সম্মানিত পাঠক, বাংলা ভাষার অনলাইন লাব্রেরীতে আপনাকে স্বাগতম। আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করাব- মধুর ব্যবহার ও উপকারিতা, আধুনিক বিজ্ঞানে মধু, অমৃতের উপাদান, মধুর পুষ্টি উপাদান, শরীরের মধু ব্যবহারের উপকার, মধুর তাপশক্তি উৎপাদন ক্ষমতা, মধুর জীবাণুনাশক শক্তি ও মধুর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে। আশা পোষ্ট আপনার জন্য উপকারি হবে, তাই শেষ অবধি পড়বেন।
মধুর ব্যবহার এর ইতিহাসঃ
→ প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ যখন বনে বনে খাদ্য সংগ্রহ করতো তখন তাদের সকালে জলখাবারের সাথে মধুর স্থান ছিল সর্বপ্রথম। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে তার প্রমাণ রয়েছে।
→ পুরনো কালে মধুকে ধর্মীয় ও পবিত্র বস্তু হিসেবে মনে করা হতো এবং ভগবানের উদ্দেশে তা নিবেদনের প্রথা প্রচলিত ছিল। মিশরের রাজার মৃত্যু ঘটলে তাদের কবরের মধ্যে এক জার মধু এবং কিছুটা পরিমাণে মোম রাখা হতো। আর স্মৃতিসৌধের চারদিকে মৌমাছি পালনের বিভিন্ন কার্যের ছবি আঁকা থাকতো।
→ নানা উৎসবেও মধুর বিশেষ ব্যবহার ছিল। মানুষের বিশ্বাস ছিল যে মধু ছাড়া কেউ স্বর্গে যেতে পারে না। তাই যে কোনও উৎসবে তারা মধু ব্যবহার করতো।
→ প্রাচীন মিশরীয়রা বিবাহের সময় বিশেষ করে হস্ত বন্ধনের কালে শপথ করে বিবাহ করতো। শপথ বাক্য ছিল- ‘কনেকে বছরে বত্রিশ পাউন্ড মধু খাওয়ানোর শর্তে গ্রহণ করেছে বর।’ আমাদের দেশে হিন্দুদের মধ্যে এই ধরনের প্রথা ছিল বিবাহ উৎসবে প্রত্যক অতিথির সেবা মধু দিয়ে করা হতো।
→ অতি প্রাচীন কাল থেকেই এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে মধু মানুষের পরমায়ু বৃদ্ধি করে। রুশ দেশের বিজ্ঞানী লিকোলাই ভাসিলাও ভিক্ টিটসিন দীর্ঘ গবেষণার পর তথ্যসহ প্রমাণ দিয়ে প্রাচীন মানুষের বিশ্বাসের বাস্তবতাকে সঠিক বলে ঘোষণা করেছেন। বিখ্যাত জীব বিজ্ঞানী প্লিনি ও এল্ডার বিশ্বাস করতেন যে নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে আয়ু বাড়ে।

আধুনিক বিজ্ঞানে মধুঃ
→ আধুনিক বিজ্ঞানের দানে মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদন সারা বিশ্বে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছে। বিজ্ঞান আজ পার্থিব প্রায় সব কিছুকে জয় করে প্রকৃতিকেও নিজের হাতে মুঠোর মধ্যে নিতে চাইছে। তবুও এত উন্নত বিজ্ঞান আজও মধু উপাদান নিরূপণে হার মানতে বাধ্য হয়েছে।
→ মধুর উপাদানের শতকরা প্রায় ৩ ভাগের কিছু বেশি বিজ্ঞানীদের কাছে অজ্ঞাত। আমাদের অধিকাংশের মধ্যে ধারণা ছিল এবং আরও অনেকের মধ্যে রয়েছে যে, মৌমাছির ফুল থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসে তার সবটাই মধু। কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যে। মৌমাছি যা নিয়ে আসে তা পুষ্পরস বা অমৃত। এই অমৃতই পরে মধুতে রূপান্তরিত হয়। অমৃত বা পুষ্পরসের উপাদান এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।

অমৃতের উপাদানঃ
উপদানের নাম | শতকরা হিসেবে পরিমাণ |
১. পানি ২. শর্করা-আখের রসের চিনি ৩. ভিটামিন ৪. খনিজ পদার্থ ৫. অ্যামাইনো ও অন্যান্য এসিড ৬. বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদি পদার্থ | ৬০৷৷৮০ ভাগ ২০৷৷৪০ ভাগ ০॥০.৫ ভাগ ০.২৷৷ ০.৫ ভাগ ০.৪৷৷০.১ ভাগ অল্প মাত্রায়। |
