বিষয়: মাছের খাবার/খাদ্য শিকল: প্লাঙ্কটন, ফাইটো-প্ল্যাঙ্কটন, জুয়োপ্লাঙ্কটন, মাছ চাষে পানির দৃষিত অবস্থার কারণ, মাছ চাষে কীটনাশক ওষুধ এর প্রভাব, মাছ চাষে উন্নত খাদ্য ব্যবস্থাপনা, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
হ্যাশট্যাগ:#মাছের খাবার/খাদ্য শিকল#প্লাঙ্কটন, ফাইটো-প্ল্যাঙ্কটন, জুয়োপ্লাঙ্কটন#মাছ চাষে পানির দৃষিত অবস্থার কারণ#মাছ চাষে কীটনাশক ওষুধ এর প্রভাব#মাছ চাষে উন্নত খাদ্য ব্যবস্থাপনা#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ ও কীট-কীটাণু খেয়ে মাছেরা জীবন ধারণ করে। এ খাবারগুলোকে মৎস্য বিজ্ঞানে ‘প্লাঙ্কটন‘ নামে অভিহিত করা হয়। ১৮৮৭ সালে ভিক্টর হেসেন্ নামক জনৈক মৎস্য বিজ্ঞানী মাছের খাবারসমূহকে প্রথমে ‘প্লাঙ্কটন’ নামে নামকরণ করেছিলেন। এরা পানির স্রোত বা তরঙ্গের প্রভাবে পানির মধ্যে ভেসে বেড়ায় কিন্তু চলাফেরা করার মতো এদের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই।
প্ল্যাঙ্কটন সাধারণত দু প্রকার। যথা-
- উদ্ভিদ জাতীয়। উদ্ভিদ জাতীয় প্লাঙ্কটনকে ফাইটো-প্ল্যাঙ্কটন বলে।
- ও প্রাণী জাতীয়। প্রাণী জাতীয়গুলোকে জুয়োপ্লাঙ্কটন বলে। ব্যাক্টেরিয়া, ফাঞ্জাই ও আল্জি এগুলো ফাইটো-প্ল্যাঙ্কটন। সাইক্লপস্, ডেফনিয়া, কোপিপড়া, এরা জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন।
পানির জগতে প্রাণীসমূহের জীবনচক্র আলোচনা করলে দেখা যায় যে, একটি প্রাণী আরেকটি প্রাণীর সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। একটিকে খেয়ে অন্যটি বেঁচে থাকে। এ জাতীয় একটি চক্রকে ‘খাদ্য শিকল’ বলে।
মাছেরাও এ খাদ্য শিকল থেকে আলাদা নয়, বরং একটি স্তর মাত্র।
প্রাকৃতিক নিয়মে কিছু সংখ্যক প্রাণী অনবরতই মৃত্যুবরণ করে এবং মৃতের কিছু অংশ সর্বদাই ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা পরিপুষ্টি লবণে রূপান্তরিত হয়ে জলাশয়সমূহে বিরাজ করে।
পরিসৃষ্টি লবণের মধ্যে নাইট্রোজেন্ ও ফসফরাস সমপাউন্ড আছে এবং এরা প্রাকৃতিক নিয়মে সূর্যকিরণের উপস্থিতিতে ব্যাক্টেরিয়া, শেওলা ও আল্জি প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ বা ফাইটো প্লাঙ্কটনের জন্ম দেয় প্রাণীরা এগুলোকে খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার এ প্রাণীদেরই কিছু অংশ মৃত্যুর পরে পরিপুষ্টি লবণে পরিণত হয়। এরূপ একটি খাদ্য শিকলকে সেপ্রোফাটিইক্ খাদ্য শিকল বলে।
মাছের খাদ্য শিকলের স্তর
খাদ্য শিকলের স্তরগুলো হলো:
- প্রথম স্তর– সবুজ উদ্ভিদ 1
- দ্বিতীয় স্তর- তৃণভোজী প্রাণী 1
- তৃতীয় স্তর— নিম্ন মাংসভোজী প্রাণী।
- চতুর্থ স্তর- উচ্চ মাধ্যমিক মাংসভোজী প্রাণী |
- এক স্তরের প্রাণীদেরকে অন্য স্তরের প্রাণীরা খায়। সূর্যকিরণের সাহায্যে উদ্ভিদ প্রাথমিক স্তরে যে পরিমাণ খাদ্য বা শক্তি সৃষ্টি করে তা ক্রমাগতভাবে ভক্ষণ ও ভক্ষিত হওয়ার লগ্নে প্রতি স্তরেই কিছু হারায়। আর সে জন্যেই খাদ্য শিকল যত ছোট হবে ততই খাদ্যের বা শক্তির অপচয়ের সম্ভাবনা কম। এ থেকে আভাস পাওয়া যায় যে মাছগুলোকে সরাসরি বেশি পরিমাণ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন খাওয়াতে পারলে মাছের বৃদ্ধি বেশি হবে।
- কাতলা মাছগুলো প্রায়শ তৃণভোজী বলেই অন্যান্য মাছের তুলনায় পুকুর ও দীঘিতে এদের বৃদ্ধি বেশি।
- ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন যে খাবার সৃষ্টি করে তা সর্বপ্রথমেই তৃণভোজী প্রাণী আহরণ করে। এদের শত্রু আছে এবং এরা মাংসাসী বা রাক্ষসী প্রাণী কর্তৃক শিকারে পরিণত হয় আবার ছোট ছোট মাংসাশী প্রাণীদেরকে বড় বড় মাংসাশী প্রাণীরা খেয়ে ফেলে। এমনিভাবে একে অন্যকে খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু মূলত সকলকেই উদ্ভিদের উপর নির্ভর করতে হয়। এ জন্য ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন্কে শক্তির উৎপাদক শ্রেণী এবং জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন্ ও মাছগুলোকে ব্যবহারিক শ্রেণী বলা যায়।
- খাদ্যের অভ্যাস অনুযায়ী মাছগুলোকে প্রধানত তৃণভোজী সর্বভোজী বা রাক্ষুসী মাছ হিসেবে শ্রেণি বিন্যাস করা চলে। কোনো কোনো মাছ পানির প্রাণীভোজী ও উপরের স্তরেরর খাবার খায়; আবার কোনো কোনোটি সর্ব স্তরের খাদ্যই ভক্ষণ করে।
- জুয়োপ্ল্যাঙ্কটনের প্রতি অধিকাংশ মাছেরই আকর্ষণ আছে। শুধু ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের উপর নির্ভরশীল এমন মাছ একটিও নেই। প্রায় সব মাছই এ দুই জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। পঁচা পাতা, পঁচা ঘাস, পঁচা মাংস প্রভৃতি বিবিধ প্রকার জৈব পদার্থের প্রতি অনেক মাছেরই আকর্ষণ আছে। তবে পুকুর ডোবায় পঁচা জাতীয় পদার্থের পরিমাণ বেশি হলে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয় এবং মাছ মরে যায়।
- রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউস প্রভৃতি মাছসমূহের মুখে কোনো দাঁত নেই। এদের গলায় দাঁত আছে। দাঁতের মাড়িগুলো শক্ত ও চামড়ায় আবৃত। গলার দাঁত ও মাড়ির চামড়া দিয়ে তারা তাদের খাবার চর্বন করে।
- এ চার জাতীয় মাছের মধ্যে কাতলা মাছ পানির উপরের স্তর থেকে খাদ্য নেয়, রুই মাছ, কালবাউস ও মৃগেল মাছ নিচের স্তরের খাদ্য খেয়ে থাকে। মাগুর, শিং, পাবদা, গারোয়া, বাচা, টেংরা ও আইড় প্রভৃতি মাছগুলো পানির নিম্নস্তরের খাবার খায়। স্বভাবতই পানির নিম্নস্তরের জৈব পদার্থ ও জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন এরা ভক্ষণ করে। মুখের অগ্রভাগে মোছের সাহায্যে এরা পানির তলদেশে মাটির মধ্যে খাবার খুঁজে বেড়ায়।
- বোয়াল মাছের চোয়াল খুব শক্ত এবং ইন্সাইজার ও কেনাইন্ দাঁতসমূহ খুবই শক্তিশালী। এটা অন্যান্য মাছের পোনা ভক্ষণে পারদর্শ। বোয়ালের মতো চিতলও অন্যান্য মাছের পোনা ভক্ষণ করে। এরা রাক্ষুসী মাছের অন্তর্ভূক্ত।
