Skip to content

 

মৌমাছিদের জাতঃ মৌমাছি কত প্রকার ও কি কি? কোন মৌমাছি পালন করা উচিত? মৌমাছি খামারে মৌমাছি ও মধু চাষ।

মৌমাছিদের জাতঃ মৌমাছি কত প্রকার ও কি কি? কোন মৌমাছি পালন করা উচিত? মৌমাছি চাষ খামার

এই পাঠ পড়লে জানব-
মৌমাছিদের জাত সমূহ? মৌমাছি কত প্রকার ও কি কি? কোন মৌমাছি পালন করা উচিত?

মৌমাছিদের জাতঃ

বাংলাদেশ ও ভারতে সাধারণত তিন প্রকারের মৌমাছি রয়েছে।

১. এপিস সিরানা (Apis cerana)

২. বাঘা মৌমাছি বা এপিস ডরসেটা (Apis Dorseta) ও

৩. ক্ষুদে মৌমাছি বা এপিস প্লোরিয়া (Apis Floria)

১. এপিসে সিরানা (Apis cerana)

বাংলাদেশে মৌবাক্সে মধু উৎপাদনের জন্য যে মৌমাছি প্রতিপালন করা হয় তার মধ্যে এপিস সিরানা বিশেষ পরিচিত। এই জাতীয় মৌমাছিকে ভারতীয় মৌমাছিও বলা হয়। এ ছাড়া ডারোহলা, মহন, মৌনা নামেও এরা পরিচিত।

বসবাসের স্থানের ওপর নির্ভর করে এদের দেহের কিছু পার্থক্য দেখা যায়। পার্থক্যটা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চলের এপিস সিরানা জাতের মৌমাছিদের মধ্যে। এই জাতের সমতল অঞ্চলের শ্রমিক মৌমাছিরা অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের এবং দেখতে হলদেটে ধরনের। আর পার্বত্য অঞ্চলের মৌমাছিরা আকারে বড় এবং দেখতে একটু কালচে ধরনের।

এরা গাছের ডালের কোটরে, উইপোকার পরিত্যক্ত ঢিবিতে, পাহাড় বা দেয়ালের ফোকরে বা গর্তে, বদ্ধ এবং আচ্ছাদিত স্থানে বাসা বাঁধে। এ ছাড়া বসতবাড়িতে এরা কাঠের গুঁড়ির গর্ত, কাঠের বাক্স, কেরোসিনের খালি টিন, মাটির হাঁড়ি, মাটির ঘরের কার্নিশ ইত্যাদি জায়গায় বাসা বাঁধে। এই জাতের মৌমাছিরা খুব শান্ত প্রকৃতির। এদের নাড়াচাড়া করা সহজ। এরা ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না।

এপিস সিরানা জাতের মৌমাছিরা খুব পরিপাটি হয়। মধু সংগ্রহ করে অধিক। এই জাতের কলোনী থেকে পার্বত্য অঞ্চলে প্রতি বৎসর গড়ে ৮ থেকে ১০ পাউন্ড মধু পাওয়া যেতে পারে। আর সমতল অঞ্চলে ৪ থেকে ৫ পাউন্ড।

সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌবাক্সে এই মৌমাছি পালন করা হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে এপিস সিরানা জাতের মৌমাছি মৌবাক্সে রেখে পালন করলে প্রতিবাক্সে বৎসরে প্রায় ৪০ পাউন্ড মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। তাই অন্যান্য প্রজাতির মৌমাছির চেয়ে এ ধরনের মৌমাছি বাক্সে প্রতিপালন করা খুবই সহজ এবং লাভজনক।

See also  মৌমাছির রোগ, চিকিৎসা ও প্রতিকার মৌমাছিদের রোগ ও তার দমন

বিরক্ত না করলে কিন্তু এরা সহজে কাউকে হুল ফোটায় না। বর্তমানে বাংলাদেশ চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, এপিস সিরানা জাতের মৌমাছি পালিত হয়।

২. বাঘা মৌমাছি (Apis Dorseta)

এই জাতের মৌমাছি আকারে সর্বাপেক্ষা বড়। তাই এদের ডাঁশ বা দৈত্য মৌমাছি বলা হয়। এই জাতীয় মৌমাছি ডুমনো, ভান্ডোর বা ভনোয়ার নামে পরিচিত। এদের সমতল এবং পার্বত্য অঞ্চল সব জায়গায় পাওয়া যায়।

যখন প্রচুর শীত পড়ে তখন তারা স্থান পরিবর্তন করে। মধু আহরণের জন্যও তারা কলোনী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের সময় এরা পথের স্থানে স্থানে বিশ্রাম নেয়। ঝাঁক বেঁধে এরা উঁচু পাহাড়ও ডিঙ্গিয়ে যেতে পারে।

বাঘা মৌমাছিদের একটা সাধারণ কলোনী ২ থেকে ৪ ফুট লম্বা এবং ৫ থেকে ৭ ফুট চওড়া হয়ে থাকে। এরা বিভিন্ন ধরনের গাছ যেমন আম, কাবীল, সেগুন, বাবলা, জাম গাছের ডালে চাক বাঁধে। সুন্দরবন অঞ্চলে সুন্দরীর গাছে গাছে এই মৌমাছির চাক দেখা যায়। এমনও দেখা যায় একটা গাছে ১০/১২টি চাক বসেছে। একত্রে কাছাকাছি এই রকম অনেকগুলো কলোনীকে মৌমাছি পালন কেন্দ্র বলা হয়।

এরা বছরের পর বছর একই গাছে চাক বেঁধে থাকে। অনেক সময় কোনও গাছে চাক না থাকলেও মৌমাছিদের যে গন্ধ চাকে থাকে দীর্ঘদিন পর আর একদল মৌমাছি এসে সেই গন্ধ পেয়ে ওই গাছে চাক বাঁধে। এদের চাকের কোষগুলো আয়তক্ষেত্রের মতো। শ্রমিক কোষ এবং পুরুষ মৌমাছির কোষ একই আকারের।

এরা চাকের ওপরের কোষগুলোতে মধু জমা রাখে। বাঘা জাতের মৌমাছির শ্রমিক মৌমাছির গায়ের রং হালকা তামাটে ধরনের। লম্বায় ১৬ থেকে ১৮ মিলিমিটার। এই জাতের ৩০০০ শ্রমিক মৌমাছির মোট ওজন হবে ১ পাউন্ড। এই জাতের রাণী মৌমাছিদের গায়ের রঙ শ্রমিক মৌমাছিদের থেকে খানিক কালো ও তামাটে ধরনের। অন্যান্য জাতের মৌমাছিদের মতোই এদের রাণী মৌমাছি আকারে বড়। তবে পুরুষ মৌমাছি শ্রমিক মৌমাছিদের সমান আকারের।

See also  মৌমাছি কি খায়? মৌমাছি কোথায় যায়? ফুল ফুটলে মৌমাছি উড়ে আসে কেন?

বাঘা মৌমাছিরা খুব ভোর থেকে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করে। আবার কাজ শেষ করে দেরিতে। তার মানে অনেক সময় ধরে কাজ করার সুযোগ পায়। এরা মধু সংগ্রহ করে অধিক। এই জাতের মৌমাছিদের প্রতি চাক থেকে বছরে কমপক্ষে ৮০ পাউন্ড মধু পাওয়া যায়।

বাঘা মৌমাছি তাদের মতোই বাঘা ধরনের। খুবই হিংস্র প্রকৃতির। সহজে রেগে যায়, দলবেঁধে শত্রুকে আক্রমণ করে। এরা ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না। তাই মধু সংগ্রহের সময় ধোঁয়া দিয়ে এদেরকে তাড়ানো হয়। তবে পেশাদার মধু সংগ্রহকারীরা মধু সংগ্রহে কোনও রকমের বেগ পায় না। বিশেষ করে সুন্দরবন অঞ্চলে এই জাতের মৌমাছিদের কলোনীই বেশি। মধুসংগ্রহকারীরা এদের হত্যা না করে সন্ধ্যাবেলা বা রাতের বেলা মধু সংগ্রহ করে।