→ অমৃতের মধ্যে শর্করা জাতীয় পদার্থের বেশির ভাগটাই হলো আখের রসের চিনি ও আংশিক গ্লুকোজ এবং ক্লোকটোজ গ্লুকোজ মিশ্র অবস্থায় থাকে। এটা সহজ করা যায় না। কিন্তু মৌমাছি অমৃক মধু পাকস্থলীর মধ্যে ভর্তি করে শেষে আপন ঘরে অর্থাঃ মক্ষীগৃহে ফিরে আসে।
→ নিজের জীবনযাপনের জন্য যেটুকু পরিমাণ অমৃতের প্রয়োজনে হয় সেই পরিমাণ শরীরের কাজে লাগায় এবং বাকি যা উদ্বৃত্ত হয় সেটা ভাবিষ্যতের জন্য মধুতে রুপান্তরিত করে শেষে চাকের মধ্যে ভর্তি করে রাখে।
→ তাহলে দেখা যাচ্ছে, মৌমাছি মধু পাকস্থলীতে মৌমাছি পাকস্থলীতে ফুল থেকে সংগ্রহ করা অমৃতকে মধুতে রুপান্তরিত করে। যার অর্থ হলো, শর্করার মিশ্র উপাদন শেষে সরল উপাদানে পরিণত হওয়া।
→ পাকস্থলীতে অমৃত এক প্রকার এনজাইমের সাথে মিলিত হয় ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে সুগার গ্লুকোজ ও ক্লোকটোজ বা লেভলাজ-এ পরিণত হয়। গ্লুকোজ বা ডেকট্রোজ, সুগারের থেকে মিস্টতা অনেক কম। এই রুপান্তরের সময় অমৃতের শতকরা ৮০ ভাগ জলীয় অংশের প্রায় ৬০ ভাগের মতো শরীরের কাজে লাগে বাকিটা উবে যায়।
→ মধুর এই যে রুপান্তর তা একটি মাত্র শ্রমিক মাছির পাকস্থলীতে যায় ও পূর্ণ মাত্রায় রুপান্তরিত হয়। এইভাবে জলীয় অংশও শতকারা ২৫ ভাগের মধ্যে এসে দাঁড়ায়। যদি এর থেকে কিছু বিশি জলীয় অংশ থাকে তাহলে মৌমাছিরা হাইভের মধ্যে বাতাস করে ফলে অপ্রয়োজনীয় জলীয় অংশ উঠে যায়। এইভাবে মধু যখন সুপরিপক্ক হয়ে ওঠে তখন মাছিরা মোম দিয়ে বন্ধ করে দেয়।
→ মৌমাছির অক্লান্ত পরিশ্রমে এইভাবে খাঁটি মধু তৈরি হয়, শেষে আমরা চাক থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সেই মধুকে বের করে নিয়ে আসি এবার সহজেই বুঝতে পারা যাচ্ছে যে মৌমাছি যদি চাকের মধ্যে ১০০ কেজি আসে এবং তার সবটাই যদি মধুতে রুপান্তরিত হয় তাহলে আমরা মধু পাব মাত্র ৪০ কেজি।
→ অমৃত নিয়ে বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন১ কেজি মধুর জন্য মৌমাছিকে প্রায় ৪ লক্ষ ফুলের কাছে যেতে হয়। এর জন্য দূরত্ব হিসেব করলে পৃথিবীকে দু বার প্রদক্ষিণ করা যায়। অর্থৎ ৫০ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করার মতো পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়।

মধুর পুষ্টি উপাদানঃ
উপাদানের নাম | শতকরা হিসেবে পরিমাণ |
পানি লেভলাজ ডেক্সট্রোজ ডেক্সট্রিন প্রোটিন মোম কেন সুগার এসিড-(বিভিন্ন) এসিডের মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো, ফরমিক, সাইট্রিক, ম্যালিড ইত্যাদি খনিজ পদার্থ (বিভিন্ন) খনিজ পদার্থের মধ্যে রয়েছে ক্যািৈসয়াম, লোহা, তামা, ম্যাংগানিজ, ম্যাঙ্গোনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ক্লেরিন, সালফার আত্যাদি। | ১৭ ভাগ ৩৯ ভাগ ৩৫ভাগ ১.৫১ ভাগ ২.০ ভাগ ১ ভাগ ১.৪০ ভাগ ০.৫ ভাগ ১ভাগ |
অজ্ঞাত উপাদানঃ
→ এইভবে যে ভাগের কথা উল্লেখ করা হলো সেটা একটা গড় হিসেব। তবে বিভিন্ন শ্রেণীর মধতে এই পরিমাপের যে কিছুটা পার্থক্য হবে সেটা খুবই স্বভাবিক ব্যাপার। এ ছাড়াও জলের পরিমাপ আবহাওয়া বও স্থানের উচ্চতার ওপর নির্ভরশীল।

শরীরের মধু ব্যবহারের উপকারঃ
→ মানুষের শরীরের ওপর মধুর অলৌকিক প্রভাব দেখে বর্তমানে বিজ্ঞানীরাও স্তম্ভিত। এটা পুষ্টিকর ও প্রভূত শক্তিদায়তক খাদ্য সে বিষয়ে সকলেই একমত। যে সমস্ত খনিজ পদার্থর কথা বলা হলো, সেসব অল্প মাত্রাতে থাকলেও মধুতে তা টনিকের মতো কাজ করে। এ সবের ওপর মধুর রংও কিছুটা নির্ভর করে।
→ লোহা ও এবং প্রোটিন জাতীয় পদার্থ আমাদের শরীরে পুষ্টি সাধন ও ক্ষয় পূণের দিক থেকে বিশেষ প্রয়োজনীয়। একমাত্র মধু তে আমরা এর সব কিছু পাই। যে মধুর রং যত কালো ও স্বাদে কিছুটা কষঅ ভাব থাকবে সেই মধুর ভেষজ গুণও ততবেশি হয়। একটি চাকের সাথে অপর একটি চাকের মধুর স্বাদে, গন্ধে ও বর্ণে কিছু পার্থক্য থাকেই।
→ প্রবাদ আছে, রক্তহীন রোগীদের পক্ষে কালো বর্ণের মধু সেবন বিধেয়। কারণ কালো রং এর মধুতে লোহা তামা ও ম্যাঙ্গানিজের ভাগ কিছুটা বেশি পরিমাণে থাকে। আর এসব খনিজ পদার্থ আমাদের শরীরের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন।
→ লোহা আমাদের শরীরের লেহিত কাণিকাকে শক্তি যোগায়। লোহিত কণিকা পরে অক্সিজেনের সাথে মিলিত হয়ে দেহের কাজ রাগে। উপকারের দিকে থেকে নিম, কালোজাম, করামচা ও আমের মধু সব উপাদানের পরিমাণ সামান্য কম থাকে। তবে নিয়মিত মধুর ব্যবহার করলে যৌবন ও লাবণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করা। দুর্বল শরীর অতি সহজেই কর্মক্ষমতা এনে দেয়। দেহের ওজন বৃদ্ধির জন্য মধু খুবই উপযাগী।
→ মধু সহজ পাচ্য, কারণ মৌমাছির শরীরই এর পাচন ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে। আমাদের মরীরের রক্তের মধ্যে একজাতীয় শর্করা উৎপদন স্বরুপ এরও বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। এটা একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় না থাকলে আমাদের মৃত্যু তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসে। যে কোনও মিষ্টিদ্রব্য বা খাদ্য আমরা গ্রহণ করি না কেন ওর মধ্যে সুগার অংশ স্টার্চ অংশের মিশ্র স্থা শরীরের মধ্যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সহজপাচ্য অবস্থাতে পরিণত রক্তের সাথে মিশে এবং লিভার বা যকৃতে গ্লাইকোজেন রুপে জমা থাকে। এটাই পরে শরীরের তাপ ও শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। কার্বোহাইড্রেট শরীরের পক্ষ বিশেষ প্রয়োজনীয় পদার্থ এবং মধুতেও এটি ভালো পরিমাণে আমরা পেয়ে থাকি।
→ দেখতে কালো এবং সমান্য তেতো স্বদযুক্ত মধুতে ভেষজ গুণ থাকে। অপরদিকে মধুর স্বাদ ভালো সুন্দর গন্ধ যুক্ত। তবি ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ নয় ৷ বহুমূত্র এবং রক্তহীনতা রোগীদের ক্ষেত্রে নিম, কালোজাম, আম প্রভৃতির গাঢ় রং-এর মধু বিশেষ উপকারী।

মধুর তাপশক্তি উৎপাদন ক্ষমতাঃ
→ আমরা সারাদিনের যে সমস্ত খাবার খাই সেগুলো পরে আমাদের শরীরে তাপ ও শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। তার কারণ হলো প্রত্যেক সুস্থ শরীরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। দেহ যখন তাপশক্তি পায় না তখন মারা যায়।
→ আমরা যে কোনও খাদ্য খাই না কেন সব থেকে বেশি ক্যালোরি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র মধুর। মাত্র ৫০০ মিলিলিটার মধুতে প্রায় ১৬০০ ক্যালোরি তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপশক্তি দানের ক্ষমতার থেকে প্রায় ছয়গুণ বেশি।
→ এক চামচ মধুর তাপশক্তি ক্ষমতা মুরগির একটি বড় আকারের ডিমের থেকেও বেশি। এ ছাড়াও মাছ, মাংস ও শাক-সবজিতে আমাদের শরীরে যে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় মধুর ক্ষেত্রে ক্যালোরি উৎপাদন ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়।
→ যে সমস্ত মানুষে দুর্জয় সাহসের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন বিপদজনক পেশাতে নিযুক্ত হন যেমন ডুবুরী, বিমান চালক, ছত্রী বাহিনী তাঁদের ক্ষেত্রে বিপদের মুখোমুখি হলেও মধু পানে অতি হজেই প্রাণশক্তি ফিরে আসে। এমন কি দুর্গম হিমালয় পর্বত অভিযানের সময় প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় প্রত্যেক অভিযাত্রীর সাথে থাকে যথেষ্ট পরিমাণে মধু। শরীর ঠাণ্ডায় জমে যাবার উপক্রম হলে মধু অভিযাত্রী জীবনশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

মধুর জীবাণুনাশক শক্তিঃ
→ জীবাণুবিদ ডাঃ ডাব্লু, জি, স্যাকেট বহু পরীক্ষার পর মধুর জীবাণুনাশক তথ্যগুলো আবিস্কার করেছেন। অর্থাৎ মধর মধ্যে এমন কিছু শক্তি রয়েছে যা মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর বহু রোগ জীবাণুকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।
১. টাইফাস :
→ এই রোগের জীজাণুতে শরঅর টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। খাঁটি মধুতে এর বীজাণু ২ দিনের বেশি বাঁচতে পারে না।
২. প্যারাটাইফাস :
→ এটিও টাইফয়েডের মতো এক ধরনের জীবাণু। এই রোগে আক্রান্ত হলো শরীরে টাইফয়েডের সাথে আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। ক্ষতির আশংকাও বেশি থাকে। খাঁটি মধুতে এই রোগের জীবাণু ১দিনের বেশি বেঁচে থাকতে পারে না।
৩. এটিরিটিডিস :
→ এই রোগের জীবাণুর মাধ্যমে আমাদের শরীরে আক্তিক রোগের সৃষ্টি করে। জীবাণু খাটি মধুতে ২ দিনেই মরে যায়।
৪. ডিসেন্টি :
→ এর আক্রমণে পাতলা জলের মতো পায়খানা হয়। তাচাড়া সাদা অথবা রক্ত আমাশয়ে আক্রন্ত হবার আশংকা থাকে। উভয় রোগের জীবানু মধু প্রয়োগে মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে মরে যায়।
৫. সুইপেস্টিকার :
→ এর জীবাণুতে মানুষ ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া প্রভৃতিরোগে আক্রান্ত হয়। মধুতে চার দিনে এর জীবানু মরে যায়। ফলে রোগী রোগ মুক্ত হয়। রুশ দেশের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছেন যে বী-ব্রেড, মধু পরাগ ও জলদিয়ে মৌমাছি শুক্কীটকে খওয়ানোর জন্য যা তৈরি করে এতে ক্যানসারের মতো মাত্মক রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা মানুষের শরীরে গড়ে ওঠে।
→ আমাদের দেহ যে সমস্ত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের জীবানু বাতাসের মাধ্যমে সর্বত্র ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে নিশ্বাস গ্রহণ করার সময় আমাদের দেহের ভেতেরে প্রবেশ করছে। এ ছাড়াও অসংখ্য রোগের ব্যাকটেরিয়া পানীয় জলের মাধ্যমে শরীরে যাচেছ। বয়স বাড়লে রক্তের লোহিত কণিকার জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা কমলে আমরা সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। কিন্তু যারা নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে খাঁটি মধু খেয়ে থাকেন তাঁরা মৃত্যুর শেষে দিন পর্যন্ত প্রায় নিরোগ থাকেন। কারণ মধু নিজের গুণেই মানুষের শরীরে বহু রোগের প্রাতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেভ। আর মধু এমন একটি খাদ্য যা শিশু থেকে অতি বৃদ্ধ মানুষের পক্ষেও সহজে হজম করা সম্ভব হয়।

মধুর শ্রেষ্ঠত্বঃ
