Skip to content

 

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনাঃ

ভূমিকা:

মানুষ ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। এই পছন্দকে কাজে লাগিয়ে ভ্রমণ-বান্ধব এক ধরনের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যার নাম পর্যটন শিল্প। এই শিল্পের কাজ হলো কোনো অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলোর তথ্য ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে তুলে ধরা, ভ্রমণের সুবন্দোবস্ত করা, এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা। বাংলাদেশের একাধিক বনাঞ্চল, পাহাড়-নদী-ঝরনা, শস্যশোভিত মাঠ ও সবুজ প্রকৃতি, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র-সৈকত, নান্দনিক স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও নিদর্শন প্রভৃতি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তাই বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর। এগুলোর টানে বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যটকের বাংলাদেশে আসার সুযোগ রয়েছে। এভাবে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রথমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রসমূহের দিকে তাকানো যাক।

সুন্দরবন:

বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের অধিক জায়গা জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনা জেলায় এর অবস্থান। সুন্দরী বৃক্ষ, গোলপাতাসহ নানা জাতের উদ্ভিদ এবং চিত্রল হরিণ, বাঘ, বানর, হনুমানসহ নানা জাতের পশুপাখির আবাস এই সুন্দরবন। অভ্যন্তরে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য খালে রয়েছে কুমির। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকগণ নৌযানে করে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতে পারেন। ভয় ও ভালো-লাগার অপূর্ব মিশেলের কারণে সুন্দরবন ভ্রমণ যে-কোনো পর্যটকের স্মৃতিতে স্থায়ী হয়ে থাকে।

সিলেটের রাতারগুল:

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটে অবস্থিত রাতারগুল জলাবন বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির বন। এর আয়তন ৩ হাজার ৩২৫ একর। ১০ ফুট গভীর পানির উপর বনের গাছপালা জেগে থাকে। বর্ষাকালে পানির গভীরতা হয় ২০-৩০ ফুট পর্যন্ত। পর্যটকগণকে নৌকায় করে বনের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এখানে উপভোগ করার মতো আছে কদম, হিজল, অর্জুন, ছাতিম প্রভৃতি গাছের সৌন্দর্য। বেড়াতে বেড়াতে দেখা হয়ে যায় বানর, বেজি, গুঁইসাপ, কিংবা সাদা বক, মাছরাঙা, পানকৌড়ি প্রভৃতি প্রাণী ও পাখির সঙ্গে।

সমুদ্র সৈকত:

কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম (১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ) প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা ভিড় করেন কক্সবাজারে। সমুদ্র ছাড়াও কক্সবাজার জেলায় রয়েছে একাধিক ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ধর্মীয় উপাসনালয় ও বুদ্ধ মূর্তি। স্থাপত্যশিল্পের বিচারে এগুলো অমূল্য। এছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, কক্সবাজারের ইনানি, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, সুন্দরবনের কটকা প্রভৃতি সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণপিপাসুরা বেড়াতে যান। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। সমস্ত দ্বীপ জুড়ে রয়েছে নারিকেল গাছ। দ্বীপ থেকে সমুদ্রের নীল জলরাশির সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং নানা রকমের প্রবাল দেখতে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ করেন।

পার্বত্য অঞ্চল:

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাসমূহ অর্থাৎ রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্র। একদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘ ছোঁয়ার আনন্দ, অন্যদিকে প্রাকৃতিক জলের উৎস ঝরনাধারা পর্যটকদের অভিভূত করে। রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে নৌকায় ভেসে বেড়ানো যায়। হ্রদের উপরে একটি সুদৃশ্য ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত আলুটিলা পাহাড়, রিসাং ঝরনা, মায়াবিনী লেক প্রভৃতি স্থানে ভ্রমণের হাতছানি পর্যটকরা অগ্রাহ্য করতে পারে না। সিলেটের জাফলং-এর পিয়াইন নদীতে মনোমুগ্ধকর পাথুরে জলের ধারা, মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড ঝরনা; হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড়ের চা বাগান; শ্রীমঙ্গলের ইকোপার্ক প্রভৃতি স্থান প্রায় সারাবছরই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। এ অঞ্চলসমূহে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের বর্ণিল জীবনাচারও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের একমাত্র পার্বত্য দ্বীপ মহেশখালী। বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির ও বড়ো রাখাইনপাড়া বৌদ্ধ মন্দির এই দ্বীপেই অবস্থিত।

পুরাকীর্তি:

বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত মুঘল স্থাপত্য লালবাগ কেল্লা, বুড়িগঙ্গার তীরে নির্মিত আহসান মঞ্জিল, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও-এ গড়ে ওঠা অনুপম স্থাপত্য শৈলীবিশিষ্ট পানাম নগর, কুমিল্লায় আবিষ্কৃত প্রাচীন নগর ময়নামতী, বগুড়ার প্রাচীন পুরাকীর্তি মহাস্থানগড়, নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার অন্তর্গত আড়াই হাজার বছর পূর্বের প্রত্ননিদর্শন সংবলিত উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রাম, নওগাঁ জেলায় আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বৌদ্ধবিহার পাহাড়পুর, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যকলার বহু নিদর্শন।

ঐতিহাসিক স্থাপনা:

আরেক শ্রেণির স্থাপত্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। ১৯৫২ সালে সংঘটিত ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল প্রাঙ্গণে স্থাপিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শহিদদের প্রতি নিবেদিত ও ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ, ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে নির্মিত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং এই উদ্যানে স্থাপিত স্বাধীনতা জাদুঘর ইতিহাসপ্রেমী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অবস্থা:

পর্যটন বিশ্বব্যাপী একটি সম্ভবনাময় খাত। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের সম্মিলিত বার্ষিক ভ্রমণ-ব্যয় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এমন অনেক দেশ রয়েছে, যার প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প দিনে দিনে বিকাশ লাভ করছে। একদিকে বিদেশি পর্যটকদের আগমন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাড়িয়ে তুলছে, অন্যদিকে দেশীয় পর্যটকদের ভ্রমণ সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ দেশীয় পর্যটক বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে। এদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক পর্যটক বিভিন্ন স্থানে চলাচল করায় পর্যটনের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতি গতি লাভ করে। পরিবহণ, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, পোশাক, অলংকার প্রভৃতি ব্যবসায় পর্যটন শিল্পের বিকাশের সঙ্গে জড়িত। পর্যটনের বিকাশে অসংখ্য মানুষের জীবিকারও সংস্থান হয়। বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, পর্যটন শিল্প থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি অর্জন করা সম্ভব।

পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব:

একটি দেশের পর্যটন শিল্প বিকশিত হলে সেই দেশের সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ হয়। পর্যটন এলাকায় অধিবাসীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। পর্যটকদের আগ্রহ রয়েছে এমন স্থান, স্থাপনা বা বিষয়ের প্রতি স্থানীয় অধিবাসীদেরও শ্রদ্ধাশীল করে তোলে। তারা নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় তাগিদ অনুভব করে। এছাড়া পর্যটনের সূত্রে বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের মেলবন্ধন একটি মানবিক বিশ্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে করণীয়:

পৃথিবী ব্যাপী পর্যটন শিল্প এখন দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। বাংলাদেশে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দিলে পর্যটন এলাকাগুলোতে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে। প্রথমেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে। উন্নত পথ ও যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকলে পর্যটকরা নিরুৎসাহিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলসহ বেশকিছু পর্যটনকেন্দ্রে পৌঁছানোর সহজ পথ ও যানবাহনের ব্যবস্থা নেই। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। পর্যটকরা যাতে নির্ভয়ে ও নিঃসঙ্কোচে ভ্রমণ করতে পারে, তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। অতিরিক্ত ভ্রমণ-ব্যয় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে। তাই, যাতায়াত এবং থাকা-খাওয়াসহ সংশ্লিষ্ট ব্যয় যাতে সীমার মধ্যে থাকে তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

উপসংহার:

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থাপত্যকলা, স্থানীয় অধিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ও সংস্কৃতি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট। তবে পর্যটনকে একটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ও স্থায়ী রূপ দিতে দরকার রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও এর প্রয়োগ। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি পর্যটনকেন্দ্রের অধিবাসীদেরও পর্যটকদের সহযোগিতায় সম্পৃক্ত করা উচিত। পর্যটকদের যথাযথ নিরাপত্তা ও সহযোগিতা দেওয়া গেলে ভ্রমণের প্রতি তাদের উৎসাহ আরো বাড়বে। এর ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের মানবিক সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরিচয় বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল হবে।


রচনা লেখা নিয়ম-

প্ৰবন্ধ/রচনা কি? রচনা কত প্রকার ও কি কি?

প্ৰবন্ধ/রচনা/রচনা এক প্রকার গদ্য রচনা। রচনা শব্দের অর্থ নির্মাণ বা সৃষ্টি করা। কোনো বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার নামই রচনা। কোনো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে প্ৰবন্ধ/রচনা/রচনা রচিত হয়।

সব ধরনের প্ৰবন্ধ/রচনাকে অন্তত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা – বর্ণনামূলক প্ৰবন্ধ/রচনা, চিন্তামূলক প্ৰবন্ধ/রচনা ও ব্যক্তি অনুভূতিমূলক প্ৰবন্ধ/রচনা।

উদাহরণস্বরূপঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প’ বা ‘ভাষা আন্দোলন’ প্ৰবন্ধ/রচনাকে বলা যায় বর্ণনামূলক প্ৰবন্ধ/রচনা, ‘সময়ানুবর্তিতা’ বা ‘মাদকাসক্তি’ প্ৰবন্ধ/রচনাকে বলা যায় চিন্তামূলক প্ৰবন্ধ/রচনা, এবং ‘লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা’ বা ‘কোনো ঘটনার স্মৃতি’ প্ৰবন্ধ/রচনাকে বলা যায় ব্যক্তি অনুভূতিমূলক প্ৰবন্ধ/রচনা।

রচনা লেখার ফরমেট/স্টাইলঃ

রচনার সাধারণত তিনটি অংশ। যথা-

১। ভূমিকা: প্রবন্ধের প্রথম অনুচ্ছেদটি হবে এর ভূমিকা বা সূচনা। ভূমিকা হচ্ছে প্রবন্ধের সূচনা অংশ। অনেকটা বিষয়ে ঢোকার দরজার মতো ভূমিকা যত বিষয় অনুযায়ী, আকর্ষণীয় ও মনোরম হয় ততই ভালো। লক্ষ রাখা দরকার, ভূমিকা অংশে যেন অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য ভিড় না করে আর তা যেন খুব দীর্ঘ না হয়।

ভূমিকা হল বাড়ীর দরজার মতো। তাই আপনি কি নিয়ে রচনা লিখতে চলেছেন তা পরিষ্কার করে ফুটিয়ে তুলবেন ভূমিকা তে।

এমনভাবে ভূমিকা লিখুন, যেন পাঠক বুঝতে পারেন আপনি কিসের ওপর রচনা লিখতে চলেছেন। কিন্তু সেই সব ব্যাপারে বেশী তথ্য ভূমিকা তে দেবেন না। কিন্তু পাঠকের মনে আরও ভেতরে প্রবেশ করার একটা কৌতূহল জন্মাবে, মানে পাঠক আপনার রচনা পড়তে আগ্রহী হবেন। পাঠক এর মনে হবে- এর পরে কি আছে, আরও একটু পড়া যাক।  

২। মূল অংশ: ভূমিকার পরে প্রবন্ধের মূল বিষয়ের আলোচনা শুরু হয়। প্ৰবন্ধ/রচনাের মূল অংশ একাধিক অনুচ্ছেদে বিভক্ত হয়ে থাকে। অনুচ্ছেদগুলো যাতে সমরূপ থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়। বিশেষভাবে বর্ণনামূলক ও চিন্তামূলক প্ৰবন্ধ/রচনাের বেলায় অনুচ্ছেদগুলোর আলাদা শিরোনাম থাকে। এগুলোর নাম অনুচ্ছেদ-শিরোনাম। এসব শিরোনামের পরে কোলন যতি (:) দিয়ে লেখা শুরু করা যায়।

৩। উপসংহার: প্রবন্ধের সর্বশেষ অংশ উপসংহার। সূচনার মতো সমাপ্তিরও আছে সমান গুরুত্ব। প্রবন্ধের ভাববস্তু ভূমিকার উৎস থেকে ক্রমাগ্রগতি ও ক্রমবিকাশের ধারা বহন করে উপসংহারে এসে একটি ভাবব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে সমাপ্তির ছেদ-রেখা টানে। এখানে লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশের যথেষ্ট অবকাশ থাকে। উপসংহারে লেখক একদিকে যেমন আলোচনার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, অন্যদিকে তেমনি লেখকের নিজস্ব অভিমতের কিংবা আশা-আকাঙ্ক্ষার সার্থক প্রতিফলনও ঘটে।

