Skip to content

 

বিভিন্ন প্রকার মাছের নাম পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ

প্রকার মাছের নাম পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ

বিষয়: বিভিন্ন প্রকার মাছের নাম পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
হ্যাশট্যাগ:#বিভিন্ন প্রকার মাছের নাম#বিভিন্ন প্রকার মাছের পরিচয়#বিভিন্ন প্রকার মাছের বৈশিষ্ট্য#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ।

বর্তমানে যে সকল খামারি ভায়েরা আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে আগ্রহী তাদের প্রথমে অবশই আগে বিভিন্ন মাছ সম্পর্কে সটিখ ধারণা থাকা জরুরি। বাংলাদেশের জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন রকমের মাছ পাওয়া যায়। এ সকল মাছের মধ্যে, মাছ চাষে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাছের নাম পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:

ক. কার্প জাতীয় মাছ

  • চাহিদার দিকে থেকে ও অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ মাছ হলো কার্প বা রুই-কাতলা জাতীয় মাছ।
  • এই দলভুক্ত মাছ নদ-নদীর স্বাদুপানির মাছ যা পুকুর-দীঘিতে চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
  • এ জাতীয় মাছের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এরা স্বগোত্রীয় বা অন্য কোনো মাছ খাবার হিসেবে খায় না। খাদ্যের জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না।
  • কোনো কোনো প্রজাতির কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য ও বিচরণ স্বভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকলেও একে অপরের জন্য সরাসরি ক্ষতিকারক নয়।
  • এ জাতীয় মাছের অধিকাংশ বদ্ধ জলাশয়ে বা পুকুরে-দীঘিতে ডিম পাড়ে না। প্রাকৃতিকভাবে নদীতে প্রজনন ঘটায়। তবে কৃত্রিম উপায়ে বদ্ধ পানিতে প্রজনন করানো যায়।
  • রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউস, সিল্ভার্ কার্প, মিরর কার্প, কমন কার্প, গ্রাস কার্প ও বিগৃহেড কার্প ইত্যাদি মাছকে কার্প জাতীয় মাছ বলা হয়। এ জাতীয় মাছ খেতে খুব সুস্বাদু।
  • এ সব মাছ পুকুরের বিভিন্ন স্তর থেকে খাবার গ্রহণ করে এবং পুকুরের পরিবেশ ভালো রাখে।
  • সকল প্রকার কার্প জাতীয় মাছ নির্ধারিত সংখ্যায় ছেড়ে পুকুরে একত্রে চাষ করা যায। এভাবে চাষ করাকে কার্প জাতীয় মিশ্র চাষ বলা হয়।

খ. দেশি কার্প

রুই, কাতলা, কালবাউস এদেশের নদীর মাছ। এগুলোকে দেশি রুই জাতীয় মাছ বা দেশি কার্প বলা হয়।

১. রুই মাছ:

  • রুই নদীর মাছ। তবে এদেশের পুকুরে চাষোপযোগী মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। খেতে সুস্বাদু।
  • এ মাছের মাথা ত্রিকোণাকৃতি এবং দেহের তুলনায় ছোট। পেটের তলের চেয়ে পিঠের তল একটু বেশি বাঁকানো। পিঠের দিকের রং কিছুটা বাদামি। পেটের উভয় দিকের রং রূপালি বা হালকা সোনালি।
  • পুকুরের মাঝামাঝি স্তরের খাবার গ্রহণ করে।
  • ছোট অবস্থায় প্রাণিকণা, বড় হলে উদ্ভিদকণা, জলজ উদ্ভিদের নরম পাতা এবং পচা জৈব আবর্জনা ইত্যাদি খায়।
  • বাইরে থেকে দেওয়া খইল, ভুসি, কুঁড়া এসব সম্পূরক খাদ্যও খায়।
  • কাতলা মাছের তুলনায় এ মাছের বৃদ্ধি কম।
See also  রুই জাতীয় মাছের পোনা চাষ

২. কাতলা মাছ:

  • কাতলা নদীর মাছ। তবে পুকুরে চাষোপযোগী।
  • কাতলা মাছের মাথা বড়, পিঠ উঁচু, দেহ চওড়া এবং একটু চেপটা। পিঠের দিকের রং ধূসর, পেটের দিকের রং সাদা। পিঠের পাখনা কালো। মুখ ওপরের দিকে বাঁকানো। তাই পুকুরের ওপরের স্তরের খাবার খায় এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • ছোট অবস্থায় প্রাণিকণা, বড় হলে উদ্ভিদকণা এবং খোলসযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী খায়। সম্পূরক খাদ্যও গ্রহণ করে।
  • পুকুরে ডিম পাড়ে না। প্রাকৃতিকভাবে নদীতে প্রজনন করে।

৩. মৃগেল মাছ:

  • মৃগেল মাছও নদীর মাছ। রুই কাতলার মতো প্রধান চাষোপযোগী মাছ।
  • পেটের দিক অপেক্ষা পিঠের দিক সামান্য বাঁকানো। মাথা রুই মাছেল চেয়েও ছোট। দেহের রং সাদাটে হালকা সোনালি। পাখনাগুলো হালকা লাল রঙের। মুখ নিচের দিকে বাঁকানো, মুখের দু পাশে দু জোড়া ছোট শুঁড় আছে।
  • মৃগেল মাছ পুকুরের তলদেশে বাস করে। সেখানকার খাবার খায়।
  • রুই-কাতলার মতো ছোট অবস্থায় প্রাণিকণা এবং বড় হলে তলার পচা আবর্জনা, কাদার মধ্যে জন্মানো কীটপতঙ্গ ও কাদামাটি খায়।
  • প্রজনন পদ্ধতি রুই-কাতলার মতো।

৪. কালবাউস মাছ:

  • রুই-কাতলার মতো কালবাউস ও নদীর মাছ। তবে রুই-কাতলার সাথে পুকুরে চাষ করা যায়।
  • এ মাছের দেহের ও পাখনার রং কালো। মুখ সরু, দু জোড়া ছোট শুঁড় আছে।
  • মৃগেল মাছের মতো তলদেশে অবস্থান করে এবং তলদেশের খাবার খায়।
  • রুই-কাতলার মতো পুকুরে ডিম পাড়ে না। তবে কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন করানো যায়। বর্ষাকলে নদীতে ডিম পাড়ে।

গ. বিদেশি কার্প

সিল্ভার কার্প, কমন্ কার্প, মিরর্ কার্প, গ্রাস কার্প ও বিগৃহেড কার্প মাছ বিদেশ থেকে আমাদের দেশে আনা হয়েছে, তাই এসব মাছকে বিদেশি কার্প জাতীয় মাছ বলা হয়।

১. সিল্ভার্ কার্প:

  • এ মাছ বিদেশি কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দেশি কার্প মাছের সাথে একত্রে চাষ করা যায়।
  • ১৯৬৯ সালে এদেশে প্রথম আনা হয়। ১৯৭৬ সালে কৃত্রিম প্রজনন করে প্রথম পোনা উৎপাদন করা হয়।
  • আঁশ ছোট এবং রূপালি। দেহের নিচের দিক নৌকার মতো। এ মাছ ছোট অবস্থায় দেখতে অনেকটা চাপিলা মাছের মতো এবং মাঝারি অবস্থায় ছোট ইলিশের মতো।
  • কাতলা মাছের মতো পানির ওপরের স্তরের খাবার খায়। ছোট অবস্থায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণা ও শৈবাল এবং বড় হলে পচা জলজ উদ্ভিদ খায় ৷ সম্পূরক খাবারও খায়।
  • এরা পুকুরে ডিম পাড়ে না।
See also  মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি, হাপার সাহায্যে রুই জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি, হ্যাচারিতে রুই জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন, রুই মাছের পোনা, কিভাবে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাছের ডিম পোনা তৈরি করা হয়?

২. কমন কার্প:

  • বিদেশি কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে কমন কার্প বাংলাদেশে কার্পিও হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এ মাছ ১৯৭৯ সালে নেপাল থেকে এদেশে আনা হয়।
  • এ মাছ পুকুরের তলদেশের আবর্জনা, পোকা-মাকড় এবং আমিষ জাতীয় খাদ্য খেয়ে থাকে।
  • অনেক সময় খাদ্যের জন্য কমন কার্প পুকুরের তলদেশে, পাড় ও চার পাশের মাটি আলগা ও গর্ত করে দেয়।
  • এ মাছ পুকুরে প্রজননে অভ্যস্ত এবং শীত ও গ্রীষ্মকালে পুকুরে ডিম পাড়ে।

৩. মিরর কার্প:

  • মিরর কার্প ১৯৭৯ সালে এদেশে আনা হয়েছে। এ মাছ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র চাষ করা হয়। মিরর্ কার্প কমন কার্পের প্রজাতিভুক্ত। এ মাছের গায়ে দু এক বড় বড় এলোমেলো আঁশ আছে। দেহের রং হলুদ ও সোনালি। মুখের নিচের দিক সরু।

৪. গ্ৰাস্ কার্প:

  • গ্রাস কার্প সিল্ভার্ কার্পের মতো দেশি কার্প জাতীয় মাছের সাথে এদেশের পুকুরে চাষোপযোগী।
  • ১৯৬৬ সালে প্রথম এদেশে আনা হয়। ১৯৮০ সালে কৃত্রিম প্রজনননের দ্বারা প্রথম পোনা উৎপাদন করা হয়।
  • এ মাছ দেখতে অনেকটা মৃগেল মাছের মতো তবে রুই মাছের মতো পুকুরের মধ্য স্তরের খাবার খায়। পিঠের রং তামাটে ও পাখনা ছোট, গায়ের রং সামান্য সবুজ।
  • জলজ উদ্ভিদ এ মাছের প্রধান খাদ্য। পুকুরের জলজ উদ্ভিদ দমন করার জন্য অনেক সময় এ মাছ ছাড়া হয়।
  • প্রজনন পদ্ধতি সিল্ভার্ কার্পের মতো এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

৫. বিগহেড কার্প:

  • ১৯৮১ সালে নেপাল থেকে এদেশে আনা হয়েছে। এ মাছের আদি আবাসস্থল চিন দেশের নদ-নদী। এরা অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল মাছ। দেশি কার্প জাতীয় মাছের সাথে চাষ করা যায়। বছরে এ মাছ ২ কেজি ওজনের হতে পারে।

ঘ. দেশি মিশ্র চাষোপযোগী মাছ

১. ক্যাটফিশ:

  • শিং, মাগুর, বোয়াল, পাবদা, ট্যাংরা ও আইড় ক্যাটফিশ্ জাতীয় মাছ। এ জাতীয় মাছের দু জোড়া গোঁফ আছে। এক জোড়া গোঁফ বেশ লম্বা। গোঁফের জন্য এ মাছগুলোকে ‘ক্যাটফিশ্’ বলা হয়।
  • এ জাতীয় মাছেল দেহে আঁশ থাকে না। তবে এক প্রকার পিচ্ছিল পদার্থ দ্বারা চামড়া আবৃত থাকে। এ পিচ্ছিল পদার্থই মাছের দেহকে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ক্যাটফিশের মধ্যে শিং ও মাগুর মাছকে জিওল মাছ বলা হয়।
  • এ মাছ খাল-বিল, পুকুর-দীঘিতে পাওয়া যায়।

২. জিওল মাছ:

  • কই, শিং, মাগুর ও শোল মাছকে জিওল মাছ বলা হয়।
  • এ জাতীয় মাছ অল্প পানিতে (পাতিল, হাঁড়ি, গামলা) বেঁচে থাকতে পারে। এদের অতিরিক্ত শ্বাসতন্ত্র আছে। ফলে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে অনেক সময় পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
  • বেশি সংখ্যায় মজুদ করে বিলে চাষ করা যায়।
  • জিওল মাছ পুষ্টিকর। এ জাতীয় মাছে লৌহ ও আমিষের পরিমাণ বেশি, চর্বির পরিমাণ কম এবং সহজে হজম হয়। এ মাছ বলদায়ক বলে রোগীর পথ্য হিসেবে উপকারী।
See also  পুকুরে পাঙ্গাশ মাছ চাষের উন্নত কলাকৌশল

৩. রাক্ষুসে মাছ:

  • বোয়াল, শোল, টাকি, চিতল মাছকে রাক্ষুসে মাছ বলা হয়। এ জাতীয় মাছ শুধু খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য অন্য মাছের সাথে প্রতিযোগিতাই করে না, খাদ্যের অভাবে পুকুরে চাষকৃত যে কোনো মাছ এমন কি স্বগোত্রীয় মাছও খেয়ে ফেলে। তাই পুকুরে রাক্ষুসে মাছের উপস্থিতি মাছ চাষের বিরাট অন্তরায়। পুকুরে মাছ চাষ করতে হলে রাক্ষুসে মাছ নিধন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

৪. ছোট মাছ:

  • মলা, ঢেলা, বাতাসি, পুটি, কাঁচকি প্রভৃতি মাছকে ছোট মাছ বলা হয়। এ জাতীয় মাছি ছোট, তাই অর্থনৈতিকভাবে ততোটা গুরুত্ব সম্পন্ন নয়।
  • প্রাকৃতিকভাবে এ জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি হয়। এরা পুকুরে চাষযোগ্য মাছের খাদ্য ও বাসস্থানের প্রতিদ্বন্দ্বী।
  • পুকুরের সকল স্তরেই বিচরণ করে এবং সব ধরনের (প্রাকৃতিক ও সরবরাহকৃত) খাবার খায়।
  • ছোট মাছের মধ্যে মলা, ঢেলা মাছ ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ। একজন মানুষের প্রতি দিনের খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদা মেটাতে কয়েকটি ছোট মাছই যথেষ্ট।
  • আমাদের দেশে এসব ছোট মাছের চাষ করা হয় না। খাল-বিলে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়। গ্রামের দরিদ্র মানুষের ভিটামিন ও আমিষের চাহিদা এসব ছোট মাছ দ্বারাই পূরণ করা হয়ে থাকে।
  • অবহেলিত এ জাতীয় ছোট মাছগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করতে হবে। সেজন্য আমাদের এ মাছগুলো চাষের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন, কেননা এ মাছ দিন দিন হরাস পাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!