Skip to content

 

বড় গরুর খামার পরিকল্পনা: পণ্য বিক্রি কিভাবে, কোথায়, মূল্য নির্ধারণ, বাজারজাত করণ, অন্যান্য বিবেচ্য বিষয় সমূহ

বাণিজ্যিকভাবে বড় গরুর খামার পরিকল্পনা: গরুর, মাংস ও দুধ বাজারজাতকরণ বা বিক্রির ক্ষেত্রে গরুর খামার ব্যাবস্থাপনা কেমন হবে? ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে গরু খামার করার নিয়ম বা গরুর খামার করার পদ্ধতি এবং গরুর খামার ব্যবসা পদ্ধতি।

বাণিজ্যিকভাবে বড় গরুর খামার পরিকল্পনা: গরুর, মাংস ও দুধ বাজারজাতকরণ বা বিক্রির ক্ষেত্রে গরুর খামার ব্যাবস্থাপনা কেমন হবে? ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে গরু খামার করার নিয়ম বা গরুর খামার করার পদ্ধতি এবং গরুর খামার ব্যবসা পদ্ধতি।

বাণিজ্যিক বড় গরুর খামার এর ঝুকি সমূহ

সকল প্রকার ব্যবসাতেই কিছ না কিছু ঝুকি থাকে। সে হিসাবে ব্যবসা ভিত্তিক প্রাণিসম্পদ খামার করতেও কিছু  ঝুকি অছে। এই ঝুকির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে –

⮚ প্রাণির বিভিন্ন প্রকার রোগ, যা খামারের উৎপাদন ব্যহতসহ প্রাণী মারাও যেতে পারে। এ সকল রোগের  মধ্যে সংক্রামক ও কৃমি জাতীয় রোগ এর ঝুকি বেশী থাকে।

⮚ প্রাণীর পুষ্টিকর খাদ্যের উপর নির্ভর করছে প্রত্যাশিত উৎপাদন। হঠাৎ প্রাণীর খাদ্যের পরিবর্তন করা হলে  এবং প্রাণীর খাদ্যে পুষ্টির মান সঠিক না হলে খামারের উৎপাদন কমে যাবে।

 

বাণিজ্যিক বড় গরুর খামার উল্লেখিত ঝুকি থেকে পরিত্রাণের উপায় সমূহ

⮚ সাধারণত খামারের পরিবেশ সুরক্ষা না থাকলে সহজেই প্রাণীর দেহে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।  তাই খামারের পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করতে হবে।

⮚ খামারের প্রতিটি প্রাণিকে নিয়মিত টিকা প্রদান ও কৃমিনাশক প্রয়োগের ব্যবস্থ্যা করতে হবে।

⮚ খামারের বাসস্থ্যান/আঙ্গিনা দৈনিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

⮚ প্রাণির খাবার পাত্র ও পানির পাত্র অবশ্যই দৈনিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার করতে হবে।

⮚ প্রাণিকে প্রত্যহ পরিষ্কার পানি, টাটকা খাদ্য খাওয়াতে হবে।

⮚ প্রাণির খাদ্য উপাদান ভেজালমুক্ত ও গুণগত মানের হতে হবে।

 

পণ্য বিপণন বা বাজারজাতকরণ

এটি হচ্ছে একটি বাণিজ্যিক প্রক্রিয়াএবং এটি বড় গরুর খামার পরিকল্পনা এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহক/ভোক্তার চাহিদা মত  খামারে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য লাভের/মুনাফার সহিত বিক্রি করা হয়। কৃষিজ পণ্য বিাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ার  মাধ্যমে বক্রি করলে সর্বোচ্চ লাভ পাওয়ার সুযোগ হয়। বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় নিম্নের বিষয়গুলো  অন্তর্ভূক্ত/বিবেচনা করতে হয়:

⮚ বাজার/ভোক্তার চাহিদা মত উচ্চমূল্যের কৃষিজ পণ্য যেমনঃ মাংস, দুধ ইত্যাদি নির্বাচন করা;

⮚ ব্যবসায়ী সনাক্ত করা, বুঝতে হবে ক্রেতা কি চায়, কিভাবে চায়, সেইভাবে পণ্য সরবরাহ করা;

⮚ পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা যেমন

⮚ পণ্যের মধ্যে কোন প্রকার ভেজাল না থাকা ইত্যাদি;

⮚ পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন ও মূল্য যোগ করার জন্য পণ্য উৎপাদনে টেকসই উন্নত প্রযুক্তি  ব্যবহার করা;

⮚ খামার থেকে সঠিক নিয়মে পণ্য সংগ্রহ করে জীবাণু মুক্ত ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা;

⮚ বাজারজাতকরণ খরচ কমানো এবং ন্যায্য মূল্যে বিক্রির জন্য দলগতভাবে বাজারজাত করা;

⮚ লাভজনক বাজারজাতকরণ টেকসই করা, ভাল মানের পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে  বিশ্বাস সৃষ্টি করা, নিশ্চিত করতে হবে যে ক্রেতা ঠকছে না এবং টাকার বিনিময়ে ভাল পণ্য পাচ্ছে।

 

একজন খামারীকে তার খামারে উৎপাদিত গরু, দুধ, মাংস বাজারজাতকরণের জন্য অবশ্যই একটি পরিকল্পনা করা  উচিত।

বড় গরুর খামার পরিকল্পনার জন্য নিম্নের তথ্যগুলো জানা উচিত :

– পণ্য সংগ্রহের সময় প্রত্যাশিত মূল্য।

– কোথায় বিক্রি করবে।

– পণ্য সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থ্যাপনা কার্যক্রম বাছাই, গ্রেডিং এবং প্যাকেজিং।

– পরিবহন কিভাবে করা হবে।

– কে বিক্রয় করবে – খামারীগণ নিজেরাই ব্যবসায়ী।

– বাজারজাতকরণের সময় ”উচ্চ এবং কম” মূল্যের সময়।

– বাজারজাতকরণের খরচ – পণ্য সংগ্রহ, প্যাকেজিং, পরিবহন, কমিশন, বিক্রয়কারীর মজুরি।

 

বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা তৈরীর উপাদান নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

– নির্বাচিত কৃষিজ পণ্য বাজার সাইজ বা চাহিদার পরিমাণ;

– প্রত্যাশিত মোট আয়, খরচ এবং নীট লাভ;

– বাজারজাতকরণ কৌশল;

– ঝুকি কমানোর কৌশল;

 

বাণিজ্যিক বড় গরুর খামার এর প্রধান প্রধান বাজারজাতকরণ চ্যানেলসমূহ নিম্নে ব্যাখ্যা দেয়া হলো

 

১. খামারে বিক্রি

উৎপাদিত পণ্য খামার হতে সরাসরি ক্রেতার নিকট বিক্রি করা। ফলে ক্রেতাগণ (ফঁড়িয়া) সরাসরি খামারে চলে  আসেন ক্রয়ের জন্য।

সুবিধাসমূহ:

– পরিবহন খরচ নাই।

– বাজারে যেতে হয় না।

– খামারেই বিক্রি করায় সময় কম লাগে এবং খরচ কম হয়।

অসুবিধাসমূহ:

– ক্রেতা কম বা বিভিন্ন শ্রেণীর ক্রেতা না থাকায় খামারীদের উৎপাদিত পণ্য খুবই কম দামে বিক্রি করতে  হয়।

– উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য খামারের যোগাযোগ ভাল না হতে পারে।

– স্থ্যানীয় বাজারে চাহিদা মিটানোর পরে খামারীদেরকে দুরে কোন বাজারে বিক্রি করতে হয়।

 

২. শহরের বাজারে বিক্রি করা

উচ্চ মূল্যের এবং বিশাল পরিমান চাহিদা আছে এ ধরনের বাজার যেমন রাজধানী ঢাকা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে  পাইকারী বাজারসমূহ, সুপার মার্কেট চেইন, জণাকীর্ণ স্পটে,জেলার পৌর বাজারসমূহে গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চ  মূল্যের কৃষিজ পণ্য বিক্রি করে ঈওএ সদস্যগণ লাভবান হতে পারেন।

সুবিধাসমূহ:

– স্বল্প সময়ের মধ্যে ঈওএ সদস্যগণ অনেক পরিমাণ কৃষিজ পণ্য উচ্চ মূল্যে বিক্রির সুযোগ গ্রহণ করতে  পারেন।

– শহরের বাজারসমূহে কৃষিজ পণ্যের চাহিদা পরিমানের দিক দিয়ে অনেক বেশী হয়। – বাজারজাতকরণের জন্য ঈওএ-কে সুনামধারী কমিশন এজেন্ট/আড়ৎদার সেবাসমুহ কাজে লাগাতে পারে। ∙ অসুবিধাসমূহ :-

– সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাজার তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাহা প্রায়ই সহজপ্রাপ্য নাও হতে পারে। – মূল্যের উঠা-নামা হতে পারে।

– উৎপাদন এলাকা হতে শহরের বাজার অনেক দূরে থাকে।

– পণ্যের গুণগতমান, প্যাকেজিং এবং উপস্থ্যাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ক্ষুদ্র খামারীদের কাছে এ বিষয়গুলো নতুন। – শহরে বাজারজাতকরণের খরচ, পরিবহণ, কমিশন ইত্যাদি বহন করার সামর্থ কম থাকে।

 

