🛑 প্রশ্ন:- বিগ ব্যাং অনুযায়ী মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে কয়েক মিলিয়ন বছর সময় লেগেছে; তাহলে কুরআন কেন বলল আকাশ ও পৃথিবী তৈরি হতে ৬ দিন লেগেছে?
🔷ব্যাখ্যা :- আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٍ
“ আমি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও এই দুইয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় ‘আইয়ামে’(দিন/সময়কাল) সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি।” [1]
وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ وَلَن يُخْلِفَ اللَّهُ وَعْدَهُ ۚ وَإِنَّ يَوْمًا عِندَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ
“তারা তোমাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। অথচ আল্লাহ কখনও তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রভুর কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান। ” [2]
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ
” তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান। “ [3]
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
“ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাঁর(আল্লাহর) দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।” [4]
আরবি ভাষায় يَوْمِ [উচ্চারণঃ ইয়াওম; বহুবচনঃ أَيَّامٍ (আইয়াম)] শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হয়।আরবিতে শব্দটি দিন, পর্যায়কাল, সময়কাল ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। [5]
সুরা ক্বফ এর ৩৮নং আয়াতে যে أَيَّامٍ (আইয়াম) এর কথা বলা আছে তা অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার দিন হওয়া সম্ভব নয়। কারণ সে সময়ে সূর্য তৈরি হয়নি; কাজেই সৌর দিনের হিসাব এখানে অবান্তর। সুরা হাজ্জ ২২:৪৭ ও সাজদা ৩২:৫ তে হাজার বছরের ‘দিন’ এবং সুরা মাআরিজ ৭০:৪ এ ৫০ হাজার বছরের ‘দিন’ এর কথা উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য যে, হাজ্জ ২২:৪৭ ও সাজদা ৩২:৫তে أَلْفَ سَنَةٍ বা ‘হাজার বছর’ এর ‘দিন’ এর কথা উল্লেখ আছে; যা দ্বারা যেমন নির্দিষ্টভাবে ১০০০ বছর বোঝাতে পারে, আবার ‘হাজার বছর’ তথা বিশাল দৈর্ঘ্যের একটি সময়কালকেও বোঝাতে পারে। কুরআনে শব্দটির ব্যবহারের এই বৈচিত্র্য দ্বারাই বোঝা যাচ্ছে যে– يَوْمِ (ইয়াওম) শব্দটির অর্থ ব্যাপক; এ দ্বারা যে কোন সময়কালের দিনই বোঝাতে পারে। এ দ্বারা ২৪ঘণ্টা, ১ হাজার বছর, ৫০,০০০ বছর এমনকি হাজার বছর বা বিশাল দৈর্ঘ্যের একটি সময়কালকেও বোঝাতে পারে। মোট কথা, শব্দটি দ্বারা যে কোন time period বা পর্যায়কাল/সময়কাল বোঝাতে পারে।
আধুনিককালে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাপারে সব থেকে গ্রহণযোগ্য মতবাদ হচ্ছে বিগ ব্যাং। মুসলিমদের নিকট অবশ্যই কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মানদণ্ড নয়, কারণ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রায়শই পরিবর্তন হয়। মুসলিমদের নিকট মানদণ্ড হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ। কারণ এগুলো ওহীর অন্তর্ভুক্ত, মানুষের জ্ঞানের থেকে এগুলো অগ্রগামী।
কুরআনে যে ছয় ‘আইয়ামে’(দিন/সময়কাল) সৃষ্টি করার কথা বলা আছে, তা মিলিয়ন বছর সময়কালের ‘আইয়াম’ও হতে পারে। يَوْمِ এর কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
আরবীতে ‘ইয়াওম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ ‘দিন’ বা ‘লম্বা সময়’। দ্বিতীয় অর্থ ধরলে কোন সমস্যা থাকে না। প্রয়োজনে আরবী ডিকশনারী দেখুন। একটি অর্থ ধরে কোরআনকে ভুল বলার কোন মানে হয় না যখন অন্য অর্থ ধরে সঠিক অর্থে যাওয়া যায়।
সব থেকে আগ্রহোদ্দীপক বিষয় হচ্ছে, আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে ছয়টি পর্যায়কালে। যথাঃ
1.Plank time 2.Inflationary 3.Formation of proton & neutron 4.Formation of nucleus 5.Formation of matter & separation of radiation 6.Familiar universe. [6]
যা কুরআনের বর্ণনার{৬ আইয়াম} অনুরূপ।
আল্লাহ ভালো জানেন।
তথ্যসূত্রঃ
[1] আল কুরআন, ক্বফ ৫০:৩৮
[2] আল কুরআন, হাজ্জ ২২:৪৭
[3] আল কুরআন, সাজদা ৩২:৫
[4] আল কুরআন, মাআরিজ ৭০:৪
[5] “Translation and Meaning of yawm ( day, period ) In Arabic, English Arabic Dictionary of terms”
http://www.almaany.com/en/dict/ar-en/yawm+%28+day,+period+%29/
[6] বিস্তারিতভাবে Epoch বা সময়কালের ধাপগুলোর বিবরণ দেখা যেতে পারে National Geographic Magazine, February 1982 (Vol. 161, No. 2) থেকে।