তাই কখনোই তাড়াহুড়ো করে, যেমন তেমন করে উপসংহার লিখে রচনাটি শেষ করে দেবেন না যেন। উপসংহার হবে –আপনি এতক্ষণ যা কিছু লিখলেন তার সারকথা।

প্ৰবন্ধ/রচনা লেখার সাধারন নিয়মঃ

  • ক. ভূমিকা হলো প্ৰবন্ধ/রচনাের প্রবেশক অংশ। এটি সাধারণত এক অনুচ্ছেদের হয়। এই অংশে প্রায়ই মূল আলোচনার ইঙ্গিত থাকে।
  • খ. প্ৰবন্ধ/রচনাের মূল অংশ একাধিক অনুচ্ছেদে বিভক্ত হয়ে থাকে। অনুচ্ছেদগুলো যাতে সমরূপ থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়। যুক্তি বা কালের অনুক্রম মনে রেখে অনুচ্ছেদগুলোর সমরূপতা ঠিক করা যেতে পারে।
  • গ. বিশেষভাবে বর্ণনামূলক ও চিন্তামূলক প্ৰবন্ধ/রচনাের বেলায় অনুচ্ছেদগুলোর আলাদা শিরোনাম থাকে। এগুলোর নাম অনুচ্ছেদ-শিরোনাম। এসব শিরোনামের পরে কোলন যতি (:) দিয়ে লেখা শুরু করা যায়।
  • ঘ. উপসংহার হলো প্ৰবন্ধ/রচনাের সমাপ্তি অংশ। প্ৰবন্ধ/রচনাের প্রকৃতি অনুযায়ী এখানে সাধারণত ফলাফল, সম্ভাবনা, সীমাবদ্ধতা, প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদি স্থান পায়।
  • ঙ. প্ৰবন্ধ/রচনাের ভাষা হওয়া উচিত সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল।
  • চ. প্ৰবন্ধ/রচনাের প্রতিটি অনুচ্ছেদ লেখার সময়ে প্ৰবন্ধ/রচনাের শিরোনামের কথা মনে রাখতে হয়, তাতে প্ৰবন্ধ/রচনাের মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা প্রবেশ করতে পারে না।
  • ছ. উদ্ধৃতি ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত। অপরিহার্য না হলে উদ্ধৃতি ব্যবহার করা ঠিক নয়। বিশেষভাবে বাংলা প্ৰবন্ধ/রচনাের মধ্যে অন্য কোনো ভাষার উদ্ধৃতি বর্জনীয়।
  • জ. প্ৰবন্ধ/রচনাের নির্দিষ্ট কোনো আয়তন নেই। এমনকি এর অনুচ্ছেদসংখ্যাও নির্দিষ্ট করা যায় না। তবে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্ৰবন্ধ/রচনাের শব্দসংখ্যা কমবেশি এক হাজার হতে পারে।

রচনার লেখার সাধারণ নিয়মের পাশাপাশি আরও যা যা লক্ষ্য রাখা প্রয়োজনঃ

প্রবন্ধ রচনার সময় কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা প্রয়োজন। তাহলে প্রবন্ধের মান বৃদ্ধি পায় এবং পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে-

১। রচনা লিখার পর একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিন সব বানান ঠিক আছে কিনা

২। সাধু ভাষা, চলিত ভাষা মিশিয়ে ফেলবেন না, যে কোন একটা ভাষা তে লিখুন।

৩। যে টপিকের ওপর রচনা লিখবেন, তার ওপর জ্ঞান থাকাটা খুবই জরুরী।

৪। আপনার জানা জ্ঞান কে খুব সুন্দর ভাবে পয়েন্ট অনুসারে সাজিয়ে লিখবেন। কোন তথ্য কোন হেডলাইনে রাখা যাবে তা আগে ঠিক করে নিন।

৫। কিছু বিখ্যাত কবিদের কবিতার লাইন যদি প্রাসঙ্গিক মনে হয়, তাহলে সেইসব লাইন বা কোন প্রাসঙ্গিক কোটেশন প্রতিটি হেডলাইনেই দিতে পারেন। তবে প্রাসঙ্গিকতা বিচার করে দেবেন।

৬। অপ্রাসঙ্গিক কিছুই লিখবেন না। তথ্য ছাড়া শুধু নানান রকম গল্প লিখে রচনা কে বিনা কারনে দীর্ঘায়িতো করবেন না। 

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!