- শৈল, গজার, লাটাও এ শ্রেণীর মাছ মহাশোল মাছ আকারে অনেকটা রুই মাছের মতো। পাহাড়ি হরদ ও নদ নদীর প্রান্তর ও কঙ্করময় তলদেশ বিশিষ্ট পানি এদের বাসের জন্য অধিকতর পছন্দনীয়। বাল্যবয়সে ডায়াটম্ ও অন্যান্য প্ল্যাঙ্কটন্ জাতীয় শৈবাল ও কীট খায়। বয়স্ক মহাশোলের পেটে জলজ উদ্ভিদ, শামুক, ঝিনুক, শৈবাল ও বালি প্রভৃতি খাবার পাওয়া গেছে।
মাছের খাবার: প্ল্যাঙ্কটন
- মাছের উপযুক্ত বৃদ্ধির জন্য পরিমিত খাবার ও পরিবেশের প্রয়োজন। কোনো মাছ কী খাবার বেশি পছন্দ করে এটা জানতে পারলে একজন মাছচাষীর জন্য মাছসমূহের পরিচর্যা করা খুবই সহজ হয়।
- প্ল্যাঙ্কটন মাছের প্রধান খাবার। সর্বভোগী মাছেরা শুধু প্ল্যাঙ্কটনের উপর নির্ভর করে না, এরা অন্যান্য খাবারও খেয়ে থাকে। যে পুকুরে যত বেশি প্ল্যাঙ্কটন আছে, সে পুকুরে স্বভাবত মাছের ফলনও তত বেশি।
- ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রতম জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণী অথবা জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণী জীবনের যে কোনো স্তর- যারা পানি দূর্বলতম বা ন্যূনতম গতিবিধিকে প্রতিহত করতে পারে না সাধারণত এগুলোকে ‘প্ল্যাঙ্কটন’ নামে অভিহিত করা হয়। এদের সাঁতার কাটার কোনো ক্ষমতা নেই। আবার যারা সাঁতার কাটতে পারে সেগুলোকে ‘নেক্টন্আ র যেগুলো পানির মধ্যে বিরাজমান, কোনো না কোনো প্রকার আশ্রয়ে লেগে থাকে তাদেরকে ‘বেথস’ বলা হয়।
- প্ল্যাঙ্কটনই শুধু পানির সঙ্গে ভেসে বেড়ায়, চলাফেরা করার মতো এর কোনো নিজস্ব শক্তি নেই। পানির ঢেউ বা প্রবাহের ইচ্ছানুযায়ী একে চলাফেরা করতে হয়। বেন্থস্ বা নেটন জাতীয় কোনো প্রাণী পুকুরে পাওয়া যায় না।
- প্রধানত প্ল্যাঙ্কটন দুই প্রকার। যথা— ১. ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন— ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ জাতীয়। ২. জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন— ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী জাতীয়।
মাছের খাবার: ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন
- এক জীবকোষ বিশিষ্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ গাছ-গাছড়া (আলগী) ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের অন্তভুর্ক্ত।
- আকৃতিতে এরা প্রধানত চেপটা বা সরু। এদের মধ্যে নাইট্রেট এবং ফসফেট্ আছে।
- এ জাতীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শেওলার উপস্থিতিতে পুকুরের পানি সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। সবুজ বর্ণের পানিতে মাছের ফলন ভালো হয়।
- অতিরিক্ত শেওয়ার উপস্থিতিতে পুকুরের পানি শেওয়ার আবরণে ঢাকা পড়ে যায় এবং পানির অম্লজান বা অক্সিজেন কমে যায়। এছাড়া পাঞ্জাই বা ব্যাক্টেরিয়া জাতীয় ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন্পা নির মধ্যে নাইট্রোজেনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এরা কখনো অবস্থানুযায়ী নাইট্রোজেনকে স্থির করে আবার কখনো মুক্ত করে দেয়।
