Skip to content

 

মদিনা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম + মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত + মদিনা শরীফ জিয়ারতের বিশেষ কয়েকটি স্থান

মদিনা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম + মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত + জিয়ারতের বিশেষ কয়েকটি স্থানত +
Table of contents

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজকের পোষ্টে আমরা আলোচনা করব, মদিনা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম। আমাদের সবারই ইচ্ছা থাকে একবার হলের নবীর রওজা মোবারক জিয়ারত করার, তাই মদিনা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম ও মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত এবং কোন কোন স্থানে জিয়ারতের সময় যেতে হয় বা মদিনা শরীফ জিয়ারতের বিশেষ কয়েকটি স্থান জেনে রাখা জরুরি।

মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত

* মদীনা মুনাওওয়ারা জিয়ারত করা হজ্জের অংশ নয় তবে একটা শ্রেষ্ঠতম ছওয়াবের কাজ এবং বরকত, মর্যাদা ও উন্নতি লাভের একটা শ্রেষ্ঠ ও বড় মাধ্যম। বড়ই সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে এই মোবারক জিয়ারতে মদীনার তওফীক লাভ করে। তত্ত্বজ্ঞানী আলেমদের মতে সঙ্গতি সম্পন্ন লোকদের জন্য এই জিয়ারত ওয়াজিব।

* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার মৃত্যুর পর যে আমার কবর জিয়ারত করল, সে যেন জীবদ্দশায়ই আমার জিয়ারত করল।

* রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করল, তার জন্য শাফাআত করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে গেল।

মদিনা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম

* মদীনা সফরের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জিয়ারত ও মসজিদে নববীর জিয়ারত উভয়টার নিয়ত করবেন।

* মদীনার পানে রওয়ানা হওয়ার পর থেকেই বেশী বেশী দুরূদ শরীফ ও এস্তেগফার পড়তে থাকা আদব এবং খুব বেশী আগ্রহ, ভালবাসা ও ভক্তি সহকারে অগ্রসর হতে থাকবেন।

* মদীনার নিকট পৌঁছে গেলে যওক শওক ও দুরূদ শরীফ পাঠ আরও বৃদ্ধি করবেন।

* মদীনার শহর দৃষ্টি গোচর হলে দুরূদ সালাম পাঠ এবং দোয়া করতে থাকবেন। সম্ভব হলে যানবাহন থেকে নেমে খালি পায়ে হেটে মদীনায় প্রবেশ করতে পারলে উত্তম।

* মদীনায় প্রবেশের পূর্বে না পারলে প্রবেশের পর গোসল করে নেয়া উত্তম। অন্ততঃ উযূ করে নিবেন। তারপর উত্তম পোশাক পরিধান করে (নতুন কাপড় হলে ভাল) খুশবূ মেখে শহরে প্রবেশ করবেন।

* রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওযার উপরে অবস্থিত সবুজ গম্বুজ দৃষ্টি গোচর হলে ভক্তি ভালবাসা মনে জাগরুক করবেন।

* মদীনায় প্রবেশের পর থাকার জায়গা ঠিক করে মাল-সামান রেখে ও বিশেষ জরূরত থাকলে তা সেরে যথাসম্ভব দ্রুত মসজিদে নববীতে গমন করবেন। মহিলাদের জন্য রাতে জিয়ারত করা উত্তম।

* মসজিদে নববীর যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করা যায় তবে ‘বাবে জিব্রীল’ দিয়ে প্রবেশ করা উত্তম।

* মসজিদে প্রবেশ করার সময় ডান পা প্রথমে প্রবেশ করাবেন এবং পড়বেন-

اللهم صل على محمد وصحبه وسلم ، اللهم اغفر لي ذنوبي وافتح لي أبواب رحمتك –

* প্রবেশ করার পর রিয়াযুল জান্নাত (বেহেশতের বাগান) নামক স্থানে পৌঁছে মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে এবং জামা’আত ছুটে যাওয়ার আশংকা না হলে দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায আদায় করবেন। সম্ভব হলে মেহরাবে নবীর কাছে এই দুই রাকআত নামায পড়া সবচেয়ে উত্তম। অতপর শোকর আদায় করবেন এবং জিয়ারত কবূল হওয়ার জন্য পূর্বেই দোয়া করে নিবেন।

* অতঃপর অত্যন্ত আদব ও তাযীমে রওযার সামনে পৌঁছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মোবারকের বরাবর দাঁড়াবেন। রওযার সামনের দেয়ালে জালির মাঝে এ সোজা একটি বড় ছিদ্র আছে। (এ ছিদ্রটি রওযার সামনে দাঁড়ালে বাম দিক থেকে তিন নম্বর ছিদ্র।) একেবারে কাছে গিয়ে নয় বরং একটু দূরে দাঁড়ানো আদব! দৃষ্টি নত রাখবেন এবং মধ্যম আওয়াজে সালাম পেশ করবেন। সালাম পেশ করার সময় এই খেয়াল রাখবেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবলামুখী হয়ে শুয়ে আরাম করছেন এবং সালাম কালাম শ্রবণ করছেন।

নিম্নোক্ত বাক্যে সালাম পেশ করা যায়-

السّلام عليك يا رسول الله

السّلام عليك يا نبي الله

السّلام عليك يا حبيب الله

السّلام عليك ياخير خلق الله

السّلام عليك يا سيد ولد آدم

السّلام عليك يايها النبي ورحمة الله وبركاته

* পারলে এ জাতীয় আরও বাক্য যোগ করা যায়। পারলে বা বেশী সময় না পেঁলে যতটুবু, সম্ভব বলবেন, অন্ততঃ প্রথম বাক্যটা বলবেন। অন্য কেউ সালাম পাঠিয়ে থাকলে তার পক্ষ থেকেও সালাম পেশ করবেন। অন্যের পক্ষ থেকে আরবীতে এভাবে সালাম পেশ করা যায়-

السّلام عليك يا رسول الله من فلان بن فلان يستشفع بك إلى ربك ـ

* এখানে প্রথম فلان -এর স্থলে সালাম প্রেরণকারী এবং দ্বিতীয় فلان -এর স্থলে তার পিতার নাম বলবেন।

* অনেকে সালাম পেশ করে থাকলে এবং সকলের নাম মনে না থাকলে বা এত বেশী সময় না পেলে সকলের পক্ষ থেকে একযোগে এভাবে সালাম পেশ করবেন-

– السّلام عليك يا رسول الله من جميع من أوصاني بالسّلام عليكـ

* অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওছীলা দিয়ে দোয়া করবেন এবং শাফাআতের দরখাস্ত করবেন। আরবীতে নিম্নোক্ত বাক্যে এটা করা যায়-

– يا رسول الله اسئلك الشفاعة واتوسل بك إلى الله في أن أموت مسلما على

* অতঃপর কিছুটা ডান দিকে সরে আর একটি ছিদ্রের মুখোমুখী হয়ে দাঁড়ান। এবার আপনি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর চেহারা মোবারকের বরাবর দাঁড়িয়েছেন। তাঁর উদ্দেশ্যে এভাবে সালাম পেশ করুন-

السّلام عليك يا خليفة رسول الله وثانية في الغار ورفيقة في الأسفار وامينه . على الأسرار أبا بكر الصديق جزاك الله عن أمة محمد صلى الله عليه وسلم خيرا ۔

* অতঃপর আর কিছুটা ডান দিকে সরে হযরত উমর (রাঃ)-এর চেহারা মোবারকের বরাবর দাঁড়িয়ে এভাবে সালাম পেশ করুন। এ সোজাও জালিতে একটি ছিদ্র আছে৷

السّلام عليك يا أمير المؤمنين عمر الفاروق الذي أعز الله به الإسلام إمام المسلمين مرضيا حيا ومينا جزاك الله عن أمة محمد صلى الله عليه وسلم خيرا ۔

