বিষয়: মৃত ব্যাক্তির উত্তরাধিকার বন্টনের মাসআলা মাসায়েল।
হ্যাশট্যাগ: #মৃত ব্যাক্তির উত্তরাধিকার বন্টনের মাসআলা মাসায়েল।
মৃত ব্যাক্তির উত্তরাধিকার বন্টনের মাসআলা মাসায়েল
(মীরাছে কার কি অংশ সে সম্পর্কে আমি এ গ্রন্থে আলোচনা করব না, উত্তরাধিকারীদের প্রকার ও সংখ্যার কম বেশী হওয়াতে তার মধ্যে পার্থক্যও হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ফারায়েয সম্পর্কে অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের নিকট প্রত্যেকে তাদের অবস্থা জানিয়ে সমাধান জেনে নিতে পারবেন। এখানে মীরাছ বন্ঠনের পূর্বে কি করণীয় আছে সে সম্পর্কিত মাসায়েল বর্ণনা করেই এ প্রসঙ্গ শেষ করা হবে।)
মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তিন প্রকারের খরচ সমাধা করার পূর্বে মীরাছ বা মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তি বন্টন করা যায় না। উক্ত তিন প্রকার খরচ সমাধা করার পর কিছু উদ্বৃত্ত না থাকলে ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারীগণ কিছুই পাবে না- থাকলে পাবে। সে খরচ তিনটি হল- (১) মৃতের কাফন- দাফন, (২) মৃতের ঋণ, (৩) মৃতের ওছিয়াত।
ওছিয়াত সম্পর্কে পূর্বে পোষে।ট আলোচনা করা হয়েছে। কাফন-দাফন ও ঋণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা পেশ করা হল।
* মৃত ব্যক্তি যা কিছু রেখে যায়, তন্মধ্য থেকে সর্ব প্রথমে তার দাফন-কাফনের খরচ বহন করা হবে। অবশ্য যদি অন্য কেউ ছওয়াবের নিয়তে বা মহব্বতে দাফন-কাফনের খরচ বহন করতে চায় তাহলে তা নির্ভর করবে ওয়ারিছদের মর্জির উপর; তারা ইচ্ছা করলে তা গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। স্ত্রীর কাফন-দাফনের খরচ সর্ব প্রথম স্বামীর উপর বর্তায়, স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে বহন করতে হবে। যে মৃত ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি রেখে যায়নি তার দাফন-কাফনের খরচ সেসব লোকেরা বহন করবে যারা পরিত্যক্ত সম্পত্তি থাকলে তার ওয়ারিছ হতো- যে যে অনুপাতে মীরাছ পেতো সে অনুপাতেই সে এ খরচ বহন করবে। আর যে লাওয়ারিছ অর্থাৎ, যার কোন ওয়ারিছ বা আত্মীয়-স্বজন না থাকে, তার কাফন-দাফনের দায়িত্ব ইসলামী সরকারের। ইসলামী সরকার না থাকলে সেই লাওয়ারিছ মৃত ব্যক্তির মহল্লা বা লোকালয়ের লোকদের উপর তার কাফন-দাফনের খরচ বহন করা ওয়াজিব।
* দাফন-কাফনের পর এবং মীরাছ বন্টনের পূর্বে দ্বিতীয় জরুরী খরচ হল মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করা (যদি ঋণ থাকে)। ঋণ দুই ধরনের। (এক) সুস্থ অবস্থার ঋণঃ অর্থাৎ, সুস্থাবস্থায় যদি কারও থেকে নগদ টাকা ঋণ নিয়ে থাকে বা সুস্থ্য অবস্থায় কারও থেকে কিছু ক্রয় করে থাকে এবং তার দাম বাকী থাকে বা সুস্থ্য অবস্থায় সে তার এসব ঋণের কথা প্রকাশ করে থাকে বা অন্যরা এমনিতেই সে বিষয়ে অবগত ছিল। স্ত্রীর অনাদায়ী মহরও এই প্রকার ঋণের অন্তর্ভুক্ত। (দুই) এমন ঋণ যা সে অন্তিম রোগ (মারাদুল মাওত)-এর সময় স্বীকার করেছিল যা অন্য কারও জানা ছিল না বা কোন সাক্ষীও ছিল না। অন্তিম রোগ বা মারাদুল মওত বলতে বোঝায় যে রোগে তার ইন্তিকাল হয়। উক্ত উভয় প্রকার ঋণের হুকুম-আহকাম নিম্নরূপঃ
১. যদি মৃতের দায়িত্বে এক প্রকার বা উভয় প্রকারের ঋণ থাকে তাহলে কাফন-দাফন সম্পন্ন করার পর উভয় প্রকার ঋণ পরিশোধ করা হবে। তার পরে মীরাছ বন্টন করা হবে।
২. পরিত্যক্ত সম্পত্তির চেয়ে ঋণের পরিমাণ অধিক হলে দেখতে হবে- যদি সে ঋণ এক প্রকার এবং প্রাপক এক ব্যক্তি হয় তাহলে কাফন-দাফনের পর যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত থাকবে তা তাকে দিয়ে দেয়া হবে। বাকীটুকু প্রাপক মাফ করে দিবে। সে মাফ করতে না চাইলেও তার সে অধিকার রয়েছে তবে আইনতঃ ওয়ারিছদের উপর তা পরিশোধের যিম্মাদারী নেই। অবশ্য তারা অবস্থা সম্পন্ন হয়ে থাকলে বাকী ঋণটুকুও পরিশোধ করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর যদি প্রাপক একাধিক ব্যক্তি হয় তাহলে তারা সবাই কাফন-দাফনের পর উদ্বৃত্তটুকু নিজেদের মধ্যে ঋণের অনুপাতে বন্টন করে নিবে।
৩. যদি মৃত ব্যক্তির উভয় প্রকারের ঋণ থাকে এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তি (কাফন-দাফনের ব্যয় বহন করার পর) সেসব ঋণ পরিশোধে যথেষ্ট না হয় তাহলে প্রথমে পরিশোধ করতে হবে প্রথম প্রকারের ঋণ। তারপর অবশিষ্ট থাকলে দ্বিতীয় প্রকারের পাওনাদাররা তাদের ঋণের অনুপাতে যা থাকে সেটা বন্টন করে নিবে। অর্থাৎ, তারা সে অনুপাতেই অংশ পাবে। আর প্রথম প্রকারের ঋণ পরিশোধ করার পর কিছু অবশিষ্ট না থাকলে তারা ওয়ারিছদেরকে আইনত বাধ্য করতে পারবে না। অবশ্য নৈতিক দায়িত্ব ভেবে ওয়ারিছগণ নিজেদের অর্থ থেকে দিয়ে দিলে ভিন্ন কথা, এর জন্য মওয়ারিছগণ ছওয়াবও লাভ করবে।
* মীরাছের আইন অনুযায়ী যেসব আপনজন অংশ পায় না, তারা যদি মীরাছ বন্টনের সময় মজলিসে উপস্থিত থাকে বিশেষতঃ তাদের মধ্যে যারা এতীম, মিসকীন ও অভাবগ্রস্ত হয়, তাদেরকে অংশীদারগণ স্বেচ্ছায় কিছু দিয়ে তাদেরকে খুশি করা উত্তম। এটা অংশীদারদের আইনগত দায়িত্ব নয়- নৈতিক দায়িত্ব। এটাও এক প্রকার সদকা ও নেক কাজ।
সমাপ্ত: মৃত ব্যাক্তির উত্তরাধিকার বন্টনের মাসআলা মাসায়েল।
সূত্র: আহকামে জিন্দেগী।