⭐⭐⭐⭐⭐ বিষয়: মাছ চাষ ও মাছ ধরার (19 প্রকার) জাল এর নাম ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্য, জাল সংরক্ষণ এর নিয়ম, জাল নষ্ট হওয়ার কারণ ও জালের যত্ন, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ, চাষ মাছ চাষ করার সহজ উপায়, মাছ চাষের পদ্ধতি, মাছ চাষের নিয়ম।
হ্যাশট্যাগ:#মাছ চাষ ও মাছ ধরারজাল এর নাম ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্য#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ#চাষ মাছ চাষ করার সহজ উপায়#মাছ চাষের পদ্ধতি#মাছ চাষের নিয়ম।
মাছ ধরার সরঞ্জামের মধ্যে জালই প্রধান। এর প্রয়োগ বা ব্যবহার সর্বাধিক। সর্বমোট এদেশে প্রায় ১১৬ প্রকার জাল আছে। এগুলোর কোনোটি বড়, আবার কোনোটি ছোট। ব্যবহার বা প্রয়োগ বিধিও আলাদা।
ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন জলাশয়ে মৎস্য শিকারের জন্য বিবিধ প্রকার জাল ব্যবহৃত হয়। জালগুলোর পাওয়া বা ঘর অভিষ্ট লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে স্থির করা হয়।
জালের দৈর্ঘ্য তার পরিমাপ অনুযায়ী প্রতি জালে শিকারির সংখ্যা কম বা বেশি হয়ে থাকে।
অধিকাংশ জালই নৌকার সাহায্যে ব্যবহৃত হয়। জালের আকার ও প্রকারের বিভিন্নতা হেতু বিভিন্ন জাল তৈরি করতে বিভিন্ন পরিমাণ সুতার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন প্রকার জালের স্বাভাবিক আকৃতির বিষয়ে এখানে তুলে ধরা হলো:
(01) কেছকি বেড় জাল
- লম্বা ২০০ হাত x প্রস্থ ১৬ হাত, “পাওয়া” বা ঘর ১/১৬ ইঞ্চি।
- এ জাল দিয়ে কেছকী মাছ ধরা হয় এবং এ আকারের একটি জাল ব্যবহারের ১০-১২ জন লোকের প্রয়োজন।
- জালটির মাঝখানে মশারীর কাপড় থাকে এবং দুই প্রান্তে সুতার জাল থাকে।
(02) শাইংলা জাল
- লম্বা ২০ হাত × প্রস্থ ১৬ হাত, পাওয়া বা ঘর ১ × ১ ইঞ্চি।
- এটি একটি ডিম্বাকৃতি জাল। একজন শিকারী এ জাল ব্যবহার করতে পারে।
- ইলিশ শিকারের জন্য এ জাল ব্যবহৃত হয়।
(03) বেড় জাল
- লম্বা ২,০০০ হাত x প্রস্থ ৩৭ হাত, পাওয়া বা ঘর ১ × ১ ইঞ্চি।
- এ আকারের একটি জাল ব্যবহারে ৫০ থেকে ৬০ জন লোকের প্রয়োজন।
- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো জালের সমন্বয়ে এরূপ একটি বড় জাল তৈরি করা হয়।
- এ জাতীয় বড় আকারের বেড় জালকে ‘গগণ’ বা ‘জগৎ বের’ বা ‘মহাজাল’ বলে।
- এ জালে রুই, কাতলা ও মৃগেল প্রভৃতি সর্বপ্রকার মাছই ধরা যায়।
(04) ছান্দি বেড় জাল
- লম্বা ২০০ হাত × প্রস্থ ১০ হা, পাওয়া বা ঘর ১. ৫ ×১. ৫ ইঞ্চি।
- এ জাল দিয়ে ইলিশ মাছ ধরা হয়। কোনো কোনো জায়গায় রুই, কাতলা মাছ শিকারের জন্যেও এ জালের ব্যবহার আছে।
- এরূপ একটি জাল ব্যবহারে ৮-১০ জন লোকের প্রয়োজন হয়।
(05) কচাল জাল
- লম্বা ২০০ হাত × প্রস্থ ১২ হাত, পাওয়া বা ঘর ১ × ১ ইঞ্চি।
- এটিও এক ধরনের বেড় জাল।
- প্রায় সব রকম মাছই এ জালে ধরা পড়ে।
- এরূপ একটি জাল ব্যবহারে ৮-১০ জন লোকের প্রয়োজন।
(06) খেপলা জাল
- লম্বা সাড়ে আট হাত × প্রস্থ ঘের সহ ১০.৫ হা, পাওয়া বা ঘর .৭৫×.৫ ইঞ্চি।
- এ আকারের একটি জাল একজন জেলে ব্যবহার করে এবং এ জাল দিয়ে সাধারণত ছোট মাছ ধরা হয়।
(07) উথার জাল
- লম্বা ৪০ হাত × প্রস্থ ৩০ হাত, পাওয়া বা ঘর ১ ইঞ্চি × ১ ইঞ্চি।
- এটিকে একটি বড় খেপলা জাল বলা চলে। এরূপ একটি জাল ব্যবহারে ৮-১০ জন লোকের প্রয়োজন হয়।
(08) দল বেড় জাল বা চাটা জাল
- লম্বা ২০০ হাত × প্রস্থ ২৪ হা, পাওয়া বা ঘর .৫x.৫ ইঞ্চি।
- প্রায় সব রকম মাছই এ জালে ধরা যায়।
- এ আকারের একটি জাল ব্যবহারে ৬-৮ জন লোকের প্রয়োজন হয়।
(09) ছাপা জাল
- লম্বা ১৫০ হাত x প্রস্থ ২৫ হাত, লম্বা ১৫০ হাত × প্রস্থ ১৬ হা, পাওয়া বা ঘর .৫× .৫ ইঞ্চি।
- এ জাল ব্যবহারে ৬ জন লোকের প্রয়োজন এবং সব প্রকার মাছই ধরা পড়ে।
(10) মই জাল
- লম্বা ১৫ হাত × প্রস্থ ৬ হাত, পাওয়া বা ঘর.৫,×.৫ ইঞ্চি। এ জাল ব্যবহারে জন লোকের প্রয়োজন।
- চিংড়ি, বেলে ও আইড় মাছ ধরার জন্যে এ জাল ব্যবহৃত হয়।
(11) নৌকা ভেশাল জাল
- লম্বা ৬ হাত x প্রস্থ ঘোপসহ ৮০ হাত, পাওয়া বা ঘর .৫ x.৫ ইঞ্চি।
- এ জালে ছোট, বড় সব রকম মাছই ধরা হয়।
- এ আকারের একটি জাল ব্যবহারে ৬ জন লোকের প্রয়োজন।
(12) খরা ভেশাল জাল
- লম্বা ২৮ হাত × প্রস্থ (ঘোপ বা টানাসহ) ৬০ হাত, পাওয়া বা ঘর .৫ ×.৫ ইঞ্চি।
- এ জাল দিয়ে ছোট, বড় ও মাঝারি প্রায় সব রকমের মাছই শিকার করা হয়।
- এটি আকারে ত্রিকোণাকৃতি।
- দু জন শিকারী এ জাল দিয়ে মাছ শিকার করে।
(13) পাইন জাল
- লম্বা ২৫০ হাত × প্রস্থ ১৬ হাত, পাওয়া বা ঘর ৩×৩ ইঞ্চি।
- বড় আকারের রুই, কাতলা এবং মৃগেল মাছ শিকারের জন্য কই জালের মতো একে পানির মধ্যে পুঁতে রাখা হয়।
- এরূপ একটি জাল ব্যবহারের ৪ জন লোকের প্রয়োজন।
(14) চুপি জাল
- লম্বা ৩০ হাত × প্রস্থ (ঘোপ বা টানাসহ) ৮০ হাত, পাওয়া বা ঘর দেড়× দেড় ইঞ্চি।
- এ জাল ব্যবহারে দুজন লোকের প্রয়োজন।
- সর্বপ্রকার মাছই ধরা পড়ে।
(15) বিড়া জাল
- লম্বা ৪০ হাত × প্রস্থ (ঘোপসহ) ৭০ হা,, পাওয়া বা ঘর দেড় × দেড় ইঞ্চি। এটি একটি বড় উত্থার জাল।
- এ জাল ব্যবহারে ৮-১০ জন লোকের প্রয়োজন।
(16) হুঙ্গা জাল
- লম্বা ৩৫ হাত × প্রস্থ ১০ হাত, পাওয়া বা ঘর ২×৪ ইঞ্চি।
- এ জাল দ্বারা বড় বড় রুই, কাতলা মাছ শিকার করা যায়।
- জালটির মুখ গোলাকৃতি, মাঝের বেড় একটু মোটা এবং নিচের অংশ ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে।
- জালটির মুখে দুটি বাঁশের বেড় আছে এবং এ বেড়গুলো নাড়াচাড়া করা যায়।
- এর নিচের মুখে ভারী পাথর আটকিয়ে রাখা হয়। মাছ এ জাতীয় থলে জালে ঢুকার সংগে সংগে উপরের মুখের দড়ি টেনে মুখটি আটকিয়ে দেওয়া হয়।
- এ জাল ব্যবহারে ৪-৫ জন লোকের প্রয়োজন।
(17) দল জাল
- লম্বা ২,০০০ হাত × প্রস্থ ১৮ হাত, পাওয়া বা ঘর ১× ১ ইঞ্চি।
- এ আকারের একটি জাল ব্যবহারে ২০০ জন লোকের প্রয়োজন।
- চিতল, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউস, বোয়াল, পোটা ও গাগট প্রভৃতি নানা প্রকার মাছ এ জাল দ্বারা শিকার করা যায়।
- জাল ব্যবহারে ৪টি নৌকার প্রয়োজন।
(18) ফুট পাইন জাল
- লম্বা ২০০ হাত × প্রস্থ ১২ হাত, পাওয়া বা ঘর দেড় × দেড় ইঞ্চি।
- এ জাল ব্যবহারে ২ জন লোক ও ১টি নৌকার প্রয়োজন। পোটা, গইন্যা ও গোছা প্রভৃতি মাছ এ জালে শিকার করা যায়।
(19) ধন জাল
- লম্বা ৩০০ হাত × প্রস্থ ১৬ হাত, পাওয়া বা ঘর ৫×৫ ইঞ্চি।
- এ জালে বড় বড় রুই, কাতলা শিকার করা হয় এবং ২ জন লোক একটি নৌকার সাহায্যে এ জাল ব্যবহার করে।
জাল সংরক্ষণ
তুলার সূতা বা অন্য কোনো প্রকার কৃত্রিম সূতার দ্বারা জাল তৈরি হয়। মাছের জাল তৈরির জন্যে যে সব সূতা ব্যবহৃত হয় তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো:
- তুলা: তুলাবীজের আঁশ হতে সূতা তৈরি হয়। কাপড় ও অন্যান্য কাজ ছাড়াও এ সূতা দিয়ে জাল তৈরি হয়।
- শন পাট: এটা এক প্রকার পাট জাতীয় গাছ। এর শরীরের আবরণ থেকে সূতা বের করে জাল তৈরি করা যায়। এর ব্যবহার কম।
- ম্যানিলা শন: ম্যানিলায় উৎপাদিত এক প্রকার গাছের পত্রস্থিত আঁশ থেকে এ সূতার জন্ম। এর ব্যবহার বেশি নয়।
- লিনেন: রাসায়নিক উপায়ে প্রস্তত এক প্রকার সূতা। এর ব্যবহার এদেশে একেবারেই কম।
- নাইলন: এটি এক প্রকার কৃত্রিম সূতা। এর প্রচলন খুব বেশি। এ সূতা মজবুত এবং টেকসই। এর আয়ুষ্কাল অধিক। নাইলন সূতার একটি জাল ৫-৬ বছর ব্যবহার করা যায়।
জাল নষ্ট হওয়ার কারণ
জাল দুটি কারণে ক্রমে ক্রমে নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে একটি হলো ব্যবহার জনিত ক্ষয়, আর অন্যটি জীবাণু জনিত ক্ষয়। জাল ব্যবহারের পর এটিকে নিয়মিতভাবে শুকানো দরকার, আর তা না হলে জালের সুতা ধীরে ধীরে নরম হয়ে যায়।
জালের যত্ন
- প্রতিবার জাল পানিতে ভেজাবার পর একে অতি উত্তম রূপে ধৌত করে রাখতে হবে যেন এতে কোনো প্রকার ময়লা, মাটি, মাছের ক্লেদ ও রক্ত প্রভৃতি লেগে না থাকে।
- অল্প লবণ মিশ্রিত পানিতে জালকে ধৌত করতে পারলে জীবাণুর আক্রমণের আশঙ্কা বহুলাংশে কমে যায়।
- রোদে জাল শুকানো উচিত নয়। কারণ, সূর্যরশ্মি ভেজা জালের ক্ষতি করতে পারে।
- সহজে আলো বাতাস ঢুকতে পারে এমন জায়গায় জালকে ছড়িয়ে রেখে জাল শুকানো উচিত ৷
- আলো ও বাতাসবিহীন ঘরের মেঝে জালকে স্তুপাকারে রাখা উচিত নয়। কারণ, এতে জাল ছাতা (Fungus) দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। জালের কোনো অংশ ছিঁড়ে গেলে এটাও সংগে সংগে মেরামত করে নেওয়া প্রয়োজন।
- জাল সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকার উপাদান ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাধারণত আমাদের দেশে গাবফল ও গোরান গাছের বাকলা হতে কষ নিঃসৃত করে জালে লাগানো হয়। প্রকৃতপক্ষে এ জাতীয় কষে টেনিক এসিড আছে এবং এটা জাল সংরক্ষণে সহায়তা করে। এ সংরক্ষণকারী কষ জালের গায়ে খুব বেশিদিন লেগে থাকতে পারে না বলে এ পদ্ধতি সুবিধাজনক নয়। বাংলাদেশে সুন্দরবন এলাকা ব্যতিরেকে আর কোথাও গোরান গাছ পাওয়া যায় না।
আলকাতরা ব্যবহার
আলকাতরা দিয়ে জাল সংরক্ষণের প্রথাও এদেশে প্রচলিত আছে। কিন্তু নিম্নলিখিত কারণে আলকাতরা ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় নয়।
- এতে জালের গিটগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
- জালের ওজন বৃদ্ধি পায়।
- গরম আলকাতরায় জালের সূতা নরম ও দুর্বল হয়ে যায়।
রাসায়নিক ওষুধ
সাধারণত জীবাণুর ধ্বংসাত্মক আক্রমণ থেকে জালকে রক্ষা করার জন্য তুতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর কার্যক্ষমতা বেশি দীর্ঘস্থায়ী নয়। রাসায়নিক দ্রব্যসমূহের মধ্যে কপার ওলিয়েট ও কপার নেপথানেট ব্যবহার সমধিক কার্যকরী।
মাছের আটা
- মাছের আটা দিয়েও জাল সংরক্ষণ করা যায়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাছ, মাছের চামড়া, হাড় ও আইশ প্রভৃতি একটি কড়ায়ে পানিতে কিছুক্ষণ গরম করার পর যে পদার্থের সৃষ্টি হয় সেটাই মাছের আটা।
- এ আটা তৈরি হওয়ার সংগে সংগে কড়াই হতে হাড়, আইশ ইত্যাদি সরিয়ে নিতে হবে এবং কড়াইটিতে জাল ডুবিয়ে দিতে হবে। তারপর জালটিকে ফরমালডিহাইড দ্রবণে রাখতে হবে। একটি ছাড়া বিশিষ্ট জায়গায় ছড়িয়ে রাখতে হবে।