ঘরোয়াভাবে গবাদি পশুর চিকিৎসা অধ্যায়ের আজকের এই পর্বে খামারিয়ান লাইভস্ট ফার্ম এর প্রিয় দর্শক সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করতে চলেছি আজকের এই আলোচনা। আজকের আলোচনা করা হবে-
কাঁচা রসুন এ কি কি উপাদান আছে?
ঘরোয়াভাবে গবাদি পশুর চিকিৎসা ক্ষেত্রে রসুনের ব্যবহার কি?
পশুদের কোন কোন রোগে রসুন কিভাবে ব্যবহার করা যায়?
বিস্তারিত জানতে আমাদের সম্পূর্ণ পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। পোষ্টটিটি পড়ার পর যদি আপনাদের একটুও ভালো লেগে থাকে অবশ্যই ”খামারিয়ান” ওয়েব সাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে ভুলবেন না। কারণ আমরা গবাদি পশু এর সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আপনারা যদি সাথে থাকেন তা আমাদেরকে নতুন নতুন পোষ্ট বানানোর জন্য উৎসাহিত করে তোলে। চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
♦ রসুন কে না জানে। সকলের কাছে খুবই পরিচিত। প্রাচীন কালে থেকেই রান্নার মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের কাছে অজানা যে রসুনের কিছু অলৌকিক শক্তি রয়েছে এবং ঘরোয়াভাবে গবাদি পশুর চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিভাবে ব্যবহার করা যায়। কিছু ঔষধীয় গুণ রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে যা শরীরের নানা রকম রোগ মুক্তিতে খুবই সহায়ক।
♦ ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে রসুনের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রসুনের মধ্যে কি কি উপাদান রয়েছে, এর গুনাগুন গুলি কি কি, কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করব, ব্যবহারের সঠিক নিয়ম কি, এইসব নিয়ে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। শরীরের মধ্যে যেসব উপাদানের প্রয়োজন পড়ে সেসব উপাদানের বেশিরভাগই কিন্তু রসুনের মধ্যে উপলব্ধ থাকে। যেমন কাঁচা রসুনের মধ্যে থাকে-
- ভিটামিন বি৬
- ভিটামিন সি
- ম্যাংগানেস
- স্যালেনিয়াম
- কপার
- পটাশিয়াম
- ফসফরা
- আয়রন। ইত্যাদি।
এছাড়াও কাঁচা রসুনের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ওষুধ উপাদান থাকে। যার জন্য এই রসুনকে আমরা ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।
আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
কাঁচা রসুন কে আমাদের ছাগলের শরীরে কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে এবং কিভাবে ব্যবহার করব?
♦ কাঁচা রসুনের মধ্যে এলিসিনা নামের এক কম্পাউন্ড পাওয়া যায়। যা শরীরের বিভিন্ন রকম রোগ সারাতে সাহায্য করে। এ কাঁচা রসুন কে প্রাচীনকাল ধরে বিভিন্ন রকম রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। যার প্রমাণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পাওয়া যায় এবং অনেকেই আছেন রসুনের গুনাগুন সম্পর্কে জানেন। তারা কিন্তু রসুনকে বিভিন্ন রকম রোগের ক্ষেত্রে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসায় ব্যবহার করে থাকেন।
♦ রসুন কিন্তু খুবই নিউক্লিয়াস কিন্তু এতে খুব কম পরিমাণে ক্যালোরি পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে আপনাদের খামারের পশুদের যদি আপনি রসুন খাওয়াতে পারেন তাহলে পশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম এই কাচা রসুন।
1. ঠান্ডা সর্দি কাশিতে গবাদি পশুর চিকিৎসা:
খামারে মাঝে মধ্যেই দেখা যায় ছাগলের ঠান্ডা লেগে গেছে। হালকা নাকে সর্দি এবং কাশি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে আপনি কাঁচা ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের নিয়ম: একটা কাঁচা রসুন নিতে হবে। এবার রসুনের কোয়াগুলোকে বের করে পেস্ট করে নিতে হবে। 300ml জলের মধ্যে সেটাকে মিক্স করতে হবে। জলটা গরম থাকতে হবে। সেটাকে মিক্স করার পর সারা দিনে তিন টাইম পশুকে খাইয়ে দিতে হবে। এই ভাবে যদি আপনি কনটিনিউ তিন থেকে চারদিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই চিকিৎসাটি করতে পারেন, আপনার ছাগলের ঠান্ডা ভেতর থেকে চলে যাবে।
2. পশুর রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টরল কমাতে রসুন:
রসুন সেবনে শরীরের কোলেস্টরল এর মাত্রা লেভেলে থাকে এবং শরীরে ভালো এবং খারাপ দিই ধরণেরই কোলেস্টেরল থাকে। রসুন খাওয়ালে শরীরের ভালো যে কোলেস্টেরল তার মাত্রা বেড়ে যায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। এক্ষেত্রে আপনি রসুনকে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সবসময় মনে রাখবেন অতিরিক্ত রসুন সেবন করানো যাবে না। সেটা প্রয়োজন অনুসারে আপনাকে সেবন করাতে হবে।
3. পশুর প্রসব পরবর্তী অবস্থায় রসুনের ব্যবহার:
কাঁচা রসুনের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের বিভিন্ন রকম রোগের ক্ষেত্রে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও কাঁচা রসুন শরীরের মধ্যে যে হাঁড় থাকে সেই হাঁড়ের শক্তি বাড়িয়ে তোলে।
কিছু কিছু ছাগলের ক্ষেত্রে দেখা যায় বছরে দুইবার বাচ্চা প্রসব করে। ছয় মাস অন্তর অন্তর বাচ্চা প্রসব করে তার শরীরের মধ্যে যে হাড়গুলো রয়েছে সেই হাড়ের ক্ষমতা কমে যায়। এমন সময় আসে যে বাচ্চা প্রসবের পর উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকে না। কারণ তার হাড়ের ক্ষমতা কম। এজন্যই যদি মাঝে মাঝে আপনারা কাঁচা রসুন কে সেবন করান সেই সমস্ত ছাগলদের যাদের হাড়ের ক্ষমতা কম, তাহলে সেই সমস্যা থেকে তাদের মুক্তি দিতে পারেন।
4. গবাদি পশুর চর্ম রোগের চিকিৎসায় রসুন:
কাঁচা রসুনের মধ্যে এন্টিভাইরাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে। যা শরীরের বিভিন্ন রকম রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। যেমন পশুর শরীরের স্কিন ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে এই কাঁচা রসুন। কিভাবে ব্যবহার করবেন: যে জায়গায় ইনফেকশন হয়েছে সেটা আগে ফিটকারি জল দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এর পরে এক কোয়া কাঁচা রসুন কে পেস্ট তরি করে সেই ইনফেকশনের জায়গায় যদি আপনি সারা দিনে তিনবার লাগাতে পারেন, খুব দ্রুত সেই ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাবে আপনার ছাগল।
5. পশুর শরীরের প্রদাহ নিরাময়ে রসুন:
কাঁচা রসুনের মধ্যে anti-inflammatory উপাদান থাকার জন্য আপনাদের ছাগলের শরীরে যদি কোন প্রদাহ হয় বা শরীরের কোন অংশে ব্যথা হয়, এর জন্য যদি জ্বর চলে আসে। সে ক্ষেত্রে আপনারা কাঁচা রসুন কে ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যবহারের নিয়ম: 4 টা 5 রসুনে কোয়াকে নিতে হবে ও সেটাকে পেস্ট করে, গরম জলের মধ্যে মিক্স করে পশুকে খাইয়ে দিতে হবে সারা দিনে তিনবার। সে ক্ষেত্রে হালকা জ্বর থাকে সেই জ্বর সেরে যাবে। এছাড়া শরীরের প্রদাহ যদি থাকে, সেই প্রবাহ কমে যাবে।
6. প্রাণীর শরেীরে আঘাত লাগলে:
পশুর শরীরের কোন অংশে যদি আঘাত লেগে ব্যাথা হয়। সে ক্ষেত্রে আপনারা কাঁচা রসুন কে ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যবহারের নিয়ম: 100ml সরষের তেল ওর মধ্যে একটা কাঁচা রসুন থেঁতো করে দিতে হবে, সেটাকে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর ঠান্ডা করে সেই চোট লাগার জায়গায় মালিশ করতে হবে সারা দিনে দুবার। এই মালিশটা যদি কন্টিনিউ এক সপ্তাহ করেন তবে অনেকটা উপশম পাবে আপনার ছাগল।
7. পা মচকে গেছে বা ভেঙে গেলে রসুন দ্বারা ঘরোয়াভাবে গবাদি পশুর চিকিৎসা:
কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় ছাগলের পা মচকে গেছে বা ভেঙে গেছে সে ক্ষেত্রেও কিন্তু আপনি কাঁচা দুটো ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যবহারের নিয়ম: বট গাছের ছালের সাথে কাচা রসুন দুটো একসঙ্গে মিক্স বেটে নিতে হবে এবং সেই প্রভাবিত জায়গায় দিয়ে সেটাকে ভালো করে ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে। ডেইলি একবার করে খুলতে হবে এবং ব্যান্ডেজ করতে হবে। এটা যদি কন্টিনিও আপনি 15 থেকে কুড়ি দিন করতে পারেন তো মচকে যাওয়ার জায়গা টা ঠিকঠাক হয়ে যাবে এবং যদি হাড় ভেঙে যায় বা সরে যায় সেটা কিন্তু জোড়া লাগাবে।
ঘরোয়াভাবে গবাদি পশুর চিকিৎসায় রসুনে ব্যবহারে কি কি সাইডএফেক্ট রয়েছে?
