মসজিদের অর্থ কড়ি, মসজিদ নির্মাণের পদ্ধতিঃ
* হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ মসজিদের কাজে ব্যয় করা জায়েয নয়। হালাল অর্থ দ্বারাই মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।
* অমুসলিমদের অর্থ মসজিদে গ্রহণ করা যায় দুইটি শর্তে।
(১) তাদেরধর্মে যদি এরূপ কাজকে পূণ্যের মনে করা হয়ে থাকে।
(২) অমুসলিমদের অর্থ গ্রহণ করলে যদি কোন ফেতনা ফাসাদের আশংকা না থাকে, যেমন পরবর্তীতে আবার তারা ফেরত নেয়ার দাবী করতে পারে বা এর জন্যে মুসলমানদের খোঁটা দিতে পারে এরূপ আশংকা না থাকলে।
* মসজিদের আকৃতি, ডিজাইন চিরাচরিত যেভাবে হয়ে আসছে সেভাবেই হওয়া জরূরী। এমন আকৃতি ও এমন ডিজাইনের মসজিদ নির্মাণ করা, যেটাকে সাধারণ লোক দূর থেকে দেখলে মসজিদ মনে করবে না, সেরূপ করা মাকরূহ ও গর্হিত। আর অমুসলিদের উপসনালয়ের আকৃতি ও ডিজাইনে মসজিদ নির্মাণ করা সম্পূর্ণ হারাম। এরূপ আকৃতির মসজিদ ভেঙ্গে দেয়া বা তাতে সংযোজন সাধন করে মসজিদের চিরাচরিত রূপের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে দেয়া ওয়াজিব।
* নাম শোহরতের উদ্দেশ্যে পাথরে খোদাই করে মসজিদ নির্মাণকারীর নাম লাগানো দুরস্ত নয়। তবে যদি এই উদ্দেশ্যে লাগানো হয় যে, এটা দেখে নির্মাণকারীর কথা মানুষের স্মরণ হবে এবং তার জন্য দোয়া করা হবে, তাহলে তা জায়েয।
* মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন রুম থাকলে তাতে যাওয়ার জন্য পৃথক রাস্তা রাখতে হবে। মসজিদকে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা অনুচিত হবে। তবে এরূপ হয়ে গেলে ভিন্ন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। ( فتاوی رحیمی جه/۲)
* মসজিদের ভিতরে কেবলার দিকের দেয়ালে নকশা ইত্যাদি করা মাকরূহ। ভিতরে অন্য দিকের দেয়ালে বা বাইরে করা যায়, যদি কেউ এই উদ্দেশ্যেই অর্থ দিয়ে থাকেন। সামনের দেয়ালেও নামাযের সময় মুসল্লীর নজরে আসে না-এ রকম উপরে করা যায়।
* মসজিদের ইনকামের জন্যে মসজিদের কম্পাউণ্ডে মেছ বা ভাড়ার বাসাতৈরী করা যায়, যদি তাতে মসজিদের ভাবগাম্ভীর্য ও হৈ চৈ-এর কারণে মসজিদের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশংকা না থাকে।
* মসজিদের আয় উপার্জনের স্বার্থে অতিরিক্ত স্থানে দোকান ঘর তেরী করে তা ভাড়া দেয়া জায়েয। তবে যে স্থানে একবার মসজিদ হয়েছে তা ভেঙ্গে সেখানে দোকান/ঘর তৈরি করা জায়েয নয়।
* বেতনভুক্ত মুদাররিছের জন্য মসজিদে (কুরআন/কিতাব-এর) তা’লীম দেয়া জায়েয নয়। তবে বাইরে কোন জায়গা না থাকলে নিম্নোক্ত শর্তাবলী সাপেক্ষে পড়ানো জায়েয ৷
(১) মুদাররিছ বেতনের লোভের পরিবর্তে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় বেতন/ভাতা নেয়ার উপর ক্ষান্ত করবে।
(২) উক্ত তা’লীম নামায, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদতের ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না।
(৩) মসজিদের আদব ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
(৪) অবুঝ বাচ্চাদের মসজিদে আনবে না।
মসজিদের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত মাসায়েল
* ওয়াক্ফের জন্য রেজিষ্ট্রেশন জরূরী নয়।
* মসজিদের ব্যবস্থাপনার জন্য বেতন/ভাতার কথা ওয়াক্ফ নামায় উল্লেখ থাকলে এবং বিনা বেতন/ভাতায় শুধু আল্লাহর ওয়াস্তে করার মত কোন লোক বা ট্রাষ্টি বোর্ড না থাকলে ব্যবস্থাপনাকারীদের জন্য বেতন/ভাতা নির্ধারণ করার অনুমতি রয়েছে।
* মুতাওয়াল্লী/মসজিদ কমিটির দায়িত্ব ইমাম মুয়াজ্জিনদেরকে প্রয়োজন ও যোগ্যতা অনুসারে বেতন/ভাতা প্রদান করা। এ দায়িত্বে ত্রুটি করলে খোদার নিকট তাদেরকে জবাবদিহী করতে হবে।
* ওয়াক্ফ সম্পত্তি বদল করা জায়েয নয়।
* ওয়াক্ফ সম্পত্তি বিক্রয় করা জায়েয নয়। তবে সাময়িক প্রয়োজনে কোন আসবাব ক্রয় করে থাকলে প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার পর তা বিক্রয় করা জায়েয।
* মসজিদের ওয়াক্ফ সম্পত্তি প্রয়োজনে ভাড়া দেয়া বা জমি হলে তাতে চাষাবাদ করা জায়েয।
* এক ওয়াক্ফের সম্পত্তি অন্য ওয়াক্ফে দান করা জায়েয নয়। তবে ওয়াক্ফনামায় উল্লেখ থাকলে জায়েয।
* ওয়াক্ফনামায় উল্লেখ থাকলে বা ওয়াক্ফ/দানকারীর অনুমতি থাকলে এবং এখানে প্রয়োজন না থাকলে এক ওয়াক্ফের অর্থ অন্য ওয়াকফের ঋণ দেয়া যায়।
* ওয়াক্ফ সম্পত্তির অর্থ স্কুল কলেজ প্রভৃতি দুনিয়াবী শিক্ষায় ব্যয় করা জায়েয নয়।
* মসজিদের লোটা (বালতি ইত্যাদি) মসজিদের বাইরে ঘরে নিয়ে যাওয়া বা উযূ, ইস্তেজা, গোসল ব্যতীত ব্যক্তিগত অন্য কাজে ব্যবহার করা জায়েয নয়।
* মুতাওয়াল্লী বা কমিটি মসজিদের টাকা-পয়সা ইত্যাদি হক মাফ করার অধিকার রাখে না।
* ওয়াফকারী/দানকারীর স্পষ্ট বর্ণনা বা অনুমতি ব্যতীত ওয়াক্ফ/দানকৃত সম্পদ থেকে মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করা বৈধ নয়।
* ই’তেকাফকারী ও এমন মুসাফির, যার কোন ঠিকানা নেই তারা মসজিদে শয়ন ও পানাহার করতে পারে। জরূরত হলে অন্যদের জন্যও শয়ন এবং পানাহার করা জায়েয। তবে মুসাফির ও অন্যরা (নফল) ইতেকাফের নিয়ত করে নিবে।
* মসজিদে কেরোসিন তেল বা দুর্গন্ধযুক্ত কিছু জ্বালানো নিষেধ। এমনকি ম্যাচ জ্বালানোও নিষেধ। দুর্গন্ধযুক্ত মশার কয়েল জ্বালানোও মাকরূহ।
* স্বাভাবিক নামাযের সময় ব্যতীত অন্য সময় বিশ্রাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে মসজিদের পাখা চালানো উচিত নয়।
* মসজিদের কুরআন শরীফ বিক্রি করা জায়েয নয়, আবার তিলাওয়াত বিহীন ফেলে রাখাও ঠিক নয়। এজন্যে অতিরিক্ত কুরআন শরীফ মসজিদে রাখবে না। যদি দানকারীকে বলা হয় যে, এখানে কুরআন শরীফ দান করলে প্রয়োজনের অতিরিক্তগুলো বিক্রি করে দেয়া হবে। এরপরও সে দান করে তাহলে সেরূপ অতিরিক্তগুলো বিক্রি করে দেয়া জায়েয হবে।
* মসজিদ অনাবাদ/বিরান হয়ে গেলেও কিয়ামত পর্যন্ত সে স্থান মসজিদের হুকুমে থাকবে এবং মসজিদের ন্যায় তার সম্মান ও আদব রক্ষা করা ওয়াজিব থাকবে।
মাদ্রাসা সম্পর্কিত নীতিমালা ও মাসায়েল
* মাদ্রাসার গঠনতন্ত্র রচিত হয়ে থাকলে সে অনুযায়ী মাদ্রাসা পরিচালনা করা জরুরী। অন্যথায় অন্যান্য মাদ্রাসার প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসা চালানো হবে।
* মাদ্রাসা ওয়াক্ফ সম্পত্তি হলে ওয়াক্ফ সম্পত্তির মাসায়েল অনুযায়ী মাদ্রাসা পরিচালনা করতে হবে।
* মাদ্রাসার টাকা কর্জ দেয়া জায়েয নয়। মুহতামিম এরূপ করলে তিনি ফাসেক, তাকে পদচ্যুত করা ওয়াজিব এবং ঐ টাকার দায়-দায়িত্ব তার। (احسن الفتاوی جه/ ۲ فتاوی محمودیت جه/ ۱)
* মাদ্রাসার টাকা/পয়সা নিজের জন্য কর্জ নেয়াও জায়েয নয়।
* দানকারী/ওয়াক্ফকারীর স্পষ্ট বর্ণনা বা অনুমতি ব্যতীত মাদ্রাসার টাকা-পয়সা দ্বারা মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করানোর শরী’আতে অনুমতি নেই। মাদ্রাসার জলসা প্রভৃতিতে আপ্যায়নের ক্ষেত্রেও এই মাসআলা। আপ্যায়নের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য এই নামে স্বতন্ত্রভাবে কালেকশন করে নেয়া যেতে পারে ৷
* মুসাফিরখানার ন্যায় মাদ্রাসার বস্তু, মাদ্রাসার গোসলখানা প্রভৃতি ব্যবহার করা বৈধ নয়। যারা দুই এক দিনের জন্য মেহমান হিসেবে আসেন তারা ব্যবহার করতে পারেন।
* মসজিদের নামে ওয়াক্ফকৃত স্থানে মাদ্রাসা বানানোর অনুমতি শরী’আতে নেই, তবে ওয়াক্ফকারী/দানকারীর নিয়ত থাকলে এবং তার অনুমতি থাকলে বানানো যায়, কিংবা মসজিদের অর্থে ইমারত নির্মাণ করে মাদ্রাসার নিকট ভাড়া দেয়া যায়।
* মসজিদে অমুসলিমদের চাঁদা গ্রহণের যে শর্ত, মাদ্রাসায় অমুসলিমদের চাঁদা গ্রহণের বেলায়ও সে শর্ত।
* সরকার যদি প্রতিশ্রুতি দেয় যে, আমরা সাহায্য করে কোনভাবে মাদ্রাসায় হস্তক্ষেপ করব না, তাহলে মাদ্রাসার জন্য সরকারী সাহায্য গ্রহণ করা জায়েয।
* যাকাতের অর্থ দ্বারা ইমারত নির্মাণ করা বা মুদাররিছদের বেতন/ভাতা প্রদান করা জায়েয নয়। নিতান্ত ঠেকাবশতঃ এ অর্থ দ্বারা বেতন/ভাতা দিতে হলে হীলা করে নিতে হবে।