* তারপর আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওযা মোবারকে সালাম পেশ করে তাঁর ওছীলা দিয়ে শাফাআতের জন্য দোয়া করুন। সবশেষে কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে প্রাণ ভরে নিজের জন্য এবং সকলের জন্য দোয়া করুন। এ নিয়মে সময় সুযোগ পেলেই জিয়ারত করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুা (যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওযা মোবারক অবস্থিত) এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি রিয়াযুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগান নামে পরিচিত। এ স্থানটির বিশেষ ফযীলত রয়েছে। এখানে নফল পড়ুন ও তিলাওয়াত করুন। তবে নামাযের জামা’আতে প্রথম কাতারের ফযীলত অগ্রগণ্যতা রাখে।

* রিয়াযুল জান্নাত অংশের মধ্যে সাতটি উস্তুওয়ানা বা স্তম্ভ রয়েছে, এগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বলা হয়। মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে এবং কাউকে কষ্ট না দিয়ে সম্ভব হলে এগুলোর পার্শ্বে নফল নামায পড়ুন। স্তম্ভ সাতটি এইঃ

১. উস্তুওয়ানা হান্নানাহ :

মিম্বরে নববীর ডান পার্শ্বে অবস্থিত খেজুর বৃক্ষের গুড়ির স্থানে নির্মিত স্তম্ভটি। যে গুড়িটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বার স্থানান্তরের সময় উচ্চস্বরে ক্রন্দন করেছিল।

২. উস্তুওয়ানা ছারীর :

এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ’তেকাফ করতেন এবং রাতে আরামের জন্য তাঁর বিছানা এখানে স্থাপন করা হতো।এ স্তম্ভটি হুরা শরীফের পশ্চিম পার্শ্বে জালি মোবারকের সাথে রয়েছে।

৩। উস্তুওয়ানা উফূদ :

বাইরে থেকে আগত প্রতিনিধি দল এখানে বসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করতেন এবং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে এখানেই বসে কথা বলতেন। এ স্তম্ভটিও জালি মোবারকের সাথে রয়েছে।

৪. উস্তুওয়ানা হার্ছ :

রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হুজ্জা শরীফে তাশরীফ নিয়ে যেতেন, তখন কোন না কোন সাহাবী পাহারার জন্য এখানে বসতেন। এ স্তম্ভটিও জালি মোবারক ঘেঁষে রয়েছে।

৫. উস্তুওয়ানা আয়েশা (রাঃ) :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ঃ আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা রয়েছে, লোকজন যদি সেখানে নামায পড়ার ফযীলত জানতো, তবে সেখানে স্থান পাওয়ার জন্য লটারীর প্রয়োজন দেখা দিতো। স্থানটি চিহ্নিত করার জন্য সাহাবায়ে কেরাম চেষ্টা করতেন। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর হযরত আয়েশা (রাঃ) তাঁর ভাগ্নে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রাঃ) কে সেই জায়গাটি চিনিয়ে দেন। এটিই সেই স্তম্ভ। এটি উস্তুওয়ানা উফূদের পশ্চিম পার্শ্বে রওযায়ে জান্নাতের ভিতর অবস্থিত।

৬. উস্তুওয়ানা আবূ লুবাবা (রাযিঃ) :

হযরত আবূ লুবাবা (রাঃ) থেকে একটি ভুল সংঘটিত হওয়ার পর তিনি নিজেকে এই স্তম্ভের সাথে বেধে বলেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে না খুলে দিবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এর সাথে বাধা থাকব। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বলেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা আমাকে আদেশ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত খুলবো না। এভাবে দীর্ঘ ৫০ দিন পর হযরত আবূ লুবাবা (রাঃ)-এর তওবা কবূল হলো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তাঁর বাঁধন খুলে দিলেন। এটি উস্তুওয়ানা উফূদের পশ্চিম পার্শ্বে রওযায়ে জান্নাতের ভিতর অবস্থিত।

৭. উস্তুওয়ানা জিব্রীল (আঃ) :

হযরত জিব্রীল (আঃ) যখনই হযরত দেহইয়া কাল্‌বী (রাঃ)-এর আকৃতি ধারণ করে ওহী নিয়ে আসতেন, তখন অধিকাংশ সময় তাঁকে এখানেই উপবিষ্ট দেখা যেতো।

* মসজিদে নববীতে একাধারে কেউ ৪০ ওয়াক্ত নামায আদায় করলে তার জন্য দোযখ থেকে মুক্তি এবং আযাব ও মুনাফেকী থেকে মুক্তির ছাড়পত্র লিখে দেয়া হবে বলে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাই সম্ভব হলে মসজিদে নববীতে একাধারে ৪০ ওয়াক্ত নামায জামাআতের সাথে পড়ার বিশেষ চেষ্টা করতে হবে।

মদিনা শরীফ জিয়ারতের বিশেষ কয়েকটি স্থান

১. জান্নাতুল বাকী :

মদীনা শরীফের কবরস্থানের নাম ‘জান্নাতুল বাকী’। মসজিদে নববীর সন্নিকটে পূর্ব দিকে অবস্থিত। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, আহলে বায়ত (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার), আযওয়াজে মুতাহ্হারাত (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ খাদীজা ও মায়মূনা ব্যতীত), শোহাদা, আইম্মায়ে কেরাম ও আওলিয়ায়ে কেরাম এই কবরস্থানে সমাধিস্থ রয়েছেন। এখানে হযরত উসমান (রাঃ)-এর মাযার থেকে জিয়ারত শুরু করুন। অনেকের মত হল হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর কবর থেকে জিয়ারত শুরু করা।

২. শোহাদায়ে উহুদ :

এটি উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে একটি কবরস্থান। বৃহস্পতিবার সকালে উহুদের শহীদগণের জিয়ারতের উদ্দেশ্যে এখানে যান। প্রথমে কবরস্থানের পাশে অবস্থিত মসজিদে হামযায় দুই রাকআত নামায আদায় করুন। অতঃপর হযরত হামযা (রাঃ)-এর মাযার জিয়ারত করুন। পার্শ্বেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জার্শ (রাঃ) এবং হযরত মুস্আব ইবনে উমাইর (রাঃ)-এর মাযার রয়েছে, তাঁদেরকেও সালাম পেশ করুন। ৭০জন শহীদ সাহাবায়ে কেরাম এখানে সমাধিস্থ রয়েছেন। সম্ভব হলে পাহাড়ে আরোহণ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমরা উহুদ পাহাড়ে আগমন করলে এখানকার বৃক্ষ থেকে কিছু খাও, এমনকি কাঁটাদার বৃক্ষ হলেও।

৩. মসজিদে কোবা :

হিজরতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হস্তে এই মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এটিই মুসলমানদের প্রথম মসজিদ। যেদিন সুযোগ হয় এই মসজিদের জিয়ারত করুন, তবে শনিবার দিন উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি মসজিদে কোবায় এসে দুই রাকআত নামায আদায় করবে, তার একটি উমরার সমতুল্য ছওয়াব হবে।

৪. মসজিদে জুমুআ :

এ মসজিদটি কোবার পথের সন্নিকটবর্তী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম এই মসজিদে জুমুআর নামায আদায় করেন।

৫. মসজিদে কেবলাতাইন :

এই মসজিদের মুসল্লীগণ বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে নামায পড়তে থাকা অবস্থায় কেবলা পরিবর্তনের কথা জানতে পেরে তৎক্ষণাত নামাযের মধ্যেই কা’বা শরীফের দিকে ফিরে যান। একই নামাযে দুই কেবলার দিকে ফিরে নামায পড়ার কারণে এটাকে মসজিদে কেবলাতাইন বলা হয়।

৬. মাসাজিদে সাবআঃ

সালা’ পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে মসজিদে ফাতাহ অবস্থিত। এই মসজিদের নিকটেই পাশাপাশি মসজিদে সালমান ফার্সী, মসজিদে আবূ বকর, মসজিদে ওমর, মসজিদে আলী, মসজিদে সাআদ ইবনে মুআয নামক মসজিদ সমূহ ছিল। অতীতের মত এখনও এগুলোকে ‘মাসাজিদে সাবআ’ বা সাত মসজিদ বলা হয়। যদিও মসজিদে ফাতাহ সহ মোট মসজিদের সংখ্যা ছিল ৬টি 1 বর্তমানে (২০০৬ সালে) রয়েছে মাত্র তিনটি (মসজিদে ফাতাহ, মসজিদে ওমর এবং মসজিদে সা’দ ইব্‌নে মুআয। ২০০৩ সালের হজ্জের পর মসজিদে সালমান ফার্সী ও মসজিদে আবূ বকর ভেঙ্গে তদস্থলে একটি বড় মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।)। জিয়ারতের গাড়ী হাজীদেরকে সাধারণতঃ এসব মসজিদের স্থানে নিয়ে যেয়ে থাকে।

মদিনা শরীফ জিয়ারতের আরও ৬টি মসজিদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ

১. মসজিদে ফাতাহঃ

এটি সালা’ পাহাড়ের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। মসজিদটি ভূমি থেকে প্রায় সাড়ে চার মিটার উঁচু। খন্দক যুদ্ধের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে তিন দিন- সোম, মঙ্গল ও বুধবার দোয়া করেছিলেন, আল্লাহ পাক দোয়া কবূল করেন এবং মুসলমানগণ বিজয়ী হন। সর্ব প্রথম হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদে সালমান ফার্সীঃ এটি মসজিদে ফাতাহ থেকে দক্ষিণে নীচে অবস্থিত। খন্দক যুদ্ধের খন্দকের পরিকল্পনাকারী সাহাবী হযরত সালমান ফার্সীর নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়। খন্দক যুদ্ধের সময় এখানেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়েছেন। এ মসজিদটিও সর্ব প্রথম হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ নির্মাণ করেন। ২০০৩ সালে মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।

২. মসজিদে আলীঃ

মসজিদে সালমান ফার্সী থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। সর্বশেষ ১৮৫১ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ১২৬৮ হিজরীতে সুলতান আব্দুল মজীদ (১ম) এ মসজিদটির সংস্কার করেছিলেন। এ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামাআত হত। ১৪১৪ হিজরীতে মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। মসজিদে আবূ বকরঃ এ মসজিদটি মাসাজিদে সাবআ এলাকার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। অনেকগুলো সিড়ি ঘেঁটে উপরে উঠতে হয়। কেউ কেউ এটাকে “মসজিদে আলী” নামে অভিহিত করে থাকেন, কিন্তু এটা ঐতিহাসিকভাবে সঠিক নয়। ২০০৩ সালে মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।

৩. মসজিদে ওমরঃ

এটি মসজিদে সালমান ফার্সী থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। এ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামাআত হয়। মসজিদে সা’দ ইব্‌নে মুআযঃ এটি মসজিদে ওমর থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। কেউ কেউ এটাকে মসজিদে ফাতেমা নামে অভিহিত করে থাকেন, কিন্তু এটা ঐতিহাসিকভাবে সঠিক নয়।

৪. মসজিদে বনী হারাম :

মসজিদে ফাতাহের নিকটবর্তী এই মসজিদেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়েছেন। সালা’ পাহাড়ের পিছনে অবস্থিত জাবালে যুবাব (বর্তমানে বিলুপ্ত)-এর পাশ দিয়ে মসজিদে বনী হারামে যাওয়ার রাস্তা রয়েছে।

৫. মসজিদে গামামাহ :

এ মসজিদটি মসজিদে নববীর দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদের নামায এখানে আদায় করতেন।

৬. মসজিদে অবূ বকর :

মসজিদে গামামা-র নিকট উত্তর দিকে অবস্থিত। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) এখানে ঈদের নামায আদায় করেছিলেন বিধায় এর নাম মসজিদে আবূ বকর হয়ে থাকবে।

৭. মসজিদে আলী :

এই মসজিদও মসজিদে গামামাহ-র নিকট অবস্থিত। হযরত উছমান (রাঃ) যখন গৃহে অন্তরীণ ছিলেন, তখন হযরত আলী (রাঃ) এখানে ঈদের নামায আদায় করেছিলেন। সম্ভবতঃ এ কারণেই এর নাম হয়ে থাকবে মসজিদে আলী।

৮. মসজিদে ওমর :

এখানে হযরত ওমর (রাঃ) কখনও কখনও নামায পড়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এখানে ঈদের নামায পড়েছেন বলে কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন। মসজিদে ওমর মসজিদে গামামাহ-র সামান্য দক্ষিণে অবস্থিত।

৯. মসজিদু’স সাজদাহ :

এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাজদারে শোকর আদায় করেছিলেন। দীর্ঘ সাজদা থেকে মাথা তুলে তিনি উপস্থিত হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ)-কে বলেছিলেন, জিব্রীল (আঃ) এসে আমাকে বললেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : যে ব্যক্তি আপনার প্রতি দুরূদ পাঠ করে আমি তার প্রতি রহমত করি, যে ব্যক্তি আপনাকে সালাম করে আমি তাকে সালাম করি। তাই আমি শোকর আদায় করণার্থে সাজদা করলাম। মসজিদটি বর্তমানে “মসজিদে আবূ যর” নামে পরিচিত। এ মসজিদটি মসজিদে নববীর পূর্ব পাশ দিয়ে উত্তর দিকে যে রাস্তাটি গিয়েছে তার কিছুটা সামনে গিয়ে চৌরাস্তা পার হয়ে সামনে ডান দিকে রাস্তা মোড় নেয়ার সময় ডান দিকে অবস্থিত।

১০. মসজিদুল-ইজাবাহ :

এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই রাকআত নামায পড়ে তিনটি দোয়া করেছিলেন, যার দুটো কবূল হয়। দোয়া তিনটি ছিল এই (এক) আল্লাহ তা’আলা যেন এই উম্মতকে দুর্ভিক্ষ দিয়ে ধ্বংস না করেন। এটি কবূল হয়। (দুই) আল্লাহ তা’আলা যেন এই উম্মতকে নিমজ্জিত করে ধ্বংস না করেন ৷ এটিও কবূল হয়। (তিন) এই উম্মত পারস্পরিক যুদ্ধবিগ্রহে যেন লিপ্ত না হয়। এটি কবূল হয়নি। এ মসজিদটি মসজিদে নববীর পূর্ব পাশ এবং জান্নাতুল বাকী’র উত্তর পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি পূর্ব দিকে গিয়েছে সে রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হয়ে জান্নাতুল বাকী’র উত্তর পূর্ব কোণে চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে বাঁ দিকে (উত্তর দিকে) তাকালেই দৃষ্টিগোচর হয়।

১১. মসজিদুল মুছতারাহ :

এটাকে পূর্বে মসজিদে বানু হারেছা বলা হত। বানু হারেছা নামক আনছারী গোত্র এখানে বসবাস করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে এখানে আরাম গ্রহণ করেছিলেন। মসজিদটি গাড়ীতে উহুদ পাহাড়ে যাওয়ার সময় উহুদ পাহাড়ের কিছু পূর্বেই রাস্তার বাম পাশে রাস্তা সংলগ অবস্থিত। এটাকে মসজিদুল এছতেরাহা-ও বলা হয়।

১২. মসজিদুশ শায়খাইন :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ যুদ্ধে গমন কালে শুক্রবার আসর, মাগরিব ও ইশার নামায এখানে আদায় করেন এবং রাত্রযাপন করে শনিবার সকালে এখান থেকে উহুদ প্রান্তরে গমন করেন। এখানেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৈনিক নির্বাচন করেন এবং ছোট সাহাবীদেরকে ফেরত পাঠান। এ মসজিদটি মসজিদুল-মুছতারাহ থেকে ৩০০ মিটার দক্ষিণে চৌরাস্তা থেকে ২০ মিটার পূর্বে অবস্থিত। এ মসজিদকে মসজিদুল উদ্‌ওয়া, মসজিদুল বাদায়ে’, মসজিদুদ্দির্য়ে প্রভৃতি নামেও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন ৷

১৩. মসজিদুর রায়া :

এটাকে ‘মসজিদে যুবাব’-ও বলা হয়। এ মসজিদটি যুবাব নামক একটি ছোট পাহাড়ের উপর অবস্থিত, যে পাহাড়ে খন্দক খননের কাজ পরিদর্শনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তাবু স্থাপন করা হয়েছিল এবং তিনি এখানে নামাযও পড়েছেন। তরীকুল উয়ূন-এর শুরুতে বাম পাশে মসজিদটি অবস্থিত।

১৪. মসজিদুল-ফাযীখ :

এটাকে ‘মসজিদে শাম্স’ বা ‘মসজিদে বানূ নাযীর’-ও বলা হয়। বান্না যীর গোত্রের সাথে যুদ্ধের সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে নামায পড়েছিলেন। মসজিদটি কোবার পাশে ‘আওয়ালী’ নামক এলাকায় অবস্থিত!

১৫. মাাবাহ উম্মে ইবরাহীম :

এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পুত্র ইবরাহীমের যাতা মারিয়া কিতিয়া বসবাস করতেন। এখানেই ইবরাহীম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে যাতায়াত করতেন এবং বিবিদের সঙ্গে ঈলা করার সময় দীর্ঘ একমাস এখানে তিনি অবস্থান করেছিলেন। পরবর্তীতে এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল, যাকে ‘মসজিদে মাশরাবাহ উম্মে ইবরাহীম’ বলা হত। বর্তমানে এখানে কোন মসজিদ নেই। এটি একটি কবরস্থান। যা আওয়ালী নামক এলাকাতে মুছতাফা ঝারা ও মুহতাশ্ফা ওয়াতানী-এর মাঝে অবস্থিত।

১৬. মসজিদুল ফাহুহ :

বর্ণিত আছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ যুদ্ধের পর এখানে জোহর ও আসরের নামায পড়েছিলেন। এ মসজিদটি এখন (২০০০ইং) ভগ্ন অবস্থায় রয়েছে। এ স্থানটি মাকবারাতুশ শুহাদা-এর উত্তর দিক দিয়ে কিছু দূর অগ্রসর হয়ে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে (যাওয়ার সময় ডান দিকে) অবস্থিত। এর উত্তরে উহুদ পাহাড়ে কিছুটা উঁচুতে গুহার ন্যায় একটি ফাটল রয়েছে; বলা হয় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ যুদ্ধে আহত হয়ে এখানে অবস্থান নিয়েছিলেন।

বিঃ দ্রঃ এ সব মসজিদ জিয়ারতে গেলে সেখানে অন্ততঃ দু’ রাকআত নামায পড়ে নিবেন-শুধু ঘুরে আসবেন না।

মদীনা মুনাওওরায় জিয়ারত সম্পর্কিত স্থানসমূহের সিংহভাগ তথ্য নিম্নোক্ত দুটি গ্রন্থ থেকে গৃহীতঃ

1. المساجد الأثرية في المدينة المنورة : محمد الياس عبد الغنى ..

الذر الثمين في معالم دار الرسول الامين : غالي محمد الامين الشنقيطي .2

প্রিয় খামারিয়ান পাঠক, পোষ্ট থেকে আমরা মদিনা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম ও মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত এবং জিয়ারতের বিশেষ কয়েকটি স্থানগুলো সম্পর্কে জানলাম। আল্লাহ রব্বুল আলামানি আমানেরকে সঠিক ভাবে মদিনা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম মেনে মদিনা শরীফ জিয়ারতের ফজিলত অর্জন করার তৈফিক দান করুন। আমিন। আবার আসব অন্য কোন বিষয় নিয়ে। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারসমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!