খামারিয়ান লাইভস্টক ফার্ম এর পক্ষ আপনাদের সকলকে প্রীতি শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়ে শুরু করতে চলেছি ছাগলের পরিচর্যা অধ্যায়ের বর্ষায় ছাগলের যত্ন পর্বটি। আজকের এই পর্বটিতে তে আপনাদের সাথে আমরা আলোচনা করব, ছাগলকে রোগমুক্ত রাখতে ছাগলের পরিচর্যা নিয়ে।
বর্ষার শুরুতে আমরা আমাদের ফার্মে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি যা থেকে আপনার ছাগল কোন রকম মেডিসিন ছাড়াই 25% শতাংশ রোগমুক্ত থাকবে। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক সেই ব্যবস্থাপনাটি কি।
(০১) আপনারা যারা বিভিন্ন রকম পশু খামার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আপনারা অবশ্যই জানেন বর্ষাকালে প্রত্যেকটি পশুর কিন্তু লিভার কমজোরি থাকে। যার কারণে যেমন তেমন খাবার ডাইজেশন করতে পারে না, আর খাওয়ায় অরুচি থাকে। যদি অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলে সেটার ডাইজেশন করতে না পারার কারণে পাতলা পায়খানা হয়। এছাড়াও বর্ষাকালে কিন্তু বেশিরভাগ পরজীবীর সংক্রমণ দেখা যায়।
(০২) বর্ষাকালে ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ার কারণে ছাগল বেশিরভাগ সময় ঘরের ভিতরে থাকে। তারা বাইরে বেরোতে পারে না। হাঁটাচলা করতে পারে না। আর যখনই হাঁটাচলা করতে পারে না শরীরে এক্সারসাইজ হয় না। এর ফলে কিন্তু লিভার আরো বেশি কমজোর হয়ে যায়।
(০৩) বর্ষাকালে ছাগলের খাবার কম খায় ও খাবার ডাইজেশন কম হয় বলে ছাগলের বডি ইমিওনিটি লো হয়ে যায়। আর বর্ষাকালে যে কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া প্রটজোয়া এবং ফাংগাস তারা কিন্তু বেশি শক্তিশালী হয়। আর সে সময় তারা বংশবৃদ্ধি বেশি করতে পারে। আর যার ফলে পশুদের কিন্তু খুব কম সময়ই রোগে আক্রমণ করতে পারে।
(০৪) বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির কারণে আমরা ছাগলকে একটা জায়গার মধ্যে রাখি আর সেই জায়গার মধ্যে তাকে খাবার-দাবার দেই, সেখানেই ছাগল খাওয়া-দাওয়া করে, সেখানে পায়খানা করে পেশাব করে। যার ফলে এমোনিয়া গ্যাস টা বেশি হয়ে যায় আর এমোনিয়া গ্যাস বেশি হলেই সেখান থেকে কিন্তু বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শ্বসনতন্ত্র জনিত রোগ।
(০৫) বর্ষাকালের মধ্যে পশুদের বেশিরভাগ সংক্রামক এবং মহামারী রোগ গুলো হয়, বিষয়টা লক্ষ্য করে দেখবেন। আর সেই সমস্ত সংক্রামক রোগ যদি আপনার ফার্মে আছে তো আপনারা ফার্মে ছড়িয়ে যাবে এবং বেশিরভাগ ছাগল আক্রান্ত হবে। এর জন্যই কিন্তু বর্ষায় ছাগল কে সুস্থ রাখার জন্য বর্ষার শুরুতেই তাদেরকে ডিওয়ার্মিং করাতে হবে।
(০৬) ডিওয়ার্মিং করানোর পর কোনটি তাকে কন্টিনিও লিভার টনিক প্রয়োগ করতে হবে। এরপর আরো অনেক ফর্মুলা রয়েছে যেগুলো প্রয়োগ করতে হবে। তবেই কিন্তু বর্ষাকালে আপনার ছাগলকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
(০৭) বিশেষ করে চেষ্টা করবেন ছাগল বা গরুর লিভার কে সুস্থ রাখার। যদি লিভার সুস্থ থাকে তাহলে ছাগল কিন্তু সহজে রোগে আক্রান্ত হবে না। বর্ষাকালে পশুদের লিভার কে কিভাবে সুস্থ রাখতে হয় এর উপর আমি পরবর্তীতে একটা পোষ্ট লিখব সেখানে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে।
(০৮) বর্ষাকালে পশুদের খাবারের দিকেও একটু ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ বর্ষাকালে যেহেতু এদের লিভার কমজোরি থাকে। এই সময় যদি অধিক পরিমাণে দানা খাবার দেন বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি দেন তাহলে কিন্তু সেটার ডাইজেশন করতে পারবে না। যার ফলে ডায়রিয়া হয়ে যেতে পারে এবং এবনরমাল পাতলা পায়খানা হতে পারে।
(০৯) ঘন বর্ষায় সবসময় চেষ্টা রাখবেন পশুদের হালকা খাবার দেওয়ার যে খাবারটা তারা সহজে হজম করতে পারবে। যদি কোনো দানাদার জাতীয় খাবার দেন, সেটাকে সেদ্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে দানাদার খাবার তারা সহজে হজম করে নিতে পারবে।
(১০) ঘন বর্ষায় যখন আকাশ পরিষ্কার থাকবে ছাগলকে সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বাইরে বের করবেন এবং ঘরটা পরিষ্কার করবেন। যে জায়গার মধ্যে পশুদের রাখবেন সেই জায়গা শুকনো রাখার চেষ্টা করবেন আর সব সময় লক্ষ্য রাখবেন আপনার পশু যেন বৃষ্টিতে না ভিজে। বৃষ্টিতে যদি ভিজে যায় যে কোন কঠিন রোগে কিন্তু আক্রান্ত হতে পারে।
(১১) বর্ষায় যদি কোন পশুর সিরিয়াস অবস্থা দেখা যায় তাকে সঙ্গে সঙ্গে আলাদাভাবে রেখে চিকিৎসা করবেন। বর্ষাকালে পশুকে যদি কোন ঘাস পাতা যদি দেন তো কেটে নিয়ে এসে সরাসরি দেবেন না প্রয়োজন পড়লে একদিন আগে কেটে রাখবেন ও পরেরদিন দেবেন।
(১২) মনে রাখবেন ঘন বর্ষায় বিভিন্ন কীটপতঙ্গ পাতার নীচে আশ্রয় নেয়, আর সেখানে ডিম দেয়। আর সেই পাতা বা ঘাস যদি পশু সরাসরি খায় তারা কিন্তু অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজন হলে আগের দিন যে গাছের পাতা বা ঘাস কাটবেন সেটাকে পটাশিয়াম জলে ধুয়ে নেবেন বা হালকা স্প্রে করে দেবেন এবং পরেরদিন সেটাকে খেতে দেবেন।
বর্ষাকালের ঘন বৃষ্টিতেও ছাগল কে সুস্থ রাখার জন্য যে নতুন পদ্ধতিটি আমরা অবলম্বন করছিঃ
(১৩) তা হলো মূল শেডের থেকে নিচে একটা নরমাল শেড যেখানে বৃষ্টিতে ছাগল আশ্রয় নিতে পারবে এবং সেখানে সারাদিন খাবার-দাবার খেতে পারবে। তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো বাইরে বের হবে এবং বৃষ্টি হলে দৌড়ে এসে সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে। এতে আমাদের ছাগলের যে মূল শেড সেটা পরিষ্কার পরিছন্নতা থাকছে। সারা রাত্রে যে পায়খানা পেশাব করেছে তা যে এমোনিয়া গ্যাস সারাদিনে কিন্তু সেটা বেরিয়ে যাচ্ছে এবং ঘরটা শুকিয়ে যাচ্ছে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে সারাদিন ছাগলগুলি বাইরে থাকার পর যখন রাত্রে বেলায় যখন পশুরা ঘরের ভিতরে ঢুকবে সুন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং শুকনো জায়গায় তারা শুতে পারবে।
(১৪) বর্ষাকালে সপ্তাহে একদিন করে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ঘরের ভেতর থেকে শুরু করে বাইরের ড্রেজিংয়ের জায়গা এবং ফার্মের আশপাশে স্প্রে করার চেষ্টা করবেন। যেটা আমাদের ফার্মে ছাগল কে সুস্থ রাখার জন্য সপ্তাহে একদিন করে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে স্প্রে করা হয়। এই পদ্ধতিতে অবলম্বন করলে বর্ষাকালে পশুরা বিভিন্ন রকম সংক্রামক রোগের থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে বর্ষাকালে পশুদেরকে সুস্থ রাখার জন্য এরকম আরো বহু ফর্মুলা রয়েছে যেগুলো “খামারিয়ান” ধীরে ধীরে বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরবো।
প্রিয় দর্শক কেমন লাগলো আমাদের আজকের আলোচনাটি অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন সঙ্গে আমাদের ফেসবুক পেইজে একটা লাইক করতে ভুলবেন না। সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখার পর ভিডিওতে দেওয়া তথ্য যদি ভালো লাগে বাকি খামারি বন্ধুদের আলোচনাটি শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দেবেন। এখনো পর্যন্ত যারা আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করেননি অবশ্যই চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করবেন। সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন।