বিষয়: ব্যবসা-বাণিজ্য, সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়, বাকী ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাসআলা মাসায়েল।
হ্যাশট্যাগ: ব্যবসা-বাণিজ্য, সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়, বাকী ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাসআলা মাসায়েল।
ব্যবসা-বাণিজ্য করতে টাকা দেয়ার মাসায়েল
যদি কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য অন্যকে টাকা দেয় এবং যাকে টাকা দেয়া হল তার কোন অর্থ উক্ত ব্যবসায় না লাগে বরং সে শুধু শ্রম দেয়, তাহলে এরূপ কারবারকে ইসলামী ফেকাহ্র পরিভাষায় ‘মুযারাবাত’ বলা হয়। আর উক্ত ব্যবসায় তার টাকা/অর্থও যদি লাগে তাহলে তাকে ‘শেরকাত’ (কোম্পানি ব্যবসা) বলা হয়। নিম্নে মুযারাবাত-এর মাসায়েল বর্ণনা করা হল :
* অর্থদাতা/মহাজন ও বেপারীর মুনাফার হার নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। অর্থাৎ, লাভের কত অংশ কে পাবে তা নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ মহাজনের অর্ধেক বা এক চতুর্থাংশ, বাকীটা বেপারীর ইত্যাদি। যদি এরূপ কথা হয় যে, মোটের উপর মহাজনকে এত টাকা দিতে হবে বা মাসিক এত টাকা দিতে হবে তাহলে নাজায়েয ও সুদ হয়ে যাবে।
* যদি এরূপ কথা হয় যে, যা লাভ হবে তা আমরা বিবেচনা মত বন্টন করে নিব, তাহলে চুক্তি ফাসেদ হয়ে যাবে।
* কারবার শুরু হওয়ার পর যে পর্যন্ত হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে কারবার ক্ষান্ত না করবে, সে পর্যন্ত যদি কোন বারে লাভ কোন বারে লোকসান হয়, তাহলে লোকসান লাভের উপর থেকে কাটা যাবে-বেপারীরর উপরও ফেলানো হবে না বা মহাজনের উপরও ফেলানো হবে না।
* হিসাব চুকিয়ে কারবার বন্ধ করার সময় যদি দেখা যায় মোট হিসেবে লাভও দাঁড়ায়নি লোসকসানও হয়নি- সমান সমান রয়েছে, তাহলে মহাজন আসল টাকা নিয়ে যাবে আর বেপারীর শ্রম বৃথা যাবে- সে তার শ্রমের পরিবর্তে মহাজনের নিকট কিছু দাবী করতে পারবে না।
* হিসাব চুকানোর সময় যদি দেখা যায় লাভতো হয়ইনি বরং উল্টো লোকসান হয়েছে, তাহলে সেই লোকসান বেপারীর উপর ফেলানো যাবে না বরং সে লোকসান মহাজনের যাবে। বেপারীর পরিশ্রমই তো বৃথা গেল, সেই লোকসানই তার জন্য যথেষ্ট।
* যদি এরূপ শর্ত করা হয় যে, মূল টাকায় লোকসান গেলে বেপারীকেও হারাহারি মতে সে টাকার অংশ দিতে হবে বা কারবারে লাভ না হলে বা লোকসান গেলে মহাজনকে বেপারীর শ্রমের মজুরী দিতে হবে তাহলে এ উভয় রকম শর্ত করা ফাসেদ ও নাজায়েয।
* যদি এরূপ শর্ত করা হয় যে, মুনাফা থেকে একটা নির্দিষ্ট অংক যে কোন এক জনের, বাকীটা অন্যের বা একটা নির্দিষ্ট অংক প্রথমে এক জনের জন্যে পৃথক করে নিয়ে বাকীটা উভয়ের মধ্যে বন্টন হবে, তাহলে মুযারাবাত ফাসেদ হয়ে যায়।
* অর্থদাতা কারবারের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ বা নির্দিষ্ট এলাকা বা নির্দিষ্ট বিষয় নির্ধারণ করে দিতে পারে।
* কারবারের মেয়াদ নির্ধারিত না থাকলে কত দিন পর পর হিসাব নিকাশ করে পরস্পরের মাঝে মুনাফা বন্টন হবে তা স্থির করে নিতে হবে।
* বেপারী মহাজনের অনুমতি ব্যতীত অন্যের নিকট ব্যবসার জন্যে মহাজনের টাকা দিতে পারবে না।
* ব্যবসা করতে গিয়ে মাল উঠানামা করানো, যাতায়াত, সফরে হলে খাওয়া দাওয়া ইত্যাদির খরচ মূলধন থেকে যাবে।
* মুযারাবাতের শর্তাবলী ও চুক্তি লিখিতভাবে নিজেদের কাছে রাখা উত্তম।
* মহাজন যে কোন সময় বেপারীকে বরখাস্ত করার ও টাকা তুলে নেয়ার অধিকার রাখে। তবে বেপারীর নিকট সংবাদ পৌঁছার পূর্বে সে কোন মাল ক্রয় করে থাকলে তা বিক্রয় না করা পর্যন্ত সে বরখাস্ত হবে না।
* মহাজন বা বেপারীর যে কোন একজনের মৃত্যুতে মুযারাবাতের চুক্তি ভঙ্গ হয়ে যায়। ওয়ারিছদেরকে (চাইলে) আবার চুক্তির নবায়ন (জবহবা) করে নিতে হবে।
(বেহেশতী জেওর, ইসলামী ফেকাহঃ ৩য়, ছাফাইয়ে মো’আমালাত এবং ৭% এর মুমিন থেকে গৃহীত।)
পেশাজীবি শ্রমিক/ব্যবসায়ী শ্রমিকদের মাসায়েল
যে সব পেশাধারী লোক কিছু কলা কৌশল জানে এবং বিশেষ কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের অধীনস্ত হয়ে চাকুরী করে না বরং তারা অনেকের কাজ করে দিয়ে থাকে, তাকে বলা হয় ‘আজীরে মুশতারাক’ বা ব্যবসায়ী শ্রমিক। পেশাজীবি শ্রমিক। যেমন ঘড়ির মেকার, কুলি, মুচি, রং মিস্ত্রি, কামার, স্বর্ণকার, দর্জি, নাপিত, ধোপা প্রভৃতি। এই শ্রেণীর শ্রমিকদের সাথে সম্পর্কিত বিশেষ কয়েকটি মাসায়েল নিম্নরূপ :
* তাদের অবহেলার দরুণ কোন জিনিস নষ্ট হয়ে গেলে তাদেরকে সে জিনিসের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অবশ্য কেউ ক্ষতিপূরণ দাবী না করলে সেটা তার অনুগ্রহ।
* মজুরী পূর্বেই নির্ধারিত করতে হবে। নগদ না বাকী তা-ও পূর্বেই ফয়সালা করে নিতে হবে। কাজের ধরন ও বিবরণও পূর্বে স্পষ্ট হতে হবে।
* তারা কাজ শেষ করার পূর্বে পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকারী হয় না। তবে স্বেচ্ছায় কেউ পরিশোধ করলে তা ভিন্ন কথা। এজাতীয় পেশাজীবিরা বায়না/এডভান্স স্বরূপ কিছু যদি এই শর্তে গ্রহণ করে যে, কাজ না নিলে সে টাকা ফেরত দেয়া হবে না, তাহলে এরূপ করা জায়েয হবে না। এরূপ শর্ত ছাড়া এডভান্স নিতে পারে।
* তারা যদি কাজ ডেলিভারীর সময় নির্ধারিত করে দেয়, তাহলে অনুরূপ করা আবশ্যকীয় নয়। কেননা তারা আইনের জন্য দায়ী- সময়ের জন্য নয়। অবশ্য নৈতিক দৃষ্টিতে ওয়াদা ভঙ্গ করা অনুচিত। তবে সে যদি কোন কিছু
আর্জেন্ট দেয়ার কথা বলে কিছু অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করে, তাহলে সময় মত তা দেয়া আবশ্যকীয়।
* তারা পারিশ্রমিক পাওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্বে দেয়া দ্রব্য আঁটক রাখতে পারে। যদি এরূপ আঁটক রাখা দ্রব্য আঁটক রাখার মেয়াদে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তারা সে জন্য দায়ী নয়।
(ইসলামী ফেকাহঃ ৩য়)
ক্রয়-বিক্রয়ের সাধারণ মাসায়েল
* অবৈধ বস্তু ক্রয় করা বা কোন ভাবে অবৈধ বস্তুর মালিক হয়ে গেলে এমন লোকের নিকট তা বিক্রয় করা যার জন্য তা অবৈধ, এটা জায়েয নয়।
* যে সব দ্রব্য বিক্রি করা হবে তা সামনে থাকতে হবে অথবা তার নমূনা (sample) সামনে থাকতে হবে। অদেখা দ্রব্য দেখার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার শর্তে ক্রয় করলেও তার অনুমতি রয়েছে।
* বিক্রিত দ্রব্যের সমস্ত অবস্থা (দোষ-ত্রুটি থাকলে তা সহ) ক্রেতাকে খুলে বলতে হবে, অন্যথায় বিক্রয় শুদ্ধ হবে না এবং ক্রেতার তা ফেরত দেয়ার অধিকার থাকবে। দ্রব্যের দোষ না বলে ধোকা দিয়ে বিক্রি করা হারাম।
* বিক্রেতা দ্রব্যের যে গুণ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছিল পরে তার বিপরীত প্রমাণিত হল, যেমন বলেছিল রং পাকা বা অমুক কোম্পানীর, অথচ তা মিথ্যা প্রমাণিত হল, এ ক্ষেত্রে ক্রেতা সেটা ফেরত দেয়ার অধিকার রাখে।
* দাম স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করতে হবে। কেউ তা অস্পষ্ট বা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ রাখলে বিক্রয় শুদ্ধ হবে না।
* ক্রয়ের সময় ক্রেতা যদি বলে দু তিন দিনের মধ্যে (তিন দিনের বেশী নয়) দ্রব্যটি গ্রহণ বা বর্জনের কথা জানাব অথবা ঘরে দেখিয়ে পরে বলব, তাহলে উক্ত মেয়াদের মধ্যে ক্রেতার তা ফেরত দেয়ার অধিকার থাকবে যদি ক্রেতা দ্রব্যটি ব্যবহার করে না থাকে কিংবা যে সব দ্রব্য ব্যবহার করা ব্যতীত সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না, সেগুলো ব্যবহারের ফলে দ্রব্যটির মাঝে কোন দোষ- ত্রুটি সৃষ্টি না হয়ে থাকে।
* বিক্রেতা কোন দ্রব্যের বিশেষ গুণাগুণ বর্ণনা করল, কিন্তু অন্ধকারের কারণে ক্রেতা ভাল করে তা দেখে নিতে পারল না। কিংবা কেবল বিক্রেতার বর্ণনার ভিত্তিতে সে ক্রয় করল, কিন্তু পরে নেয়ার পরে পরীক্ষা করে বিক্রেতার বর্ণনা মত পেল না তাহলে ক্রেতার সেটা ফেরত দেয়ার অধিকার থাকবে। নমূনা (sample) দেখে অর্ডার দেয়ার পর নমূনা মত না পেলেও তা ফেরত দেয়ার অধিকার থাকবে। অবশ্য দ্রব্যটি ব্যবহার করলে বা অন্যের কাছে বিক্রি করলে পরে আর তা ফেরত দেয়ার অধিকার থাকে না।
* কোন দ্ৰব্য না দেখে ক্রয় করে থাকলে দেখার পর তা রাখা বা না রাখার অধিকার থাকবে।
* যে সব বস্তুর নমূনা দেখে সে সম্পর্কে অনুমান করা যায় না, সেরূপ দ্রব্যের নমূনা দেখে অর্ডার দিলে দ্রব্যটি পাওয়ার পর তা ক্রয় করা না করার অধিকার থাকবে। আর যে দ্রব্যের নমূনা দেখে সে সম্পর্কে অনুমান করা যায় সে ক্ষেত্রে নমূনার অনুরূপ না পেলে উপরোক্ত অধিকার থাকবে, কিন্তু নমূনার অনুরূপ পেলে সে অধিকার থাকবে না।
* বিক্রেতা যদি দ্রব্যের সে পরিমাণ দাম নিয়ে থাকে, যা কোন স্বচ্ছ নির্দোষ দ্রব্যের বিনিময়ে নেয়া হয়ে থাকে, আর পরে তাতে কোন দোষ প্রকাশ পায় তাহলে ক্রেতার তা ফেরত দেয়ার অধিকার থাকবে। যদি ক্রেতা দোষ- ত্রুটি সত্ত্বেও রাখতে চায় তাহলে তার দাম কম দেয়ার অধিকার থাকবে না। অবশ্য বিক্রেতা স্বেচ্ছায় কিছু কম নিলে তা তার ইচ্ছা। তবে দোকানদার পণ্যের দোষ-ত্রুটি বলা সত্ত্বেও কেউ সে দ্রব্য ক্রয় করলে উক্ত দোষ-ত্রুটির কারণে তার ফেরত দেয়ার অধিকার থাকবে না।
* ক্রেতার হাতে এসে কোন ত্রুটি হলে সে দ্রব্য ফেরত দেয়ার অধিকার নষ্ট হয়ে যায়।
* ত্রুটি প্রকাশ পাওয়ার পর কিছু (ভালটা) রেখে বাকীটা (খারাপগুলো) ফেরত দেয়ার অধিকার নেই। রাখলে পূরাটা রাখতে হবে কিংবা পূরাটা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য বিক্রেতা সম্মত হলে সব রকমই করা যেতে পারে।
* যে সব দ্রব্য ভাঙ্গার পর (যেমন ডিম) বা কাটার পর (যেমন তরমুজ) তার ভাল মন্দ বোঝা যায়, সে সব দ্রব্য ভাঙ্গা বা কাটার পর যদি সম্পূর্ণ ফেলে দেয়ার মত অবস্থা দেখা যায়, তাহলে পুরা দাম ফেরত নেয়ার অধিকার থাকবে। যদি অন্য কোন কাজে ব্যবহার করার উপযোগী থাকে (যেমন তরমুজ বা কোন তরকারী জন্তুকে খাওয়ানোর যোগ্য থাকে) তাহলে সেগুলো ফেরত না দিলে কিছু দাম কমানোর অধিকার থাকে।
* ক্রয় বিক্রয়ের সময় প্রথমে দাম পরিশোধ এবং পরে পণ্য হস্তান্তর হবে। ক্রেতা এরূপ দাবী করতে পারবে না যে, প্রথমে পণ্য দিন পরে দাম নিন। অবশ্য বিক্রেতা চাইলে প্রথমে পণ্য দিতে ও পরে দাম নিতে পারে।
* বিক্রেতা কোন দ্রব্য বিক্রি করলে ক্রেতাকে তা এমনভাবে হস্তান্তর করতে হবে যাতে দ্রব্যটি তার আয়ত্তে নিতে কোন প্রকার বেগ পেতে না হয়।
* বিক্রেতা যদি স্বেচ্ছায় কোন দ্রব্য অধিক পরিমাণে দিয়ে থাকে অথবা ক্রেতা মূল্য কিছু বেশী দিয়ে থাকে তাহলে কারবার চূড়ান্ত হওয়ার পর কাউকে তা ফেরত দেয়ার জন্য বাধ্য করা যাবে না।
* দাম পরিশোধ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ভার ক্রেতাকে বহন করতে হবে, যেমন মানিঅর্ডার খরচ (এমনিভাবে পে অর্ডার ও পোস্টাল অর্ডার খরচ) ইত্যাদি।
* এভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের লেখা পড়া সংক্রান্ত খরচ যেমন জমির দলিল রেজিষ্ট্রি ব্যয় ইত্যাদি ক্রেতাকে বহন করতে হবে।
* ক্রেতাকে পণ্য বুঝিয়ে দিতে যে সব খরচ হয়ে থাকে সে সব খরচ বিক্রেতাকে বহন করতে হবে। যেমন মাপ বা ওজন করার ব্যয়, সম্পত্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র না থাকলে সেগুলো সংগ্রহের ব্যয় ইত্যাদি।
* ক্রেতার নিকট মালামাল পৌঁছানোর পরিবহন ব্যয়, ভিপি খরচ ইত্যাদি ক্রেতাকে বহন করতে হবে, অবশ্য বিক্রেতা স্বেচ্ছায় বহন করলে তা হবে তার
বদান্যতা ৷ কিন্তু বিক্রেতাকেই তা বহন করতে হবে- এরূপ শর্ত আরোপ করলে বাণিজ্য ফাসেদ হয়ে যাবে।
* ভিপি যোগে মাল পাঠালে তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তার দায়-
* কাউকে কোন মাল তৈরী করার অর্ডার দিলে তার পূর্ণ বিবরণ, দাম দস্তুর, সরবরাহের স্থান, সরবরাহের দিন তারিখ, দাম পরিশোধের সময় ইত্যাদি পরিষ্কারভাবে নির্দিষ্ট হওয়া জরুরী।
* যে কারবার ফাসেদ হয়ে যায় তা ভেঙ্গে দেয়া উচিত। অথবা অন্ততঃ বিক্রেতা দাম ও ক্রেতা পণ্য ব্যবহার থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখবে আর তা কোন দরিদ্র অভাবীকে দিয়ে দিবে।
* শরী’আতে যে সব ক্রয়-বিক্রয় জায়েয নয় সেরূপ কোন ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হলেও তা মলিককে ফেরত দেয়া জরূরী- কোনভাবে তাতে হস্পীক্ষেপ করা বা নিজের কাজে ব্যবহার করা জায়েয নয়।
* ফল আসার পূর্বে বা পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে আম কাঁঠাল প্রভৃতির বাগান বিক্রি করার যে প্রচলন রয়েছে তা জায়েয নয়।
* যে ব্যক্তি খালেছ হারাম উপায়ে কোন মাল উপার্জন করেছে তার থেকে সেটা ক্রয় করা জায়েয নয়।
(বেহেশতী জেওর ও ইসলামী ফেকাহঃ ৩য় প্রভৃতি থেকে গৃহীত)
বাকীতে ক্রয়-বিক্রয়ের মাসায়েল
* ধারে কারবার করতে বিক্রেতার সম্মতি আবশ্যক, তার সম্মতি ছাড়া দাম বাকী রাখা জায়েয নেই।
* বাকীতে কোন বস্তু ক্রয় করলে মূল্য পরিশোধের দিন বা তারিখ নির্দিষ্ট করে বলতে হবে।
* ক্রেতা কোন একটি দ্রব্য বাকীতে ক্রয় করল অথচ দাম পরিশোধের কোন মেয়াদ নির্দিষ্ট করল না-এমনিই দ্রব্য নিয়ে চলে গেল, তাহলে সে মেয়াদ এক মাস বলে ধরা হবে। এক মাস অতিবাহিত হলেও যদি মূল্য পরিশোধ না করে, তাহলে বিক্রেতা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। (اسلامی فقہ بحوالہ المجلة)
* হিসাব নিকাশের সময় মূল্য নিয়ে মতবিরোধের আশংকা থাকলে মল্যি নির্ধারণের পরেই পণ্য নেয়া উচিত।
* ধারে বিক্রি করার পর বিক্রেতার পণ্য ফেরত নেয়ার অধিকার থাকেনা।
* বিক্রেতা যদি দাম পরিশোধের কিস্তি নির্দিষ্ট করে দেয়, তাহলে তার পুরো দাম একত্রে দাবী করার অধিকার থাকবে না।
* বাকীতে বিক্রি করলে নগদের তুলনায় কিছুটা বেশী দামে বিক্রি করতে পারবে।
* ধারের মেয়াদ বৃদ্ধি করার অধিকার বিক্রেতার, সে চাইলে মেয়াদ বৃদ্ধিও করতে পারে আবার মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর দাম দাবী করতে পারে এবং কঠোরতা সহকারেও দাম আদায় করার অধিকার তার রয়েছে।
* বাকীতে ক্রয় করলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর মূল্য পরিশোধ করা ওয়াজিব-বিনা অপারগতায় টালবাহানা করা জায়েয নয়।
(ইসলামী ফেকাহ, ৩য় ও বেহেশতী জেওর থেকে গৃহীত )
দাম এখন পণ্য পরে-এরূপ ক্রয়-বিক্রয়ের মাসায়েল
যদি ক্রেতা থেকে দাম এখনই নেয়া হয় আর পণ্য পরে দেয়ার অঙ্গীকার হয়-এরূপ বিক্রয়কে বলে ‘বাইয়ে সালাম’। এ প্রকার ক্রয়-বিক্রয় জায়েয হওয়ার জন্য ছয়টি শর্ত রয়েছে। যথাঃ
১. যে পণ্যটি নেয়া হবে তার পূর্ণ বিবরণ জানা থাকতে হবে। এর জন্য কিছু নমূনা (sample) দেখে নেয়া উত্তম। যে সব পণ্য নির্দিষ্ট করা সম্ভব নয় তাতে বাইয়ে সালাম জায়েয নয়। যেমন জন্তুর বেলায়।
২. দাম দস্তুর চূড়ান্ত করে নিতে হবে।
৩. পণ্য হস্তান্তরের দিন সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।
৪. পণ্য যদি সহজে হস্তান্তর যোগ্য না হয় (যেমন দশ বিশ মণ খাদ্য শস্য বা দু’চার গাইট কাপড় ইত্যাদি) তাহলে সে পণ্য কোন্ স্থান থেকে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে তা নির্দিষ্ট থাকতে হবে। এরূপ ক্ষেত্রে ক্রেতা বিক্রেতাকে বলতে পারে যে, অমুক স্থানে আমাদের এ সব দ্রব্য পৌঁছে দিতে হবে।
৫. এরূপ কারবারের কথা-বার্তা চলার প্রাক্কালে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। যদি কথা-বার্তা চলে আজ আর টাকা দেয়া হবে পরের দিন, তাহলে বিক্রেতা গতকালের দাম আজ মেনে নিতে বাধ্য নয় বরং আজ নতুন করে কারবার চুক্তি করা বা অস্বীকার করার অধিকার থাকবে তার।
৬. যে মেয়াদের জন্য কারবার চুক্তি হল, সে মেয়াদের মধ্যে কখনও যদি পণ্যটি বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়-মওজুদ না থাকে, তাহলে বিক্রেতা টাকা ফেরত দিতে পারবে। (ইসলামী ফেকাহঃ ৩য় থেকে গৃহীত।)
সমাপ্ত: ব্যবসা-বাণিজ্য, সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়, বাকী ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাসআলা মাসায়েল।
সূত্র: আহকামে জিন্দেগী।