৩. ক্ষুদে মৌমাছি (Apis Florea)

ছোট্ট মক্ষির মতো দেখতে ক্ষুদে মৌমাছি সমতল ভূমিতে বাস করে। এরা বেশি উপরে উঠতে পারে না। মাঝে মাঝেই এরা বাসস্থান পরিবর্তন করে। কোনও স্থানে ৫ মাসের বেশি তারা সাধারণত থাকে না।

ক্ষুদে মৌমাছিরা খুবই ছোট আকারের চাক তৈরি করে। লম্বায় বড় জোর দেড় ফুট এবং গভীরতায় ১ ফুট হয়ে থাকে। গাছের ডালে, ছোট ঝোপ ঝাড়ে, দালানের কার্নিশে, খালি বাক্সে প্রভৃতি জায়গায় এরা চাক বানায়। যথারীতি চাকের উপরিভাগে মধুকোষগুলোতে মধু সঞ্চয় করে রাখে। এদের চাকে ৩২ থেকে ৩৬টি শ্রমিক কোষ এবং ২০ থেকে ২১টি পুরুষ কোষ থাকে।

ক্ষুধে মৌমাছিদের শ্রমিক মৌমাছির তলপেটে কমলা রঙের ও শেষভাগে কালো সাদা ডোরা ডোরা দাগ থাকে। রাণী মৌমাছির তলপেটের রং সোনালী তামাটে ধরনের। পুরুষ মৌমাছির তলপেটের রং কালো এবং ধোঁয়াটে।

এরা মধু সংগ্রহ করে অল্প পরিমাণে। এদের সংগ্রহ করা মধু একটু পাতলা ধরনের। এরা সহজে কাউকে হুল ফোটায় না। তাই কেউ কেউ মনে করেন এদের হুল নেই। আসলে তাদের হুল আছে। আর তারা যেখানে হুল ফোটায় সেখানটা ফুলে ওঠে।

See also  আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনে মৌমাছিদের কি কি পরিচর্যা করতে হয়? মৌমাছি পালনের পরিবেশ, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীতকালের পরিচর্যাঃ মৌমাছি ও মধু চাষের মৌমাছি খামারে মৌমাছি পালনের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

এরা খোলা জায়গায় চাক বেঁধে বসবাস করতে ভালোবাসে, ফোকর বা গর্তে আটকাভাবে বাস করতে পছন্দ করে না। এদের ঝাঁক ছেড়ে কোথাও চলে যাবার প্রবণতা খুব বেশি।

কোন মৌমাছি পালন করা উচিত?

এক কথায় বলা যায় এপিস সিরানা (Apis Cerana) জাতের মৌমাছি পালন করা উচিত। শান্ত স্বভাবের এই মৌমাছিরা দীর্ঘদিন ধরে এক কলোনীতে বসবাস করে। তাছাড়া এদের কলোনী থেকে মধুর উৎপাদনও হয় ভালো।

যদি বাঘা জাতের মৌমাছিদের থেকে এর চেয়েও বেশি মধু উৎপাদন সম্ভব কিন্তু তাদের পোষ মানোনো খুবই কঠিন। তারা মোটেও শান্ত নয়। রীতিমতো হিংস্র প্রকৃতির। আর একটা ব্যাপার হলো বাঘা মৌমাছিরা গাছের ডালে চাক বাঁধতে অভ্যস্ত। কোনও বাক্স পেটরা বা বদ্ধ জায়গা তাদের মোটেও পছন্দ নয়।

ক্ষুদে মৌমাছিও পালনের উপযোগী নয়। এদের থেকে খুবই অল্প পরিমাণের মধু উৎপাদিত হয়। তাছাড়া এই মৌমাছি পালনের ভালো কোনও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ও নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!