বিষয়: (18 টি) মাছের রোগ ও তার কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিষেধক/প্রতিকার, মাছের ক্ষতরোগ, ছত্রাক রোগ, পাখনা ও লেজ পঁচা রোগ, ফুলকা পঁচা রোগ, পেট ফোলা রোগ, সাদা ও কাল দাগ রোগ, বিভিন্ন প্যারাসাইটিক সংক্রামণসহ ভিটামিন অভাব জনিত রোগ, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ, চাষ মাছ চাষ করার সহজ উপায়, মাছ চাষের পদ্ধতি, মাছ চাষের নিয়ম।
হ্যাশট্যাগ:#মাছের রোগ#মাছের রোগ কারণ#মাছের রোগের লক্ষণ,#মাছের রোগের চিকিৎসা,#মাছের রোগের প্রতিষেধক/প্রতিকার,#মাছের ক্ষতরোগ#মাছের ছত্রাক রোগ#মাছের পাখনা পঁচা রোগ#মাছের লেজ পঁচা রোগ,#মাছের ফুলকা পঁচা রোগ,#মাছের পেট ফোলা রোগ,#মাছের সাদা ও কাল দাগ রোগ,#মাছের বিভিন্ন প্যারাসাইটিক সংক্রামণ#মাছের ভিটামিন অভাব জনিত রোগ,#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ#চাষ মাছ চাষ করার সহজ উপায়#মাছ চাষের পদ্ধতি#মাছ চাষের নিয়ম।
বাংলাদেশে আদিকাল থেকেই বসত বাড়ির পুকুর দীঘিতে সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রচলিত ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই তখন বিজ্ঞান ভিত্তিক কোনো প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ ছিল না।
সত্তর দশকের গোড়ার দিকে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মাছের কৃত্রিম প্রজননের কৌশল উদ্ভাবিত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেও মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি স্থাপন এবং পরবর্তীতে ব্যাপক হারে তা প্রসারিত হওয়ায় বদ্ধ জলাশয়ে বিভিন্ন মাছ চাষের ব্যাপকতা বেড়েই চলছে।
ইতোমধ্যে গবেষণা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে মাছ চাষ ও ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়নের ফলে দেশে শত শত উদ্যোক্ত ও মৎস্য চাষী এ কর্মকাণ্ডকে একটি সফল ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ফলে দেশে বর্তমানে শুধু মাছ চাষ থেকেই মোট মৎস্য উৎপাদনের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ বদ্ধ জলাশয়সমূহের মাধ্যমেই যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
একদিকে মাছ চাষের পদ্ধতিগত দিক যত নিবিড় হচ্ছে এবং অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে মাছের রোগ-বালাই এর প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলছে। মৎস্য চাষীরা সংক্রামক রোগ-বালাই এর কারণে প্রতি বছর চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এই ব্লগে আলোচিত বিবিধ প্রযুক্তির প্রেক্ষিতে এ পোষ্টে আমরা মাছের সম্ভাব্য রোগ যেমন: ক্ষতরোগ, ছত্রাক রোগ, পাখনা ও লেজ পঁচা রোগ, ফুলকা পঁচা রোগ, পেট ফোলা রোগ, সাদা ও কাল দাগ রোগ, বিভিন্ন প্যারাসাইটিক সংক্রামণসহ ভিটামিন অভাব জনিত রোগ ইত্যাদির বর্ণনা ও প্রতিকার নিম্নে দেওয়া হলো:
মাছের দেহের স্বাভাবিক বিকশিত অবস্থার অস্বাভাবিক রূপ ও নিষ্ক্রিয়তা কিংবা বিভিন্ন প্রকার রোগের চিহ্নিত লক্ষণসমূহের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেই মাছের রোগ হয়েছে বলা যায়।
বাংলাদেশে মাছের এ যাবত সনাক্তকৃত বিভিন্ন প্রকার রোগ বালাই এর লক্ষণ, কারণ ও সম্ভাব্য প্রতিষেধক বা প্রতিকার:
(01) মাছের ছত্রাক রোগ (সেপ্রোলেগনিয়াসিস)
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
রুই জাতীয় ও অন্যান্য চাষ যোগ্য মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
আক্রান্ত মাছের ক্ষতস্থানে তুলার ন্যায় ছত্রাক দেখা দেয় এবং পানির স্রোত যখন স্থির হয়ে যায় কিংবা বদ্ধ জলায় অথবা হ্যাচারি ট্যাংকে যেখানে অনিষিক্ত ডিমের ব্যাপক সমাগম ঘটে তাতে ছত্রাক রোগ দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করে। এমনি ধরনের প্রাকৃতিক জলাশয়ে প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ মাছের ডিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেপ্ৰোলেনিয়া প্রজাতি এ রোগের কারণ।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
- হ্যাচারিতে লালনকৃত ডিমগুলোকে ২৫০ পি.পি.এম ফরমালিন দিয়ে ধৌত করা।
- খাচা এবং পেনে চাষকৃত আক্রান্ত মাছগুলোকে শতকরা
- ৫ ভাগ ফরমালিন দিয়ে ২-৩ মিনিটের গোসল দেওয়া। অথবা, বিকল্প হিসেবে শতকরা লবণ পানিতে ও মিনিট গোসল করানো যেতে পারে।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
হ্যাচারিতে প্রতিটি যন্ত্রপাতি ও ট্যাংক সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করার পর শতকরা ১০ ভাগ ফর্মালিন পানি দিয়ে ধৌত করা। ২. অনিষিক্ত ও মৃত ডিমগুলোকে অবিলম্বে হ্যাচারি ট্যাংক থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং অধিক খাদ্য প্রয়োগ না করা।
(02) মাছের ক্ষতরোগ (ইপিজুটিক আলসারেটিভ সিনেড্রাম)
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
শোল, গাজর, টাকি, পুটি, বাইম, কই, মেনি, মৃগেল, কার্পিও এবং তলায় বসবাসকারী অন্যান্য প্রজাতির মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
এ রোগের মূল কারণ এ্যানোমাইসিস ইভাডেন্স নামক ছত্রাক এর দ্বারা মূলত মাছের মাংসপেশী আক্রান্ত হয়। এছাড়া কিছু ব্যাক্টিরিয়া, প্রোটোজোয়া সংশ্লিষ্ট আছে বলে জানা যায়। রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে পানির গুণাগুণের অবনতি ঘটে যেমন-
- হঠাৎ তাপমাত্রার কমতি (১৯ সে: এর কম)।
- পি.এইচ.-এর কমতি (৪-৬)।
- এ্যালকালিনিটির কমতি (৪৫-৭৪ পিপিএম)।
- হার্ডনেস (খরতা) এর তুলনামূলক বৃদ্ধি।
- ক্লোরাইড-এর স্বল্পতা (৩-৬ পি.পি.এম)।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
নিরাময়ের জন্য ০.০১ পি.পি.এম চুন ও ০.০১ পি.পি.এম লবণ অথবা ৭-৮ ফুট গভীরতায় প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন ও ১ কেজি হারে লবনণ প্রয়োগ করলে আক্রান্ত মাছগুলো ২ সপ্তাহের মধ্যে আরোগ্য লাভ করে।
প্রতিষেধক বা প্রতিকার:
আগাম প্রতিকার হিসেবে আশ্বিন কার্তিক মাসে বর্ণিত হারে লবণ ও চুন প্রয়োগ করলে আসন্ন পরবর্তী শীত মৌসুমে মাছের ক্ষত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়।
(03) মাছের ক্ষতরোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
সিল্ভার কার্প
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ চাষের পুকুর বন্যায় প্লাবিত হলে ক্লোরাইডের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির (৩০ পি.পি.এম-এর অধিক) ফলে কেবল সিল্ভার কার্প মাছে দ্রুত ক্ষতরোগ দেখা দেয়।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
- আক্রান্ত পুকুরের ৩ ভাগের ২ ভাগ পানি মিঠা পানির দ্বারা পরিবর্তন করা।
- প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ৩-৪টি হারে চালতা ছেঁচে সারা পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হবে।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
- বর্ণিত হারে চালতা প্রয়োগের ফলে ক্ষতরোগ আক্রান্ত সিল্ভার কার্প দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
- পুকুরকে বন্যা মুক্ত রাখুন।
(04) মাছের পাখনা অথবা লেজ পঁচা রোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
রুই জাতীয় মাছ, শিং, মাগুর ও পাঙ্গাস মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- প্রাথমিকভাবে পিঠের পাখনা এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পাখনা আক্রান্ত হয়। এ্যারোমোনাস্ ও মিক্সোব্যাকটার গ্রুপের ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়।
- পানির পি.এইচ. ও ক্ষরতার স্বল্পতা দেখা দিলে এ রোগ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
১. ০.৫ পি.পি.এম পটাশযুক্ত পানিতে আক্রান্ত মাছকে ৩-৫ মিনিট গোসল করাতে হবে। ২. পুকুরে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
প্রতিষেধক/প্রতিকার:
- রোগজীবাণু ধ্বংসের পর মজুদকৃত মাছের সংখ্যা কমাবেন।
- প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করুন।
(05) মাছের পেট ফোলা রোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
রুই জাতীয় মাছ, শিং, মাগুর ও পাঙ্গাস।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
ক. মাছের দেহের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং পানি সঞ্চালনের মাধ্যমে পেট ফুলে যায়।
খ. মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাচল করে এবং পানির ওপর ভেসে থাকে। অচিরেই আক্রান্ত মাছের মৃত্যু ঘটে। গ. এ্যারোমোনাস্ জাতীয় ব্যাক্টেরিয়া এ রোগের কারণ।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
খালি সিরিজ দিয়ে মাছের পেটের পানিগুলো বের করে নিতে হবে। প্রতি কেজি মাছের জন্য ২৫ মিলিগ্রাম হারে ক্লোরেমফেনিকল্ ইন্জেক্শন দিতে হবে, অথবা, ২. প্রতি কেজি খাবারের সাথে ২০০ মিলিগ্রাম ক্লোরেমফেনিকল্ পাউডার মিশিয়ে সরবরাহ করা।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
- প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করুন।
- মাছের খাবারের সাথে ফিশমিল ব্যবহার করুন।
- মাছকে সুষম খাদ্য সরবরাহে করবেন।
- প্রাকৃতিক খাবার হিসেবে প্লাংকটনের স্বাভাবিক উৎপাদন নিশ্চিত করুন।
(06) মাছের সাদা দাগ রোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
রুই জাতীয় মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- মাছের পাখনা, কান ও দেহের উপর সাদা দাগ দেখা দেয়।
- মাছের ক্ষুধা মন্দা এবং দেহের স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা লোপ পেয়ে খসখসে হয়ে যায়।
- ইকথায়োপথেরিয়াস্ প্রজাতি এ রোগের কারণ।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
- আক্রান্ত মাছগুলোকে ৫০ পি.পি.এম ফরমালিনে গোসল দেওয়া অথবা,
- ১ পি.পি.এম তুঁতে পানিতে গোসল দেওয়া অথবা,
- শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য রাখা অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত মাছ লাফিয়ে না উঠবে।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
- শামুক জাতীয় প্রাণী পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলা।
- শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে ৫.৭ মিনিট গোসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পোনা মজুদ করা।
- রোদে শুকানো জাল পুকুরে ব্যবহার করা। ৪. স্বাভাবিক সংখ্যা বজায় রেখে অতিরিক্ত মাছ সরিয়ে নেওয়া।
(07) মাছের সাদা দাগ রোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
মৃগেল ও রুই মাছের পোনা।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- পোনা মাছের আইশ, পাখনাসহ সারা দেহে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা দাগ দেখা দেয়।
- প্রায় ২ সপ্তাহকালীন সময় অব্যাহত থাকে।
- এ রোগ ব্যাকটেরিয়া জনিত।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
মাছের সংখ্যা কমিয়ে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা। জীবাণু মুক্ত পানিতে ২ সপ্তাহের মধ্যে মাছ স্বাভাবিকভাবেই আরোগ্য লাভ করে। বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পোনা মাছের লালন পুকুর প্রস্তুত করলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব এড়ানো যায়।
(08) মাছের মিক্সোবোরিয়াসিস
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
রুই জাতীয় মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
মিক্সোবোলাস প্রজাতির এককোষী প্রাণী রুই জাতীয় মাছের বিশেষ করে কাতলা মাছের ফুলকার উপরে সাদা কিংবা হালকা বাদামি গোলাকার গুটি তৈরি করে বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। ক্রমান্বয়ে ঐ গুটির প্রভাব ফুলকায় ঘা দেখা যায় এবং ফুলকা খসে পড়ে। শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যাঘাত সৃষ্টিতে মাছ অস্থিরভাবে ঘোরাফেরা করে এবং খাবি খায়। শেষ রাতের দিকে ব্যাপক মড়ক দেখা যায়।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
অদ্যাবদি এ রোগের সরাসরি কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয় নি। তথাপিও প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করলে পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি পেয়ে অম্লত্ব দূর হয়। পরজীবীগুলো ক্রমান্বয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং মাছ নিষ্কৃতি লাভ করে।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
পুকুর প্রস্তুতকালীন প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করে মাটি শোধন করা হলে আসন্ন মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ থাকে না।
(09) মাছের উঁকুন রোগ (আরগুলোসিস)
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
রুই মাছ এবং কদাচিত কাতলা মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- গ্রীষ্মকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
- রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে মাছের সারা দেহে উঁকুন ছড়িয়ে পড়ে। দেহের রস শোষণ করে মাছকে ক্ষতবিক্ষত ও দুর্বল করে দেয়।
- মাছ স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে পানির উপরিভাগের সামান্য নিচে দলবদ্ধভাবে অস্থিরতার সাথে চলাফেরা করে।
- শক্ত কিছু পেলে গা ঘষে। ক্রমান্বয়ে দেহ ক্ষীণ ও দূর্বল হয়ে মাছ মারা যায়।
- আরগুলাস সিয়ামেনসিস ও রোগের কারণ।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
- ডিপটারেক্স (ডাইলকস, নেগুভন, টেগুভন) ০.৫ পি.পি.এম হারে পুকুরে প্রয়োগ করা। সপ্তাহে একবার এবং পরপর ৫ বার অথবা, ২. ০.৮ পি.পি.এম হারে সুমিথিয়ন পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে ১ বার এবং পরপর ৫ বার। বিকল্প হিসেবে। ৩. সকল রুই মাছকে ০.২৫ পি.পি.এম পটাশ দ্রবনে ৫-৬ মিনিট গোসল করাতে হবে অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত মাছ লাফিয়ে না উঠবে |
- আর একটি বিকল্প: সবকটি রুই মাছকে ২ মাসের জন্য পুকুর থেকে সরিয়ে অথবা বিক্রি করে ফেলতে হবে। অত:পর উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় পটাশ দ্রবণে গোসল দিয়ে পুনরায় পোনা মজুদ করতে হবে।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
- আক্রান্ত পুকুরকে ৫ সপ্তাহ যাবত সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিয়ে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করুন।
- পুকুরের ভিতর থেকে যাবতীয় শক্ত পদার্থ (এমনকি একটি ইটের টুকরাও) সরিয়ে ফেলুন। পানির নিচে বাঁশের কঞ্চিসহ যে কোনো ডুবন্ত শক্ত বস্তু উঁকুনের ডিম পাড়ার উপযুক্ত স্থান)
- পোনা মজুদের আগে পোনা মাছকে অবশ্যই পটাশ দ্রবণে গোসল দিয়ে উকুনমুক্ত করে নিন।
- আক্রান্ত পুকুর থেকে উকুন রোগ সংক্রমণের সম্ভাব্য সকল প্রক্রিয়া যেমন আক্রান্ত পুকুর হতে পানি, পোনা মাছ, ঘাস, লতা বা ভেজা জাল অন্য পুকুরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করুন। এমনকি আক্রান্ত পুকুরে ব্যবহৃত চেলেদের ভেজা গামছা ও লুঙ্গি অন্য পুকুরে ব্যবহার করবেন না।
- পুকুরে ব্যবহার্য খামারের জালসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি পুকুরে ব্যবহারের পূর্বেই অবশ্যই ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে দিবেন।
(10) মাছের ট্রাইকোডিনিয়া সিস (ফুলকা পঁচা রোগ)
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
রুই, মৃগেল ও গ্রাস্কার্প।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- মাছের ফুলকার উপর প্রথমে ২-১ জায়গায় হালকা হলুদ রংয়ের ক্ষুদ্রাকার গুটি দেখা দেয় এবং ক্রমান্বয়ে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে বিক্ষিপ্ত রক্তক্ষরণসহ প্রচুর ঝিল্লি আবরণ সারা ফুলকার উপর ছড়িয়ে পড়ে, শ্বাস রুদ্ধ হয়ে মাছ মারা যায়।
- ট্রাইকোডিনা প্রজাতি এ রোগের কারণ।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
আক্রান্ত মাছকে ২৫০ পি.পি.এম ফরমালিন এ ৩-৫ মিনিটের জন্য গোসল দেওয়া।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
- মাছের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া।
- অতিরিক্ত মিশ্র (কম্পোষ্ট) ও জৈব সার না দেওয়া।
- প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা।
(11) মাছের মাছের জোঁক
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
বাটামাছ (ল্যাবিও বাটা) ও মাগুর মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- স্বল্প পি.এইচ. এর পানিতে (অম্লপানিতে) তলায় বিচরণকারী মাছসমূহের গায়ে জোঁকের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
- জোকগুলো ত্বক থেকে দেহের রস শোষণ করতে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে, ক্ষতে পরবর্তীতে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
- পোসথোডিপ্লোটোমাম প্রজাতি এ রোগের কারণ।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করুন।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
পুকুর প্রস্তুতি লগ্নে একই হারে চুন প্রয়োগ করলে পরবর্তী মৌসুমে জোঁকের প্রাদুর্ভাব থাকে না।
(12) মাছের কালো দাগ রোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
রুই জাতীয় পোনা মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- রুই মৃগেল ও কাতলা মাছের পোনার দেহের উপরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলাকার সাময়িক কালো দাগ দেখা দেয়, যা পোনা মাছের বিক্রির চাহিদা হরাস করে।
- পোস্থোডিপ্লোসটোমাম প্রজাতি এ রোগের কারণ।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
কোনো সঠিক চিকিৎসা নেই। মাছগুলোকে অল্প ঘনত্বে বাস করার সুযোগ দিন। ২. ২ সপ্তাহ পর স্বাভাবিক ভাবেই পরজীবীগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
- শামুক ও ঝিনুক মুক্ত করে নার্সারি পুকুরে পোনা মজুদ করতে হবে। অবশ্য পুকুর শুকানোর পর চুন দিয়ে মাসাধিক কাল ফেলে রাখলে শামুক ও ঝিনুক জাতীয় প্রাণী এড়ানো সম্ভব।
- মাছখেকো পাখি তাড়াবার ব্যবস্থা রাখুন।
(13) মাছের ডেক্টাইলোগাই রোসিস (গিলফ্লক)
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
মৃগেল, শোল, টাকি ও মাগুর জাতীয় মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- মনোজেনিয়া ট্রিমাটোডস প্রজাতির যা খালি চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষুদ্র পরজীবীগুলো মাছের ফুলকার উপর বসে থেকে ফুলকার রস চুষে নেয় এবং ক্ষতের সৃষ্টি করে। এগুলো ফুলকার ওপরে স্বচ্ছ ঝিল্লী আবরণ তৈরি করে এবং কখনো কখনো রক্তক্ষরণের কারণ ঘটায়।
- মাছের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। মাছ অস্থিরতার সাথে লাফালাফি করে এবং মারা যায়।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
২৫০ পি.পি.এম ফরমালিন দ্রবণে মাছকে গোসল দেওয়া।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
এই পরজীবীগুলো সম্পূর্ণ অপসারণ সম্ভব না হলেও অনুকূল ব্যবস্থাপনা পরজীবীর সংখ্যা কমিয়ে আনলে সাময়িক উপশম পাওয়া যেতে পারে।
(14) মাছের গাইরো ডিক্টাইলোসিস্
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
মৃগেল, শোল, টাকি ও মাগুর জাতীয় মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- এ পরজীবীগুলো মাছের দেহের ত্বকের ওপর বসে দেহরস শোষণ করে এবং চামড়ার উপরে ক্ষতের সৃষ্টি করে। মাছ কোনো শক্ত বস্তুর সংস্পর্শে এলে গা ঘষে।
- মাছের দেহে অবসন্নতা দেখা দেয়, এলোমেলো সাতরাতে থাকে এবং লাফালাফি করে।
- মাছ খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
২৫০ পি.পি.এম ফরমালিন দ্রবনে মাছকে গোসল দেওয়া।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
এই পরজীবীগুলো সম্পূর্ণ অপসারণ সম্ভব না হলেও অনুকূল ব্যবস্থাপনায় পরজীবীর সংখ্যা কমিয়ে আনলে সামাকি উপশম পাওয়া যেতে পারে।
(15) মাছের ভিটামিনের অভাব এবং অপুষ্টি রোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি:
চাষযোগ্য যে কোনো মাছ।
রোগের লক্ষণ ও কারণ:
- পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ‘এ, ‘ডি এবং ‘কে এর অভাবজনিত কারণে মাছের অন্ধত্ব এবং হাড় বাঁকা রোগ দেখা দেয়।
- ভিটামিন বি এর অভাবে মাছের ক্ষুধামন্দা, স্নায়ু দুর্বলতা, রক্ত শুন্যতা এবং ত্বক ও ফুলকার ওপর ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে।
- এছাড়া মাছের খাবারে হজমযোগ্য আমিষের অভাবে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। এতে মাছ নিপীড়িত বোধ করে এবং অচিরেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগ:
পুকুরে উদ্ভিজ ও প্রাণিজ কণাসহ প্রাকৃতিক খাবারের পর্যাপ্ত উৎপাদন নিশ্চিত করুন।
প্রতিষেধক/ প্রতিকার:
ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবার প্রয়োগ করুন।
(16) মাছের জোঁক
রোগের কারণ ও লক্ষণ:
মাছের জোঁক কৃমির মতো একটি জীব। এর শরীরের দু প্রান্তে দুটি চুষনী আছে। একটি চুষনী মুখের কাজ করে এবং এর দ্বারাই মাছকে আকড়িয়ে ধরে। এরা সাধারণত ২০-৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। জোঁক মাছের রক্ত খায় এবং যে যে স্থানে জোঁক লাগে সে স্থানে রক্তপাত হতে থাকে এবং ক্ষত স্থানে ফুলে ওঠে। এর ফলে উক্ত ক্ষতস্থানে অতি সহজেই ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। মাছ এ জোঁকের দ্বারা আক্রান্ত হলে অস্থিরভাবে চলা ফেরা করতে থাকে।
চিকিৎসা:
১০০ ভাগ পানিতে ২৫ ভাগ লবণ মিশিয়ে তার মধ্যে ১৫ মিনিট গোসল করালে অধিকাংশ জোঁক পড়ে যায় এবং বাকীগুলো চিমটা দিয়ে তুলে ফেলতে হয়।
(17) মাছের কটিয়া নেকট্রিক্স
রোগের কারণ ও লক্ষণ:
এ রোগে মাছের শরীরে নীলাভ বা ধূসর রংয়ের আবরণ পড়ে এবং মাছের চামড়ায় প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং বহুল পরিমাণে পিচ্ছিল ক্লেদ নির্গম হয়।
চিকিৎসা:
২০০ ভাগ পানিতে ১ ভাগ ফর্মালিন মিশিয়ে মাছকে ১০ মিনিটকাল গোসল করালে আরোগ্য হয়।
(18) মাছের স্কীনফুক
রোগের কারণ ও লক্ষণ:
- এ রোগে প্রথমে মাছের রঙ বিবর্ণ হয়ে যায় এবং পরে ফ্যাকাশে দেখায়। তারপর পাখনা কুচকে যায় এবং আস্তে আস্তে পঁচে খসে পড়ে। শরীরের চামড়া স্বাভাবিক অবস্থা হতে বেশি পিচ্ছিল হয় এবং রক্তের ছোট ছোট দাগও দেখা যায়। মাছ ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। গাইরোডাকটাইলাস্ জীবাণু দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে মাছের ওজন খুব হরাস পায় এবং অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। মাছকে পানির উপরে উঠে ঘন ঘন অবসর নিতে দেখা যায়। চলাফেরা ক্রমে ক্রমে কঠিন হয়ে পড়ে এবং পরিশেষে শ্বাস কষ্টের ফলে মাছ মারা যায়। এ রোগের আক্রমণ খুবই মারাত্মক। রোগ দেখা দেওয়ার পরে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করা উচিত। যদি শুধু চামড়া আক্রান্ত হয় তাহলে রোগের অবস্থা খুব কঠিন নয়। কিন্তু যদি ফুলকা আক্রান্ত হয় তাহলে এ রোগ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
- গাইরোডকটাইলাস্ ০.২ মিলিমিটার হতে ০.৫ মিলিমিটার লম্বা হয়। এদের শরীরের উপরের দিকে মৌচাকাকৃতি দুটি অংশ দিয়ে নিজেকে মাছের শরীরের অথবা ফুলকার সংগে আটকে রাখে এবং বহিরাবরণ কোষ খায়। ফলে মাছের চামড়ার ভয়ানক ক্ষতি হয়।
চিকিৎসা:
সামান্য সংক্রমণ হলে ১ লক্ষ ভাগ পানিতে ১ ভাগ পটাশ পার ম্যাঙ্গানেট মিশিয়ে অথবা ২,৫০০ ভাগ পানিতে ১ ভাগ ফর্মালিন্ মিশিয়ে আক্রান্ত মাছকে আধ ঘণ্টা ধরে গোসল করালে রোগ মুক্ত হয়। ২,০০০ ভাগ পানিতে ১ ভাগ অ্যামোনিয়া মিশিয়ে ৫ হতে ১০ মিনিটকাল গা ধোয়ানো সবচেয়ে ভাগ চিকিৎসা। যে সমস্ত মাছের চামড়া খুব শক্ত এদের ১,০০০ ভাগ পা নিতে ১ ভাগ অ্যামোনিয়া মিশিয়ে গা ধোয়ানো দরকার। ১,০০০ ভাগ পানিতে ১ ভাগ মিথিলিন ব্লগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত পানিতে নীল রঙ থাকে ততক্ষণ মাছকে পানির মধ্যে রাখা ও ছোট মাছের জন্য ভালো চিকিৎসা।