Skip to content

 

মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহর (সাঃ) অর্থ কি?

মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহর (সাঃ) অর্থ কি

মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহর (সাঃ) অর্থঃ

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-এর অর্থ হচ্ছে, এ বিশ্বাস পোষণ করা যে তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট হতে প্রেরিত। ফলে, তিনি যা বলেছেন তা সত্য বলে স্বীকার করব, যে সব বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন তা মেনে চলব এবং যে সব বিষয়ে নিষেধ করেছেন বা সতর্ক করেছেন তা হতে বিরত থাকব। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা মান্য করা মূলত: আল্লাহকে মান্য করা। 

১। শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. তার নবুয়ত গ্রন্থে বলেছেন: প্রত্যেক এলাকায় আগত সকল নবীর সর্বপ্রথম ও প্রধান দাওয়াত ছিল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ব্যাপারে আকীদা শুদ্ধ করা, বান্দা ও তার রবের মাঝে সম্বন্ধকে শুদ্ধ করা। ইখলাসের সাথে আল্লাহর দ্বীনকে মেনে চলা এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার প্রতি। কারণ, উপকার ও ক্ষতি তিনিই করেন। তিনিই ইবাদত পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। দোআ, বিপদে আশ্রয় প্রার্থনা ও জন্তু যবেহ করা সবই তাঁর জন্যই। নবীগণ প্রত্যেকেই তাদের যুগে প্রচলিত এক আল্লাহর ইবাদত পরিপন্থী যাবতীয় পুজা-উপসনা-প্রথার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দেলন করেছেন। যেমন, মূর্তি ও পাথরের পূজা, জীবিত কিংবা মৃত নেক লোকদের পূজা ইত্যাদি।

২। আল্লাহ তা’আলা আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে বলেন :

বল, ‘আমি আমার নিজের কোনো উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্য, যারা বিশ্বাস করে। (সূরা আ’রাফ, ৭: ১৮৮ আয়াত)। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

আমার (প্রশংসার) ব্যাপারে তোমরা সীমা লংঘন কর না যেমন, খৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্বন্ধে সীমা লংঘন করেছে। আমার একমাত্র পরিচয় আমি বান্দা। তাই বল, আল্লাহর বান্দা এবং তার রাসূল। (বুখারি) 

ইতরা শব্দের অর্থ হচ্ছে বাড়ান ও প্রশংসার ক্ষেত্রে সীমা লংঘন করা। আমরা আল্লাহকে ছেড়ে তাঁকে ডাকব না যেমনটি করেছে খৃষ্টানরা, যার ফলে তারা শিরকে পতিত হয়েছে।

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করার প্রকৃতরূপ হল, তার হুকুম মেনে চলার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাঁকে ছেড়ে অন্যের কাছে দোয়া না করা, যদিও সে কোনো রাসূল হোক কিংবা কোনো ওলী। 

আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

যখন (কিছু) চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। (তিরমিযি, হাসান ছহীহ)। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর কোনো দুঃখ কিংবা পেরেশানী আসলে বলতেন,

হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী, তোমার দয়ার দ্বারা বিপদ উদ্ধার চাচ্ছি।  (তিরমিযি, হাসান)। 

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

আমরা তোমারই ইবাদত করি

এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই 

তোমাকে ছাড়া আমরা অন্য কারও ইবাদত করি না, কারও নিকট দোয়া করি না এবং কারও কাছে সাহায্যও চাই না। হেআল্লাহ! 

১। ভাষাবিদরা বলেছেন : مفعول به কে আগে আনা হয়েছে  حصر ও تخصيص এর জন্য অর্থাৎ ইবাদত ও সাহায্য একমাত্র আল্লাহ হতে- তিনি ব্যতীত এগুলোতে কারও হাত নেই।

২। এ আয়াতটি প্রতিটি মুসলিম প্রতি দিন সালাত ও সালাতের বাইরে বার বার পাঠ করে। এটি সূরা ফাতিহার মূল। আর সূরা ফাতিহা সমস্ত কুরআনের মূল।

৩। ইবাদত বলতে এই আয়াতে সকল প্রকার ইবাদতকে বুঝান হয়েছে। যেমন : সালাত, মানত, যবেহ্ আর দোয়ার তো কোনো কথাই নেই। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

দোয়া-ই ইবাদত। (তিরমিযি, হাসান সহিহ)। 

সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই এটি কোনো রাসূল কিংবা ওলীর উদ্দেশে আদায় করা জায়েয নয়। তেমনি দোয়াও। কারণ, সেটিও ইবাদত। একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য খাস। 

আল্লাহ বলেন :

বল, ‘নিশ্চয় আমি আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকে শরীক করি না’।  (সূরা জিন, ৭২: ২০ আয়াত)

৪। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : 

دَعْوَةُ ذِي النُّوْنِ إذْ دَعَا بِهَا وَهُوَ في بَطْنِ الْحُوْتِ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ لَمْ يَدعُ بِها رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِى شَيءٍ قَطُّ الاَّ اسْتَجَابَ الله لَهُ (صححه الحاكم ووافقه الذهبي)