→ ডাঃ ডব্লু এইচ ফিনালী ডাইরেক্টর অফ এ্যাথলেটিক্স অফ ইয়ং মেনস্ এ্যাসোসিয়েশন, টার্নেটো, কানাডা বহু বছর ধরে বেষণার পর প্রমাণ করেছেন যে, অন্যান্য মিষ্টির থেকে মধুর মধ্যে বহু গুণ রয়েছে। এটা পাচন তন্ত্রের পাতলা পর্দয় কোনও পীড়া দেয় না। খুবই সহজে এবং তাড়াতাড়ি সকল বয়সের মানুষের হজম হয়। মধু পাচন তন্ত্রে কোনও দেয়না। শরীরের যে কোরও ধরনের ক্লান্তি সহজেই দূর করা। আমাদের শরীরের ভেতরে কোনও যন্ত্রকে বেশি পরিশ্রম না করিয়েও শক্তির যোগান দেয়। শরীরে এর স্বাভাবিক ও মৃদু প্রভাব রয়েছে। চিনি বা চিনি জাতীয় মিষ্টি ব্যবহার শরীরে ক্ষতির কারণ।
→ আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের ধারণা-চিনি এক প্রকার খাদ্য। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতো খাদ্য হিসেবে চিনি বা কেনসুগার আমাদের শরীরের কোনও পস্টি সাধন করে না। তবে এক হিসেবে বলা যেতে পারে আমরা চিনিকে ব্যবহার করি খানিকটা ওষুধ রুপে। কারণ এটা আমাদের দেহে তাপশক্তি যোগায়। এটা গুক্লোজ বা কেনসাগার।
→ সাধারণভাবে আমরা মিশ্র চিনি অবস্থায় গ্রহণ করে থাকি। চিনি যে কোনও মাধ্যমে শরীরের ভেতরে যাবার পর পাকস্থলীতে এজাউমের সাথে মিশেরাসায়নিক ক্রিয়র সরল অবস্থায় রুপান্তরিত হয় ও দেহে তাপশক্তি যোগায়। চিনিকে এভাবে রুপান্তরিত করতে পাকস্থলীকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়। অর্থাৎ এই যন্ত্রের ওপর স্বাভাবিকের থেকে বেশি চাপ পড়ে। এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে বেশি পরিশ্রম ফলে এমর একটা সময় আসে যখন পাকস্থলী চিনির রুপান্তর ঘটানোর ক্ষমতা বা শক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে। তখন চিনি বা চিনি জাতীয় কোনও গ্রহণ করলে শরীরের কোনও কাজেই লাগে না। তখন চিনির একমাত্র গতি হয় মূত্রাশয়ের মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে বাইরে চলে আসা। ফলে অনেকে বাত, প্রমেহ ও ডাইবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অর্থৎ আখের রস থেকে তৈরি চিনি পাকাশয়ে পরিপাক না হয়ে অপাচ্য অবস্থায় বেরিয়ে আসে এবং মূত্রাশয়ও আক্রান্ত হয়।
→ এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের সুচিন্তিত অভিমত হলো, মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের যে সমস্ত রোগ-ব্যাধি দেখা দেয় তার অধিকাংশই মূল কারণ হিসেবে রয়েছে কেনসুগারের ব্যবহার। তবে মধু ব্যবহার করালে ওই সব রোগের হাত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা যায়।
→ সেই কারণে প্রত্যেক শিশুকেই জন্মের পর থেকেই চিনির পরিবর্ত মধু খাওয়ানো একান্ন প্রয়োজন। এতে ছোট থেকেই শরীরে দৃঢ়ভবে গঠিক হয়। তার দেহের ওজন ও শক্তি বাড়ে। কোনও রোগ সহজে আক্রমণ করতে পারে না। তাছাড়া মধু নিয়মিত খেলে শ্বাসনালীর রোগ, সর্দ, কাশি, ফুসফুসের রোগ, হৃদ রোগ, গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগ নিরাময় হয়।

প্রিয় খামারিয়ান পাঠকবৃন্দ, আমারা জানলাম- মধুর ব্যবহার ও উপকারিতা, আধুনিক বিজ্ঞানে মধু, অমৃতের উপাদান, মধুর পুষ্টি উপাদান, শরীরের মধু ব্যবহারের উপকার, মধুর তাপশক্তি উৎপাদন ক্ষমতা, মধুর জীবাণুনাশক শক্তি ও মধুর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে, এর পরেও আপনি যদি মৌমাছি ও মধুর চাষ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তবে আপনি নিচের আর্টিকেল সমূহ অবশ্যই পড়তে পারেন। এই পোষ্ট এখানেই সমাপ্ত হচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ।