ভালো ছাগলের মাংস চেনার উপায়ঃ
১. মাংসের মধ্যে রক্তের শিরা-উপশিরা পরীক্ষা করলে যদি রক্তশূন্য থাকে তবে তা ভালো মাংস। মৃত প্রাণীর এ সমস্ত শিরা-উপশিরা জমাট রক্তে পরিপূর্ণ থাকে। তাছাড়া মাংসের মধ্যেও অনেক সময় জমাট রক্ত পাওয়া যায়।
২. মাংসের রঙ রক্তশূন্য ও সাদা ধরনের হবে। অসুস্থ ও মৃত প্রাণীর মাংস রক্ত বর্ণের |
৩. চর্বি অত্যন্ত তাজা হবে। ভেড়ার মাংসের আঁশের মধ্যে থাকে চর্বি কিন্তু ছাগলের মাংসের চর্বি উপরে আলাদাভাবে থাকে। মৃত বা অসুস্থ প্রাণীর চর্বি তাড়াতাড়ি নষ্ট হতে শুরু করে এবং দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
৪. মাংসের মধ্যে কোনো প্রকার অস্বাভাবিক গন্ধ থাকবে না।
৫. মাংস তাজা এবং উজ্জ্বল হবে।
৬. লিভারের (কলিজা) রঙ উজ্জ্বল মেটে রঙের হবে এবং কোনো প্রকার ক্ষত থাকবে না।
বাংলাদেশে ছাগলের মাংসঃ
▪ ছাগল একটি লাভজনক জীব। আমরা ছাগল পালন করি প্রধানত মাংস উৎপাদনের জন্য।
▪ বিদেশে যে-সকল খামারে ছাগলের দুধ উৎপাদন করা হয় সে সমস্ত খামারে পুরুষ বাচ্চা এবং বাছাইকৃত বাতিল স্ত্রী বাচ্চাসমূহ ৫ হতে ১৫ সপ্তাহ বয়স হলেই মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
▪ উন্নত দেশসমূহের ছাগলের মাংসের চাহিদা কম এবং দামও সস্তা।
▪ অল্প বয়স্ক ছাগলের এ সমস্ত মাংস একটু আঠালো ধরণের এবং মুরগির মাংসের মতো নরম সুস্বাদু ও বিশেষ এক প্রকার সুন্দর ঘ্রাণযুক্ত।
▪ বিভিন্ন প্রকার উপাদেয় খাদ্য প্রস্তুত করতে ছাগলের বাচ্ছার মাংস ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বেশির ভাগ ছাগলের মাংস ধনীর আমিষ খাদ্য হিসেবে পরিগণিত।
▪ অবশ্য আমাদের দেশে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে কসাই খানার সুবিধে নেই সেখানে হঠাৎ করে কোনো অনুষ্ঠানে বা বিশেষ উৎসবে বাড়িতে ছাগল বা অন্যান্য গবাদিপশু জবেহ করা হয়। এ সমস্ত ছাগলের বয়স ও বছর পর্যন্ত হয় এবং চর্বিতে সমস্ত দেহ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের খাদ্যের মধ্যে আমিষের অন্তর্ভুক্তি খুবই কম।
▪ বর্তমানে বাজারে (2023 সাল) ছাগলের মাংস সাধারণ লোকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বাড়িতে উৎপন্ন হাঁস-মুরগি বা তার ডিম তারা নিজেরা না খেয়ে বাজারে বিক্রি করে তার বিনিময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের চাহিদা মেটায়। অর্থাৎ নিতান্ত সাধারণ পরিবারে আমিষ খাদ্য হিসেবে ছাগলের মাংস অকল্পনীয় সামগ্রী।
▪ শহর বা উপ-শহরে পৌরসভার কসাইখানায় এবং ছোট খাটখাটো বাজারে নিত্যদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গবাদি পশু ও ছাগল জবেহ হয়। চাহিদার তুলনায় তা খুব স্বল্প ফলে মূল্য যেমন আকাশ ছোঁয়া তেমনি তা সাধারণ লোকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আমাদের দেশে ছাগলের মাংসের চাহিদা গরুর মাংসের পরেই অন্যান্য যে-কোনো মাংসের চেয়ে বেশি।
▪ বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় এবং যাদের গরুর মাংসে এলার্জিজনিত উপসর্গ দেখা দেয়, তারা ছাগলের মাংসের ওপরে নির্ভর করে।
▪ উন্নত বিশ্বে যেখানে ছাগলের মাংস গরিবের খাদ্য তেমনি আমাদের দেশ ও পাক-ভারত উপমহাদেশে ছাগলের মাংস বিত্তবানের খাদ্য।
▪ বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশসমূহে দুগ্ধ ও মাংসের জন্য ভিন্ন প্রজাতির ছাগল পালন করা হয়। আমাদের দেশে দেশিয় কালো ছাগলের চামড়া যেমন উন্নতমানের তেমনি তার মাংসও অত্যন্ত সুস্বাদু ও উন্নতমানের।
▪ সবচেয়ে বড় কথা এ জাতের ছাগলের বংশ বৃদ্ধি ঘটে অত্যন্ত দ্রুত। কিন্তু বাজারের এ সকল ছাগলের যে মাংস বিক্রি হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের। বেশির ভাগ থাকে অল্প বয়স্ক বাচ্চা, অপুষ্ট, রুগণ এবং বয়স্ক হাড় সর্বস্ব ছাগীর মাংস। আবার অনেক সময় কসাইরা, অপুষ্ট, রুগ্ণ এবং বয়স্ক হাড় সর্বস্ব। ভেড়া বা অন্য প্রাণীর মাংস মিথ্যা কথা বলে বিক্রি করে। কখনো বা মৃত ছাগলের মাংসও মিথ্যা কথা বলে দেওয়া হয়।