Skip to content

 

১৭ টি বিভিন্ন মাছের নাম, মাছের বৈজ্ঞানিক নাম, মাছ চেনার উপায়, মাছ এর বৈশিষ্ট্য এবং উক্ত মাছ সমূহের দেহের বিবরণ, প্রাপ্তিস্থান, বাসস্থান, রোগ-বালাই, খাদ্য, প্রজনন ও বাজারজাতকরণ পক্রিায়া (মাছের বায়োডাটা by খামারিয়ান.কম)

টি বিভিন্ন মাছের নাম মাছের বৈজ্ঞানিক নাম মাছ চেনার উপায় মাছ এর বৈশিষ্ট্য

বিষয়: (১৭টি মাছের বায়োডাটা by খামারিয়ান.কম) বিভিন্ন মাছের নাম, বিভিন্ন মাছের বৈজ্ঞানিক নাম, বিভিন্ন মাছ চেনার উপায় এবং উক্ত মাছ সমূহের দেহের বিবরণ, প্রাপ্তিস্থান, বাসস্থান, রোগ-বালাই, খাদ্য, প্রজনন ও বাজারজাতকরণ পক্রিায়া।
হ্যাশট্যাগ: বিভিন্ন মাছের নাম#বিভিন্ন মাছের বৈজ্ঞানিক নাম#বিভিন্ন মাছ চেনার উপায়#বিভিন্ন মাছের দেহের বিবরণ#বিভিন্ন মাছের প্রাপ্তিস্থান#বিভিন্ন মাছের বাসস্থান#বিভিন্ন মাছের রোগ-বালাই#বিভিন্ন মাছের খাদ্য#বিভিন্ন মাছের প্রজনন#বিভিন্ন মাছের বাজারজাতকরণ পক্রিায়া#মাছের বায়োডাটা#খামারিয়ান.কম।

কিছু চাষযোগ্য প্রজাতির জীবন-বৃত্তান্ত যে কোনো জলাশয়ে মাছ চাষ করতে হলে যে প্রজাতির মাছ চাষ করা হবে তার জীবনবৃত্তান্ত না জানলে পরিচর্যা করা যায় না। যেমন যে মাছের যে রকম খাদ্যাভ্যাস, তাকে সে ধরণের খাদ্য না দিয়ে অন্য খাদ্য দিলে ঐ মাছের কোনো কাজে লাগবে না। পক্ষান্তরে, গৃহস্থের অর্থাৎ মৎস্যচাষীর ব্যয় বাড়বে। তাই মৎস্যচাষীর সুবিধার্থে সংক্ষেপে কিছু প্রধান প্রধান চাষযোগ্য মাছের জীবন-বৃত্তান্ত নিম্নে দেওয়া হলো:

(১) রুই মাছ এর বৈশিষ্ট্য

রুই এর সাধারণ নাম: রুই বা রোহিত মাছ।

রুই এর বৈজ্ঞানিক নাম: লাবিও রোহিতা (Labeo rohita)

রুই মাছ চেনার উপায় : রুই মাছের দেহের আকৃতি কতকটা মাকুর মতো। মাথা ও লেজ ক্রমশ সরু। শরীরের উভয় পাশে প্রতিসম এবং চ্যাপ্টা। সারা শরীর আঁশ দিয়ে ঢাকা। আশঁগুলো মসৃণ ও সারিবদ্ধভাবে সাজানো। এর মুখের উপরের ঠোঁটে এক জোড়া ছোট গোঁফথাকে।

রুই এর প্রাপ্তিস্থান : দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র রুই মাছ পাওয়া যায়।

রুই এর বাসস্থান: রুই মাছ নদী, খাল, বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুরে পানির মধ্যস্থলে বাস করে।

রুই এর রোগ-বালাই: রুই মাছে ক্ষতরোগ, পাখনা পচা, লেজ পচা, ফুলকা পচা ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া রুই মাছ উকুন দ্বারাও আক্রান্ত হয়

রুই এর খাদ্য: রুই মাছ পানির মধ্যভাগ ও তলার নানা ধরণের খাদ্য খেতে অভ্যস্ত। এদের প্রধান খাদ্য হলো উদ্ভিদজাত এবং পচনশীল জৈব পদার্থ। রুই মাছ প্রাণী ও কণা খায়। ফিশমিল, খইলের গুড়া, কুড়া ইত্যাদি সম্পূরক খাদ্য খায়।

রুই এর প্রজনন: এ মাছ ২ বছর বয়সেই প্রজননক্ষম হয়। অপেক্ষাকৃত কম গভীর পানিতে ও স্রোতের টানে নদীর কোলে স্ত্রী রুই ডিম ছাড়ে। বাঁধ বা বড় জলাশয়ে কৃত্রিম উপায়ে স্রোতের সৃষ্টি করা হলে রুই মাছ সেখানে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ে। মে হতে আগস্ট মাসে একটি স্ত্রী মাছ কয়েক লক্ষ ডিম পাড়ে। হ্যাচারিতে এ মাছের প্রজনন করানো হয়।

রুই এর বাজারজাতকরণ: যেহেতু বাজারে বড় রুই মাছের চাহিদা সর্বাধিক। তাই রুই বড় হওয়ার পরই ধরা ও বাজারজাত করা উচিত। রুই মাছ ১ বছরে প্রায় ১ কেজি ওজনের হয়ে থাকে এবং তখনই বড় জাল দিয়ে এ মাছ ধরা যায়।

(২) কাতলা মাছ এর বৈশিষ্ট্য

কাতলা মাছ এর সাধারণ নাম: কাতলা বা কাতল।

কাতলা মাছ এরবৈজ্ঞানিক নাম: ক্যাটলা ক্যাটলা (Catla catla)।

কাতলা মাছ চেনার উপায়: কাতলা মাছের মাথা বড়, দেহের মাঝের অংশ চওড়া এবং মুখের হা বেশ বড়। এর সমস্ত শরীর সুন্দর বড় আঁশে ঢাকা। দেহের পিঠের অংশ ঈষৎ ধূসর, পেটের অংশ সাদাটে। দেখতে খুব সুন্দর।

কাতলা মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া।

কাতলা মাছ এর বাসস্থান: নদী, খাল, বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুরের উপরের স্তরে বাস করে।

কাতলা মাছ এর রোগ-বালাই: বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণে কাতলা মাছের ক্ষতরোগ হয়। এ ছাড়া কাতলা মাছের ফুলকা পচা পাখনা পচা রোগ হয়। এতে উকুনের আক্রমণও দেখা যায়।

কাতলা মাছ এর খাদ্য: কাতলা মাছ পুকুরের উপরের স্তরে বাস করে এবং সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে। ছোট অবস্থায় এরা পানিতে ভাসমান প্রধানত জুপ্ল্যাঙ্কটন খায়। বড় কাতলা জুপ্লাঙ্কটন্‌ ও শেওলা খায়। এ মাছ দ্রুত বর্ধনশীল এবং প্রয়োজনীয় খাবার পেলে ২ বছরে ৪-৫ কেজি পর্যন্ত হয়।

কাতলা মাছ এর প্ৰজনন: কাতলা মাছ ২ বছরের পর যৌবনপ্রাপ্ত হয়। এ মাছ বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে না। এরা মে-জুন মাসে স্রোতযুক্ত নদীতে ডিম পাড়ে। কৃত্রিম উপায়ে ইন্‌জেশন্দি য়েও কাতলা মাছের পোনা উৎপন্ন করা যায়। বাংলাদেশের অনেক হ্যাচারি বা নার্সারিতে কাতলার পোনা পাওয়া যায়।

কাতলা মাছ এর বাজারজাতকরণ: কাতলা মাছ সর্বাধিক ১.৮ মিটার লম্বা ও ৪৫ কেজি ওজনের পর্যন্ত পাওয়া গেছে। যেহেতু বাজারে বড় কাতলার চাহিদা বেশি, সেজন্য ২ বছর বয়সের কাতলা ধরা এবং বাজারজাত করা উচিত।

(৩) মৃগেল মাছ এর বৈশিষ্ট্য

মৃগেল মাছ এর সাধারণ নাম: মৃগেল বা মিরকা।

মৃগেল মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: সিরহিনাস মৃগেলা (Cirrhinus mrigala)।

মৃগেল মাছ চেনার উপায়: মৃগেল মাছের মাথা খুবই ছোট এবং মুখের গহ্বর নিচের দিকে। এর উপরের ঠোঁট পুরু, নিচেরটি পাতলা। মৃগেল মাছের দেহ রুই ও কাতলা মাছের তুলনায় সরু ও লম্বাটে। এর গায়ের রং পিঠের দিকে তামাটে, ২ পাশ ও পেট রূপালি। এ মাছের চোখ সোনালি। পরিণত মাছ লম্বায় ৩ ফুট বা ৯০ সেন্টিমিটার হয়।

মৃগেল মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র এ মাছ পাওয়া যায়।

মৃগেল মাছ এর বাসস্থান: নদী, খাল, বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুরের নিচের স্তরে বাস করে।

মৃগেল মাছ এর রোগ-বালাই: ক্ষতরোগ মৃগেল মাছের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাধি। এছাড়াও পাখনা, লেজ পচা রোগে মৃগেল মাছ আক্রান্ত হয়। ফুলকা পচা রোগও মাঝের মাঝে দেখা যায়। এতে উকুনের আক্রমণও দেখা যায়।

মৃগেল মাছ এর খাদ্য: মৃগেল মাছ জলাশয়ের নিচের স্তরে বাস করে এবং সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে। পচা জলজ উদ্ভিদ, পোকা-মাকড়, মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ ও কাদামাটি মৃগেল মাছের প্রিয় খাদ্য।

মৃগেল মাছ এর প্রজনন: এ মাছের প্রজনন ঋতু সাধারণত বর্ষাকাল। মৃগেল মাছ এক বছরে প্রায় ১ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ মাছ এক বছরে যৌবনপ্রাপ্ত হয়। যেহেতু মৃগেল মাছ বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে না, সেজন্য এ মাছ হতে কৃত্রিম উপায়ে প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় হ্যাচারি থেকে মৃগেল মাছের পোনা সংগ্রহ করা যেতে পারে।

মৃগেল মাছ এর বাজারজাতকরণ: মৃগেল মাছ লম্বায় বেশ বড় হয়। তাই ১ বছরের কম বয়সের মৃগেল ধরা বা বাজারজাত করা উচিত নয়। বড় আকারের মৃগেল মাছের চাহিদা বাজারে বেশি।

(৪) কালবাউশ মাছ এর বৈশিষ্ট্য

কালবাউশ মাছ এর সাধারণ নাম: কালবাউশ, কালিবাউশ এবং বাউশ।

কালবাউশ মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: লাবিও কাল্‌বাসু (Labeo calbasu)।

কালবাউশ মাছ চেনার উপায়: কালবাউশের সমস্ত শরীর কালো বা ধূসর আঁশে ঢাকা। দেহের তুলনায় মাথা ছোট। এর চোখ লাল রঙের। মুখের দু পাশে এক জোড়া করে গোঁফ থাকে এবং সর্বোচ্চ ৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। রুই ও কাতলা মাছের তুলনায় এ মাছ দ্রুত বর্ধনশীল নয়।

See also  বিভিন্ন মাছের পোনা চেনার উপায় ও মজুদ পুকুরে মাছ চাষ পদ্ধতি

কালবাউশ মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র এ মাছ পাওয়া যায়।

কালবাউশ মাছ এর বাসস্থান: নদী, খাল, বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুর ইত্যাদি জলাশয়ের নিচের স্তরে বাস করে।

কালবাউশ মাছ এর রোগ-বালাই: কালবাউশ মাছ লেজ পচা, পাখনা পচা রোগ, ফুলকা পচা রোগে, উকুন ও পরজীবীর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।

কালবাউশ মাছ এর খাদ্য: মৃগেল মাছ জলাশয়ের নিচের স্তরে বাসকরে এবং সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে। পোনা অবস্থায় এরা এককোষী শ্যাওলা, পচা ও আধপচা জলজ উদ্ভিদ খায়। পরিণত বয়সে পচা ও আধপচা জলজ উদ্ভিদ ও কীট পতঙ্গ খায়

কালবাউশ মাছ এর প্রজনন: বর্ষাকালে এরা স্রোতযুক্ত পানিতে ডিম পাড়ে। কালবাউশ বদ্ধ পানিতে ডিম পারে না। দ্বিতীয় বছরে সাধারণত যৌবনপ্রাপ্ত হয়। রুই, কাতলার মতোই এর রেনু পোনা নদী হতে সংগ্রহ করতে হয়। তাছাড়া ইন্‌জেক্শন দিয়ে এর কৃত্রিম প্রজনন করানো যায়। বাংলাদেশের সকল অঞ্চলেই হ্যাচারি হতে পোনা সংগ্রহ করা যায়।

কালবাউশ মাছ এর বাজারজাতকরণ: এ মাছ দ্রুত বর্ধনশীল নয় বলে প্রথম বছরে না ধরাই ভালো। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে এ মাছ ধরা ও বাজারজাত করা যেতে পারে।

(৫) পাংগাস মাছ এর বৈশিষ্ট্য (থাই)

পাংগাস মাছ এর সাধারণ নাম: পাংগাস (থাই)।

পাংগাস মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: পাঙ্গাঁসিয়াস্ সুচি (Pangasius sutchi)।

পাংগাস মাছ মাছ চেনার উপায়: পাংগাস মাছের গায়ে কোনো আঁশ নেই। গায়ের রং রূপালি। এ পাংগাস পুকুরে চাষ করা হয়ে থাকে।

পাংগাস মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: এ পাংগাস থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ব্যাপকভাবে এর পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে।

পাংগাস মাছ এর বাসস্থান: থাইল্যান্ডের নদীতে ও পুকুরে এ মাছ বাস করে।

পাংগাস মাছ এর রোগ-বালাই: পাংগাস মাছের রোগ-বালাই কম।

পাংগাস মাছ এর খাদ্য: এ মাছ সর্বভুক। এর ‘ওফাল’, ‘গ্যাসটাপোড’, পোকা-মাকড়, প্ল্যাংক্‌টন জাতীয় খাবার খায়। তবে সম্পূরক খাদ্য যথা ফিশমিল, সরিষার খইল, কুড়া, গমের ভুষি ময়দা ও ঝোলা গুড় একত্রে মিশিয়ে খাওয়ানো যায়। এ মাছের খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের পরিমাণ বেশি প্রয়োজন।

পাংগাস মাছ এর প্রজনন: এদেশে হ্যাচারিতে কত্রিম উপায়ে ও এর প্রজনন করানো হচ্ছে।

পাংগাস মাছ এর বাজারজাতকরণ: বড় জাল দিয়ে এ মাছ ধরা এবং বাজারজাত করা হয়। এ মাছ বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেতে পারে। ১ কেজি ওজনের হলেই এ মাছ ধরে বাজারজাত করা যায়। বর্তমানে ব্যাপকভাবে এর চাষ হচ্ছে।

(৬) নাইলোটিকা মাছ এর বৈশিষ্ট্য

নাইলোটিকা মাছ এর সাধারণ নাম: নাইলোটিকা।

নাইলোটিকা মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: ওরিওক্রমিস্ নাইলোটিকাস্ (Oreochromis niloticus)।

নাইলোটিকা মাছ মাছ চেনার উপায়: নাইলোটিকার দেহ ছাই রঙের। আঁশযুক্ত এ মাছের পিঠে পাখনার কাঁটা সংখ্যা ১৭টি। পুরুষ মাছের জননেন্দ্রিয় ক্ষুদ্র মোচাকৃতি এবং অগ্রভাগ দ্বিখণ্ডিত।

নাইলোটিকা মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: আদি বাস আফ্রিকা। ১৯৭৪ সালে থাইল্যান্ড হতে আমাদের দেশে প্রথম আমদানি করা হয়।

নাইলোটিকা মাছ এর রোগ-বালাই: নাইলোটিকার প্রধান শত্রু প্রোটোজোয়ান প্যারাসাইট। নার্সারি পুকুরে পরজীবী সিলিয়েট গ্রুপের অন্তর্গত টাইকোডিনা ও কিলোডনেলা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এ মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি।

নাইলোটিকা মাছ এর খাদ্য: এ মাছ সব ধরণের খাদ্য খেয়ে থাকে। তবে জলজ শেওলা ও পোকা-মাকড় এদের প্রধান খাদ্য। সম্পূরক খাদ্য হিসেবে চাউলের মিহি গুঁড়া ও সরিষার খইল গুঁড়া করে দেওয়া হয়।

নাইলোটিকা মাছ এর বাসস্থান: ছোট পুকুর, ডোবা-নালা, দীঘি, ঝিল, চৌবাচ্চা ইত্যাদি এবং অগভীর পানিতে এরা থাকতে পারে।

নাইলোটিকা মাছ এর প্ৰজনন: নাইলোটিকা ৩-৪ মাসের মধ্যেই প্রজননক্ষম হয়। প্রসবের আগে পুরুষ মাছ পুকুর বা জলাশয়ের গভীর অংশে বাসা তৈরি করে। এ সময় পুরুষ নাইলেটাটিকা এ বাসায় ডিম ছাড়ার জন্য স্ত্রী মাছকে আমন্ত্রণ জানায়। স্ত্রী মাছের মুখের ভিতর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এ মাছ দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। বছরে ৩-৪ বার ডিম পাড়ে।

নাইলোটিকা মাছ এর বাজারজাতকরণ: পোনা ছাড়ার ৩-৪ মাসের মধ্যে এ মাছ বাজারজাত করা যায়। এ মাছ ৩-৪ মাসে ১২-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। বর্তমানে এ মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(৭) শিং মাছ এর বৈশিষ্ট্য

শিং মাছ এর সাধারণ নাম: শিং।

শিং মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: হেটেরো পনিটেটিস্ ফসিলিস্ (Hetero poneustes fossilis)।

শিং মাছ চেনার উপায়: শিং মাছের দেহ লম্বা, সামনের দিক নলাকার, পেছনের দিক দু পাশে অনেকটা চাপা, আঁশবিহীন, মাথার উপর-নিচে চ্যাপ্টা। ছোট ও পাতলা চামড়া দিয়ে গা ঢাকা। মাথার সামনের দিকে মুখ ঘিরে ৮টি লম্বা শুঁড় এবং মাথার দু পাশে বিষাক্ত দুটি কাঁটা আছে। শিং মাছের গায়ের রং প্রায় কালো। তবে ছোট অবস্থায় লাল থাকে।

শিং মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার, ভারত ও পাকিস্তানে পাওয়া যায়।

শিং মাছ এর বাসস্থান: খাল, বিল, ডোবা, নালা, পুকুর, ধানক্ষেত ইত্যাদি শিং মাছের বাসস্থান।

শিং মাছ এর রোগ-বালাই: বিভিন্ন পরজীবীর আক্রমণে অনেক সময় শিং মাছের শরীরে ক্ষত রোগ দেখা দেয়।

শিং মাছ এর খাদ্য: শিং মাছ আমিষ জাতীয় খাদ্য খায়। ছোট অবস্থায় এরা ফাইটেপ্ল্যাঙ্কটন্ ও জুপ্ল্যাঙ্কটন্‌ খায়। তবে বড় হলে পোকা-মাকড় খেয়ে থাকে। এ মাছ পুকুরের তলার সমস্ত কীট, পোকা ও জৈব পদার্থ খায়। এ মাছ পচা কাদামাটিও খেয়ে থাকে। সম্পূরক খাদ্য খায়।

শিং মাছ এর প্ৰজনন: প্রথম বছরেই এ মাছ লম্বায় প্রায় ২০-৩০ সেন্টিমিটার ও যৌবনপ্রাপ্ত হয়। সাধারণত এপ্রিল হতে জুলাই মাসই এদের প্রজননের উপযুক্ত সময়। শিং মাছ খেতে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে এ মাছ সকলের কাছে খুব প্রিয়।

শিং মাছ এর বাজারজাতকরণ: শিং মাছ ২৫-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। তাই এ আকারের হলে জাল দিয়ে ধরে জীবন্ত অবস্থায় বিক্রি করা উচিত। কারণ, মরা শিং-এর বাজার দর একদম কম।

(৮) মাগুর মাছ এর বৈশিষ্ট্য

মাগুর মাছ এর সাধারণ নাম: মাগুর।

মাগুর মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম : ক্ল্যারিয়াস্ ব্যাট্রাকাস্ (Clarias batrachus)।

মাগুর মাছ চেনার উপায়: মাগুর অস্থিবিশিষ্ট, আঁশবিহীন, শুঁড়বিশিষ্ট জিওল মাছ। মাগুরের মাথা চ্যাপ্টা, মুখ প্রশস্ত। পিঠের পাখনা লম্বা, চার জোড়া শুঁড় আছে। এর গায়ের রং লালচে বাদামি বা ধূসর কালো।

মাগুর মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড সর্বত্রই এ মাছ পাওয়া যায়।

মাগুর মাছ এর বাসস্থান: ডোবা, পুকুর, জলাভূমি, ধানক্ষেত সর্বত্রই এদের বাসস্থান। এরা কাদাযুক্ত পানিতে বাস করতে পছন্দ করে।

মাগুর মাছ এর রোগ-বালাই: মাগুর মাছের গায়ে ক্ষতরোগ দেখা যায়।

মাগুর মাছ এর খাদ্য: মাগুর মাছ পোকা, শুককীট বা মুককীট জাতীয় প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকে। কুঁড়া বা গমের ভূষি ও অন্যান্য সম্পূরক খাদ্য খায়।

মাগুর মাছ এর প্ৰজনন: এ মাছ ২০ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হলেই প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। মে-জুন থেকে আগষ্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ মাছ বংশবিস্তার করে।

মাগুর মাছ এর বাজারজাতকরণ: এ মাছ ২৫-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে জাল দিয়ে অথবা পুকুরে বা ডোবায় পানি সেচের মাধ্যমে ধরে বাজারে বিক্রি করা হয়। বাজারে জীবিত মাগুরের চাহিদা প্রচুর। অন্যদিকে মরা মাগুরের চাহিদা অনেক কম। অত্যন্ত সুস্বাদু বলে এ মাছ সকলের কাছে প্রিয়। বর্তমানে এর বাজারদর বেশ উঁচু হবার ফলে ধনী লোকেরাই এ মাছ খেতে পারে। আমাদের দেশে রোগীর পথ্য হিসেবেও মাগুর মাছ খাওয়া হয়।

(৯) কই মাছ এর বৈশিষ্ট্য

কই মাছ এর সাধারণ নাম: কই।

See also  বিল-হাওড়ে মাছ চাষ ও ব্যবস্থাপনা, প্লাবন-ভূমিতে পেনে মাছ চাষ, মহাসড়ক ও রেলওয়ের পাশের জলাশয়ে মাছ চাষ, মাছ চাষ প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা

কই মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: এনাবাস টেস্টাডাইনাস্ (Anabas testudineus)।

কই মাছ চেনার উপায়: এ মাছের মাথা বড় ও প্রায় ত্রিকোণাকৃতি। বৰ্ণ কালচে সবুজ বা বাদামি সবুজ। দেহে আঁশ দিয়ে ঢাকা, দুটো চোয়ালেই দাঁত আছে, পিঠের পাখনাযুক্ত কাঁটাগুলো ধারালো। কই মাছ কানকো দিয়ে মাটিতেও চলাচল করতে পারে।

কই মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার প্রভৃতি দেশে পাওয়া যায়।

কই মাছ এর বাসস্থান: পুকুর, ডোবা-নালা, নর্দমা, হাওড়-বাওড় ইত্যাদি জলাশয়ে পানির মধ্যে ও নিচের স্তরে বাস করে।

কই মাছ এর রোগ-বালাই: কই মাছের দেহে ও লেজে বিভিন্ন ছত্রাক ও ক্ষত রোগের সৃষ্টি হয়।

কই মাছ এর খাদ্য: ছোট অবস্থায় অতি ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী ও কীটপতঙ্গ খায় এবং বড় হলে পতঙ্গ ও তাদের শুককীট, শৈবাল এবং পুকুরের তলার সঞ্চিত জৈব পদার্থ খায়। এরা সম্পূরক খাদ্য খায়।

কই মাছ এর প্ৰজনন: কই মাছ ৪-৫ সেন্টিমিটারের মতো বড় হলেই প্রজননক্ষম হয়। বর্ষাকাল এ মাছের প্রজনন সময়। এ মাছ ধানক্ষেত, পুকুর, ডোবা, নালা, খাল, বিলে প্রজনন করে। ইন্‌জেশনের সাহায্যে ও কৃত্রিম উপায়ে এ মাছের প্রজনন করানো যায়।

কই মাছ এর বাজারজাতকরণ: ১০ সেন্টিমিটার বড় হলেই কই মাছ জালের সাহায্যে অথবা সেচের মাধ্যমে ধরা যায়। এ মাছ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এবং বিদেশে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। কই মাছ বিশেষত বড় কই মাছের চাহিদা বিত্তবান শ্রেণির কাছে অত্যন্ত বেশি। রোগীর পথ্য জনগণের কাছে হিসেবেও এ মাছের চাহিদা রয়েছে এবং বেশ চড়া দামে এ মাছ বিক্রি করা যায়।

(১০) পাবদা মাছ এর বৈশিষ্ট্য

পাবদা মাছ এর সাধারণ নাম: পাবদা।

পাবদা মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: ওম্পোক্ পাবদা (Ompok pabda)।

পাবদা মাছ চেনার উপায়: এ মাছ প্রায় ২০-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। আকারে চ্যাপ্টা এবং সামনের দিকের চেয়ে পেছনের দিক ক্রমান্বয়ে সরু। দেখতে অনেকটা বোয়াল মাছের মতো ৷ এ মাছ আঁশবিহীন ও রূপালি রঙের। পুরুষ মাছের শিরদাঁড়ার খাঁজকাটাগুলো খুবই স্পষ্ট এবং স্ত্রী মাছের খাঁজকাটাগুলো অস্পষ্ট। মুখের সামনের ভাগে ২ জোড়া শুঁড় আছে।

পাবদা মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে এ মাছ পাওয়া যায়।

পাবদা মাছ এর বাসস্থান: পুকুর, ডোবা, ধানক্ষেত, হাওড়-বাওড়, বিল ইত্যাদিতে পাবদা মাছ পাওয়া যায়। পানির উপরের স্তরে এ মাছ বাস করে। এ মাছ পুকুরেও চাষ করা যায়।

পাবদা মাছ এর রোগ-বালাই: ক্ষত রোগ হয়ে থাকে।

পাবদা মাছ এর খাদ্য: এ মাছ বিভিন্ন পোকা-মাকড় ও শেওলা খায়। তবে খইল ও ফিশমিল সম্পূরক খাদ্য এরা পছন্দ করে।

পাবদা মাছ এর প্রজনন: মে, জুন ও জুলাই মাস পাবদা মাছের প্রজননকাল।

পাবদা মাছ এর বাজারজাতকরণ: পাবদা মাছ লম্বায় প্রায় ২০ সেন্টিমিটার হলে ধরা উচিত। বিদেশেও এর চাহিদা প্রচুর। এ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু। তাই আবহমানকাল থেকে এ মাছের চাহিদা সকল শ্রেণির মানুষের কাছে আছে।

(১১) গলদা চিংড়ি মাছ এর বৈশিষ্ট্য

গলদা চিংড়ি মাছ এর সাধারণ নাম: গলদা চিংড়ি।

গলদা চিংড়ি মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: ম্যাক্রোব্রাকিয়াম্ রোসেবার্গি (Macrobrachium rossenbergii)।

গলদা চিংড়ি মাছ চেনার উপায়: গলদা চিংড়ি খোলসবিশিষ্ট অমেরুদণ্ডী প্রাণী। গলদা চিংড়ি দেখতে গাঢ় সবুজ থেকে বাদামি বা কালচে রঙের হয়। পুরুষ চিংড়ি স্ত্রী চিংড়ি থেকে আকারে বড় হয় এবং পুরুষ চিংড়ির দ্বিতীয় অপেক্ষাকৃত বড়, কালো এবং চিমটাযুক্ত। গলদা চিংড়ির মাথা শরীর থেকে অনেক মোটা। মাথার ৫ জোড়া ও বুকে ৮ জোড়া উপাঙ্গ আছে।

গলদা চিংড়ি মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বত্র এ মাছ পাওয়া যায়।

গলদা চিংড়ি মাছ এর বাসস্থান: গলদা চিংড়ি উপকূলীয় অঞ্চল, পুকুর, নদী, খাল, বিল প্রভৃতি জায়গায় পাওয়া যায়।

গলদা চিংড়ি মাছ এর রোগ-বালাই: চিংড়ির স্বাস্থ্য ও রোগবালাই পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত চিংড়ির নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। বিভিন্ন ধরণের জীবাণু ছত্রাক ও ভাইরাস আক্রমণ হতে পারে। যার ফলে চিংড়ির ফুলকায় কাল দাগ, দেহে শ্বেতরোগ, খোলস নরম হওয়া রোগ হতে পারে।

গলদা চিংড়ি মাছ এর খাদ্য: চিংড়ি মাছ প্রায় সর্বভুক। চিংড়ি সাধারণত জলাশয়ের নিচে চলাফেরা করে এবং সেখান থেকেই সব ধরণের খাদ্য সংগ্রহ করে। এছাড়া সম্পূরক খাদ্য হিসেবে কুঁড়া, ভুষি, খইল, ফিশমিল, দেওয়া যেতে পারে।

গলদা চিংড়ি মাছ এর প্ৰজনন: গলদা চিংড়ি মিঠা পানির মাছ হলেও নদীর মোহনায় নোনা পানি ছাড়া ডিম পাড়ে না। এ মাছ ৭-৮ মাস বয়সেই প্রজননক্ষম হয়।

গলদা চিংড়ি মাছ এর বাজারজাতকরণ: পুকুরে পরিবেশগত অবস্থা ঠিক থাকলে গলদা চিংড়ি ৬-৭ মাস বয়সেই বাজারজাত করা যায়। এ বয়সের ১৫-২০টি গলদা চিংড়ি ১ কেজি হয়ে থাকে। বড় ফাঁসের বেড়জাল ব্যবহার করে বড় মাপের চিংড়ি ধরতে হয়। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে গলদা চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিদেশে এ চিংড়ি জনগণের কাছে রফতানি করে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।

(১২) গ্রাসকার্প মাছ এর বৈশিষ্ট্য

গ্রাসকার্প মাছ এর সাধারণ নাম: গ্রাসকার্প বা ঘেসো রুই।

গ্রাসকার্প মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: টেনোফ্যারিন-গোডন্ ইডেলাস্ (Ctenopharyngodon idellus)।

গ্রাসকার্প মাছ চেনার উপায়: শরীর লম্বা, মধ্যভাগ কিছুটা চ্যাপ্টা, মুখমণ্ডল গোলাকার। গলায় ভিতরে চিরুণির দাঁতের মতো দু সারি দাঁত আছে। শরীরের রং পেটের দিকে রূপালি সাদা ও পিঠের দিকে সবুজ। সারা শরীর মাঝারি আকারের আঁশ দিয়ে ঢাকা।

গ্রাসকার্প মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: চীন, হংকং এবং রাশিয়ার আমুর নদীতে পাওয়া যায়। ১৯৭০ সালে জাপানে থেকে বাংলাদেশে আনা হয়।

গ্রাসকার্প মাছ এর বাসস্থান: এ মাছ পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ের মধ্যস্তরে বাস করে।

গ্রাসকার্প মাছ এর রোগ-বালাই: এ মাছের রোগ-বালাই খুব একটা দেখা যায় না। তবে মাঝে মাঝে পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়।

গ্রাসকার্প মাছ এর খাদ্য: গ্ৰাস্কার্প ঘাস খেকো এবং দ্রুত বর্ধনশীল। পোনা একটু বড় হলে হাইড্রলা, মেরাটোফাইলাস, উলফিয়া, লেমন ইত্যাদি জলজ আগাছা খেয়ে বাঁচে। অনেক সময় লতাপাতা ও খায়।

গ্রাসকার্প মাছ এর প্রজনন: এ মাছ ২ বছর বয়সে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। পুকুরে বা বদ্ধ জলাশয়ে গ্রাস্কার্পের পরিপক্কতা আসে। তবে পুকুরে ডিম ছাড়ে না। পিটুইটারি হরমোন এইচ. সি. জি. ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়ে থাকে। একটি পরিপক্ক গ্রাস্কার্প হতে প্রায় ২ লক্ষ পর্যন্ত ডিম পাওয়া যায়।

গ্রাসকার্প মাছ এর বাজারজাতকরণ: এ মাছ দ্রুত বর্ধনশীল। পুকুরে বছরে ২-৩ কেজি থেকে পর্যন্ত ওজনের হয়ে থাকে। বাজারে গ্রাসকার্পের চাহিদা রয়েছে।

(১৩) সিলভারকার্প বা রূপালি রুই মাছ এর বৈশিষ্ট্য

সিলভারকার্প মাছ এর সাধারণ নাম: সিল্ভারকার্প বা রূপালি রুই।

সিলভারকার্প মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: হাইপোথ্যালমিকথিস্ মলিটিক্স (Hypophthalmichthys molitrix)

সিলভারকার্প মাছ চেনার উপায়: সিল্ভারকার্পের দেহের মধ্য অংশ চওড়া, মাথা ও লেজের দিক সরু। এ মাছ অনেকটা ইলিশ মাছের মতো। এর দেহ ক্ষুধে রূপালি রঙের আঁশ দিয়ে ঢাকা।

সিলভারকার্প মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: চিন ও রাশিয়ার আমুর নদী। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে ১৯৬৯ সালে এ মাছ আনা হয়।

সিলভারকার্প মাছ এর বাসস্থান: এরা খাল, বিল, পুকুর, হাওড় ও বাওড়ের পানির উপরের স্তরে বসবাস করে।

সিলভারকার্প মাছ এর রোগ-বালাই: দেহে নানা ধরণের পচন রোগ দেখা দেয়।

সিলভারকার্প মাছ এর খাদ্য: সিল্ভারকার্প ছোট অবস্থায় প্রাণিকণা খায়। পরিণত বয়সে উদ্ভিদকণা প্রধান খাদ্য, পচা জলজ উদ্ভিদও খায়।

সিলভারকার্প মাছ এর প্রজনন: ২ বছরে সিল্ভারকার্প প্রজননক্ষম হয়। তবে এরা বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে না। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় সিল্ভারকার্প মাছের কৃত্রিম প্রজনন হচ্ছে। সেসব জায়গা হতে পোনা সংগ্রহ করা যেতে পারে।

See also  মাছ চাষ ও মাছ ধরার (19 প্রকার) জাল এর নাম ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্য, জাল সংরক্ষণ এর নিয়ম, জাল নষ্ট হওয়ার কারণ ও জালের যত্ন#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ#চাষ মাছ চাষ করার সহজ উপায়#মাছ চাষের পদ্ধতি#মাছ চাষের নিয়ম

সিলভারকার্প মাছ এর চাহিদা: রূপালি রুই বা সিলভারকার্প বিদেশি মাছ হলেও দাম কম থাকায় সর্বসাধারণের কাছে বেশ চাহিদা রয়েছে।

সিলভারকার্প মাছ এর বাজারজাতকরণ: বিদেশি মাছের মধ্যে সিল্ভারকার্প অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল। প্রথম বছর প্রায় দেড় কেজি এবং দ্বিতীয় বছরে ৪-৫ কেজি পর্যন্ত হয়।

(১৪) বিগহেড কার্প মাছ এর বৈশিষ্ট্য

বিগহেড কার্প মাছ এর সাধারণ নাম: বিগ্‌হেড কার্প বা বড় মাথাওয়ালা কাৰ্প মাছ।

বিগহেড কার্প মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: আরিস্‌টেকথিস্ নোবিলিস্ (Aristichthys nobilis)

বিগহেড কার্প মাছ চেনার উপায়: এ মাছ দেখতে সিল্ভার কার্পের মতোই। কিন্তু দেহের তুলনায় মাথা অনেক বড়। এ মাছ অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল এবং ৩ বছরে ৬ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। এর সারা দেহে ঘন আঁশে ঢাকা।

বিগহেড কার্প মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: এটি চিন দেশের মাছ। এ মাছ স্বাধীনতার পর পরই এ দেশে আনা হয় নেপাল থেকে।

বিগহেড কার্প মাছ এর বাসস্থান: এ মাছ পুকুর, খাল-বিল ইত্যাদি জলাশয়ে পানির উপরের স্তরে বাস করে।

বিগহেড কার্প মাছ এর রোগ-বালাই: এ মাছের রোগ-বালাই কম। তবে মাঝে মাঝে ক্ষতরোগ দেখা যায়।

বিগহেড কার্প মাছ এর খাদ্য: ছোট ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয় প্রকার বিগৃহেড কার্পই প্রধানত জুপ্লাঙ্কটন্‌ খেয়ে থাকে। এ ছাড়াও ছোট ছোট কীটপতঙ্গ খায়। প্রয়োজনে কুঁড়া এবং সরিষার খইলও এ মাছ খায়।

বিগহেড কার্প মাছ এর প্রজনন : ৩ বছরের মধ্যেই এ মাছ প্রজননক্ষম হয়। এ মাছ বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে না। কৃত্রিম উপায়ে ডিম থেকে পোনা উৎপাদন করা যায়।

বিগহেড কার্প মাছ এর বাজারজাতকরণ: এক বছর পরেই বাজারজাত করা যেতে পারে। কারণ, এ সময়ে এ মাছের ওজন দেড় কেজি হতে ২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

(১৫) মিররকার্প মাছ এর বৈশিষ্ট্য

মিররকার্প মাছ এর সাধারণ নাম: মিরকাপ। বৈজ্ঞানিক নাম: সাইপ্রিনাস্ কার্পিও (স্কেকুলারিস) (Cyprinus carpio, Specularis)।

মিররকার্প মাছ চেনার উপায়: মিরর্কার্পের দেহে বড় আকারের মাত্র কয়েকটি উজ্জ্বল ও চকচকে আঁশ থাকে। এ আঁশগুলো আয়নার মতো। তাই এ মাছের নাম মিরর্কার্প। মিররকার্পের মাথা শরীরের তুলনায় খুবই ছোট। এর পেট মোটা এবং এতে প্রচুর চর্বি থাকে। কমন্‌কার্পের মতো এ মাছের পিঠ ও অনেকটা ধনুকের মতো।

মিররকার্প মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: মিরর্কার্প ১৯৭৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে আমাদের দেশে আনা হয়।

মিররকার্প মাছ এর বাসস্থান: মিরর্কার্প জলাশয়ে পানির নিম্নস্তরে বাস করে।

মিররকার্প মাছ এর রোগ-বালাই: মিররকার্পের বিভিন্ন ক্ষতরোগের সংক্রমণ দেখা যায়।

মিররকার্প মাছ এর খাদ্য: ছোট অবস্থায় ক্ষুদ্র প্রাণিকণা খায়। বড় অবস্থায় শৈবাল, জুপ্লাংটন, জলজ উদ্ভিদ ও কাদামাটি খায়। পুকুরের তলার পোকা-মাকড় এবং কীটপতঙ্গ এদের প্রিয় খাদ্য। পুকুরের তলা খুঁড়ে খাদ্য খায় এজন্য অনেক সময় পাড় ভেঙ্গে পড়ে।

মিররকার্প মাছ এর প্রজনন: মিরর্কার্প ১ বছর বয়সেই যৌবনপ্রাপ্ত হয়। মিরর্কার্প বদ্ধ পানিতে প্রজননক্ষম হয়ে ডিম পাড়ে। এ মাছ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে একবার এবং জুলাই থেকে আগষ্ট মাসে আরেক বার অর্থাৎ বছরে ২ বার ডিম পাড়ে।

মিররকার্প মাছ এর বাজারজাতকরণ: মিরর্কার্প ১ বছরের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়। কারণ, ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের মাছের চাহিদা বাজারে বেশি।

(১৬) কমনকার্প মাছ এর বৈশিষ্ট্য

কমনকার্প মাছ এর সাধারণ নাম: কার্ফু মাছ।

কমনকার্প মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: সাইপ্রিনাস কার্পিও (কিমউনিস) (Cyprinus carpio, Communis)।

কমনকার্প মাছ চেনার উপায়: কমনকার্প এর মাথা শরীরের তুলনায় খুব ছোট, পেট মোট এবং পিঠ ধনুকের মতো বাঁকানো। এর গায়ের রং হালকা হলুদাভ। সারা দেহ ঘন আঁশ দিয়ে আবৃত।

কমনকার্প মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: চিন বা থাইল্যান্ড থেকে আমাদের দেশে আনা হয়।

কমনকার্প মাছ এর বাসস্থান: এ মাছ পুকুর বা জলাশয়ে পানির নিচে স্তরে বাস করে।

কমনকার্প মাছ এর রোগ-বালাই: কমনকার্পে বিভিন্ন ক্ষতরোগের আক্রমণ দেখা দেয়।

কমনকার্প মাছ এর খাদ্য: পুকুরের তলায় এ মাছ খাদ্য অন্বেষণ করে। এরা ছোট অবস্থায় প্রাণিকণা খায় এবং বড় হলে শৈবাল, প্লাংক্‌টন, জলজউদ্ভিদ ও কাদামাটি খায়। পুকুরের কাদার মধ্যে যে সব কীট ও পোকার জন্ম হয় কমন্কার্প খেতেও ভালোবাসে। এজন্য পুকুরের পাড়ভাঙ্গার কারণ হতে পারে।

কমনকার্প মাছ এর প্ৰজনন: বিদেশি মাছের মধ্যে কমন্‌কার্প এক বছরেই ডিম পাড়ে। কমনকার্পই বদ্ধ জলাশয়ে ডিম পাড়ে। বর্ষাকালে ও শীতের পরে বছরে ২ বার ডিম পাড়ে। তাই এ মাছ চাষে পোনা সংগ্রহের কোনো সমস্যা নেই। যত্ন নিলে পুকুরের পানিতে ডিম থেকেই এদের বাচ্চা হয়।

কমনকার্প মাছ এর বাজারজাতকরণ: এ মাছ দ্রুত বাড়ে। যেহেতু বাজারে ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের চাহিদাই বেশি, সেজন্য চাষের ১ বছরের পর থেকে মাছ ধরা ও বাজারজাত করা উচিত।

(১৭) রাজপুটি বা থাই সরপুটি মাছ এর বৈশিষ্ট্য

রাজপুটি মাছ এর সাধারণ নাম: রাজপুটি।

রাজপুটি মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম: পুন্টিয়াস গোনিওনোটাস্ (Puntius goniountus)

রাজপুটি মাছ চেনার উপায়: সরপুটি গায়ের রং উজ্জ্বল রূপালি বর্ণের। এ মাছ দেশি সরপুটি চেয়ে উজ্জ্বল রঙের। এর লেজ খাঁজ কাটা। এ মাছের বুক ও পাখনার রং হালকা হলুদ। এর ছোট ২ জোড়া গোঁফ আছে। মাছগুলো চ্যাপ্টা।

রাজপুটি মাছ এর প্রাপ্তিস্থান: থাইল্যান্ড হতে ১৯৭৭ সালে এ মাছ বাংলাদেশে প্রথম আনা হয়।

রাজপুটি মাছ এর বাসস্থান: থাই সরপুটি পুকুর, খাল-বিল, হাওড় বাওড় ইত্যাদি জলাশয়ে পানির উপরের স্তরে বাস করে।

রাজপুটি মাছ এর রোগ-বালাই: ৩ শ্রেণির পরজীবীর আক্রমণে এদের শরীরে ক্ষতরোগ হতে পারে। পানি দূষিত হলে প্রথমত ভাইরাস ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ছত্রাক ও ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা ক্রমান্বয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় ও মাছ মারা যায়।

রাজপুটি মাছ এর খাদ্য: মাছের খাদ্যরূপে পরিচিত যে কোনো ধরণের খাবারই রাজপুটি খেতে পারে। পোনা অবস্থায় এককোষী শ্যাওলা ও জুপ্লাংকটন খায়। পরিণত বয়সে এরা জলজ ম্যাক্রোফাইট খায়। এছাড়া কুঁড়া ও সরিষার খইলের গুড়া খায়। এদের প্রিয় খাদ্য হলো ক্ষুদে পানা।

রাজপুটি মাছ এর প্রজনন: সরপুটি এক বছর বয়সেই যৌন পরিপক্কতা লাভ করে। এরা সাধারণত বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে না। তবে কৃত্রিম উপায়ে হ্যাচারিতে এর প্রজনন করানো ও পোনা উৎপাদন করা যায়। পুকুরে কোনো কারণে স্রোতের সৃষ্টি হলে ডিম পাড়ে।

রাজপুটি মাছ এর চাহিদা: বাজারে সরপুঁটির চাহিদা অনেক। মাছের বাজার দরও ভালো।

রাজপুটি মাছ এর বাজারজাতকরণ: এ মাছ দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করে। ৫-৬ মাসে সরপুটি ১৫০-২৫০ গ্রাম ওজনের হয়ে যায়। তখনই বেড় জাল বা ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারজাত করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!