বিষয়: ধার দেয়া নেয়া ও আমানতের আসআলা মাসায়েল।
হ্যাশট্যাগ: #ধার দেয়া নেয়া ও আমানতের আসআলা মাসায়েল।
আরিয়াত বা কোন বস্তু ধার দেয়া নেয়ার মাসায়েল
* বিনা ভাড়ায় ফেরত দেয়ার শর্তে কোন বস্তু দেয়া বা চেয়ে আনাকে ‘আরিয়াত’ বলে। যেমন পাকানোর জন্য কারও ডেগ চেয়ে নেয়া হল কিংবা পড়ার জন্য কারও বইপত্র আনা হল ইত্যাদি।
* আরিয়াত যিনি আনবেন তিনিই ব্যবহার করতে পারবেন। অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় মালিকের অনুমতি থাকলে অন্যকেও ব্যবহার করতে দেয়া যায় বা এমন লোককেও দেয়া যায় যার ব্যাপারে একীন থাকে যে, মালিক নিশ্চয় তার ব্যাপারে অনুমতি দিবেন কিংবা বস্তুটা যদি এমন হয় যা সকলেই সমানভাবে ব্যবহার করে থাকে কারও ব্যবহারে কোন তারতম্য ঘটে না, তাহলেও অন্যদেরকে ব্যবহার করতে দেয়া যায়। তবে মালিক যদি পরিষ্কার ভাষায় অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিতে নিষেধ করে তাহলে অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেয়া কোন অবস্থাতেই দুরস্ত হবে না।
* আরিয়াত দাতা (অর্থাৎ, বস্তুর মালিক) যদি উক্ত বস্তু ব্যবহারের জন্য বিশেষ কোন নিয়ম বা নির্দিষ্ট সময় বলে দিয়ে থাকে, তাহলে তার খেলাফ করা জায়েয নয়।
* আরিয়াতের বস্তু আমানতের মত, নিজের বস্তুর চেয়ে অধিক যত্ন ও হেফাজতের সাথে তা রাখা কর্তব্য। আরিয়াতের বস্তু পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন ও হেফাজত করা সত্ত্বেও যদি কোন প্রকারে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তার ক্ষতিপূরণ নেয়া যায় না। তবে সতর্কতা অবলম্বন না করলে বা হেফাজতে গাফিলতী করে থাকলে ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।
* ফসল করে খাওয়ার জন্য কাউকে জমি আরিয়াত দিলে ফসল পাকার পূর্বে জমি ফেরত চাইতে পারবে না। চাইলেও জমি ফেরত পাবে না। অবশ্য ইচ্ছা করলে সে দিন থেকে (যে দিন থেকে সে ফেরত চেয়েছে) ফসল পাকা পর্যন্ত দেশ রেওয়াজ অনুসারে জমির ভাড়া নিতে পারে। কেউ কারও ক্ষতি করতে পারবে না।
* আরিয়াতের বস্তু ওয়াদা মত ফেরত দেয়া কর্তব্য। অন্যথায় নষ্ট হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
(ছাফাইয়ে মোআমালাত ও বেহেশতী জেওর থেকে গৃহীত)
আমানতের মাসায়েল
* টাকা-পয়সা বা মাল-সামান আমানত রাখলে আমানতদারের উপর তার পূর্ণ হেফাজত করা ওয়াজিব।
* কেউ টাকা-পয়সা আমানত রাখলে অবিকল সেই টাকা-পয়সাই পৃথকভাবে হেফাজত করে রাখা ওয়াজিব- নিজের টাকার সঙ্গে মিশানো এবং ঐ টাকা থেকে খরচ করা জায়েয নয়। এরূপ করতে হলে মালিক থেকে অনুমতি নিতে হবে।
* আমানতের মাল পূর্ণ হেফাজত করা সত্ত্বেও নষ্ট হয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। আর হেফাজতে ত্রুটি করার কারণে নষ্ট হলে বা চুরি হলে কিংবা খোয়া গেলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
* কেউ কাপড়-চোপড়, হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, বই-পত্র অলংকার ইত্যাদি আমানত রাখলে মালিকের বিনা অনুমতিতে আমানতদারের পক্ষে তা ব্যবহার করা জায়েয নয়। গাভী আমানত রাখলে তার দুধ খাওয়া বা বলদ আমানত রাখলে তার দ্বারা জমি চাষ করানো মালিকের অনুমতি ব্যতীত জায়েয নয়।
* কেউ যদি বলে ভাই! এই মালটা দেখুন আমি আসছি, আর আপনি বলেন আচ্ছা ঠিক আছে, কিংবা চুপ থাকেন বা হাত দ্বারা সে বস্তুটা সামলে নেন, তাহলে আমানত রাখার হুকুম এসে যায়। যদি আমানত রাখতে অসুবিধা থাকে তাহলে এরূপ মুহূর্তে পরিষ্কারভাবে তাকে শুনিয়ে বলে দিতে হবে যে, না ভাই আমার ওজর আছে, আমি দেখতে/রাখতে পারব না।
* আমানতকারী যখনই তার মাল ফেরত চাইবে তখনই তার মাল তার নিকট ফেরত দেয়া ওয়াজিব, বিনা ওজরে ফেরত দিতে বিলম্ব করা জায়েয নয়।
* আমানতকারী নিজে না এসে অন্য কোন লোককে মাল ফেরত নেয়ার জন্য পাঠালে তাকে নিজের দায়িত্বে দেয়া যায়। পরে যদি মালিক অস্বীকার করে যে সে তাকে পাঠায়নি, তাহলে মালিক আপনার কাছ থেকে মাল আদায় করে নিতে পরবে। এরূপ মুহূর্তে একথাও বলা যায় যে, মালিক নিজে না আসলে আমি অন্য কারও কাছে দিব না।
* কেউ আমানত রাখলে সেটা লিখে রাখা আদব।
* যে অভাবী, তার জন্য কারও আমানত না রাখা উচিত। কেননা অভাব আমানতে খেয়ানতের বা অনিয়মের কারণ ঘটাতে পারে।
* আমানতদার নিজেই মালের হেফাজত করবে, নিজের কাছেই রাখবে পরিবারের মধ্যে স্ত্রীর কাছে, মায়ের কাছে, মেয়ের কাছে বা এরূপ অন্য কারও কাছে যাদের উপর তার পূর্ণ আস্থা আছে এবং যাদের কাছে সে নিজের টাকা-পয়সা সচরাচর রাখে এদের কাছেও আমানতের মাল রাখতে পারবে। এতদ্ব্যতীত অন্য কারও নিকট মালের মালিকের বিনা অনুমতিতে রাখতে পারবে না। রাখলে খোয়া গেলে ভর্তুকি দিতে হবে। বিশ্বস্ত বন্ধু-বান্ধব যাদের কাছে সে নিজের মালামাল রেখে থাকে তাদের কাছেও মালিকের বিনা অনুমতিতে রাখতে পারবে।
* মালিকের অনুমতি নিয়ে আমানতের মাল দ্বারা ব্যবসা করা যেতে পারে।
বিঃ দ্রঃ হেফাজতের সঙ্গে আমানত রেখে অন্যের উপকার করা অনেক ছওয়াবের কাজ ৷ কিন্তু আমানতে খেয়ানত করলে কবীরা গোনাহ হবে।
(বেহেশতী জেওর, ইসলামী ফিকাহঃ ৩য়, ছাফাইয়ে মোআমালাত থেকে গৃহীত)
সমাপ্ত: ধার দেয়া নেয়া ও আমানতের আসআলা মাসায়েল।
সূত্র: আহকামে জিন্দেগী।