আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
ডিম উৎপাদন ও সংরক্ষণঃ
প্রধানত দুই উদ্দেশ্যে ডিম উৎপাদন করা হয়। যথা- (ক) খাওয়ার জন্য এবং (খ) বাচ্চা ফুটানোর জন্য।
সাধারণত খাঁচায় মুরগির সাথে মোরগ পালন করা হয় না। তাই খাঁচায় পাড়া ডিম অনুর্বর। এসব ডিম শুধু খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে মোরগ ও মুরগি সমন্বয়ে লিটারে পালিত সুনির্দিষ্ট জাতের মুরগির ডিম উর্বর হয় যা বাচ্চা ফুটানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
ডিম পাড়া মুরগি চেনার উপায়ঃ
মুরগির দেহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে মুরগি ডিম পাড়ছে কিনা তা সহজেই নিরূপণ করা যায়।
ক্র.নং | বৈশিষ্ট্য | ডিম পাড়া মুরগি | কম ডিম পাড়া মুরগি |
১। | শরীরের গঠন | সামান্তরিক | ত্রিকোণাকৃতি |
২। | চোখ | উজ্জ্বল, বড় ও উদগত | ছোট, ঘোলাটে, অনুজ্জ্বল, কোটরগত |
৩। | মাথার ঝুঁটি। | লাল ও উজ্জ্বল | ছোট ও ফ্যাকাশে (বিবর্ণ) |
৪। | কটির (Lumber) অস্থি | পাতলা নরম ও চর্বিবিহীন | মোটা শক্ত ও চর্বিযুক্ত |
৫। | কটির অস্থির মধ্যে ফাঁক | ৩-৪ আঙ্গুল | ৩ আঙ্গুলের কম |
৬। | বুকের হাড় থেকে কটি অস্থির ফাঁক | ৪-৫ আঙ্গুল | ৩ আঙ্গুলের কম |
৭। | মলদ্বার (পায়ু) | বড়, ভেজা ও ডিম্বাকার | ছোট, শুষ্ক ও গোলাকার |
৮। | পেটের অংশ (উদর) | স্ফীত, নরম থলথলে | শক্ত ও অপ্রশস্ত |
৯। | পিউবিক অস্থিতে আঙ্গুলের চাপ | ২-৩টি আঙ্গুল বসে | ১টি আঙ্গুল বসে |

হঠাৎ ডিম উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণঃ
অনেক সময় ফার্মের ডিমের উৎপাদন কমে যায়। বিভিন্ন কারণে মুরগির ডিম উৎপাদন হ্রাস পায়। ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো নিম্নে দেয়া হলো।
→ হঠাৎ খাদ্যের গঠন বা উপাদানের মধ্যে কোন পরিবর্তন ঘটলে। যেমন- লেয়ারের খাদ্য সুষম না হয়ে কোন খাদ্য উপাদান যথা প্রোটিন, শর্করা, ক্যালসিয়াম ইত্যাদির ঘাটতি হলে।
→ এক ঘর থেকে অন্য ঘরে অথবা এক ফ্লক (দল) থেকে অন্য ফ্লকে (দলে) স্থানান্তর করলে।
→ পর্যাপ্ত অসুস্থ হলে।
→ মুরগির দেহে হরমোনের অভাব হলে।
→ মুরগি কোন কারণে ভয় পেলে। যেমন— পটকা, বোমা, বন্দুকের বিকট আওয়াজ অথবা বন্য জীব জানোয়ার দেখলে ।
→ হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটলে। যেমন- অত্যধিক গরম, শীত (ঠাণ্ডা), অতিরিক্ত বৃষ্টি।
→ অল্প জায়গার মধ্যে বেশি মুরগি ঠাসাঠাসি করে পালন করলে।
ডিমের গঠন ও উপাদানঃ
→ একটি সম্পূর্ণ ডিমে শতকরা ৬৫.৯০ ভাগ পানি, ১২.৮৩ ভাগ প্রোটিন, ১০.৫৯ ভাগ চর্বি এবং ১০.৬৮ ভাগ খনিজ পদার্থ থাকে।
→ মুরগির ডিমে হাঁসের ডিমের চেয়ে আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম ও লৌহ ইত্যাদি কিছুটা বেশি থাকে।
→ হাঁসের এবং মুরগির ডিমের মধ্যে গুণগত মানের তেমন পার্থক্য নেই। তবে হাঁসের ডিমের আকার বড় হওয়ায় খাদ্য উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকে।
→ প্রধানত আবরণ (খোসা), বায়ু কোষ, সাদা অংশ ও কুসুম সমন্বয়ে ডিম গঠিত।
→ সাধারণত মাঝারি আকারের ডিমের শতকরা ১০ ভাগ খোসা, ৩০ ভাগ সাদা অংশ এবং অবশিষ্ট ভাগ কুসুম।
→ হাঁসের এবং মুরগির ডিমের মধ্যে গুণগত মানের তেমন পার্থক্য নেই। তবে হাঁসের ডিমের আকার বড় হওয়ায় খাদ্য উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকে।
→ মুরগির ডিমে হাঁসের ডিমের চেয়ে আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম ও লৌহ ইত্যাদি কিছুটা বেশি থাকে।
→ সাধারণত মাঝারি আকারের ডিমের শতকরা ১০ ভাগ খোসা, ৩০ ভাগ সাদা অংশ এবং অবশিষ্ট ভাগ কুসুম।
→ একটি সম্পূর্ণ ডিমে শতকরা ৬৫.৯০ ভাগ পানি, ১২.৮৩ ভাগ প্রোটিন, ১০.৫৯ ভাগ চর্বি এবং ১০.৬৮ ভাগ খনিজ পদার্থ থাকে।

ডিম সংরক্ষণঃ
বাংলাদেশের উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার আধিক্যহেতু ডিম সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। এতে একদিকে আমরা যেমন পুষ্টিকর খাদ্য হারাই অন্যদিকে আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হই। যথাযথভাবে ডিম সংরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা সহজেই এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। ডিম যাতে গরমে নষ্ট না হয় এবং বেশী দিন ভাল থাকে তার ব্যবস্থা করার নাম ডিম সংরক্ষণ।
প্রধানত নিম্নোক্ত উপায়ে ডিম সংরক্ষণ করা যায়।
(১) গ্রামীণ ডিম সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
→ কাঁচা ঘরের মেঝেতে গর্ত করে গর্তের মধ্যে মাটির হাঁড়ি বসাতে হয়।
→ হাঁড়ির চারপাশে কাঠ কয়লা দিয়ে অন্তত ১২ ইঞ্চি পুরু করে ভরাট করতে হয়।
→ হাঁড়ির মধ্যে ডিম রেখে প্রত্যহ কাঠ কয়লাতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে হাঁড়ির মধ্যে ঠান্ডা পরিবেশে ডিম ভাল থাকবে ।
(২) চুনের পানি ডিম সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
→ প্রথমে ১ লিটার গরম পানিতে ১ কেজি চুন মিশিয়ে ঠাণ্ডা হলে আরও ৪ লিটার পানি ও ২৫০ গ্রাম লবণ মিশাতে হবে।
→ পরদিন মাটির পাত্রে ডিম সাজিয়ে রেখে প্রস্তুতকৃত চুনের পানি (তলানি ছাড়া) এমনভাবে ডিমের উপর ঢালতে হবে যাতে ডিমগুলো সম্পূর্ণ ডুবে যাবে।
→ এই পদ্ধতি ব্যবহারে প্রায় ২ মাস ডিম সংরক্ষণ করা যায়।
(৩) ওয়াটার গ্লাস ডিম সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
→ ডিমের খোসায় অসংখ্য ছিদ্র থাকে। গরমের সময় এসব ছিদ্র দিয়ে গরম বায়ু প্রবেশ করে। ফলে ডিম নষ্ট হয়ে যায় ।
→ সোডিয়াম সিলিকেট সলুশনে ডিম ডুবিয়ে রাখলে খোসার ছিদ্র বন্ধ হয় ফলে ডিম নষ্ট হয়না।
→ সাধারণত ১ কেজি সোডিয়াম সিলিকেট ১০ লিটার ফুটানো ঠান্ডা পরিষ্কার পানিতে মিশিয়ে (১ : ৯) নিয়ে চীনামাটির জার বা কাঁচের পাত্রে রক্ষিত ডিমের দুই ইঞ্চি উপর পর্যন্ত ঢালতে হয়। এই ১০ লিটার ডজন ডিম সংরক্ষণ করা যায়।
→ ডিম সংরক্ষণের জন্য এটি একটি সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কয়েক মাস ডিম সংরক্ষণ করা যায়
(৪) তেল প্রয়োগ ডিম সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
→ পাখি ডিম পাড়ার পরপরই ডিমে তেল মাখিয়ে সংরক্ষণ করা যায় ।
→ বর্ণ, উগ্রগন্ধ ও স্বাদবিহীন যে কোন তেল (যেমন- নারিকেল, সয়াবিন) ডিম সংরক্ষণ ব্যবহার করা যায়।
→ ডিম তেলে ডুবিয়ে নিয়ে অথবা কোন তেল ছিটানো যন্ত্র দ্বারা ডিমের উপর তেল ভালভাবে ছিটিয়ে/স্প্রে ডিম সংরক্ষণ করা যায় ।
→ দুই হাজার ডিম সংরক্ষণের জন্য প্রায় ১ লিটার তেল প্রয়োজন হয়।
→ এই পদ্ধতিতে প্রায় এক মাস পর্যন্ত ডিম সংরক্ষণ করা যায়।
(৫) ভ্রূণ নষ্টের মাধ্যমে ডিম সংরক্ষণঃ
→ সাধারণত মোরগের সাহচার্যে পালিত মুরগির ডিমে ভ্রূণ থাকে। ভ্রূণ সম্পন্ন ডিম খুব অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যায়।
→ মোরগ ছাড়া খাঁচায় পালিত মুরগির ডিমে ভ্রূণ থাকেনা। তাই এসব মুরগির ডিম সহজে নষ্ট হয়না।
→ ডিমের ভ্রূণ মেরে ডিমের গুণাগুণ দীর্ঘস্থায়ী করা যায়। এই উদ্দেশ্যে ১০০° ফাঃ গরম পানিতে ১৫ মিনিটে অথবা ১৩০ – ১৪০° ফাঃ গরম পানিতে ৩-৪ মিনিট ডিম ডুবিয়ে রাখতে হয়।
→ এভাবে গরম পানিতে চুবানো ডিমের গুণাগুণ একমাস পর্যন্ত অক্ষুন্ন থাকে।
(৬) হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজে ডিম সংরক্ষণঃ
→ আমাদের দেশের উচ্চ তাপমাত্রা ডিম সংরক্ষণের প্রধান অন্তরায়। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেটরে অথবা হিমাগারে (কোল্ড স্টোরেজ) তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিম সংরক্ষণ করা যায়।
→ সাধারণত রেফ্রিজারেটরে ৪° সেঃ (৩৬° ফাঃ) এবং হিমাগারে ২০-৫০° ফাঃ তাপে ডিম অনেক দিন ঠিক থাকে ।
→ হিমাগারের আর্দ্রতা শতকরা ৭০-৮০ ভাগ হওয়া প্রয়োজন। অধিক আর্দ্রতায় ডিমের মধ্যে ছত্রাক জন্মে এবং ডিমের কুসুমের রং নীল বর্ণ ধারণ করে।