Skip to content

 

১১টি মহিষের জাত পরিচিতি ও তাদের বৈশিষ্ট্য + মহিষ পালনে বা মহিষের খামার করতে কোন জাতের মহিষ সবচেয়ে ভালো?

১১টি মহিষের জাত পরিচিতি ও তাদের বৈশিষ্ট্য + মহিষ পালনে বা মহিষের খামার কোন জাতের মহিষ ভালো

মহিষ পালনঃ (Buffalo husbandry)

→ মহিষ অন্যতম গৃহপালিত স্তন্যপায়ী। মহিষকে সাধারণত ত্রিমুখী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পশু বলা হয়। কারণ মহিষ কৃষি কাজ, দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য প্রায় সমভাবে উপযোগী। মহিষ কৃষি কাজ ও ভারবহনে অত্যন্ত উপযোগী, তাই এদের জীবন্ত ট্রাক্টর (Living tractor) বলা হয়।

→ মহিষ মুখ্যত উত্তর গোলার্ধের এক প্রজাতি এবং চেহারায় গরুর সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে। উত্তর আমেরিকার বাইসনকে (bison) অনেক সময় মহিষ বলা হলেও প্রকৃত মহিষের সঙ্গে এদের কোন সম্পর্ক নেই। এশিয়ার মহিষ বা জলমহিষ (Bubalus bubalis) এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দেশসমূহে বিস্তৃত এবং এ অঞ্চলেই এটি বহুকাল আগে থেকেই গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

→ কোন কোন দেশে মহিষকে এখনও বন্যপ্রাণী হিসেবে দেখা যায়, যেমন নেপাল, আসামসহ ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও অন্যান্য কতক এলাকা, মিয়ানমার এবং বোর্ণিও। গৃহপালিত হবার পর কতক বন্য পরিবেশে ফিরে গেছে এমনটি ঘটেছে শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়সহ আরও কয়েকটি দেশে।

  • জলমহিষ ভারী এবং মজবুত দেহের অধিকারী।
  • এরা উচ্চতায় ১.৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
  • দেহের রং ধূসর কালো, পৃষ্ঠভাগ সোজা এবং দেহ অল্প পরিমাণ খাটো লোমে আবৃত।
  • এদের শিং বৃহৎ, গোড়ার অংশ বাইরের দিকে এবং শীর্ষপ্রান্ত একে অন্যের দিকে ফেরানো।
  • প্রস্থচ্ছেদে শিং দেখতে ত্রিভুজাকার।
  • গৃহপালিত মহিষের জাতগুলির মধ্যে আকার, দেহের গড়ন এবং শিঙের আকার-আকৃতির বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
  • স্ত্রী মহিষ গর্ভধারণের ১০ মাস পর একটি শাবক প্রসব করে।
  • মহিষকে প্রধানত একটি ভারবাহী প্রাণী হিসেবে এবং দুধ ও মাখনের জন্য গৃহে লালন পালন করা হয়।
  • ভারত ও পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি উন্নত জাতের মহিষ রয়েছে।

মহিষের বিভিন্ন নামকরণঃ (Terminology )

→ মহিষ পাল (Buffalo herd) – এক সাথে অনেক মহিষ থাকলে মহিষ সমষ্টিকে মহিষ পাল বলে।

→ বুফেন (Buffen) – মহিষের মাংসকে বুফেন বলে।

→ মহিষ (Buffalo) – স্ত্রী-পুরুষ উভয় মহিষ।

→ মহিষ বকন (Buffalo heifer) – প্রথম বাচ্চা প্রসব হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের স্ত্রী মহিষকে বোঝায় ।

→ মহিষ বাছুর (Buffalo calf) – মহিষের স্ত্রী-পুরুষ উভয় বাচ্চাকে বোঝায়।

→ মহিষ ষাঁড় (Buffalo bull) – প্রজননক্ষম প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ মহিষ।

→ মহিষ গাভী (Buffalo cow) – অন্তর একবার বাচ্চা প্রসব করেছে এমন স্ত্রী মহিষ।

→ মহিষ বলদ (Buffalo bullock) – প্রজনন ক্ষমতা রহিত খোজা করা পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ মহিষ ।

→ মহিষ এঁড়ে বাছুর (Buffalo bull calf) – এক বছরের কম বয়সী পুরুষ মহিষ বাছুর।

→ মহিষ বকনা বাছুর (Buffalo heifer)- মহিষের অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী বাছুরকে বোঝায়।

মহিষের প্রকাভেদঃ

গৃহপালিত মহিষকে দু’গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে যথা- ১। রিভার মহিষ (River type) এবং ২। সোয়াম্প মহিষ (Swamp type)।

১। রিভার মহিষ (River type) :

উৎস ও বিস্তৃতির উপর ভিত্তি করে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

→ দক্ষিণাঞ্চলের মহিষ- টোডি (Tode), সাউথ কানারা (South kanara), নাগপুরী (Nagpuri), পার্লাকিমেডি (Parlakimedi)।

→ গুজরাটের মহিষ- সুরটি (Surti), মেহসানা (Mehsana), জাফরাবাদী (Jaffrabadi)।

→ উত্তরাঞ্চলের মহিষ- মুরা (Murrah), নীলি-রাভী (Nili-Ravi), কুন্ডি (Kundi), বাহডাওয়ারি (Bhadawari), তারাই (Tarai)।

→ ভারতের মধ্যাঞ্চলের মহিষ- নাগপুরী (Nagpuri), প্যানধারপুরী (Pandharpuri), ম্যানডা (Manda), জেরানগি (Jerangi), কালাহানডি (Kalahandi), সামবালপুরী (Sambalpuri)।

২। সোয়াম টাইপ (Swamp type) :

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মহিষ যেমন চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, বার্মা ইত্যাদি দেশের মহিষ (Kwacum and Kwaitui, Kwaipra, Red buffalo, Marid)।

→ রিভার মহিষ এবং সোয়াম মহিষ একই প্রজাতির হলেও এদের স্বভাব ও বেশিষ্ট্য ভিন্ন প্রকৃতির।

মহিষের সংখ্যাঃ

পৃথিবীর মহিষের সংখ্যা প্রায় ১৪২.১৮৯ মিলিয়ন। বাংলাদেশে প্রায় ১.২৬ মিলিয়ন মহিষ আছে।

মহিষের খামার করতে কোন জাতের মহিষ সবচেয়ে ভালোঃ

ক্র.নংজাতগাভীর দৈহিক ওজন (কেজি)১ম বাচ্চা প্রসবের বয়স (মাস)দুধ উৎপাদন (কেজি)দুধ উৎপাদন কাল (দিন)বাচ্চা প্রসবের মধ্যবর্তী কাল (দিন)
মুরা৪৩১৪১১৬৯৩৩০০৪৯৫
সুরটি৪০৮৪৫১৫৭০৩২০৪৬১
জাফরাবাদী৪৬০১৮০০৩০২
নীলি-রাভী৫০০৪৬১৬০০২৮৫-৩২৬৫৩০
কুন্ডি৪০০৪৭১৩০০
মেহসানা৪২৫৪২২৩৩৬৩৫২
ইটালিয়ানা৫০০৪০১৬০০২৮৫৪২০
ঈজিমশন৪৫০৪০১১৬৮৩০০৫০০
থাই৪০০৩০০
১০চাইনীজ৫০০৫০৮২৪৫৩৩
১১কারাবাও৪০০৪১৪৫০৪৫০
১২বুলগারিয়া৫৩০৩৭১৩৫০২৬৬৪২০

মহিষের জাতসমূহঃ (Breeds of buffaloes )

১। রিভার মহিষ (River / Water buffaloes) :

প্রধানত পাক-ভারত উপমহাদেশে যে সকল জাতের মহিষ পাওয়া যায়, তাদের কয়েকটি জাতের পরিচয় নিম্নে দেয়া হল ।

■ মুরা (Murrah) মহিষ

→ এক বিয়ানে ৯ থেকে ১০ মাস দুধদান কালে ১৪০০ হতে ২০০০ কেজি দুধ দেয়, গড়ে প্রতিদিন ২২ থেকে ২৭ লিটার দুধ হয়।

→ দুধে চর্বির ভাগ প্রায় ৭%, তাই ঘি ও মাখন তৈরির জন্য মহিষের দুধের খুব চাহিদা।

→ পুরুষ মহিষ খুব কর্মঠ ও শক্তিশালী, তাই কৃষি কাজের জন্য বেশ উপযোগী।

→ শরীরের রং ঘোর কালো, তবে অনেক সময় লেজের আগা, কপাল ও পায়ের প্রান্তে সাদা ছোট দেখা যায় ।

→ ওলানের গড়ন সুন্দর ও বড় আকৃতির, লম্বা বাঁট, সামনের বাঁট দুটোর চেয়ে পিছনের বাঁট লম্বা। এ জাতের ষাঁড় মহিষের ওজন প্রায় ৪৫০ কেজি।

→ ‘মুরা’ শব্দের অর্থ কুঞ্চিত। এ জাতের মহিষের শিং কুঞ্চিত ও কুন্ডলীকৃত বলে এদের নাম মুরা হয়েছে।

→ দেহের গঠন বেশ মোটাসোটা, সামনের তুলনায় পিছনের অংশ বেশ চওড়া। দেহের তুলনায় মাথা ছোট, কপাল চওড়া।

→ গাভীর গলা তুলনামূলকভাবে লম্বা ও সরু। ছোট চ্যাপ্টা শিং যা প্রথমে পিছনের দিকে গিয়ে পরে উপরের দিকে বেঁকে কুন্ডলী পাকিয়ে থাকে।

→ মুরা জাতের ষাঁড় দেশী অনুন্নত মহিষের জাত উন্নয়নের জন্য কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহার হয়।

→ ষাঁড় মহিষের ওজন ৫৫০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৪৫০ কেজি হয়।

মহিষের জাত পরিচিতিঃ মুরা (Murrah) মহিষ by khamarian.com

চিত্র- মুরা ষাঁড় ও গাভী

■ নীলি-রাভী (Nili Ravi) মহিষ

→ নীলি জাতের মহিষ বলদ কৃষিকাজে পারদর্শী। মুরা জাতের পরই নীলি জাতের মহিষকে উৎকৃষ্ট জাত হিসেবে বলা হয় ।

→ নীলি জাতের মহিষ খুব নিরীহ ও শান্ত শিষ্ট বলে ডেয়রি খামারে পালনের জন্য বিশেষ উপযোগী।

→ পা বেশ বলিষ্ঠ হয়, চূড়া থাকে না, পিঠ সোজা হয়, সাধারণত গাত্রবর্ণ কালো কিন্তু মাঝে মাঝে এ জাতের ব্রাউন বা বাদামী বর্ণের মহিষও দেখা যায়।

→ কপাল, মুখ মন্ডল, মুখবন্ধনী, পা ও লেজের চুলে সাদা ছোপ থাকে, গাভীর শরীর ক্রমশ: পিছনের দিক

→ মোটা। লেজ প্রায় মাটি ছুঁয়ে যায়।

→ ওলান সুগঠিত ও দুগ্ধ শিরা সুস্পষ্ট। গড়ে একটি ষাঁড়ের ওজন ৬০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৪৫০ কেজি হয়।

→ একটি মহিষ গাভী এক বিয়ানে প্রতিদিন ৯-১৮ কেজি হিসেবে প্রায় ২৫০ দিনে ১৬০০ কেজি দুধ দেয়।

→ মাঝারি আকারের মোটাসোটা দেহ, সাদা চোখ, সাদা কপাল ও সাদা লেজ নীলি জাতের বৈশিষ্ট্য। মাথা

→ চওড়া ও বড় এবং নাসিকা অস্থি সুস্পষ্ট।

→ মাথার দুই শিংয়ের মধ্যবর্তী উপরের স্থানটি ফোলানো, ছোট শিং, শিংয়ের গোড়ার দিক মোটা এবং

→ ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে বাঁকানো।

→ মাথা ও মুখ মন্ডলে মোটা চুল, গলা লম্বা ও সরু, গোলাকৃতির চওড়া বুক, গলকম্বল থাকে না। এছাড়া

→ নাভির ফ্ল্যাপ ছোট থাকে।

→ গড়ে একটি ষাঁড়ের ওজন ৬০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৪৫০ কেজি হয়।

মহিষের জাত পরিচিতিঃ নীলি-রাভী (Nili Ravi) মহিষ by khamarian.com

চিত্র- নীলি-রাভী ষাঁড় ও গাভী

■ সুরটি (Surti ) মহিষ

→ ওলান বড়সড় ও সুগঠিত এবং বাঁট মাঝারি আকৃতির ও দুগ্ধশিরা সুষ্পষ্ট।

→ প্রায় ১০ মাস দুগ্ধদানকালে ১৫৯০ থেকে ১৭৩০ কেজি দুধ দেয়।

→ দুধের চর্বির পরিমাণ ৭.৮ থেকে ১০.৫% এবং গড়ে প্রায় ৮.৯%।

→ মাঝারি আকৃতির জুলন্ত কান যার সম্মুখবর্তী বহির্ভাগ ঈষৎ লাল এবং নিচের প্রান্ত সাদা লোমে সজ্জিত থাকে।

→ লম্বা চওড়া মাথা, দুই শিংয়ের মধ্যস্থান বেশ উঁচু ও উত্তল আকৃতির (Covex shape)। কাস্তে আকৃতির লম্বা চ্যাপ্টা শিং ৷

→ ঘাঢ় লম্বা । গাভীর ঘাঢ় সরু কিন্তু ষাঁড়ের ঘাঢ় মোটা ও ভারী হয়।

→ গলকম্বল ও চূড়া থাকেনা, পিঠ চওড়া ও সোজা। বক্ষস্থল চওড়া এবং সুস্পষ্ট।

→ সুরটি মহিষ মাঝারি আকারের সুঠাম দেহ এবং গাত্র বর্ণ কাল থেকে তামাটে হয়।

→ পায়ের হাঁটু ও হক সন্ধির নিচের অংশের লোম সাধারণত সাদা থেকে তামাটে ধূসর বর্ণ।

→ চোখের ভ্রু একটি সাদা ডোরা কাটা ন্যায় বর্ণ থাকে। সুস্পষ্ট গোলাকৃতির উজ্জ্বল চোখ ।

→ মাঝারি আকৃতির পা, চওড়া কালো খুর এবং লম্বা ও সরু লেজ এবং লেজের চুল সাদা বর্ণের হয়।

মহিষের জাত পরিচিতিঃ সুরটি (Surti ) মহিষ by khamarian.com

চিত্র- সুরটি ষাঁড় ও গাভী

■ মেহসানা (Mehsana) মহিষ

→ গাত্র বর্ণ কালো, তবে মুখমন্ডল, পা ও লেজের আগায় সাদা ছাপ থাকে। ওলান বেশ বড় এবং বাঁট উন্নত ।

→ অন্য জাতের মহিষের তুলনায় আগে যৌন পরিপক্কতা, পর্যাপ্ত দুধ দেয় এবং উচ্চ হারে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য এ জাতের মহিষ অত্যধিক মূল্যবান।

→ সাধারণত এ জাতের মহিষ গাভীর ওজন ৩৬৫ থেকে ৪৫৫ কেজি হয় এবং ষাঁড়ের ওজন প্রায় ৫৪৪ কেজি।

→ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে মুরা ও সুরটি জাতের মধ্যে প্রজননের মাধ্যমে মেহসানা জাতের উৎপত্তি। তাই ঐ দু’জাতের বৈশিষ্ট্য মেহসানা জাতে পরিলক্ষিত হয়। গড়ন মাঝারি, মুখ ও ঘাড় লম্বা আকৃতির, চওড়া কপাল এবং হালকা পা।

→ নাসারন্ধ্রের ছিদ্র বেশ বড়, গলকম্বল নাই, স্কন্ধ বেশ চওড়া, শিং বাঁকা কাস্তে আকৃতির।

→ প্রতি বিয়ানে (প্রায় ৩০০ দিন) একটি গাভী মহিষ ১৩০০ থেকে ১৮০০ কেজি গড়ে ১৬৭০ কেজি এবং

→ দৈনিক হিসেবে প্রায় ২৬ কেজি দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির ভাগ প্রায় ৬.৫%।

মহিষের জাত পরিচিতিঃ মেহসানা (Mehsana) মহিষ by khamarian.com

চিত্র- মেহসানা ষাঁড় ও গাভী

■ কুন্ডি (Kundi) মহিষ

→ ওলান মাঝারি আকারের এবং বাঁট ওলানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ওলান ও বাঁটের শক্ত গড়ন দেখে দুধাল মহিষ বোঝা যায়।

→ লেজ সরু, নমনীয় এবং প্রান্তের সামান্য নিচে কাল গোছা থাকে।

→ সাধারণত ৪/৫ বছর বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয়।

→ এ জাতের ষাঁড়ের গড় ওজন প্রায় ৬০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৩৭৫ কেজি হয়।

→ গাভী দৈনিক ১২ থেকে ২০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। দুধের জন্য গাভী এবং প্রজননের জন্য ষাঁড় পালন করা হয়।

→ কৃষি কাজের জন্য কুন্ডি জাতের মহিষ তেমন উপযোগী নয়।

→ সুস্পষ্ট কপালযুক্ত অপেক্ষাকৃত ছোট মাথা এবং গাভীর ঘাঢ় সরু কিন্তু ষাঁড়ের ঘাঢ় মোটা ও শক্তিশালী।

→ এ জাতের মহিষের শিং খাটো ও মুচড়ানো। শিংয়ের এরূপ বৈশিষ্ট্যের কারণে কুন্ডি নামকরণ হয়েছে।

→ শরীরের রং মিশমিশে কালো, পা বেশ খাটো কিন্তু শক্ত সমর্থ।

মহিষের জাত পরিচিতিঃ মহিষের জাত পরিচিতিঃ কুন্ডি (Kundi) মহিষ) by khamarian.com

চিত্র- কুন্ডি মহিষ

■ জাফরাবাদী (Jaffarabadi / Jafarbadi / Zaffarabadi ) মহিষ

→ ওলান বেশ বড় ও চওড়া কিন্তু প্রজননের জন্য তেমন ভালো নয় এবং ইন্টার-কাফিং সময় বেশ অধিক।

→ ষাঁড়ের ওজন গড়ে ৬০০ কেজি এবং গাভীর ওজন প্রায় ৪৬০ কেজি হয়।

→ মহিষ বলদ কৃষি কাজেও উপযোগী।

→ বৃহৎ লম্বা দেহ কিন্তু আঁটসাঁট নয়। বড় মাথা ও উত্তল আকৃতির কপাল, শিং চওড়া চ্যাপ্টা যা গলার দু’পাশে এসে শেষ প্রান্তে বেঁকে উপরের দিকে বেঁকে থাকে। কান বড় এবং ঝুলানো, ঘাড় পুরু ও চওড়া এব সুস্পষ্ট গলকম্বল ও বৃহৎ বক্ষস্থল।

→ সাধারণত এ জাতের মহিষ কালো বর্ণের হয়। তবে মুখমন্ডল এবং হাঁটুর নিচে মাঝে মাঝে সাদা ছোপ থাকে।

→ ভাল জাতের একটি মহিষ গাভী দৈনিক ১২ থেকে ১৮ লিটার দুধ দেয় এবং প্রতি বিয়ানে ১৮০০ থেকে

২৭০০ কেজি দুধ দেয়।

মহিষের জাত পরিচিতিঃ জাফরাবাদী (Jaffarabadi) মহিষ by khamarian.com

চিত্র- জাফরাবাদী

■ নাগপুরী (Nagpuri) মহিষ

→ তলোয়ারের ন্যায় বিরাট সরু শিং যা পিঠে গিয়ে ঠেকে।

→ গাভীর ওজন প্রায় ৪৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন গড়ে ৫৫০ কেজি।

→ এক বিয়ানে (৩০০ দিন) একটি গাভী ৭৮০ থেকে ১৫১৮ লিটার দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির ভাগ ৭.০ থেকে ৮.৫%।

→ এ জাতের মহিষ কৃষি কাজ কর্মে ধীর স্থির হলেও কৃষি কাজে ব্যবহারের উপযোগী।

.→ দেহের রং কালো তবে মুখমন্ডল, পা ও লেজের আগায় সাদা ছোপ থাকে।

→ নাগপুরী মহিষ উত্তর ভারতের মহিষ অপেক্ষা হালকা, পেট লম্বা, হালকা এবং ছোট লেজ যা হকের নিচ পর্যন্ত যায় ।

→ মাথা ও ঘাঢ় লম্বা এবং বক্ষস্থল মোটা এবং গলকম্বল থাকেনা।

মহিষের জাত পরিচিতিঃ নাগপুরী (Nagpuri) মহিষ by khamarian.com

চিত্র- নাগপুরী

■ প্যান্ডহারপুরী (Pandharpuri) মহিষ

→ ওলান বেশ আঁটসাঁট এবং নলাকার বাঁট। সুস্পষ্ট ন্যাজাল বোনযুক্ত অপ্রশস্ত লম্বা মাথা এবং সমান্তরাল কান।

→ উচ্চ উৎপাদন ক্ষমতার জন্য এ জাতের মহিষ বিখ্যাত এবং প্রতি ১২ মাসে একটি করে বাচ্চা দেয়।

→ মাঝারি পালন ব্যবস্থায় এবং গরম-শুষ্ক আবহাওয়ায় এ জাতের মহিষ প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ লিটার দুধ দেয় কিন্তু উন্নত পালন ব্যবস্থায় প্রতিদিন ১৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দেবার তথ্য রয়েছে।

→ লম্বা তরবারি আকৃতি, কখনো কখনো পাকানো শিং, ৪৫-৫০ সেন্টিমিটার থেকে ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা এবং লম্বা শিং উপর বা পার্শ্বের দিকে বাঁকানো বৈশিষ্ট্য এই জাতের মহিষ সহজেই সনাক্ত করা যায়।

→ এ জাতের অধিকাংশ মহিষ কালো তবে কপাল, পা এবং লেজের চুলে সাদা ছোপ থাকে।

মহিষের জাত পরিচিতিঃ প্যান্ডহারপুরী (Pandharpuri) মহিষ by khamarian.com

চিত্র- প্যান্ডহারপুরী

২। সোয়াম্প মহিষ (Swamp buffalo) মহিষ

সোয়াম্প মহিষের কয়েকটি জাত নিম্নে আলোচনা করা হলো-

■ থাই মহিষ (Thai buffalo) 

→ কুয়াই-কাম জাতের মহিষ কুয়াই-টিউ অপেক্ষা ছোট আকৃতির।

→ থাই জাতের মহিষ গাছের পাতা খেতে পছন্দ করে এবং কুয়াই-টিউ অপেক্ষা কুয়াই-কাম গরম বেশি সহ্য করতে পারে।

→ মূলত কৃষি কাজ ও মাল বহনের উপযোগী এবং খুব কম দুধ দেয় ।

→ লম্বা মুখ মন্ডল ও লম্বা গভীর দেহ থাই মহিষের বৈশিষ্ট্য।

→ কুয়াই-টিউ মহিষের পুরু কালো ত্বকে কালো লোম থাকে কিন্তু কুয়াই-জয়ান জাতের মহিষ হয় লাল বর্ণের।

■ মালয়েশিয়ান মহিষ (Malaysian buffalo) :

→ মালয়েশিয়ান মহিষ মূলত কৃষি কাজ ও মাল বহনে উপযোগী।

→ পশ্চিম মালয়েশিয়ায় মালিয়েশিয়ান সোয়াম্প টাইপ মহিষের আবাসস্থল।

→ সাধারণত এসব মহিষ গাঢ় ধূসর বর্ণের হয় এবং মাঝে মাঝে সাদা বর্ণের হয়ে থাকে।

→ এসব মহিষের শিং অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির।

■ চীনদেশীয় মহিষ (Chinese buffalo)

→ মাথা মাঝারি আকৃতির, গোলাকৃতির শিং, বৃহৎ ও পুরু বক্ষস্থল এবং চওড়া পিঠ।

→ পৈশ্চাদ কোয়াটার হালকা কিন্তু সামনের কোয়টার বেশ বলবান।

→ চীনদেশীয় বিভিন্ন আকারের মহিষ বিভিন্ন প্রদেশে রয়েছে। যেমন- বড় আকারের মহিষ (Human, Hupe & Kiangs প্রদেশে), মাঝারি আকারের মহিষ (Szechwan & Yunnan প্রদেশে) এবং ছোট আকারের মহিষ (Kwangtung & Kwangsig প্রদেশে)।

→ এসব মহিষের রং ধূসর বর্ণের এবং চোয়াল ও বক্ষস্থলে অন্যান্য বর্ণের ছাপ থাকে।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!