বিটল জাতের ছাগল হলো ভারত বর্ষের সবচেয়ে বড় প্রজাতির ছাগল। বিটল ছাগল প্রজনন পদ্ধতি নিয়ে আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আলোচনা করা হবে।
বিটেল জাতের ফিমেইল ছাগল প্রথম কত মাস বয়স থেকে প্রজননের জন্য উপযুক্ত হয়? এবং মেইল কত মাস বয়স থেকে প্রজননের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। আলোচনাটি পড়ার পর যদি ভালো লাগে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেইজ এ একটা লাইক করতে ভুলবেন না। যারা আমাদের ব্লগে নতুন, গোট ফার্মিং সম্বন্ধে পোষ্টগুলি দেখতে চান আমাদের ফেসবুক পেইজ লাইক করে রাখবেন চলুন শুরু করা যাক।
» বন্ধুরা পোষ্ট এর শুরুতেই আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি বিটল প্রজাতির ছাগল ফার্মের জন্য উপযুক্ত নয়। এটি একটি সৈখিন প্রজাতির ছাগল যেটাকে আপনারা শখের সকল জন্য পালন করতে পারেন। ছাগলের ব্রিডিং নিয়ে এর আগেও অনেক ভিডিওতে আলোচনা করা হয়েছে তবুও এই ভিডিওতে আমি আলোচনা করব স্পেশালি বিটেল ছাগলের ওপর।
» কারণ বিটল প্রজাতির ছাগলের প্রজনন ক্ষমতা খুবই কম। কিন্তু কমার্শিয়াল ফার্মিং করতে গেলে আপনার সেই সব ছাগল দিয়ে করতে হবে যাবে প্রজনন ক্ষমতা বেশি এবং কম সময়ে প্রজননের জন্য উপযুক্ত হয়। আপনাদের মধ্যে যাদের ছাগল সম্পর্কে কমবেশি ধারনা আছে আপনি জানেন ভারতবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতির ছাগল পাঞ্জাবের একটি বব্রিড যার নাম “বিটল ”।
» একটা ফিমেল বিটল ছাগলের ওজন 40 কেজি থেকে শুরু করে 70 কেজি হয় এবং একটা মেইল ছাগলের ওজন 50 কেজি থেকে শুরু করে 100 কেজি হয় এবং এর থেকেও কিন্তু বেশি ওজনের হয়ে থাকে। এদের কান অনেকটাই লম্বা লম্বা হয় এবং পিওর প্রজাতির বিটেলের চোখ সাদা হয়। এদের অনেকটাই লম্বা লম্বা হয় এবং উচ্চতার দিক দিয়ে ভারতবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চতম ছাগল হচ্ছে বিটেল। একটা ফিমেল ছাগলের উচ্চতা 36 ইঞ্চি থেকে শুরু করে 42 ইঞ্চি হয়ে থাকে। একটা ভালো কোয়ালিটির মেইল 42 ইঞ্চি থেকে শুরু করে 48 ইঞ্চি দেখা যায়।
একটা ফিমেল বিটল যখন হিটে চলে আসবে যেসব লক্ষণ গুলি দেখতে পাবেন প্রথম হচ্ছে :-
◾ তার যোনি পথ দিয়ে হোয়াইট ডিসচার্জ বা সাদা স্রাব যেটাকে বলে সেটা পড়তে থাকবে।
◾ খাওয়া-দাওয়া কম করবে এবং সে নিজে থেকেই পাঠার কাছে চলে যাবে।
◾ আর ফার্মের মধ্যে যদি পাঠাতে থাকে পাঠা কিন্তু নিজের থেকে বুঝে নিতে পারে যে ফিমেল ছাগল হিটে চলে এসেছে এবং পাঠাও কিন্তু সেই ফিমেল এর পেছনে ছুটতে থাকে।
যখন ছাগলকে ব্রিডিং করাবেন কতগুলো নিয়ম আপনাকে মানতে হবে :-
◾ প্রথমে হচ্ছে হিটে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্রীডিং করানো যাবে না। কেন যাবেনা এ নিয়ে আগের ভিডিওতে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে।
◾ ছাগল হিটে আসার ছয় ঘণ্টা পর থেকে তাকে ব্রীডিং করাতে পারেন এবং হিট ছাড়ার 6 ঘণ্টা আগ মূহুর্ত অবদি।
◾ বিটল ছাগলের পূর্ণ হিট থাকে 72 ঘণ্টা। এই 72 ঘণ্টা শুরু হওয়ার ছয় ঘণ্টা পর থেকে হিট ছেড়ে যাওয়ার 6 ঘণ্টা আগে অবদি কিন্তু প্রজনন করাতে পারবেন।
◾ প্রজনন করানোর সময় ফিমেল টাকে ধরে রাখা উচিত যেন ঠিকঠাক ভাবে ব্রিডিং হতে পারে।
◾ ব্রীডিং বরানোর হবে সময় হয়তো সকালের দিকে না হলে বিকেলের দিকে, দুপুরের সময় কখনও ব্রিডিং করাবেন না।
◾ ব্রিডিং করানোর পর কমপক্ষে তাকে তিন ঘন্টা শুতে দেওয়া যাবে না। শুয়ে পড়লে তার ইউট্রাস এর মধ্যে প্রেসার পড়বে আর এর মধ্যে প্রেসার পড়লে পাঠার স্পার্ম বেরিয়ে আসতে পারে।
◾ ব্রিডিং এরপর ছাগলটা যেনো শুনতে না পারে ওই অনুযায়ী আপনাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে। ব্রিডিং করার পর এক ঘণ্টার মধ্যে কোন জল খাবার দেওয়া উচিত নয়।
◾ ব্রিডিং হয়ে গেলে 24 ঘন্টার মধ্যে তাকে কোনো লবণ জাতীয় খাবার দেওয়া যাবে না।
◾ যখন ব্রীডিং হবে কনফার্ম তিনবার ব্রীডিং করাবেন।
এইসব নিয়ম ফলো করে যদি আপনাকে ব্রিডিং করান অবশ্যই আপনার ছাগল প্রেগনেন্ট হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্রিডিংয়ের পরও ছাগলটি প্রেগনেন্ট হয়নি, তার কারণ ব্রিডিং এর পর তাকে শুতে দেওয়া, এরপর তাকে জল খাবার দেওয়া, লবণ জাতীয় খাবার দেওয়ার কারণে কিন্তু স্পার্মগুলো বাইরে বেরিয়ে যায় এবং ছাগল গাভীন হয় না।
এবারে আমরা আলোচনা করব বিটল প্রজাতির ছাগলের প্রজনন এর উপযুক্ত বয়স:–
» একটা বিটেল প্রজাতির ছাগল প্রথম প্রজননের জন্য উপযুক্ত হয় 18 থেকে 22 মাসের মধ্যে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় দু বছর সময় লেগে যায়, অর্থাৎ 24 মার্চ।
» যেহেতু এই প্রজাতির ছাগলটি খুব বড় যার কারণেই এদের ওভেরি ও ইউট্রাস খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হতে থাকে, যার ফলে এত সময় লেগে যায় এদের প্রয়োজনের জন্য উপযুক্ত হতে। এই প্রজাতির ছাগল বছরে একবারে বাচ্চা প্রসব করে থাকে এবং অধিকাংশ সময় একটি করে বাচ্চা প্রসব করে থাকে।
» বিটেল ছাগল প্রজনন করানোর জন্য এক বছর বয়স থেকেই কিন্তু ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু সে সময় ফিমেল দিয়ে ব্রিডিং করানো উচিত নয়। একটা মিইলকে ব্রিডিং এ ব্যবহার করার উপযুক্ত বয়স হলো দুই বছর। দুই বছর পর থেকেই সেই মেইলকে ব্রিডিং এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি কম বয়স থেকেই মেইলকে ব্রিডিং এ ব্যবহার করে থাকেন সেক্ষেত্রে তার স্পার্মকোয়ালিটি ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে এবং ওর মাধ্যমে যেসব ছাগল প্রেগনেন্ট হবে তাদের যে বাচ্চা বাচ্চার কোয়ালিটি ভালো হবে না এবং বাচ্চাগুলো দুর্বল হবে।
» বিটেল প্রজাতির ছাগলের দুধ বেশি হয়। যেটা সচরাচর দেখা যায় একটা ফিমেলের দেড় থেকে দুই লিটার দুধ হয়। কিছু কিছু ভালো কোয়ালিটি আছে যাদের 3 লিটার সাড়ে তিন লিটার লিটার অব্দি কিন্তু দুধ হয়।
» বন্ধুরা পোষ্টিটি শেষ করার আগে আরেকবার বলে দিচ্ছি বিটেল প্রজাতির ছাগল ফার্মের জন্য উপযুক্ত নয়। তার কারণ এর প্রজনন ক্ষমতা কম। এদের অসুখ-বিসুখ তেমন একটা দেখা যায় না। আপনারা যারা শখের বশে বড় প্রজাতির ছাগল পালন করতে চান সেক্ষেত্রে বিটল ছাগল পালন করতে পারেন।
বন্ধুরা কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই আলোচনা যদি ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। আর যারা আমাদের ব্লগে নতুন যদি গোট ফার্মিং সম্বন্ধীয় লেখঅগুলি পড়তে চান আমাদের ফেসবুক পেইজে করে রাখবেন। আমাদের এই ব্লগে গোট ফার্মিং এবং ফার্মিং বিষয়ক সব ধরনের আলোচনা পোষ্ট করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ছাগলের বিভিন্ন রোগ ও তার ট্রিটমেন্ট এবং বিভিন্ন রকম মেডিসিন নিয়ে আমরা কিন্তু বিস্তারিত আলোচনা করি। আমাদের সমস্ত রকম পোষ্ট দেখার পর যদি আপনাদের ভালো লাগে অবশ্যই পোষ্গুটলি কে বেশি বেশি করে শেয়ার করে দিয়ে আপনাদের বন্ধুদের কে দেখার সুযোগ করে দেবেন। আজকে এখানেই বিদায় নিচ্ছি পরবর্তীতে আবার নতুন কোন বিষয় নিয়ে আসব ততক্ষণে সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন। মূল আলোচনাটি সংগ্রহিত।