরিচিতি যথার্থ করে খুঁজে নিন।

পড়তে ক্লিক করে এখানে যান

  • (ক) এমন বিষয় নির্বাচন করুন, যা আপানি ভাল জানেন
  • (খ) আপনার অভিজ্ঞতায় প্রাণ সঞ্চার করুন
  • (গ) যা বলবেন নিষ্ঠার সঙ্গে বলুন

পড়তে ক্লিক করে এখানে যান

  • (ক) শ্রোতার ভালো লাগার দিকে লক্ষ্য
  • (খ) রেখেই বক্তব্য রাখুন
  • (গ) শ্রোতার কাছে সৎ ও আন্তরিক হোন
  • (ঘ) নিজে শ্রোতার সঙ্গে একমত হোন
  • (ঙ) শ্রোতাকে আপনার কথার অংশীদার করুন।
  • (চ) কখনও শ্রোতার সামনে সবজান্তা বলে ভাববেন না

পড়তে ক্লিক করে এখানে যান

  • (ক) পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া উপস্থিত কিছু বলার মানসিক প্রস্তুতি রাখুন
  • (খ) যত দ্রুত সম্ভব উদাহরণ দিন
  • (গ) প্রাণবন্তভাবে কথা বলুন, আত্মবিশ্বাস রাখুন
  • (ঘ) যে কোন মুহুর্তে আপনাকে কিছু বলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে
  • (ঙ) উপস্থিত বক্তব্য রাখুন এবং সেই সঙ্গে আকর্ষণীয় উদাহরণ দিন

পড়তে ক্লিক করে এখানে যান

  • (ক) সংকোচ, গাম্ভীর্য আর আত্মসচেতনাতর খোলস বেরিয়ে আসুন
  • (খ) অন্যকে নকল না করে নিজের মত করে বলুন
  • (গ) অন্তরঙ্গভাবে শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলুন
  • (ঘ) সমস্ত মন-প্রাণ ঢেলে কথা বলুন
  • (ঙ) গলাকে নমনীয় করে তুলতেঅনুশীলন করুন

পড়তে ক্লিক করে এখানে যান

  • (ক) আপনি যা বলতে চেয়েছেন তা পরিষ্কার বুঝুন, তৈরী হোন
  • (খ) সবচেয়ে আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন।
  • (গ) আন্তরিকতা যেন শ্রোতার হৃদয় স্পর্শ করে।
  • (ঘ) আপনি যদি পুরষ্কার বিজয়ী হন তাহলে আপনি শ্রোতাদের উষ্ণ আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে ভুলবেন না

পড়তে ক্লিক করে এখানে যান

  • (ক) প্রথম পদক্ষেপেই শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেষ্টা করুন
  • (খ) কোন ঘটনা বা উদাহরণ দিয়ে বক্তব্য শুরু করুন
  • (গ) শ্রোতাদের আগ্রহকে শতগুণ বাড়িয়ে তোলার কথা বলুন
  • (ঘ) বক্তব্যের মাঝখানে, সত্যিকার পরিসংখ্যানমূলক তথ্য দিন
  • (ঙ) দর্শক-শ্রোতাদের হাত উপরে সম্মতি সমর্থন আদায় করুন

পড়তে ক্লিক করে এখানে যান

◼ আপনি পূর্বে বহুবার হয়ত লক্ষ করেছেন একজন সফল বক্তা তাঁর বক্তব্যকে বর্ণে বৈচিত্রে নানা নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহে খুঁটিনাটি বিবরণে শ্রোতার সামনে ছবির মত করে তোলেন। তাতে করে খুব সহজেই তিনি শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন ও মন জয় করেন।

◼ আপনিও আপনার দৈনন্দিন জীবনের কথাবার্তার মধ্যে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করুন এবং এই বইয়ের নির্দেশাবলী মনে প্রাণে অনুশীলন করে চলুন- বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে। এভাবে প্রতিনিয়ত অনুশীলন করলে আপনার কাজ-কর্মের ক্ষেত্র অনেক বেশি প্রসার লাভ করবেন।

◼ ওয়াশিংটনের এক বাড়ির গৃহীনী যিনি ডেল কার্নেগী ইনস্টিটিউশনের শিক্ষাক্রম নেবার পর আমাকে চিঠিতে জানিয়েছিলন, আগে ৪/৫ জন অচেনা লোকের সামনে কোনরকম সামাজিক অনুষ্ঠানের কথা ভলার সময় আমি ঘেমে নেয়ে উঠতাম। কোন শব্দই খুঁজে পেতাম না অথচ এখন সেই আমিই চারশ লোকের সামনে অবলীলায় বলতে পারছি, শ্রোতাদের খুশি করতে পারছি।

◼ সেলসম্যান, ম্যানেজার কেরানি, সওদাগরি, অফিসের বড়বাবু, ছোট ছোট দলীয় নেতা, শিক্ষক, রাজা-গজা, অফিসার, নার্স, ডাক্তার, আইনজীবি, হিসাবরক্ষক এবং ইঞ্জিনিয়াররা আপনারা যে যেখানে যেমনভাবে যে রকম দায়িত্ব নিয়োজিত থাকুন না কেন এ বইতে শেখা নিয়ম-কানুনগুলো নিজের বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করে আপনার কাজের পরিধি বাড়িয়ে তুলুন। ভালভাবে বক্তব্য রাখতে পারাটা আজকের পৃথিবীতে যোগাযোগ রাখার মূল সোপান এবং সরকারী বেসরকারী কর্মক্ষেত্রে শিল্পোদ্যোগে এবং নানারকম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মমঞ্চে একমাত্র কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে।

জনসাধারণের সামনে কিছু বলার সুযোগ খুঁজুন— একথাটি আপনার কানের কাছে কেউ উচ্চারণ করলেই সঙ্গে সঙ্গে মনে প্রশ্ন জাগবে, কেমন করে তা সম্ভব হবে। আমি জনসাধারণই বা পাব কোথায়?

◼ সমাধান আছে। আপনাকে খুঁজে নিতে হবে কোন একটি ক্লাব বা সংস্থা এবং তার সক্রিয় সভ্যপদ গ্রহণ করুন। সম্ভব হলে ক্লাবে অনুষ্ঠান পরিচালক, সভাপতি, যিনি সাংস্কৃতিক বিভাগগুলি দেখাশুনা করেন তাঁকে প্রভাবিত করে মঞ্চে ওঠার সুযোগ করে নিন। প্রথমে আপনার উপর ভার পড়বে উপস্থিত ক্লাবের গণ্যমান্য, হোমরাচোমরা ব্যক্তি এবং সমবেত বক্তাদের শ্রোতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। পরে আস্তে আস্তে নিজেই বলার সুযোগ পাবেন বক্তা হিসেবে।

◼ সানফ্রান্সিসকোর একজন স্কুল শিক্ষক তাঁর ক্লাবের মাধ্যমে ছোট ছোট বক্তব্য রাখার ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে এমনভাবে তৈরী করে ফেলতে পেরেছিলেন যে, তিনি খুব দ্রুতই আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, ছাত্র-ছাত্রী, নিজের পরিবারের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে সুনাম অর্জন করে ফেললেন ভাল বক্তা হিসেবে। এবার তিনি ক্রমশই আমন্ত্রিত হতে থাকলেন সানফ্রান্সিসকো শহরের বড় বড় সভা সমিতিতে। জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখতে পারে বলে হু হু করে তাঁর নাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। তাঁর জীবনের পট পরিবর্তন হল। তাঁর একদিনের শখ তাঁকে নিয়ে গেল অন্য এক জগতে।

◼ তাঁর নামটা বলতে একটু অসুবিধে আছে। সেদিনের সেই শিক্ষকটি আজ আমেরিকানা টি.ভি.তে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদ পাঠক ও টি.ভি তারকা।

◼ কে বলতে পারে আপনার জীবনের এমন কোন পরিবর্তন আসবে না। যখন আমরা কোনও নতুন জিনিস শিখতে যাব, যেমন ধরুন ফারসী শেখা, গলফ্ শেখা অথবা বিক্তৃতা করতে শেখা, আমরা কিন্তু মনে-প্রাণে সে বিষয়টি শিখতে আগ্রহী হই না। দৃঢ়তার সঙ্গে এগোই না। যদি বা হঠাৎ করে উদ্দীপ্ত হয়ে যাই, দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকি, একদনি যেমনিই দ্রুতভাবে পিছনে হটে আসি থেমে যাই। এবং এইভাবে পুরো থেকে যাওয়া, মাঝ রাস্তায় থামা বা ঢিমে তালে চলতে গিয়ে আমরা শুধুই অনর্থক সময় আর অর্থের অপচয় করি।

◼ এমনি করে বিক্ষিপ্ত ভাবে অধ্যবসায়হীন কাজ অর্থহীন হয়েই দাঁড়াই। কিন্তু যদি আপনার ভেতরের পুরোশক্তি ঢেলে আন্তরিকতা— বুদ্ধি আর অধ্যবসায় দিয়ে আপনি আপনার কথা বলার অভ্যাস করেন তাহলে কোনও প্রতিকূলতাই আপনার সফলতাকে থামিয়ে রাখতে পারে না। তবে হ্যাঁ, গোড়ার দিকে শ্রোতার সামনে বলতে গিয়ে অনভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ কিছুটা ভয়ভীতি একটু স্নায়ুবিকল দৌর্বল্য আপনাকে সমান্য কাবু করে দেবে ঠিকই কিন্তু শ্রোতার সামনে দাঁড়ানোর কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই আপনি আপনার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা, কণ্ঠস্বরে সুস্বাস্থ্য এবং মনের উদ্দীপনা খুঁজে পাবেন। এ ধরনের ভয়ভীতিকে গুরুত্ব না দিয়ে আবার একেবারে অবজ্ঞা বা নস্যাৎ না করে বলতে পারলে আপনি শ্রোতার মন ঠিকই জয় করবেন।

পূর্বে আমি একবার লিখেছিলাম, আমার নিজেরও প্রতিবার মঞ্চে ওঠার আগে একটু ভয় লাগে। কিন্তু বলতে শুরু করলেই তা কেটে যায়। সুতরাং এ নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছুই নেই।

◼ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ পিয়ানো বাদকেরও মঞ্চে ওঠার পূর্বে হাত-পা কাঁপত। মুখ রক্তশূন্য হত। কিন্তু যে মুহুর্তে মঞ্চে উঠে পিয়ানোতে হাত দিত সেই মুহুর্তেই প্রখর সূর্যালোকের মত ঝলমল করে উঠতেন তিনি।

◼ একবার একজন যুবক লিঙ্কনের কাছে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছিলেন, আইনজীবি হলে তাকে কি করতে হবে। উত্তরে লিঙ্কন লিখেছিলেন “যদি তুমি সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস কর যে, তুমি আইনজীবীই হবে, তাহলে তোমার অর্ধেক কাজ এগিয়ে গেল। বাকি অর্ধেক নির্ভর করবে তোমার আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম ও অধ্যবাসয়ের উপর ৷’ লিঙ্কন এটা ভাল করে জানতেন, ধৈর্য্য এবং অধ্যবসায় ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র মূলমন্ত্র। আমেরিকার সবচেয়ে বড় মসস্তাত্ত্বিক তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধে লিখেছিলেন সে যে বিষয়ই হোক না কেন, কোনও যুবকেরই শেখার ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। যদি সে তার কর্মবহুল দিনের প্রতিটি ঘন্টা ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করে, সে পরিণতিতে যে সফলকাম হবেই, এতে সন্দোহের অবকাশ নেই। এইভাবে চালিয়ে যেতে পারলে, কোনও একদিন মনোরম প্রাতঃকালে সে নিজেকে আবিষ্কার করবে এ যুগের একজন সুযোগ্য বংশধররূপে। যে বিষয় সম্পর্কে তার ছিল এরূপ নিষ্ঠা এবং কঠোর অধ্যবসায় সে-বিষয়ে সে যে অবিস্মরণীয় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এ সম্পর্কে সন্দিহান হবার কোন আশঙ্কা নেই।

আর একটি উদাহরণ দিই― একজন প্রাক্তন গভর্নর একবার ট্রেনটনে আমাদের ক্লাশ শেষ হওয়ার মুখে বক্তৃতা দিতে উঠেছিলেন। তিনি বললেন,— এ পর্যন্ত এই সভায় তিনি যে সুন্দর বক্তৃতা শুনেছেন তা হাউস অফ রিপ্রেজেন্টিটিভ বা সিনেট হলে বলিয়ে সুদক্ষ বক্তাদের মতই অপূর্ব। ট্রেনটনের ঐ সভায় বেশির ভাগ বক্তাই ছিলেন পেশায় ব্যবসাদার, যাঁরা এক মাস আগেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে জিভে আটকে গিয়ে গলা শুকিয়ে তোতলাতে শুরু করতেন তাঁরা কেউ একজন বিখ্যাত বক্তা সিসারো নন, সাধারণ ব্যবসাদার মাত্র। কিন্তু বারবার অনুশীলনের দ্বারা তাঁরা নিজেদেরকে একদিন সত্যি সত্যিই আবিষ্কার করে ফেললেন-এক-একজন মনোজ্ঞ বক্তা হিসেবে, প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেন শহরের অন্যতম সুদক্ষ বক্তাদের মধ্যে।

