Skip to content

 

যা বলতে চান গুছিয়ে বলার চেষ্টা করুনঃ কথা বলার দক্ষতা অর্জন করুনঃ বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-৬, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।

যা বলতে চান গুছিয়ে বলার চেষ্টা করুনঃ কথা বলার দক্ষতা অর্জন করুনঃ বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-৬, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।

বিষয়ঃ খামারিয়ান এর আজকের এই পোষ্টটিতে তুলে ধরা হবে, যা বলতে চান গুছিয়ে বলার চেষ্টা করুনঃ কথা বলার দক্ষতা অর্জন করুনঃ বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-৬, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)। আশা করি শেষ অবধি সাথেই থাকবেন, চলুন শুরু করা যাক।

◼ একজন বিখ্যাত ইংরেজ বিশপকে জানি, যিনি প্রথম মহাযুদ্ধে একটি সৈন্যদল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিটি যুদ্ধেই তিনি গো-হারা হেরেছিলেন। কারণ সৈন্যদের সামনে তিনি শুধু বিদ্যেবুদ্ধির অযাচিত পাণ্ডিত্য ফলাতেন, যাতে সৈন্যদের একবিন্দুও আগ্রহ ছিল না। তারা কেন এবং কি জন্য লড়াই করতে চলেছে সে সম্পর্কেও তাদের ধারণা ছিল অস্পষ্ট। বক্তা বিশপ তাঁর বক্তব্য এবং কাজকর্ম সম্পর্কে নিজেই বিশেষ ওয়াকিবহাল ছিলেন না বলে তাঁর পতন হয়ে উঠেছিল অবশ্যম্ভাবী। কথা বলার মূল উদ্দেশ্য কি? বক্তব্যের গভীরতায় একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো ছাড়া অন্য কিছু না।

আর বিশদ করে বলতে হলে-

  • (১) কথা কাজ হওয়া চাই
  • (২) কথার মাধ্যমে কিছু জানানো চাই
  • (৩) শ্রোতার মনে প্রভাব বিস্তার করানো চাই
  • (৪) শ্রোতাকে আনন্দ দেয়া চাই

◼ আব্রাহম লিঙ্কনের জীবনের কিছু উদাহরণ থেকে আমরা উপরোক্ত বিষয়ে শিক্ষা পেতে পারি। জীবনে যত বক্তব্য লিঙ্কন রেখেছিলেন তার প্রত্যেকটিরই মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রোতার মনে প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করা।

◼ তাঁর কথার ভেতর, তিনি যখন জুরীদের সামনে বলতেন, যখন তিনি নির্বাচনী প্রচার অভিযানে নামতেন, তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্যে, তাঁর নির্বাচনে জয়লাভ সমস্ত কিছুর পেছনেই মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি কার্যে সফলতা অর্জন করা।

◼ প্রেসিডেন্ট হওয়ার দু’বছর পরের ঘটনা। একটি সভায় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের উপর লিঙ্কনকে বলতে হয়েছিল। সেখানে মূল আবিষ্কারের উপর লিঙ্কনকে বলতে হয়েছিল। সেখানে তিনি মূল লক্ষ্য ঠিক করে নিয়েছিলেন শ্রোতাদের আনন্দ দেবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তিনি মূলত ব্যর্থই হলেন। একজন শ্রোতাও তাঁর বক্তব্যে খুশি হল না। কারণ জনমানসে লিঙ্কন সম্পর্কে লোকের ধারণা ছিল- লিঙ্কন খুব বড় বক্তা। তাঁর বাগ্মীতার যাদুকরী ক্ষমতা দর্শক শ্রোতার চোখে লেগে থাকত সব সময়। তবু প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন সার্থকতার চরম শিখরে উন্নীত হতে পেরেছিলেন একমাত্র বলতে পারার জন্যই। কারণ তিনি জানতেন তাঁর বক্তৃতার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য কী। তাঁর অধিকাংশ বক্তৃতাই মানব সভ্যতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হয়ে থাকবে। সেটা সম্ভব হয়েছিল তাঁর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নির্বাচন, বক্তৃতার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি পুরোমাত্রায় ওয়াকিবহাল ছিলেন বলেই।

