Skip to content

 

বিয়ে/বিবাহের সকল মাসআলা মাসায়েল

বিয়ে_বিবাহের সকল মাসআলা মাসায়েল

বিষয়: বিয়ে/বিবাহের সকল মাসআলা মাসায়েল।
হ্যাশট্যাগ: বিয়ে/বিবাহের সকল মাসআলা মাসায়েল।

যাদের সাথে বিবাহ হারামঃ

১. নিজের সন্তানের সাথে। যেমন ছেলে, পোতা, পরপোতা, নাতি, নাতির ছেলে ইত্যাদি যতই নীচের দিকে যাক না কেন।

২. বাপ, দাদা, পরদাদা, নানা, পরনানা, ইত্যাদি যতই উর্ধ্বে যাক না কেন।

৩. ভাই। (আপন বা বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয়)। মাতা ও পিতা উভয়ে ভিন্ন হলে সেরূপ ভাইয়ের সাথে বিবাহ জায়েয।

8. ভাতিজা।

৫. ভাগিনা।

৬. মামা, অর্থাৎ, মায়ের আপন বা বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই।

*৭. চাচা, অর্থাৎ, পিতার উপরোক্ত তিন প্রকার ভাই।

৮. জামাই, অর্থাৎ, মেয়ের সাথে যার বিবাহের আক্দ হয়েছে। (চাই সহবাস তার সাথে হোক বা না হোক)

৯. মায়ের স্বামী, অর্থাৎ, পিতার মৃত্যুর পর মা যদি দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করে এবং তার সাথে সহবাস হয়।

১০. সতীনের পুত্র।

১১.আপন শ্বশুর, তার পিতা, তার দাদা, তার পরদাদা ইত্যাদি।

১২.ভগ্নির স্বামীর সাথে, যে পর্যন্ত ভগ্নি তার বিবাহে থাকে।

১৩.ফুফা এবং খালু, যে পর্যন্ত ফুফু ফুফার এবং খালা খালুর বিবাহে থাকে।

১৪.নসবের দিক দিয়ে অর্থাৎ, জন্ম ও জাতিগত দিক দিয়ে যে সব আত্মীয় ও আপনজনের সাথে বিবাহ হারাম (যেমন বাপ, দাদা, ছেলে, চাচা, মামা ইত্যাদি, দুধের দিক দিয়েও সেসব আৱীয়ের সাথে বিবাহ হারাম। যেমন দুধবাপ, দুধ ভাই, দুধ পোতা ইত্যাদি।

১৫. অন্য কোন ধর্মাবলম্বী পুরুষের সাথে।

১৬. কারও স্ত্রী থাকা অবস্থায় বা তালাকের পর ইদ্দতের সময় অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ হারাম।

১৭. কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে যেনা করলে ঐ নারীর মা ও মেয়ে (বা মেয়ের মেয়ে অর্থাৎ, নিম্নদিকের যে কোন মেয়ে)-এর সাথে ঐ পুরুষের বিবাহ দুরস্ত নয় ৷

১৮.কোন নারী কামভাবের সাথে বদ নিয়তে অপর কোন পুরুষের শরীর স্পর্শ করলেও উপরোক্ত হুকুম। তদ্রূপ কোন পুরুষ কামভাব সহ বদ নিয়তে কোন নারীকে স্পর্শ করলেও ঐ পুরুষের সন্তানগণ ঐ নারীর জন্য হারাম হয়ে যায়।

১৯.ভুলবশতঃ কামভাবের সাথে কন্যা বা শাশুড়ীর গায়ে হাত দিলে স্ত্রী (অর্থাৎ, ঐ কন্যার মা) বা ঐ শাশুড়ীর মেয়ে চিরতরে হারাম হয়ে যায়। তাকে তালাক দিয়েই দিতে হবে।

২০. কোন ছেলে কুমতলবে বিমাতার শরীরে হাত লাগালে বা বিমাতা কুমতলবে বিপুত্রের শরীরে হাত লাগালে ঐ নারী তার স্বামীর জন্য একেবারে হারাম হয়ে যায়।

(বেহেশতী জেওর থেকে গৃহীত।)

যাদের সাথে বিবাহ জায়েয

যাদের সাথে বিবাহ হারাম তারা ব্যতীত অন্য সব পুরুষের সাথে বিবাহ জায়েয, অতএব যে সব পুরুষের সাথে বিবাহ জায়েয তাদের তালিকা বলে শেষ করার নয়। কিন্তু যাদের সাথে বিবাহ জায়েয তা সত্ত্বেও সমাজে অনেকে সেটাকে জায়েয মনে করে না বা খারাব মনে করে, এরূপ কয়েকজনের কথা নিম্নে উল্লেখ করা হল।

১. এরূপ ভাই যার মা ও বাপ উভয়ে ভিন্ন।

২. মার চাচাত, মামাত, ফুফাত, খালাত ভাইয়ের সাথে বিবাহ জায়েয।

৩. বাপের চাচাত, মামাত ভাইয়ের সাথে বিবাহ জায়েয।

৪. চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, খালু শ্বশুরের সাথে বিবাহ জায়েয।

৫. ননদের স্বামী, ভগ্নিপতি (যখন ভগ্নি তার ববিাহে না থাকে) বিহাই অর্থাৎ, ভাইয়ের শ্যালক, ছেলের শ্বশুর, মেয়ের শ্বশুর প্রভৃতির সাথে।

৬. ফুফার সাথে যখন ফুফু তার বিবাহে না থাকে ও খালুর সাথে যখন খালা তার বিবাহে না থাকে।

৭. পালকপুত্র, ধর্মছেলে, ধর্মবাপ, ধর্ম ভাইয়ের সাথে বিবাহ জায়েয।

পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের নিয়ম

* সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করতে হবে।

* পাত্র/পাত্রীর জন্য বংশ, মুসলমান হওয়া ধর্মপরায়ণতা, সম্পদশালীতা ও পেশায় সমমানের পাত্র/পাত্রী নির্বাচনের বিষয়টি শরী’আতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্পদশালীতায় সমপর্যায়ের হওয়ার দ্বারা বুঝানো হয়েছে ধনবতী মহিলার জন্য একেবারে নিঃস্ব কাঙ্গাল পুরুষ সমমানের নয়; তবে মহরের নগদ অংশ প্রদানে এবং ভরণ-পোষণ প্রদানে সক্ষম হলে তাকে সমমানের ধরা হবে। উভয় পক্ষের সম্পদ একই পরিমাণে বা কাছাকাছি হতে হবে তা বোঝানো হয়নি।

* পাত্র/পাত্রীর ধর্মপরায়ণতার দিকটাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে।

See also  হজ্জ এর A টু Z সকল নিয়ম, হজ্জ কত প্রকার? কোন হজ্জে কি কি করতে হয়? কি কি করা যায় না? হজ্জের সকল নিয়মনীতি ও মাসায়েল

* পাত্র/পাত্রীর বয়সের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা সংগত, পাত্রীর চেয়ে পাত্রের বয়স কিছু বেশী হওয়া উত্তম; তবে খুব বেশী বেশ কম হওয়া সংগত নয়।

বিবাহের পয়গাম/প্রস্তাব দেয়ার নিয়ম

* বিবাহের পয়গাম বা প্রস্তাব দেয়ার পূর্বে নিম্নোক্ত বাক্যটি বলে নিবে-

أشهد أن لا إله إلا الله وحده لاشريك له وأشهد أن محمدا عبده

অতঃপর বলবে আমি অমুকের ব্যাপারে এই আগ্রহ নিয়ে এসেছি।

* অপর কেউ প্রস্তাব দিয়ে থাকলে এবং উভয় পক্ষের সে প্রস্তাবে রেজামন্দীভাব দেখা গেলে সেটা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্য প্রস্তাব দেয়া নিষেধ।

পাত্রী দেখা প্রসঙ্গ

* বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখে নেয়া সুন্নাত। নিজে না দেখলে বা সম্ভব না হলে কোন মাহিলাকে পাঠিয়েও দেখার ব্যবস্থা করা যায়।

* পাত্রীর চেহারা এবং হাত দেখার অনুমতি রয়েছে।

* যে পুরুষ যে নারীকে বিবাহ করতে চায় একমাত্র সে পুরুষ ব্যতীত অন্য কোন গায়র মাহরামের পক্ষে উক্ত নারীকে দেখা বৈধ নয়।

মহর সম্পর্কিত মাসায়েল

মহর পরিশোধ করা ওয়াজিব। তাই নাম শোহরতের জন্য সাধ্যের অতিরিক্ত মহর ধায্য করা অপছন্দনীয়।

* রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা ফাতেমার জন্য যে মহর ধার্য করেছিলেন, তাকে ‘মহরে ফাতিমী’ বলা হয়। বর্তমানের হিসাবে তার পরিমাণ কি এ ব্যাপারে তিনটি উক্তি পাওয়া যায়-

(১) ১৩১৯ তোলা রূপার সমপরিমাণ।

(২) ১৪৫% তোলা পরিমাণ রক্তি রূপার সমপরিমাণ।

(৩) ১৫০ তোলা রূপার সমপরিমাণ। সতর্কতা স্বরূপ ১৫০ তোলার মতটি গ্রহণ করা যায়। বর্তমানে প্রচলিত গ্রাম-এর ওজন হিসেবে ১৫০ তোলা = ১৭৪৯.৬০০ গ্রাম। খুচরা বাকীটুকু পূর্ণ করে দিয়ে ১৭৫০ গ্রাম ধরা চলে। (فتاوی رحیمیہ جہ/۲)

* কমের পক্ষে মহরের পরিমাণ দশ দেরহাম (অর্থাৎ, প্রায় পৌণে তিন তোলা পরিমাণ রূপার সমপরিমাণ) বেশীর কোন সীমা নেই। তবে খুব বেশী মহর ধার্য করা ভাল নয়।

* বিবাহের সময় মহর ধার্য হলে এবং বাসর ঘর অতিবাহিত হলে ধার্যকৃত পূর্ণ মহর দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়। আর বাসর ঘর হওয়ার পূর্বে তালাক হলে ধার্যকৃত মহরের অর্ধেক দেয়া ওয়াজিব হয়।

* বিবাহের সময় মহরের উল্লেখ না হলে ‘মহরে মেছেল’ বা খান্দানী মহর ওয়াজিব হয় আর এরূপ ছুরতে বাসর ঘর হওয়ার পূর্বেই তালাক হয়ে গেলে `সে মেয়েলোকটি মহর পাবে না- শুধু একজোড়া কাপড় পাবে। একজোড়া কাপড়ের অর্থ লম্বা হাতা ওয়ালা একটা জামা, একটা উড়না বা ছোট চাদর বা একটা পায়জামা। অথবা একটা শাড়ী ও একটা বড় চাদর যার দ্বারা আপাদ মস্তক ঢাকা যায়।

* ‘মহরে মেছেল’ বা খান্দানী মহর বিবেচনার ক্ষেত্রে বাপ দাদার বংশের মেয়েদের যেমন বোন, ফুফু, ভাতিজী, চাচাত বোন প্রমুখের মহর দেখতে হবে এবং এই খান্দানী মহর নিরূপণের ক্ষেত্রে যুগের পরিবর্তনে, স্থানের পরিবর্তনে, রূপ, গুণ, বয়স, পাত্র, দ্বিতীয় এবং প্রথম বিবাহের তারতম্যে মহরের যে তারতম্য হয়ে থাকে তাও বিবেচনায় আনতে হবে।

* স্বামী যদি মহরের নিয়তে (খোরাক, পোশাক ও বাসস্থান ব্যতিরেকে) কিছু টাকা বা অন্য কোন মাল জিনিস দেয়, তাহলে তা মহর থেকেই কাটা যাবে।

* স্বামী যদি স্ত্রীকে ধমক দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে বা লজ্জায় ফেলে বা অন্য কৌশলে ও অসুদপায়ে স্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তার দ্বারা মহর মাফ করিয়ে নেয় তবে তাতে মহর মাফ হয়ে যায় না।

বিবাহের ওলীর বর্ণনা

* ছেলে/মেয়েকে যে বিবাহ দেয়ার ক্ষমতা রাখে তাকে ‘ওলী’ বলে ৷ সওলীর জন্য আকেল বালেগ এবং মুসলমান হওয়া শর্ত।

* ছেলে/মেয়েদের সর্ব প্রথম ওলী তাদের পিতা, না থাকলে দাদা, তারপর পরদাদা। তাদের কেউ না থাকলে আপন ভাই, তারপর বৈমাত্রেয় ভাই, তারপর আপন ভাইয়ের ঘরের ভাতিজা, তারপর বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ঘরের ভাতিজা। ভাতিজারা কেউ না থাকলে ভাতিজার ছেলে, তারপর তাদের ছেলে (উপরোক্ত তারতীব অনুযায়ী)। তারপর আপন চাচা, তারপর সতাল চাচা, তারপর চাচাত ভাই, তারপর চাচাত ভাইয়ের ছেলে, তারপর চাচাত ভাইয়ের পোতা (উপরোক্ত তারতীব অনুযায়ী)। তারা কেউ না থাকলে পিতার চাচা, সে না থাকলে তার আওলাদ। তারা না থাকলে দাদার চাচা, তারপর তার ছেলে, তারপর তার পোতা ও পরপোতাগণ তারতীব অনুযায়ী ওলী হবে। এসব পুরুষ ওলীগণ না থাকলে মা ওলী হবে। তারপর দাদী, তারপর নানী, তারপর নানা, তারপর আপন বোন, তারপর বৈমাত্রেয় বোন, তারপর বৈপিত্রেয় ভাই-বোন, তারপর ফুফু, তারপর মামা, তারপর চাচাত বোন।

* এক শ্রেণীর কয়েকজন ওলী থাকলে বড়জন অন্যদের সাথে পরামর্শ ক্রমে কাজ করবে। বড়জনের অনুমতি নিয়ে অন্যরাও কাজ করতে পারে।

See also  কয়েকটি আধুনিক পেশা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়বিক্রয় সম্পর্কে শরীয়তের বিধান ও মাসআলা মাসায়েল

* মেয়ে বালেগা হলে তার বিনা অনুমতিতে কোন ওলী বা অন্য কেউ তাকে বিবাহ দিতে পারে না। দিলে মেয়ের অনুমতির উপর সে বিবাহ মওকুফ থাকবে। অনুমতি না দিলে সে বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে।

* মেয়ে বালেগা হলে ওলীর বিনা অনুমতিতে সে সমান ঘরে বিবাহ বসতে পারে, কিন্তু সমান ঘরে বিবাহ না বসে নীচ ঘরে বিবাহ বসলে এবং ওলী তাতে মত না দিলে সে বিবাহ দুরস্ত হবে না।

এযেন নেয়ার নিয়ম ও মাসায়েল

* মেয়ে যদি ছেলেকে পূর্বে থেকে না চিনে তাহলে এযেন (অনুমতি/সম্মতি) নেয়ার সময় মেয়ের সামনে ছেলের নাম-ধাম, পরিচয় ও মহরের কথা তুলে ধরে বলতে হবে আমি তোমাকে বিবাহ দিচ্ছি বা বিবাহ দিলাম বা বিবাহ দিয়েছি। তুমি রাজি আছ কি-না?

* সাবালেগা অবিবাহিতা মেয়ের নিকট এযেন চাওয়ার পর সে (অসম্মতি সূচক কোন ভাব প্রকাশ না করে সম্মতি সূচক ভাব প্রকাশ করে অর্থাৎ, গম্ভীর ভাব ধারণ করে) চুপ থাকলে বা মুচকি হেসে দিলে বা (মা বাপের বাড়ী ছেড়ে যাওয়ার মন বেদনায়) চোখের পানি ছেড়ে দিলে তার এযেন আছে ধরা হবে। জবরদস্তী তার মুখ থেকে ‘রাজি আছি’ কথা বের করার চেষ্টা নিষ্প্রয়োজন ও অন্যায়।

* মেয়ে পূর্বে থেকে ছেলেকে না চিনলে এবং তার সামনে ছেলের নাম/ধাম, পরিচয় সুস্পষ্টভাবে তুলে না ধরলে তার চুপ থাকাকে এযেন বা সম্মতি ধরা যাবে না।

* শরী’আত অনুসারে যে ওলীর হক অগ্রগণ্য, তিনি বা তার প্রেরিত লোক ব্যতীত অন্য কেউ এযেন আনতে গেলেও সে ক্ষেত্রে মেয়ের চুপ থাকাটা এযেন বলে গণ্য হবে না। বরং সে ক্ষেত্রে স্পষ্ট অনুমতির শব্দ উল্লেখ করলেই এযেন ধরা যাবে।

* যদি মেয়ে বিধবা কিংবা তালাক প্রাপ্তা হয় তাহলে তার চুপ থাকাটা এযেন বলে গণ্য হবে না বরং মুখ দিয়ে স্পষ্ট কথা (যেমন ‘রাজি আছি’) বলতে হবে।

* না বালেগা ছেলে/মেয়ের বিবাহ যদি বাপ দাদা করায় তাহলে সে বিবাহ দুরস্ত আছে এবং বালেগা হওয়ার পর তাদের সে বিবাহ ভঙ্গ করার কোন ক্ষমতা থাকবে না। বাপ, দাদা ব্যতীত অন্য কেউ করালে যদি সমান ঘরে করায় এবং মহরও ঠিকমত হয় তাহলে বর্তমানে তাদের বিবাহ দুরস্ত হয়ে যাবে, তবে বালেগ হওয়ার সময় মুসলমান হাকিমের আশ্রয় গ্রহণ করে তারা সে বিবাহ ভেঙ্গে দিতে পারবে। আর বাপ, দাদা ব্যতীত অন্যরা নীচ ঘরে বা অনেক কম মহরে বিবাহ দিলে সে বিবাহ দুরস্ত হবে না। বিবাহের দিন, সময় ও স্থান সম্পর্কে কথা

* বিবাহ শাওয়াল মাসে এবং জুমুআর দিনে এবং মসজিদে সম্পন্ন করা উত্তম। এছাড়াও যে কোন মাসে, যে কোন দিনে, যে কোন সময়ে বিবাহ হওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। অমুক অমুক দিন বিবাহ করা ঠিক নয়- এ জাতীয় কথা কুসংস্কার এবং এগুলো হিন্দুয়ানী ধ্যান ধারণা থেকে বিস্তার লাভ করেছে।

আক্দ সম্পন্ন করা বা বিবাহ পড়ানোর নিয়ম

* এ‘লান বা ঘটা করে (অর্থাৎ, বিবাহের খবর প্রচার করে) বিবাহের আক্‌দ সম্পন্ন করা সুন্নাত। বিনা ওজরে এ‘লান ছাড়া গোপনে বিবাহ পড়ানো সুন্নাতের খেলাফ।

* আক্দ করতে চাইলে পূর্বে মহর ধার্য না হয়ে থাকলে প্রথমে মহর ধার্য করবে। (সামর্থ অনুযায়ী) কম মহর ধার্য করার মধ্যেই বরকত নিহিত।

* উকীল পাত্রী থেকে অনুমতি/সম্মতি নিয়ে আসবে। পাত্রী নিজেও মজলিসে এসে সরাসরি প্রস্তাব/কবূল করতে পারে- সে ক্ষেত্রে উকীলের প্রয়োজন হয় না। উকীলের অনুমতি/সম্মতি আনার সময় সাক্ষীদের উপস্থিত থাকা জরুরী নয়। ইজাব কবূলের সময় সাক্ষীদের উপস্থিত থাকা জরুরী 1

* গায়রে মাহরামকে উকীল বানানো ঠিক নয়।

* অতঃপর বিবাহের নিম্নোক্ত খুতবা পাঠ করবে। এই খুতবা পাঠ করা মোস্তাহাব। এই খুতবা ইজাব কবূলের পূর্বে হওয়া সুন্নাত। ( فتاوی محمود ی جه ر ۸ وفتاوی رحیمیہ جہ/۲)

* এ খুতবা মৌলিকভাবে দাঁড়িয়ে পড়াই নিয়ম। বসেও পড়া জায়েয।

খুতবাটি এই-

الحمد لله نستعينه ونستغفره ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا، من يهد الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا اله الا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، أرسله بالحق بشيرا ونذيرا مبين يدي الساعة – من يطع الله ورسوله فقد رشد ـ ومن – يعصهما فإنه لا يضر إلا نفسه ولايضر الله شيئا ـ يأيها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس واحدة وخلق منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونساء، واتقوا الله الذي تساء لون به والأرحام إن الله كان عليكم رقيبا ـ يأيها الذين امنوا اتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم مسلمون – يأيها الذين امنوا اتقوالله وقولوا قولا سديدا يصلح لكم أعمالكم ويغفر لكم ذنوبكم ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما۔

See also  রান্না-বান্না ও খাবার/খাদ্য হিসেবে পশু-পাখি সম্পর্কিত মাসআলা মাসায়েল

* এই খুতবার সঙ্গে নিম্নোক্ত বাক্যও যোগ করা উত্তম-

زوجك على ما أمر الله به من إمساك بمعروف أو تسريح بإحسان – (كتاب الاذكار)

* এ খুতবা চুপচাপ শ্রবণ করা ওয়াজিব।

* খুতবা পাঠ করার পর দুজন সাক্ষীর সম্মুখে তাদেরকে শুনিয়ে উকীল (বা পাত্রী) পাত্রকে (বা তার নিযুক্ত প্রতিনিধিকে) পাত্রীর পরিচয় প্রদানপূর্বক বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবে এবং পাত্র (বা তার প্রতিনিধি তার পক্ষ হয়ে) আমি কবূল করলাম বা আমি গ্রহণ করলাম বা ইত্যকার কোন বাক্য বলে সে প্রস্তাব গ্রহণ করবে। ব্যস, বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেল।

* অতঃপর নব দম্পতির উদ্দেশ্যে উপস্থিতরা বা পরবর্তীতে যে জানবে সে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে-

بارك الله لكما وبارك عليكما وجمع بينكما في خير ۔

* বিবাহের পর খেজুর ছিটিয়ে দেয়া বা বন্টন করা সুন্নাতে যায়েদা। হযরত থানবী (রহঃ) বর্তমান যুগে ছিটানো নয় বরং বন্টন করাই সঙ্গত বলে মত প্রকাশ করেছেন। কারণ, খেজুর ছিটানো সম্পর্কিত হাদীস কারও কারও মতে যয়ীফ, তদুপরি বর্তমান যুগে খেজুর ছিটানো ও তা আহরণকে কেন্দ্র করে মনোমালিন্য হয়ে থাকে, তাই ছিটানোর পদ্ধতি পরিত্যাগ করা সঙ্গত।

* টেলিফোনে বিবাহ জায়েয। এর সুরত এই হতে পারে যে, ছেলে বা মেয়ে টেলিফোনে একজনকে উকীল নিযুক্ত করবে যে, আপনি এত মহরের বিনিময়ে অমুক মেয়ের সাথে/অমুক ছেলের সাথে আমার বিবাহ সম্পন্ন করে দিন। অতঃপর উক্ত উকীল বিবাহের মজলিসে ছেলের পক্ষ থেকে/মেয়ের পক্ষ থেকে কবূল করবে।

বিবাহ মজলিসের কয়েকটি রছম ও কুপ্রথা

* বিবাহের গেটে টাকা ধরা নাজায়েয।

* বিবাহের আক্দ সম্পন্ন হওয়ার পর বর দাঁড়িয়ে হাজিরীনে মজলিসকে যে সালাম দিয়ে থাকে, এটা রছম-এটা পরিত্যাজ্য।

* বিবাহের পর বর গুরুজনদের সাথে যে মুসাহাফা করে থাকে এটা ভিত্তিহীন ও বিদআত।

* বিবাহের পর বধূর মুখ দেখানো রছম ও (পর পুরুষকে দেখানো) না জায়েয।

বাসর রাতের কতিপয় বিধান

* নববধূ মেহেদি ব্যবহার করবে, অলংকার এবং উত্তম পোশাক- পরিচ্ছদে সজ্জিত হবে।

* পুরুষ বাসর ঘরে প্রবেশ করতঃ নববধুকে সহ দুই রাকআত (শুকরানা) নামায পড়বে। 

* অতঃপর স্ত্রীর কপালের উপরিস্থিত চুল ধরে বিসমিল্লাহ বলে এই দোয়া পাঠ করা সুন্নাত

(اللهم إني أسألك خيرها وخير ما جبلت عليه ، وأعوذبك من شرها وشرما جبلت عليه ـ (امداد الفتاوی جـ/ ٢

ওলীমা বিষয়ক সুন্নাত ও নিয়ম সমূহ

* বাসর ঘর হওয়ার পর (তিন দিনের মধ্যে বা আক্‌দের সময়) আপন বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং গরীব মিসকীনদেরকে ওলীমা অর্থাৎ, বৌ-ভাত খাওয়ানো সুন্নাত। কেউ কেউ বাসর হওয়ার পর এবং আক্দের সময় উভয় সময়েই এরূপ আপ্যায়ন উত্তম বলেছেন।

* ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয় বরং প্রত্যেকের সামর্থ্যানুযায়ী খরচ করাই সুন্নাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট।

* যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত করা হয় এবং দ্বীনদার ও গরীব মিসকীনদের দাওয়াত করা হয় না, হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী তা হল সর্ব নিকৃষ্ট ওলীমা। অতএব ওলীমায় দ্বীনদার ও গরীব মিসকীনদেরকেও দাওয়াত করা উচিত।

* আমাদের দেশে যে বরযাত্রী যাওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে এবং কনের পরিবারের পক্ষ থেকে ভোজের ব্যবস্থা করার নিয়ম চালু হয়েছে। এভাবে সমাজে বিবাহের উপযুক্ত কন্যার পিতাদেরকে কন্যাদায়গ্রস্ত বানিয়ে তোলা হয়েছে। এটা শরী’আত সম্মত অনুষ্ঠান নয়- এটা রছম, অতএব তা পরিত্যাজ্য।

সমাপ্ত: বিয়ে/বিবাহের সকল মাসআলা মাসায়েল।
সূত্র: আহকামে জিন্দেগী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!