Skip to content

 

Wait...❤😘 Show love? ⬇⬇⬇

বিভিন্ন জাতের গরু (৮টি জাতের বৈশিষ্ট্য ও পরিচিতি বর্ণনা) উন্নত, দেশি জাতের গরু, উন্নত বিদেশি জাতের গরু, শাহীওয়াল, লাল সিন্ধি, হরিয়ানা, জার্সি, ফ্রিসিয়ান, আয়ারশায়ার, সংকর (ক্রোস) জাতের গরু ও তার সুবিধা অসুবিধা।

বিভিন্ন জাতের গরু (৮টি জাতের বৈশিষ্ট্য ও পরিচিতি বর্ণনা) উন্নত, দেশি জাতের গরু, উন্নত বিদেশি জাতের গরু, শাহীওয়াল, লাল সিন্ধি, হরিয়ানা, জার্সি, ফ্রিসিয়ান, আয়ারশায়ার, সংকর (ক্রোস) জাতের গরু ও তার সুবিধা অসুবিধা।

ভূমিকাঃ

▪ গরু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে আছে। আগেই বলা হয়েছে যে, এক সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে মোট গরুর সংখ্যা প্রায় সোয়া দুই কোটির চেয়েও বেশি।

▪ হালচাষে, পুষ্টি চাহিদা পুরণে, চামড়ার যোগানে, পরিবহন কিম্বা অন্যান্য ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা পরিচালনায় গরুর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোন ধর্মের লোকদের কাছে গরুর মর্যাদা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বিবেচিত হয়ে থাকে।

▪ ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ায় গরু পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আকৃতিগত ভাবে পৃথিবীর সকল গরুকে কেবল কাঁধের কুঁজের অবস্থা বিচারে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

(১) কুঁজওয়ালাঃ এসব গরু ভারত, সিংহল, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ মোটামুটি ভাবে এশিয়া মহাদেশে দেখা যায়।

(২) কুঁজবিহীনঃ এসব গরু ইউরোপ, আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। আদি বাসস্থান বা যে দেশে বা অঞ্চলে যে গরু পাওয়া যায় সেই বিচারে বাংলাদেশের গরুকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-দেশি উন্নত, বিদেশি ও সংকর জাতের গরু।

দেশি জাতের গরুঃ

▪ বাংলাদেশের অধিকাংশ গরুই দেশি জাতের। দেখতে বিভিন্ন রঙ ও আকারের দেশি গরুকে নির্দিষ্ট কোন গোত্র বা জাতে চিহ্নিত করা যায় না। দেশি গরুর ওজন বিদেশি গরুর তুলনায় অনেক কম।

▪ একটি বিদেশি উন্নত জাতের গরুর ওজন যেখানে ৪০০-৫০০ কেজি সেখানে একটি দেশি গরুর ওজন মাত্র ১৫০-২০০ কেজি।

▪ আমাদের দেশি গরুর আকৃতি ছোট এবং ওজন কম বিধায় তাদের দৈহিক শক্তি ও কর্মক্ষমতাও তুলনামূলক ভাবে কম। ফলে এদের দিয়ে হালচাষ, গাড়ী টানা, পরিবহন ইত্যাদি শক্তি নির্ভর কাজ ভালোভাবে করানো যায় না।

▪ বলদ বা ষাড় যেমন বেশি কাজ করতে পারেনা, তেমনি দেশি গাভী দুধও কম দেয়। একটি উন্নত বিদেশি গাভী যেখানে দৈনিক ৩০-৪০ লিটার দুধ দেয় সেখানে একটি দেশি গাভীর দৈনিক দুধের পরিমাণ মাত্র ১-২ লিটার।

▪ বাংলাদেশে নানান জাতের দেশি গরু দেখা যায়, সেগুলোকে কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এক প্রকার লাল জাতের গরু দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো লাল চাটগেঁয়ে গরু বলে পরিচিত।

▪ লাল চাটগেঁয়ে গরুর গায়ের রং হালকা লাল ও দেহের আকার ছোট। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দেশি জাতের গরুর তুলনায় লাল চাটগেঁয়ে গাভী দুধ বেশি দেয়। এ ছাড়াও এদেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন আকৃতির ও রঙ এর গরু দেখা যায় সেগুলোকে কোন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে পৃথক করা সম্ভব নয়।

