Skip to content

 

Wait...❤😘 Show love? ⬇⬇⬇

মাছের হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ও মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি, মাছের হ্যাচারি তৈরি, মাছের হ্যাচারি ব্যবসা (বিস্তারিত)

হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ও মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি মাছের হ্যাচারি ব্যবসা তৈরি
Table of contents

বিষয়: (বিস্তারিত) মাছের হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ও মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি, মাছের হ্যাচারি তৈরি, মাছের হ্যাচারি ব্যবসা।
হ্যাশট্যাগ:#মাছের হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা#মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি#মাছের হ্যাচারি তৈরি#মাছের হ্যাচারি ব্যবসা#খামারিয়ান.কম।

পোনার গুণাগুণ রক্ষায় কিছু সমস্যা

  • হ্যাচারিতে উৎপাদিত রেণু পোনার উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে এর গুণগত মানের অবনতি একই হারে ঘটে চলছে। মৎস্য পোনার কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যগুলোর অবনতি হওয়ায় মৎস্য চাষীরা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
  • চাষীদের কাছ থেকে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায় যে, তাদের পুকুরে মাছ আশানুরূপ বৃদ্ধি পায় না, সহজেই মাছ রোগাক্রান্ত হয়, অল্প বয়সে এবং ছোট আকারেই পরিপক্কতা লাভ করে। ফলে সার্বিকভাবে মাছের উপাদন বৃদ্ধিতে এটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বর্তমানে হ্যাচারিতে উন্নতমানের পোনা উৎপাদন না হওয়ার পিছনে যে সকল কারণ চিহ্নিত করা যায় তা নিম্নরূপ:

ব্রুডমাছ নির্বাচনে ঋণাত্মক প্রবণতা

  • অধিকাংশ হ্যাচারিতে ২-৪ জোড়া স্ত্রী-পুরুষ মাছ থেকে উৎপাদিত পোনা নার্সারি পুকুরে লালনের পর দ্রুত বর্ধনশীল পোনাগুলোকে বিক্রি করে অপেক্ষাকৃত কম বর্ধনশীল অবশিষ্ট পোনাকে মজুদ পুকুরে লালন পালন করে পরবর্তীতে ব্রুড হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ পদ্ধতিকে ঋণাত্মক নির্বাচন (Negative Selection) প্রবণতা বলা হয়।
  • এভাবে নির্বাচিত ব্রুডমাছ কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে হয় অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে এদের প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদিত পোনা বংশগত কারণেই বড় হয় না। তাছাড়া স্বাস্থ্যগত দিক থেকে দুর্বল হবার কারণে এদের মৃত্যুহারও বেশি হয়ে থাকে।

অন্তঃপ্রজনন

  • বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি হ্যাচারিগুলোতে উৎপাদিত পোনার গুণগত মান দিন দিন কমে যাবার পেছনে মৎস্য বিজ্ঞানীরা যে কারণটিকে বিশেষভাবে দায়ী করছেন তার মধ্যে অন্তঃপ্রজনন (inbreeding) অন্যতম।
  • বংশগতভাবে অতি ঘনিষ্ঠ স্ত্রী পুরুষ মাছের প্রজননকে অন্তঃপ্রজনন বলা হয়ে থাকে। অন্তঃপ্রজননের ফলে কৌলিতাত্ত্বিক সমসত্বতার মাত্রা (Degree of Homozygosity) বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং কৌলিতাত্ত্বিক অসমসত্বতার মাত্রা (Degree of Heterozygosity) কমতে থাকে। কৌলিতত্ত্ববিদরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, ভাই-বোন সম্পর্কীয় মাছের মধ্যে প্রজননে এক জেনারেশনই কৌলিতাত্ত্বিক অসমসত্বতার শতকরা ২৫ ভাগ হরাস পায়। জেনারেশন থেকে জেনারেশনে অবক্ষয়ের এ ধারা চলতে থাকে। অনুরূপভাবে মা ও ছেলে এবং মেয়ে ও পিতা সম্পর্কীয় মাছের মধ্যে প্রজননেও কৌলিতাত্বিক অবক্ষয় দেখা দেয়। অর্থাৎ পিতা-মাতা বংশগতভাবে যতটা ঘনিষ্ঠ হবে পরবর্তী বংশধরের উপর কৌলিতাত্ত্বিক অবক্ষয়ের প্রভাবের মাত্রা তত বেশি হবে। এর ফলে মাছের উৎপাদনশীলতা হরাস, বিকলাঙ্গতা, রোগ-বালাইয়ের সমস্যা, ডিমের সংখ্যা কমে যাওয়া ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

অপরিকল্পিত সংকরায়ন

  • সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে যে, কিছু কিছু হ্যাচারি মালিক পদ্ধতিগত অভিজ্ঞতা বা পরিকল্পনা ছাড়াই সংকরায়নের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে মুনাফা অর্জনই তাদের মূল লক্ষ্য।
  • বিশেষ করে রুই ও কাতলার সংকরায়নের মাধ্যমে উৎপাদিত পোনাকে কাতলা এবং সিল্ভার কার্প ও বিগৃহেড কার্পের সংকরায়নের মাধ্যমে উৎপাদিত পোনাকে বিগহেডের পোনা বলে বিক্রির একটা প্রবণতা কোনো কোনো বেসরকারি হ্যাচারি মালিক বা অপারেটরদের মধ্যে রয়েছে। সংকর জাতের পোনা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিপক্ক মাছ হয়ে প্রজনন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে বর্তমানে আমাদের দেশে চাষযোগ্য বিশুদ্ধ জাতের মাছে অশুদ্ধ জীনের অনুপ্রবেশ (Gene Introgression) ঘটতে পারে।

অপরিণত মাছের প্রজনন

  • মাছের বয়স ও আকার বৃদ্ধির সাথে দেহের তুলনায় গোনাডের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কমতে থাকে। সে জন্য বড় ওজনের একটি স্ত্রী মাছ থেকে যে পরিমাণ ডিম পাওয়া যায় তার পরিমাণ, কয়েকটি মাছের মিলিত ওজন ওসব মাছের সমান হলে সেগুলো থেকে প্রাপ্ত মোট ডিমের পরিমাণ অপেক্ষা কম হয়।
  • তাছাড়া বড় আকারের ব্রুড মাছের বাজার দর অত্যন্ত বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেসরকারি হ্যাচারিতে নিরাপত্তা জনিত কারণেও বড় মাছকে পুকুরে লালন পালন করা সম্ভব হয় না। সেই সাথে বৃহদাকার মাছ লালন পালনে খাদ্যসহ অপরাপর উপকরণ বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। সেজন্য অধিকাংশ হ্যাচারির মালিক বা অপারেটর ছোট আকারের মাছে প্রজননে বেশি আগ্রহী হন। এ সকল ছোট এবং অপরিণত বয়সের মাছ থেকে উৎপাদিত পোনা শারীরিকভাবে দুর্বল হয় এ কারণে পোনা অধিক হারে মৃত্যুবরণ করে এবং কাঙ্খিত ফলন দিতে ব্যর্থ হয়।

পোনার গুণাগুণ রক্ষায় করণীয়

  • একথা সত্য যে, প্রাকৃতিক উৎস হতে সংগৃহীত পোনার গুণগত মান হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা অপেক্ষা ভালো। প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রে মাছের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক পরিবেশের পূর্ণ অনুকুল অবস্থায় প্রজনন ঘটে থাকে। তাই রেণু পোনার গুণগত মান ভালো থাকে।
  • ধারণা করা হয়ে থাকে যে, নদীতে প্রথম দিকের প্রজননে উৎপন্ন রেণু পরের দিকে উৎপন্ন রেণু অপেক্ষা অধিকতর ভালো মানের হয়ে থাকে। প্রথম দিকের রেণু পোনাতে অন্যান্য প্রজাতির রেণুর আধিক্য কম থাকে। সম্ভব হলে প্রাকৃতিক উৎসের পোনার সাহায্যে মৎস্য চাষ করতে পারলে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে এক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতার সাথে পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
  • ইদানিং এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নদীতে রেণু উৎপাদন শুরু হলে নদীর উৎসের পোনার সংগে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা মিশিয়ে অথবা হ্যাচারির পোনাকে নদীর পোনা বলে রেণু ক্রেতাদের প্রতারিত করে থাকে। অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে নদী উৎসের রেণু পোনা সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে হবে।

তাছাড়া হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনার মান উন্নয়নের জন্য নিম্নে বর্ণিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

হ্যাচারিতে নদী উৎসের ব্রুড ব্যবহার করা

আমাদের দেশীয় প্রজাতির যে সকল মাছ হ্যাচারিতে প্রজনন করানো হয়, সে সকল ব্রুড মাছ বিভিন্ন নদীর উৎসের হলে খুবই ভালো হয় নদী থেকে রেণু সংগ্রহ করে নার্সারি পুকুরে লালন পালন করে তা থেকে দ্রুত বর্ধনশীল পোনা আলাদা করে ব্রুড মাছে রূপান্তর করা উত্তম। প্রথমবার নদী থেকে সংগ্রহ করার পর ২-৩ বছর অন্তর অন্তর নদী হতে রেণু সংগ্রহ করে ব্রুড যোগানোর এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। বিদ্যমান ব্রুড স্টক হতে খুব বেশি বয়স্ক, দুর্বল স্বাস্থ্যের কিংবা রোগাক্রান্ত, কম বৃদ্ধির হার সম্পন্ন ব্রুড বাদ দিয়ে নতুন স্টক দিয়ে তা পূরণ করে নিতে হবে।

হ্যাচারিসমূহের মধ্যে ব্রুড বিনিময়

নদী উৎস হতে ব্রুড মাছ তৈরির জন্য পোনা সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে হ্যাচারির মধ্যে ব্রুড বিনিময়ের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে এক হ্যাচারির পুরুষ মাছের সাথে অন্য হ্যাচারির স্ত্রী মাছ বিনিময় খুবই কার্যকর।

দ্রুত বর্ধনশীল পোনা বাছাই করে ব্রুড তৈরি

হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা হতে ব্রুড তৈরি করতে হলে যতটা সম্ভব প্রজাতি ভেদে বিভিন্ন লটের পোনা হতে অধিক বর্ধনশীল পোনা বাছাই করতে হবে। প্রত্যেক জোড়া উন্নতমানের ব্রুড থেকে উৎপাদিত পোনাকে একটি করে লট বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রত্যেক লট থেকে সমান সংখ্যক সংগ্রহ করা পোনা একসাথে করে আলাগা পুকুরে মজুদ ও পরিচর্যার ব্যবস্থা করে ব্রুডস্টক তৈরি করা যায়।

উন্নত ব্ৰুডজাত সংগ্রহ

সরকার ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে বেশ কিছু সরকারি খামারে উন্নতমানের ব্রুড তৈরি করে তা সরকারি এবং বেসরকারি খামারের নিকট স্বল্পমূল্যে সরবরাহের এক কর্মসূচি ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে। মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর গত কয়েক বছর যাবৎ বিভিন্ন নদী উৎসের রেণু থেকে ব্রুড তৈরি করার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারি হ্যাচারি মালিকগণকে এ সকল উৎস হতে ব্রডজাত সংগ্রহ করে তা দিয়ে রেণু উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং সহায়তা দিতে হবে।

সংকরায়ন বন্ধকরণ

সংকরায়নের ধ্যমে উদ্ভিদ এবং প্রাণীতে উন্নত প্রজাতি উদ্ভাবন একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। সংকরায়ন তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যদি তা পিতা-মাতার তুলনায় উন্নত বৈশিষ্ট্যের বংশধর সৃষ্টিতে সক্ষম হয়। পরিকল্পনাধীন সংকরায়নের ফলে শুদ্ধ জাতের বিপর্যয় ঘটাই স্বাভাবিক। সেজন্য তা থেকে বেসরকারি হ্যাচারি মালিক বা অপারেটরদেরকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনবোধে আইন প্রণয়ন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।

প্রজনন কাছে বংশগতভাবে অতি ঘনিষ্ঠ ব্রুড মাছ ব্যবহার না করা

হ্যাচারি পরিচালনায় নিয়োজিত জনশক্তিকে বংশগতভাবে অতি ঘনিষ্ঠ ব্রুডমাছের মধ্যে প্রজনন ঘটানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে হ্যাচারি অপারেটরদের অবশ্যই ক্রডের স্টক সনাক্ত করে প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

প্রজননের জন্যে উপযুক্ত বয়স ও ওজনের ব্রুডমাছ ব্যবহার করা

প্রজনন কাজে ব্রুডমাছ নির্বাচনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত বয়স ও ওজনের বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। বয়স অনুপাতে যদি মাছের দৈহিক বৃদ্ধি না ঘটে তাহলে বুঝতে হবে ব্রুড হিসেবে মাছটি উন্নতমানের নাও হতে পারে অথবা ব্রুড ব্যবস্থাপনা যথাযথ হয় নি। যার ফলে তার পরবর্তী বংশধর কাঙ্খিত মানের নাও হতে পারে। আবার বড় আকারের মাছ হলেই ভালো ফলাফল আশা করা যায় না, যদি প্রজননে অংশগ্রহণকারী পুরুষ এবং স্ত্রী মাছ বংশগতভাবে সম্পর্কিত হয়।

See also  বিল-হাওড়ে মাছ চাষ ও ব্যবস্থাপনা, প্লাবন-ভূমিতে পেনে মাছ চাষ, মহাসড়ক ও রেলওয়ের পাশের জলাশয়ে মাছ চাষ, মাছ চাষ প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা

মৎস্য হ্যাচারি নির্মাণ

  • যে প্রক্রিয়ায় পরিপক্ক পুরুষ এবং স্ত্রী মাছকে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রণোদিত করে ডিম ছাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয় এবং সে ডিম ফুটিয়ে রেণু উৎপাদন করা হয় তাকে প্রণোদিত প্রজনন বলা হয় এবং এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে অবকাঠামো ব্যবহার করা হয় তাকে হ্যাচারি হিসেবে গণ্য করা হয়।
  • রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ ইত্যাদি মাছ বদ্ধ জলাশয় অর্থাৎ পুকুর বা দীঘিতে ডিম ছাড়ে না যদিও প্রজনন মৌসুমে এসব স্ত্রী মাছের উদর ডিমে পূর্ণ থাকে। পুরুষ মাছেরও শুক্রাণু তৈরি হয়। কিন্তু এ পরিবেশে প্রজনন হয় না। বিদেশি কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে কার্পিও মাছ বদ্ধ জলাশয়ে বংশ বিস্তার করতে পারে, কিন্তু সিল্ভার কার্প, বিগহেড কার্প, গ্রাস কার্পের বংশ বিস্তার বদ্ধ পানিতে ঘটে না। এদের প্রজনন সম্পূর্ণ প্রণোদিত প্রজননের উপর নির্ভরশীল।
  • হরমোন ইনজেকশনের সাহায্যে আমাদের দেশে হ্যাচারিতে এ সমস্ত মাছের প্রজনন ঘটানো হয়ে থাকে। হ্যাচারি নির্মাণের ক্ষেত্রে যে সকল বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

স্থান নির্বাচন

হ্যাচারি স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হ্যাচারি নির্মাণ ও পরিচালনার উপকরণ সংগ্রহ, পরিবহণ, উৎপাদিত রেণু পোনা সরবরাহ, পর্যাপ্ত পুকুর, নির্মাণ খরচ ইত্যাদি নানাবিধ হ্যাচারির স্থান নির্বাচনের বিষয়টিকে বিবেচনায় আনতে হয়। মৎস্য হ্যাচারির স্থান নির্বাচনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে:

১. কম খরচে হ্যাচারি ও পুকুর নির্মাণ; ২. মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা; ৩. সাংবাৎসরিক পানির উৎস; ৪. ভালো গুণাগুণ সম্পন্ন পানি; ৫. উপকরণের সহজলভ্যতা; ৬. বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা; ৭. বাজারজাতকরণের সু-ব্যবস্থা; ৮. দূষণমুক্ত এলাকা; ৯. বন্যামুক্ত এলাকা।

হ্যাচারির অবকাঠামো নির্মাণ

অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে রেণুর চাহিদা, অবিক্রিত, রেণু মজুদের জন্য পর্যাপ্ত নার্সারি পুকুর এবং সর্বোপরি আর্থিক সংগতিকে বিবেচনায় আনতে হবে। গুণগত মান সম্পন্ন রেণু ও পোনা উৎপাদনের স্বার্থে হ্যাচারির নির্মাণ শৈলী এমন হওয়া উচিত যাতে ক্রেতা সাধারণ আকৃষ্ট হয় এবং হ্যাচারি অভ্যন্তরে একটি স্বাস্থ্যকর ও রোগ-জীবাণুমুক্ত পরিবেশ থাকে। সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে হ্যাচারি পরিচালনার জন্য হ্যাচারি অবকাঠামোর বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। নিম্নে একটি মৎস্য হ্যাচারির প্রধান অংশগুলো আলোচনা করা হলো:

উচ্চ জলাধার বা ওভার হেড ট্যাংক

হ্যাচারিতে পানি সরবারাহের পূর্বে পানিকে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য উঁচুতে যে জলধার নির্মাণ করা হয় তাকে উচ্চ জলাধার বা ওভারহেড ট্যাংক বলে। এ জলাধারকে ভূমি হতে ৩ মিটার উঁচুতে স্থাপন করলে হ্যাচারির বিভিন্ন ট্যাংক বা চৌবাচ্চায় পানি সরবরাহ সহজতর হয়। হ্যাচারির উৎপাদন ক্ষমতার উপর উচ্চ জলাধারের পানি ধারণ ক্ষমতা নির্ভর করে। ছোট, মাঝারি এবং বৃহৎ হ্যাচারির ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২৫ ঘনমিটার, ৫০ ঘনমিটার ও ১০০ ঘনমিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন উচ্চ জলাধার উপযোগী

প্রজনন ট্যাংক

কার্প জাতীয় দেশি এবং বিদেশি প্রজাতির প্রজননের জন্য গোলাকার চৌবাচ্চাই বেশি উপযোগী। গোলাকার চৌবাচ্চা বিভিন্ন আকারের হতে পারে এবং প্রজননের জন্য ট্যাংকের আকার অনুযায়ী মাছ ইন্‌জেক্শন দিয়ে তাতে রাখার পরিমাণও কমে বেশি হতে পারে।

হ্যাচিং জার্ বা ট্যাংক

নিষিক্ত ডিমকে প্রজনন ট্যাংক হতে সংগ্রহ করে হ্যাচিং জার্ বা ট্যাংকে রেখে ডিম ফুটিয়ে রেণু পোনায় পরিণত হবার পরও ৩-৪ দিন পর্যন্ত রাখা যায়। হ্যাচারির মেঝে থেকে ১ মিটার উঁচুতে হ্যাচিং জার একটি প্লাটফরমের উপরে সারিবদ্ধভাবে নির্মাণ করা ভালো। এ ধরণের ২৫০-৩০০ লিটার পানি ধারণক্ষম গোলাকার ফানেল আকৃতির একটি জারে সাধারণত ৩০০-৫০০ গ্রাম নিষিক্ত ডিম ফোটানো যায়।

আয়তকার হোল্ডিং ট্যাংক বা সিস্টার্ন

ব্রুড এবং পোনা কন্ডিশনিং, রেণু রাখার কাজে আয়তকার হোল্ডিং ট্যাংক হ্যাচরির জন্য খুব প্রয়োজন। এ ধরনের ট্যাংক দৈর্ঘ্যে ৫ মিটার, প্রস্থে ১ মিটার ও উচ্চতায় ১ মিটার হওয়া ভালো। সিস্টার্নে একপ্রান্ত দিয়ে পানি ঢুকা এবং অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যাবার ব্যবস্থা রাখতে হয়।

গভীর বা অ-গভীর নলকূপ স্থাপন

একটি মৎস্য হ্যাচারি পরিচালনার জন্য প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো পানি। হ্যাচারির পানি সাধারণত পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন যুক্ত হতে হয়। হ্যাচারির পানিতে লোহার পরিমাণ বেশি হলে ডিম ফুটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই হ্যাচারিতে গভীর বা অগভীর নলকূপ স্থাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নলকূপ স্থাপনের পূর্বেই টেষ্ট বোরিংয়ের সাহায্যে ঐ স্থানের পানি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। হ্যাচারিতে ব্যবহার্য পানিতে নিম্নের গুণাগুণ থাকা বাঞ্ছনীয়:

বিভিন্ন ধরনের পুকুর

সাধারণত একটি হ্যাচারিতে আঁতুড়ে পুকুর, লালন পুকুর ও মজুদ পুকুর থাকা বাঞ্ছনীয়। হ্যাচারি পরিচালনা ব্রুড মাছের পরিচর্যা উন্নতগুণ সম্পন্ন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হ্যাচারি নিয়ন্ত্রণাধীন ও ব্যবস্থাপনাধীন পুকুরে যথাযথভাবে পরিচর্যা করতে হবে।

১. প্রতি একরে ৬৫০-৭৫০ কেজি মাছ মজুদ করতে হবে।

২. মাঝে মাঝে পানি পরিবর্তনের সু-ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত সম্পূরক খাদ্য পরিহার করতে হবে।

৪. রোগ-বালাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা আগে থেকেই নিতে হবে।