♦ মনে রাখবেন রসুন যেমন বিভিন্ন ধরনের রোগ সারাতে সহযোগিতা করে। তেমন অতিরিক্ত সেবনে এর সাইড ইফেক্ট দেখা যায়। কি কি সাইড ইফেক্ট দেখা যায়? অতিরিক্ত রসুন সেবনের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে শরীরের কোথাও যদি কেটে যায় তো অনর্গল রক্ত বের হতে থাকে। এছাড়াও কিন্তু অতিরিক্ত রসুন সেবনে শরীরে এলার্জি দেখা যায়। এর জন্য রসুন খাওয়ালে সেটা তার নিয়ম অনুসারে খাওয়াতে হবে।
♦ প্রয়োজন ছাড়া কোন মেডিসিন ছাগলকে সরাসরি দেওয়া যাবে না। যদি প্রয়োজন হয় ঠিক সেসময় আপনি ব্যবহার করতে পারেন। তবে কোন কোন সময় আমাদের এডভান্স ব্যবহার করা উচিত। যে সময় আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে, সেই সময় কিন্তু আপনারা লাগাতার তিনদিন এই রসুনকে ব্যবহার করতে পারেন।
গবাদি পশুর রোগের প্রতিষেধক হিসেবে রসুনের ব্যবহার করবেন কখন ও কিভাবে?
♦ আবহাওয়া যখন পরিবর্তন হয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে যেমন রাইনাইটিস বা ঠান্ডা লাগা এবং নিউমোনিয়া এই ধরণের রোগ দেখা যায় আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এই সমস্ত রোগ যে শরীরে প্রবেশ করতে না পারে আপনারা কন্টিনিউ এই রসুনকে এক একটা ছাগলকে দুই কোয়া করে রসুন খাওয়াতে পারেন তিন দিন। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা গুলো থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারবেন।
♦ এছাড়াও আপনাদের ফার্মের ছাগলকে প্রত্যেক মাসে চার থেকে পাঁচ দিন এই কাঁচা রসুন খাওয়াতে পারবেন। কারণ কাঁচা রসুনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান যা পশুর শরীরে খুবই প্রয়োজনীয়। মাঝে মধ্যে বা প্রত্যেক মাসে যদি চার পাঁচদিন খাওয়ানো যায় তাহলে পশুর শরীরে যেসব ডেফিসিয়েন্সি থাকবে এসব উপাদানের সেটা পূরণ করে দেবে এবং ইমিউনিটি সিস্টেম কে বাড়িয়ে তুলবে।
খামারি বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের আমাদের এই আলোচনাটি। যারা আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাব্সক্রাইব করেন নি তারা যদি এই ধরনের আরও তথ্য ভিডিও আকারে পেতে চান তারা আমাদের চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। আমাদের চ্যানেলে কেবলমাত্র পশু ফার্মিং সম্বন্ধীয় তথ্য শেয়াের করা হবে।
নতুন কোন তথ্য জানার জন্য আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন যে আপনি কোন বিষয়ের উপর আলোচনা চান। ”খামারিয়ান” সাধ্যমত চেষ্টা করবে আপনার কমেন্টের বিষয়ে আলোচনা দেওয়ার জন্য। খামারি বন্ধুরা আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে পরবর্তী কোন আলোচনায় সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন খামারিয়ান এর সাখেই থাকুন।