▪ আসলেই লাল চাটগেঁয়ে গরুর কথা বাদ দিলে আমাদের কোন চিহ্নিত জাত গরু নেই। বাংলাদেশের গরুর বিশেষ কোন বর্ণনাও দেয়া সম্ভব হবে না। সত্যিকার কথা বলতে কি বাংলাদেশে পশু পালনে আমরা সরকারী ভাবে যতোটা হাক ডাক ছাড়ি ততোটা এগুতে পারিনি। কতোটা দায়ী আমরা কতোটা দায়ী বৈরি প্রাকৃতিক পরিবেশ।

▪ বাংলাদেশের ছোট ছোট জাতের গরুর একটি বিষয় খুব চমৎকার আর তা হলো এরা বছর বিয়ানো। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয় না। ছোট ছেলেমেয়ে, বাড়ির গৃহিনী থেকে বৃদ্ধ লোকটিও এদের মাঠে বা আংগিনায় বেঁধে আসতে পারে।

▪ দেশি গরু দুধ কম দেয়, তবে একটু যত্ন সহকারে খইল, ঘাস, ভূষি, চুনি সহকারে সুষম খাবার দিয়ে একটি গাভী থেকে ৩-৪ লিটার দুধ পাওয়া কোন অসম্ভব নয়। বাংলাদেশের চরাঞ্চলে একটা সময় আসে যখন পর্যাপ্ত ভালো কাঁচা ঘাস পাওয়া যায়। এমনি কোন চরাঞ্চলে গেলে হয়তো তার চেয়েও বেশি দুধ পাবার তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

▪ আমাদের দেশি গরুর লক্ষণ হলো এদের গায়ের রঙ সাদা, কালো, লাল, খয়েরী, কাজলা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার হয়। সচরাচর শিং তুলনামূলক ছোট আকারের ক্রমান্বয়ে সরু এবং সামনের দিকে এগিয়ে থাকে। পা চারটি ছোট ও বাঁশের খুটির মতো। দেহের লোম মোটা ও খসখসে। চামড়া বেশ শক্ত ও কিছুটা পাতলা। এসব চামড়া জুতা, সুটকেইস, ব্যাগ ইত্যাদি বানাবার উপযোগী।

See also  গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি

▪ দেশি গরু লালন পালনের ব্যাপারে বেশি টাকা ব্যয় হয় না। মাঠে ঘাটে চরিয়ে খাওয়াতে পারলেই হয়। একজন দরিদ্র কৃষক যে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে অক্ষম তার জন্যে দেশি গরুই ভালো। তাছাড়া প্রায় প্রতি বছরই একটা বাছুর পাওয়া যায়। এই বাছুরটি একটু যত্ন করে পালতে পারলেও তা বিক্রি করে মোটামুটি অর্থের জোগার হতে পারে।

▪ গ্রামের দিকে একবার তাকালে দেখা যাবে এসব দেশি গরু এক সময় ঘাসের কষ্টে, এক সময় বন্যার আঘাতে, এক সময় চারণভূমির অভাবের কষ্টে ইত্যাদি নানা রকম সমস্যার মাঝেও বেঁচে আছে কোন রকমে।

▪ দেশি গরু শক্তি নির্ভর কাজে দুর্বল এবং দুধ কম দেয় তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের বেশি ভাগ গরুই দেশি জাতের। কেননা, এগুলো মাঠে ঘাটে, রাস্তার পাশে, খাল বিলের পাড়ে বিচরন করে যে ঘাস খেয়ে থাকে তাতেই তাদের খাদ্য চাহিদার অনেকটা মিটাতে পারে।

▪ অন্যদিকে বিদেশি গরুকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত খাবার দিয়ে লালন পালন করতে হয়। দেশি গরু ঝড় বৃষ্টি বা যেকোন প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকতে পারে, বিদেশি গরু তা পারেনা। তাছাড়া দেশি গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি। কেননা আমাদের দেশের আবহাওয়ায় অনেকটা অযত্নে লালিত হতে হতে তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

▪ দেশি গরুর সামনে যে কোন খাবার দিলেই খাবে, অন্যদিকে বিদেশি গরুর সামনে বিশেষ ভাবে তৈরী করা উন্নত ধরণের খাবার না দিলে খেতে চায়না।

▪ লালন পালন ও খাবার দাবার ইত্যাদি বিষয়ে দেশি গরু তেমন কষ্টকর কোন কিছু নয়। তথাপি বেশি দুধ, মাংস ও বেশি পরিশ্রমের কাজ পাবার প্রত্যাশায় বিদেশি গরু পালার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনের পর দিন। পশুর কাজ, মাংস ও দুধের অর্থনৈতিক বিচারে দেশি গরুর লালন পালন তেমন একটা লাভজনক নয়।

উন্নত বিদেশি জাতের গরুঃ

উন্নত বিদেশি জাতের গরু মানে বাংলাদেশের বাইরের কোন দেশ বা অঞ্চল থেকে আমদানীকৃত জাত। এগুলো অন্য কোন দেশের খাটি জাত হতে পারে আবার সংকর জাতেরও হতে পারে। সকল বিদেশি জাতের গরুকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

(১) এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত তথা কুজঁবহুল বিদেশি গরু।

(২) ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি কৃত তথা কুঁজবিহীন গরু।

কুঁজবহুল বিদেশি গরুঃ

কুঁজবহুল বিদেশি গরুর আদি বাসস্থান ভারত, সিংহল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, চীন ইত্যাদি দেশ হলেও এদেশে প্রধানত : ভারত ও পাকিস্তানের গরুই আমদানী করা হয়েছে।

১. শাহীওয়াল (Shahiwal)

▪ বাংলাদেশে দেখা এমন কুঁজবহুল বিদেশি গরুর মধ্যে প্রথমেই আসে শাহীওয়াল গরুর কথা। পাঞ্জাব পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। শাহীওয়ালের আদিবাস পাঞ্জাব প্রদেশের মন্তগোমারি জেলা, তাই কেউ কেউ এ জাতের গরুকে ‘মন্তগোমারি’ বলে চিনে।

▪ শাহীওয়াল জাতের গরুর শরীর বেশ মোটা, পা খাটো, কপাল চওড়া, শিং বেটে ও মোটা, গলকম্বল বড় ও ঝুলানো, ষাড়ের কুঁজ গাভীর চেয়ে উঁচু ও মোটা লেজ লম্বা এবং গায়ের রং হালকা লাল। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাভীর ওজন ৩০০-৪০০ কেজি এবং ষাড়ের ওজন ৪০০- ৫০০ কেজি হয়ে থাকে।

▪ আমাদের দেশে সেরা দুধ উৎপাদনকারী হিসেবে এই জাতের গাভী পালিত হয়। দুধ উৎপাদনকারী খামারে শাহীওয়াল গাভী উন্নত পদ্ধতিতে অত্যন্ত যত্নসহকারে লালন পালন করা হয়।

২. লাল সিন্ধি (Red Sindhi)

▪ এ জাতের গরুর আদি বাসস্থান পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের করাচি ও হায়দরাবাদ অঞ্চল।

▪ এদের আকার মাঝারি ধরনের, রঙ টকটকে লাল; অনেক সময় কালচে লালও হয়।

▪ এদের শিং, গলকম্বল ও কুঁজ বড়।

▪ এ জাতের একটা গাভীর ওজন ৩০০ কেজি থেকে ৩৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৪০০ কেজি থেকে ৪৫০ কেজি পর্যন্ত হয়।

▪ শাহীওয়াল জাতের মতোই এরা দুধ উৎপাদন করতে পারে।

▪ এ জাতটিও বাংলাদেশের আবহাওয়ায় যথেষ্ট পরিমাণে দুধ দিয়ে থাকে।

▪ আকারে মাঝারি বলে এ জাতকে অনেকেই বেশ পছন্দ করে।

৩. হরিয়ানা (Hariana)

▪ দুধ উৎপাদন ও শ্রমের কাজ এ উভয় উদ্দেশ্যেই এ জাত উপযোগী।

▪ ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবে এর আদি বাসস্থান। বর্তমানে বাংলদেশ এবং পৃথিবীর অনেক দেশে এ জাত পালন করা হচ্ছে।

▪ ১৯৪৭ সালের আগেই এ দেশের তৎকালীন সরকার এ জাতকে এতদঞ্চলে প্রসার ঘটিয়েছিলেন।

▪ ১৯৪৭-এর পর ভারত থেকে এ জাত আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলেও কোনো কোনো অঞ্চলে এখনও দেখা যায়।

▪ এ জাতের বৈশিষ্ট্য এই যে এদের দেহ বড়, রঙ সাদা, শিং বড় এবং পা লম্বা।

See also  16 টি কারণে গরু খাবার খায় না: গরু খাবার না খাওয়ার কারণ? গরু কম খাওয়ার কারণ? গরুর খাবার না খেলে কি করনীয়?

▪ বাংলাদেশের নিচু জমি চাষ করার জন্য এরা উপযোগী।

▪ তা ছাড়া গাড়ি টানার জন্যও এরা উত্তম। এ জাত এক বিয়ানে প্রায় ১৩০০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।

কুঁজবিহীন বিদেশি গরুঃ

কুঁজবিহীন বিদেশি গরুর আদিবাস ইউরোপ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রকারভেদের দিক থেকে এদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। তবে বাংলাদেশে সচরাচর দেখা যায় কেবলমাত্র জার্সি, ফ্রিসিয়ান ও আয়ার শায়ার জাতের গরু।

১. জার্সি (Jersey)

বাংলাদেশে সরকারী ভাবেই জার্সি জাতের গরু আমদানীকৃত এবং বিভিন্ন খামারে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে লালিত পালিত এই জাতের গরুর আদিবাস ইউরোপের ইংলিশ চ্যানেলের মধ্যবর্তী জার্সি দ্বীপে। আসলে এটি ওখানে তৈরি একটি সংকর জাতের গরু। বহুদিন পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা করে বারবার ষাঁড় ও গাভীর মিলন ঘটিয়ে এই জাতটি তৈরি করা হয়েছে। জার্সি শীতপ্রধান দেশের গরু হলেও এরা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় লালন পালনের উপযোগী।

▪ গরম বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও এসব গরু টিকে থাকতে পারে।

▪ জার্সি গরু দুধ দেয় প্রচুর।

▪ এদের পালান অতি বৃহৎ এবং বাঁটগুলো পালানের চারদিকে ছড়ানো।

▪ এদের স্বভাব খুব ঠান্ডা।

▪ এরা নিরিবিলিতে থাকতে খুব ভালোবাসে। তবে ষাঁড়গুলো হয় ভয়ংকর ধরনের ছটফটে।

▪ এদের গায়ের রঙ নানা রকমের হয়। কালো, সাদা চক্কর অথবা হালকা লাল রঙের গরুই বেশি দেখা যায়।

▪ কালো রঙের মুখ। মুখের চারপাশে একটা হালকা আবরণী থাকে।

▪ চোখের মণি দুটো বেশ বড়। মণি দুটো চোখের কোটর থেকে যেন বেরিয়ে আসতে চায়।

▪ দুধেল গাই হিসাবে সবচেয়ে বেশী নাম এই জার্সি গরুর। দিনে ২৫ থেকে ৩০ লিটার দুধ দেয়। দুধের স্বাদ খুব ভালো।

▪ এই গরুর দুধে কঠিন পদার্থের ভাগ থাকে শতকরা ১৫ ভাগ আর স্নেহ পদার্থের ভাগ থাকে শতকরা ৫ ভাগের কিছু বেশি।

▪ বেশি পরিমাণে দুধ দেয় বলে দিনে তিনবার দোহন করতে হয়।

▪ ছোট ছোট করে কুঁচিয়ে দেওয়া খড়ের সাথে গুড় মিশিয়ে জাবনা করে দিলে এরা বেশ তৃপ্তির সাথে খায়।

▪ গুড়ের শরবৎ এদের প্রিয় খাদ্য।

▪ এরা গরম বেশি সহ্য করতে পারে না, আবার শীতও বেশী সহ্য করতে পারে না।

▪ মশা-মাছির উৎপাতে এরা খুবই বিরক্ত হয়।

▪ আজকাল এদেশের মাটিতে জার্সির পালন শুরু হয়েছে খুব।

▪ জার্সি গরুর সাথে এখানকার গরুর মিলন ঘটিয়ে আরও উন্নত জাতের গরু সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে।

২. ফ্রিসিয়ান

▪ এই জাতের গরু পালিত হয় হল্যান্ড দেশে। হল্যান্ডের ভাষায় এই গরুর নাম ‘ফ্রিসিয়ান’। তাই অনেকে ‘হলস্টিন ফ্রিজিয়ান’ও বলে থাকেন এই গরুকে।

▪ এদের গয়ের রঙ সাদা-কালো মেশানো। দেহের কালো রঙের ওপর থাকে গাঢ় কালো রঙের বিস্তৃত প্রলেপ।

▪ লেজের চুল হয় সাদা।

▪ ফ্রিসিয়ান গরুর দেহের গড়ন জবুথবু গোছের।

▪ স্বভাব খুব ঠান্ডা।

▪ এদের পেটটা বিরাট আকারের।

▪ পালান খুব বড়। পালানের চারপাশে ছড়িয়ে থাকে বাঁটগুলো।

▪ মুখটা সরু ও লম্বা।

▪ এই জাতের ষাঁড়গুলো হয় দুর্দান্ত স্বভাবের।

▪ এই জাতের গাভী নিরিবিলি পছন্দ করে খুব। কিন্তু ষাঁড়গুলো ঠিক তার বিপরীত।

▪ দুধেল গাই হিসাবে যথেষ্ট সুনাম আছে ফ্রিসিয়ান গাভীর। ৩০ থেকে ৩৫ লিটার বা তারও বেশি দুধ দেয়। দিনে তিনবার দোহন করতে হয়।

▪ দুধের স্বাদ খুব ভালো।

▪ বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই জার্সি গাভীর মতো ফ্রিসিয়ান গাভীও পালন করা হচ্ছে এবং জার্সি ও ফ্রিসিয়ান ষাঁড় দিয়ে এদেশীয় গরুর উন্নতির চেষ্টা চলছে।

৩. আয়ারশায়ার

▪ এই গরুর জাতটা তৈরি করা হয়েছিল স্কটল্যাণ্ডে। এরাও দুধ দেয় প্রচুর, তবে জার্সি বা ফ্রিসিয়ান গাভীর তুলনায় কম। স্কটল্যান্ডের অন্যান্য গাভীর তুলনায় নিঃসন্দেহে এরা যথেষ্ট উন্নত জাতের।

▪ এ জাতের গরুর গায়ের রঙ লালের ওপর সাদা বা সাদার ওপর লালের প্রলেপ দেওয়া।

▪ এদের পালান যথেষ্ট বড় এবং বাঁটগুলো সোজা। বাঁটগুলো ছড়ানো থাকে পালানের চারপাশে।

▪ যথেষ্ট কর্মক্ষম এই জাতের ষাঁড়গুলো। কঠিন পরিশ্রমের কাজে এরা খুব পটু।

▪ গাভীগুলো কিছুটা নিরীহ প্রকৃতির হলেও ষাঁড়গুলো উগ্র ও দুরন্ত স্বভাবের।

▪ আয়ারশায়ার গাভীর দুধে কঠিন পদার্থের ভাগ থাকে প্রায় শতকরা ১৩ ভাগ আর স্নেহ পদার্থের ভাগ থাকে ৪ ভাগ।

▪ এরা শুকনো খড় বা ঘাস খেলেও তৃণ খেতে ভালোবাসে খুব বেশি। প্রচুর জল খায়।

See also  গাভীর দুধ দোহন করার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কি? গাভী পালনের পদ্ধতি ও গাভী পালন প্রশিক্ষণ

▪ গুড়ের শরবৎ এদের প্রিয় খাদ্য।

সংকর (ক্রোস) জাতের গরুঃ

▪ বাংলাদেশের আবহাওয়ায় লালন পালনের সুবিধার্থে এবং অর্থনৈতিক দিক বিচার বিশ্লেষণ করে সরকারী ভাবে সংকর জাত সৃষ্টি করা হয়েছে। এরা সচরাচর বাপের গুন পায় ৫০ শতাংশ ও মায়ের গুন পায় ৫০ শতাংশ।

▪ দেশি জাতের সাথে বিদেশি জাতের বা দুটো পৃথক বিদেশি জাতের মিলন ঘটিয়ে সংকর জাতের সৃষ্টি করা হয়।

▪ ইউরোপীয় ফ্রিজিয়ান ও শাহীওয়াল (৫০: ৫০) সংকর জাতের গাভী বেশি দুধ দেয়। তাছাড়া এরা আমাদের আবহাওয়ায় টিকেও ভালো।

সংকর জাতের সুবিধা অসুবিধাঃ

সংকর জাতের গরুর সুবিধা অনেক। প্রধান প্রধান সুবিধাগুলো হলো—

১. সংকর জাতের গাভী ৩০ মাসের মধ্যেই গর্ভবতী হয়।

২.দুধ বেশি দেয়।

৩.স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বেশি।

8. এদেশের আবহাওয়া খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

সংকর জাতের গরুর প্রসার বৃদ্ধিঃ

▪ মানুষ এখনও দেশি গরু পালন করে। পাশাপাশি তারা এটাও লক্ষ্য করছে, বিদেশি গাভী দুধ দিচ্ছে অনেক বেশি।

▪ বিদেশি গাভী তারা যাকে বলতে চাইছে আসলে তা বিদেশি নয়। এরাই সংকর জাতের গরু।

▪ আজকাল অনেকেই সংকর জাতের গরু পোষার পক্ষপাতী। বিশেষ করে গাভী পুষতে চায় এই সংকর জাতের।

▪ নতুন প্রজন্মের যে গাভীটা পাওয়া গেল তার সাথে পরে উন্নত জাতের জার্সি বা ফ্রিসিয়ান ষাঁড় দিয়ে পাল খাওয়ানো হলে তাতে আর এক প্রজন্মের সৃষ্টি হবে। তাতে দুধের পরিমাণ তখন হয়তো দাঁড়াবে ১০/১২ লিটার। সংকর জাতের উন্নত গাভী সৃষ্টি করতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। তবে জাতটাকে একবার উন্নত করতে পারলে তাতে প্রচুর লাভ হয়।

▪ দেশি গরুর খাদ্যের প্রতি তেমন নজর রাখা হয় না। খড়-ভূষি আর ঘাস খেয়েই তারা দুধ দেয়। সংকার জাতের গরু আমিষ, খনিজ, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি উপযুক্ত পরিমাণে খাওয়াতে হয়। কথাটা প্রত্যেক পালনকারীকেই মনে রাখতে হবে।

বাংলাদেশের সংকর (ক্রস) জাতের গরুঃ

▪ দেশি জাতের সাথে উন্নত জাতের মিলন ঘটিয়ে সে জাত সৃষ্টি হয়, তাকেই সংকর জাত বলা হয়। সংকর জাতের গবাদিপশু দেশি আবহাওয়ায় অনুকূল পরিবেশে ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে।

▪ আমাদের দেশে ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে জার্সী, ফ্রিসিয়ান এসব উন্নতজাতের ষাঁড় আমদানি করা হয়েছে। দেশি অনুন্নত জাতের গরুর সাথে এসব আমদানিকৃত গরুর বীজের মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সংকর জাত সৃষ্টির জন্য এসব জাতি আমদানি করা হয়েছে।

▪ ইউরোপীয় ফ্রিসিয়ান ও শাহীওয়ালের আধাআধি (৫০: ৫০) সংকর জাতের গাভী বেশ ভালো দুধ দেয়। এরা উষ্ণ আবহাওয়া খাপ খাইয়ে নিতে পারে। দেশি জাতের গাভী ও সংকর জাতের গাভীর তুলনা সংক্ষেপে নিচে প্রদত্ত হল।

সংকর (ক্রস) জাতের গাভীর প্রাপ্তিস্থানঃ

▪ পশু সম্পদ বিভাগের উদ্যোগের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব ক’টি জেলায়ই কমবেশি সংকর জাতের গাভী দেখা যায়।

▪ সংকর জাতের ভালো গাভী সংগ্রহের জন্য পশু সম্পদ বিভাগের জেলা কৃত্রিম প্রজনন অফিসের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

▪ সংকর জাতের গাভী প্রধানত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, পাবনা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রা, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, রংপুর, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও ইত্যাদি জেলায় পাওয়া যায়।

সংকর (ক্রোস) জাতের অসুবিধাঃ

১. খাদ্য কম খেলেও সুষম খাদ্যের মাত্রা বাড়াতে হবে।

২. ঠাণ্ডা তরল খাদ্য অর্থাৎ শরবৎ জাতীয় পদার্থ নিয়মিত খাওয়াতে হবে।

৩. নিয়মিত বিশ্রাম করার সুযোগ দিতে হবে।

৪.থাকার জন্য স্থানীয় আবহাওয়ায় নিজেরা খাপ খাইয়ে নিলেও বেশি গরম বোধ করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫.স্বাস্থ্য ও চালনের ওপর প্রখর দৃষ্টি রাখতে হবে।

৬ দেশি গরুর চিকিৎসা করার জন্য স্থানীয় ডাক্তার মিললেও এই জাতীয় গরুর চিকিৎসা ততটা সহজ ব্যাপার নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!