এই পাঠ পড়লে আমরা জানব-
মৌমাছি খাদ্য/খাবার কি? মৌমাছি কি খায়? মৌমাছি কোথায় যায়? ফুল ফুটলে মৌমাছি উড়ে আসে কেন?

মৌমাছি কি খায়? মৌমাছি কোথায় যায়?
মৌমাছিরা তাদের খাদ্য হিসেবে গাছ গাছালি থেকে মধু ও পরাগ সংগ্রহ করে। চারপাশের গাছপালা যখন ফুলে ফুলে ভরে যায় তখন মৌমাছিরা খুশিতে নেচে ওঠে। মৌমাছি ও উদ্ভিদের মধ্যে দারুণ দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক।
মৌমাছি ফুলের মধু খেতে আসলে ফুলের মধ্যে কি পরিবর্তন ঘটে বলতে পারবে?
ফুল থেকে মৌমাছিরা নেয় মধু এবং বিনিময়ে ফুলে ফুলে পরাগের মিলন ঘটিয়ে দেয়। এর ফলে ফুল ফলে পরিণত হয়। সেই ফল বীজ থেকে উৎপন্ন হয় নতুন বৃক্ষ। মৌমাছি আর বৃক্ষের এই সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে মৌমাছি পালনের জন্য স্থান নির্বাচন করা উচিত। এজন্য যে সব বিষয়ের খোঁজ নিতে হবে।

১. এক দুই মাইলের মধ্যে কোন কোন গাছে পর্যাপ্ত ফুল ফোটে।
২. ফুল ফোটার পর কতদিন স্থায়ী হয়।
৩. মৌমাছিরা ওই ফুল থেকে মধু এবং পরাগ দুই-ই সংগ্রহ করতে পারবে কিনা।
৪. বছরের পর বছর আশেপাশের অঞ্চলে ফুল থাকবে কিনা।
৫. প্রধান প্রধান শস্য ছাড়াও অন্য কোনও গাছে ফুল আছে কিনা। শ্রমিক মৌমাছিরা ফুল থেকে যে মধু আর পরাগ সংগ্রহ করে তাই তারা সবাই খাবার হিসেবে খায়। অর্থাৎ মধু হচ্ছে মৌমাছিদের প্রধান খাদ্য আর শূককীট অবস্থায় মধু মেশানো পরাগ দিয়ে তৈরি রয়েল জেলি।

শ্রমিক মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু শুষে নেয় আর ওদের সারা শরীরে লাগে। শ্রমিক মৌমাছিদের পেছনের পায়ে ‘পরাগ থলি’ থাকে। সারা শরীরের পরাগকে ঝেড়ে ঝুড়ে তারা এই থলিতে জমা করে। কলোনীতে ফিরে তারা মধু কোষে মধু এবং পরাগ কোষে পরাগ জমা রাখে।
মৌমাছিরা মোম দিয়ে তাদের বাসা তৈরি করে। মানুষের গা থেকে যেমন ঘাম বের হয়, তেমন করে শ্রমিক মৌমাছিদের তলপেটের ৮টা গ্রন্থি থেমে মোম বের হয়। ওই মোম তারা পা দিয়ে আঁচড় কেটে কেটে মুখে আনে এবং চাক তৈরি করে।
ফুল ফুটলে মৌমাছি উড়ে আসে কেন?
বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের ফুলে মধুর পরিমাণ বিভিন্ন রকমের। কোনও অঞ্চলের ফুলে মধু আছে কিনা মৌচাকের মধু কোষে থাকা মধুর পরিমাণ দেখেই অনুমান করা যায়। আর মৌমাছিদের পা দেখলে বোঝা যাবে যে গাছ সমূহে পরাগ আছে কিনা।
আমাদের দেশের গাছপালাতে প্রচুর মধু ও পরাগ রয়েছে। পেঁপে, কলা, আম, জাম, জামরুল, পেয়ারা, বরই, লিচু, লেবু, তেঁতুল, আমড়া, খেজুর গাছের ফুলে মধু পাওয়া যায়।
গ্রামের বিভিন্ন শাক, সবজি যেমন : লাউ, বেগুন, পালং, শশা, কুমড়া প্রভৃতি ফুল থেকে মৌমাছিরা মধু ফুল দুই-ই সংগ্রহ করে। ফুল থেকে পাওয়া মধুর রং হয় সাদা। এই মধু সংগ্রহ করলে দেখা যাবে তাতে ডালডার মতো দানা পড়েছে। রং হয়ে আছে একদম দুধ সাদা।

বরই ফল থেকে আহরণ করা মধুর রং হয় পাকা বরইর মতো। নিম, শিমুল, মহুয়া ইত্যাদির ফুল থেকেও মধু সংগ্রহ করা যায়।
এ ছাড়া নানা রঙের নানা বর্ণের ফুল-গাঁদা, সূর্যমুখী, জুঁই, জিনিয়া, ডালিয়া, কসমস থেকে মধু ও পরাগ সংগৃহীত হয়।
গ্রামবাংলা জুড়ে রয়েছে গাছগাছালি, ফসলের মাঠ। তাই বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামই বলতে গেলে মৌমাছি পালনের জন্য উপযুক্ত ঝোপ ঝাড়, বন-জঙ্গল, সারিসারি গাছ এই রকম জায়গায় মৌমাছি পালন করে প্রচুর মধু সংগ্রহ করা সম্ভব।

আমাদের দেশের কিছু সবজি বা তরকারী জাতীয় ফুলকপি, বাঁধাকপি, থেকেও মধু পরাগ সংগ্রহ করা যায়।
পেঁয়াজ রসুনের ফুলেও মৌমাছিরা বসে। তবে মটরশুঁটির ফুলে মৌমাছি বসে না। মূলার ফুল থেকে সামান্য মধু ও পরাগ উৎপন্ন হয়।
ধান, গম, জব গাছের ফুলে বসে মৌমাছিরা শুধু পরাগ সংগ্রহের জন্য। তামাক ক্ষেত থেকে শুধু পরাগ পাওয়া যায় তবে কখনও কখনও সামান্য পরিমাণ মধু উৎপন্ন হয়।