৫. কোনো পুকুরে কী প্রজাতির এবং ওজনের মাছ আছে তার রেজিষ্টার রাখতে হবে।

৬. প্রজনন শেষে ব্রুড মাছ আলাদা পুকুরে পরিচর্যা করতে হবে।

প্রজননক্ষম মাছ নির্বাচন

প্রজনন কার্যক্রম শুরুর আগে মাছ প্রজনন উপযোগী হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। আমাদের দেশে যেসব প্রজাতির মাছ প্রজননের জন্য হ্যাচারিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাদের প্রজননকাল সাধারণত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিস্তৃত। সফল প্রণোদিত প্রজননের জন্য সঠিক মাছ বাছাই করা একান্ত প্রয়োজন। প্রজনন মৌসুমে প্রজননে প্রস্তুত মাছের লক্ষণাদি প্রায় সব প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে একই ধরনের হয়। লক্ষণাদি নিম্নে বর্ণিত হলো:

স্ত্রী মাছ

১. বক্ষ পাখনার ভিতরের দিক মসৃণ ও পিচ্ছিল হবে।

২. মাছের পেট গোলাকৃতি, নরম এবং স্থিতিস্থাপকতা বেশি হবে।

৩. পায়ু ফোলা ও ঈষৎ গোলাপি থেকে লাল হবে।

৪. তলপেটে সামান্য চাপ দিলে দু একটা ডিম বেরিয়ে আসবে।

পুরুষ মাছ

১. বক্ষ পাখনার ভিতরের দিক খসখসে হবে।

২. পেট চিকন হবে।

৩. পায়ু স্বাভাবিক আকার ও রং হবে।

৪. তলপেটে সামান্য চাপ দিলে দুধের মতো তরল বীর্য (Milt) বেরিয়ে আসবে।

ব্রুড মাছ পরিবহণ

  1. ব্রুড অত্যন্ত সতর্কতার সংগে পরিবহণ করতে হয়। এসব মাছ পরিবহণের সময় যেন আঘাত প্রাপ্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  2. পরিবহণের পূর্বে পুকুরের পানির তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বেই ব্রুড বাছাইয়ের কাজ সারা ভালো। মাছকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নাড়াচাড়া করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে মাছ যাতে কোনোভাবেই আঘাত প্রাপ্ত না হয়।
  3. সাধারণত স্বল্প দুরত্বে পরিবহণের ক্ষেত্রে পলিথিন ব্যাগে পরিমিত পানি নিয়ে বড় মাছ হলে একটি এবং ছোট মাছ হলে দুটি মাছ পরিবহণ করা যায়। পরিবহণকালীন খেয়াল রাখতে হবে যাতে মাছের মাথার অংশ অর্থাৎ ফুলকা পানিতে ডুবানো থাকে।
  4. পুকুর থেকে এনে ব্রুডমাছগুলোকে আয়তকার ট্যাংক বা সিস্টার্নে প্রবাহমান পানিতে রেখে ৪-৫ ঘণ্টা পর হরমোন ইনজেকশন দিতে হয় ৷

হরমোন ইন্‌জেক্শন প্রয়োগ

  • প্রণোদিত প্রজননে ব্যবহৃত হরমোন বিভিন্ন উৎস হতে পাওয়া যায় এবং এগুলো বাজারে বিভিন্ন নামে প্রচলিত। যেমন: ১. মাছের পিটুইটরী গ্রন্থি বা পিজি (Pituitary Gland)। ২. এইচ.সি.জি (H.C.G) যেমন সুমাছ (ভারত), কোরোলন (হল্যান্ড)। ৩. ওভাপ্রিম্। ৪. এল.আর.এইচ.এ (LRHA)।
  • মৎস্য প্রজননে হরমোনের প্রয়োগমাত্রা বিভিন্ন প্রজাতির জন্য বিভিন্ন হয়ে থাকে। কোনো কোনো মাছে শুধু পি.জি এবং এইচ.সি.জি দুটোই প্রয়োগ করতে হয়। বর্তমানে ওভাপ্রিম্না মের কৃত্রিম হরমোনটি বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ হরমোন দ্বারা শুধু একবার একই সঙ্গে পুরুষ ও স্ত্রীর মাছকে ইন্‌জেক্শন দেওয়া হয়। ফলে মাছকে হাত দিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া করতে হয় না। পিজি বা এইচ.সি.জি.র পরিবর্তে ওভাপ্রিম্ ব্যবহার পদ্ধতিতে প্রণোদন, ডিম নিষিক্তকরণ, ডিম ফোটা, রেণু পোনা বেঁচে থাকা ইত্যাদির হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

বিভিন্ন প্রজাতির প্রজনন পদ্ধতি

রুই জাতীয় দেশি মাছের প্রজনন

  1. এ সমস্ত মাছের ক্ষেত্রে স্ত্রী মাছকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ১ম ইন্‌জেক্শন দেওয়ার পর সিস্টার্নে রেখে দেওয়া হয়।
  2. পুরুষ মাছকে এ সময়ে কোনো ইন্‌জেক্‌শন না দিয়ে অন্য সিস্টার্নে রাখা হয়।
  3. ৬ ঘণ্টা পর স্ত্রী মাছকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ২য় ইন্‌জেক্শন এবং পুরুষ মাছকে একটিমাত্র ইন্‌জেক্‌শন দিয়ে একই সাথে প্রজনন ট্যাংকে রেখে দেওয়া হয় এবং জাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় যাতে মাছ লাফ দিয়ে পড়ে যেতে না পারে।
  4. ২য় ইন্‌জেক্শনের ৫-৬ ঘণ্টা পর স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ মাছ বীর্য ছাড়ে। ফলে ডিম নিষিক্ত হয়।
  5. পানির বৃত্তাকার প্রবাহের কারণে নিষিক্ত ডিমগুলো পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় ঘুরতে থাকে।
  6. ডিম ছাড়া শেষ হলে মাছগুলোকে প্রজনন ট্যাংক থেকে সরিয়ে নিতে হয়। তারপর ডিমগুলোকে হ্যাচিং ট্যাংক বা জারে স্থানান্তর করা হয়।

বিদেশি কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন

  1. রুই জাতীয় মাছের ন্যায় এ সকল মাছের জন্য নির্ধারিত মাত্রায় ইন্‌জেক্শনের পর পুরুষ এবং স্ত্রী মাছকে আলাদা ট্যাংকে রাখতে হয়।
  2. ২য় ইন্‌জেশনের ৫ ঘণ্টা পর থেকে খেয়াল রাখতে হবে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে কিনা।
  3. যখন ২-৪ টা ডিম পানিতে দেখতে পাওয়া যাবে তখনই স্ত্রী মাছকে প্রথমে আলতোভাবে ধরে নরম তোয়ালে জড়িয়ে গায়ের পানি মুছে নিতে হবে।
  4. তারপর স্ত্রী মাছের পেটের উপরের দিক থেকে নিচের দিকে মৃদু চাপ প্রয়োগ করে একটা প্লাস্টিকের শুকনা পাত্রে ডিম বের করে নিতে হবে এবং সাথে সাথে পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিয়ে বীর্য বের করে ডিমের উপর ছড়িয়ে দিতে হবে।
  5. ডিম এবং বীর্য পাখি কিংবা মুরগির পালক দ্বারা ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে পরিষ্কার পানি মেশাতে হবে।
  6. তারপর আস্তে আস্তে পানি দিয়ে কয়েকবার ধৌত করতে হবে যাতে অতিরিক্ত বীর্য ডিমের গায়ে লেগে থাকতে না পারে।
  7. এভাবে পানি সমেত ডিমগুলোকে ২০-২৫ মিনিট নাড়াচাড়া করে তাদেরকে ফুলানোর সুযোগ দিতে হবে এবং পরে হ্যাচিং জার বা ট্যাংকে স্থানান্তর করতে হবে। এ পদ্ধতিকে ‘স্ট্রিপিং’ বলা হয়।
See also  আধুনিক পদ্ধতিতে মাছের পোনা উৎপাদন ও পরিচর্যা, মাছের পোনা উৎপাদন, রেনু পোনা উৎপাদন

পাংগাস মাছের প্রজনন

থাই পাংগাস ৩ বছরেই প্রজননক্ষম হয়। সাধারণত মে হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পাংগাসের প্রণোদিত প্রজনন করানো যায়। স্ত্রী এবং পুরুষ পাংগাস মাছকে আলাদা চৌবাচ্চায় রেখে স্ত্রী মাছকে প্রথমে প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২ মিলিগ্রাম হারে পিজি দিয়ে ইন্‌জেক্শন দিতে হয়। প্রথম ইন্‌জেক্শনের ৮-৯ ঘণ্টা পর স্ত্রী মাছকে প্রতি কেজির জন্য ৬-৮ মিলিগ্রাম হারে দ্বিতীয় ইনজেকশন দিতে হয়। স্ত্রী মাছের দ্বিতীয় ইন্‌জেক্শনের সময় পুরুষ মাছকে প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২ মিলিগ্রাম হারে একটি ইনজেকশন দিতে হয় এবং পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে আলাদা চৌবাচ্চায় রাখতে হয়। দ্বিতীয় ইন্‌জেক্শনের ৮-৯ ঘণ্টা পর স্ত্রী মাছ ডিম দেয়। বিদেশি কার্প জাতীয় মাছের ন্যায় ডিম সংগ্রহ এবং পরিষ্কার করে নিতে হয়।

ডিম ফোটানো ও রেণুর পরিচর্যা

  • হ্যাচিং জার বা ট্যাংকে কী পরিমাণ ডিম ফুটানো যাবে তা ঐ জার বা ট্যাংকে পানির ধারণ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি লিটারে ২ গ্রাম হারে শুকনো ডিম ফুটানো যায়। হ্যাচিং জার বা ট্যাংকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ পানির নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ বজায় রাখতে হবে যাতে ডিম তলায় বসে যেতে না পারে। মাছের ডিম স্ফুটন সময়কাল প্রজাতির ভিন্নতা এবং পানির তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। ১৪-২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিমের স্ফুটন শেষ হয়। এ সময়ের মধ্যে রেণু পোনা ডিমের খোল থেকে বেরিয়ে উপর-নিচ সাঁতার কাটা শুরু করে।
  • সুস্থ ও সবল রেণু পোনা ডিমের খোসা ও অনিষিক্ত ডিমের সঙ্গে একসংগে মিশে থাকে ফলে রেণু রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কিছুক্ষণের জন্য পানির প্রবাহ বন্ধ রেখে তলদেশে এসব ময়লা জমিয়ে সাইফনিং পদ্ধতিতে পরিষ্কার করে নিতে হয়। রেণু ফোটার ৩৬-৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত রেণুকে কোনো খাবার দিতে হয় না। এ সময়ের পর তাদেরকে আঁতুড় পুকুরে তৈরি প্রাকৃতিক খাবার সংগ্রহ করে কিংবা হাঁস অথবা মুরগির সিদ্ধ ডিমের কুসুম সূক্ষ্ম ছাকনি (১০০-২০০ মাইক্রন ফাসযুক্ত কাপড়ের তৈরি ছাকনি) দ্বারা ছেকে খেতে দিতে হবে। ৬-৮ ঘণ্টা পর পর প্রতি কেজি রেণুর জন্য একটি করে ডিমের কুসুম খাবার হিসেবে দিতে হয়। রেণু বিক্রি করার ৩-৪ ঘণ্টা পূর্বেই খাবার প্রয়োগ বন্ধ করে দিতে হয়।
  • পাংগাসের ডিম আঠালো হবার কারণে কার্পের ডিমের ন্যায় গোলাকার চৌবাচ্চায় কিংবা হ্যাচিং জারে ঘূর্ণায়মান পানির সাহায্যে একে ফোটানো যায় না। সে জন্য ডিমগুলোকে গোলাকার চৌবাচ্চা কিংবা সিস্টার্নের তলায় ১৫-২০ সেন্টিমিটার পানির গভীরতায় ছড়িয়ে দিতে হয় এবং ঝরণার সাহায্যে অক্সিজেন সমৃদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ২৪-৩০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে পাংগাসের রেণু বের হয়ে আসবে। ডিম ফোটা শেষ হবার সাথে সাথে দ্রুত সাইফনিং পদ্ধতিতে ময়লা পরিষ্কার করে নিতে হয়। পাংগাসের রেণু একে অন্যকে খেযে ফেলার প্রবণতা (ক্যানাবলিজম) থাকায় এদের খাদ্যে প্রাণিজ আমিষ থাকা জরুরী।

পোনার চাষ ব্যবস্থা

  • নদী থেকে সংগৃহীত বা হ্যাচারিতে উৎপাদিত ৩-৪ দিন বয়সের ৫-৭ মিলিলিটার আকারের যে পোনা পাওয়া যায় তাকে রেণু পোনা বলে। এ রেণু পোনা সরাসরি উৎপাদন পুকুরে (Grow out) মজুদ করে বড় মাছে রূপান্তর করা সহজ বা বিজ্ঞান সম্মত নয়।
  • সে জন্য রেণু পোনাকে প্রথমত বিশেষ পুকুরে লালন-পালন করে ৭-৮ সেন্টিমিটার আকারের পোনায় পরিণত করা হয় এবং ঐগুলো নির্ধারিত হারে উৎপাদন পুকুরে মজুদ করে খাবার যোগ্য মাছে এবং প্রয়োজনে ব্রুডে রূপান্তর করা হয়। নিম্নে কার্প জাতীয় পোনা চাষের উপর অত্যন্ত সহজ ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে যাতে একজন পোনা চাষী সহজেই এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে।

পুকুর নির্বাচন

  • সাধারণত ২০-৫০ শতাংশ আয়তনের পুকুর পোনা চাষের জন্য ভালো। তবে সর্বোচ্চ এক একরের চেয়ে বড় আয়তনের পুকুরে পোনা চাষ না করাই শ্রেয়। বেশি গভীর পুকুরে পোনা চাষ করে ভালো ফল পাওয়ার আশা করা যায় না।
  • যে সকল পুকুরে দিনের অধিকাংশ সময় সূর্যের আলো পড়ে এবং বাতাস লাগে সে সকল পুকুর পোনা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হয়। তাছাড়া পুকুর এমন স্থানে হওয়া উচিত যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকে পোনা ক্রেতারা সহজে যাতায়াত ও পোনা পরিবহণ করতে পারে।

পুকুর প্রস্তুতির সময়

পোনা চাষের জন্য মাঘ-ফাল্গুন মাসেই পুকুরের প্রাথমিক প্রস্তুতি পর্ব সম্পন্ন করতে হয়। উল্লেখ্য যে, সিল্ভার কার্প ও বিগৃহেডের রেণু বৈশাখ মাসেই পাওয়া যায়।

পানি নিষ্কাশন

পোনা মাছ চাষের পুকুর প্রতি বছর একবার করে পানি শুকিয়ে ফেলতে হয়। যাতে তলার মাটি সূর্যলোক ও বাতাসের সংস্পর্শে আসায় পরিশোধিত হয় ও উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া প্রধানত রাক্ষুসে মাছ পুকুরে থেকে থাকলে তা অপসারণের জন্য পানি নিষ্কাশন খুবই জরুরি।

রোটেনন্ দ্বারা রাক্ষুসে মাছ নিধন

  • পানি নিষ্কাশন করে ফেললে যদি পুনরায় পানি সংগ্রহ করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে রাক্ষুসে বা অ-চাষকৃত মাছ দমনের জন্য রোটেনন্ নামক এক ধরনের পাউডার ব্যবহার করা হয়। রোটেনন্ হচ্ছে ডেরিস গাছের মূল থেকে তৈরি এক ধরনের পাউডার যা দেখতে হালকা বাদামি রং এল।
  • রোটেনন্ প্রয়োগে মাছ মারা যায় তবে চিংড়ি ও অন্যান্য জলজ কীট মরে না। প্রতি ঘনমিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে রোটেনন্ পাউডার প্রয়োগ করলে সমস্ত রাক্ষুসে মাছ মরা যায়। রোটেনন্ প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর পুকুরে পোনা ছাড়া যায়।

চুন প্রয়োগ

পুকুর শুকিয়ে চুন প্রয়োগ করা যায় আবার পানির মধ্যেও চুন প্রয়োগ করা যায়। প্রত্যেক ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হয়। শুকানো পুকুরে সব স্থানে ভালো করে চুন ছিটিয়ে দিতে হবে আর পানি থাকলে চুন পানিতে গুলে ছিটিয়ে দিতে হবে।

সার প্রয়োগ

  • পুকুরে পোনার প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মানোর জন্য জৈব এবং অজৈব উভয় ধরণের সার ব্যবহার করা যায়। সার প্রয়োগের ফলে পুকুরে অতি ক্ষুদ্র উদ্ভিদ (Phytoplankton) দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং এদেরকে খাবার হিসেবে ব্যবহারকারী প্রাণিজাতীয় অণুজীবও (Zooplankton) দ্রুত তাদের বংশ বৃদ্ধি করে। এসব ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী জাতীয় অনুজীবগুলোকে প্লাংটন বলা হয় যা রেণুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • চুন প্রয়োগের ৭ দিন পর শতাংশে ৫-৭ কেজি গোবর, ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫০-৭৫ গ্রাম টি.এস.পি পানিতে গুলোয়ে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হয়।

প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা

রেণু পোনা মজুদের আগেই পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করে দেখা উচিত এবং সার দেওয়ার ৫-৭ দিন পর তা করা উচিত। সাধারণত পুকুরের পানির রং সবুজাভ, লালচে সবুজ, হালকা বাদামি হলে পানি রেণু পোনা ছাড়ার উপযোগী। বিভিন্নভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা যায়।

সেকী ডিস্ক পরীক্ষা

  1. এটি একটি সাদা কালো লোহার থালা। তিন রংয়ের নাইলনের সূতা দ্বারা ঝুলানো থাকে। প্রথম অংশ লাল, দ্বিতীয় অংশ সবুজ, বাকী অংশ সাদা।
  2. পানিতে ভেজানো সাদা-কালো দেখা না গেলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত খাদ্য বর্তমান।
  3. সবুজ সুতা পানিতে ডুবানোর পর সাদা অংশ দেখা না গেলে বুঝতে হবে পুকুরে পরিমিত খাদ্য আছে।
  4. এ অবস্থায় রেণু ছাড়া যাবে। যদি সাদা অংশ দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে খাদ্য কম আছে। এ সময় পুকুরে আরো সার দিতে হবে।
  5. এ পরীক্ষা সকাল ১০-১১ টার সময়ে পুকুরের এক স্থানে সূর্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে করতে হয়।

গ্লাস পরীক্ষা

গামছার সাহায্যে পুকুরের পানি সংগ্রহ করে পরিষ্কার সাদা স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে নিতে হবে। সূর্যের আলোর দিকে ধরে যদি গ্লাসের পানিতে কিছু সবুজ উদ্ভিদ কণা ও ৫-১০টি ক্ষুদ্র প্রাণিকণা দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে।

হাতের সাহায্যে পরীক্ষা

পরিষ্কার দিনের আলোতে পুকুরের পানিতে কনুই পর্যন্ত হাত ডুবিয়ে হাতের তালু বা পাতা দেখতে হবে। পানির মধ্যে হাতের তালু দেখা না গেলে এবং পানির রং সবুজাভ হলে বুঝতে হবে পরিমিত খাদ্য আছে।

পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা

  • সার প্রয়োগের কয়েকদিন পর পুকুরে পচন ক্রিয়ার ফলে পুকুরের তলদেশে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য কারণে যেমন কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পচন ধরে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়।
  • বিষক্রিয়া জানার জন্য পুকুরে একটি হাপা খাটিয়ে তার মধ্যে ১০-১৫টি পোনা ছেড়ে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত দেখতে হবে। যদি পোনা মারা না যায়, তবেই পুকুরে রেণু মজুদ করা যাবে। বালতি বা ডেকচির মধ্যেও এ কাজটি করা যায়। পুকুরে মশারি জাল টেনে মরা পোকা-মাকড় তুলে ফেলতে হয়। হররা টেনে বাজে গ্যাস সহজেই দূর করা যায়।
  • এ ছাড়া রেণু সংগ্রহ করতে যাওয়ার সময় বোতলে করে কিছু পরিমাণ পানি হ্যাচারিতে নিয়ে গিয়ে একটি পাত্রে ঢেলে হ্যাচারির কয়েকটি পোনা এতে দিয়ে ২-৩ ঘণ্টা যাবৎ পর্যবেক্ষণ করেও পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করা যায়। পানি সংগ্রহের সময় পুকুরের কাঁদা নেড়ে ঘোলা পানি সংগ্রহ করতে হবে। অনেক সময় পানিতে বিষাক্ততা না থেকেও কাঁদাতে থাকতে পারে। বিষাক্ততা দূর না হওয়া পর্যন্ত পোনা মজুদ করা যাবে না।

ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় নিধন

রেণু পোনা পুকুরে ছাড়ার ২৪-৪৮ ঘণ্টা পূর্বে প্রতি ঘন মিটার পানির জন্য আধা মিলিলিটার হারে সুমিথিয়ন বা ১ গ্রাম হারে ডিপটারেক্স প্রয়োগ করে পুকুর থেকে হাঁস পোকা এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক পোকা যেমন: কপিপোড, ক্লাডোসিরা ইত্যাদি অপসারণ বা নিধন করা প্রয়োজন। নতুবা ঐ পোকা মজুদকৃত পোনা খেয়ে ফেলবে বা মেরে ফেলবে।

রেণু পরিবহণ এবং নার্সারি পুকুরে মজুদ করা

  1. হ্যাচারি থেকে অক্সিজেন ব্যাগেই রেণু পরিবহন করা উচিত। ৯০×৫০ সেন্টিমিটার পলিথিন ব্যাগে ৮-১০ ঘণ্টা দূরত্বে ১২৫ গ্রামের বেশি রেণু পরিবহন করা উচিত নয়। সাধারণত প্রতিটি প্যাকেটের জন্য ২টি করে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত। কোনো কারণে যদি একটি ছিদ্র হয়ে যায় দ্বিতীয়টি পানি, অক্সিজেন ও পোনা রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
  2. পরিবহণ কালে ব্যাগে যাতে কোনো ধরণের আঘাত না লাগে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  3. আগুনের উৎস থেকে ব্যাগ সাবধানে রাখতে হবে।
  4. রেণু চাড়ার পূর্বে পুকুরের পানির তাপমাত্রার সাথে রেণু বহনকারী ব্যাগের বা পাতিলের পানির তাপমাত্রার সমতা আনতে হবে। ব্যাগের পানি ও পুকুরের পানি আস্তে আস্তে বদল করে তাপমাত্রার ব্যবধান ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এ কাজটি ১৫-২০ মিনিট করতে হবে।
  5. তাপমাত্রা সমতায় আসলে ব্যাগের বা পাতিলের এক অংশ পানিতে ঢুবিয়ে বাহির থেকে আস্তে আস্তে ভিতরের দিকে পানির স্রোত দিলে ধীরে ধীরে রেণু স্রোতের বিপরীতে বেরিয়ে আসবে। সাধারণত পাড়ের কাছাকাছি রেণু ছাড়তে হয়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় রেণু ছাড়তে হবে।
  6. প্রখর রোদ, বৃষ্টি অথবা নিম্নচাপের দিনে পুকুরে রেণু ছাড়া উচিত নয়। সকালে কিংবা বিকালে রেণু ছাড়া যায়। তবে রাত ১০-১১ টায় রেণু ছাড়তে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
  7. রাত ১০টার পর থেকে সকাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পুকুরের পানির পরিবেশ মোটামুটি একই থাকে। ফলে রেণু দীর্ঘক্ষণ সহনীয় পরিবেশ পায় যা তাকে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া পোনার জন্য ক্ষতিকর পোকা-মাকড় রাতের বেলায় পোনাকে খুব একটা বিরক্ত করতে পারে না।
  8. পুকুরে ৩-৪ দিন বয়সের রেণু মজুদ করা ভালো। একটি নার্সারি পুকুরে একই প্রজাতির রেণু মজুদ করা সবচেয়ে ভালো। একধাপ পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ৬-৮ গ্রাম এবং দুই ধাপ পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ২৫-৩০ গ্রাম রেণু ছাড়া যায়।
See also  পাংগাস মাছের চাষ ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা

মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা

এক ধাপ পদ্ধতি

এ পদ্ধতিতে রেণু পোনাকে একই পুকুরে রেণু থেকে বড় মাছ উৎপাদন পুকুরে ছাড়ার উপযোগী অর্থাৎ ৫-১০ সেন্টিমিটার আকার পর্যন্ত লালন করা হয়। ব্যবস্থাপনা ভালো হলে এক্ষেত্রে রেণুর বেঁচে থাকার হার ৫০-৬০% হয়ে থাকে।

দুই ধাপ পদ্ধতি

  • এ পদ্ধতিতে ৩-৪ দিন বয়সের ২৫-৩০ গ্রাম রেণু প্রতি শতাংশ নার্সারি পুকুরে ছেড়ে ধানী আকারের হলে অর্থাৎ ১.৫-২ সেন্টিমিটার আকারের হলে পরবর্তীতে লালন পুকুরে ৭-১২ সেন্টিমিটার চারা পোনায় রূপান্তর করা হয়।
  • নিয়মিত সার ও খাবার দিলে ১০-১২ দিনের মধ্যেই ধানী পোনা কাটাই বা স্থানান্তর করা যায়। এ পদ্ধতি অধিক লাভজনক এবং পোনা টিকে থাকার হারও অত্যন্ত বেশি হয় এবং পোনা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • সঠিক ব্যবস্থাপনায় ধানী পোনার টিকে থাকার হার ৭০-৮০%। প্রতি শতাংশে একই জাতের অথবা বিভিন্ন জাতের ৮০০-১,০০০টি ধানী মজুদ করা যাবে।

লালন পুকুর প্রস্তুত

নার্সারি পুকুরের মতো লালন পুকুর ও একই নিয়মে তৈরি করা হয়। তবে ধানী পোনা ছাড়ার পূর্বে সুমিথিয়ন বা ডিপ্‌প্টারেক্স ব্যবহারের দরকার নেই।

সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ

  • পোনা মাছের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এবং দৈহিক বৃদ্ধির জন্য পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের সাথে সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজন হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে একই পুকুরে বেশি ঘনত্বে পোনার চাষ করলে বাহির হতে বাড়তি খাদ্য সরবরাহ করাকে সম্পুরক খাদ্য বলে।
  • সম্পুরক খাদ্যের উপাদানসমূহ হল: সরিষার খইল, গমের ভুষি, ধানের কুড়া, ফিশ মিল, ক্ষুদিপানা, কুটি পানা ইত্যাদি।
  • খাদ্যের পরিমাণ পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্যের অবস্থা, রেণুর মোট ওজন এবং তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
  • পুকুরে যদি পর্যাপ্ত খাদ্য থাকে তবে রেণু ছাড়ার প্রথম ২-৩ দিন সম্পূরক খাবার না দিলেও চলবে। তারপর থেকে রেণু মজুদের ওজন অনুপাতে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে খাবার প্রয়োগ করে যেতে হবে।

খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি

  1. রেণু মজুদের প্রথম ৫ দিন শুধু খইল প্রয়োগ সবচেয়ে ভালো। এরপর থেকে প্রয়োজনীয় খাবরের মোট পরিমাণ নির্ধারণ করে তার অর্ধেক ওজনের খইল এবং বাকি অর্ধেক ওজনের চালের মিহি কুড়া অথবা গমের ভূষি একত্রে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
  2. সরিষার খইল অন্তত ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে এর সাথে কুড়া বা ভূষি মেশাতে হয়। পুকুরে দিনে ২ বার খাবার প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  3. মোট খাবারের অর্ধেক সকাল ১০-১১টায় এবং বাকি অর্ধেক বিকেল ৩-৪টায় প্রয়োগ করতে হয়। খাদ্যের এ মাত্রা ধানী কাটাই না করা পর্যন্ত চলবে। লালন পুকুরে পোনার দেহের ওজনের ৫-১০% হারে খাবার দেওয়া উচিত। অধিক উৎপাদনের জন্য এর সাথে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য (গবাদি পশুর রক্ত বা ফিশমিল) দেওয়া যায়।
  4. গ্রাস্কার্পের ধানী মজুদ করা হয়ে থাকলে নিয়মিত ক্ষুদিপানা বা কুটিপানা প্রয়োগ করতে হয়।

হররা টানা

পোনা মজুদের ২-৩ দিন পর থেকে মাঝে মাঝে হররা টেনে দিলে পুকুরের তলায় বাজে গ্যাস জমতে পারে না।

পোনা আহরণ ও বিক্রয়

  1. পোনা মাছ বিক্রয়ের পূর্বে পোনা প্রতিপালন বা লালন পুকুরে আংশিক জাল টেনে পোনার আকার, দৈহিক বৃদ্ধি, রোগ বালাই ও শারীরিক সজীবতা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
  2. পোনা বিক্রয়ের দিন তারিখ ও সময় নির্ধারিত হওয়ার পর পোনা পরিবহণের দূরত্ব ও সময় কালের উপর নির্ভর করে অন্তত ২৪-২৮ ঘণ্টা পূর্বে লালন পুকুর থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোনা আহরণ করে অভ্যস্তকরণ বা টেকসই করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
  3. পোনা ধরার জন্য ছোট ফাঁসযুক্ত নরম জাল ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। লালন পুকুরে জাল টানার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোনা জালে রেখে বাকী পোনা পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
  4. বিক্রয়যোগ্য পোনাগুলোকে জালের মধ্যে ১০-১৫ মিনিট পানির ঝাপটা দিয়ে আংশিক পেট খালি করার সুযোগ দিতে হবে।
  5. কাল বিলম্ব না করে এ্যালুিমিনিয়ামের হাড়ি অথবা পলিথিন ব্যাগের সাহায্যে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি টেকসইকরণ জলাধারে স্থানান্তর করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোনা পরিবহণ ব্যবস্থা

পোনা পরিবহণ বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা যায়।

সনাতন পদ্ধতি

  1. মাটির হাঁড়িতে বা এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে পোনা পরিবহণ করা যায়। টেকসই করণের পর পোনা পরিবহণের উপযোগী হওয়ার পর হাঁড়িতে পরিমাণকৃত নলকূপ বা নদীর পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি নিতে হয়। এ পদ্ধতিতে ২০-৩০টি / লিটার ঘনত্বে পোনা পরিবহণ করা যায়।
  2. পরিবহণকালীন হাঁড়ির পানি ঝাঁকিয়ে বাতাসের অক্সিজেন পানিতে মেশাতে হয় এবং ৪-৫ ঘণ্টা পর পর পানি বদলাতে পরিবহণকালে হাঁড়ির মুখ ভেজা পাতলা কাপড় বা মশারির জাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।
  3. পোনা পরিবহণকালে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন হাঁড়ির পানি অত্যাধিক গরম না হয়।

আধুনিক পদ্ধতি

  1. এ পদ্ধতিতে পলিথিন ব্যাগে পানি ও পোনা রেখে অক্সিজেনসহ প্যাকেট করে পোনা পরিবহণ করা হয়। বাজারে বিভিন্ন পরিমাণে পলিথিন ব্যাগ পাওয়া যায় এর মধ্যে ৯০ সেন্টিমিটার ×৫০ সেন্টিমিটার আকারের পলিথিন ব্যাগ পোনা ও রেণু পরিবহণের জন্য সর্বোত্তম।
  2. প্রতিটি প্যাকেটের জন্য ২টি করে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত। কোনো কারণে যদি একটি ছিদ্র হয়ে যায় দ্বিতীয়টি পানির অক্সিজেন ও পোনা রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
  3. এজন্য সমান আকারের দুটি পলিথিন ব্যাগ নিয়ে একটি আর একটির ভিতর ঢুকিয়ে তার ৩ ভাগের ১ অংশ পানি দ্বারা ভর্তি করতে হবে এবং ব্যাগের উপরের অংশ এক হাত দিয়ে আটকে এবং অন্য হাত দিয়ে ব্যাগটিকে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে হবে কোনো ছিদ্রপথে পানি বেরিয়ে যায় কিনা। ছিদ্র যুক্ত পলিথিন ব্যাগ পাওয়া গেলে তা পরিবর্তন করতে হবে।
  4. প্রতিটি পলিথিন ব্যাগে ৪-৬ লিটার পানির মধ্যে আকার ভেদে ৫০-১০০টি/লিটার ঘনত্বে রেখে পলিথিনের বাকী অংশ অক্সিজেন গ্যাস দ্বারা পূর্ণ করে সুতলী দিয়ে বেঁধে নিতে হয়, যাতে অক্সিজেন বেরিয়ে যেতে না পারে।
  5. পোনা পরিবহণের জন্য পানির তাপমাত্রা ২২-২৭ ডিগ্রি সেল্‌সিয়াস- এর মধ্যে রাখা উচিত। পানির তাপমাত্রা বেশি হলে অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
  6. পরিবহণকালে পলিথিন ব্যাগ যাতে ছিত্র হতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্ভব হলে পলিথিন ব্যাগ চটের ব্যাগ যা বস্তায় ঢুকিয়ে নিতে হবে। অধিক তাপমাত্রা শোষণের জন্য চটের ব্যাগ বা বস্তা ভিজিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
  7. এছাড়া ইন্সুলেটেড ট্যাংকে এরেটরের সাহায্যে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে পোনা পরিবহণ করা যায়।

পোনা পরিবহণে লক্ষণীয় বিষয়

১. একটি ব্যাগে, পাতিলে বা ট্যাংকে একই আকারের ও একই প্রজাতির পোনা দিতে হবে।

২. পোনা ব্যাগে, পাতিলে বা ট্যাংকে নেওয়ার আগে পেট খালি করে কন্ডিশনিং করে নিতে হবে।

৩. দূর্বল পোনা পরিবহণ করা উচিত নয়।

৪. পরিবহণকালে সরাসরি নলকূপের পানি ব্যাগে, পাতিলে বা ট্যাংকে দেওয়া উচিত নয়। এতে পোনা মারা যেতে পারে।

৫. প্রয়োজন হলে একই তাপমাত্রার ভালো পানি দিয়ে ব্যাগের বা পাত্রের পানি বদলানো যেতে পারে।

মাঠ পর্যায়ে পোনা সরবরাহ নিশ্চিতকরণ

  • বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় হাজার খানেক হ্যাচারি থাকলেও তা সারাদেশে সমভাবে বিস্তৃত নয়। ফলে কোথাও কোথাও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রেণু পোনা উৎপাদিত হয়, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অবিক্রিত থেকে যায়।
  • আবার দেশের কোনো কোনো এলাকায় রেণু অভাবে মৎস্য চাষ ব্যাহত হচ্ছে। পোনা যেহেতু জীবজন্তু অবস্থায় পরিবহণ করতে হয় সে জন্য দূর দূরান্ত থেকে পোনা সংগ্রহ করা গ্রামীণ পর্যায়ে চাষীদের জন্য খুবই ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
  • অনেক চাষী মৎস্য চাষে আগ্রহী হলেও তাদেরকে সুলভ মূল্যে সঠিক আকারের চাষ উপযোগী প্রজাতিসমূহের পোনা সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় মৎস্য চাষে ব্যাপকভাবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে এখনো সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয় নি।
  • এ জন্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে যাতে গ্রামীণ পর্যায়েও মৎস্য চাষীগণ সহজেই বিভিন্ন প্রজাতির, বিভিন্ন আকারের পোনা সারা বছর ব্যাপী সংগ্রহ করার সুযোগ পায়।
  • সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যেখানে প্রয়োজন সেখানে নতুন হ্যাচারি স্থাপন করে নার্সারি মালিকদের নিকট রেণু পোনা সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!