Skip to content

 

মানপত্রের ও স্মারকলিপি নমুনা (৪টি) + মানপত্র ও স্মারকলিপি লেখার নিয়ম।

মানপত্রের ও স্মারকলিপি নমুনা (৪টি) + মানপত্র ও স্মারকলিপি লেখার নিয়ম। -khamarian

আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে বরণ বা বিদায় জানানোর জন্যে যে সম্মাননাপত্র রচনা করা হয়, তাকে মানপত্র বলে। মানপত্র সাধারণত সামাজিক, আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রচুর দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে পাঠ করে সংবধেয় ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়।

মানপত্রের ভাষা পরিশীলিত ও সমৃদ্ধ হতে হয়। এতে সংবধেয় ব্যক্তির কর্মকৃতি, ব্যক্তিত্ব, ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্য, পাণ্ডিত্য, শিক্ষা ও দক্ষতা ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। তাই বিভিন্ন উপশিরোনাম দিয়ে তাঁর বৈশিষ্ট্য, অবদান প্রভৃতিকে নানা বিশেষণে অভিষিক্ত করতে হয়। মানপত্র সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখে বা ছাপিয়ে, অলংকৃত এবং বাঁধাই করে দেওয়াই নিয়ম।

‘সংবর্ধনা’ শব্দের প্রকৃত অর্থ সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা, সসম্মানে অভ্যর্থনা। তাই সংবর্ধেয় ব্যক্তির সম্মান যাতে বৃদ্ধি পায়, তার জন্য সুশোভন শব্দ ব্যবহার করা উচিত। গুণী ব্যক্তির আগমন বা তাঁর মহৎ ভূমিকা, অবদানের স্বীকৃতিকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোই মূলত এ ধরনের মানপত্র রচনার লক্ষ্য।

মানপত্র রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম বা রীতি অনুসরণ করতে হয়। মানপত্রের বিভিন্ন অংশ এরকম: 

১. মূল শিরোনাম, ২. উপশিরোনাম, ৩. নাম-স্বাক্ষর ও তারিখ।

১. মূল শিরোনাম : যে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, যাকে, যে উপলক্ষে সংবর্ধনা দেয়, তার উল্লেখ করতে হয় এ অংশে। তারপর উপলক্ষ ও মানপত্রের প্রকৃতি অনুযায়ী ‘উষ্ণ অভিনন্দন’, ‘প্রাণঢালা শুভেচ্ছা’, ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’, ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য’ ইত্যাদি লিখতে হয়।

২. উপশিরোনাম : এটাই মানপত্রের মূল অংশ। এক একটি উপশিরোনাম দিয়ে এক-একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হয়। ভাব ও বক্তব্য অনুযায়ী অনুচ্ছেদগুলো পরস্পর সংগতিপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রত্যেক অনুচ্ছেদের শুরুতে সংবধেয় ব্যক্তির গুণপ্রকাশক সম্বোধন বা সম্ভাষণ থাকতে হয়। যেমন : সংবধেয় ব্যক্তি শিক্ষক হলে, সম্ভাষণ হবে ‘হে বরেণ্য শিক্ষক’, ‘হে শিক্ষাগুরু’, ‘হে আলোর পথের দিশারী’, ‘হে মহান সাধক’, ‘হে জ্ঞানতাপস’ ইত্যাদি। ছাত্রছাত্রীদের বরণ বা বিদায়ের ক্ষেত্রে হবে-‘হে নবীন বন্ধুরা’, ‘আলোর পথের যাত্রীরা’, ‘সূর্যশিখা ভাইবোনেরা’ ইত্যাদি।

৩. নাম-স্বাক্ষর ও তারিখ : যে সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, মূল পত্রাংশের শেষে তাদের সমষ্টিগত প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় দিতে হয়। তারপর নাম-স্বাক্ষরের আগে ‘বিনীত’, ‘গুণমুগ্ধ’, ‘বিনয়াবনত’, ‘শ্ৰদ্ধাবনত’ ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। নাম-স্বাক্ষর অংশ ডানদিকে থাকে। বামদিকে তারিখ দিতে হয়। তারিখের বেলায় কেউ কেউ বঙ্গাব্দ ও খ্রিষ্টাব্দ দুইটিই দিয়ে থাকেন।

১। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে বিদায় সংবর্ধনাপত্র।

ইস্পাহানী পাবলিক স্কুলের ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে
আন্তরিক সংবর্ধনা

হে বিদায়ী ভাই-বোনেরা,

যে পথ একদিন তোমাদের নিয়ে এসেছিল এই স্কুলের আঙিনায়, আজ সেই পথই আবার তোমাদের ডাক দিয়েছে—হাঁকিছে ভবিষ্যৎ, হও আগুয়ান।’ হৃদয়-বীণায় তাই আজ বাজছে বিদায়ের করুণ সুর। সেই সুর যেন বলছে—’ভুবনের ঘাটে ঘাটে, এক ঘাটে লও বোঝা, শূন্য করে দাও অন্য ঘাটে।’ শুভ হোক তোমাদের ভবিষ্যৎ। তোমরা আমাদের প্রীতি গ্রহণ কর।

হে অগ্রজ বন্ধুরা,

এই স্কুলে তোমাদের কেটেছে স্মৃতিময়, প্রীতিময় অনেক দিন। তোমাদের প্রাণোচ্ছল পদভারে এই স্কুলের আঙিনা ছিল মুখরিত। তোমাদের সাথে আমাদের স্নেহসিক্ত প্রীতিময় বন্ধন যেন অটুট থাকে আজীবন। তোমরা যেন ভুলে না যাও এই স্কুলের স্মৃতিময় দিনগুলি। প্রিয় শিক্ষকদের আন্তরিক সাহচর্য ও অমূল্য অবদানের কথা তোমাদের মনে থাকুক অমলিন। বিষণ্ন নয়নে আজ শুধু বলি-‘যেতে নাহি দিব হায়, তবু চলে যেতে হয়, তবু চলে যায়।

হে আলোর পথের যাত্রীরা,

নবজীবনের আহ্বানে, আলোকিত জীবনের সন্ধানে তোমরা এগিয়ে যাচ্ছ নবদিগন্তের দিকে। মনে রেখো, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের দেশ আজ স্বাধীন। জাতি আজ প্রত্যাশা করে দুঃখ, দারিদ্র্য, অন্ধকার ঘুচিয়ে তোমরা গড়ে তুলবে একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ। তোমরাই আনবে সোনালি ঊষার আলোকিত দিন ।

তোমাদের নতুন যাত্রাপথ নতুন নতুন সাফল্যে ভরে উঠুক।

তারিখ : ২৩/২/২০২০
চট্টগ্রাম।

তোমাদের প্রীতিস্নিগ্ধ
ছাত্রছাত্রীবৃন্দ
ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল, চট্টগ্রাম।

২. প্রধান শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে বিদায় অভিনন্দনপত্র।

রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের মাননীয় প্রধান শিক্ষক
শ্রদ্ধেয় জাকির হোসেন সাহেবের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে
শ্রদ্ধাঞ্জলি

হে মহান শিক্ষাব্রতী,

আমাদের সশ্রদ্ধ চিত্তের অভিনন্দন গ্রহণ করুন। আজ আমাদের হৃদয় ব্যথিত। এক আলোকময় দিনে অফুরন্ত কর্মোদ্দীপনা নিয়ে আপনি এই স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর সুদীর্ঘকাল আপনি কর্মনিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও প্রীতিস্নিগ্ধ ভালোবাসা দিয়ে আমাদের অন্তর জয় করেছিলেন। অজস্র ছাত্র পরশপাথরের মতো আপনার হাতের ছোঁয়ায় পেয়েছে আলোকিত জীবন। ছাত্রদের সঙ্গে আপনার প্রীতিময় বন্ধন ছিন্ন হতে চলেছে। আপনি অবসরগ্রহণ করছেন। আজ আপনার বিদায়ের কথা ভেবে আমরা বেদনা-ভারাক্রান্ত। আজ বিদায়বেলায় আপনাকে জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

হে কর্মবীর,

সুদীর্ঘ কর্মজীবনে আপনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের এক আদর্শ প্রতীক। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সমৃদ্ধিতে আপনি রেখেছেন অনন্য অবদান। স্কুলের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষাসফর, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আপনাকে পেয়েছি সুদক্ষ দিক-নির্দেশক ও অভিভাবক হিসেবে। একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং আদর্শ কর্মবীর হিসেবে আপনার স্মৃতি আমাদের হৃদয়ে চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে।

হে বিদায়ী শিক্ষাগুরু,

আজ আপনাকে বিদায় দিতে কী যেন হারানোর বেদনায় হৃদয় ভেঙে কান্না আসছে। অনেক সুখকর স্মৃতি উথলে উঠছে মনে। বিদায়মুহূর্তে আশা করব, আপনি আমাদের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন। সময়ের বাস্তবতায় আপনি এই স্কুল থেকে বিদায় নিলেও আমাদের অন্তরের মণিকোঠায় থাকবেন চিরদিন অম্লান।

প্রার্থনা করি আপনি দীর্ঘায়ু হোন। আপনার দিনগুলি সুস্থ, সুন্দরভাবে কাটুক, এ আমাদের আন্তরিক কামনা।

তারিখ : ৯.২, ২০২০
রাজশাহী।

আপনার স্নেহধন্য
ছাত্রবৃন্দ
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী।

৩. নতুন প্রধান শিক্ষকের আগমন উপলক্ষে সংবর্ধনা জানিয়ে মানপত্র।

সাটুরিয়া পাইলট গার্লস হাইস্কুলের নবাগত প্রধান শিক্ষক জনাব কামাল হোসেনের যোগদান উপলক্ষে
শ্রদ্ধা-অভিনন্দন

হে নবাগত শিক্ষাগুরু,

আপনার শুভাগমনে শতাব্দী প্রাচীন পাইলট গার্লস স্কুলটি আজ আনন্দে উদ্বেলিত। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাঙ্গনে আপনার মতো একজন গুণী পণ্ডিতের পদার্পণে আমরা ধন্য, গৌরবান্বিত। আপনি আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন গ্রহণ করুন।

হে মহান শিক্ষাবিদ,

আপনার আলোকশিখা সবার অন্তরে জ্বালাবে জ্ঞানের প্রদীপ। সেই আলোয় আলোকিত হব আমরা, হবে সমাজ ও দেশ। সাটুরিয়া পাইলট গার্লস হাইস্কুলের আজকের সুনামকে ধরে রাখতে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও শ্রীবৃদ্ধি করতে আপনার মতো সৎ, একনিষ্ঠ ও যোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বের একান্ত প্রয়োজন। আলোকিত সমাজ নির্মাণে আপনার অবদান যেন চিরস্মরণীয় থাকে, এটা আমাদের একান্ত কামনা। আপনার প্রেরণা ও কর্মচাঞ্চল্য নতুন প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরে দেবে আমাদের আঙিনা।

হে মহান,

আমরা আশাবাদী, আপনার যোগ্য নেতৃত্বে নতুন মাত্রা পাবে আমাদের পথ চলা। স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ হবে আরো উন্নত। আপনার স্নেহচ্ছায়া জ্ঞানের দীপ্তিতে উজ্জ্বল হব আমরা। অবক্ষয়-জীর্ণ সমাজ হয়ে উঠবে আলোকোজ্জ্বল।

বুকে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আমরা আজ আপনাকে স্বাগত জানাই। আপনার চলার পথ হোক কুসুমকোমল।

তারিখ : ৩০.৮.২০২০
মানিকগঞ্জ।

শ্রদ্ধাবনত
আলোকপ্রত্যাশী ছাত্রীবৃন্দ
সাটুরিয়া পাইলট গার্লস হাইস্কুল
সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ।

৪. খ্যাতিমান কবি বা সাহিত্যিকের আগমন উপলক্ষে অভিনন্দনপত্র।

রাজশাহী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নন্দিত কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আগমনে
হৃদয়োফ শ্ৰদ্ধাৰ্য্য

হে বরেণ্য অতিথি,

পুণ্ড্রবর্ধন, বরেন্দ্রভূমি নামে খ্যাত রাজশাহী আজ আপনার পদধূলিতে ধন্য। রবীন্দ্রস্মৃতিধন্য এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনার শুভাগমনে আমরা আনন্দিত, গৌরবান্বিত। আপনার সাহচর্য পেয়ে আমরা উৎসাহিত, উজ্জীবিত। আপনি আমাদের প্রাণঢালা উষ্ণ-হৃদয় শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রহণ করুন।

হে নন্দিত কথাশিল্পী,

বাংলাদেশের সমকালীন কথাসাহিত্যে আপনার অবদান অনন্য। সায়েন্স ফিকশন ও কিশোরজীবন রূপায়ণে আপনার শৈল্পিক দক্ষতা বিস্ময়কর ও চূড়াস্পর্শী। কথাশিল্পী হিসেবে আপনার উন্নত জীবনবোধ, শৈল্পিক চৈতন্য পাঠকদের মুগ্ধ করে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে আপনার রয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা। আজ আপনাকে আমাদের মাঝে পেয়ে আমরা মুগ্ধ, অভিভূত।

হে বিজ্ঞানসাধক শিক্ষাবিদ,

এই স্কুলে আপনার আগমন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সৃজনশীল সাহিত্যসাধনার পাশাপাশি কম্পিউটার, গণিত ও বিজ্ঞানশিক্ষায় আপনার অবদান অসামান্য। নতুন প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনার প্রচেষ্টার কথা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আপনার লেখা আমৃত্যু সচল থাকুক। আপনি দীর্ঘজীবী হোন। বাংলাদেশের সাহিত্যের আকাশে আপনার সাহিত্যকর্ম চির উজ্জ্বল দীপ্তি পাক, এই আমাদের একান্ত কামনা।

তারিখ : ১২ই ডিসেম্বর ২০২০
রাজশাহী

ইতি
আপনার গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ
রাজশাহী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
রাজশাহী।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!