Skip to content

 

ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার নিয়ম (হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলকে টিকা দেওয়ার নিয়মের তালিকা)

ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার নিয়ম (হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলকে টিকা দেওয়ার নিয়মের তালিকা) (khamarian.com)

গরু-ছাগল, হাঁস মুরগি ইত্যাদি পশু পাখিকে ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার নিয়ম বিস্তারিত তালিকা নিচে প্রদার করা হলো-

টিকা দেওয়া বা টিকাদানঃ

টিকাদান বা ভ্যাকসিনেশন হচ্ছে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য সুস্থ বা নিরোগ দেহে ঐ রোগের জীবাণু দিয়ে তৈরি টিকাবীজ প্রবেশ করানোর মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগটি প্রতিরোধের জন্য গৃহীত কার্যক্রম।

টিকাদানকারী বা ভ্যাকসিনেটর, টিকাদানের সরঞ্জামাদি যেমন— সিরিঞ্জ, সুঁচ, টিকা বীজ মিশানোর পাত্র, ডিস্টিল ওয়াটার, ফুটানো পানি ইত্যাদি, টিকাদানের জন্য এলাকা নির্বাচন, টিকাদানের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রাণি পালনকারীদের জানানো ও প্রচার ইত্যাদি সকল বিষয়ই টিকাদান কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

হাঁস-মুরগির ভ্যাকসিন বা টিকা সংরক্ষণঃ

  1. ভালোভাবে টিকা সংরক্ষণ করা না হলে টিকার কার্যকারিতা কমে যায় অথবা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রকার ভ্যাকসিন বিভিন্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
  2. সাধারণ অবস্থায় রিফ্রিজারেটরে ৪° সে. তাপমাত্রায় স্বল্প সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে হয়। হাঁস-মুরগির বেশির ভাগ টিকাই রিফ্রিজারেটরে ৪° সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়।
ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার নিয়ম (হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলকে টিকা দেওয়ার নিয়মের তালিকা) (khamarian.com) (5)

হাঁস-মুরগির ভ্যাকসিন বা টিকা পরিবহনঃ

  1. যে সমস্ত টিকা বীজ ঠাণ্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ করতে হয়, সে সমস্ত টিকা পরিবহণের সময় অবশ্যই ঠাণ্ডা পরিবেশ বজায় করতে হয়। এ সমস্ত টিকা বীজ পরিবহণের সময় সরাসরি সূর্য কিরণ পেলে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।
  2. পরিবহণের সময় কুল চেইন বজায় রাখতে হয়। টিকাবীজ পরিবহণের জন্য হিম শীতল গাড়ি ব্যবহার করা হয়।
  3. মাঠ পর্যায়ে টিকাবীজ পরিবহণ করতে থার্মোফ্লাসের মধ্যে বরফ দিয়ে তার মধ্যে টিকাবীজ সংরক্ষণ করা হয়।
  4. টিকাবীজ পরিশোধিত পানিতে অথবা বাফার সলুশানে গুলানোর পর টিকা বীজ হাঁস-মুরগির শরীরে প্রয়োগ করতে হয়।

হাঁস-মুরগির ভ্যাকসিন বা টিকা প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

এককভাবে : প্রতিটি মুরগিকে চোখে ফোঁটা, মুখে খাওয়ানো, ঠোঁট ডোবানো এবং চামড়া বা মাংসে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এককভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যায়।
দলবদ্ধভাবে : এ পদ্ধতিতে ফার্মের সকল হাঁস-মুরগিকে একটি একটি পৃথক করে ভ্যাকসিন না দিয়ে সবগুলোকে একবারে স্প্রে বা ডিপিং বা খাবার পানিতে টিকা মিশানোর মাধ্যমে দলবদ্ধভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যায়।

ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার নিয়ম (হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলকে টিকা দেওয়ার নিয়মের তালিকা) (khamarian.com) (6)

গরু-ছাগলের টিকা বা ভ্যাকসিন পরিবহন ও সংরক্ষণঃ

  1. টিকা বা ভ্যাকসিন ব্যবহারের পূর্ব পর্যন্ত টিকার গুনগত মান ঠিক রেখে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিকভাবে পরিবহন করতে হয়।
  2. প্রথমে টিকা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান হতে টিকা শীতল ভ্যানে অর্থাৎ রেফ্রিজারেটেড (Refregerated and/cool van) করে বা বড় আইস বক্সে বরফ দিয়ে তার মধ্যে টিকা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যেমন- জেলা প্রাণি দপ্তর, হাসপাতাল বা উপজেলায় আনতে হবে।
  3. তারপর উক্ত টিকা রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষন করতে হয়।
  4. সেখান থেকে আবার ছোট ছোট আইস ফ্লাক্সে বরফ দিয়ে তার পর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
  5. টিকা প্রয়োগের পূর্ব পর্যন্ত টিকার শীতলতা বজায় রাখতে হবে। অন্যথায় টিকার গুনগত মান নষ্ট হয়ে যাবে।

গরু-ছাগলের টিকা বা ভ্যাকসিন সংরক্ষণঃ

  1. টিকা বা ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি বোতলের গায়ে বা আলাদা কাগজে লেখা থাকে।
  2. যে সব টিকা হিমশুষ্ক অবস্থায় ভায়াল বা এম্পুলে থাকে, যেমন— রিন্ডারপেস্ট টিকা, পি.পি.আর, ছাগলের বসন্ত ও জলাতঙ্কের টিকা শূন্য ডিগ্রী তাপমাত্রার নিচে সংরক্ষণ করতে হবে। তাই এসব টিকা ডিপ ফ্রিজে রাখতে হয় ।
  3. তড়কা, গলাফুলা, বাদলা, ক্ষুরা রোগের টিকা ৪°-৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অর্থাৎ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হয়। এসব টিকা ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে না।
  4. সঠিক পদ্ধতিতে বা তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ না করলে টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে এসব টিকা ব্যবহার করলেও সঠিক ফল না হয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
  5. বোতল বা ভায়ালের গায়ে লেখা সংরক্ষণের নিয়মাবলি সঠিকভাবে মেনে চলতে হয়। টিকা ব্যবহারের সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়ে গেলে সে টিকা ব্যবহার করা উচিত নয়।
ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার নিয়ম (হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলকে টিকা দেওয়ার নিয়মের তালিকা) (khamarian.com) (4)

যে সব কারণে ভ্যাকসিন দেয়ার পরও ঐ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তা নিচে দেয়া হলোঃ

  1. যে ভ্যাকসিনের ব্যবহারের তারিখ শেষ হয়ে গেছে ঐ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে কোনো ফল পাওয়া যাবে না।
  2. ভ্যাকসিন দেয়ার যন্ত্রপাতি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত না হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে।
  3. সুষ্ঠু পরিবেশ তথা যথাযথ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ না করলে ঐ ভ্যাকসিন দেয়ার পর রোগ দেখা দিতে পারে।
  4. জীবিত জীবাণু দিয়ে তৈরি ভ্যাকসিনের জীবাণুগুলো মৃত হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে।
  5. ভ্যাকসিন ঠিকমতো বা পরিমাণমত শরীরে প্রবেশ না করলে রোগ দেখা দিতে পারে।
  6. খাবার পানির মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়ার সময় ক্লোরিনযুক্ত পানি ব্যবহার করা হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
  7. ভ্যাকসিনের গুণগতমান সঠিক না থাকলে অর্থাৎ নিম্নমানের হলে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেও কাজ হয় না। সাধারণত রোগজীবাণুর স্ট্রেইন, টাইপ এবং ভ্যাকসিনের স্ট্রেইন, টাইপ এক হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পরও পানি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
  8. ভ্যাকসিন পানির সাথে মিশানোর পর সাথে সাথে ব্যবহার করতে হবে সংরক্ষণ করা যাবে না। 
  9. ঠাণ্ডা ভ্যাকসিন ব্যবহারের সময় ভ্যাকসিন ফ্রিজ থেকে বের করার পর ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় আসার পর প্রয়োগ করতে হয়। প্রয়োগের পূর্বে ভালভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হয়। বোতল খোলার পর গ্রীষ্মকালে ৪ ঘণ্টায় মধ্যে ও শীতকালে ৮ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে হয়। অন্যথায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে।
  10. মুরগিকে যে রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে যদি ঐ রোগের জীবাণু পূর্বেই মুরগির শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে তবে ঐ ভ্যাকসিন কার্যকারী হবে না। এজন্য কোনো মুরগি বা হাঁসের ঝাঁকে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার পর ঐ ঝাঁকে কোনো সময়ই ঐ রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দেয়া উচিত নয় (ব্যতিক্রম রাণীক্ষেত রোগ)।
ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার নিয়ম (হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলকে টিকা দেওয়ার নিয়মের তালিকা) (khamarian.com) (3)

ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার নিয়ম বা টিকা প্রদানের পূর্বে যা অবশ্যই করণীয়ঃ

  1. যে সব টিকা চামড়ার নিচে দিতে হয় কোন অবস্থায় যেন মাংসপেশীতে না ঢুকে।
  2. টিকা কেবল সুস্থ সবল প্রাণিকে দেওয়া উচিত।
  3. সরাসরি সূর্যকিরণ থেকে টিকার বোতল দূরে রাখতে হবে।
  4. সব গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া একত্র করে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
  5. দুর্বল প্রাণি ও ৪ মাসের নিচের প্রাণিকে ভ্যাকসিন দেয়া উত্তম নয়।
  6. টিকা বা ভ্যাকসিনের Expiry date (কার্যকারিতার মেয়াদকাল) দেখে নিতে হবে অর্থাৎ ভ্যাকসিনের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নিশ্চিত হতে হবে।
  7. ভ্যাকসিন সাধারণত ভোরে দেওয়া উত্তম।
  8. ব্যবহার পূর্ব পর্যন্ত ভ্যাকসিন কুল বক্স বা ফ্লাক্সে রাখতে হবে ।
  9. বোতল খোলার ২ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করা উত্তম।
  10. ব্যবহারের পূর্বে বোতল ভালভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে যাতে টিকা বীজ সমভাবে মিশে যায় ।
  11. ভ্যাকসিন কোন ছায়াযুক্ত বা গাছের নিচে ব্যবহার করতে হবে।
  12. যে কোন ভ্যাকসিন প্রথমে ১টি প্রাণিকে দিয়ে ১৫-২০ মিনিট লক্ষ্য করতে হবে কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় কিনা যদি না হয় তবে নিশ্চিন্তে বাকি প্রাণিকে ব্যবহার করা যাবে।
ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার নিয়ম (হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলকে টিকা দেওয়ার নিয়মের তালিকা) (khamarian.com) (2)

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!