বিষয়: ঘর/বাড়ি/দোকান ইত্যাদি ভাড়া দেয়া ও নেয়ার মাসআলা মাসায়েল।
হ্যাশট্যাগ: #ঘর/বাড়ি/দোকান ইত্যাদি ভাড়া দেয়া ও নেয়ার মাসআলা মাসায়েল।
ঘর/বাড়ি/দোকান ইত্যাদি ভাড়া দেয়ার মাসায়েল
* কোন মুসলমানদের পক্ষে অমুসলিম/কাফেরের নিকট বাড়ি/ঘর/অফিস/ দোকান ভাড়া দেয়া মাকরূহ তানযীহী।
* কোন অবৈধ কারবার চালানোর জন্য বাড়ি/ঘর ইত্যাদি ভাড়া দেয়া মাকরূহ তাহরীমী, যা হারামের নিকটবর্তী। যেমন সুদ ভিত্তিক ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, সিনেমা ইত্যাদির জন্য ভাড়া দেয়া।
* যাদের উপার্জন অবৈধ, তাদের নিকট বাড়ি ভাড়া দেয়া মাকরূহ। এরূপ অবস্থায় ভাড়াটে তার হারাম অর্থ থেকে যে ভাড়া পরিশোধ করবে, তা ব্যবহার করা বাড়ীর মালিকের জন্য জায়েয হবে না। এরূপ অর্থ ছদকা করে দেয়া ওয়াজিব।
* ভাড়ার মেয়াদ একত্রে নির্ধারণ করতে পারে বা ভেঙ্গে ভেঙ্গে সপ্তাহ বা মাস বা বৎসর এভাবেও নির্ধারণ করতে পারে, উভয় পদ্ধতিই জায়েয।
* ভাড়ার মেয়াদ নির্ধারিত থাকলে সেই নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে ভাড়া বৃদ্ধি করা জায়েয নয়; যদিও মালিক ইতিমধ্যে মেরামত ইত্যাদি কাজে অর্থ ব্যয় করে থাকে। আর ভাড়ার মেয়াদ নির্ধারিত না থাকলে প্রতি মাসের শুরুতে মালিক বর্ধিত ভাড়া প্রদান বা ঘর/বাসা/দোকান ইত্যাদি খালি করে দেয়ার জন্য দাবী জানাতে পারে এবং এই অতিরিক্ত ভাড়ায় গ্রহণ করার মত অন্য ভাড়াটে পাওয়া গেলে তখন মালিকের দাবীকৃত অতিরিক্ত ভাড়া প্রদান করা পুরাতন ভাড়াটের উপর ওয়াজিব হয়ে যায়। সে এই অতিরিক্ত ভাড়া না দিতে পারলে ঘর/বাসা/দোকান ইত্যাদি খালি করে দিবে।
* ভাড়ার মেয়াদ নির্ধারিত থাকলে সেই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে ভাড়াটেকে বাসা/ঘর/দোকান খালি করে দেয়ার জন্য বাধ্য করতে পারবে না। তবে শরী’আত সম্মত ওজর থাকলে তা পারবে।
* ভাড়া দেয়া ঘর/দোকান ইত্যাদির সংস্কার ও মেরামত, পথের সুবিধা প্রদান এবং ভাড়াটিয়ার অন্যান্য অসুবিধাসমূহ দূর করা মালিকের কর্তব্য। (ইসলামী ফিকাহঃ ৩য়)
* ভাড়ার চুক্তি হওয়ার পর কিছু অগ্রিম বা বায়না গ্রহণ করলে এবং পরে ভাড়াটিয়া ভাড়া নিতে না চাইলে গৃহীত অগ্রিম/বায়নার টাকা ফেরত দিতে হবে।
* পজেশন (Possession) ক্রয় বিক্রয় করা জায়েয।
* ভাড়ার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দখল বুঝে নেয়া মালিকের দায়িত্ব।
* মাসে মাসে বা পর্যায়ক্রমে ভাড়া থেকে কেটে দেয়া হবে এই শর্তে এডভান্স (Advance) গ্রহণ করা জায়েয।
ঘর/বাড়ি/দোকান ইত্যাদি ভাড়া নেয়ার মাসায়েল
* অবৈধ অর্থে নির্মিত ঘর/বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাতে বসবাস করা মাকরূহ তাহরীমী।
* মাস ভিত্তিক ভাড়া নেয়ার পর মাস পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই যদি বাড়ী/ঘর ছেড়ে দেয় এমতাবস্থায় দেখতে হবে যদি শরী’আতসম্মত ওজর ব্যতীত সে ছেড়ে দেয় তাহলে পূর্ণ মাসের ভাড়া তাকে দিতে হবে। আর যদি শরী’আত সম্মত কোন নির্ভরযোগ্য ওজর বশতঃ ছাড়ে, তাহলে ছাড়ার পূর্বে মালিকের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে নিবে এবং মালিক উক্ত ভাড়াটিয়া থেকে যে কয়দিন সে দখলে রেখেছে তার ভাড়াই নিতে পারবে- পূরা ভাড়া নিবে না। ভাড়ার মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকলে সেই নির্ধারিত মেয়াদের পূর্বে ঘর খালি করে দিলেও এই হুকুম।
* ভাড়াটিয়া নিজের পক্ষ থেকে ভাড়ার ঘর/দোকানে কোন সংযোজন/নির্মাণ কাজ করলে মালিকের প্রাপ্য ভাড়া থেকে সেটা কেটে দিতে পারবে না। এরূপ হলে ঘর/দোকান ছেড়ে দেয়ার সময় তার সংযোজনকৃত অংশগুলো সে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যেতে পারবে। আর মালিকের অনুমতিক্রমে এরূপ করলে ভাড়া থেকে কেটে নিতে পারবে।
* ভাড়াটিয়ার জন্য মালিকের অনুমতি ব্যতীত অন্যের কাছে ভাড়া দেয়া বা অন্যকে দখল দেয়া জায়েয নয়।
* বাড়ি/দোকান ইত্যাদির দখল মালিককে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কোন বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নয়।
* ভাড়া নেয়া বাড়ী/দোকান নষ্ট করে ফেললে অথবা অত্যাধিক দুর্গন্ধময় ও ময়লাযুক্ত করে ফেললে মালিক উক্ত ভাড়াটিয়াকে তুলে দিতে পারবে। (ইসলামী ফেকাহঃ ৩য়)
* বাড়ি/দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবহার না করলেও যতদিন দখলে রাখবে তত দিনের ভাড়া দিতে হবে। (প্রাগুক্ত)
* ভাড়াটিয়া বা মালিকের কেউ মারা গেলে পূর্বের ভাড়া চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং ওয়ারিছদের নতুনভাবে কারবার চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
* বাসা ভাড়া নেয়ার পর যদি এমন কোন অসুবিধা দেখতে পায় যাতে থাকার অসুবিধা, তাহলে সে চুক্তি বাতিল করতে পারে।
সমাপ্ত: ঘর/বাড়ি/দোকান ইত্যাদি ভাড়া দেয়া ও নেয়ার মাসআলা মাসায়েল।
সূত্র: আহকোমে জিন্দেগী।