অর্থাৎ, ইউনুসের আ. দোয়া যা তিনি মাছের পেটে বসে করেছিলেন : তুমি ছাড়া সত্যিকার কোনো মাবূদ নেই। হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। নিশ্চয়ই আমি যালিমদের অন্তর্ভূক্ত। এই দোয়া যে কোনো মুসলিমই যে কোনো ব্যাপারে করুক না কেন অবশ্যই আল্লাহ তার দোয়াকে কবুল করবেন। (হাকেম, সহিহ)।

৫। আল্লাহ তা’আলার ইবাদত একমাত্র তাঁর জন্যই হবে এবং তাঁর নিকট দোয়ার মাধ্যমে হে আল্লাহ! আমি চাই তুমি আমার দুঃখ দুর কর! কারণ দুঃখ কষ্ট আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারে না।

একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই করবে। (তিরমিযি, হাসান সহিহ)।

(১)

ইমাম নববী ও আল্লামা হাইছামী রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যখন দুনিয়া বা আখিরাতের কোনো কাজে সাহায্য চাও তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাও। বিশেষ করে সেসব কাজে যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ করতে পারে না। যেমন, রোগমুক্তি, রিযক ও হেদায়েত দান। এগুলো কেবল আল্লাহ তালাই পারেন অন্য কেউ নয়।

আল্লাহ বলেন : 

অর্থাৎ, আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। (সূরা আনআম, ৬: ১৭ আয়াত) 

(২)

তবে হ্যাঁ, জীবিতদের নিকট সেসব কাজে সাহায্য চাওয়া যায় যা তাদের সামর্থের মধ্যে। যেমন, মসজিদ নির্মাণ বা এ জাতীয় অন্য কোনো কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য চাওয়া। 

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন :

সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। (সূরা মায়িদা, ৫ : ২ আয়াত)। 

যে ব্যক্তি (চলার জন্য) দলীল-প্রমাণ চায় পবিত্র কুরআনই তার জন্য যথেষ্ট। আর কেউ উদ্ধারকারী অনুসন্ধান করলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। ভীতি প্রদর্শনকারী চাইলে মৃত্যুই তার জন্য যথেষ্ট। আর এগুলোর কোনোটাই যার জন্য যথেষ্ট নয়, তার জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন :

আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? (সূরা যুমার, ৩৯: ৩৬ আয়াত)।

৩। শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী রহ. আল-ফাতহুর রব্বানী গ্রন্থে বলেছেন, কেবল আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, অন্য কারো কাছে নয়। ধিক তোমাকে, কোন মুখে দেখা করবে তুমি আল্লাহর সাথে কিয়ামত দিবসে? তাঁর সাথে তুমি ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ায় বিবাদ করেছ। তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ। তাঁর সাথে শিরক করে সৃষ্টির দিকে মুখ করেছ। তাদের মুখাপেক্ষী হয়েছ। তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জিনিস যাঞ্ছা করেছ। তাদের উপর ভরসা করেছ। তাদেরকে তোমার ও আল্লাহর মধ্যে সংযোগকারী স্থির করেছ। তাদের সাথে থাকা তোমার জন্য ফিৎনা। তাদের কাছে কিছুই নেই; না রাজত্ব, না ক্ষমতা, না দৌলত, না সম্মান। এগুলো আছে একমাত্র আল্লাহর কাছে। তিনি ভিন্ন কারো কাছে এসব কিছুই নেই। তাই প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহ তাআলার সাথে থাকতে চেষ্টা কর। বান্দার কথার প্রতি দৃষ্টি দিও না। 

(৪)

যে সব সাহায্য প্রার্থনা শরীয়ত অনুমোদন করে: 

যেমন কষ্ট-অসুবিধা দূর করার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। যে কোনো বিষয়ে তার দারস্থ হওয়া ইত্যাদি…

(৫)

আর যে সব সাহায্য প্রার্থনা শিরকের পর্যায়ভূক্ত: 

যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট এমন বিষয়ে সাহায্য প্রার্থনা করা যার উপর তিনি ব্যতীত আর কারো ক্ষমতা নেই। যথা প্রয়াত আম্বিয়া ও আওলিয়াদের নিকট সাহায্য চাওয়া। অনুপস্থিত জীবিত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চাওয়া। এরূপ সাহায্য প্রার্থনা শিরক, কারণ যাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হল, তাদের হাতে না আছে উপকার করার ক্ষমতা, আর না আছে ক্ষতি করার সামর্থ। এসব আহ্বান ও দোয়া তারা শুনতেই পায় না। যদি শুনতে পেতও উত্তর দিতে পারত না। মহান আল্লাহ এসব বিষয় পবিত্র কুরআনে পরিস্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

আল্লাহ বান্দার সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার কোনো ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। (মুসলিম)। 

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!