১।
মুসিবত কেন আপতিত হয় এবং আল্লাহ তা বান্দাদের থেকে উঠিয়ে নেন কিভাবে সে বিষয়ে পবিত্র কোরআন বর্ণনা করছে :
তা এ জন্য যে, আল্লাহ কোনো নিয়ামতের পরিবর্তনকারী নন, যা তিনি কোনো কওমকে দিয়েছেন, যতক্ষণ না তারা পরিবর্তন করে তাদের নিজদের মধ্যে যা আছে। ( সূরা আনফাল : আয়াত ৫৩)
২।
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর তোমাদের প্রতি যে মুসিবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন। ( সূরা শুরা : আয়াত ৩০)
৩।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
অর্থাৎ, মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। ( সূরা রূম : আয়াত, ৪১)
৪।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
আর আল্লাহ উপমা পেশ করছেন, একটি জনপদ, যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। সবদিক থেকে তার রিয্ক তাতে বিপুলভাবে আসত। অতঃপর সে (জনপদ) আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করল। তখন তারা যা করত তার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক পরালেন। ( সূরা নাহল : আয়াত ১১২)
৫।
উপরোক্ত আয়াতসমূহ আমাদের এই শিক্ষা দিচ্ছে যে, আল্লাহ সবচেয়ে বড় ন্যায় বিচারক। তিনি কখনই কোনো জনপদের উপর বালা-মুসিবত আপতিত করেন না, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও পাপ করে। বিশেষ করে তাওহিদ হতে দূরে সরে যায়।
বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশে নানা পাপাচার ও শিরকি আমলের প্রকাশ দেখা যাচ্ছে, যার কারণে আল্লাহর পক্ষ হতে একটার পর একটা পরীক্ষা আসছে, নানা বিপদাপদে পতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত । মুসলিম সমাজ শিরক ও পাপাচার ছেড়ে আবারো আল্লাহর দিকে ফিরে এসে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে শরয়ি বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী না হলে মুসিবত আবর্তণের এ ধারা কখনই বন্ধ হবে না।
৬।
পবিত্র কোরআন অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় মুশরিকদের অবস্থা বর্ণনা করছে, যখন তাদের উপর বিপদ আপতিত হয় তখন কায়মনোবাক্যে আল্লাহকে ডাকে। বিপদ কেটে গেলে আবারো পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তণ করে। অর্থাৎ ভাল সময়ে আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে ডাকে। আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে বলছেন :
তারা যখন নৌযানে আরোহন করে, তখন তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অত:পর যখন তিনি তাদেরকে স্থলে পৌঁছে দেন, তখনই তারা শিরকে লিপ্ত হয়। (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৬৫)
৭।
আজকাল বহু মুসলিমকে দেখা যায়, বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য গাইরুল্লাহকে ডাকাডাকি করে। বলে থাকে, (হে খাজা বাবা! হে বড়পীর সাহেব!)। সুসময় ও দুঃসময় উভয় অবস্থায়ই আপন রব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশের বিরোধিতা করে শিরকে প্রবৃত্ত হচ্ছে। (নাউযুবিল্লাহ)
৮।
উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের তীরন্দাজ বাহিনী আপন নেতার (রাসূলুল্লাহ সা.) নির্দেশ অনুপুঙ্খভাবে মান্য না করার কারণে (প্রাথমিক) পরাজয়ের শিকার হয়ে বিস্মিত হয়ে পড়েন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে তাদের সম্বন্ধে বলেন :
বল, এটা তোমাদের নিজেদেরই পক্ষ হতে। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত, ১৬৫) হুনাইনের যুদ্ধে কিছু সংখাক মুসলিম বললেন : আমরা অল্প হলেও হারব না। তখনই সূচিত হল শোচনীয় পরাজয়। তাদের তিরস্কার করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
এবং হুনাইনের দিন যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল, অথচ তা তোমাদের কোনো কাজে আসেনি। ( সূরা তাওবা ৯: আয়াত ২৫)
৯।
উমর রা. সেনাপতি সা’দ রা.-কে ইরাকে লিখলেন : তোমরা এমনটি বল না যে, আমাদের শত্রুরা যেহেতু আমাদের থেকে নিকৃষ্ট তাই কখনই তারা আমাদের উপর জয়যুক্ত হতে পারবে না; বরং তারা হয়ত তাদের থেকে কোনো খারাপ জাতির উপর জয়যুক্ত হবে। যেমনিভাবে বনী ইসরাঈলরা পাপাচারে লিপ্ত হলে কাফির অগ্নি উপাসকরা তাদের উপর জয়যুক্ত হয়েছিল। তাই তোমরা নিজেদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও পাপ হতে বেঁচে থাকার জন্য, যেমনি করে সাহায্য চাও নিজ শত্রুদের বিরুদ্ধে।