Skip to content

 

মহিষ পালনঃ মহিষের খামার বাসস্থান নির্মাণ + মহিষের বাছুর পালন ও বাছুরের খাবার মিল্ক রিপ্লেসারের ও কাফ স্টার্টার তৈরির তালিকা সহ + বাছুর ও দুগ্ধবতী মহিষের খাদ্য তালিকা ও ব্যবস্থাপনা + মহিষের প্রজনন প্রক্রিয়া + মহিষের যত্ন ও পরিচর্যা।

মহিষ পালনঃ মহিষের খামার বাসস্থান নির্মাণ + মহিষের বাছুর পালন ও বাছুরের খাবার মিল্ক রিপ্লেসারের ও কাফ স্টার্টার তৈরির তালিকা সহ + বাছুর ও দুগ্ধবতী মহিষের খাদ্য তালিকা ও ব্যবস্থাপনা + মহিষের প্রজনন প্রক্রিয়া + মহিষের যত্ন ও পরিচর্যা।

আজকে আমরা আলোচনা করবঃ

মহিষের বাসস্থানঃ

গরু, ছাগল এবং অন্যান্য গবাদিপশুর ন্যায় মহিষেরও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের প্রয়োজন। যদিও গ্রামে গঞ্জে দুচারটা মহিষ পালনের ক্ষেত্রে বাসস্থান বা ঘরের ওপর তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। তথাপি, খামারভিত্তিতে একসঙ্গে অনেক মহিষ পালন করতে হলে ঘর তৈরির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, হাওড় এলাকা ও আঁখ উৎপাদনকারী এলাকায় অনেকেই ৪০/৫০ থেকে ১০০ বা ততোধিক মহিষ পালন করে থাকেন। এদের জন্য বাসস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহিষের ঘর গরুর অনুরূপভাবেই তৈরি করা যায়। তবে, ঘর তৈরিতে মজবুত অথচ সন্তা জিনিসপত্রই ব্যবহার করা উচিত। মহিষের ঘর তৈরিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিত। যেমন- ঘর স্বাস্থ্যসম্মত ও আরামপ্রদ হবে। এতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকবে। মহিষ ও ভেড়া পালন গরু, ছাগল এবং অন্যান্য গবাদিপশুর ন্যায় মহিষেরও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের প্রয়োজন। মহিষের ঘর গরুর অনুরূপভাবেই তৈরি করা যায়। তবে, ঘর তৈরিতে মজবুত অথচ সস্তা জিনিসপত্রই ব্যবহার করা উচিত। মেঝে মজবুত হবে ও তাতে পিচ্ছিলভাব থাকবে না। ঘরে প্রতিটি মহিষের জন্য বয়স অনুপাতে প্রয়োজনীয় জায়গার ব্যবস্থা থাকবে। উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। এখানে বিভিন্ন বয়সের মহিষের জন্য ঘর ও প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ আলাদাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

বাছুরের ঘরঃ

বাছুরের ঘর শুষ্ক ও আলো-বাতাসপূর্ণ হওয়া উচিত। এতে ঝড়ঝাপ্টা ও ঠান্ডা হাওয়া প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে। জন্মের প্রথম মাসে একঘরে একসঙ্গে অনেক বাছুর রাখা উচিত নয়। বরং এদেরকে পৃথক পৃথক খোপে (pen) রাখলে প্রতিটি বাছুরের আলাদাভাবে যত্ন নিতে সুবিধা হয়। একমাস বয়স পর্যন্ত প্রতিটি বাছুরের জন্য ১.০ মিটার/ ১.৫ মিটার আকারের খোপের প্রয়োজন। বাছুরের বয়স একমাসের বেশি হলে ১০, ১৫, ২০ বা ততোধিক বাছুর একসঙ্গে একই ঘরে পালন করা যেতে পারে। এসব ঘরের সামনের দিকে কিছুটা খোলা জায়গা রাখতে হবে যাতে এরা সেখানে সুবিধামতো চলাফেরা বা ব্যয়াম করতে পারে এবং দেহে সূর্যের আলো লাগাতে পারে।

বকনা মহিষের ঘরঃ

গ্রামাঞ্চলে বকনা মহিষ অন্যান্য মহিষের সঙ্গে একই ঘরে বা গোয়ালে রাখা হয়। এতে অনেক সময় গোয়াল ঘর অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পালন করতে হলে অবশ্যই বকনা ও ষাঁড় মহিষ পৃথক পৃথক ঘরে রাখতে হবে। এদেরকে সাধারণত ছাদবিহীন বা উদোম ঘরে (loose house) রাখা হয়। এখানে বিশ্রাম ও খাবার খাওয়ানোর জায়গার ব্যবস্থা থাকে। বিশ্রামের স্থানটুকু ছাদযুক্ত হয় এবং মেঝেতে খড় বা শুকনো ঘাস বিছানো থাকে। খাবার খাওয়ানোর জায়গাটি পাকা হবে। পানি ও খাবারের জন্য আলাদা পাত্র বা চাড়ির (manger) ব্যবস্থা করতে হবে। তবে, এই স্থানে কোনো ছাদ থাকে না। এই ধরনের ঘরে প্রতিটি অগর্ভবতী বকনা মহিষের জন্য ৫-৬ বর্গ মিটার উদোম / ছাদবিহীন স্থান; ১.০-১.৫ বর্গ মিটার ছাদযুক্ত স্থান ও ৪০-৫০ সে.মি. দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট চাড়ি প্রয়োজন। প্রতিটি গর্ভবতী বকনার জন্য ৮-১০ বর্গ মিটার উদোম/ছাদবিহীন ছান; ৩-৪ বর্গ মিটার ছাদযুক্ত স্থান ও ৫০- ৭৫ সে.মি. দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট চাড়ি প্রয়োজন।

প্রসূতি মহিষের ঘরঃ

গর্ভবতী মহিষকে বাচ্চা প্রসবের সপ্তাহখানেক পূর্বে অন্যান্য মহিষ থেকে পৃথক করে প্রসূতি ঘরে (maternity box or pen) রাখা উচিত। প্রসূতি ঘর ৯-১০ বর্গ মিটারের চেয়ে ছোট হওয়া উচিত নয় ।

এঁড়ে মহিষের ঘরঃ

এঁড়ে মহিষকে ছয় মাস বয়সের সময় বকনা থেকে পৃথক করে আলাদা ঘরে পালন করা হয়।এঁড়ের ঘর বকনার মতোই উদোম হয়। ৬-১২ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতিটি এঁড়ে মহিষের জন্য ৪-৫ বর্গ মিটার বিশ্রামের স্থান এবং ১৩-১৪ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতিটির জন্য ৫-৬ বর্গ মিটার বিশ্রামের স্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

ষাঁড় মহিষের ঘরঃ

একটি পূর্ণবয়স্ক ষাঁড় মহিষের জন্য ১০-১২ বর্গ মিটার আয়তনবিশিষ্ট ছাদযুক্ত ঘরের প্রয়োজন। এই ঘরের দুপাৰ্শ্ব উন্মুক্ত হবে এবং উন্মুক্ত দিকে ১৫-২০ বর্গ মিটার স্থান জুড়ে খোলা ওঠোন থাকবে। ওঠোনের চারদিকে মোটা লোহার পাইপ বা শক্ত ইটের দেয়াল থাকা উচিত। ষাঁড়ের ঘরে খাবারের চাড়ি ও ষাঁড়কে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।

মহিষ পালনঃ মহিষের খামার বাসস্থান নির্মাণ + মহিষের বাছুর পালন ও বাছুরের খাবার মিল্ক রিপ্লেসারের ও কাফ স্টার্টার তৈরির তালিকা সহ + বাছুর ও দুগ্ধবতী মহিষের খাদ্য তালিকা ও ব্যবস্থাপনা + মহিষের প্রজনন প্রক্রিয়া + মহিষের যত্ন ও পরিচর্যা।

প্রধানত দু’পদ্ধতিতে মহিষের বাছুর পালন করা হয়। যথা- ১। সাকলিং পদ্ধতিতে খাওয়ানো (Suckling system of feeding), এবং ২। কৃত্রিম পদ্ধতিতে খাওয়ানো (Artificial system of feeding)।

১। সাকলিং পদ্ধতিতে খাওয়ানো (Suckling system of feeding) :

→ মহিষ বাছরে গড় জন্ম ওজন প্রায় ৩০ কেজি। বাছরকে ১ থেকে ২ লিটার পর্যন্ত তার মার দুধ চুষে খেতে দেয়া হয়।

→ সাধারণত এ পদ্ধতিতে দুধ দোহার আগে ও পরে বাছুরকে তার মায়ের বাঁট চুষে দুধ খেতে দেয়া হয়। এতে বাছুর তার প্রয়োজনমত দুধ খেতে পারে না। এছাড়া বাছুর কতটা দুধখোলা সে সম্পর্কেও জানা যায় না।

→ অবশ্য বাছুরের ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ বয়সের পরে আর তেমন দুধ খেতে হয়না। বাছুরকে শুধু দুধ নামার জন্য দুধের বাঁট চুষতে দেয়া হয়। ফলে বাছুরের উচ্চ মৃত্যুর হার হয়।

→ সাকলিং বাছুর পালনের একটি স্বাভাবিক পদ্ধতি। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক এক থেকে ৫টি মহিষ পালন করে এবং এই পদ্ধতিতে বাছুর পালন করে থাকে।

২। কৃত্রিম পদ্ধতিতে খাওয়ানো (Artificial system of feeding) :

→ কৃত্রিম পদ্ধতিতে পালিত বাছুরকে কাফ্ স্টাটারসহ ৪৫ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ দুধ খাওয়ানো হয়।

→ বাছুরের ১৫ দিন বয়স থেকে মিল্ক রিপ্লেসার এবং প্রতি লিটার দুধের পরিবর্তে ২০০ গ্রাম পাউডার দুধ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়।

→ দুধ খাওয়ানোর পরিবর্তে প্রোটিন ও এনার্জি সমৃদ্ধ যে বিশেষ কনসেনট্রেট খাদ্য বাছুরকে খাওয়ানো হয় তাকে মিল্ক রিপ্লেসার বলা হয়।

→ বড় মহিষের ফার্মে কৃত্রিম পদ্ধতিতে বাছুরকে খাওয়ানো হয়। উভয় পদ্ধতিতে পালিত বাছুরকে জন্মের প্রথম চারদিন পর্যাপ্ত শালদুধ খাওয়াতে হয়।

→ বাছুরকে পেন বা খোঁয়াড়ে রেখে পালন করে মাই ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হয়।

টেবিল: মহিষ পালনে বাছুরের জন্য মিল্ক রিপ্লেসার তৈরিঃ

ক্র.নং.উপাদানপরিমাণ (কেজি)
১.গমের ময়দা১০.০
২.ফিস মিল১২.০
৩.লিনসিড মিল৪০.০
৪.দুধ১৩.০
৫.নারিকেল তেল০৭.০
৬.লিনসিড তেল০৩.০
৭.সাইট্রিক অ্যাসিড০১.৫
৮.লালী গুড়১০.০
৯.মিনারেল মিকশ্চার০৩.০
১০.বিউটারিক অ্যাসিড০০.৩
১১.অ্যান্টিবায়োটিক০০.৩
১২.ভিটামিন প্রিমিক্সি০০.১২৫
মোট৯৯.৫

* নারিকেল তেলে পর্যাপ্ত লিনোলিক অ্যাসিড রয়েছে।

টেবিল: মিল্ক রিপ্লেসারের উপযোগী মিনারেল মিকশ্চার তৈরিঃ

ক্র.নং.মিনরেলসপরিমাণ (কেজি)
ডাইক্যালসিয়াম ফসফেট১.৬৫০০
সোডিয়াম ক্লোরাইড০.৯০০০
ক্যালসিয়াম কার্বনেট০.৩৩১২
ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট০.৯০০
ফেরাস সালফেট০.০১৫০
কপার সালফেট০.০০২১
ম্যাগনেশিয়াম ডাইঅক্সাইড০.০০২১
কোবাল্ট ক্লোরাইড০.০০১৫
পটাসিয়াম আয়োডাইড০.০০০৩
১০সোডিয়াম ফুরয়েড০.০০০৩
১১জিঙ্ক সালফেট০.০০৭৫
সর্বমোট৩.০০০০

টেবিল: বাছুরকে মিল্ক রিপ্লেসার খাওয়ানোর তালিকাঃ

বাছুরের বয়স (দিন)দৈনিক ওজন (কেজি)কলস্ট্রামদুধ (কেজি)মিল্ক রিপ্লেসার (গ্রাম)
০০–০৫
০৬–০৯১/১০*১/১০*
১০–১৩০৫০
১৪–১৭১০০
১৮–২১০.৫১৭৫
২২–২৫১.০২৫০
২৬–২৯১.৫৩২৫
৩০–৩৩৩৫২.০৪০০
৩৪-৩৬৪০২.৫৫০০
৪০১.৫৬০০
৪৫১.৫৭০০
৫০১.০৮০০
৫৫১.০৯০০
৬০১.০১০০০
৭৫১.০১০০০

* দৈহিক ওজনের ১০ ভাগের ১ ভাগ

** মিল্ক রিপ্লেসারে শুষ্ক পাউডার ফুটানো গরম পানিতে ১ : ৫ থেকে ১:৪ অনুপাতে মিশিয়ে বাছুরের দেহের তাপমাত্রায় অবস্থায় এনে খাওয়াতে হবে।

কাফ স্টার্টারঃ (Calf starter)

→ বাছুর যখন থেকে প্রত্যহ কমপক্ষে ৫০০ গ্রাম কাফ স্টার্টার খেতে পারবে সে মুহূর্ত দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যেতে পারে।

→ বাছুরের ৭ থেকে ৮ সপ্তাহ বয়সে সম্পূর্ণভাবে তরল দুধ খাওয়ানো বন্ধ বা মাই ছাড়ানো যায়।

→ আর্থিক বিবেচনায় পালনের জন্য, বাছুরের দৈহিক ওজনের ১০ ভাগ হিসেবে ১০ দিন বয়স পর্যন্ত আসল দুধ (হোল মিল্ক), ৯০ দিন বয়স পর্যন্ত যত খেতে চায় ততো মিল্ক রিপ্লেসার এবং ১০ দিন বয়স থেকে উৎকৃষ্টমানে লেগুম ঘাস বা ঘাস-হে সরবরাহ করতে হবে।

→ একটি আদর্শ কাফ্ স্টার্টারে ২০ থেকে ৩০% ডিসিপি এবং ৭০ থেকে ৭৩% টিডিএন থাকে।

→ কাফ্ স্টার্টার পদ্ধতিতে বাছুরকে খাওয়ালে মানুষের জন্য প্রতি মহিষ গাভী থেকে প্রায় ২০০ কেজি দুধ বাঁচানো সম্ভব হবে।

→ বাণিজ্যিক ডেয়রি ফার্মে যেখানে স্কিম-মিল্ক (ননী তোলা দুধ) সরবরাহ নেই সেখানে কাফ স্টার্টার পদ্ধতিতে বাছুর পালন করা যায়।

→ দুধের বিকল্প খাদ্য হিসেবে বাছুরের দৈহিক চাহিদা অনুযায়ী তৈরি শুষ্ক দানাদার খাদ্য মিশ্রণ (Dry concentrate mixture) যা বাছুরের প্রথম সপ্তাহ বয়স থেকে খাওয়ানো হয় তাকে কাফ্ স্টার্টার বলে ।

→ সাধারণত দুধ খাওয়ানোর পরে বাছুরকে তার ২য় সপ্তাহ বয়স থেকে শুষ্ক কাফ স্টার্টার এবং উৎকৃষ্টমানের হে বা সবুজ সরস কাঁচা ঘাস খাওয়ানো হয়।

টেবিল: কাফ স্টার্টারের তৈরিঃ

ক্র.নং.উপাদানপরিমাণ (%)
১.ভূট্টা/বার্লি চূর্ণ৫০* ১০০ কেজি কাফ স্টার্টারে মিশাতে হবে।
২.চীনাবাদামের খৈল৩০* তরল লালীগুড় ৫ – ১০ কেজি।
৩.গমের ভূষি০৮* মাল্টিভিটামিন প্রিমিক্স ১০ গ্রাম
৪.স্কীম মিল্ক পাউডার/ফিস মিল১০* লবণ ৫০০ গ্রাম
৫.মিনারেল মিকশ্চার*০২* অ্যান্টিবায়োটিক ২০ গ্রাম
সর্বসমেত১০০

টেবিল: জন্মের পর থেকে তিন মাস বয়স পর্যন্ত বাছুরের সাধারণ খাদ্য তালিকাঃ

বাছুরের বয়সগাভীর দুধ (মিলিলিটার)মাখন তোলা দুধ^২ (মিলিলিটার)কাফ স্টার্টার^৩ (গ্রাম)সবুজ ঘাস/উৎকৃষ্ট মানের হে
১ম+তিন+দিন+শাল+দুধ
৪র্থ থেকে ৭ম দিন
২য় সপ্তাহ
৩য় সপ্তাহ
৪র্থ সপ্তাহ
৫ম সপ্তাহ
৬ষ্ঠ সপ্তাহ
৭ম সপ্তাহ
৮ম সপ্তাহ
৯ম সপ্তাহ
১০ম সপ্তাহ
১১তম সপ্তাহ
১২তম সপ্তাহ
১৩তম সপ্তাহ
২৫০০
২৫০০
৩০০০
৩২৫০
৩০০০
১৫০০












১০০০
২৫০০
২০০০
১৭৫০
১২৫০





০৫০
১০০
৩০০
৪০০
৬০০
৭oo
৮০০
১০০০
১২০০
১৩০০
১৪০০
১৭০০


২৫০
৩৫০
৫০০
৫৫০
৬০০
৭oo
৮০০
১০০০
১১০০
১২০০
১৪০০
১৯০০

বাছুরকে দুধ খাওয়ানোর হিসাবঃ

১ম তিন সপ্তাহ প্রতি ১০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য প্রতিদিন ১ কেজি, পরবর্তী ২ সপ্তাহের জন্য প্রতি ১৫ কেজির জন্য ১ কেজি এবং পরবর্তীতে ২০ কেজির জন্য ১ কেজি হিসেবে দুধ খাওয়াতে হবে।

পঞ্চম সপ্তাহ থেকে স্কিম মিল্কঃ

কাফ স্টার্টার- শুষ্ক পাউডার গরম ফুটন্ত পানিতে মিশিয়ে সুপের ন্যায় তৈরি করে এবং দেহের তাপমাত্রায় (৩৮ থেকে ৩৯° সেন্টিগ্রেড) ভাগ করে ২-৩ বার খাওয়াতে হয়।

মহিষ পালনঃ মহিষের খামার বাসস্থান নির্মাণ + মহিষের বাছুর পালন ও বাছুরের খাবার মিল্ক রিপ্লেসারের ও কাফ স্টার্টার তৈরির তালিকা সহ + বাছুর ও দুগ্ধবতী মহিষের খাদ্য তালিকা ও ব্যবস্থাপনা + মহিষের প্রজনন প্রক্রিয়া + মহিষের যত্ন ও পরিচর্যা।

গাভীর রেশন প্রধানত তিন ধরনের হয়। যথা-

১। মেনটেন্যান্স রেশন (Maintenance ration)

২। প্রডাকশন রেশন (Production ration )

  • দুধ উৎপাদন – দুধের বৈশিষ্ট্য ও পরিমাণ এবং
  • গর্ভাবস্থা ।

৩। বিশেষ রেশন (Special ration )

  • ১ম দুধদানকালীন বরাদ্দ,
  • স্টীমিং আপ এবং
  • চ্যালেঞ্জ ফিডিং ।

→ দুধাল জাতের একটি মহিষ গাভী সাধারণত সর্বোচ্চ দুধ উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ থেকে ২০ লিটার দুধ দেয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুধ।

→ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ রেশন সরবরাহ করা প্রয়োজন। নিম্নের যে কোন একটি রেশন খাওয়ানো যায়।

প্রায় ৫০০ কেজি দৈহিক ওজন বিশিষ্ট ৭% চর্বিযুক্ত ১০ লিটার দুধদানকারী মহিষ গাভীর রেশন নিম্নোক্ত ভাবে প্রস্তুত করা যায়।

  • ২০ কেজি কাঁচা ঘাস + ২০ কেজি সাইলেজ + ২ কেজি খড় + ২ কেজি দানাদার খাদ্য।
  • ৮ কেজি খড় + ৭ কেজি দানাদার খাদ্য।
  • সবুজ বারসীম ঘাস ৬০ কেজি + ধানের খড় ৫.৫ কেজি + ১ কেজি গম বা ধানের ভূষি।
  • সবুজ ঘাস ২০ কেজি + দানাদার খাদ্য ৪ কেজি + ৫ কেজি ধানের খড়।
  • সবুজ ঘাস ২০ কেজি + ৫ কেজি হে + ২ কেজি খড় ২ কেজি দানাদার খাদ্য ।
  • সবুজ বারসীম ঘাস ৮৫ কেজি।

টেবিল: সাধারণ প্রজনন প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যঃ

ক্র.নং.বৈশিষ্ট্যউপাত্ত
১ম গর্ভধারণের বয়স৩৪ মাস
যৌবনারম্ভে ওজন১৯৮ কেজি
১ম গর্ভধারণের বয়স৩৭ মাস
১ম বাচ্চা প্রসবের বয়স৪৭ মাস
যৌন চক্রের কাল২১.৪ মাস
ইস্ট্রাস চক্রের মেয়াদ২৪ ঘণ্টা
ডিম্বস্ফোটনের সময়১০.৭ ঘণ্টা*
স্ত্রী জনন অঙ্গে শুক্রাণুর আয়ু৩৬-৪৯ ঘণ্টা
কৃত্রিম প্রজননের উপযুক্ত সময়৪-৮ ঘণ্টা*
১০গর্ভবস্থাকাল৩১৬ দিন
১১প্রসবোত্তর জরায়ুর ইনভলুশন৩৯.৩ দিন
১২প্রসবোত্তর ইস্ট্রাস৪০.৮ দিন

* ইন্ট্রাসের শেষে।

টেবিল: মাস অনুযায়ী মহিষের ইস্ট্রাস ও বাচ্চা প্রসবের তথ্যঃ

ক্র. নং.মাসইস্ট্রাস % (সংখ্যা)বাচ্চা প্রসব % (সংখ্যা)
জানুয়ারি১০.৪৪ (২৮২)৫.৫২ (৭৬)
ফেব্রুয়ারি০৯.০৩ (২৪৪)২.৯৮ (৪১)
মার্চ০৭.৩৩ (১৯৮)২.৯৮ (৪১)
এপ্রিল০৬.৪১ (১৭৩)৪.৭২ (৬৫)
মে০৫.২২ (১৪১)৪.৬৫ (০৪)
জুন০৫.৮৫ (১৫৮)৭.৭৭ (১০৭)
জুলাই৫.৯৬ (১৬১)১২.৫৬ (১৭৩)
আগস্ট৮.২৬ (২২৩)১৫.২৫ (২১০)
সেপ্টেম্বর৯.৬৬ (২৬১)১৫.৮৩ (২১৮)
১০অক্টেম্বর১০.০৩ (২৯৮)১৩.৭৩ (১৮৯)
১১নভেম্বর০৯.৮৫ (২৬৬)০৮.২০ (১১৩)
১২ডিসেম্বর১০.৯৬ (২৯৬)০৫.৮১ (৮০)
সর্বমোট১০০ (২৭০১)১০০ (১৩৭৭)
মহিষ পালনঃ মহিষের খামার বাসস্থান নির্মাণ + মহিষের বাছুর পালন ও বাছুরের খাবার মিল্ক রিপ্লেসারের ও কাফ স্টার্টার তৈরির তালিকা সহ + বাছুর ও দুগ্ধবতী মহিষের খাদ্য তালিকা ও ব্যবস্থাপনা + মহিষের প্রজনন প্রক্রিয়া + মহিষের যত্ন ও পরিচর্যা।

মহিষের পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন ব্যবস্থা-

মহিষকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখা এবং এদের থেকে পর্যাপ্ত উৎপাদন পেতে হলে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও যত্ন বা পরিচর্যার প্রয়োজন । তাছাড়া এদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে লালনপালন করতে হবে। পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন বলতে সময়মতো খাবার পরিবেশন করা, গর্ভবতী মহিষের যত্ন, বিভিন্ন বয়সের মহিষের পরিচর্যা, অসুস্থদের চিকিৎসা করানো, সুস্থগুলোকে সময়মতো টিকা প্রদান, কৃমির ওষুধ খাওয়ানো, ঘর ও আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করা ইত্যাদি বোঝায়। সব বয়সের মহিষের জন্যই কিছু কিছু সাধারণ পরিচর্যা রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন বয়স ও অবস্থাভেদে বিশেষ ধরনের পরিচর্যারও প্রয়োজন হয়।

সাধারণ পরিচর্যাসমূহঃ

O এদের গা ভালোভাবে ডলে দিতে হবে এবং নিয়মিত গোসলের ব্যবস্থা করতে হবে।

O মহিষের সংখ্যা বেশি হলে চিহ্নিত করার জন্য কানে ট্যাগ নম্বর লাগাতে হবে।

O প্রয়োজনে, বিশেষ করে ভারবাহী মহিষের ক্ষেত্রে, পায়ে লোহার তৈরি সু বা জুতো লাগাতে হবে।

O নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। তাছাড়া পরিষ্কার পানিরও ব্যবস্থা করতে হবে।

O প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দুগ্ধবতী গাভীর দুধ দোহন করতে হবে। দুধ দোহনের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

O মহিষ মূলতঃ আধা-পানির (semi-aquatic) নিশাচর প্রাণী। তাই পানির প্রতি এদের বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। মহিষের দেহে প্রয়োজনের তুলনায় ঘর্মগ্রন্থির সংখ্যা খুবই কম। তাই নদীর মহিষ পরিষ্কার পানি এবং জলাশয়ের মহিষ ডোবা- নালার কর্দমাক্ত পানি গায়ে মেখে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। একারণে যেখানে ডোবা-নালা নেই সেখানে ছায়াযুক্ত স্থানে পাইপের সাহায্যে দিনে অন্তত দুবার মহিষের গায়ে পানি ছিটানো প্রয়োজন।

O প্রতিদিন এদের ঘর পরিষ্কার করতে হবে। গোবর, চানা আলাদা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একবা জীবাণুনাশক ওষুধ (যেমন- আয়োসান) দিয়ে ঘর জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

O ঘরের কোনো মহিষ অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পৃথক করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

O সকল বয়সের মহিষকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে ও টিকা প্রদান করতে হবে।

বাছুরের পরিচর্যাঃ

প্রসবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাছুর ও প্রসূতি মহিষের আলাদা বাসস্থান ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। সদ্যপ্রসূত বাচ্চু যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে শালদুধ বা কলস্ট্রাম পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাছুরের নাভিতে জীবাণুনাশক ওষুধ লাগাতে হবে ও নিয়মিত যত্ন করতে হবে যেন তাতে কোনো রোগজীবাণুর সংক্রমণ না ঘটে। বাছুরের বয়স দুসপ্তাহ হওয়ার পূর্বে কৃমিনাশক ওষুধ, যেমন- পাইপারজিন অ্যাডিপেট বা সাইট্রেট সেবন করাতে হবে। গোবসন্ত, বাদলা, তড়কা ও গলাফোল্ রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিকটস্থ ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শমতো নির্দিষ্ট সময়ে টিকা প্রদান করতে হবে প্রয়োজনবোধে বাছুরকে নির্দিষ্ট সময়ে বলদ বানিয়ে নিতে হবে।

বকনা মহিষের পরিচর্যাঃ

বকনা মহিষের সঠিক পরিচর্যার ওপর এদের থেকে ভবিষ্যতে ভালো উৎপাদন পাওয়া নির্ভর করে। বকনা মহি পরবর্তীকালে দুগ্ধবতী মহিষকে প্রতিস্থাপন করে, তাই এদেরকে সঠিকভাবে যত্ন না করলে ভবিষ্যতে দুধ উৎপাদন ভালে হবে না। বকনা মহিষের যত্ন সঠিক না হলে এদের পূর্ণতাপ্রাপ্তি দেরিতে ঘটবে। ফলে বাচ্চা পেতে বিলম্ব হবে। এদে খাবারদাবারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাছাড়া এদের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কোনে পোকামাকড় যেন বকনার ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত ধৌত করা, গা ডলা ও পাি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

গর্ভবতী ও প্রসূতি মহিষের পরিচর্যাঃ

গর্ভবতী মহিষকে বাচ্চা প্রসবের অন্তত এক সপ্তাহ পূর্বে অন্যান্য মহিষ থেকে পৃথক করে প্রসূতি ঘরে পালন করতে হবে। প্রসূতি ঘরে স্থানান্তরের পূর্বে তা উত্তমরূপে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। গর্ভবতী মহিষকে প্রসবের ৬-৮ সপ্তাহ পূর্ব থেকে দানাদার খাদ্যসহ প্রচুর পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করতে হবে। প্রসবের এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে প্রচুর কাঁচা ঘাস সরবরাহ করতে হবে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। প্রসবের সময় কোনো প্রসববিঘ্ন ঘটে কি-না তা দূর থেকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রসববিঘ্ন দেখা দিলে বা প্রসবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গর্ভফুল (placenta) জরায়ু (uterus) থেকে বেরিয়ে না আসলে নিকটস্থ ভেটেরিনারি সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রসবের পর প্রসূতির দেহ কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এরপর এদেরকে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করতে হবে।

ষাঁড় মহিষের পরিচর্যাঃ

সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য ষাঁড় মহিষকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আলো-বাতাসপূর্ণ ঘরে রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যয়ামের জন্য জনশূন্য রাস্তায় বা খোলা মাঠে এক ঘন্টাকাল দৌড়ঝাঁপ করানোই যথেষ্ট। ষাঁড়ের বীর্য সংগ্রহের মাত্রার ওপর এর স্বাস্থ্য নির্ভরশীল। ৩০০ কেজি ওজন ও দুই বছরের কম বয়সের ষাঁড়ের বীর্য সংগ্রহ করা উচিত নয়। ২-৩ বছর বয়স্ক ষাঁড়ের বীর্য সপ্তাহে দু’বারের বেশি সংগ্রহ করা বা দু’টির বেশি মহিষকে পাল দেয়া যাবে না। তিন বছরের বেশি বয়স্ক ষাঁড় সপ্তাহে প্রতিদিন একটি করে স্পী মহিষকে পাল দিতে বা একদিন পরপর বীর্যপাত ঘটাতে সক্ষম। বদরাগী ষাড়কে বিশেষভাবে নির্মিত ঘরে লোহার শিকলে আবদ্ধ করে রাখা প্রয়োজন ।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!