স্কুল-কলেজে কিংবা বিভিন্ন অফিসে বা সংস্থায় প্রতিষ্ঠান প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অনুরোধ জানিয়ে পত্র লেখার প্রয়োজন হয়। এ ধরনের পত্রকে দরখাস্ত বা আবেদনপত্র বলে। আবেদনপত্রের আকার সাধারণত সংক্ষিপ্ত হয়। সেখানে মূল প্রসঙ্গটি যথাযথভাবে উপস্থাপন করাটাই লক্ষ্য। এ ধরনের পত্রে অনেক সময়ে প্রমাণ স্বরূপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অনুলিপি সংযুক্ত করা হয়।
নিচে ব্যাংক ঋণের জন্যে আবেদন পত্রের নমুনা দেখানো হলো।
আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
ব্যাংক ঋণের জন্যে আবেদন পত্রঃ
৩০ আগস্ট ২০২১
ব্যবস্থাপক
সোনালী ব্যাংক লি.
কালীগঞ্জ শাখা, ঝিনাইদহ
বিষয়: ব্যবসায়িক ঋণ গ্রহণের জন্য আবেদন।
প্রিয় মহোদয়
আপনার ব্যাংকে আমাদের সঞ্চয়ী ও চলতি উভয় প্রকার হিসাব খোলা আছে। আপনি হয়তো অবগত যে, আমাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জননী ট্রেডার্স দীর্ঘদিন ধরে আপনাদের ব্যাংকে সুনামের সাথে লেনদেন পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি আমরা আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে আনুমানিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা ব্যবসায়িক ঋণ গ্রহণ করা প্রয়োজন। উক্ত ঋণের মূলধন এবং সুদের অর্থ আমরা মোট ৩৬ কিস্তিতে ৩ বছরে পরিশোধ করতে চাই। ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা আপনাদের ব্যাংকের সকল শর্ত মেনে চলব। উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে আমরা আপনাদের ব্যাংক থেকে ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা ঋণ নিই এবং তা যথাসময়ে পরিশোধ করি।
আমাদের চাহিদা মাফিক ঋণ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি।
আপনার বিশ্বস্ত
(স্বাক্ষর)
অনীক রহমান
স্বত্বাধিকারী, মেসার্স জননী ট্রেডার্স
কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ
সোনালী ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব নংঃ ১১৭৭১৮
চলতি হিসাব নংঃ ১২৫২০১
সংযুক্তি:
১. ব্যবসা সম্প্রসারণের কর্মপরিকল্পনা
২. পূর্বের ঋণ পরিশোধের প্রমাণপত্র
একটি আবেদনপত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সমূহঃ
- আবেদনের তারিখ।
- প্রাপকের নাম পদবী ও ঠিকানা।
- আবেদনের বিষয়।
- সম্মান সূচক শব্দ ( জনাব- জনাব, স্যার-ম্যাডাম)।
- আবেদন পত্রের বিষয়টির গঠনমূলক বর্ণনা।
- আবেদনকারীর নাম পদবী ও ঠিকানা।
আবেদন পত্র লেখার ধাপ সমূহঃ
আবেদন পত্র বা দরখাস্ত একটি formal বা আনুষ্ঠানিক পত্র। এজন্য এটি লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হয়। কেননা সুনির্দির্ষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ না করলে , অনেকাংশেই আবেদন করা এই পত্রটি অকার্যকর বা বাতিল হিসেবে গণ্য হয়ে যাতে পারে।
- সবার প্রথমে, বাম পাশে তারিখ লিখতে হয়।
- এরপর কর্তৃপক্ষ বা প্রাপকের নাম, পদবী এবং ঠিকানা লিখতে হবে।
- যার নিচে যাবে আবেদন এর বিষয় লিখতে হবে।
- বিষয় লেখার নিচে সম্ভাষণ, (মহোদয়, জনাব, মহাশয়) লিখতে হয়।
- এরপর আবেদনপত্রটির মূল অংশ, এখানে বিষয়সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত আকারের গঠনমূলক বর্ণনা করতে হয়।
- আপনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা লেখার পর নিচে বিনীত/নিবেদক কথাটি লিখতে হয়।
- এরপর প্রেরক বা আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
- সর্বশেষে আবেদনপত্রটি একটি সুন্দর খামের মধ্যে রেখে কর্তৃপক্ষ বা প্রাপকের নিকট পাঠাতে হয়।
আবেদন পত্র লেখার নিয়ম সমূহঃ
বাড়িতে যখন আমরা কোনো জিনিশের জন্য আবদার করে থাকি এটা যদি যুক্তিযুক্ত হয় এবং উপস্থাপন ভালো হয় তাহলে আমরা খুব সহজেই আমাদের পছন্দের জিনিসটি পেয়ে যাই। ঠিক তেমনি আবেদনের ভাষা যদি মার্জিত এবং বিষয়বস্তু যুক্তিযুক্ত হয় তাহলেই আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হবে।
- সাধারণত আবেদন লেখার জন্য A4 সাইজের কাগজ হলে ভালো হয়।
- আবেদন লেখার জন্য বামপাশে ০.৫” উপরে ১” মার্জিন রাখলে ভালো হবে।
- প্রথমে যেদিন আবেদন করবে সেই তারিখ লিখতে হবে।
- বরাবর লিখে শুরু করতে হবে
- এরপর আবেদনএর প্রাপকের নাম পদবী ঠিকানা লিখতে হবে।
- পঞ্চম ধাপে আবেদনের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হবে। কারন একটি আবেদনপত্রের মূল বিষয়।
- বিষয়ে লেখার পর তাকে সম্বোধন করতে হবে। সাধারণত জনাব/ জনাবা/ স্যার ইত্যাদিতে সম্বোধন করে লেখা হয়। বাংলা আবেদনের জন্য জনাব এবং ইংরেজিতে লেখার জন্য সার হিসেবে সম্বোধন করায় অধিকতর শ্রেয়।
- এরপর সম্মানের সহিত আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান সাথে আপনার কি রকম সম্পর্ক সেটা উল্লেখ করে আবেদন এর মূল বিষয় কারন সহ লিখবেন।
- আবার সম্মানের সহিত লেখা শেষ করবেন।
- এরপর বিনীত নিবেদক লিখে আবেদনকারী অর্থাৎ আপনার নাম, ঠিকানা লিখে সমাপ্ত করবেন।
- লেখা শেষ হলে সম্পূর্ণ আবেদনটি আবার চেক করে নিবেন। তারপর একটা খামে ভরে প্রাপকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিবেন।