বিষয়: পুকুর কাকে বলে, কি কি? মাছ চাষে পুকুরের শ্রেণিবিভাগ।
হ্যাশট্যাগ:#মাছ চাষে পুকুরের শ্রেণিবিভাগ#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ#খামারিয়ান.কম
পুকুর কাকে বলে?
সাধারণভাবে ৪০০ বর্গমিটার তদূর্ধ আয়তনের চারদিকে পাড় দিয়ে ঘেরা জলাশয়কে পুকুর বলা হয়। বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৩ লক্ষ পুকর আছে।
স্থায়ী পুকুর কাকে বলে?
যেসব পুকুরে সারা বছর পানি থাকে সেগুলোকে স্থায়ী পুকুর বলা হয়। আর যেসব পুকুর গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে যায় বা ৫-৬ মাস পানি থাকে তাকে ‘মৌসুমী পুকুর’ বলে। স্থায়ী পুকুর বড় ও গভীর হয়।
মৌসুমী পুকুর কাকে বলে?
যেসব পুকুর গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে যায় বা ৫-৬ মাস পানি থাকে তাকে মৌসুমী পুকুর বলে। মৌসুমী পুকুর ছোট ও কম গভীর হয়।
মাছের বয়স অনুযায়ী পুকুরে শ্রেণিবিভাগ:
বিভিন্ন বয়সের মাছের খাদ্য ও পরিবেশ ভিন্নরূপে হয়। এজন্য রেণু অবস্থায় থেকে মাছ বড় হওয়া পর্যন্ত ৩ পর্যায়ে পরিচর্যা করতে হয়। এর ভিত্তিতে পুকুরকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয় যথা:
১. আঁতুড় পুকুর, ২. চারা পুকুর, ৩. মজুদ পুকুর বা লালন পুকুর।
১. আঁতুড় পুকুর
- এ পুকুরের ক্ষেত্রফল ৪০০ থেকে ১,০০০ বর্গমিটার এবং গভীরতা ১ থেকে ১.৫ মিটার হয়ে থাকে ৷
- আঁতুড় পুকুরে ৩-৪ দিন বয়সের রেণু পো ছেড়ে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত প্রতিপালন করে ‘ধানী পোনা’ তৈরি করা হয়। ধানী পোনার আকার ধানের মতো।
- মাছের ডিম থেকে ফুটে বের হওয়ার পর ২-৩ দিন বয়সের পোনাকে ডিম পোনা বা ‘রেণু পোনা’ বলে।
২. চারা পুকুর
- মৌসুমী এবং স্থায়ী উভয় ধরনের পুকুরই চারা পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এ পুকুরের গভীরতা ১.৫ মিটার হতে ২ মিটার হওয়া ভালো। ধানীপোনা এ পুকুরে এক-দেড় মাস প্রতিপালন করে চারা পোনা উৎপন্ন করা হয়। চারা পোনার আকার ৫-১০ সেন্টিমিটার।
৩. মজুদ পুকুর
- একটি পুকুরে পানির গভীরতা শুকনো মৌসুমে ২ মিটার এবং বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩ মিটার হলে সেটিকে ‘আদর্শ মজুদ পুকুর, বলা হয়।
- মজুদ পুকুরের ক্ষেত্রফল ১,০০০ বর্গমিটার থেকে ৪,০০০ বর্গমিটার ব্যবস্থাপনার জন্য ভালো হয়। মজুদ পুকুরে চারা পোনা ছেড়ে বাজারে বিক্রির বা খাবার উপযোগী আকারের মাছ উৎপাদন করা হয়। স্থায়ী পুকুর মজুদ পুকুর হিসেবে উত্তম।
- বিভিন্ন ধরনের পুকুরের জন্য চাষ উপযোগী মাছ নির্বাচন: কার্প জাতীয় মাছ যেমন- রুই, কাতলা, মৃগেল, সিল্ভারকার্প, কার্পিও মাছ বিক্রি উপযোগী হতে ৬-১২ মাস সময় লাগে। তাই এ জাতীয় মাছ চাষের জন্য স্থায়ী পুকুর নির্বাচন করা দরকার।
- মৌসুমী পুকুরে রাজপুটি বা নাইলোটিকা মাছের চাষ করা উচিত। কারণ, এ মাছগুলো ৩ থেকে ৪ মাসেই খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফলে পানি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই মাছ বিক্রি করা যায়। মৌসুমী পুকুরে চারা পোনাও প্রতিপালন করা যায়।
আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট্য
একটি পুকুরের এ বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে তাকে আদর্শ মাছ চাষের উপযোগী পুকুর বলা যেতে পারে:
- পুকুরের মাটি দোঁ-আশ বা এটেল দোঁ-আশ হতে হবে।
- পুকুরে পানির গভীরতা ২ থেকে ৩ মিটার থাকতে হবে।
- পুকুরে সূর্যের আলো পড়তে হবে।
- পুকুরের পাড় বন্যায় প্লাবিত হবে না।
- পুকুরের পাড়ে বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্বপাড়ে বড় গাছ থাকবে না।
- পুকুরে অতিরিক্ত আগাছা থাকবে না।
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতকরণ
মাছ চাষের আগে পুকুর তৈরি করে নিতে হয়। পুকুর তৈরির জন্য এ কাজগুলো করা দরকার:
- পুকুরের পাড় ভাঙ্গা থাকলে তা মেরামত করে নিতে হবে।
- আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ৩. পুকুর হতে রাক্ষুসে মাছ, যেমন— শোল, বোয়াল, গজার, টাকি এসব সরিয়ে ফেলতে হবে।
- প্রতি শতকে ১ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রতি শতক পুকুরে ৪-৫ কেজি গোবর বা ২ কেজি শুকনো গুঁড়া কমপোস্ট প্রয়োগ করতে হবে।
- জৈব সার দেওয়ার কয়েকদিন পর পানির রং হালকা সবুজ হলে পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে।