⭐⭐⭐⭐⭐বিষয়: (কই, শিং ও মাগুর, লাটা, শোল ও গজার, ইত্যাদি জিওল জাতীয় মাছের বৈশিষ্ট্য ও চাষ) কই মাছ চাষ ও কই মাছের বৈশিষ্ট্য, শিং ও মাগুর মাছ চাষ ও শিং ও মাগুর মাছের বৈশিষ্ট্য, লাটা, শোল ও গজার মাছ চাষ ও লাটা, শোল ও গজার মাছের বৈশিষ্ট্য।
হ্যাশট্যাগ:#কই, শিং ও মাগুর, লাটা, শোল ও গজার, ইত্যাদি জিওল জাতীয় মাছের বৈশিষ্ট্য ও চাষ#কই মাছ চাষ ও কই মাছের বৈশিষ্ট্য#শিং ও মাগুর মাছ চাষ#শিং ও মাগুর মাছের বৈশিষ্ট্য#লাটা, শোল ও গজার মাছ চাষ#লাটা, শোল ও গজার মাছের বৈশিষ্ট্য।
কই মাছ চাষ ও কই মাছের বৈশিষ্ট্য
- বাংলাদেশের বিল, বাওড় ও হাওরের ছোট মাছের মধ্যে কই একটি বিশিষ্ট মাছ। এর চাহিদা খুবই বেশি।
- চৈত্র-বৈশাখ মাসের ভারী বর্ষণ ও আকাশের বিদ্যুৎ চমকানোতে এদের শরীরে এক প্রকার শিহরণের সৃষ্টি হয়। বায়বীয় অক্সিজেনের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকায় এ শিহরণের মাত্রা বেড়ে যায়। এ সময়ের বর্ষণে এরা দলে দলে কান্তার সাহায্যে নদী, খাল, ও পুকুরের কিনারা দিয়ে স্রোতের বিপরীত দিক থেকে ভেজা জমির উপর দিয়ে চলতে থাকে ও পুকুর, ডোবা ও নালা প্রভৃতিতে চলে যায়। এরূপ চলাফেরা করার সময় স্বল্প পানি, পঁচা পাতা, দূর্বা বা ঘাসের শাখা, গর্ত ও নালা প্রভৃতি স্যাঁতস্যাঁতে ও অল্প পানি পূর্ণ পরিবেশে অল্প অল্প করে ডিম ছাড়তে ছাড়তে চলতে থাকে এবং পুরুষ কইগুলো ও বীর্যস্খলন করতে থাকে। বৃষ্টির বর্ষণে বা পানির স্রোতে ডিম ও বীর্য একত্রিত হয় এবং ডিমগুলো নিষিক্ত হওয়ার ১৫-১৬ ঘণ্টার মধ্যেই ডিম পোনায় রূপান্তরিত হয়ে পুকুর, ডোবা, খাল ও বিলে ছড়িয়ে পড়ে। আবহাওয়ার উন্নতি হেতু যদি মেয়ে কই সম্পূর্ণ ডিম প্রসব করতে না পারে, তাহলে পরবর্তী বর্ষায় ডিম প্রসব করে থাকে। ১ বছর বয়স্ক একটি কই থেকে ২,০০০ হতে ৪,০০০ পোনা পাওয়া যায়।
- ডিম পোনাগুলো পুকুর ডোবা খাল ও বিলে জলজ উদ্ভিদের শিকড় বা গায়ে লেগে থাকে এবং অন্য প্রাণী কর্তৃক ভক্ষিত না হলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ পোনায় পরিণত হয়।
- কই মাছের বংশ বৃদ্ধি বহুলাংশে উপযুক্ত আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে ভালো বর্ষণ না হলে এরা যথোপযুক্ত ভাবে ডিম পাড়তে পারে না অথবা পাড়া ডিম বেঁচে থাকার মতো পরিবেশে পৌছতে পারে না। বাল্য বয়সে এরা এক জায়গাতেই বাস করে এবং বয়োবৃদ্ধির সংগে সংগে এরা নিজেদের আশ্রয়স্থল পরিপূর্ণভাবে চিহ্নিত করে নেয়।
- দোঁ-আশ ও পলিযুক্ত জলাভূমির প্রতি এদের আকর্ষণ বেশি। বালু বা কঙ্করময় জায়গায় এরা বাস করে না।
- পানির সর্বস্তরের খাদ্যই আহার করে থাকে।
- বর্ষাকালে ভাসন্ত পানিতে, ছোট ছোট নদী বা খাল-বিলের কিনারায় এদেরকে মানুষের মল কাঁচা অবস্থাতেও খেতে দেখা যায়। লাল কেঁচো, পঁচা জীব জন্তুর মাংস, পঁচা চিংড়ি, পঁচা ঘাস, পাট পঁচা, গোবর, কচুরি পানার ছোবলা, ছোট চিংড়ি ধানক্ষেতে পানির উপরে ভাসমান ফড়িং ও অন্যান্য ধানপোকা এদের প্রিয় খাদ্য।
- কই মাছের প্রাণ খুবই শক্ত ও পানিতে এদের চলাফেরার গতি খুব বেশি। শারীরিক গঠন খুবই মজবুত। শরীরের উপর আঁইশগুলো সুদৃঢ়ভাবে জড়ানো। পিট ও বুকের পাখনাসমূহে কতগুলো কাঁটা আছে। এগুলো এদের চলাফেরার শক্তি বৃদ্ধি করে এবং নিজেকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার সহায়ক হয়। লেজ পাখনাটি বিশেষ চওড়া ও মজবুত হওয়ায় একটি উৎকৃষ্ট ধরণের হাল হিসেবে ব্যবহাত হয়। এতে একটুখানি নাড়া দিয়ে কই মাছ অনেক দূরে চলে যায়।
- এক বছরে একটি কই ৪-৫ ইঞ্চি বড় হয়।
- পুকুরে কই মাছের চাষ করা যায় না। কারণ, এরা চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ডাঙার উপর দিয়ে পুকুর ত্যাগ করে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় চলে যায়। তবে এ সময় গোবর ও খামার আবর্জ্জনা দিয়ে পুকুরের আশে পাশে নিচু জমিতে কিছু ছোট ডোবা তৈরি করে রাখলে ঐগুলোতে কইয়ের পোনা পাওয়া যায়।
শিং ও মাগুর মাছ চাষ ওশিং ও মাগুর মাছের বৈশিষ্ট্য
- এ মাছগুলো রোগীদের বিশেষ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং চাহিদা খুবই বেশি।
- এ দুটি মাছই লম্বাকৃতির এবং শরীরের কোথাও আঁইশ নেই। লেজ পাখনাটি বেশ লম্বা এবং মুখ ও গহবর তুলনামূলকভাবে বড়। বুকের পাখনায় দুটি বিষাক্ত কাঁটা থাকায় এ মাছগুলোকে বেশি হাতাহাতি করা বিপদজনক।
- শিং মাছের কাঁটা মাগুর মাছের চেয়ে বেশি বিষময়। আত্মরক্ষার জন্য এ কাঁটাগুলো ব্যবহৃত হয়। এ দুটি মাছেরই মাথার অগ্রভাগে মুখের দু পাশে নাকের ছিদ্র ও মুখের অগ্রভাগে কিছু শুণ্ড আছে। এ শুণ্ড দিয়ে পানির তলদেশের মাটিতে খাদ্যের অন্বেষণ করে থাকে।
- মাগুর এবং শিং মাথা চেপ্টা এবং এদের শরীরে আঁইশ না থাকায় এগুলো আঁইশবিহীন মাছ হিসেবে পরিচিত।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফুলকা ছাড়াও বাতাস হতে বায়ুবীয় অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য এদের শরীরে অতিরিক্ত শ্বাস প্রশ্বাস যন্ত্র রয়েছে। এর কারণে এদের জীবনশক্তি বেশি এবং স্থলে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা থাকায় অন্যান্য মাছের চেয়ে বেশি সময় স্থলে বেঁচে থাকতে পারে। এরা জিয়ল মাছ হিসেবে প্রসিদ্ধ।
- এঁটেল, পলিমাটি বা দো-আঁশ মাটিযুক্ত খাল, বিল, বাওড়, হাওড়, পুকুর-দীঘি, ডোবা, নালা প্রভৃতি বিবিধ প্রকার জলাশয় এদের বাসস্থান। ডোবা ও ধান্য হাওড়ের গর্ত বা খাদে এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ডোবা-নালার পরিমাণ যতই কমে যাচ্ছে এ মাছগুলোও ততই হরাস পাচ্ছে।
- বড় বড় নদ-নদীতে এগুলোকে খুব একটা পাওয়া যায় না। এ মাছগুলো বিল-বাওড়ের নিম্নস্তরের খাবার খায়। পঁচা ঘাস, পঁচা জীবজন্তু, গোবর, পঁচা মল, কেঁচো, পঁচা চিংড়ি, পঁচা ব্যাঙ, পাট পঁচা, কচুরির ছোবলা, জলজ কীট ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শামুক ইত্যাদি এদের প্রিয় খাদ্য ৷ লাটা, শোল ও গজারের মতো এরা স্বগোত্র ভোজী নয়।
- এরা বছরে ১ বার প্রতি বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ডিম দিয়ে থাকে। ডিম দেওয়ার পূর্বে এদেরকে বাসা বাঁধা বা আতাল কাটতে দেখা যায়। বৈশাখের ভারী বর্ষণ ও মেঘের গর্জনে এদের শরীরে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরাও কই মাছের মতো স্রোতের বিপরীত দিক থেকে চলতে চলতে বিভিন্ন জলাভূমিতে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ সময় এ মাছগুলোও ঝাঁকে ঝাঁকে চলে।
- কিন্তু এরা উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া পর্যন্ত ডিম দেয় না। বৈশাখের প্লাবনে যেসব জলাশয় ও নিম্নভূতি পানিতে প্লাবিত হয় ঐ সব জায়গায় স্থানে স্থানে এরা আশ্রয় গ্রহণ করে। সাধারণত নিম্ন এলাকায় ধান্য হাওড়, পাটক্ষেত, ডোবা, নালা ও বিল প্রভৃতি এ সময় প্লাবিত হয় এবং এগুলোতে শিং ও মাগুর মাছ আশ্রয় নিয়ে বাসা বাঁধে এবং ঐ বাসায় এরা ডিম পাড়ে।
- এরা জোড়ায় জোড়ায় (একটা পুরুষ ও একটা মেয়ে) বাসা বাঁধে বা আতাল কাটে ১ ফুট হতে ৩ ফুট পানি আছে— এমন জায়গায়। জলজ উদ্ভিদসমূহেও মাটির আইল বা গাছ গাছড়ার শিকড়ের নিচে গর্ত করে এবং জোড়ায় জোড়ায় মাগুর বা শিং আশ্রয় গ্রহণ করে। এ সময় এরা খুব নীরব ও গোপনীয়ভাবে নিরিবিলি থাকতে ভালোবাসে।
- এসময় মেয়ে মাছটিকে খুব দুর্বল দেখায়। চলাফেরার গতিও কমে যায়। এ ধরণের বাসা বাঁধা বা আতাল কাটার ১৫-২০ দিন পরে স্ত্রী ও পুরুষ মাছ আতাল ত্যাগ করে। এ গর্তে মেয়ে মাছটি ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ মাছটিও আপন বীর্যঙ্খলন করে এবং ডিমগুলোকে নিষিক্ত করে। ডিমগুলো স্থির হয়ে পানির নিচে বসে যায় এবং গাছ-গাছড়ার শিকড়ে আটকে থাকে। এর ৭২ ঘণ্টা পর ডিমগুলো ডিম পোনায় পরিণত হয়।
- এরপর ১৫-২০ দিনের মধ্যে পোনাগুলো প্রায় ১ ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা হয় এবং তখনই এরা একে একে দল ত্যাগ করে। এক জোড়া মাগুর থেকে ১,০০০ থেকে ২,০০০ পোনা পাওয়া যায়।
লাটা, শোল ও গজার মাছ চাষ ও লাটা, শোল ও গজার মাছের বৈশিষ্ট্য
- এ তিনটি মাছই লম্বাকৃতির। এ মাছগুলো সর্বভোগী এবং আপন পোনাও এরা খেয়ে থাকে। বিল, বাওড়, হাওড়, খাল ও নদী-নালায় এরা বাস করে। চৈত্র-বৈশাখ মাসের বর্ষণে এরা স্রোতের বিপরীত থেকে চলাফেরা করতে করতে এক জলাভূমি থেকে অন্য জলাভূমিতে চলে যায়। অল্প পানিতে নানা প্রকার জলজ উদ্ভিদের পরিবেষ্টনীতে খাল-বিলের কিনারায়
- এদেরকে বাসা বাঁধতে দেখা যায়। বাসা বাঁধার প্রাক্কালে এরা জোড়ায় জোড়ায় বাস করে। এ ধরণের বাসাকে মৎস্যশিকারীরা আঁতাল (Nest building) নামে অভিহিত করে। নামে টাকি বা লাটা মাছের আঁতাল জলাশয়ের কিনারায় এক-দেড় হাত পানির মধ্যে দেখা যায়।
- পক্ষান্তরে, শোল বা গজার মাছগুলো ৪-৫ হাত পানির মধ্যে জলজ উদ্ভিদের দ্বারা পরিবেষ্টি পরিবেশে আঁতাল করে থাকে। এ সময়ে এরা খাবারের জন্য খুব বেশি উদগ্রীব থাকে।
- তাই আতাল চিহ্নিত করে তাতে কেঁচো দ্বারা বড়শি ফেললে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়ে মাছটিকে ধরে ফেলা যায়। এ সময়ে পুরুষ মাছটি আঁতালের বাইরে এদিকে ওদিক একটু বেশি আনাগোনা করে। কিন্তু মেয়েটিকে স্বভাবত দুর্বল ও অল্প নড়াচড়া করতে দেখা যায়।
- যৌন উত্তেজনা মুহূর্তে পুরুষ মাছটি মেয়ে মাছটির লেজ কামড়ে ধরে। এরূপ কামড়ের ফলে মেয়ে মাছটির শরীরে এক প্রকার যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে ডিমগুলো বের হয়ে যায় এবং সংগে সংগে পুরুষ বীর্য কর্তৃক নিষিক্ত হয়ে ৫-৭ দিনের মধ্যে পূর্ণ পোনায় পরিণত হয়।
- মেয়ে মাছটি ডিমের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই পাড়ে এবং উপযুক্ত পরিবেশে এসব ডিমগুলোকে নিষিক্ত করার মতো পুরুষ বীর্যের উপস্থিতি থাকায় এসব মাছের পোনার পরিমাণ অনেক বেশি হয়।
- পোনাগুলো বড় না হওয়া পর্যন্ত মা-বাপ এদের সঙ্গেই থাকে এবং অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে পোনাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। আবার অবস্থাভেদে নিজস্ব ক্ষুধার তাগিদে নিজের পোনাগুলোর কিছু অংশ খেলে ফেলে।
- পানির নিম্নস্তরের আহার এদের কাছে বেশি পছন্দনীয়। তবে এরা পানির সর্বস্তরেই বিচরণ করে। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে শোল গজার মাছগুলোকে এদের বড় বড় পোনাসহ মরা নদীর টান পানির সংগে নদীর কিনারা ঘেঁষে স্রোতের অনুকূলে যেতে দেখা যায়। এ সময় মাছ শিকারীরা কোচ ও টেটা প্রভৃতির সাহায্যে শিকার করে থাকে। ধান্য হাওড়ের ডোবা, খাল বিল প্রভৃতিতে এরা বেশি থাকে।
- শীতকালে ধান্য হাওড়ে ডোবা-নালায় বা বিলের কিনারায় যেসব গর্ত থাকে সে সব জায়গায় এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
- এ মাছগুলোর প্রাণ খুবই শক্ত। শরীরের আকার ও লেজের হাল জীবন ধারাকে শক্তিশালী করে। শরীরের আকার অনেকটা বোয়িং বিমানের মতো। লেজ পাখনাটির ব্যবহার একটি শক্তিশালী হালের মতো। এর ফলে এদের চলার গতি খুবই বেশি। এরা অতি সহজেই পানি কেটে এগুতে পারে। এ মাছগুলো জিওল মাছ হিসেবে প্রসিদ্ধ।
- এরা প্রতি বছর একবার করে ডিম দেয়। কেঁচো, পঁচা চিংড়ি, জলজ কীট, পোকা, জলজ, পতঙ্গ, পঁচা গোবর, পঁচা মল, ব্যাঙের বাচ্চা, ছোট মাছ পঁচা পাতা, পঁচা ঘাস, পঁচা শেওলা, পঁচা ছোট শামুক, ঝিনুক, পঁচা মাংস, মুড়ি, চিড়া ও পিঁপড়ার ডিম প্রভৃতি খেয়ে থাকে। এ মাছগুলোকে পুকুর ও দীঘিতে আবাদ করা কষ্ট-সাধ্য। কারণ, এদের খাবারের চাহিদা অনেক বেশি।