মুরগির জাত পরিচিতিঃ
আজকের খামারিয়ান এর এই পর্বে আমরা আপনার করা কয়েকটি প্রশ্ন যেমন-মুরগির জাত কি কি? দেশি মুরগি চেনার উপায়, একটি দেশি মুরগি বছরে কতটি ডিম দেয়? কোন মুরগি কত দিনে ডিম দেয়? কোন জাতের মুরগি বেশি ডিম দেয়? সমূহরে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব ইংশাআল্লাহ। আশা করি খামারিয়ান এর সাথেই থাকবেন।
ক. দেশি মুরগি চেনার উপায়
১. দেশি আসীল মুরগি
নামটা এসেছে ‘আসল’ শব্দ থেকে। আমাদের আবহাওয়ায় পালিত খাঁটি দেশি মুরগির বংশ- তালিকার হিসাব নেই, নেই নির্দিষ্ট কোন মান। তবে কেবল মাংসের জন্যে এই জাতের মুরগি পালন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক উপায়ে পালন ও প্রজনন হওয়াতে এই জাতটি এখন বেশ উন্নত মানের। আকারে এই জাতের মুরগি বেশ বড় হয়। দেহের গঠন বলিষ্ঠ, তেজোদীপ্ত চেহারা তাজা ভাব, শরীর খাড়া এবং দৃঢ়। পা দুটি লম্বা, সেই সাথে গলাও। মাথা বেশ চওড়া, একদিকের হাড়টা সামান্য উঁচু। কানের লতি খুবই ছোট। গলার ফুলও বিদেশি মুরগির তুলনায় বেশ ছোট দেখায়।
এদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো মাথায় লম্বা ঝুঁটি থাকে না। যা থাকে তাকে ‘মটর ঝুঁটি’ বলে। বুক এবং পাছায় পালক কম। গায়ের পালক বেশ শক্ত। পালক কম থাকায় ফাঁক দিয়ে গায়ের চামড়া দেখতে পাওয়া যায়। পালকে হরেক রকম রং। ল্যাজের পালক বেশ ছোট এবং মাটির দিকে ঝোলানো থাকে।
এদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো মাথায় লম্বা ঝুঁটি থাকে না। যা থাকে তাকে ‘মটর ঝুঁটি’ বলে। বুক এবং পাছায় পালক কম। গায়ের পালক বেশ শক্ত। পালক কম থাকায় ফাঁক দিয়ে গায়ের চামড়া দেখতে পাওয়া যায়। পালকে হরেক রকম রং। ল্যাজের পালক বেশ ছোট এবং মাটির দিকে ঝোলানো থাকে।
দেশি মুরগি গড়ে কম ডিম পাড়ে। তুলনায় আকারেও বেশ ছোট। কাজেই মান উন্নত হলেও আসীল মুরগির ডিম সংখ্যায় অথবা আকারে এখনও বাড়েনি। একটি পূর্ণবয়স্ক মুরগি থেকে গড়ে দুই কেজি মাংস পাওয়া যায়। এরা জন্মাবার সাথে-সাথে অত্যন্ত ক্ষীণ ও দুর্বল হয়। বিশেষভাবে যত্ন না নিলে বাঁচানো শক্ত। তাছাড়া অন্যান্য জাতের বিদেশি মুরগির সাথে এদের পালন করা উচিত নয়। প্রায় সব শস্য-গম, ধান, চালের খুদ, বজরা, জোয়ার, ভুট্টা ফেলে দেওয়া শাক-পাতা সবই এদের খাদ্যের মধ্যে পড়ে।
২. দেশি চাটগাঁয়ে মুরগি
চাটগাঁয়ের যে মুরগি আমরা পালন করি তা প্রথমে আমাদের দেশে আসে মালয় থেকে। ক্রমে আসামের পার্বত্য অঞ্চলে ও আজকের বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে পালনের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে চাটগাঁয়ে মুরগি নামেই আমাদের কাছে পরিচিত। আসীল মুরগির সাথে এর পার্থক্য হলো সারা বছরে ডিম পাওয়া যায় একশোর কিছু বেশি। বাকী সবই প্রায় এক। মাংসের জন্য এই জাতের মুরগি পালনের রেওয়াজ খুব বেশি। খাদ্য দিয়ে ঠিকভাবে লালন-পালন করতে পারলে ওজন বেড়ে দুই থেকে তিন কেজি হয় এবং এদের মাংস খুবই সুস্বাদু। লম্বা গলা, আকারে বড়, মাথায় ‘মটর ঝুঁটি’, কানের লতি ছোট এবং লাল, লম্বা পা এবং লেজের পালক মাটির দিকে ঝুলে থাকে। মুরগির চেয়ে মোরগের দেহের গঠন সামান্য বেঁটে এবং গলার ফুল লাল ও আকারে ছোট। এই জাতের মুরগি ডিমে সহজে তা দিতে চায় না। আসীল মুরগির মতো বাচ্চারা তিন মাস বয়স পর্যন্ত খুবই দুর্বল থাকে। তারপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরা সবল হয়ে উঠতে থাকে। বিদেশি কোনো জাতের বাচ্চার সাথে এই জাতের বাচ্চা পালন করা উচিত নয়। বদ্ধ জায়গায় না রেখে ছেড়ে দিলে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। ভিজে এবং স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাখলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এবং দেহের বাড়ও ভালো হয় না। অসুবিধা হলে সহ্য করতে পারে এবং নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ওরা বেঁচে থাকে। খামারে বাচ্চা পালন করার ভালো সময় ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস। অবশ্য অনেকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পালনের জন্য বাচ্চা সংগ্রহ করে।
দেশি মুরগি পালনের কতিপয় বিষয়
এই মুরগি খামারে পালন করতে হলে বিশেষ ধরনের কয়েকটি জাতকে বেছে নিয়ে পালন করা দরকার। ডিমের থেকে সুস্বাদু মাংসের জন্য খামারে পালন করা হয়ে থাকে। আবদ্ধ অবস্থায় না রেখে ছেড়ে দিয়ে পালন করলে দেহের বাড় ভালো ৷ বাচ্চাকে তিন মাস পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে এবং অন্য জাতের বাচ্চার সাথে পালন করা উচিত নয়। বাচ্চাকে শুকনো এবং খট্খটে জায়গায় রাখা দরকার। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাস পালনের উপযুক্ত সময়। নিজেদের খাবার নিজেরা যোগাড় করলেও কিছু পুষ্টিকর খাবার রোজ দেওয়া ভালো।
খ. বিদেশি মুরগি
পৃথিবীর নানা দেশে বিভিন্ন ধরনের মুরগি পালন করা হচ্ছে। তাদের দেহের গঠন, স্বভাব, বর্ণ সবই প্রায় আলাদা। দেশভেদে যে পার্থক্যের কথা সেটা খুব সহজেই ধরা যায়। আমেরিকার একটা মুরগি এবং বাংলাদেশের একটা দেশি মুরগি পাশাপাশি রাখলে চেহারার পার্থক্য যে-কোনো লোকের চোখে ধরা পড়বে।
১. ব্রোমা
এই জাতের মুরগির আদি বাসস্থান ভারতের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, একথা সকলেই স্বীকার করে থাকেন। আদি বাসস্থান ভারতে হলেও আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রচুর গবেষণার ফলে শোচনীয় অবস্থা থেকে এদের মান এতটা উন্নত করা সম্ভব হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত না জার্সি ব্ল্যাক জায়েন্ট নামে এক জাতের নতুন ভারী মুরগি সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছিল ততদিন পর্যন্ত ওজন এবং আকারের জন্য একে বলা হ’ত ‘রাজা মুরগি।’ প্রতি মোরগ গড়ে ৪ কেজি এবং মুরগি ৩ কেজি হয়ে থাকে।
২. কোচিন
কোচিন জাতের মুরগির আদি বাসস্থান চীনদেশের অন্তর্গত সাংহাই অঞ্চলে। আগে এদের কোচিন চায়না বলা হ’তো। বর্তমানে কেবল কোচিন নামেই পরিচিত। এই জাতের মুরগির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, সারা দেহ বেশি পালক দিয়ে ঢাকা থাকে। ফলে আসল ওজনের থেকে অনেক বেশি ওজন বলে মনে হয়। পোষ মানে এবং ভালো ডিমও দেয়। বাচ্চা পালনের জন্যে এদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কারণ একসাথে বহু বাচ্চা লালন-পালন করে। তবে বড় চেহারা এবং শরীর জবুথবু ভাবের জন্য দেহের চাপে শাবকরা অনেক সময় মরে যায়। চারটি জাতের মধ্যে কোনোটাই বাণিজ্যিক খামারে পালন করা হয় না। তবে সৌখিন মানুষরা সখ মেটাতে দু-চারটে পালন করে থাকে। এই জাতের স্বাভাবিক গড় ওজন মোরগ ৪ কেজি এবং মুরগি ৩ কেজি ককরেল ৩ কেজি এবং পুলেট ৩ কেজি হয়।
৩. ল্যাঙসহ্যানস
এরাও চীনদেশী মুরগি। ল্যাঙসহ্যানস জেলার ইয়াংটসি-কিয়াং উপত্যকায় জন্ম। ভ্যারাইটির মধ্যে কালোটি হচ্ছে আসল। মা হিসাবেও ভালো। কারণ ডিমে তা দেয় এবং প্রচুর সংখ্যায় বাচ্চা পালন করে থাকে। যদিও এই জাতের মুরগি খামারে লোকে পালন করে কেবল মাংসের জন্যে, তবুও বলা যায় ডিম এবং মাংস উভয়বিধ উদ্দেশ্যই সফল হয়। কোচিনের তুলনায় দেহ লম্বায় বড় এবং সবল স্বাস্থ্য। পা লম্বায় ছোট, হাঁটু থেকে পা পর্যন্ত ছোট-ছোট পালকে ঢাকা। মাথা ও লেজ খাড়া বলে পিঠ ছোট দেখায়। সারা দেহের পালক খুব মসৃণ হয়। এদের স্বাভাবিক ওজন হলো মোরগ ৩.৫ কেজি এবং মুরগি ৩ কেজি হয়ে থাকে।
৪. লেগহর্ণ
ইটালীর লেগহর্ণ নামক জায়গায় এর পালন শুরু হয়েছিল বলে এই জাতের নাম লেগহর্ণ হয়েছে। আদি জন্মস্থান ইটালী হলেও আমেরিকায় এদের বিশেষ উন্নতি হয়েছে। যতদূর জানা গেছে, রেড পাইল ফিমেলের সাথে জাপানীজ মেলগেমের সংকরতা ঘটিয়ে লেগহর্ণের জন্ম হয়েছে।
এদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির আরও একটি মূল কারণ হলো সুন্দর এবং চিত্তাকর্ষক চেহারা। চটপটে ভাব, দেহের চমৎকার বক্রতা, রাজকীয় চাল-চলন এবং বিভিন্ন আবহাওয়ায় খাপ খাইয়ে নেবার ক্ষমতা। সামান্য পরিশ্রমে অসংখ্য ডিম পাওয়ায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতেও বড় খামারের জন্যে এই জাতের মুরগির কথাই পালনকারী প্রথমে ভেবে দেখে।
কালো লেজওয়ালা লাল ঝুঁটি এবং সাদা ঝুঁটি এই জাত দুটির মধ্যে সাদা ঝুঁটিই হলো সব থেকে জনপ্রিয়। সাদা লেগহর্ণের মধ্যে এই দু টো হলো আলাদা জাতের। একটি ইংলণ্ডীয় এবং অপরটি আমেরিকান। এক ঝুঁটি জাতের মধ্যে মোরগের ঝুঁটি খাড়া এবং করাতের মতো দাঁত রয়েছে। জনপ্রিয়তার গোলাপী ঝুঁটি লেগহর্ণ দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। চেহারা এবং অন্যান্য দিক থেকে বিচার করলে বিশেষ তফাত চোখে পড়ে না। কেবলমাত্র ডিমের জন্যে এদের পালন করা হয়। চার-পাঁচ হাত পর্যন্ত উড়তে পারে বলে খামারের বেড়া সেই অনুপাতে উঁচু করা দরকার। যদি দেখা যায় দলের কোনো মুরগির মধ্যে ডিমে তা দেবার প্রবণতা দেখা দিয়েছে সাথে সাথে তাকে দল থেকে আলাদা করে দেওয়া উচিত। এদেশের পক্ষে লেগহর্ণ সব থেকে উপযুক্ত মুরগি। মুরগি বেশি ডিমের জন্য এবং মোরগ মাংসের জন্যে।
৫. এ্যাণ্ডালুসিয়ান
কেউ বলে এ্যাণ্ডালুসিয়ান, আবার কেউ বলে নীল এ্যাণ্ডালুসিয়ান। নামের আগে নীল শব্দটি যোগ করার কারণ হলো ডানায় রয়েছে নীল রং এবং এটা জাতের বৈশিষ্ট্য। এই জাতের মুরগি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় সব দেশেই সর্বাপেক্ষা বেশি পালন করতে দেখা যায়। দেহের গঠনের দিক থেকে লেগহর্ণ এবং মিনোর্কাসের মাঝামাঝি। এদের মধ্যে আরও তিনটি শ্ৰেণীতে এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। তবে একটি ভ্যারাইটি নির্দিষ্ট মানের-গায়ের চামড়ার রং সাদা। এদের প্রকৃতি লেগহর্ণের সাথে অনেকটা মিলে যায়। এই জাতটি নির্দিষ্ট মানের এবং খামারে পালনের জন্যে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ ছাড়াও রয়েছে আরও তিনটি জাতের নির্দিষ্ট মানের মুরগি- (১) স্প্যানীশ, (২) সিলিক্যান ফ্লাওয়ার কাপ, (৩) সিলিক্যান বাটার কাপ। গুণাগুণের বিচারে সামান্য পার্থক্য থাকলেও বাকী সবই প্রায় এক।
৬. রোড আইল্যাণ্ড রেড
জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিচার করলে লেগহর্ণের পর এই জাতের স্থান। এর মধ্যে আবার দুটো জাত রয়েছে। একটি লাল এবং অপরটি সাদা। এই জাতটির একদিকে যেমন লেগহর্ণের মতো ডিম দেবার ক্ষমতা আছে তেমনি অপরদিকে পাওয়া যায় এশিয়াটিক মুরগির মতো প্রচুর মাংস। কাজেই রোড আইল্যাণ্ড খামারে পালন করলে দুটি উদ্দেশ্যই একসাথে পূরণ হয়।
রোড আইল্যাণ্ডের কৌলীন্য খুব বেশিদিনের নয়। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকেই যে এরা উন্নত হয়েছে সেটা অনুমান করা যায়। উন্নত হবার পর মালয়ী লাল, কোচিন আর সাংঘাই জাতের মুরগিগুলোকে খুব সম্ভবত আমেরিকার রোড দ্বীপের স্থানীয় মুরগিদের মত ব্যবহার করা হয়েছে। শেষে আবার লাল ঝুঁটির উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাদামী লেগহর্ণ এবং ভিয়ানডোটকে ব্যবহার করা হয়। এইভাবেই এক ঝুঁটি এবং গোলাপী ঝুঁটি দুটি মানের সৃষ্টি। রোড আইল্যাণ্ড রেড জাতীয় মুরগির পালকের রং গাঢ় পাটকিলে। পৃথিবীর যে-কোনো দেশে পালন করা হোক না কেন, রং প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই জাতের মুরগির কালো রংও দেখা যায়। আবার মোরগের থেকে মুরগির গলার নিচের দিকের রং কিছুটা জায়গায় কালো হয়। ঠোঁট এবং পায়ের পাতার রং লালচে ও ফিকে বাদামী, পায়ে পালক থাকে না, আর রং হয় গাঢ় হলুদ। দেহের স্বাভাবিক ওজন গড়ে ৩ কেজি এবং ২ ১,২ কেজি হয়ে থাকে। সাদা লেগহর্ণ প্রচুর ডিম পাড়ে।
৭. নিউ হ্যাম্পশায়ার
দীর্ঘদিনের হাতে-কলমে খামার পরিচালনা করার বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলে অনেকের পক্ষে নিউ হ্যাম্পশায়ার এবং রোড আইল্যাণ্ড রোডের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারে না। কারণ একই প্রজাতির বলে চেহারার সাথে দারুণভাবে মিলে যায়। খামারে পালনের জন্যে যথেষ্ট উপযোগী। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম বলে তা আমাদের পালন করা সম্ভব। এদের পালকের রং তামাটে লাল। মাথায় একহারা ঝুঁটি, পা দুটি হলদে। রোড আইল্যাণ্ড রেডের থেকে এই জাতের পালকের রংয়ের উজ্জ্বলতা বেশি। এরা বছরে গড়ে ১৫০টি থেকে ১৮০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। তাছাড়া অল্প বয়স থেকেই ডিম পাড়তে শুরু করে। বড় সাইজের ভালো ডিম পাওয়া যায়। এই জাতের মুরগি সর্বপ্রথম নিউ হ্যাম্পশায়ারে উৎপাদন করা হয় বলে জায়গার নাম থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে। এই জাতের মুরগির ওজন গড়ে মোরগ ৩.৫ কেজি এবং ২.৫ কেজি হয়ে থাকে।
৮. ভরকিং
প্রাচীন জাত হিসাবে বিশেষ করে ইংলণ্ডের বাজারে এই মুরগির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। জাতের আসল বৈশিষ্ট্য হলো এদের পঞ্চম অঙ্গুলি চতুর্থ কিংবা পেছনের অঙ্গুলির ওপর সন্নিবেশিত। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো বড় মাথা, ঝুঁটিও সেই অনুপাতে বড় এবং খাড়া। বুক চওড়া, দেহের আকৃতি চৌকোণা। এদের শ্রেণী অনুসারে ওজনের তারতম্য দেখতে পাওয়া যায়। সাদা শ্রেণীর মোরগের ওজন গড়ে ৩ কেজি এবং মুরগির ওজন ২.৫ কেজি। মাথার ঝুঁটির রং গোলাপী। ডিম এবং মাংস দুটোই এই জাতের কাছ থেকে পাওয়া যায়। তবে চামড়ার রং সাদা হওয়ার ফলে একমাত্র ইংলণ্ডে ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মাংস হিসাবে এর জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। এই জাতের বিশেষ গুণ হলো মা হিসাবে যেমন বাচ্চা পালন করতে পারে তেমনি পারে ডিমে তা দিতে। ডিম বড় এবং দেখতে সাদা হয়। সারা বছরে ডিমের গড় হিসাবও খারাপ নয়। আমাদের দেশের মতো গরমের দেশে এই জাতের মুরগি পালন করা উচিত নয়। এরা শীতপ্রধান দেশে যতটা ভালো থাকে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে সেভাবে থাকতে পারে না।
৯. সাসেক্স
ডরকিং ও সাসেক্স একই প্রকার মুরগি থেকে এসেছে। ইংলণ্ডের সাসেক্স নামক অঞ্চলে উৎপত্তি বলে তার নাম থেকে এদের নামকরণ করা হয়েছে। যেটুকু এই জাত সম্বন্ধে শোনা গেছে তার ওপর ভিত্তি করে বলা চলে, প্রায় দুশো বছর আগেই এদের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়ে যায়। সাধারণভাবে মাংসের জন্যে এদের পালন করা হয়। তবে খামারে উন্নততর প্রণালীতে পালন করে প্রচুর ডিমও পাওয়া সম্ভব হয়েছে। সাসেক্স জাতের মুরগির দেহ সুগঠিত এবং মাংসল। কাঁধ চওড়া, ঝুঁটির আকার মাঝারি এবং খাড়া। কানের লতিও ছোট। হাঁটু থেকে পা পর্যন্ত গোলাপী রং। এই জাতের মুরগির গড় ওজন মোরগ ৩.৫ কেজি এবং মুরগি ৩ কেজি।
১০. অরপিংটন
এই জাতটির কাছ থেকে চমৎকার মাংসের যোগান পাওয়া যায়। তাছাড়া এদেশের গরম আবহাওয়ায় ভালোই থাকে। সেই কারণে আমাদের দেশেও এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। ১৮৮৬ সালে ইংলণ্ডের বাসিন্দা মিঃ কুক এদের সৃষ্টি করেন। কালো রংয়ের যে শ্রেণীটি রয়েছে সেটি আরও সাম্প্রতিক কালের। সাদা জাতের উন্নতির জন্য সাদা লেগহর্ণ, সাদা ডরকিং কালো রংয়ের সংমিশ্রণে নীল অরপিংটন শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে। এই জাতের মধ্যে পাঁচটি উন্নত শ্রেণীর মুরগি দেখতে পাওয়া যায়। চেহারা বেশ লম্বা এবং গোলগাল ধরনের হয়ে থাকে। ভারী জাতের অন্যান্য নির্দিষ্ট মানের মুরগির থেকে অরপিংটনের মধ্যে এটাই হলো তফাত। এদের মাংস খেতে ভালো তবে চামড়ার রং সাদা হওয়ার ফলে ঠিক যতটা কদর হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। ইংলণ্ডে এবং আমেরিকার বহু খামারে অরপিংটন জাতের মুরগি পালন করা হচ্ছে। মাংসের জন্যে যেমন সুনাম রয়েছে ডিমের ক্ষেত্রেও তাই। বছরে গড়ে ১২৫টি থেকে ১৭৫টি পর্যন্ত ডিম পাওয়া যায়। এই জাতের মুরগির স্বাভাবিক ওজন গড়ে মোরগ ৩.৫ কেজি এবং মুরগি ৩ কেজি।
১১. করনিশ
এই জাতের আগে নাম ছিল ‘কনিশ ইণ্ডিয়ান গেম’। তবে বর্তমানে করনিশ নামে পরিচিত। ভারতের আসীল জাতের সাথে করনিশের আকৃতিগত সাদৃশ্য রয়েছে। দেহের গঠন এদের খুবই দৃঢ় হয়ে থাকে। হাঁটু থেকে পা পর্যন্ত কোন জায়গাতেই পালক নেই। চওড়া এবং গভীর ছাতি, সেই অনুপাতে কাঁধও চওড়া। পা পেশীবহুল। দেহের পালক ঘন। মোরগ এবং মুরগি উভয়ের শরীর দেখতে কঠিন। তবে অন্য জাতের তুলনায় সামান্য খাটো। বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জের কর্নওয়াল নামক জায়গায় এই জাতের মুরগি প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে এদের নামকরণ হয়েছে করনিশ। উৎকৃষ্ট মাংসের জন্যেই সারা পৃথিবীতে এদের কদর ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রেণীভেদে এই মুরগির স্বাভাবিক ওজন কম বা বেশি হয়ে থাকে। মোরগের স্বাভাবিক ওজন গড়ে ৩.৫ কেজি এবং মুরগির ৩ কেজি হয়ে থাকে।
সমাপ্তঃ
প্রিয় খামারিয়ান গণ উক্ত আলোনা থেকে আামরা জানলাম- মুরগির জাত কি কি? দেশি মুরগি চেনার উপায়, একটি দেশি মুরগি বছরে কতটি ডিম দেয়? কোন মুরগি কত দিনে ডিম দেয়? কোন জাতের মুরগি বেশি ডিম দেয়? আবার দেখা পরবর্তী পর্বে যেখানে আমনাদের অন্য আরও প্রশ্নসমূহ নিয়ে আলোকপাত করা হবে। আল্লাহ হাফেজ।