৩. স্থ্যানীয় পাইকার ও রপ্তানীকারকদের নিকট বিক্রি

একটি এলাকার উল্লেখিত ক্রেতাগণ/ব্যবসায়ীগণ খামারীদের নিকট থেকে কৃষিজ পণ্য সরাসরি ক্রয়ে আগ্রহ প্রকাশ  করে থাকেন। এ ধরণের ক্রেতাগণ ক্রয়ের পরে বড় প্রতিষ্ঠানের নিকট বা বড় রপ্তানীকারক বা শহরে বাজারে বিক্রি  করেন। অনেক ক্ষেত্রে কৃষিজ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।

সুবিধাসমূহ:

– কৃষিজ পণ্য স্থ্যানীয় পর্যায়ে সরবরাহ করা হয় বিধায় পরিবহণ খরচ কম হয়।

– অনেক পরিমাণ পণ্য বিক্রির সুযোগ থাকে।

– একটি বা অল্প কয়েকটি কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করতে হয়।

অসুবিধাসমূহ:

– ভোক্তার নিকট সরাসরি বিক্রির চেয়ে দাম কম পাওয়া যাবে, যেহেতু ডিলার/প্যাকার লাভ নিবে।

– কম মূল্য দেয়ার আরও কারণ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কৃষিজ পণ্য পরিবহণ ও অন্যান্য খরচ খামারীদের কাছ  থেকে তুলে নেয়।

 

৪. বড় প্রতিষ্ঠানের নিকট সরাসরি বিক্রি করা

নিম্নে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের নিকট কৃষিজ পণ্য বাজারজাত করতে পারেন:

– প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেতা যেমন পুলিশ বিভাগ, সেনা ক্যাম্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল। – হোটেল এবং রিসোর্ট।

– রেষ্টুরেন্ট।

– অতিথি ভবন।

– সুপার মার্কেট।

– ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর।

সুবিধাসমূহঃ

– খামারে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণের নিশ্চিত সুযোগ থাকে।

– অনেক পরিমাণ কৃষি পণ্য একত্রে বিক্রি সুতরাং পরিবহণ ব্যয় কম হয়।

– সচরাচর একটি সঙ্গতিপূর্ণ চাহিদা রক্ষা করে।

অসুবিধাসমূহঃ

– একজন খামারী সারা বৎসরের চাহিদা মিটাতে নাও পারতে পারে।

– বিভিন্ন ধরণের কৃষিজ পণ্যের চাহিদা থাকতে পারে, কিšদ ক্রেতা একজন সরবরাহকারীর মাধ্যমে পণ্য ক্রয়  পছন্দ করে, এতে তার নিকট কম ঝামেলা ও সহজ মনে হতে পারে।

– চাহিদামত ভাল গুণগত মানসম্পন্ন কৃষিজ পণ্য সরবরাহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্ছ।

– বাজারজাতকরণ কার্যক্রম খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে ব্যহত হতে পারে, ফলে কৃষিজ পণ্য অবিক্রীত  থাকবে এবং খামারী লোকসানের মোকাবিলা করবে।

 

কৃষিজ পণ্যের মূল্য যে সকল বিষয়ের উপর নির্ভর করে

খামারী তার কৃষিজ পণ্য বিক্রি করে যে দাম পায় তা মূলত সরবরাহ ও চাহিদা দ্বারা প্রভাবিত হয়। পণ্যের ভাল  মূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কারণসমূহ হলো :-

ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা :-

একজন ক্রেতা বাজারে থাকলে দাম কম প্রদান করতে চাইবে। বাজারে অনেক সংখ্যক ক্রেতা থাকলে  তাদের মধ্যে পণ্য ক্রয়ের প্রতিযোগিতা হবে ফলে দাম বেশী পাওয়া যাবে এবং বেশী লাভ হবে।

বাজার :-

একজন খামারী বাজার মূল্য এবং বাজারে ক্রেতার চাহিদার তথ্য না জানলে পণ্য বিক্রির ব্যাপারে দর  কষাকষি করতে সামর্থ্য হবে না।

পণ্যের গুণাগুণ :-

ক্রেতাগণ গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের জন্য ভাল দাম প্রদান করেন। যদি বেশীরভাগ খামারীর পণ্য  নিম্নমানের হয় তবে ব্যবসায়ীদের জন্য ভালমানের পণ্য বাজারজাত করা কঠিন হয়।

পরিবহন খরচ :-

যে সব পণ্যের পরিবহন খরচ বেশী সে সব পণ্যের জন্য ব্যবসায়ীরা কম দাম প্রদান করে। যেমন- পণ্যের  পরিমাণ কম, বাজার হতে অনেক দূরে এবং রাস্তা খারাপ, এ সব কারণসমূহের জন্য পণ্যের দাম কম দেয়।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!