◼ এই বইটিতে এ পর্যন্ত যা বলা হল তা সবই আপনার জন্যে। কিন্তু বইটি পড়া শেষে, অনুশীলন শেষে বাস্তব ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করে, জীবনের নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে যখন আপনারা সফল হবেন তখনই আমার এই লেখা সার্থক হয়ে উঠবে।

◼ কারণ, আমি নিজে শিক্ষা নিয়েছি হার্বাট স্পেন্সারের কাছ থেকে। আমি বিশ্বাস করি যে, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবলমাত্র জ্ঞান আহরণ করা নয়। সে জ্ঞানকে কাজে রূপান্তরিত করা হলেই সে জ্ঞানের সার্থকতা, অন্যথ্যায় নয়। প্রত্যক্ষ কাজের জন্য আপনি যাতে পুরোপুরি তৈরী হয়ে উঠতে পারেন এই লিখনীর মূল উদ্দেশ্য সেটাই। আমার দৃঢ়বিশ্বাস এই বইটির কথামত চললে আপনি অতি সহজে লোকের মন জয় করতে স্বক্ষম হবেন।

◼ দুপুর বেলা। ফিলাডেলফিয়ার একজন ইংরেজ যুবক উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছিলো তার মন। পকেটের পয়সা ফুরিয়েছে থাকার জায়গা নেই। খাওয়ার সংস্থানও নেই। এই দূর বিদেশে দুঃস্থ-নিঃস্ব ইংরেজের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠলো, যে করেই হোক কোন-রকম রোজগারের উপায় খুঁজে বের করা। এখানে আশ্রয় নেওয়ার মত একজনও পরিচিত বন্ধু বান্ধব নেই তার।

◼ অনেক ভেবে-চিন্তে ইংরেজী যুবকটি ঠিক করলো তার সামনে প্রথম যে বড় কোম্পানীর সাইনবোর্ড নজরে আসবে সে সোজা ভিতরে ঢুকে পড়বে। কোনদিকে তাকাবে না। যদিও তার বোতাম ছেঁড়া, বিবর্ণ জামা আর রোঁয়া উঠে যাওয়া সুতীর প্যান্ট দেখে যে কেউ-ই এক নজরে তাকে গরিব ভিখারি বলে ভেবে নিতে পারে। কিন্তু যুবকটি দমল না। ‘ডলীন-রীড এন্ড কোম্পানিতে ঢুকে অতি কষ্টে বুঝিয়ে সুজিয়ে শহরের সেরা শিল্পপতি গীবনস্-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের অনুমতি মিললো ইংরেজ যুবকটির। পল গীবনস্ হলেন কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাণপুরুষ।

◼ ইংরেজ যুবকটি যখন পল গীবনস্ এর ব্যক্তিগত অফিস কক্ষে ঢুকলো, তখন নেহাতই কৌতূহলে তিনি এই দারিদ্রপীড়িত যুবকটিকে খুঁটিয়ে দেখলেন। মলিন পোশাকের এই যুবকরে সর্বাঙ্গে দারিদ্রের শোকাবহ ছবি আঁকা রয়েছে যেন। খুবই অবিশ্বাস নিয়ে নিরুৎসুক হয়ে উঠলেন পল গীবনস্ অচেনা আগন্তুকের প্রতি। একপ্রকার দয়া করেই যেন যুবকটি কে কথা বলার অনুমতি দিলেন গীবনস্। বলতে শুরু করলো যুবকটি………

◼ মুহুর্ত কেটে গেল………মিনিট কেটে গেল………এক পা দু পা করে মিনিটের কাঁটা কখন অজান্তে ঘন্টা অতিক্রম করে গেল টের-ই পেলেন না পল গীবনস্। নানা রকম প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনাতে তিনি বুঁদ হয়ে গেলেন ইংরেজ যুবকের সঙ্গে। সম্বিত ফিরতেই হাত বাড়ালেন টেলিফোনের দিকে। ডায়াল করলেন কোম্পানীর ফিলাডেলফিয়ার ম্যানেজার রোলান্ড টেলরকে, যাতে করে তখনই চলে আসেন পল গীবনস্-এক চেম্বারে। বিষয়টি জরুরী।

◼ জোর তলব পেয়ে ছুটে এলেন রোলান্ড টেলর। শুধু তাই নয়, সবাই একসঙ্গে বসে দুপরের খাবার খেলেন। বেশিরভাগ কথাই ইংরেজ যুবকটিই বলেছিলো খাবার টেবিলে। বাকি দু’জন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছিলেন। সুস্বাদু খাবারের মতই গ্রহণীয় হয়েছিলো ইংরেজ যুবকের কথা-চিন্তার মনন।

◼ এখানে আপনাদের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে-যুবকটি কি তবে একজন যাদুকর? ভেল্কি জানে? না হলে এত অল্প সময়ে কেমন করে দু’জন অভিজ্ঞতায় বিচক্ষণ উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিকে বশীভূত করতে পারলো? কিন্তু উত্তরটি খুবই সোজা। জলের মত তরল। এই ক্ষেত্রে যুবকটির সবচাইতে বড় সম্পদ ছিলো তার বাচনভঙ্গি-সুন্দর উচ্চারণ। আর সেই সঙ্গে সোনায় সোহাগার মত ইংরেজী সাহিত্যে অসাধারণ দখল। যুবকটির পোশাকের দৈন্যতার কথা কারুরই মনে ছিলো না, যখন কথা বলতে শুরু করেছিলো। এমন করে আনায়াসে অভিজাত দক্ষতায় ইংজে যুবকটি তার মাতৃভাষাতে আবেদন করেছিলো— যা কিনা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে বাধ্য করেছিলো গীবনস্ আর টেলরকে যারা কিনা তাঁদের নিজ নিজ জগতে এক-একজন দিকপাল।

◼ যুবকটি ছিলো অক্সফোর্ড থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত। ভাগ্যান্বেষণে সে এদেশে এসেছিলো। অর্থের জোর বা মুরুব্বীর জোর কোনটাই তার ছিলো না। তবুও ছেঁড়া জামা-কাপড়, তালিমারা জুতোতেই সে সক্ষম হলো অভিজাত পরিবেশ আর উঁচু ব্যবসায়ী মহলে নিজের ঠাঁই করে নিতে। মাতৃভাষাতে সত্যিকারের দখল-ই তাকে ছাড়পত্র জোগালো এ ক্ষেত্রে। সেদিন দায়িত্বপূর্ণ পদে বহাল হলো যুবকটি। এক নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করলো!

আপনাদের অনেকের কাছেই হয়তো মনে হতে পারে যে উপরোক্ত যুবকের কাহিনীটি একান্তই অসাধারণ। লাখে একটি ঘটে কিনা সন্দেহ!

◼ কিন্তু একটা কথা আমাদের স্বীকার না করে কোন উপায় নেই যে— একটি অতি বড় চিরন্তন সত্যের সম্মুখীন হলাম আমরা এতে। তা’হল দৈনন্দিন চলার পথে, কাজকর্মে, আমরা প্রতিনিয়ত লোকের চোখে বিচারকের কাঠগড়াতে দাঁড়াই। বিচারকের রায় দেয়ার মতো লোকেরা আমার পক্ষে বা বিপক্ষে রায় দেন, শুধুমাত্র আমার কথার উপর নির্ভর করে। শুধুমাত্র মুখ-নিঃসৃত কথাতেই একজন মানুষ কতটা শিক্ষিত বা রুচিবান তা বিবেচিত হয়। দামী পোশাক-পরিচ্ছদ সর্বত্র সবসময়ের নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে আদৌ নয়।

এ পৃথিবীর সঙ্গে চারটি উপায়ে যোগাযোগ রেখে চলি আমি….. আপনি, আমরা সবাই। সেই ৪টি মূলমন্ত্র হল–

  1. আমরা কেমন করে করি
  2. আমরা কেমন করে দেখি
  3. আমরা কি বলি
  4. আমরা কেমন করে বলি

◼ বিশাল এ পৃথিবীতে যে দিকেই তাকানো যাক না কেন-উগান্ডা থেকে আর্জেন্টিনা- প্রতিদিন কোটি কোটি লোক একই ভুল করে চলেছে সারাজীবন ধরে। দিন দিন প্রতিদিন-ই-সে ক্রমাগত নিজেকে অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন করে চলেছে। স্কুল ছাড়ার পরদিন থেকেই সে ভুল করেও ভাবে না যে, তার শব্দসম্ভার বাড়ানো উচিত। শব্দের সঠিক ব্যবহার আর অর্থ সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। দরকার ঠিক ঠিক ধ্বনিগত উচ্চারণ করার। ভুল উচ্চারণ করা যে কত বড় ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াতে পারে তা ধারণাই করতে পারে না সে। রাস্তাঘাটে আর পাঁচজন লোকের মত অতি ব্যবহারে খেলো আর বস্তাপচা শব্দ ব্যবহার করেই তৃপ্ত থাকে সে। অথচ তার মনের অন্তর্নিহিত বাসনা দুর্মর ক্রোধে পর্যবসিত হয়, যখন সে দেখে লোকেরা তার কথা শুনতে মোটেই আগ্রহ প্রকাশ করছে না। প্রকাশ্যেই বিরক্তবোধ করছে তার ওপরে। দেখলেই পালিয়ে যেতে চাইছে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সে তখন অন্য লোকের ঘাড়ে অবুঝ আর অমনযোগের মূর্খতার দায় চাপিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না।

◼ অথচ সে ভুলে যায় কোনরকম নিয়মকানন, আদব-কায়দা আর ব্যাকরণের ধার ধারে না সে। যা খুশি বকে যায়। নিজের মনগড়া শব্দকেই শুদ্ধ ভেবে চালিয়ে যাবার · অবৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টাতেই ক্লান্তি নেই তার। এ যে গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল গোছের আর কি। জেনেশুনে সজ্ঞানে মূর্খের স্বর্গে বাস করে সে।

◼ আমি নিজেও দেখি অধিকাংশ যুবকই তার মাতৃভাষা বা ইংরেজিতে অসংখ্য ভুল উচ্চারণ করে। ব্যাকরণ প্রণেতারা এদের উচ্চারণ শুনলে তক্ষুণি কানে আঙ্গুল দেবেন। অশিক্ষিত অমার্জিত উচ্চারণ মানুষকে এক নিমেষে নিচু তলায় টেনে নামাতে পারে। লোকেরা এটা যেন বুঝেও বোঝে না। এ যেন কাকের চোখ বুঝে থাকা- আর কেউ-ই দেখতে পাচ্ছে না গোছোর মনোভাব। বাইবেলে একটি কথা আছে- ছোটখাটো ঘটনা বা ব্যবহার থেকেই লোককে সহজে চেনা যায়। জানা যায় মনের গোপন প্রবৃত্তি।

◼ অনেক সময় এও দেখেছি যে কলেজ থেকে পাশ করে বেরুনো স্টুডেন্ট ভুল ইংরেজী বলে ও ভুল উচ্চারণে অনর্গন কথা বলে চলে। এজন্য এতটুকু দ্বিধা বা সঙ্কোচ জাগে না তাদের মনে। এ জাতীয় শিক্ষার কি দাম আছে? অথচ এরাই সংখ্যায় অধিক।

◼ এই বই লেখার সময় থেকে এক বছর আগের কথা বলছি। আমি রোমের ‘কলোসিয়াম’-এর সামনে অভিভূতের মত দাঁড়িয়ে ছিলাম। মার্চের এক উজ্জ্বল দুপুর। এমন সময় একজন অপরিচিত আগন্তুক আমার সঙ্গে উপযাচক হয়ে আলাপ করতে উদগ্রীব হয়ে উঠলো। পৃথিবীর প্রাচীন শহর সম্পর্কে নিজেকে সে একজন কৌতুহলী পর্যবেক্ষক বলে দাবি করলো। পেশায় সে ছিলো একজন ইংরেজ কৰ্ণেল। সেই সৈনিক প্রবর মাত্র তিন মিনিট আমার সঙ্গে কথা বলেছিলো। বহুবার সে অবলীলায় ‘হমল ষট্ট’ এবং ‘ডডটমভন’ বললো। ‘ষমভ’ আর দণ ঢমর্ড’ বলাটা সেই কর্ণেলের মুদ্রাদোষের মতই। অনর্থক হাত নাড়াতো প্রতি কথাতে!

◼ অথচ সেই কর্ণেলের ভুল হয় না দাড়ি কামাতে বা চকচকে করে জুতো পালীশ করতে বা ব্রাশ দিয়ে পদক আর বেল্টের বকলেস মেজে নিতে। ভুল হয় না নিভাঁজ ইস্ত্রি করা জামা-প্যান্ট পরতে প্রতিদিন। মাথায় টুপি খুলে নিতে কয়েক সেকেন্ড দেরি করলে মেয়েদেয় লজ্জিত হয় সে। নিজেকে অসভ্য অভদ্র ভাবে। অথচ সে বিন্দুমাত্র সচেতন নয় বা লজ্জিত নয় ভুল ইংরেজী বলার জন্য। ব্যাকরণের কোন ধার-ই ধারে না সে। এ সম্পর্কে কোন মাথা-ব্যাথাও নেই তার। এতে করে নিজেকে প্রতিনিয়ত সে একজন অশিক্ষিত, রুচিহীন সংস্কৃতিহীন মানুষ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করে চলেছিলো। ভুল করেও কেউ তাকে রুচিবান ও কৃষ্টি সম্পন্ন ভাবে না কোনদিন।

◼ ডাঃ চার্লস ডব্লিউ, এলিট-যিনি হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিন দশকেরও বেশি সময়—একবার তিনি বলেন,— ‘মাতৃভাষায় নির্ভুল উচ্চারণ এবং সঠিক ব্যবহার প্রতিটি মানব-মানবীর যে কোন শিক্ষাক্রমের অতি আবশ্যিক বিষয়সূচী হওয়া প্রয়োজন। মানসিক গঠনের প্রসার ও ভিত্তি স্থাপনের দিকচিহ্নের স্থিতিলাভ ঘটে এতে’।

◼ আপনি নিজেই ভেবে দেখুন না কেন। তাহলেই মনের কাছে সঠিক উত্তর পাবেন। পরিষ্কার অর্থবহ হবে যে উপারোক্ত কথাগুলোর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

◼ এবার এ প্রসঙ্গে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির উপমা দেওয়া যাক, যাঁরা প্রথম জীবনে অনাদর, অবহেলা, দারিদ্রের কঠোর কঠিন নিষ্পেষণে খুব বেশিদিন বগলে বই হাতে স্কুলে যেতে সক্ষম হননি বেঁচে থাকার তাগিদে রুটি আহার-পরিচ্ছদ আর মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে হতো তাঁদের তবুও তারই মধ্যে সময় সুযোগ করে নিয়েছেন তাঁরা। নিজেদের শিক্ষিত করে তুলেছেন এই উচ্চাকাঙ্খায়। নিজেকে নিজেই সুন্দর করে শিক্ষার আলোকে গড়ে নিতে কসুর করেননি।

◼ মার্ক টোয়েন তাঁর সারা জীবনে মাত্র বার বছর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পেরেছিলেন। অথচ লেখক মার্ক টোয়েনের মত সম্মান খুব কম সাহিত্যিকই জীবদ্দশায় পেয়েছেন। তদানীন্তন সমাজের অনেক জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিত আর বরেণ্য ব্যক্তিই অধীর আগ্রহে উম্মুখ হয়ে উঠতেন মার্ক টোয়েনের বক্তৃতা শোনার জন্য বা আলাপ-পরিচয় করার জন্য। মার্ক টোয়েন ছিলেন ভ্রমণ-পিপাসু। দীর্ঘজীবন ভ্রমণের ফাঁকে ফাঁকে তিনি ছিলেন নিরলস পাঠক। যেখানে যা পেতেন পড়তেন। সঙ্গে রাখতেন একাধিক অভিধান। এমনি করে শব্দসম্ভার আর শব্দশৈলীর প্রাচুর্যে তিনি নিজেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষিত করে তুলছিলেন। স্কুলের তথাকথিত গণ্ডি পর্যন্ত পেরুতে পারেননি মার্ক টোয়েন। অথচ পরবর্তীকালে অক্সফোর্ড এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বিভিন্ন সম্মান-সূচক ডিগ্রী ডিপ্লোমা দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে কার্পন্য করেনি।

তাহলেই দেখুন— শুধুমাত্র পরিশ্রম আর অধ্যবসায় মূলধন করেই মার্ক টোয়েন নিজেকে শুধু শিক্ষিত করেই তোলেননি, পৃথিবীর বিতর্কিত এক বিদগ্ধ লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

◼ এবারে দেখা যাক আব্রাহম লিঙ্কন তখন কি করছিলেন তাঁর ছোটবেলায়। ভবঘূরে ছুতোর মিস্ত্রির ছেলে লিঙ্কনকে খুব ছোটবেলা থেকেই টাকা রোজগারের জন্য পৃথিবীর কঠিন পথে নামতে হয়েছিলো। গরিব লিঙ্কনের পক্ষে পড়াশোনা করাটা ছিলো বিলাসিতার সামিল। মাত্র এক বছর স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কাঠুরে থেকে খেতমজুর, শুয়রের খোঁয়ারে শুয়র প্রতিপালন করা থেকে মাংসের দোকানে কশাইয়ের কাজ কোন কাজই করতে বাকি রাখেননি তিনি।

◼ কিন্তু শুধুমাত্র খামারের কাজে, চাষাবাদ করে লাঙল ঠেলে সময় নষ্ট করেন নি তিনি। অবসর পেলেই পড়তেন। বার্নস, বায়রন, ব্রাউনিং আর শেক্সপীয়রের কাছ থেকে তিনি তাঁর শিক্ষার পাঠ নিয়েছেন। কবিতা আবৃত্তি করতে খুবই ভালবাসতেন তিনি। মাঝরাতে উঠে শেক্সপীয়র থেকে নির্বাচিত অংশ পড়াটা ছিলো তাঁর এক অদ্ভূত নেশা। ম্যাকেবেথ বিশেষ করে তাঁর খুবই প্রিয় ছিলো। তাঁর বক্তৃতায় তাই সহজেই তিনি উদ্ধৃতি দিতে পারতেন শেক্সপীয়র, বার্ণস, বায়রণ আর ব্রাউনিং থেকে। ম্যাকবেথ থেকে তিনি শুধু আবৃত্তি করেই ক্ষান্ত হতেন না, স্মৃতির গভীরে বিদ্ধ করতেও ভালবাসতেন। অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিলো তাঁর। প্রতিভাবান বা মেধাবী যাই বলুন না কেন লিঙ্কনের উপমা লিঙ্কন নিজেই। তাঁর কষ্টার্জিত শিক্ষা আগামীকালের ইতিহাস রচনাকে সমৃদ্ধ করেছে।

◼ কি ব্যক্তিজীবনে, কি রাজনৈতিক জীবনে, এমন কি হোয়াইট হাউসের দিনগুলোতেও শেক্সপীয়রের রচনাবলী ছিল লিঙ্কনের সর্বক্ষণের সঙ্গী।

◼ লিঙ্কন স্বরচিত এক দীর্ঘ কবিতা পড়েছিলেন তাঁর বোনের বিয়েতে। পরবর্তী সময়ে- তাঁর মধ্যবর্তী বয়সে তিনি কবিতা এবং অন্যান রচনাবলীতে পুরো একটি খাতা ভর্তি করেছিলেন ব্যস্ততার মধ্যেও। নিজের লেখা সম্পর্কে তিনি ছিলেন খুবই লাজুক। তাঁর খুব কাছের বন্ধুদেরও তিনি কখনো নিজের লেখা দেখাতে চাইতেন ন। কোন ভালো লাগা বই একাধিকবার পড়েও ক্লান্ত হতেন না তিনি। বাইবেলের অনেকাংশে মুখস্ত বলতে পারতেন তিনি। অথচ তিনি গীর্জায় যাওয়ার প্রতি নিয়মনিষ্ঠ ছিলেন না কখনও।

বই! বই! বই! বইয়ের সমুদ্রে ডুবুরির মত নামতে হবে।

লিঙ্কন বলেন, সকল মন্ত্রসিদ্ধির চাবিকাঠি। যে নিজের জ্ঞানরাজ্যের সীমান বাড়াতে চায় নতুন নতুন শব্দ সম্ভাবে তাকে অবশ্যই বই পড়তে হবে। ডুবে যেতে হবে মনের ইতিহাসের গভীর তলদেশে উত্তোরত্তোর অন্বেষণে।

জন ব্রাইট-তিনিও এই কথাই বলেন ৷ ‘লাইব্রেরিই একমাত্র মানুষকে আলোক পথে আলোকের পথে পরিভ্রমণ করাতে পারে।’

◼ মাত্র পনেরো বছরে স্কুল ছেড়ে কাপড়ের কলে শ্রমিকের কাজ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন ব্রাইট। কিন্তু শুধুমাত্র স্বনির্ভর শিক্ষার প্রচেষ্টাতেই একশো বছরের ইতিহাসে নিজেকে বিদগ্ধ বক্তা হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। বায়রন, মিলটন, ওয়ার্ডস ওয়ার্থ, শেক্সপীয়র আর শেলী ক্রমান্বয়ে তাঁর শিক্ষকের ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি পড়তেন প্রচুর। ভাবতেন আরও বেশী। মনে রাখার চেষ্টা করতেন আরও বেশি। বাস্তবে প্রয়োগ করার প্রতি যত্নশীল হতেন আরও অনেক-অনেক গুণ বেশি।

◼ পৃথিবীর অন্যতম বিদগ্ধ বক্তা জন ব্রাইটের মত ইংরেজী সাহিত্যে দখল খুব কম লোকের ছিলো। অথচ তিনি তো নিজেই নিজেকে রুচিশীল কৃষ্টিশালী করে গড়ে তুলেছিলেন। জন ব্রাইট প্রতি বছর নতুন করে পড়তেন শুধুমাত্র নতুন শব্দ শেখার লোভে। এ যেন সুস্বাদু ভোজের সামনে ক্ষুধার্ত বালকের মতই গ্ল্যাডস্টোরন তাঁর লাইব্রেরিকে শান্তি মন্দির বলে অভিহিত করেছেন। ৯৫,০০০ হাজারেরও বেশি বই ছিলো তাঁর সংগ্রহে। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন, সেন্ট আগাস্টাইন, বিশপ, বাটলার, দান্তে, এ্যারিস্টোটল এবং হোমারের লেখা পড়ে তিনি বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি হোমারের কবিতা এবং তদানীন্তন সময় নিয়ে ছ’টি বই লিখেছেন।

◼ এবারে আসি বিখ্যাত ঐতিহাসিক ডিমোস্থেনসেস-এর কথায়। তিনি কেমনভাবে নিজেকে তৈরী করেছিলেন? ডিমোস্থেনসেস-এর থুসিডিডের লেখা ইতিহাস বই আটবার নিজ হাতে লিখে কপি করেছিলেন। শুধুমাত্র সেই ঐতিহাসিকের রচনাশৈলির অন্তর্নিহিত ধ্যান-ধারণার সঙ্গে পরিচিত হবার জন্য। তার ফল কি হলো?-এ কথা আপনার মনে আসা খুবই স্বাভাবিক। ভাবছেন এ তো বেগার খাটা।

◼ ডিমোস্থেনসেস-এর কাজকর্মের দু’হাজার বছর পরে উড্রো উইলসন তাঁর লেখার স্টাইলকে শক্তিশালী করার জন্য ডিমোস্থেসেস্-এ সমগ্র রচনাবলী পড়ে নিয়েছিলেন ব্যগ্রতার সঙ্গে।

◼ বিখ্যাত পিট অনুশীলন করতেন অনুবাদের মাধ্যমে। তিনি গ্রীক বা ল্যাটিন থেকে নিজের মাতৃভাষায় প্রতিদিন দশ পাতা করে অনুবাদ করতেন। দশ বছর ধরে এক নাগাড়ে তিনি এ কাজ করেছিলেন। ফলও পেয়েছেন হাতে-হাতে। শব্দের ব্যবহারে তিনি ছিলেন খুবই দক্ষ। তলোয়ারের মতই তীব্র তীক্ষ্ণ ধারালোভাবে শব্দকে কাজে লাগাতে পারতেন তিনি।

◼ লেখক সমালোচক এ্যাসকুইথ তাঁর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বিশপ বার্কলের সমগ্র সরচনাবলী থেকে।

◼ আর.এল.এস বললেই পৃথিবীর যে-কোন ইংরেজী ভাষাভাষী অঞ্চলেই এক ডাকে যাঁকে চিনে নিতে দ্বিধা করে না, তিনি হলেন রবার্ট লুইস স্টিভেন। তাঁকে বলা হয় লেখকের লেখক। তিনি কেমন করে তাঁর রচনাশৈলীকে উন্নীত করতে পেরেছিলেন, জগদ্বিখ্যাত হতে পেরেছিলেন লেখক হিসেবে-তা নিশ্চয় আপনার জানতে ইচ্ছে করে? আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান যে, স্টিভেনসন নিজেই তাঁর সে মন্ত্রগুলির পথ লিখে রেখে গেছেন। স্টিভেনসনের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি।

◼ এমনি করে পুরোপুরি আত্ননির্ভরতায় আমি ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে নিজেকে পুরোপুরি অনুরণিত হতে নিয়েছিলাম হ্যাজলিট, ল্যাম্ব, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, স্যার টমাস ব্রাউন, দানিয়েল ডিফো, হৃথহর্ণ ও মন্টেইজেন-এর সমগ্র রচনার সঙ্গে।

◼ স্বীকার করুন বা না-ই করুন, আমি এমনি করেই লিখতে শিখেছিলাম। জেনেছি স্বয়ং কীটস এমনিভাবেই লিখতে শিখেছিলেন। আর ইংরেজী সাহিত্যে কিটস্-এর প্রখর শিল্প-চেতনা, অনুভূতির সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিন্যাস আর অনুপুঙ্খময় চিত্রকল্পতাকে অতিক্রম করার দুঃসা্য কার?

তাহলে দেরি না করে আপনিও কাউকে মডেল হিসেবে সামনে রেখে অনুশীলনের মহড়া দিতে থাকুন না কেন ব্যর্থতা আসবে ভেবে ভয় পেয়ে দূরে সরে থেকে কি লাভ?

আর তাছাড়া ধনী-নির্ধন, পণ্ডিত-মুর্খ থেকে শুরু করে আমরা সবাই পৃথিবীর প্রাচীন বয়স থেকেই একটি কথা মুখে মুখে শুনে আসছি-তা হল– ব্যর্থতাই হলো উন্নতির প্রধান সোপান।

কোন ধরনের কি কি বই পড়লে আপনি লাভবান হবেন সে-সম্পর্কে এবারে আমি কিছু বলবো। বইপত্র নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমি এ বিষয়ে আপনাদের যথাসাধ্য সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলাম।

আপনি আরম্ভ করুন নিম্নলিখিত বইগুলো দিয়ে। বইগুলো পড়ে আপনি অনেক উপকার পাবেন।

(1) How to live on twenty four hours a day
by Arnold Bennett

(2) Try the human machine
by Arnold Bennett

(3) The octopus The wit
by Frank Noris

(4) Tress if the D’ Urberolils:
by Tomas Hardy

(5) A mean’s value to society
by Newell Swlglitind

(6) Talks to teachers
by Professor William James

(7) Arieal, A life to Shelley
by Andre Moris

(8) Childe Harold’s Pallgrimage
by Byron

(9) Tracteis with a Donkey
by Robert Luis Stevenson

◼ বইগুলো পড়ুন। জ্ঞান সঞ্চয় করুন। থমাস জেফার্সন বলেছেন, ‘ট্যাসিটাস থুসিডাইস, নিউটন আর ইউক্লিড পড়ায় আমি দৈনিক খবরের কাগজ পড়ার বরাদ্দ দুশ ভাগের এক ভাগ কমিয়ে দিয়ে অনেক বেশি উপকৃত হয়েছি। আমার সাহিত্য ইতিহাসে আর জ্যামিতির রাজ্যে অনায়াসে বিচরণ করার মূলে রয়েছে তাই।”

আপনার কি থমাস জেফার্সনের মত ব্যক্তিত্বময় হতে ইচ্ছে হয় না? প্রতিদিন কয়েকপাতা করে পড়ুন। দেখবেন পুরো বইয়ের ব্যাপারটা মগজে গেঁথে নিতে কত কম সময় লাগে।

বর্তমান সময়ের নিউইয়র্কের একজন ক্ষুদে বক্তা একবার এক সংবাদপত্রে লিখেছেন।

“অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার সাফল্যের গোপন চাবিকাঠি কি? হাতি-ঘোড়া কিছুই না। খুবই সহজ সরল সাধারণ নিয়ম মেনে চলতাম আমি। অবশ্য এখনও আমি সে নিয়ম মেনে চলি। প্রত্যেকদিন একটি করে নতুন শব্দ শিখি। তিনবার শব্দটি ব্যবহার করি আমি। এতে অনেক নতুন শেখা শব্দ পুরানো হয়ে যায় আমার কাছে। আর বছরে তিনশ পঁয়ষট্টিটা শব্দ আমি আমার ব্যাংকে সঞ্চয় করতে পারি।”

আপনিও তাই করে দেখুন না কি হয়।
এবারে আপনার ব্যক্তিগত কিছু জিজ্ঞাসা অসুবিধার সমাধান করা যাক।
আপনি নিজের অন্তরঙ্গ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে কোন কিছু বলতে চেষ্টা করুন।

◼ আপনার শ্রোতাদের শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করুন। আপনার বক্তব্যের যথার্থতা ভালভাবে নিজে বুঝুন এবং সেই সঙ্গে অপরকে বোঝাতে চেষ্টা করুন। হঠাৎ করে আপনার কর্মক্ষেত্রে কেউ আপনাকে কিছু প্রশ্ন করলে কিভাবে উত্তর দেবেন পূর্বেই খানিকটা আন্দাজ করে ভাবুন। অর্থ্যাৎ আপনি নিজেও শিক্ষিত হয়ে উঠুন। যে কথা পূর্বেও বহুবার বলেছি- আবার বলছি, কথা বলার ধরণটি পাল্টানো আপনার উচিত হবে। যদি বলেন, কেন? তাহলে বলবো আপনি সুন্দর জামা জুতা জুতা পরেন হয়তো। হাল ফ্যাসানের দর্জিকে দিয়ে জামাকাপড় তৈরী করান। মনের গোপন ইচ্ছা এক্ষেত্রে আপনার-আমার সকলেরই এক। কি করে নিজেকে অধিকতর সুন্দর দেখায় তার বন্দোবস্ত করা। কিন্তু আমরা হয়তো কি করে কথা বলা সুন্দরতর করা যায়, কিই-বা তার উপায়-সে বিষয়ে মাথা ঘামাই না কখনও।

◼ কি করেই- বা সেটা করা যাবে? সৌভাগ্যবানরা এ ব্যাপারে কি রহস্যকে কাজে লাগিয়েছেন? কি সে রহস্য?

◼ আবার লিঙ্কনের কথায় আসতে হলো। অতি সাধারণ অবস্থা থেকে আমেরিকার সব চাইতে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। অথচ ভাবতে অবাক লাগে কি অকল্পনীয় সাফল্য তিনি অর্জন করতে পেরেছিলেন সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা ও যত্নে! তাঁর বাবা ছিলেন অশিক্ষিত হরিণ শিকারী। আর মা ছিলেন অতি সাধারণ বাড়ির এক বউ মাত্র। সব মিলিয়ে বছরখানেক স্কুলে যাবার অভিজ্ঞতা ছিলো লিঙ্কনের।

◼ পরে যখন প্রেসিডেন্ট হলেন তখন হোয়াইট হাউসে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে নিজের স্কুল শিক্ষা সম্পর্কে বলতে গিয়ে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে একটি শব্দ মাত্র উচ্চারণ করেছিলেন। শব্দটি হলো “ত্রুটিপূর্ণ” তাই লিঙ্কন সম্পর্কে বলা যায়। ‘এই স্বয়ং শিক্ষিত মানুষটি তাঁর চিন্তা ভাবনা আর মনকে সুন্দর মার্জিত ও কর্মপ্রেরণাদায়ক উৎসাহে সর্বক্ষণ সাজিয়ে রাখতেন। কোন স্কুল শিক্ষকের কাছে আর পাঁচটা ছাত্রের মত স্বাভাবিক নিয়মে তিনি পড়াশুনা করেননি বলেই সম্ভবত অন্য আর যে একটি পদ্ধতি ছিল সেই পদ্ধতিতেই শিক্ষিত করে তুলেছেন, দিন দিন প্রতিদিন। সেটি ছিলো অক্লান্তভাবে পড়াশুনা করা এবং দেখা। আর নিজের ভেতরে ক্রমাগত যুক্তি-তর্কের অবতারণা করে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধ্যান ধারণার এক অনুসরণ সৃষ্টি করে।”

◼ আপনারা স্মরণ করুন, তাঁর সেই বিখ্যাত গেটেসবার্গ বক্তৃতার কথা। যখন গেটেস্বার্গ বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছিলো তখন তদানীন্তন সমাজের কয়েকজন দুনিয়া-কাঁপানো বাগ্মী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনর্গল বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বক্তৃতাগুলো আজ আর লোকেরা মনে রাখেনি।

