১. জান্নাতুল মুআল্লাঃ
এটি মক্কার কবরস্থান। এ কবরস্থান জিয়ারত করা মোস্তাহাব। এখানে সাহাবী, তাবেয়ী ও বুযুর্গদের কবর রয়েছে। হযরত খাদীজা (রাযিঃ), হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাযিঃ)-এর কবরও এখানে রয়েছে। এ কবরস্থানটি হারাম শরীফ থেকে উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর পাশে রয়েছে মসজিদে জিন। এ সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হয়েছে।
কবরস্থানে প্রবেশ করে সমস্ত কবরবাসীর উদ্দেশ্যে নিম্ন বাক্যে সালাম করবে-
السّلام عليكم دار قوم مؤمنين ، وانا إن شاء الله بكم لاحقون ونسأل الله لنا ولكم العافية ـ (احسن الفتاوى جـ / 4 )
অর্থঃ হে মু’মিন সম্প্রদায়ের আবাস স্থলের অধিবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আমরাও আল্লাহ চাহেতো তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য শান্তির আবেদন করছি।
* অতঃপর যথাসম্ভব কুরআন শরীফ পড়ে মাইয়েতকে ছওয়াব পৌঁছে দিবে। বিশেষভাবে সূরা বাকারার শুরু থেকে মুফলিহুন পর্যন্ত, আয়াতুল কুরছী, সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত পর্যন্ত, সূরা- ফাতেহা, সূরা-ইয়াসীন, সূরা-মূল্ক, সূরা তাকাছুর বা সূরা এখলাস ১০/১১/১২ বার কিংবা ৭ বার বা যে পরিমাণ সহজে পড়তে পারেন পড়ে দোয়া করবেন। মাইয়েতের মাগফিরাতের জন্যও দোয়া করবে।
২. রাসূল (সাঃ)-এর জন্মস্থানঃ
এটি হারাম শরীফের পূর্ব দিকের চত্বরের পূর্বে অবস্থিত। বর্তমানে এটিকে একটি পাঠাগার বানিয়ে রাখা হয়েছে।
৩. জাবালে ছওরঃ
এটি মক্কা শরীফ থেকে তিন মাইল দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত একটি পাহাড়। হিজরতের সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাযিঃ)-কে সহ তিন রাত এ পাহাড়ের চূড়ায় একটি গুহায় অবস্থান করেছিলেন। যে গুহাকে ‘গারে ছওর’ বলা হয়।
৪. জাবালে নূর ও গারে হেরা : মক্কা শরীফ থেকে তিন মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি পাহাড়ের নাম জাবালে নূর। এই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি গুহাকে বলা হয় ‘গারে হেরা’ বা হেরা গুহা। নবুওয়াত লাভের পূর্বে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই গুহায় ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। এখানেই সর্বপ্রথম ওহী নাযেল হয়েছিল।
৫. মুযদালিফার ময়দানঃ
এটি একটি ময়দান। এর এক প্রান্তে মসজিদে মাশআরুল হারাম রয়েছে। যাকে মুযাদালিফার মসজিদ বলা হয়। মুয্দাফিলা শব্দের অর্থ নিকটবর্তী বা রাতের অংশ। জাহিলী যুগের লোকেরা এখানে জড় হয়ে বংশীয় গৌরবগাথা ও বীরত্ব বর্ণনায় লিপ্ত হত। ইসলাম তার পরিবর্তে এখানে জড় হয়ে যিক্র তথা আল্লাহর বড়ায়ী বর্ণনা করার শিক্ষা দিয়ে সেই কুসংস্কারের মূলোৎপাঠন করেছে।
৬. আরাফাত ময়দানঃ
এখানে মসজিদে নামিয়া রয়েছে। আরাফাত শব্দের অর্থ পরিচিতি। এক বর্ণনা মতে হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর জান্নাত থেকে পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অবতরণের পর এ ময়দানে দুজনের মধ্যে সাক্ষাত ও পরিচিতি ঘটেছিল বলে এ ময়দানকে আরাফার ময়দান বলা হয়। আর এক বর্ণনা মতে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে হজ্জের যাবতীয় বিষয় শিক্ষা দেয়ার পর এখানে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন হজ্জ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের পরিচিতি লাভ করেছেন কি? এ থেকেই এখানের নাম হয় আরাফাত। (আমা
৭. মিনাঃ
এখানে মসজিদে খায়েফ রয়েছে, যাতে বহু নবী ইবাদত বন্দেগী করেছেন। বর্ণিত আছে এখানে ৭০ জন নবীর কবর রয়েছে। (tball (ales) এ ময়দানের পূর্ব দিকে কুরবানীর স্থান।
৮. মসজিদে জিনঃ
এখানে জিনগণ হাজির হয়ে কুরআন তিলাওয়াত শুনেছিল। আর এক বর্ণনা মতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিনদের প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাত করতে যাওয়ার সময় হযরত ইবনে মাসউদ (রাযিঃ)কে এখানে রেখে যান। এটি জান্নাতুল মুআল্লার গেট থেকে সামান্য দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত।
৯. মসজিদে তানঈম/মসজিদে আয়েশাঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) এখান থেকে উমরার এহ্হরাম বেধে উমরা করেছিলেন। হাজীগণ সাধারণতঃ এখানে গিয়ে এহরাম বেধে এসে উমরা করে থাকেন ৷
১০. মসজিদুর রায়াহঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় এখানে ঝান্ডা স্থাপন করেছিলেন। এটি হারাম শরীফ থেকে জান্নাতুল মুআল্লায় যেতে গাজ্জা মার্কেট এলাকা পার হওয়ার পর রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত।
১১. মুআবাদাঃ
এটি মক্কার একটি স্থান। এখানে কুরায়শ ও বনূ কিনানা গোত্রের লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ বনু মুত্তালিব ও বনু হাশেমকে মক্কা থেকে বের করে আনার জন্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিল। অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও বনূ মত্তালিব এবং বহু হাশেম শিআবে আবী তালিবে (বর্তমান নাম শিআবে আলী) অন্তরীণ হয়ে পড়েন। মুআবাদা নামক বর্তমান এ স্থানটির প্রাচীন অনেকগুলো নাম ছিল। তা হল- আতাহ, বাহা, বানে মুহাস্সাব ও খায়ফে বনী কিনানা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জে মিনা থেকে মক্কায় ফেরার পথে এখানে অবস্থান করেছিলেন।
১২. জাবলে আবী কুবায়ছঃ
এটি একটি পাহাড়। এ পাহাড়টি মসজিদে হারামের দক্ষিণ পূর্ব পাশে অবস্থিত, যার কিছু অংশ কেটে পূর্বের চত্বরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আর অবশিষ্ট অংশের উপর রাজপ্রাসাদ রয়েছে। হযরত নূহ (আঃ)-এর তুফানের সময় থেকে হাজরে আসওয়াদ এ পাহাড়ের উপর রাখা ছিল। প্রসিদ্ধ তাবিয়ী ‘মুজাহিদ’-এর বর্ণনা মতে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে পাহাড়ের মধ্যে সর্ব প্রথম এ পাহাড়টি সৃষ্টি করেন।