* সাধারণতঃ যে পদ্ধতিতে হীলা হয়ে থাকে যে, একজন গরীব ছাত্র বা কর্মচারীকে ডেকে বলা হয় যে, আমি তোমাকে কিছু যাকাতের টাকা প্রদান করছি, তুমি সেটা মাদ্রাসায় দান করে দিবে। সে বলে আচ্ছা। এরপর তাকে যাকাতের টাকা দেয়া হয় এবং সে তা মাদ্রাসায় দান করে দেয়। হযরত থানবী (রহঃ) বলেছেন এতে হীলা সহীহ হয় না, কেননা এভাবে সে নিজেকে উক্ত টাকার মালিকই মনে করে না, সে উক্ত টাকা রেখে দেয়ার অধিকারই বোধ করে না বরং সে উক্ত টাকা ফেরত দিতে নিজেকে বাধ্য মনে করে-নিজেকে স্বাধীন মনে করতে পারে না। তাহলে তাকে উক্ত টাকার মালিক বলা যায় না। আর মালিক না হলে হীলায়ে তামলীক হবে কি ছাই! হযরত থানবী (রহঃ) বলেছেন : কাউকে বলা হবে : তুমি কারও থেকে এত টাকা ঋণ নিয়ে মাদ্রাসায় দান কর, আমরা তোমার ঋণ পরিশোধের জন্য তোমাকে (যাকাতের) অর্থ প্রদান করব। তারপর সে ঋণ করে মাদ্রাসায় দান করলে মাদ্রাসার যাকাতের অর্থ থেকে তাকে উক্ত পরিমাণ প্রদান করা হবে এবং তা দ্বারা সে ঋণ পরিশোধ করবে। টাকা হাতে পেয়ে সে ঋণ পরিশোধ করতে না চাইলে তার থেকে জোর পূর্বকও ঋণদাতা নিয়ে নিতে পারবেন। এরূপ ঋণ দেয়ার জন্য স্বতন্ত্র কিছু টাকা রাখা যেতে পারে।
* ওয়াক্ফকারী/দানকারী নির্দিষ্টভাবে কোন মাদ্রাসার জন্য কুরআন/কিতাব ওয়াক্ফ/দান করে থাকলে তা স্থানান্তরিত করা জায়েয নয়। (احسن الفتاوی ج 1)
* এক মাদ্রাসার মাল-সামান অন্য মাদ্রাসায় স্থানান্তরিত করা জায়েয নয়। (احسن الفتاوی جه/۲)
* মাদ্রাসার মুস্তামিম/কমিটির দায়িত্ব মুদাররিছদের যোগ্যতা ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে বেতন/ভাতা প্রদান করা। এ দায়িত্বে ত্রুটি করলে খোদার নিকট তাদেরকে জবাবদিহী করতে হবে।
* মাদ্রাসার মুদাররিছ রমযান মাসে মাদ্রাসার কাজ না করলেও রমযানে যে বন্ধ থাকে তাতে সে বেতন/ভাতা পাবে, যদি শাবান মাসেই সে চাকুরীচ্যুত না হয়ে থাকে এবং শাওয়াল মাসে মাদ্রাসার কাজ করে।
* অসুস্থতা এবং ছুটি কাটানোর দিনগুলোতে বেতন পাবে কি-না এ সম্পর্কে মাসআলা হলঃ যদি চাঁদা দাতাদের স্পষ্ট বিবরণ বা লক্ষণ থেকে এ ব্যাপারে সম্মতি বুঝা যায়, তাহলে চাঁদার অর্থ থেকে উক্ত দিনগুলোর বেতন দেয়া জায়েয। অন্যথায় জয়েয নয়। চাঁদা দাতাগণ যদি মুত্তামিমকে কিছু অধিকার দিয়ে থাকেন (স্পষ্টভাবে হোক বা হাবভাবে) এবং সে অধিকার বলে তিনি এরূপ মুহূর্তের বেতন/ভাতার ব্যাপারে কিছু শর্ত আরোপ করেন, তাহলে সেই শর্ত অনুযায়ী এরূপ মুহূর্তের বেতন/ভাতা গ্রহণ করা জায়েয। যদি স্পষ্ট সম্মতি না পাওয়া যায় কিংবা যদি শর্ত নিরূপিত না হয়ে থাকে কিন্তু মাদ্রাসার নিয়মাবলী লিপিবদ্ধ ও সুবিদিত থাকে, তাহলে সে নিয়মাবলী অনুযায়ী কাজ হবে। আর যদি স্পষ্ট সম্মতি বা নিয়মাবলী রচিত ও সুবিদিত না থাকে তাহলে অন্যান্য মাদ্রাসার সুবিদিত নিয়মাবলীর অনুসরণ করা হবে। আর যদি এই আমদানী কোন ওয়াক্ফ সম্পত্তির থেকে হয়ে থাকে তাহলে তার হুকুম ভিন্ন৷ (امداد الفتاوی جه/۳)
* মাদ্রাসার মুদাররিছ বিশেষ কর্মচারী, অতএব চাকুরীজীবিদের প্রসঙ্গে এবং শ্রমনীতি সম্পর্কে যে সব মাসায়েল বর্ণনা করা হয়েছে, মুদাররিছদের বেলায়ও সেগুলো প্রযোজ্য হবে।
মসজিদ মাদ্রাসা প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা ধর্মীয় কাজের জন্য চাঁদা কালেকশনের মাসায়েল
* কমিশনের ভিত্তিতে চাঁদা কালেকশন করা বা করানো জায়েয নয়। (احسن الفتاوی جه/ ۲ – فتاوی محمودیۃ جہرا اور العلم والعلماء)
* লোকজনের সামনে নির্দিষ্ট করে সম্বোধনপূর্বক কারও নিকট চাঁদা চাওয়া হলে বাহ্যতঃ সে চাপের মুখে বা লজ্জায় পড়ে দিয়ে থাকে- স্বেচ্ছায় খুশি মনে দেয় না। আর খুশি মনে না হলে কারও নিকট থেকে চাঁদা নেয়া জায়েয নয়। (৭/r6,lly7) লজ্জায় ফেলে চাঁদা উসূল করা গোনাহ। (%, এস)
* চাঁদা চাওয়ার সহীহ নিয়ম হল- নির্দিষ্টভাবে সম্বোধন করা ব্যতীত সাধারণভাবে উৎসাহিত করা হবে; এতে যে দিবে তার থেকেই নেয়া হবে। (احسن الفتاوی جه/ ۲)
* হারাম মাল বা হারাম টাকা/পয়সা চাঁদায় গ্রহণ করা যাবে না।
* চাঁদা উসূল করার একটা শর্ত হল নিজেকে অপমানিত হতে হয় এমন পন্থায় চাঁদা উসূল করা যাবে না। অপমানিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেরূপ পন্থায় চাঁদা করা জায়েয নয়।
* চাঁদা প্রদানের জন্য উৎসাহিত করা জায়েয কিন্তু চাপ সৃষ্টি করা বা নাছোড় হয়ে চাওয়া জায়েয নয়।
* চাঁদা উস্লকারী যদি বুঝতে পারেন যে, তার চাপাচাপির কারণেই চাঁদা দেয়া হচ্ছে, তাহলে তার জন্য সে চাঁদা গ্রহণও জায়েয নয় এবং দাতার জন্যও দেয়া জায়েয নয়।
* ওয়াজ বয়ান ও কথার যাদুতে মানুষ যখন অনেকটা বেহুঁশের মত হয়ে চাঁদা প্রদান করে, সে মুহূর্তের চাঁদা গ্রহণও জায়েয নয় এবং দাতার জন্য দেয়া জায়েয নয়।
* ওয়াজ বয়ান ও কথার জাদুতে মানুষ যখন অনেকটা বেহুঁশের মত হয়ে চাঁদা প্রদান করে, সে মুহূর্তে চাঁদা গ্রহণ করা ঠিক নয়। তার স্বাভাবিক অবস্থা হওয়ার পর যা দিবে তা গ্রহণ করবে।
* চাঁদা উসূলকারী চাঁদা প্রদানকারীর জন্য দু’আ করে দিবে, তবে চাঁদা প্রদানকারী দু’আর জন্য আবেদন করবে না। (৮৬%, এ
* চাঁদা চাওয়ার ক্ষেত্রে এস্তেগনা তথা আৱমর্যাদা রক্ষা করে চাওয়া উচিত।
* মুতাওয়াল্লী/ব্যবস্থাপক কোন দ্বীনী মাসলেহাতের ভিত্তিতে কারও চাঁদা গ্রহণ নাও করতে পারেন।
কবরস্থান সম্পর্কিত মাসায়েল
* কবরস্থানের শুষ্ক ঘাস কাটা জায়েয আছে। কাঁচা ও তাজা ঘাস কাটা মাকরূহ; তবে রাস্তা ঘাট পরিষ্কার রাখার প্রয়োজনে কাটা যায়।
* ওয়াক্ফকৃত কবরস্থানের অপ্রয়োজনীয় গাছপালা কেটে তা কাউকে বিনামূল্যে দিয়ে দেয়া জায়েয নয় বরং তা বিক্রি করে কবরস্থানের উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্নতার কাজে লাগাতে হবে। এ কবরস্থানে প্রয়োজন না থাকলে পার্শ্ববর্তী অন্য কবরস্থানে লাগানো হবে।
* গাছ ব্যতীত শুধু জমি কবরস্থানের জন্য য়াক্ফ করলে গাছের মালিক ওয়াক্ফদাতা। আর কেউ গাছ লাগালে তার মালিক সে। আপনা আপনি যে গাছ জন্মায় তা ওয়াক্ফ সম্পত্তির ৷
* যে স্থানে কবর নেই সেখানে জুতা/স্যাণ্ডেল পায়ে দিয়ে হাঁটতে কোন অসুবিধা নেই। কবরের উপর দিয়ে জুতা/স্যাণ্ডেল পরে চলা দ্বারা কবরের বেহুরমতী (অমর্যাদা) হয়ে থাকে।
ঈদগাহ সম্পর্কিত মাসায়েল
* ঈদগাহ প্রায় মসজিদের ন্যায় হুকুম রাখে। মসজিদের ন্যায় ঈদগাহের আদব, এহতেরাম রক্ষা করা চাই।
* ঈদগাহে খেলা-ধূলা করা উচিত নয়।
* ঈদগাহে স্কুল বানানো জায়েয নয়।
* ঈদগাহের জন্য ওয়াক্ফকৃত জমিতে মাদ্রাসা বানানো জায়েয নয়।
মুতাওয়াল্লী, মুত্তামিম এবং মসজিদ/মাদ্রাসা কমিটির গুণাবলী ও দায়িত্ব কর্তব্য
* মুতাওয়াল্লী/ব্যবস্থাপককে মুসলমান হতে হবে। কোন অমুসলিমকে এ পদে নিয়োগ করা জায়েয নয়।
* মসজিদ মাদ্রাসার মুহতামিমকে দ্বীনদার, আমানতদার, বিশ্বস্ত ও শরী’আতের পাবন্দ হতে হবে। অন্যথায় তাকে মুতাওয়াল্লী বা মুতামিম বানানো ঠিক নয়।
* বে নামাযী বা ফাসেককে মুতাওয়াল্লী বানানো জায়েয নয়। (فتاوی محمودیه جه/ ۲)
* মুতাওয়াল্লী-র মধ্যে প্রশাসনিক দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকা জরূরীG
* মুতাওয়াল্লী-র জন্য আকেল ও বালেগ হওয়া শর্ত। পুরুষ হওয়া বা অন্ধ না হওয়া শর্ত নয়। (জীবন্ত মসজিদ)
* মুতাওয়াল্লীর ক্ষমতা শরী’আতের আইনের সীমার দ্বারা সীমাবদ্ধ- শরী’আতের বাইরে যথেচ্ছা ব্যবহার করার বা যথেচ্ছা খরচ করার অধিকার তার নেই।
* মাদ্রাসার মুহতামিম আলেম হওয়া চাই। শুধু আলেম নয় আলেমে বা-আমল হওয়া চাই। আলেম না হলেও অন্ততঃ আলেমে বা-আমলের সুহবত প্রাপ্ত হওয়া চাই। (মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার বংশে কোন যোগ্য আলেম থাকলে সে-ই পরবর্তীতে মুহতামিম হওয়ার অধিক হকদার)
ওয়াক্ফ সম্পত্তিতে নাজায়েয হস্তক্ষেপ করনেওয়ালা (মুতাওয়াল্লী, মুহতামিম ও কমিটি)-কে পদ থেকে বরখাস্ত করা ওয়াজিব-না করা গোনাহ।
যার শরীরের মাংস হারামের দ্বারা উৎপন্ন, সে জান্নাতে যাবে না, জাহান্নামের আগুনই তার জন্য উপযুক্ত। (শুআবুল ঈমান ও মুসনাদে আহমদ)।
সূত্রঃ আহকামে যিন্দেগী।