◼ কিন্তু সেখানে লিঙ্কন বক্তৃতা দিয়েছেন মাত্র দু’মিনিট। তাঁর বক্তৃতার সময়ে একজন ফটোগ্রাফার ছবি তোলার চেষ্টায় সে কালে ক্যামেরা লেন্স ঠিকঠাক করার আগেই তিনি তাঁর বক্তৃতা শেষ করে ফেলেন।

◼ কিন্তু লিঙ্কনের সেই বক্তৃতাটি এক ঐতিহাসিক বক্তৃতার পর্যায়ে উন্নতি হয়ে আজও সকলের মনে গেঁথে আছে।

◼ অক্সফোর্ড লাইব্রেরিতে ব্রোঞ্জের অক্ষরে বক্তৃতাটি বাঁধিয়া রাখা হয়েছে সকলের অবগতির জন্য, সকলে যাতে তা স্মরণ করে। একথা বললে অত্যুক্তি করা হবে না যে যারা জনসমক্ষে বক্তৃতা দেবার আশা পোষণ করেন, তাঁদের প্রত্যেকের অতি অবশ্যই এই বক্তৃতা মুখস্থ করে রাখা দরকার।

◼ “আজ থেকে সাতাশি বছর পূর্বে আমাদের প্রপিতামহরা এই মহাদেশে উপস্থিত হয়ে একটি নতুন জাতির উদ্ভব ঘটিয়েছিলাম। যে জাতির উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীনতা সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এখন আমরা এক বিরাট গৃহযুদ্ধে লিপ্ত। এই গৃহযুদ্ধ প্রমাণ করবে যে কোন যুদ্ধে লিপ্ত জাতি তাঁর মহান উদ্দেশ্য নিয়ে আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে দীর্ঘ অবস্থানের স্বীকৃতি পেতে পারে কি না।মরা পরস্পর এই যুদ্ধক্ষেত্রে নির্মিত হচ্ছি। এখানে আমরা উপস্থিত হয়েছি। সেই যুদ্ধক্ষেত্রের কিছু অংশ সংরক্ষিত করে রাখতে তাঁদের জন্য, যাঁরা তাঁদের জীবন দান করেছিলেন এই জাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে। যদি সেটা যথাযথ মনে হয় তাহলে তাইতো আমাদের করা উচিত। কিন্তু বৃহদার্থে আমরা ত্যাগ স্বীকার করে উঠতে পারি না। উৎসর্গ করতে পারি না। সেই সব দেশপ্রেমিক দুঃসাহসী মানুষের যাঁরা জীবিত অথবা মৃত-যারা এখানে সংগ্রাম করেছিলেন, যাঁরা এই ভূমি পবিত্র করেছিলেন, তাঁদের সেই কৃতকর্ম, আমাদের মূল্যায়ন কিংবা অবমূল্যায়নের অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। আজ আমরা যে সব কথা বলাবলি করছি এখানে, পৃথিবী হয়তো তার কিঞ্চিৎ অনুধাবন করবে, মনে রাখবে অতি স্বল্প সময়ের জন্য। কিন্তু পৃথিবী তাদের চিরকাল মনে রাখবে, তরা যা করেছিলেন এখানে।

◼ আমরা যারা জীবিত, আমাদের কাছে পূজনীয় পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে নিষ্ঠাবান উৎসর্গীকৃত প্রাণ হয়ে আমাদের সেই মহান পিতৃপুরুষদের আরব্ধকার্য তর্পণে সম্মুখপানে অগ্রসর হওয়া। এগিয়ে নিয়ে যরওয়া বৃহত্তম সমৃদ্ধির পথে এক মহান উৎকর্ষ সাধনের প্রয়াস ভাবনা আয়ত্তে আনা। বরং আমাদের সেই অসম্পূর্ণ কাজের প্রতি উৎসর্গীকৃত হয়েই এখানে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন রয়েছে।

◼ সেই পিতৃপুরুষগণ যাঁরা তাঁদের উদ্দেশ্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন তাঁদের স্মৃতি থেকে নিষ্ঠার শিখা গ্রহণ করা এবং প্রমাণ করা যে সব মহান মৃত্যু কখনই বৃথা হয়নি। আমাদের উপস্থিতি প্রমাণ করবে সেই ঈশ্বরের আগে আমাদের এই জাতির কাছে নবজন্ম হোক স্বাধীনতার। আর এই সঙ্গে কর্তব্য সে সরকার, যার মূলমন্ত্র- জনগণের পক্ষে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য-তা যেন কখনও ধ্বংস না হয়ে যায়।”

◼ পরিশ্রম এবং চাওয়াকে এক সূত্রে গাঁথুন। দেখবেন পুরস্কার অবশ্যম্ভাবী আপনি যা চান সেটাকে মনের মধ্যে শুধুমাত্র পোষণ না করে সেই সঙ্গে হতে কলমে কাজে লেগে পড়ুন। অনুশীলনের সঙ্গে আন্তরিক চাওয়াকে মিশিয়ে দিন। আপনি জয়ী হবেনই হবেন। এই প্রসঙ্গে হার্বাডের বিশ্ববরেণ্য মনস্তত্ত্ববিদ প্রফেসর জেমন হার্ভে রবিনসন তাঁর লেখা “The Mind in the Making” গ্রন্থে লিখেছেন–

‘কোন ছাত্রের, সে সে বিষয়েই হোক না কেন খুব একটা চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। পরীক্ষার ভাল ফল লাভের জন্য সে যদি সারাদিনের ভেতর কাজের সময়টিতে ঠিকমত নিষ্ঠাসহকারে অনুশীলন ও অধ্যয়নে ব্রতী হয় তবে পরীক্ষার ফলটিও অনায়াসেই তার করায়ও হয়ে থাকে। তার অধ্যাবসায়ে যদি ঘাটতি না পড়ে তবে একদিন সকালে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় আবিষ্কার করবেই করবে। সে যে কোন ধরনের কঠিন কাজই বেছে নিক না কেন।’

◼ যে কোন বিষয়েই হোক না কেন বিষয়টি সম্পর্কে আপনার তীব্র আকাঙ্খা আর আগ্রহই আপনাকে বাঁচিয়ে দেবে। ফললাভ সম্পর্কে যদি আপনি যথেষ্ট যত্নবান হন, ফললাভ হবেই। যদি বড়লোক হতে চান তবে বড় হবেন। শুধু আপনাকে নিজের মনে তীব্র আগ্রহ নিয়ে সেই চাওয়াটাকে চাইতে হবে। কখনোই ভাবের ঘরে চুরি করে মনকে ছোট করবেন না। বরং সবার আগে আপনার চাওয়াটাকে নির্দিষ্ট করে ফেলুন। এক চাইতে গিয়ে বহুকিছু চেয়ে বসবেন না যেন।

সমাপ্তঃ আজকরে আলোচ্য বিষয় “বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।” পরবর্তী পোষ্ট পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে এই পোষ্টটি এখানেই সমাপ্ত করা হলো।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!