আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
মোরগ-মুরগির বাচ্চা উৎপাদনঃ
মোরগ-মুরগির মিলনের ফলে যে ডিম পাওয়া যায় সেটাই উর্বর বা নিষিক্ত ডিম যা থেকে পাখির বাচ্চা উৎপাদিত হয়। উর্বর ডিম পেতে হলে সাধারণত ৮-১০ টি মুরগির জন্য একটি মোরগের প্রয়োজন ।
বিভিন্ন পাখির ডিম ফুটার সময়ঃ
ক্র.নং | পাখির নাম | দিন |
১। | মুরগি | ২১ |
২। | হাঁস, তিতির | ২৮ |
৩। | রাজহাঁস | ৩২ |
৪। | কবুতর, কোয়েল | ১৮ |
বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম নির্বাচনঃ
সতর্কতার সাথে ডিম ফুটানোর হার নির্ভর করে। বাচ্চা ফুটানোর সবদিক থেকে ত্রুটিমুক্ত হওয়া প্রয়োজন । নিম্নে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম বাছাই ও তার যত্ন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
(১) ডিমের আকৃতি বা আকার
→ অস্বাভাবিক বা বিকৃত আকারের ডিম বাচ্চা ফুটানোর জন্য উপযোগী নয়।
→ খুব বড় নয় খুব ছোট নয় এইরূপ মাঝারি ও স্বাভাবিক আকৃতির ডিম ফুটানো ভাল।
→ মসৃণ এবং মোটা এবং শক্ত খোসা বিশিষ্ট ডিম বাচ্চা ফুটানোর জন্য উপযোগী।
(২) খোসার রং
→ অপেক্ষাকৃত গাঢ় রংয়ের ডিম ফুটানোর জন্য বাছাই করা ডাল ।
→ ডিমের খোসার রং মুরগির জাতের উপর নির্ভরশীল। যেমন- হোয়াইট লেগহর্ন জাতের মুরগির ডিমের খোসার রং সাদা সাদা আবার রোড আইল্যান্ড রেড মুরগির ডিমের রং বাদামী।
→ যে জাতের পাখির ডিমের যে রং সে অনুযায়ী ডিম ফুটানোর জন্য বাছাই করতে হয়।
(৩) ফাটা ডিম
→ অনেক সময় ডিম বাইরে দেখে বোঝা কঠিন নয়। আলোর সাহায্যে ফাটা ডিম পরীক্ষা করে অথবা একটি ডিমের উপর আর একটি ডিম রেখে আঘাত করলে সৃষ্ট শব্দ শুনে ফাটা ডিম সনাক্ত করা যায় ।
→ ফাটা ডিম বাচ্চা ফুটানোর উপযোগী নয়।
(৪) অপরিষ্কার ডিম
→ খুব বেশী ময়লা লেগে থাকা ডিম বাচ্চা ফুটানোর জন্য উপযুক্ত নয়। তবে ডিমে সামান্য ময়লা লেগে থাকলে তা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নির্বাচন করতে হবে।
→ বাচ্চা ফুটানোর জন্য পরিষ্কার ডিম নির্বাচন করতে হবে।
→ বাচ্চা ফুটানোর জন্য বাছাইকৃত ডিম কোন ক্রমে ধোয়া চলবেনা।
(৫) ডিমের ভিতরকার বৈশিষ্ট্য
→ মাঝখানে কুসুম বিশিষ্ট স্বচ্ছ ডিম বাচ্চা ফুটানোর জন্য উৎকৃষ্ট।
→ ডিমের ভিতর রক্তের ছিটা, ঘোলাটে, বায়ু বুদবুদ ইত্যাদি ত্রুটিযুক্ত ডিম বসানোর জন্য উপযুক্ত নয়।
→ যে সব ডিম দু’ভাগ শ্বেতাংশ ও একভাগ হলুদ অংশ সেগুলো গড়ে বাচ্চা ফুটে বেশি।
(৬) ডিমের ওজন ও বয়স
→ বাচ্চা ফুটানোর জন্য উন্নত জাতের মুরগির ডিমের ওজন ৫০-৬০ গ্রাম হওয়া প্রয়োজন ।
→ বাচ্চা ফুটানো ডিমের বয়স গরমের দিনে ৩-৪ দিন এবং শীতকালে ৭-১০ দিনের মধ্যে হওয়া আবশ্যক।
