গবাদি পশু চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাঁশ পাতার রস যে কাশি কমায় সে কথা আয়ুর্বেদ স্বীকৃত। এছাড়াও উন্নত দেশগুলোতে এর বাঁশের শুটকে তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। কারণ এতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
আজকের এই পোষ্টটিতে আমরা আলোচনা করব পশু পালনে বাঁশের ঔষধি গুণাগুণ নিয়ে নিয়ে। আপনারা প্রত্যকেই যানেন বাঁশ বিভিন্ন রকম কাজে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে ঘরবাড়ি তৈরি, বিভিন্ন রকম আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জানেন না বাঁশের মধ্যে কি কি গুণ রয়েছে।
”বাঁশের শুট” বলতে এখানে ”বাঁশের কচি চারা” বুঝানো হচ্ছে। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে এর ছবি দেওয়া হলো।
আমরা যদি বাঁশের ওষুধি গুনাগুন গুলি জানতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা এই বাঁশের কিন্তু খুব সহজেই পশুদের শরীরে আমরা প্রয়োগ করতে পারব। তো বাঁশের মধ্যে কি কি গুনাগুন রয়েছে আজকের পোষ্টটিতে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং পশুদের কোন সময় কোন রোগে এই বাঁশকে আমরা প্রয়োগ করতে পারি।
তো বন্ধুরা পোষ্টটি স্কিপ না করে শেষ মুহূর্তে অবশ্যই মনোযোগ পড়ুন। এখানে আমরা বিস্তারিতভাবে ধাপেধাপে বাঁশ গাছের গুনাগুন তাদের প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করব। খামারিয়ান লাইভস্টক ফার্ম বেকারত্ব দূরীকরণে আধুনিক কৃষি ও পশুপালন বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা যেমন হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক দিয়ে আলোচনা করে থাকে।
প্রিয় দর্শক আমরা যারা গ্রামে বসবাঁশ তারা সকলেই বাঁশ এর সাথে পরচিত। বাঁশ একটি চিরহরিৎ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। বাঁশেরবৈজ্ঞানিক নাম-Bambuseae। বাঁশ আসলে ঘাস পরিবারের সদস্য। ঘাস পরিবারের এরা বৃহত্তম সদস্য। বাঁশ গাছ সাধারণত একত্রে গুচ্ছ হিসেবে জন্মায়। এক একটি গুচ্ছে ১০-৭০/৮০ টি বাঁশ গাছ একত্রে দেখা যায়। এসব গুচ্ছকে বাঁশ ঝাড় বলে। বাঁশের ব্যবহার জানা থাকলেও বেশিরভাগ মানুষের কাছে এর ঔষুধী গুণাগুণ এখনো অপরিচিত। ওষুধি গুনাগুন সম্পর্কে যদি জানা থাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম রোগের ক্ষেত্রে আমরা এই বাঁশকে ঘরোয়া চিকিৎসায় প্রয়োগ করতে পারব।
বিভিন্ন রকম রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। বাঁশের মধ্যে উপস্থিত ফ্যানোলিক কম্পাউন্ডের কারণে এটি এন্টি-অক্সিডেন্ট anti-inflammatory এবং এন্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও কচি বাঁশের চারাতে এন্টিএজিংয়ের প্রভাব রয়েছে।
এই সমস্ত ওষুধি গুনাগুন এবং উপাদান থাকার কারণে বাঁশকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিভিন্ন রোগে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এবারে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো কোন রোগে কিভাবে এই বাঁশকে প্রয়োগ করবেন।
[1] শ্বসনতন্ত্রের সমস্যায় গবাদি পশু চিকিৎসা
ফুসফুস সম্পর্কিত সমস্যার ওষুধ হিসেবে বাঁশের প্রয়োগ। আপনার পশুর শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার ওষুধ হিসেবে এই বাঁশকে প্রয়োগে নিতে পারেন। যেই চারা বাঁশ থাকে সেটাকে উঠিয়ে কেটে শুকিয়ে নেবেন। সেটাকে পাউডার করে 100 গ্রাম পাউডার 1 লিটার জলে দিয়ে সেটাকে বয়েল করবেন। 1 লিটার জলকে হাফ লিটার বানিয়ে সেই যে কারা তৈরি হবে সেটা যদি সারা দিনে তিন টাইম খাওয়ান পশুর শ্বাসপ্রশ্বাস সম্পর্কিত যদি সমস্যা থাকে সে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ বাঁশের মধ্যে anti-inflammatory উপাদান রয়েছে যা প্রয়োগে শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা দূর করে এবং শ্বসনতন্ত্রের যদি কোনো প্রদাহ থাকে সেই প্রদাহকে সারিয়ে তোলে।
[2] পশুদের স্টোমাটাইটিস বা মুখের ঘাঁ
পশুদের স্টোমাটাইটিস রোগের ক্ষেত্রে আপনারা প্রয়োগে নিতে পারেন। মনে রাখবেন পশুদের যখন মুখে ঘা হয়ে যাবে সে সময় বাঁশের কচি চারা বা শুট কে তুলে সেটাকে রোদে শুখাতে হবে। সেটাকে পাউডার করে সেই স্টোমাটাইটিস এর জায়গায় লাগিয়ে দিলে এতে মুখের মধ্যে যেটা হয় সেটা কে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে দেবে এবং মুখের ঘায়ের যে ব্যথা তা কিন্তু কমিয়ে দেবে। কারণ এই বাঁশের মধ্যে এন্টি আলসারের কিছু উপাদান রয়েছে।
[3] গবাদি পশুর কফ এবং শুকনো কাশি
গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন বাঁশের মধ্যে কোলাইন নিউট্রিয়েন্ট, সাইলোজেন কেমিক্যাল কোম্পাউন্ড এবং গ্লকোসাইড এনজাইম রয়েছে। যা শুকনো কাশির ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে পশুদের যদি কফ এবং শুকনো কাশি হয় বাঁশের এই কচি চারা ব্যবহার করতে পারবেন। বাঁশের কচি চারা সেটাকে উঠে পরিষ্কার ভাবে ধুয়ে ছাট ছোট করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। কফ এবং কাশিতে কিভাবে প্রয়োগ করবেন? বাঁশের কচি চারা শুট 100 গ্রাম নিতে হবে। 500ml পানি দিয়ে তাকে গরম করে নিতে হবে। উক্ত পানিকে 300ml বানিয়ে নিতে হবে। সেই পানি সারা দিনে তিনবার 100ml করে এটা কোন পাচ থেকে সাতদিন খাওয়াবেন এবং কফ শুকনো কাশি থাকলে সেরে যাবে।
[4] গবাদি পশুর ডায়রিয়ার চিকিৎসা
এছাড়াও ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসায় কচি বাঁশ বা বাঁশের শুটের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ বাঁশের শুটের মধ্যে রয়েছে গ্লকোসাইড, নিউক্লিয়াস এনজাইম, বিটোল এবং সাইলোজেন কেমিক্যাল কোম্পাউন্ড যা ডাইরিয়া এর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। ডায়রিয়াতে প্রয়োগবিধি: 200 গ্রাম শুট নেবেন সেটা 500ml জলে দিয়ে বয়েল করে সেটাকে 300ml বানিয়ে নেবেন। দিনে তিনবার 100ml করে এটা কন্টিনিউ তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়াবেন।
[5] গবাদি পশুরপায়খানায় কষ্ট কনস্টিপেশন
যে সমস্ত পশুদের কনস্টিপেশন রয়েছে অর্থাৎ পায়খানায় কষ্ট সেই সমস্ত পশুদের এই বাঁশের শুট প্রয়োগে নিতে পারেন। কারণ বাঁশের শুটের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা খাবার হজমে খুবই সহায়ক। এছাড়া পশুদের বিভিন্ন রকম প্রদাহ বা জ্বালার ক্ষেত্রে এই বাঁশের শুটকে প্রয়োগে নিতে পারেন।
[6] জ্বর প্রতিরোধে গবাদি পশু চিকিৎসা
এছাড়াও পশুদের যদি জ্বর হয়, বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বার বার জ্বর হয় সেরে যায় আবার হয় সে ক্ষেত্রে কিন্তু এই বাঁশের শুটকে প্রয়োগে নিতে পারেন। কারণ বাঁশের শুট এর মধ্যে anti-inflammatory এবং এন্টি-পাইরেটিক উপাদান গুলি রয়েছে। আগের মত করে এঁকে নিতে পারেন সারাদিনে তিনবার করে।
● 100 গ্রাম বাঁশের শুটের মধ্যে যে সমস্ত উপাদানগুলি পাওয়া যায়। তা হলো-
- অ্যামিনো অ্যাসিড
- প্রোটিন
- কার্বোহাইড্রেট
- চর্বি
- ফাইবারস
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন ই
- পটাশিয়াম
- আয়রন
- ক্যালসিয়াম
- কপার
- সোডিয়াম
- দস্তা।
আরো অনেক পদ এই বাঁশের মধ্যে পাওয়া যায়। বলতে গেলে একটি খনিজ ভান্ডার যার মধ্যে প্রায় সব ধরনের নিউট্রিশন গুলো কমবেশি উপলব্ধ থাকে।
প্রিয় দর্শক আপনারা অবশ্যই বুঝতে পারলেন বাঁশ এমন একটি উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহের বিভিন্ন রকম চিকিৎসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই পোষ্টটি অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন সঙ্গে অামাদের ফেসবুক পেইজে লাইক করতে ভুলবেন না। যে সকল দর্শক আমাদের চ্যানেলের নতুন যদি পশুদের বিভিন্ন রকম রোগ তাদের চিকিৎসা এবং মেডিসিন সম্পর্কে আরও জানতে চান আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন আমাদের ভিডিও নোটিফিকেশন গুলো সবার আগে পেতে হলে সঙ্গে বেল আইকনটি দাবিয়ে রাখবেন। আমাদের আজকের এই আলোচনা এখানেই শেষ করে দিচ্ছে সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন।