বিষয়: বাংলাদেশের গরুর জাত ও বৈশিষ্ট্য, দেশি গরুর জাত ও বৈশিষ্ট্য।
হ্যাশট্যাগ:# বাংলাদেশের গরুর জাত ও বৈশিষ্ট্য# দেশি গরুর জাত ও বৈশিষ্ট্য।
বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে উন্নত জাতের গবাদিপশু রয়েছে। এসব অঞ্চল থেকে অনেক দুধ উৎপাদিত হয়। আর সব দুধ উৎপাদনকারী অঞ্চলকে বাংলাদেশের ‘মিল্ক পকেট’ বলা হয়। এসব অঞ্চলের মধ্যে শাহজাদপুর, ভাঙ্গুড়া (পাবনা),লীগঞ্জ (ঢাকা), মাদারিপুর (ফরিদপুর) এবং চট্টগ্রাম উল্লেখযোগ্য।
এসব মিল্ক পকেট হতে দুধ সংগ্রহ করে রাজধানী নকাসহ বিভিন্ন শহরে দুধ ও দুধজাত দ্রব্য সরবরাহ করা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ডেয়রি খামারে শাহিওয়াল, সিন্ধি, হলস্টিন-ফিজিয়ান, হারিয়ানা এবং সংকর জাতের গরু পালিত হয়। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে পালিত গরুকে প্রধানত তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-
১। ছোট দেশী/দেশীয় (Small deshi/indigenous)
সমগ্র বাংলাদেশে এ শ্রেণির গরু পালিত হয়। এসব গরু ছোট আকৃতির হলেও বেশ শক্ত।
২। বৃহদাকার দেশী (Large deshi)
এ শ্রেণির গাভী অধিক পরিমাণ দুধ উৎপাদন করে এবং বলদ ভার বহন ও কৃষি কাজে বেশ উপযোগী।
৩। রেড চিটাগাং (Red Chittagong)
দুধ উৎপাদন, কৃষিকাজ ও ভার বহনের জন্য বেশ উপযোগী।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভ্যারাইটির গবাদিপশুর চিহ্নিতকরণ এবং তাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদন সম্পর্কে তেমন কোন গবেষণামূলক কাজ হয়নি। তবে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে জানা যায় যে, এসব উন্নত ভ্যারাইটির গবাদিপশু দেশের সাধারণ দেশী জাতের পশু অপেক্ষা উন্নত।
বাংলাদেশের যেসব এলাকায় কিছু বংশ জাত গরুর পরিচয় পাওয়া যায় তাদের কয়েকটি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পাবনা জেলার গরু (Pabna variety)
- পাবনা জেলার গাভী ও বলদ উভয়ই আকারে বেশ উঁচু ও লম্বা হয়। দেহের রং গাঢ় ধূসর হতে সাদা ছাপযুক্ত হয়ে থাকে।
- একটি গাভী প্রতিদিন ৬-১০ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়।
- উত্তর বঙ্গের পাবনা, রাজশাহী ও রংপুর জেলায় ধূসর বর্ণের এক প্রকার দুধাল গাভী দেখা যায়। তবে পাবনা জেলার
- শাহজাদপুর, ভাঙ্গুরা অঞ্চলে এই ধরনের গাভীর সংখ্যা অধিক। তাই এদের পাবনা জেলার গরু বলা হয়। এসব
- গাভীর আকৃতি এবং রং দেখলে মনে হয় সিন্ধির হারিয়ানা ও বিহার প্রদেশের উন্নত জাতের গরুর বংশধর।
ফরিদপুর জেলার গরু (Faridpur Variety)
- দ্বৈত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বাংলাদেশের মধ্যে ফরিদপুরের গরু বেশ উন্নত ধরনের।
- হারিয়ানা জাতের ক্রস গাভী, বলদ ও ষাঁড়-ফরিদপুর জেলায় যথেষ্ট দেখা যায়।
- এদের রঙ সাদা, চামড়া পাতলা এবং এরা মাথা উঁচু করে হাঁটে।
- ফরিদপুরের স্থানীয় একটি ষাঁড়ের ওজন ২৫০-৩০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ২০০-৩০০ কেজি পর্যন্ত।
- এসব গাভী দৈনিক প্রায় ১৩ থেকে ১৪ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়।
ঢাকা মুন্সীগঞ্জ এলাকার গরু (Munshiganj variety)
- নানা বর্ণের ও জাতের গরুর সাথে অবাধে প্রজননের ফলে এদের বংশজাত বৈশিষ্ট্য কিছুটা নষ্ট হয়েছে। এসব গরুর আকৃতি মধ্যম ও একটু লম্বাটে ধরনের।
- মুখ কিছুটা সরু ও লম্বা, গাভীর চূড়া প্রায় থাকেনা, পিঠ সোজা, শিং সরু ও খুব ধারালো, দুধ চোখের মধ্যবর্তী
- কপালের অংশবিশেষ সামান্য উঁচু।
- আকৃতি মধ্যম একটু লম্বাটে ধরনের ও বিভিন্ন বর্ণের হয়। মূলত দ্বৈত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত জাত।
- ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার সাদা রঙের দুধাল গাভী দেখা যায়। তবে কাজলা বা ঈষৎ লাল রঙেরও অনেক গাভী দেখতে পাওয়া যায়।
- ষাঁড় ও বলদ বেশ বড় ও কর্মঠ হয় এবং গাড়ী টানা ও চাষের কাজে বিশেষ উপযুক্ত।
- এ জাতের ষাড় ও বলদ বেশ বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী। কৃষি ও ভারবহনের কাজে বেশ উপযোগী। এরাও মূলত দ্বৈত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত জাত ৷
- মাঝারি ধরনের কান, গায়ের চামড়া পাতলা ও দেহের সাথে আঁটসাঁট, ওলান সম্মুখের দিকে একটু বাকানো, মিল্ক ভেইন মোটা ও স্পষ্ট, লেজ মধ্যমাকৃতির।
- এই জাতীয় গাভী থেকে দৈনিক ১০ থেকে ১২ লিটার দুধ পাওয়া যায়।
চট্টগ্রামের লাল গরু (Chittagong red variety)
- ওলান বেশ বর্ধিত, বাট সুডৌল, মিল্ক ভেইন বেশ স্পষ্ট, ওলানের সম্মুখের চামড়া সামান্য ঝুলানো, গাভীর অনুপাতে লেজ যথেষ্ট লম্বা, শেষ প্রান্তের চুলের গুচ্ছ লাল বর্ণের।
- গাভীর দৈহিক ওজন ২৫০-৩০০ কেজি পর্যন্ত হয়।
- এ জাতের গাভী দৈহিক ১০ থেকে ১২ কেজি দুধ দেয়।
- চট্টগ্রামের লাল জাতের গরু চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দা না এ জাত অন্য কোথাও থেকে আনা হয়েছিল তা সঠিক ভাবে জানা যায়নি।
- এ জাতের গরু চট্টগ্রাম ছাড়া পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায়ও কিছু সংখ্যক দেখা যায়।
- হালকা লাল বর্ণের এ জাতের গরু দেখতে ছোট খাটো, পিছনের দিক বেশ ভারী, চামড়া পাতলা, শিং ছোট ও চ্যাপ্টা।
- এদের মুখ খাটো ও চওড়া, মাঝারি ধরনের গলকম্বল, গলা খাটো ও সামান্য কুজঁও আছে।