বিষয়ঃ ব্যাক্তিগত অর্থ সম্পদ, সঞ্চয় ও সংরক্ষণ সম্পর্কে মাসআলা মাসায়েল।
সম্পদ উপার্জনের নীতিমালা
১. সম্পদ হালাল ও পবিত্র হতে হবে।
২. হারাম, মাকরূহ ও সন্দেহপূর্ণ (অর্থাৎ, যেখানে জায়েয বা নাজারের হওয়ার কোন দিক স্পষ্ট নয়-এরূপ) পন্থায় সম্পদ উপার্জন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. সম্পদ উপার্জনের কাজে লিপ্ত হয়ে কোন ফরয বা ওয়াজিব বা সুন্নাত কাজে কোন বিঘ্ন ঘটতে যেন না পারে।
৪. সম্পদ উপার্জন করতে হবে সম্পদের মোহ বা ভোগ বিলাসিতার উদ্দেশ্যে নয় বরং নিজের দায়িত্ব পালন ও ছওয়াব অর্জনের কাজে ব্যয় করার নিয়তে। তাহলে এটা ইবাদত বলে গণ্য হবে।
সম্পদ ব্যয়ের নীতিমালা
১. সম্পদের উপর শরী’আত যে সব দায়িত্ব অর্পন করেছে, সম্পূর্ণ ইখলাসের সাথে তা আদায় করা। যেমন যাকাত, ফেতরা, কুরবানী, হজ্জ ইত্যাদি।
২. নিজের এবং নিজের পরিবারের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য হক আদায়ের কাজে ব্যয় করা।
৩. ভজাত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, মেহমান, মুসাফির, এতীম-মিসকীন, বিধবা প্রতি শ্রেণীর লোকদের প্রয়োজন সাধ্যানুযায়ী পূরণ করা।
৪. ব্যয় না করা অর্থাৎ, যে সব স্থানে শরী আত ব্যয় করতে নিষেধ করেছে মনে ব্যয় না করা। অপব্যয় করা হারাম। মিতব্যয় না করা অর্থাৎ, বৈধ স্থানেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় না না। এটাও শরী’আতে নিষিদ্ধ।
৬. এপণ্য না করা অর্থাৎ, বৈধ স্থানে ও প্রয়োজনের স্থানে মোটেই ব্যয় না করা না প্রয়োজন অনুপাতে ব্যয় না করা বরং কমী করা। এটাকে বুল বা স্ব-শূিণ্য বলা হয়। এটা নিন্দনীয়।
৭. লরের ক্ষেত্রে কমও নয় বেশীও নয় বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা জরুরী।
৮. এন ইসলামের হেফাযত এবং দাওয়াত, তাবলীগ ও ধর্ম প্রচারের কাজে আন্তরিকভাবে উদার মনে ব্যয় করা।
৯, নফল ও ছওয়াবের কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পূর্ণ সম্পদ ব্যয় করে দেয়ার ক্ষেত্রে নীতি হলঃ যিনি এরকম মজবৃত ঈমান ও মজবূত অন্তরের অধিকারী যে, সম্পদ একেবারে না থাকলেও তিনি হা হুতাশ করবেন না বা হারাম পথে ধাবিত হবেন না, তার জন্য এভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পূর্ণ সম্পদ ব্যয় করে দেয়ার অনুমতি রয়েছে বরং তা উত্তম। আর যার ঈমান ও অন্তর এরকম মজবৃত নয়, তার জন্য সম্পূর্ণ সম্পদ এভাবে ব্যয় করার অনুমতি নেই। কেননা, এভাবে পরে তার ঈমান হারা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
১০.সাধারণ অবস্থায় আয়ের চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধি করা অনুচিত।
সম্পদ সঞ্চয় ও সংরক্ষণের মাসায়েল
১. জরূরী দায়িত্ব আদায় করার পর সাধারণ অবস্থায় নিজের এবং নিজের সন্তানাদি ও পরিবারের জন্য কিছুটা সঞ্চয় রাখা উত্তম, যাতে পরে নিজেকে ও নিজের সন্তানাদিকে অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়। ( نظام وحیوۃ المسلمین اسلام کا اقتصادی)
২. সুদ ভিত্তিক ব্যাংকে টাকা রাখা জায়েয নয়। কারণ, এতে সুদ ভিত্তিক কারবারের অন্যায়ে সহযোগিতা করা হয়। তবে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলে বা অনন্যোপায় অবস্থায় সম্পদ সংরক্ষণের স্বার্থে রাখার অনুমতি রয়েছে।
৩. ব্যাংকের সুদের টাকা ব্যাংকে ছেড়ে দিয়ে আসা অন্যায়। কেননা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এটাকে সঠিক খাতে এবং মাসআলা অনুযায়ী ব্যয় করবে না বরং নিয়ম হল এ টাকা তুলে এনে গরীব মিসকীনদের মধ্যে (ছওয়াবের নিয়ত ছাড়া) বন্টন করে দিবে।
৪. ব্যাংকের সুদের টাকা জনকল্যাণ মূলক কাজে ব্যয় করা যায় না। (যেমন রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, মুসাফিরখানা নির্মাণ ইত্যাদি) বরং গরীব-মিসকীনকে প্রদান করতে হবে।
৫. বর্তমানে প্রচলিত ‘বীমা’ সুদ ও জুয়ার সমষ্টি বিধায় তা করানো জায়েয নয়। তবে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলে ভিন্ন কথা। জীবন বীমা করানো হলে বীমার মূল অর্থ মালিক বা তার ওয়ারিছগণ ভোগ করবে। বাকীটা সুদের অর্থের ন্যায় সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। (فتاوی رحیمیہ جر ۲ وفتاوی محمودیه جه/ ۴)
৬. সম্পদ সংরক্ষণের স্বার্থে চোর, ডাকাত প্রভৃতির নিকট সম্পদের কথা অস্বীকার করা জায়েয, এতে মিথ্যার গোনাহ হবে না। তবে এরূপ ক্ষেত্রে সরাসরি মিথ্যা না বলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলাই শ্রেয়।
৭. সম্পদ রক্ষার স্বার্থে কেউ নিহত হলে সে শাহাদাতের ছওয়াব লাভ করবে।
সমাপ্ত: ব্যাক্তিগত অর্থ সম্পদ, সঞ্চয় ও সংরক্ষণ সম্পর্কে মাসআলা মাসায়েল।
সূত্র: আহকামে জিন্দেগী।