(৭) ডিম হাতানো
→ বাচ্চা ফুটানোর জন্য বাছাই করা ডিম ঝাঁকানো ঠিক নয়।
→ এ কারণে খুব সাবধানের সাথে এই ডিম নড়াচড়া বা স্থানান্তরিত করতে হবে।
বাচ্চা ফুটানোর জন্য বাছাইকৃত ডিম সংরক্ষণ
→ বাছাইকৃত ডিম সংরক্ষণের উপর ডিম ফুটানোর হার নির্ভর করে।
(৮) ডিমের বয়স
→ ডিমের সরু দিকটা নিচের দিকে এবং মোটা দিকটা উপরের দিকে রেখে জমা রাখা ভাল।
→ নির্ধারিত দিনের অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত হলে জমাকৃত ডিম অনেক সময় ফুটেনা।
→ বাচ্চা ফুটানোর ডিম গ্রীষ্মকালে ৩-৪ দিন এবং শীতকালে ৭-১০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
(৯) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
→ ডিমের খোসায় অসংখ্য ছিদ্র থাকে। ময়লায় ডিমের খোসার ছিদ্র বন্ধ হলে ভ্রুণের মৃত্যু ঘটতে পারে।
→ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে ডিম সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ নোংরা পরিবেশে ডিমের খোসায় মল লেগে যেতে পারে।
(১০) বায়ুর তাপমাত্রা
→ আজকাল বড় বড় হ্যাচারীতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ডিম সংরক্ষণ করা হয়।
→ বাচ্চা ফুটানোর ডিম সংরক্ষণের জন্য খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠাণ্ডা উভয়ই ক্ষতিকর।
→ বাচ্চা ফুটানোর ডিম সংরক্ষণের জন্য আদর্শ তামাত্ৰা হ’ল ৫০-৬০° ফারেনহাইট।
(১১) বায়ুর আর্দ্রতা
→ বাচ্চা ফুটানোর ডিম সংরক্ষণের জন্য ৭৫-৮০% আর্দ্রতা উপযুক্ত।
→ সাধারণত আর্দ্রতা কম হলে ডিম থেকে জলীয় ভাগ বায়ুতে চলে যেতে পারে ফলে ডিম ফুটার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

ডিম অনুর্বর হওয়ার কারণঃ
- → মোরগের সঙ্গমে অনিচ্ছায় ও মুরগির বয়স বেশি হলে।
- → বাচ্চা ফুটানোর জন্য বাছাই করা ডিম বেশি দিনের পুরানো হলে।
- → মোরগের সাহচার্য ব্যতীত মুরগি যে ডিম দেয় সেটা বাওয়া বা অনুর্বর হয়।
- → মোরগ দুর্বল, রোগাক্রান্ত বা কোন কারণে সঙ্গমে অক্ষম হলে।
- → ফার্মে মুরগির তুলনায় মোরগের সংখ্যা কম হলে ।
মুরগির ডিম ফুটানোর পদ্ধতিঃ
প্রধানত দুই পদ্ধতিতে পাখির ডিম ফুটানো হয়। যথা- ১। প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং ২। কৃত্রিম পদ্ধতি ।
১। প্রাকৃতিকভাবে মুরগির ডিম ফুটানো পদ্ধতি

→ সাধারণত ধানের তুষ দিয়ে মাটি বা কাঠের পাত্রে ডিম বসানো যায়। পাত্রটি ১৫ ইঞ্চি পরিধি ও ৮ ইঞ্চি গভীর হওয়া ভালো।
→ প্রথমে মুরগির নিচে কয়েকটি খারাপ ডিম দিয়ে বসিয়ে মুরগিতে ডিম তা দেয়ার অভ্যাস করে নিতে হবে। মুরগি ডিমে তা দিয়ে অভ্যস্ত হলেই রাত্রে খারাপ ডিম সরিয়ে ১০-১২টি উর্বর ডিম মুরগির নিচে দিতে হবে।
→ উর্বর বা নিষিক্ত ডিমে মুরগি নিজের দেহের তাপ দিয়ে ডিম ফুটানো পদ্ধতিকে ডিম ফুটানো বলা হয়।
→ এটি একটি প্রাচীন ও সুপ্রচলিত পদ্ধতি। গ্রাম বাংলায় এই নিয়মে বাচ্চা ফুটানো হয়।
→ দেশী জাতের ওমওয়ালা বা কুঁচে লাগা মুরগির ডিমে তা দেয়ার জন্য সবদিক থেকে উপযুক্ত ।
চিত্র – প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ডিম ফুটানো চিত্র- প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মুরগির বাচ্চা পালন

সতর্কতা বা সাবধানতা :
→ ডিম বসানো পাত্র ও ধানের তুষ বা খড়কুটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
→ প্রয়োজনে যে কোন একটি কীটনাশক পদার্থ যেমন— অসানটাল, ডিপট্রেক্স, গ্যামাক্সিন স্প্রে করে মুরগির বাসা কীট-পতঙ্গমুক্ত করতে হবে।
→ আমাদের দেশে আবহাওয়ার ব্যাপক তারতম্যহেতু সবসময় ডিম সমান ভাবে ফুটেনা। বর্ষাকালে বেশ বৃষ্টিপাত হয়, মাটি স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে উঠে এইরূপ আর্দ্র আবহাওয়ায় ডিম ভালো ফুটেনা। যেগুলো ফুটে বাঁচানো নিয়ে সমস্যা হয়। আবার খুব গরমে বাচ্চা ফুটে না। আমাদের দেশে পৌষ হতে চৈত্র মাসই ডিম ফুটানোর ভাল সময়। তবে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম ভাগ হতে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত ডিম ফুটানো যেতে পারে।
→ পালক বদলানো অবস্থায় কোন মুরগিকে ডিমে বসানো যাবে না।
→ ডিম বসার পাত্রের নিকটে দানাদার খাদ্য ও পানি রেখে দিতে হয়।
→ সাধারণত রাতে ডিম বসালে ২১ দিন পর আবার রাত্রেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। এতে সকালে বাচ্চা পরিচর্যার সুবিধা হয়।
→ ডিম বসানো পাত্রটি নির্জন কোণে বাহিরের কোলাহলমুক্ত অবস্থায় রাখতে হবে।
→ প্রথমবার ডিম দেয়া কুঁচে লাগা মুরগিকে ডিম তা দেয়ার জন্য ব্যবহার করা উচিত হবে না। কারণ অনেক সময় ১ বছর কম বয়সের মুরগি ১০-১৫ দিন ডিম তা দেয়ার পর তা দেয়া বন্ধ করে দিতে পারে।
২। কৃত্রিম উপায়ে ডিম মুরগির ফুটানোর পদ্ধতি
মুরগি যে ভাবে স্বাভাবিক নিয়মে তাপ ও আর্দ্রতা দিয়ে ডিম ফুটায় ঠিক সেই পরিমাণ উত্তাপ ও আর্দ্রতা কৃত্রিমভাবে (যন্ত্রের সাহায্যে) সৃষ্টি করে ডিম ফুটানো পদ্ধতিকে কৃত্রিম পদ্ধতি বলে । প্রধানত দুই ধরনের কৃত্রিম পদ্ধতির মাধ্যমে ডিম ফুটানো যায়। যথা- (ক) তুষ পদ্ধতি এবং (খ) ইনকিউবেটর পদ্ধতি।
(ক) তুষ পদ্ধতিতে মুরগির ডিম ফুটানোর পদ্ধতি
