Skip to content

 

বিভিন্ন জাতের মহিষ (4টি জাতের বৈশিষ্ট্য ও পরিচিতি বর্ণনা) বাংলাদেশে মহিষ, দেশি মহিষ, বিদেশি মহিষ, মূরা জাতের মহিষ, নাগপুরী জাতের মহিষ, নীলি জাতের মহিষ।

বিভিন্ন জাতের মহিষ (4টি জাতের বৈশিষ্ট্য ও পরিচিতি বর্ণনা) বাংলাদেশে মহিষ, দেশি মহিষ, বিদেশি মহিষ, মূরা জাতের মহিষ, নাগপুরী জাতের মহিষ, নীলি জাতের মহিষ।

ভূমিকাঃ

▪ পশুর প্রকারভেদ এর ধারণাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

▪ কোন কোন জাতের পশু আছে যাদের ব্যবস্থাপনা খুবই কষ্টসাধ্য, কোন কোন পশু আছে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম, কোন কোন পশু আছে যাদের লালন পালন ব্যয় খুবই বেশি।

▪ আবার কোন কোন জাতের পশু আছে যাদের ব্যবস্থাপনা সহজ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং লালন পালন ব্যয়ও কম।

▪ কোন কোন পশু আছে যাদের কর্মক্ষমতা কম আবার কোন কোন পশুর কর্মক্ষমতা বেশি।

▪ একই ভাবে কোন কোন পশু আছে যাদের মাংস ও দুধ কম হয় আবার কোন কোন পশু আছে যাদের মাংস ও দুধের পরিমান অনেক বেশি হয়।

▪ পশুর প্রকারভেদ সম্বন্ধে সঠিক ধারণা না থাকলে এবং ভালো জাতের পশু নির্বাচন না করা গেলে পশু পালনে আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায় না।

▪ তাই পশু পালনের ক্ষেত্রে পশুর শ্রেণীবিভাগ সম্বন্ধে বাস্তব ও কার্যকর ধারণা থাকা বাঞ্চনীয়।

▪ পশুর এই প্রকারভেদ নানা দিক থেকে হতে পারে। যে অঞ্চলের পশু সেই অঞ্চলের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ হতে পারে, কর্মক্ষমতা ও কাজের ধরণ অনুসারে হতে পারে, দেহের গঠন অনুসারে হতে পারে, মাংস ও দুধ উৎপাদনের পরিমাণগত ভাবে হতে পারে।

▪ পশুর প্রকারভেদ করতে হলে প্রথমেই কোন কোন পশু আলোচনায় আনা হবে তা নির্ধারন করে নিতে হবে। কেননা বিচিত্র রকমের বিভিন্ন নামের পশু আছে আমাদের চারপাশের পরিবেশে।

▪ শান্ত থেকে উগ্র, তৃণভোগী থেকে মাংসভোজী, গৃহপালিত থেকে বন্য ইত্যাদি বহুবিধ পশুর কথা চলে আসে। আসলে তা সম্ভব নয় এবং আমাদের উদ্দেশ্যও নয়।

▪ যে সকল পশুর সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সম্পর্ক আছে, যে সকল পশুর সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক ও জাতীয় ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে, যে সকল পশুর সাথে আমাদের পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জড়িয়ে আছে তেমনি দুচারটি পশুর পরিচিতি নিয়েই আলোচনা করা বাঞ্চনীয়।

▪ নিম্নে বিভিন্ন জাতের মহিষ পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।

বাংলাদেশে মহিষঃ

▪ মহিষ গরুর চেয়ে বেশি শক্তিশালী ও কর্মক্ষম হলেও গরুর মতো এতো ব্যাপক হারে বিশ্বের কোথাও মহিষ পালিত হয় না। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াতে মহিষ নেই।

▪ মহিষের অস্তিত্ব গৃহপালিত ও বন্য দু প্রকারের পরিবেশেই দেখা যায়।

▪ বন্য মহিষ কোন কোন ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে থাকে। বন্য মহিষের দেহের আকার ও শিং বেশ বড়। চেহারা ও শিং এর কায়দাই এদের বিশেষত্ব। শিং আড়াআড়ি করে বাধলে ত্রিভুজের আকার নেয়। তবে অন্য পোষা প্রাণীর মতো বন্য মহিষকেও পোষ মানানো যেতে পারে।

▪ গৃহপালিত পোষা মহিষের স্বভাব ও চেহারা বেশ নম্র ধরণের। ভারত ও বাংলাদেশের বনাঞ্চলে এমন বন্য মহিষ আছে যাদের স্বভাব খুবই ভয়ংকর। পুরুষ মহিষ অনেক ক্ষেত্রে বাঘ, ভাল্লুক, হাতি ও কুমীরের চেয়েও ভয়ংকর হতে দেখা যায়।

▪ মহিষ সচরাচর চীন, থাইল্যাণ্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বন্য এবং পোষা দুই ভাবেই পাওয়া যায়। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে প্রায় ৬-৭ জাতের মহিষ আছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তান থেকে মুরা, নীলি, রাভী ইত্যাদি উন্নত জাতের পোষা মহিষ আমদানী করা হয়েছে।

▪ মহিষ দুধের জন্যে, চাষের জন্যে, গাড়ী টানার জন্যে ছোট ছোট শিল্প কারখানার কাজে গরুর সমান বা গরুর চেয়ে অধিক উপযোগী। তা সত্ত্বেও মহিষ পালনের ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে গৃহীত উদ্যোগ খুবই কম। দেশি ও উন্নত বিদেশি মহিষ পোষা হয়।

দেশি মহিষঃ

▪ বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কিছু না কিছু মহিষ দেখা যায়। তবে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহীসহ দেশের উত্তরাঞ্চল; সিলেট, ময়মনসিংহ, টাংগাইল ও সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে মহিষ অধিক সংখ্যায় লালন পালন করা হয়। এদেশের নির্দিষ্ট কোন জাত নেই, তবু সারাদেশেই কম বেশি দেশি আকৃতির মহিষই বেশি পরিলক্ষিত হয়।

▪ এদের গায়ের রঙ কালচে এবং শিং লম্বা আকৃতির। দেশি মহিষ খুব কর্মঠ। পরিবহন ও হালচাষেই বেশি ব্যবহৃত হয়। এরা আকারে ছোট ও দুধ কম দেয়। এরা নদী ও খাল বিলের কাঁদামাটিতে গা ডুবিয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করে।

বিদেশি মহিষঃ

▪ ভারত ও পাকিস্তান থেকে কতিপয় উন্নত জাতের মহিষ এদেশে আমদানী করা হয়েছে। আমদানীকৃত মহিষের মধ্যে যেগুলো আমাদের পরিবেশে টিকে আছে নিম্নে তাদের বর্ণনা দেয়া হলো।

১. মূরা জাতের মহিষ

▪ মূরা জাতীয় মহিষের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে দক্ষিণ পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দিল্লীর চারিভিতে | সবচেয়ে ভালো জাতের মূরা মহিষ পাওয়া যায় রোটাক, হিসার, ঝিন্দ নবা, এবং পাতিয়ালায়।

▪ ঘি-এর জন্য এরা বিখ্যাত, তাই আজ এরা ভারতের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এরা বছরে ১৪০০ থেকে ১৮০০ লিটার দুধ দেয়। শতকরা স্নেহপদার্থ প্রায় ৭-এর কাছাকাছি।

▪ অন্যান্য মহিষের তুলনায় মাথা ছোট। কপাল কিছুটা উঁচু, ছোট শিং চেপ্টা। জাফরাবাদী মহিষের শিং যেমন বেঁকে কানের দু পাশে বাঁক নিয়েছে এর আবার কানের উপরে বাঁক তৈরি করেছে। মাংসল বিরাট দেহ, বিশেষ করে পিছনের দিকটা। বিরাট পালান এবং টেস্ট টিউবের (Test tube) মতো বাঁট চারটে। গায়ের রং কালো, কেবল লেজের গোড়া সাদা বাংলাদেশেও পালিত হয়।

২. নাগপুরী জাতের মহিষ

▪ মধ্য এবং দক্ষিণ ভারতে মোষ বলদগুলি বোঝা বইবার কাজে খুব পোক্ত! যদিও কাজে- কর্মে ধীর স্থির।

▪ গাই-মহিষের দিনে ৫-৮ লিটার দুধ দেয়। বাংলাদেশের কোথাও কোথাও পালিত হয়।

▪ লম্বা ছুঁচালো মাথা। চওড়া কপাল। বিরাট সরু শিং জোড়া একেবারে পিঠ পর্যন্ত গিয়ে উঠেছে। পেট লম্বা এবং গভীর, হাল্কা ধরনের পা ও ছোট লেজ।

৩. নীলি জাতের মহিষ

▪ পাকিস্তানের মণ্টোগোমারী জেলা এবং ফিরোজপুর এ জাতীয় মহিষের আদি বাসভূমি। এককালে ওরা ওখানে কেলি করত।

▪ বলদগুলি ভালো গাড়ি টানতে পারে। গাই দুশো পঞ্চাশ দিনে ১৬০০ লিটার দুধ দেয়।

▪ গায়ের রং কালো হলেও লেজের চুলে, পায়ে, মুখে ও কপালে সাদা দাগ আছে।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!