- আমাদের পুকুরসমূহে যে সব ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন পাওয়া যায় তাদের মধ্যে এনাবিনা, মাইক্রোসিষ্টিম, অসিলেটরিয়া, সিরাটিয়াম, ডায়াটম্, অর্থসিরা, নেবিকিউলা, স্পাইরোলিনা, ক্লেডোফোরা, স্পাইরোগিরা প্রভৃতি প্রধান।
মাছের খাবার: জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন
- প্রধানত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেরুদণ্ডবিহীন জলজ প্রাণীসমূহই এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। বাল্য বয়সে জুয়োপ্ল্যাঙ্কটনই রুই, কাতলা জাতীয় মাছের প্রধান খাদ্য।
- জুয়োপ্ল্যাঙ্কটনে মধ্যে প্রোটিন, চর্বি, কার্বো-হাইড্রেট ও খনিজ লবণ আছে। খাদ্যের এসব উপাদান মাছ প্রধানত জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন থেকেই পেয়ে থাকে। আবার জুয়োপ্ল্যাঙ্কটনসমূহ তাদের পরিপুষ্টির জন্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শেওলা জাতীয় উদ্ভিদসমূহ পানিতে বিরাজমান কার্বন, অক্সিজেন, ফসফরাস্ ও খনিজ লবণ হতে সূর্যকিরণ ও তাপের সহায়তায় জন্ম নিয়ে থাকে। ডিফ্লোগিয়া, ভল্ভক্স, ফোরামিনিফেরা, মেষ্টেগোফোরা, ভর্টিসেলা, আসেলা, প্রটোজুঁইয়া, জুঁইয়া, মাইসিস্, সাইক্লপস্, নোপলিয়া, ময়না, ডেফনিয়া, ডায়াপটোমাস্, ভছছিনা, সাইপ্রিস, বিভিন্ন পতঙ্গ জাতীয় প্রাণীর শাবক ইত্যাদি প্রধান।
- পানির লবণাক্ততা যতই বাড়ে, স্বাদু পানির প্ল্যাঙ্কটনের পরিমাণ ততই কমে যায়। সাধারণত পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার সংগে সংগে কপিপড জাতীয় প্ল্যাঙ্কটনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আবার প্রেটোজোয়া জাতীয় প্ল্যাঙ্কটন লবণাক্ততা হরাস পাওয়ার সংগে সংগে বৃদ্ধি পায়।
- স্বাদু পানিতে যেসব প্ল্যাঙ্কটন পাওয়া যায় সেগুলো সাধারণত লোনা পানিতে পাওয়া যায় না।
- প্ল্যাঙ্কটন জীবনের তাপের প্রভাব সর্বাধিক। এর বৃদ্ধি, প্রজনন প্রভৃতি তাপের উপর নির্ভরশীল। ডায়াটম এবং সবুজ আলগী জলীয় তাপ ২১° ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হতে ২৩° ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সুষ্ঠুভাবে বৃদ্ধি পায়। প্ল্যাঙ্কটনের খাড়াখাড়ি বিস্তৃতি ও অবস্থান জলীয় তাপমাত্রার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।
- দিনের বেলায় পানির উপরের স্তরে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের পরিমাণ বেশি থাকে। ক্লোরোফিল্স ম্পন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ দিনের বেলায় সূর্যকিরণের উপস্থিতিতে উপরের স্তরে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন পায়। ফটোসিনথেটিক্ পদ্ধতির ভিতর দিয়ে কার্বো-হাইড্রেট তৈরি করে থাকে এবং বিকাল বা সন্ধ্যার প্রাক্কালে পানির সর্বস্তরের তাপ প্রায় সমান হয়ে যায়।
- অন্ধকারে নেমে আসার সংগে সংগে পানির উপরের স্তরের তাপ কমে ও জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন্ উপরের স্তরে চলে যায়। যে সব প্ল্যাঙ্কটন রাতে পানির উপরের স্তরে চলে আসে তাদের মধ্যে ক্রাস্টেসিয়া, ক্লেডোফোরা, কপিপোডা, ডায়াটমস্ ও ক্লাজিলেটস্ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
মাছ চাষের পানির দৃষিত অবস্থা
মাছ যে পানিতে বাস করে সে পানির রাসায়নিক, প্রাকৃতিক ও জৈবিক গুণাবলির সঙ্গে মাছেরা খাপ খাইয়ে জীবন ধারণ করে। কোনো না কোনো কারণবশত যদি পানির এসব গুণ নষ্ট হয় তাহলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য জীবনেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কারণ, মাছের খাবার বা প্ল্যাঙ্কটন তৈরি হতে পারে না। এরূপ একটি অবস্থাকে পানির দূষিত অবস্থা বলা চলে।
নর্দমার ময়লা ও ময়লাযুক্ত পানি নিষ্কাশন, শিল্প কারখানার আবর্জনা ও বিষাক্ত রসায়ন, ও অতিরিক্ত পলি প্রবাহে পানি দূষিত হতে পারে। দূষিত পানিতে মাছের চাষ হয় না। কারণ-
- দূষিত পানির অসমটিক চাপ বেড়ে যায়। মাছ এটা সহ্য করতে পারে না।
- দূষিত পানিতে অক্সিজেন কমে যায়। মাছের শ্বাসে কষ্ট হয়। মাছ মারা যায়।
- দূষিত পানিতে বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি হেতু মাছ মারা যায়।
- পানি দূষিত হওয়ার সংগে সংগে মাছের খাদ্য আবেষ্টনী নষ্ট হয় ও মাছ মারা যায়।
- পানি দূষিত হলে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যায়।
- দূষিত পানিতে পলির কণা এবং অন্যান্য ভাসমান দ্রব্যাদি মাছের ফুলকায় আঘাত সৃষ্টি করে এতে মাছ মারা যায়।
- সাধারণত দূষিত পানিতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। মাছ এটা সহ্য করতে পারে না।
- অতিরিক্ত পলিপ্রবাহে মাছের চলাফেরার রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়।
- মাছের খাদ্যগুলো দূষিত পরিবেশে মাছের জন্য অ-খাদ্য হয়ে যায়।
- পানি দূষিত হলে জলাশয়ের সজীবতা নষ্ট হয় এবং বয়স বেড়ে যায়।
- পানি ঘোলা হয়ে যায় এবং ঘোলা পানিতে সূর্য কিরণ প্রবেশ করতে পারে না। আলোক সংশ্লেষণের অভাবের জন্য পানিতে খাদ্য শিকলের জন্ম হয় না।
মাছ চাষে কীটনাশক ওষুধ
কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগেও প্ল্যাঙ্কটন সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ ধান্য জমিতে বছরের ৬-৭ মাস কম বেশি পানি থাকে এবং এসব ধান্য জমিতে ছোট বড় বিভিন্ন প্রকার মাছ বিচরণ করে। প্রাকৃতিক কারণে যেসব পোকা-মাকড় ধানক্ষেতে জন্ম নেয় মাছেরা সেগুলোকে খেয়ে ফেলে। কিন্তু পোকার প্রকোপ বেশি হলে ধান্য জমিতে নানা প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ছিটাবার প্রয়োজন দেখা দেয় এবং রসায়ন দ্বারা এগুলোকে ধ্বংস করে ধান্য জমিকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু এর ফলে ধান ক্ষেত, খাল, বিল ও নালা প্রভৃতি জায়গায় বহু মাছ মরে যায়।