একসাথে অনেক বাচ্চা ফুটানোর প্রয়োজন হলে ইনকিউবেটর পদ্ধতি সর্বোত্তম। তবে গ্রাম অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই সেসব অঞ্চলে তুষ পদ্ধতিতে ডিম ফুটানো যায়। তুষ পদ্ধতিতে হাঁস এবং মুরগির ডিম ফুটানো যায়। তবে আমাদের দেশে সাধারণত হাঁসের ডিম এই পদ্ধতিতে ফুটানো হয়। তুষ পদ্ধতিতে প্রতিবার ৯০০টি ডিম ফুটানো যায় ।
ডিম ফুটানোর প্রয়োজনীয় উপকরণ :
তুষ পদ্ধতিতে ডিম ফুটানোর জন্য প্রধানত নিম্নোক্ত উপকরণ প্রয়োজন।
- বাঁশের চাটাইয়ের নলাকৃতি ঝুড়ি।
- কেরোসিন চুল্লী ।
- বাছাইকৃত উর্বর পরিষ্কার ডিম।
- চালানি ও ডালা।
- বাচ্চা ফুটানোর বিছানা।
- নলাকৃতির ঝুড়ি বসানোর বাক্স।
- বায়ু চলাচলশূন্য ও তাপ নিরোধক কক্ষ।
- কাপড় ও থার্মোমিটার।
নলাকৃত ঝুঁড়ি ও ঝুঁড়ি বসানো বাক্স প্রস্তুত :
→ সাধারণত ৩০ × ৮৪ ইঞ্চি (৭৬ × ২১৩ সেন্টিমিটার) আয়তনের বাঁশের চাঁটাই মুড়ে দৈর্ঘ্যের দিকে ৩০ ইঞ্চি এবং প্রস্থের দিকে ২০ ইঞ্চি (৭৬ × ৫১ সেন্টিমিটার) বিশিষ্ট নলাকৃতির জুড়ি তৈরি করতে হয়।
→ চাটাই পাতলা হলে ডাবল করে ব্যবহার করা যায়। নলাকৃতির ঝুড়িটি দড়ি দিয়ে সেলাই করে ৩-৪টি বাঁশের মোটা ফলা বা খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হয় যাতে ঝুড়িটি মাটিতে খাঁড়াভাবে থাকতে পারে। এরূপ ঝুড়িতে একসাথে প্রায় ৯০০টি ডিম ফুটানো যায় ।
→ নলাকৃত ঝুড়িটি একটি ৩৫ ইঞ্চি উচ্চতা বা গভীর এবং ৩৫ ইঞ্চি গ্ৰন্থ (৯০ × ৯০ সেন্টিমিটার) বাক্সের মধ্যে বসাতে হয়। বাক্সটি বাঁশের চাটাই বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করা যায়।
→ নলাকৃতির ঝুড়িটি বাক্সের মধ্যস্থানে স্থাপন করে ঝুড়ি ও বাক্সের মধ্যের ফাঁকা স্থান শুকনো তুষ দিয়ে ভর্তি করতে হবে। এরপর চাটাই দিয়ে বাক্সের মুখ এমনভাবে ঢাকতে হবে যেন নলাকৃতির ঝুড়ির মুখ খোলা থাকে।
ডিম থেকে বাচ্চা ফুটার বিছানা তৈরি :
→ নলাকৃতির ঝুড়িটি বাক্সের ভিতর স্থাপন করার পূর্বে বাক্সের মেঝের ৬ ইঞ্চি (১৫ সেন্টিমিটার) ধানের তুষ দিয়ে মাদুর, চাটাই বা বস্তার সাহায্যে ঢেকে দিতে হবে।
→ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য খাট সদৃশ্য চার পা বিশিষ্ট একটি বিছানা তৈরি করতে হবে। বিছানার খুরা ও পাসি বাঁশ বা কাঠ দিয়ে তৈরি করা যায়।
→ বাঁশ, বাঁশের চাটাই ও মাদুর দিয়ে ২-৩ সেন্টিমিটার ফাঁকযুক্ত দুই দেওয়াল বিশিষ্ট বিছানার দেওয়াল তৈরি করা হয়। দুই দেওয়ালের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানটি শুষ্ক তুষ দিয়ে ভরে দিতে হয়।
→ বিছানার মেঝে ৩-৫ সেন্টিমিটার ধানের তুষ বিছিয়ে চিকন ঘাস বা নল খাগড়ার মাদুর দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।

ডিম ফুটানোর পদ্ধতি :
→ ঠাণ্ডা দিনে ডিমে উত্তাপ দেয়ার জন্য কেরোসিন চুল্লী নলাকৃতির ঝুড়ির ভিতর রেখে অথবা গরম তুষ দিয়ে ডিম ৯৮° ফাঃ এ রাখতে হয়।
→ প্রধানত হাঁসের ডিম এই পদ্ধতিতে ফুটানো হয়। পরিষ্কার ৪০-৫০টি উর্বর (নিষিদ্ধ) বাছাইকৃত হাঁসের ডিম কাপড়ে (৩০ × ৩০ ইঞ্চি) বেঁধে পুটলি করতে হয়। নলাকৃতি ঝুড়ির মধ্যে হাল্কাভাবে ভরা শুকনো তুষের বস্তা রেখে তার উপর ডিমের পুটলিটি রাখতে হয়। ডিমের পুটলির উপর আর একটি হালকা তুষ ভরা বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।
→ প্রথম দিন (২৪ ঘণ্টা) কোন কিছু করার প্রয়োজন হয় না। দ্বিতীয় দিন দুইবার ডিম নাড়াচাড়া করে দিতে হয়।
→ ৪র্থ, ৯ম এবং ১৪ তম দিনে ডিমগুলো উজ্জ্বল আলোয় পরীক্ষা করে উর্বর আছে কিনা বুঝা যায়।
→ ১৭ তম দিনে বাচ্চা ফুটানোর বিছানায় সমস্ত ডিম পুটলি খুলে রাখতে হবে এবং উল্টেপাল্টে দিতে হবে।
→ ১৮তম এবং ২৩তম দিনে বিছানায় রাখা ডিম দিনে চারবার নড়াচড়া করতে হবে।
→ ২৬তম দিনে ডিমের খোসায় ফাটল ধরে এবং এসময় নড়াচড়া করা যাবেনা। ২৭তম দিনে হাঁসের বাচ্চা ফুটে বের হয়ে যাবে।

(খ) ইনকিউবেটর পদ্ধতিওত মুরুগর ফুটানোর পদ্ধতি
¤ যেসব ইনকিউবেটর কেরোসিনের সাহায্যে চলে তাদের কেরোসিন ইনকিউবেটর এবং যেসব ইনকিউবেটর বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা চালিত তাদের বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর বলা হয়।
¤ বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ডিম ফুটানো যায়। তবে কেরোসিন ইনকিউবেটরের আয়তন অনুযায়ী একসাথে ৫০-৫০০টি ডিম ফুটানো যায়।
¤ ডিম ফুটানোর জন্য বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর ব্যবহার করা উত্তম। তবে যেখানে বিদ্যুৎ সুবিধা নেই সেখানে কেরোসিন ইনকিউবেটর ব্যবহার করা যায়।
¤ ডিম ফুটানোর ইনকিউবেটর যন্ত্র প্রধানত দুই ধরনের। যথা- (ক) কেরোসিন ইনকিউবেটর এবং (খ) বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর।

ডিম ফুটানোর আবশ্যকীয় বিষয় :
১. তাপমাত্রা
¤ তবে কেরোসিন ইনকিউবেটরে ডিম বসানোর ১ম ও ২য় সপ্তাহে ১০১ তাপমাত্রা রাখা দরকার হয়।
¤ সাধারণত বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরে প্রথম ১৮ দিন ৯৯.৫° ফাঃ এবং পরবর্তী ৩ দিন ৯৮.৫° ফাঃ তাপ রাখা প্রয়োজন ।
২. আপেক্ষিক আর্দ্রতা
¤ ১০৩° ফাঃ এবং ৩য় সপ্তাহে ১০১.৫° ফাঃ
¤ ইনকিউবেটরে (বৈদ্যুতিক ও কেরোসিন উভয় ক্ষেত্রে) ১ম ১৮ দিন ৫০-৬২% এবং শেষের ৩ দিন ৬৪-৭৫% আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন।
৩. পরিমিত বায়ু চলাচল
¤ ডিম্বস্থ ভ্রূণকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ইনকিউবেটরের ভিতর পরিমিত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থায় রাখতে হবে। কারণ ডিমের মধ্যে ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন প্রয়োজন ।
৪. ডিম বসানো ও উল্টানো
¤ ইনকিউবেটরের ভিতর দিয়ে ফুটানোর ট্রেতে ডিমের মোটা অংশ উপর দিকে এবং সরু দিকটা নিচের দিকে ৪৫° কোণে বসালে ভাল ফল পাওয়া যায়। সাধারণত ১ম সপ্তাহে দিনে ৪-৬ বার এবং ২য় সপ্তাহে ৮ ঘণ্টা পরপর ডিম ঘুরিয়ে দিতে হয়।
¤ বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরে টাইমারের সাহায্যে ডিম নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরে।
¤ কেরোসিন ইনকিউবেটরে ‘ইউ’ আকৃতির তারের সাহায্যে ডিম ঘুরানো হয়।
৫. আলোর সাহায্যে ডিম পরীক্ষা
¤ যদি ভ্রূনের সৃষ্টি না হয় তবে আলোর সামনে ডিম ধরলে ডিমের ভিতর স্বচ্ছ দেখাবে। এসব ডিম ফুটবেনা তাই এগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
¤ ডিমের ভিতর ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছে কিনা অর্থাৎ ফুটবে কিনা তা আলোর সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার ইংরেজী নাম ক্যান্ডেলিং । সাধারণত ৭ম এবং ১৪তম দিনে একটি অন্ধকার ঘরে বৈদ্যুতিক বাল্ব বা টর্চ লাইট দিয়ে ডিম পরীক্ষা করা হয়। ডিমের প্রায় মধ্যভাগে অস্বচ্ছ কোন কালো পদার্থ ভাসমান দেখলে বুঝতে হবে ডিমে ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছে এই সব ডিম ফুটবে।
৬. সেটিং ট্রে থেকে হ্যাচিং ট্রেতে ডিম স্থানান্তর
¤ সাধারণত ডিম সেটিং ট্রেতে বসানোর পর থেকে ১৯তম দিনে হ্যাচিং ট্রেতে স্থানান্তর করতে হয়।
¤ হ্যাচিং ট্রেতে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
৭. ইনকিউবেটর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্তকরণঃ
¤ আক্রান্ত ডিম ও চানা হতে এসব জীবাণু সুস্থ ছানায় সংক্রামিত হয় এবং ইনকিউবেটরে ছড়িয়ে পড়ে।
¤ পাখির বেশ কয়েকটি রোগ আছে (যেমন— পুলোরাম) সেগুলো ডিমের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়।
¤ সুতরাং ডিম ফুটানোর পর প্রতিবার ইনকিউবেটর যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ খুলে জীবানুনাশক পদার্থ দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে নেয়া উচিত।
¤ এছাড়া ফিউমিগেশন পদ্ধতির মাধ্যমে ইনকিউবেটর জীবাণুমুক্ত করা যায়। এক্ষেত্রে ১০০ কিউবিক আয়তন বিশিষ্ট ইনকিউবেটরের জন্য ৩৫ মি.লি. ফরমালিনের সাথে ১৭.৫ গ্রাম পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশিয়ে ইনকিউবেটরে রেখে দিলে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়া ইনকিউবেটরের মধ্যের জীবাণুকে ধ্বংস করে। এই প্রক্রিয়াকে ফিউমিগেশন বলা হয়।