◼ বেশির ভাগ বক্তাই বক্তৃতা মঞ্চে অসফল হন। কারণ, কি বলছেন, কাকে বলেছেন- এই বিষয়গুলি গুলিয়ে ফেলেন বলেই। এমন কি নির্দিষ্ট বক্তব্য বিষয় নিয়ে বলতে শুরু করে অতি দ্রুত প্রসঙ্গান্তরে চলে যান। সেটা অমার্জনীয়ভাবে অসফলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরও একটি চমৎকার উদাহরণ দিচ্ছি–

◼ একজন আমেরিকান সিনেটের বক্তব্য রাখতে গিয়ে সচেতনভাবেই মুর্খের মত শুধুই তথ্যবহুল একঘেয়ে বিরক্তিকর ঘ্যানর ঘ্যানর বক্তৃতা করে চলতেন। শ্রোতারা এ ধরনের উপদেশ আদৌ শুনতে পছন্দ করতেন না। তারা পছন্দ করত চিত্তবিনোদনকারী বক্তব্য। ছা তবুও প্রথম দিকে তারা বিনীতভাবে ধৈর্য্য ধরে দশ পনের মিনিট বক্তব্য শুনল। কিন্তু তার পরেও বক্তার একঘেয়ে নীরস বক্তব্যের প্রাণবন্ত মোড় ফিরল না দেখে তারা অধৈর্য হয়ে উঠল। কেউ কর্কশ গলায় বাহাবা জানাতে থাকল। মুহুর্তের মধ্যে সকল শ্রোতা একত্রিত হয়ে হৈ-হট্টগোল চেঁচামেচি জুড়ে দিল। এসব সত্ত্বেও আমাদের এই ভয়ঙ্কর বক্তা নিরাশ না হয়ে পুরোদমে বক্তৃতা চালিয়ে যেতে লাগলেন। তারপর চিৎকার এমন পর্যায়ে পৌছল যে বক্তা তাঁর নিজের বক্তব্যই ভাল করে শুনতে পেলেন না। কানে তালা লাগা অবস্থায় নানারকম বিশেষণে ভূষিত হয়ে আমাদের বক্তাটি অচিরেই আধোবদনে সভাগৃহ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।

◼ এই উদাহরণ থেকে আমরা এই শিক্ষা লাভ করলাম— উদ্দেশ্য, পরিবেশ এবং শ্রোতার ভাল লাগার বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাল করে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। তাহলেই বক্তৃতার যা মূল্য লক্ষ্য-বক্তব্য পেশ করা, কথার মাধ্যমে পেশ করা, কথার মাধ্যমে শ্রোতার মন জয় করা- সে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে উঠবে। এর অন্যতা হলেই উপরের ঘটনার সেই সিনেটের বক্তার মতোই নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হবে। উপরের বক্তৃতা করার মূল্য উদ্দেশ্য বিষয়ক চারটি কারণ বাবাবার পড়ুন এবং অনুশীলন করুন। শুধুমাত্র পড়ার জন্যই পড়বেন না, বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন। কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই পড়ুন।

প্রয়োজনীয় কথা হল–

কম কথা বলুন। কাজের কথা বলুন। অকাজের কথা ঘন্টার পর ঘন্টা বলে কোন লাভ নেই।

◼ সিকাগো, লজ এঞ্জেলস, নিউইয়র্কের বিভিন্ন প্রান্তে আমি বহুবার নানারকম পরীক্ষামূলক বক্তৃতা আসরের আয়োজন করেছিলাম। তাকে করে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যের সারাংশ থেকে একটা স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছিলাম। তা হলো ভাল বক্তৃতা করার . ম্যাজিক ফরমূলা কি হতে পারে? খুবই সোজা উত্তর ঠিক করা হয়েছে আপনাদের প্রয়োজনের কথা ভেবে।

◼ ধরুন আপনি আমাদের ইনস্টিটিউশনে উপস্থিত রয়েছেন। সেখানে আমাদের সবার সামনে আপনাকে বলতে বলা হল। আপনি একদম ঘাবড়ে যাবেন না। টানটান চিবুকে দৃঢ়তা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলা আরম্ভ করুন।

  • এক : আপনার নিজের জীবনের স্মরণীয় কোন ঘটনার বিবরণীদিয়ে সুন্দরভাবে বলতে শুরু করুন। আপনার মনের ভাব, ঘটনার সময় আপনি অনুভব করবেন তা ভাল করে শ্রোতার মনে গেঁথে দিন।
  • দুই : পরিষ্কার করে গুছিয়ে নিয়ে অল্প অল্প করে বক্তব্যের সুতো ছাড়ুন।
  • তিন : আপনি যা বলতে চান শ্রোতাকে উদ্দেশ্য করে সেটা ভুলে যাবেন না। শ্রোতাদের যা জানানো দরকার সেটা জানাবেনই সময় সুযোগ করে সেটা ভুলে যাবেন না। যুক্তি তর্ক দিয়ে শ্রোতাকে কোন বিষয়ে আগ্রহী করতে চাইলে ধীরে ধীরে সেই পথে এগোন।

◼ আমাদের দ্রুত গতিশীল জীবনে কোন শ্রোতাই আপনি পাবেন না-যে আপনার বক্তব্য শোনার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দেবে আপনাকে। প্রত্যেকেরই হাতে সময় খুব কম-এটা মনে রেখে কথা সংক্ষিপ্ত করুন।

◼ সুতরাং অযথা কথা না বাড়িয়ে সোজাসুজি কায়দা করে কাজের কথায় আসুন। আপনার প্রত্যেকটি কথা, প্রতিটি শব্দ যেন দামী ওজনদার হয় নির্গত শব্দও যেন অপচয়ের খাতে না যায় সেদিকে লক্ষ রাখুন। সব কথাই সমান গুরুত্বপূর্ণ হয় না কখনও। সংবাদপত্রের খরব যেনমভাবে গুরুত্ব অনুযায়ী সাজানো হয়ে থাকে ঠিক সংবাদপত্রের সেভাবে আপনর কথাকেও গুরুত্ব অনুসারে সাজিয়ে ভাগ করে নিন। অর্থ্যাৎ কোন কথার পর কোন কথা বলা যেতে পারে, বললে আপনার কাজে আসবে সেটা ঠিক করে নিন।

◼ আর একটা কথা সব সময় মনে রাখতে হবে-শ্রোতারা কখনই ভুল করা, ক্ষমা- চাওয়া, সত্যি-মিথ্যের সাক্ষ্য-প্রমাণ শুনতে পছন্দ করে না। তারা নাটকীয় কাজকর্ম আর দ্রুত গতিশীল বক্তব্যের দিকেই বেশি ঝুঁকতে চায়। সুতরাং আমাদের ম্যাজিক ফরমূলা অনুযায়ী প্রথম শব্দটি যেন শ্রোতার মনে রেখাপাত করে সে দিকে নজর দিন।

◼ ‘তবে এটা ঠিক, ছোটখাটো বক্তব্যের পক্ষ্যে এ ধরনের নাটকীয় প্রভাবমুক্ত কথা সহজ হবে, দর্শকের মনে কৌতুহল জাগিয়া রাখা সহজ হবে।

◼ বিজ্ঞাপনের জগতেও আমাদের ম্যাজিক ফরমূলা খুবই কার্যকর হয়। কম কথায় বেশি আবেদন জাগিয়ে তোলাই হল বিজ্ঞাপনের মূল লক্ষ্য।

(ক) পূর্ব-প্রস্তুতি ছাড়া কিছু বলার জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখুন

◼ যখনই আপনাকে কোনও পূর্ব প্রস্তুতিহীন বিষয় সম্পর্কে বলতে ডাকা হবে তখন আশা করা হবে আপনি কোনও বিষয় সম্পর্কে বেশ ভালোই বলতে পারবেন। সমস্যা হল, আপনাকে যত কঠিনই হোক না কেন, এই বক্তৃতা দেয়ার পরস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে এবং ঠিক করে নিতে হবে আপনার বক্তব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে আপনি ঠিক কোন কোন পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রথমে মানসিক প্রস্তুতি আনুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কি বলেছেছেন বিষয়টি সম্পর্কে। আপনাকে কিছু বলতে হলে, কোন পয়েন্ট বিশেষেভাবে উল্লেখযোগ্য এই স্বল্প সময়ের মধ্যে ঠিক করে নিন, কিভাবে মঞ্চে উঠে শ্রোতাদের যুক্তি-তর্কের সমস্যার সমাধান করবেন।

◼ সুতরাং প্রথম কথা হল সকল সময়েই কোনও কিছু পূর্ব পরিকল্পনাহীন বিষয় সম্পর্কে বলার জন্য মানসিক দিক থেকে প্রস্তুত হোন। কিন্তু এই মানসিক প্রস্তুতির মূল চাবিকাঠি হল চিন্তার গভীরতা-যা কিনা পৃথিবীর সব থেকে কঠিনতম গুণ। কিন্ত আমার স্থির বিশ্বাস এমন কোন ব্যক্তি নেই যিনি পূর্ব পূস্তুতিহীন বিষয়ে পারদর্শিতা লাভ করেছেন অথচ চিন্তার রাজ্যে যাঁর কোন শৃঙ্খলা নেই অথবা মঞ্চে বক্তৃতা দেয়াকালীন সময়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে নিজেকে চিন্তার বেড়াজালে আবিষ্ট রাখেননি এমন বক্তার নজীর অন্তত আমার তালিকায় নেই। একজন সুদক্ষ পাইলট যেমন তাঁর আকাশ ভ্রমণকালে কোনও বিপদের গন্ধ পেলে নামমাত্র বিচলিত না হয়ে অতি সুস্থিরভাবে ধীর মস্তিষ্কে সমস্ত ব্যাপাটা আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেন। একজন অ-পূর্বপরিকল্পিত বিদ্যায় ব্যুৎপত্তি অর্জনকারী বক্তা যেমন নানাভাবে তাঁর আলোচ্য বিষয়টিকে বিশেষভাবে মনোযোগ আকর্ষণের লীলাক্ষেত্র করে তোলেন, এইরকম বক্তৃতাকে অবশ্য অপূর্বপরিকল্পিত বক্তৃতা বলা চলে না এবং সাধারণ প্রস্তুতির বক্তৃতা বা আলোচনা বলা যায়।

◼ আপনি যখন আপনার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জেনে গেলেন, তখন আপনার সমস্যা হল কি করে তা যুক্তিসঙ্গ এবং সময়মত হবে। একজন অপূর্বপরিকল্পিত বক্তা হিসেবে আপনাকে নির্দিষ্ট সময় দেয়া হবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই আপনাকে সব গুছিয়ে বলতে হবে। আপনি কোন্ আঙ্গিকে বলতে শুরু করবেন আগে ঠিক করুন। আপনি প্রস্তুতিহীন বলে ক্ষমা চাইবেন না যেন। যে বিষয়টা আপনার ভাগ্যে পড়েছে তা মোটেই অপ্রত্যাশিত নয় এমনভাবেই অযথা সময় নষ্ট না করে সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলে চলুন, দেখবেন শ্রোতার মন জয়ীত হবেই এবং আপনিও কালজয়ী বক্তরূপে স্বীকৃতি পাবেন।

(খ) যত দ্রুত সম্ভব উদাহরণ দিন

◼ বলতে শুরু করেই মাথা খাটিয়ে সঠিক উদাহরণ টানুন। তাহলেই আপনি অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবেন। বাচনভঙ্গি হয়ে উঠবে সপ্রভিত আর জড়তা বা আড়ষ্টতা থেকে পাবেন সত্যিকারের মুক্তি।

◼ সবচেয় লাভ হবেন শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরে। শুধুমাত্র কথার কচকচি কেউ পছন্দ করে না-সেখানে সুন্দর উপমা আর ঘটনা শ্রোতাদের শুনতে আগ্রহী করে তোলে-ক্লান্ত করে না।

তাহলে মোদ্দা কথা হল— উদাহরণ দিন বক্তৃতার মাঝখানে। তাহলে শ্রোতারা একঘেয়েমি কাটিয়ে আপনার প্রতিটি কথা শুনতে আগ্রহী হবে।

(গ) প্রাণবন্তভাবে কথা বলুন, আত্মবিশ্বাস রাখুন

◼ আপনি নিজেই যদি নির্জীব, ক্লান্ত আর প্রাণশুণ্যভাবে শ্রোতাদের কাছে বক্তব্য রাখেন তাহলে আপনি কি করে আশা করেন যে শ্রোতারা আপনার কথা শুনতে আগ্রহী হবে।

তাহলে মোদ্দা কথা শক্তি ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা আত্মবিশ্বাস পরিপূর্ণ হয়ে কোন কথা যদি আপনি বলেন-তক্ষুণি তা শ্রোতার মনেও সংক্রামিত হবে।

(ঘ) যে কোনও মুহুর্তে আপনাকে কিছু বলতে হতে পারে

◼ ধরুন, আপনি একটি সভায় অথবা কোন ঘরোয়া পরিবেশে সকলের বক্তব্য শুনে মাথা নাড়ছেন। তক্ষুণি আপনার মনে হল আপনি বেঁচে গেলেন। আপনাকে কিছু বলতে হল না, আপনি বেশ উল্লসিত হয়ে উঠলেন, সেই মুহুর্তেই আপনার পাশে বসা কোনও বন্ধু আপনার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠল-এই যাঃ তোমার কথা শোনা হল না। তুমি ভাল বলবে তা তো জানি।

◼ আপনার অবস্থা তখন এমন হয়ে উঠল যে পারলে আপনি মাটি খুঁড়ে পাতালে প্রবেশ করেন। কিন্তু তাতে কি আপনি রেহাই পাবেন, কারণ ততক্ষণে ঘরের সব লোকজন আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাকেই দেখছে, সুতরাং আপনাকে কিছু বলতেই হবে।

কিভাবে, কেমন করে বলবেন–

  • (১) শ্রোতাদের বন্ধু বলে ভাবুন। আপনি বলতে শুরু করে কোনও নির্দিষ্ট উদাহরণের মধ্যে ঢুকে যান।
  • (২) সব সময় উপলক্ষটা মাথায় রাখুন এবং সে সম্পর্কে ভাবুন এবং বলার চেষ্টা করুন।
  • (৩) ভাল বলার আগে আপনাকে অবশ্যই মনযোগী শ্রোতা হতে হবে। কারণ, আপনার পূর্ববর্তী বক্তার হাতি-ঘোড়া কি বললেন সে সম্পর্কে আপনি যদি অবিহিত না হন তাহলে আপনি বলতে উঠেই কি বলবেন ভেবে পাবে না।

সুতরাং, মনোযোগী শ্রোতা হন-তাহলেই ভাল বক্তা হবেন।

(ঙ) উপস্থিত বক্তব্য রাখুন এবং সেই সঙ্গে আকর্ষীর্ণীয় উদাহরণ দিন

◼ উপস্থিত বক্তব্য রাখার সময়ে আপনার সামনে যে নির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয় থাকবে সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে এখন উদাহরণ টানুন এবং পরিশেষে উদাহরণকে এমন একটি মূল লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করান যাতে করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখালেও যা সুন্দরভাবে আপনার বক্তব্য বিষয়কে প্রতিফলিত করবে। সবচেয়ে আগে যেটা মনে রাখতে হবে, ধরে নিন ভাল করে কথা বলা এবং মন জয় করার সোনার খনির চাবি আমি আপনার হাতে তুলে দিচ্ছি।

মন জয় করার গোপন রহস্য হল–

  • (১) খুব সুন্দর আকর্ষণকারী প্রস্তাবন;
  • (২) কম কথায় বেশি প্রভাব প্রকাশ করা;
  • (৩) উদাহরণ টেনে প্রসঙ্গান্তরে চলে যাওয়া;

(এখন আপনি আছেন পর্ব-৬ এ)

পর্ব-১ : https://khamarian.com/বক্তব্যে-শ্রোতার-মন-জয়/

পর্ব-২ : https://khamarian.com/কিভাবে-আত্মবিশ্বাস-বাড়া/

পর্ব-৩ : https://khamarian.com/কথা-বলার-দক্ষতা-অর্জন-করু/

পর্ব-৪ : https://khamarian.com/সজীব-প্রাণবন্ত-কথা-বলুন/

পর্ব-৫ : https://khamarian.com/শ্রোতা-সঙ্গে-ভাব-বিনিময়/

পর্ব-৬ : https://khamarian.com/যা-বলতে-চান-গুছিয়ে-বলার-চ/

পর্ব-৭ : https://khamarian.com/কথায়-যোগাযোগ-স্থাপনের-ক/

পর্ব-৮ : https://khamarian.com/কথা-বলার-চ্যালেঞ্জ-গ্রহণ/

পর্ব-৯ : https://khamarian.com/কিভাবে-দীর্ঘক্ষণ-কথা-বলা/

সমাপ্তঃ আজকরে আলোচ্য বিষয় “যা বলতে চান গুছিয়ে বলার চেষ্টা করুনঃ কথা বলার দক্ষতা অর্জন করুনঃ বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-৬, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।” পরবর্তী পোষ্ট পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে এই পোষ্টটি এখানেই সমাপ্ত করা হলো।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!